মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
এক দফা আন্দোলন: বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর ইউনিটের গণমিছিল
একদফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুক্রবার রাজধানীর দয়াগঞ্জ ও গুলশান এলাকায় পৃথক দুটি মিছিল করেছে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ এক দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্যই এই কর্মসূচি পালন করছে দলটি।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে দয়াগঞ্জে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর শাখার মিছিলের উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
কর্মসূচি শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি নেতা চলমান আন্দোলন দমন করতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর নিপীড়ন চালানোর জন্য সরকারের সমালোচনা করেন। তিরি বলেন, ‘গোটা দেশ দৃশ্যত জেলখানায় পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তারা আমাদের অনেক নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ অর্জনকারী নয়জন পুলিশ কর্মকর্তা এখন সেখানে যেতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রকে আরও নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানাচ্ছে।
একটি নিরপেক্ষ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে মর্যাদার সঙ্গে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান ফখরুল।
পাশাপাশি তিনি অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কোনো শর্ত ছাড়াই মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
আরও পড়ুন: সব মহানগরে গণমিছিল করবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো
বিএনপির এ নেতা বলেন, সরকার জনগণের টাকা চুরি করে আগামী নির্বাচনে ব্যবহার করতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে।
এদিকে বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর গুলশান এলাকায় ডিসিসি মার্কার কাছে ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির মিছিলের উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
সমাবেশে বক্তৃতায় আব্বাস বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকতে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার জন্য বিরোধীদের দমন করতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে।
বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধ করতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান বিএনপি নেতা।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতেও তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপি নেতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কারাগার থেকে তার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তারা তীব্র আন্দোলন করবেন।
পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করেন। এ মিছিল মহাখালী বাসস্টেশনে গিয়ে শেষ হবে।
দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্রতিকৃতি নিয়ে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী দুই মিছিলে যোগ দেন।
বিএনপি ছাড়াও গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট, গণতান্ত্রিক বম ঐক্য, ১২ দলীয় জোট, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), এনডিএম, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গণঅধিকার পরিষদের দুই পক্ষ পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করছে।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর লক্ষ্য নিয়ে বিরোধী দলের এক দফা আন্দোলনের এটি চতুর্থ কর্মসূচি।
গত ১২ জুলাই বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো দাবি আদায়ে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়।
তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে বর্তমান “ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী, জনগণের ভোট লুটেরা ও অবৈধ” আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, বিদ্যমান সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক রাজবন্দীর মুক্তি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব ‘মিথ্যা ও সাজানো’ মামলা প্রত্যাহার এবং সব ‘মিথ্যা সাজা’ বাতিল করা।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করতে গত বছরের ডিসেম্বরে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে বিএনপি ও সমমনা দল এবং জোট একযোগে আন্দোলন শুরু করে।
আরও পড়ুন: স্বৈরাচারী এ সরকারের আমলে কেউই নিরাপদ নয়: রিজভী
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনের চেষ্টা করবেন না: মির্জা ফখরুল
নির্বাচন নিয়ে খেলতে ইসি ‘অচেনা’ দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মদদে নির্বাচনের নামে চক্রান্তের অংশ হিসেবে দুটি ‘অচেনা’ দলকে নিবন্ধন দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কতটা নির্লজ্জ... তারা দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে। এই দলগুলোকে কেউ চেনে না। কেউ কি তাদের চেনেন? আপনারা কি জানেন কেন তাদের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে? তাদের দ্বারা নির্বাচন নিয়ে একটি খেলা খেলতে চায়। এই খেলা এইবার খেলতে দেওয়া হবে না।’
শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় ঢাকা উত্তর মহানগর শাখার গণমিছিলের উদ্বোধনকালে এ অভিযোগ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা।
তিনি বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষ এখন তাদের অধিকার রক্ষা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ।
ফখরুল বলেন, ‘এবার আমাদের লড়াই জীবন রক্ষার জন্য। কোনো ভয়, কোনো জেল বা দমন-পীড়ন এবার আমাদের দমন করতে পারবে না।’
এর আগে বৃহস্পতিবার, ইসি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) নিবন্ধনের অনুমোদন দেয়।
বিবৃতিতে ইসি বলেছে, সর্বসম্মতিক্রমে দল দুটিকে নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
ফখরুল বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তারা বর্তমান ‘দানব’ সরকারকে পরাজিত করে শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন। ‘আমরা একটি নতুন সংগ্রাম শুরু করেছি। মিছিলের মাধ্যমে আমরা তাদের (সরকার) কাছে একটি বার্তা দিতে চাই যে তোমাদের দিন শেষ।’
ফখরুল সরকারের উদ্দেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে মর্যাদার সঙ্গে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান।
অন্যথায় রাজপথে বিষয়টির মিমাংসা করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির এই নেতা।
আরও পড়ুন: এক দফা আন্দোলন: বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখার বিশাল মিছিল
এক দফা আন্দোলন: বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখার বিশাল মিছিল
চলমান এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর বাড্ডা ও কমলাপুর স্টেডিয়াম এলাকা থেকে মালিবাগের দিকে পৃথক দুটি মিছিল নিয়ে আসে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা।
বিরোধী দলের এক দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেই এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান।
এদিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে ঢাকা উত্তর মহানগর শাখার মিছিলের উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কর্মসূচি শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এই বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, সরকার দমনমূলক কর্মকাণ্ড ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করছে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকার কোনোভাবেই আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে পারবে না। ‘কোনোকিছুই এবার আমাদের দমাতে পারবে না।’
ফখরুল বলেন, সরকার যাতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচনের নামে আরেকবার খেলা করতে পারে, তাই নির্বাচন কমিশন (ইসি) দুটি অখ্যাত দলকে নিবন্ধন দিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের জনগণ এবার ক্ষমতাসীন দলকে কোনো অন্যায় খেলা খেলতে দেবে না।
আরও পড়ুন: ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য: ফখরুল
ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোই তাদের দলের একমাত্র লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই ও সংগ্রাম করেছি। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য এই ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করা।’
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে ফখরুল এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য ইতোমধ্যে অনেক বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, গত ১৮ জুলাই লক্ষ্মীপুরে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিল কর্মসূচিতে পুলিশ গুলি চালিয়ে কৃষকদল কর্মী সজিব হোসেনকে হত্যা করে, অনেকে আহত হয়। ‘আন্দোলনই এই সরকারকে অপসারণের একমাত্র উপায়। এই সরকারকে অবশ্যই উৎখাত করতে হবে।’
গত ১৮ জুলাই জেলায় বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে সজিবের পরিবারের সদস্য ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানাতে এ কর্মসূচির আয়োজন করে লক্ষ্মীপুর শাখা বিএনপি।
আরও পড়ুন: ভয়-প্রতিহিংসা থেকে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে আ. লীগ: ফখরুল
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ ও দেশের কোনো নাগরিক নিরাপদ থাকবে না।
বিএনপি নেতা বলেন, সজিবসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জীবন উৎসর্গ বৃথা যাবে না। ‘আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে এবং গণমুখী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
দেশের জনগণ তাদের দলের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, তারা বিশ্বাস করে বর্তমান সরকারকে হটিয়ে জনগণ অবশ্যই গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।
তিনি নিহত কৃষকদল কর্মী এবং লক্ষ্মীপুরে পুলিশের গুলিতে আহত ও দৃষ্টিশক্তি হারানো পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করে বলেন, বিএনপি সবসময় তাদের পাশে থাকবে।
অনুষ্ঠানে সজিবের পরিবার ও আহত দলীয় নেতাকর্মীদের আর্থিক সহায়তা দেয় দলটি।
আরও পড়ুন: সময় ও একাত্তর টিভির টকশোতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির
আ.লীগ চাপে বিনয়ী হওয়ার ভান করছে: ফখরুল
বিএনপিকে দোষারোপ করতে গাড়িতে আগুন দিয়েছে আওয়ামী লীগ: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, বিরোধীদের মিথ্যা দোষারোপ করার জন্য সরকারের চক্রান্তের অংশ হিসেবে রাজধানীতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এবং ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা গাড়িতে আগুন দিয়েছে।
তিনি বলেন, আটক বিএনপি নেতাদের খাবার ও ফুল পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির ফল।
শনিবার (২৯ জুলাই) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি মাতুয়াইল ও শ্যামলীতে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করার অপচেষ্টা চলছে। সরকারি সংস্থার সদস্যরা, এমনকি আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা পুলিশের সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে এবং মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাওয়ার আগে ভিডিও ধারণ করেছে।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, হামলা চালিয়ে এবং এসব ঘটনার ভিডিও করে অপরাধীরা পুলিশের সামনে কোনো বাধা ছাড়াই পালিয়ে গেছে। ‘এটি সহজেই অনুমান করা যায় যে ঘটনাগুলো কারা সাজাতে পারে।’
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ স্বৈরাচার ও সামন্তবাদ পছন্দ করে: ফখরুল
নিজেরাই অপরাধ করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, পোড়া বাসের চালক ও প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের পেছনে কারা জড়িত ছিল। ‘এটা খুব স্পষ্ট যে সরকার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ও নাটকীয়তায় এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।’
রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি নস্যাৎ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের ব্যবহার করে সরকার রাজধানীতে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও অনেক নেতাকর্মীর ওপর হামলা এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার প্রমাণ করেছে বর্তমান সরকারের হাতে দেশের কোনো নাগরিক নিরাপদ নয়। ‘এই সরকার এখন শুধুমাত্র ঘৃণা ও নিন্দার প্রাপ্য।’
তিনি বলেন, সরকার ও তার বিভিন্ন শক্তির অবৈধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়ার ক্ষমতা বিএনপি ও দেশের জনগণের রয়েছে। ‘কিন্তু আমরা সবসময় সেই শক্তি প্রয়োগের ফলে যে অপ্রীতিকর এবং দুঃখজনক পরিস্থিতি হতে পারে তা এড়াতে চেয়েছি। এটা আমাদের দুর্বলতা নয়, বরং এটা জনগণ ও গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের দায়িত্ব।’
আরও পড়ুন: 'সময় শেষ, পদত্যাগ করুন': সরকারের প্রতি ফখরুল
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, তাদের দল দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে আসছে। যদিও অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা, গুম, নিপীড়ন, কারাবরণ, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু সবকিছুর একটা সীমা আছে। আশা করি সরকার এটি মাথায় রাখবে।’
আটকের পর দলের সিনিয়র নেতা আমানুল্লাহ আমানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের জন্য ডিবি পুলিশের মধ্যাহ্নভোজের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সমালোচকরা বলছেন যে এটি মার্কিন ভিসা নীতির ফলাফল।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা নিজেদেরকে (ভিসা নীতি থেকে) রক্ষা করতে এবং নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে এই নাটক মঞ্চস্থ করেছে। অতীতেও তারা এ ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করেছে। তাই এসব বিষয় আমাদের নেতা, কর্মী ও জনগণের কাছে তুচ্ছ।’
আরও পড়ুন: আ. লীগের ভয় দেখানোর কৌশল আর চলবে না, জনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে: ফখরুল
ফখরুল বলেন, সরকার ও পুলিশ অতীতে বিএনপি নেতাদের প্রতি এমন আন্তরিক মনোভাব কখনো দেখায়নি।
তিনি বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে আমাদের প্রায় ৪৫০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। মির্জা আব্বাস ও আমাকেও কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা তখন সুস্বাদু আম, ফল, ফুল পাঠায়নি। তারা এখন ভিসা নীতির প্রভাব থেকে বাঁচাতে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য এটি করছে।’
এর আগে শনিবার ঢাকার প্রধান প্রবেশপথে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি সংঘর্ষ ও সহিংসতায় ভেস্তে যায়।
বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় মাতুয়াইল ও শ্যামলীসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
বিরোধী দল দমনে সরকারের ডিজিটাল অস্ত্র ‘ইন্টারনেট বন্ধ’: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করতে ‘ইন্টারনেট বন্ধ’কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার।
রবিবার (২৩ জুলাই) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) আধুনিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে জনগণকে দমন করতে। তাদের নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে সরকার।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের ভয়ে জনগণের অবিরাম ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকার এবং তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার জন্য সরকার একটি নতুন ডিজিটাল অস্ত্র হিসেবে ইন্টারনেট বন্ধ করছে।’
তিনি আরও বলেন, বিরোধী নেতাদের স্মার্টফোন পর্যবেক্ষণ, তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং তাদের সেল ফোন চেক করাসহ বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে সরকার। ‘আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদ করি।’
ফেনীতে মঙ্গলবার সংঘর্ষের ঘটনায় আরও একটি মামলায় ১ হাজার ৬৫১ জন বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘কাপুরুষ’ আওয়ামী সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনকে ভয় পায়: ফখরুল
শুধু বিএনপি নেতা-কর্মীই নয়, মুক্তচিন্তার মানুষও এর মাধ্যমে হয়রানির শিকার হওয়ায় সরকারের কাছে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিলের দাবি জানান বিএনপি নেতা।
‘ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনাগুলো নাগরিক অধিকারের ভয়ানক লঙ্ঘন। এটি হত্যা ও জোরপূর্বক গুমের মতো অপরাধ,’ –বলেন ফখরুল।
ফখরুল বলেন, একজন ব্যক্তি যখন গুমের শিকার হন, তখন একজনই হারিয়ে যান। কিন্তু কোথাও ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেলে দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষ এর শিকার হয়। অনলাইনে মানুষের অস্তিত্ব মুছে ফেলা একটি হত্যার মতোই অপরাধ। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ শাসন ক্রমাগত এই অপরাধ করে চলেছে।
ইন্টারনেট বন্ধসহ সব ধরনের ডিজিটাল নির্যাতনের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপির মিডিয়া সেল।
এক দফা আন্দোলন: আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি
গত ১২ জুলাই নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সমাবেশে এবং গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা, রাজশাহী ও ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার ঘটনা তুলে ধরেন ফখরুল।
তিনি অভিযোগ করেন, ১২ জুলাই বিএনপির সমাবেশে নয়াপল্টন এলাকায় ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন হলেও একই দিন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের সমাবেশে ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক ছিল।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিপুল জনসমাগমে চলছে বিএনপির ‘যুব সমাবেশ’
এই বছর ডিজিটাল রাইটস ওয়াচডগ এক্সেস নাউ-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, ইন্টারনেট বন্ধের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
আরও পড়ুন: এক দফা আন্দোলন: ২৭ জুলাই ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ
তিনি বলেন, চারটি দেশ- ভারত ৮৪ বার, ইউক্রেন ২২ বার, ইরান ১৮ বার এবং মায়ানমার ৭ বার - বিদ্রোহ বা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির কারণে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশে এমন কোনো যুদ্ধ আছে কি না, যার জন্য সরকার ৬ বার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে- প্রশ্ন তোলেন বিএনপি নেতা। "সরকার কাদের বিরুদ্ধে সেই যুদ্ধ চালাচ্ছে?"
তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট পরিষেবা এখন মানুষের মতামত প্রকাশের একটি অপরিহার্য মাধ্যম। এই পরিষেবা বন্ধ করা মূলত মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে।’
ইন্টারনেট সেবা এখন শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, এই সেবাগুলো আর্থিক লেনদেন, শিক্ষা, চিকিৎসা, তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, আউটসোর্সিং, বিদেশ ভ্রমণ, চাকরি এবং চাকরির ইন্টারভিউসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়েছে এবং জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে।
ফখরুল জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে ইন্টারনেট পরিষেবাগুলো অবরুদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণের ঘটনাগুলো ব্যক্তির নাগরিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
পুলিশ সাধারণ মানুষকে অবৈধভাবে রাস্তায় আটক করে তাদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ বিএনপি সমর্থকরা
‘কাপুরুষ’ আওয়ামী সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনকে ভয় পায়: ফখরুল
নির্দলীয় সরকার ছাড়া এবার দেশে কোনো নির্বাচন হবে না জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনকে ভয় পায়।
শনিবার (২২ জুলাই) বিকালে তিন সংগঠনের তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি বলেন, ওদের লক্ষ্য একটাই যে ভয় দেখিয়ে মানুষকে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। জনগণকে ভয় দেখিয়ে এই নির্বাচন থেকে বিরত রাখা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শুধু বিএনপি নই, আমরা ৩৬টি দল যুগপৎভাবে ঘোষণা দিয়েছি, আমরা বাংলাদেশে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।
তিনি বলেন, অবিলম্বে এই শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
সম্প্রতি ঢাকা, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভয় পায়।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভয় পায় বলে আজকে তারা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। এরা ‘কাপুরুষ’ সরকার, নির্বাচনকে ভয় পায়।
আমরা পরিস্কার করে বলেছি, আমরা এক দফা দাবি দিয়েছি। বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল প্রায় সমন্বরে বলেছে যে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
আরও পড়ুন: এক দফা আন্দোলন: ২৭ জুলাই ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ
এক দফা আন্দোলন: ২৭ জুলাই ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ এক দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীতে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি।
শনিবার (২২ জুলাই) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তাদের যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে দুপুর ২টায় রাজধানীতে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি। তবে সমাবেশস্থলের নাম উল্লেখ করেননি ফখরুল।
বর্তমান সরকারের পতন ত্বরান্বিত করতে সর্বস্তরের জনগণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান এই বিএনপি নেতা।
অন্যান্য সমমনা দল ও জোটও একই দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।
বিএনপির তিনটি সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বিকাল ৩টা ২৮ মিনিটে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে।
কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল তরুণ প্রজন্মকে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা।
আরও পড়ুন: ভেঙে পড়ল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির যুব সমাবেশের মঞ্চ
অতিরিক্ত লোডের কারণে অনুষ্ঠানের জন্য স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চটি ভেঙে পড়ায় সমাবেশটি ৯০ মিনিট দেরিতে শুরু হয়।
দুপুর দেড়টার দিকে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু সমাবেশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে দলীয় নেতা-কর্মীরা ডেকোরেশন কোম্পানির কর্মচারীদের সহায়তায় ভাঙা মঞ্চটি মেরামত করেন।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণ নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরে, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও দলের শীর্ষ নেতাদের ছবি নিয়ে সকাল থেকেই মিছিলে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন।
সমাবেশস্থল ছাড়াও আশপাশের সড়কে অবস্থান নেয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা, এতে আশপাশের এলাকায় যান চলাচল ব্যাহত হয়।
যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সমাবেশস্থলের চারপাশে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
তিনটি সংগঠন এর আগে পাঁচটি তারুণ্যের সমাবেশ করে তরুণদের ব্যাপক সাড়া পায়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে চলমান আন্দোলনের প্রতি তরুণ প্রজন্মের সমর্থন জোগাতে গত ২ জুন বিএনপির তিনটি সহযোগী সংগঠন চট্টগ্রাম, বগুড়া, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ঢাকায় ছয়টি যুব সমাবেশের ঘোষণা দেয়।
আরও পড়ুন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ বিএনপি সমর্থকরা
এক দফা আন্দোলন ঠেকাতে লক্ষ্মীপুরে সজীব হত্যা: বিএনপি
হিরো আলমের ওপর হামলা গণতন্ত্রের নামে আ. লীগের তামাশা: ফখরুল
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলাকে গণতন্ত্রের নামে তামাশা আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এতে প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ কীভাবে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘হামলার ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।’
সোমবার খুলনা ডাকবাংলা চত্বরে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত তারুণ্যের খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কতটা দেউলিয়া হয়ে গেছে তা ভাবাই যায় না। তাই অরাজনৈতিক হিরো আলমকেও ভয় পায়।
ফখরুল বলেন, ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও ভোটের সময় আলম একটি ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলেন। ‘তখন আওয়ামী লীগের কুখ্যাত ক্যাডাররা তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্দয়ভাবে মারধর করে ভোটকেন্দ্রের বাইরের রাস্তায় ফেলে দেয়।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, হিরো আলমের মতো একজন অরাজনৈতিক প্রার্থীকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মারধরের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশে তারা কী মজার দৃশ্য তৈরি করেছে! এই সরকার গনতন্ত্রের নামে ও নির্বাচনের নামে তামাশা করছে। তারা (আ.লীগ নেতা) আবার বলবে যে গণতন্ত্র তাদের হাতে সবচেয়ে নিরাপদ এবং তারা অতীতে ভালো নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিল।’
ফখরুল বলেন, মোহাম্মদ আলী আরাফাত একজন অধ্যাপক, ড. (পিএইচডি) এবং একটি থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের প্রধান। সেখানে আওয়ামী লীগের হাইভোল্টেজ প্রার্থী ছিলেন তিনি, যদিও সেখানে কোনো শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রার্থী ছিল না।’
তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন এবং বাংলাদেশের মানুষ তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটু ভিন্নভাবে চেনেন।
আ. লীগের ভয় দেখানোর কৌশল আর চলবে না, জনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের ভয়ভীতি কৌশল আর কাজ করবে না, তা না হলে দেশের জনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জোর করে আওয়ামী লীগকে সরিয়ে দেবে।
তিনি বলেন, ‘বন্দুক দিয়ে, হুমকি দিয়ে ভয় দেখিয়ে আর কাজ হবে না। অনেক অপরাধ করেছেন, জুডেশিয়াল কিলিং করেছেন, ১ লাখ ২৪ হাজার মামলা দিয়ে ৪০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করেছেন। কেউ ক্ষমতায় চিরস্থায়ী থাকতে পারেনি। আপনিও (শেখ হাসিনা) পারবেন না। ক্ষমতার এ মসনদ কারো জন্য পার্মান্টেট নয় মানে মানে সরে পড়েন।’
রবিবার (১৬ জুলাই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিকদলের মেহনতী শ্রমিক জনতার মহাসমাবেশে প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম একটি ঐতিহাসিক স্থান এখান থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। এইখানে তিনি জীবনের শেষ সময় অতিবাহিত করেছেন, প্রীতিলতার এই চট্টগ্রামের মানুষ অবৈধ লুটেরা সরকারকে কি বার্তা দিতে চায় তা সারাবিশ্বে পৌঁছে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: আ. লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব নয়: ইইউ প্রতিনিধি দলকে বিএনপি
বিএনপির কেন্দ্রিয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকার, নির্দলীয় সরকার থাকলে আওয়ামী লীগের ভাত নেই। সবাইকে বোকা বানিয়ে বিচার ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে, খায়রুল হকের ওপর জোর দিয়ে পার্লামেন্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিল করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ হচ্ছে একটি বক ধার্মিক দল। বক যেমন পুকুর জলাশয়ের ধারে এক পায়ে বসে থাকে মাছ ধরার জন্য, তারাও (আওয়ামী লীগ) সুযোগের অপেক্ষায় বসে থাকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য।তারা এখন বলে বেড়াচ্ছে আওয়ামী লীগের অধিনে নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সবাই যেন নির্বাচনে অংশ নেয়। এ যেন ‘ভূতের মুখে রাম রাম’।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আসলে আওয়ামী লীগের চরিত্রই ভালো না। আর নির্বাচন কমিশন হচ্ছে একটা ‘ঠুটো জগন্নাথ’, তাদের কোন ক্ষমতা নেই। আওয়ামী লীগ যা বলে তা বাস্তবায়ন করে।’’
তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘তারা বলে, নির্বাচন আমাদের অধীনে হবে। আমরাই ভোট কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করবো। আমরাই ভোট দেওয়াবো, আমাদের মতো করে সবাইকে ভোট দিতে হবে। নইলে চলে যেতে হবে।”
ফখরুল বলেন, ‘‘এমনকি আমাদের ভোটারদের এখনও বলে তারা ভোট কাকে দেবে। ‘যদি বিএনপিকে ভোট দিতে চাও তাহলে তোমার ভোট হয়ে গেছে।’ ভোটকেন্দ্রে যেতেই দেয় না।’’
আরও পড়ুন: 'সময় শেষ, পদত্যাগ করুন': সরকারের প্রতি ফখরুল
শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বলে তাদের অধীনে নাকি ভোট দিতে হবে। ২০২১ সালে শেখ হাসিনা আমাদের ডেকে বলেন নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, সবাই ভোট করতে পারবেন। সবাইকে বলেন ভোট করতে, আমি কোনও বাধা দেবো না। আমরা ভাবলাম, বোধহয় শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। আগের রাতে ভোট হয়ে গেলো। এখন আবার বলছে আমরা সুন্দর ভোট করবো। আমাদের অধীনেই ভোট হবে। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হবে। তাদের কী আবদার!আগের বার তারা ইলেকশনের আগে জনগণকে বলেছিল নির্বচিত হলে ঘরে ঘরে চাকুরি দেবে ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে চাকুরিতো কেউ পায়নি বরং ঘরে ঘরে বেকার বেড়েছে, চালের কেজি ৯০ টাকা হয়েছে। এ সরকার যতদিন থাকবে মানুষের দুর্ভোগ তত বাড়বে।তাই ভালো ভালোই পদত্যাগ করে মানুষকে মুক্তি দিন, না হয় জনগণ তাদের হারানো ভোটাধিকার আদায় করে নিতে বাধ্য হবে।’
আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আর কোনও সময় নেই, তাদের সময় শেষ। আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি। আবারও বলছি, ভালো ভালোয় পদত্যাগ করেন, সংসদ ভেঙে দেন।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আট বছর কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন সংগ্রাম করেছেন। রাষ্ট্র মেরামতের জন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান এই ৩১ দফা দিয়ে আমাদের একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মীর নাসির উদ্দিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান এবং বান্দরবান বিএনপির নেতা ম্যামাচিং।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার পতনের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে: রিজভী