মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
আদালত স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করে: আইনমন্ত্রী
বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের হাইকোর্টের জামিনের বিরুদ্ধে সরকারের আপিলের বিষয়ে শুক্রবার আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে না।
শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা প্রেসক্লাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আদালত স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের মুক্তিতে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।’
অ্যাটর্নি জেনারেলের বরাত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, দুই নেতার হাইকোর্টে জামিন প্রক্রিয়ায় আইন লঙ্ঘন হয়েছে। তাই হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকার প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: আইনমন্ত্রী
গত ৯ ডিসেম্বর রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে ফখরুল ও আব্বাসকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণের বিষয়ে আনিসুল বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন, এখন হাইকোর্ট বিষয়টি তার এখতিয়ারে নিয়েছে। ‘এ বিষয়ে আমি কোনো কিছু বলব না।’
তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখেছি এবং যদি এটি সত্য হয় তবে আমি লজ্জিত ও দুঃখিত। একজন আইনজীবী পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি বিশ্বাস করি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আইনজীবী এ যে ঘটনা ঘটেছে তা আইনজীবীরা করতে পারেন না। আমি এটা বিশ্বাস করি না।’
বৃহস্পতিবার জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে তলব করেন বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
তলব করা ব্যক্তিরা হলেন-আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ভূঁইয়া, সচিব (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলাম।
এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৪ জানুয়ারি জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক হাইকোর্টে লিখিত অভিযোগ পাঠান। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বিচারপতির লিখিত অভিযোগ হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
গত ২ জানুয়ারি আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. তানভীর ভূঁইয়া, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী এবং জুবায়ের ইসলামসহ প্রায় ১০-১৫ জন আইনজীবী এসে বিচারককে অভদ্রভাবে আদালত কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন।
অভিযোগে বলা হয়, অ্যাডভোকেট তানভীর আদালতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
আরও পড়ুন: নির্ধারিত সময়েই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবে: আইনমন্ত্রী
চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শেষ করাই নতুন বছরের চ্যালেঞ্জ: আইনমন্ত্রী
নাশকতার ৩ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো রিজভীকে
নাশকতার অভিযোগে পল্টন ও বাড্ডা থানার পৃথক তিন মামলায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম তোফাজ্জল হোসেন আবেদন মঞ্জুর করেন।
রিজভীর আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী শেখ শাকিল আহম্মেদ রিফন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কাকরাইলের বিজয়নগরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে ২০০/২৫০ জন লাঠিসোটা নিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িরচালক আয়নাল বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন খান।
এ মামলাটির চার্জ শুনানির জন্য আগামী ২৯ মার্চ তারিখ ধার্য রয়েছে।
এছাড়া ২০১৩ সালে পার্টি অফিসের সামনে নাশকতার অভিযোগে পল্টন থানায় এবং ২০১৫ সালের বাড্ডা থানায় দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এই তিন মামলাই বিচারাধীন।
আরও পড়ুন: নয়াপল্টনে সংঘর্ষ: রিজভী, এ্যানিসহ কারাগারে ৪৪৫ বিএনপি নেতাকর্মী
এর আগে রবিবার তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এদিন রাজধানীর শাহবাগ, রমনা ও পল্টন থানার নাশকতায় পৃথক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
গত বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন অনেকে। পরে বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালানো হলে সেখানে অনেক ককটেল পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ।
অভিযান চলাকালে নয়াপল্টন থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দেড় থেকে দুই হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন: রিজভী ও ইশরাকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
পুলিশের বিরুদ্ধে রিজভীর মামলার আবেদন খারিজ
তৃতীয় দফায় ফখরুল ও আব্বাসের জামিন নামঞ্জুর
রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মামলায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের পক্ষে তৃতীয় দফায় করা জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকালে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এদিন জামিন আবেদনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু জামিনের বিরোধিতা করেন।
আরও পড়ুন: ফখরুল-আব্বাসকে আগেই ডিভিশন দেয়া উচিত ছিল: হাইকোর্ট
এর আগে বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) রেজাউল করিম চৌধুরীর আদালতে বিশেষ জামিন আবেদন করেন মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের আইনজীবী। আদালত বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন।
৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে আটক করে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে তাদের গ্রেপ্তার দেখায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
৯ ডিসেম্বর বিকালে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর ১২ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসসহ ২২৪ জনের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।
আরও পড়ুন: ফখরুল ও আব্বাসকে কারাগারে প্রথম শ্রেণীর বন্দীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে: রাষ্ট্রপক্ষ
ফখরুল ও আব্বাসের কারাগারে ডিভিশন চেয়ে হাইকোর্টে রিট
ফখরুল ও আব্বাসকে কারাগারে প্রথম শ্রেণীর বন্দীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে: রাষ্ট্রপক্ষ
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে কারাগারে প্রথম শ্রেণীর বন্দীর মর্যাদা বা ডিভিশন দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বিষয়টি হাইকোর্টকে জানান।
তিনি আদালতে বলেন, তাদেরকে ডিভিশন দেয়ার জন্য গত ৯ ডিসেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট আদেশ দিয়েছেন। আজকে থেকে তাদেরকে ডিভিশন দেয়া হয়েছে।
পরে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহামদ আলীর বেঞ্চ আদেশের জন্য কারাগারে ডিভিশন চেয়ে দুই নেতার পক্ষে করা রিটের ওপর আগামীকাল বুধবার আদেশের দিন ধার্য করেন।
আরও পড়ুন: ফখরুল ও আব্বাসের কারাগারে ডিভিশন চেয়ে হাইকোর্টে রিট
এর আগে মির্জা ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম ও মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস তাদের জন্য ডিভিশন চেয়ে রিট করেন। পরে তা শুনানির জন্য বিকাল সাড়ে ৩টায় দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পরে সাংবাদিকদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, ‘নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানার মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ফখরুল, মির্জা আব্বাসসহ ২২৪ বিএনপি নেতার জামিন নামঞ্জুর
ঢাকায় সমাবেশের আগেই ফখরুল, আব্বাসকে পাঠানো হলো কারাগারে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নয়, তবে সরকারের অন্যান্য সমাবেশস্থলের পরামর্শ বিবেচনা করবে বিএনপি: ফখরুল
রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশের বিষয়ে স্পষ্টতই নিজেদের অবস্থান নরম করে বিএনপি বলেছে, সরকার ১০ ডিসেম্বর দলের সমাবেশের জন্য উপযুক্ত ও বিকল্প কোনো স্থান নিয়ে আসলে তারা বিবেচনা করবে।
তবে, সরকারকে একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অহেতুক নৈরাজ্যকর ও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের ঢাকার সমাবেশ হবে সবচেয়ে সফল ও শান্তিপূর্ণ। তাই আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই আমাদের কর্মসূচিকে অন্য দিকে মোড় নিয়ে কোনো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না করার জন্য।’
রবিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো অরাজক ও সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার জন্য সরকার দায়ী থাকবে।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর দুঃস্বপ্ন দেখছে: ফখরুল
তিনি আবারও বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ এবং সুবিধাজনক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, শনিবার তাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে জনসভা করার বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা বিকল্প কোনো উপযুক্ত স্থান পাই তাহলে আমরা বিবেচনা করব, তবে সেটা সোহরাওয়াদী উদ্যান বা তুরাগ তীরে হওয়া উচিত নয়।’
আরও পড়ুন: আইজিপির কাছে ‘গায়েবী’ মামলার প্রতিকার চাইল বিএনপি
ফরিদপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পাঁয়তারার অভিযোগ
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর দুঃস্বপ্ন দেখছে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, দেশের জনগণের প্রতি আস্থা না থাকায় সরকার ক্ষমতা হারানোর দুঃস্বপ্ন দেখছে।
তিনি বলেন, 'আমরা ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণভাবে জনসভা করতে চাই। কিন্তু ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তারা (আ.লীগ) ঘুম হারিয়েছে। তারা নিজেরাই বলছে যে তাদের সিংহাসন উল্টে দেয়া হবে।’
শনিবার এক বিশাল সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, এর আগেও কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই নয়াপল্টনে বিএনপি অনেক সমাবেশ করেছে, এমনকি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতেও।
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা (আ.লীগ) জানেন আপনারা অনেক অপকর্ম করেছেন। মানুষের প্রতি আপনাদের আস্থা নেই।তাই আপনারা ভীত এবং দুঃস্বপ্ন দেখছেন যে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান (ক্ষমতায়) আসছেন।’
দলের বিভাগীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির রাজশাহী মহানগর শাখা রাজশাহী মাদরাসা মাঠে সমাবেশের আয়োজন করে।
র্যালিতে বিভাগের আট জেলা থেকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
নাটোর, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই পরিবহন ধর্মঘট উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন।
র্যালিকে কেন্দ্র করে নগরী ও এর আশপাশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং প্রবেশপথে চেকপোস্ট স্থাপন করেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজশাহীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বুধবার থেকে বিভিন্ন বিভাগের আওতাধীন জেলাগুলো থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা ট্রেন, ট্রাক, নৌকাসহ মানববাহী গাড়ি, অটোরিকশা, থ্রি-হুইলার, মোটরবাইক, মাইক্রোবাসে করে নগরীতে আসেন।
বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করলে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এছাড়া শুক্রবার বিকালে রাজশাহী অটোরিকশা মালিক সমিতিও অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, তাদের সমাবেশে জনতার ঢল বাধাগ্রস্ত করার জন্যই এই হরতাল।
চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল এবং ফরিদপুর, সিলেট ও কুমিল্লায় আটটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ায় রাজশাহীতে এটি ছিল বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির নবম সমাবেশ।
সিলেট, ফরিদপুর, বরিশাল, রংপুর ও খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগেও একই ধরনের হরতাল কার্যকর করা হয়েছিল, তবে দলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক বাধা অতিক্রম করে সমাবেশে অংশ নেন।
চলমান আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ১০টি বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিক জনসভার ঘোষণা দেয় বিএনপি। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় শেষ জনসভা করে বিভাগীয় কর্মসূচি শেষ করবে দলটি।
আয়োজকরা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির নিন্দা, ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও যশোরে পূর্বে পুলিশের অভিযানে পাঁচ দলের নেতাকর্মীর মৃত্যু এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতেই এই সমাবেশ।
১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দিন: ফখরুল
আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি যাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে নয়াপল্টনে তাদের সমাবেশ করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা এক মাস আগে নয়াপল্টনে আমাদের বিভাগীয় সমাবেশ করার জন্য ডিএমপিকে চিঠি দিয়েছিলাম। কোনো রকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই এর আগে এখানে বহু মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং, আমাদের চিঠি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন, কারণ আমরা এখানে আমাদের সমাবেশ করব। এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া আপনাদের দায়িত্ব।’
বুধবার এক সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে এই বিএনপি নেতা আশ্বস্ত করেন যে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোট ও অন্যান্য অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা শান্তিপূর্ণভাবে নয়াপল্টনে সমাবেশ করবেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের বিরোধিতার বিষয়ে ফখরুল বলেন, চারিদিক দেয়াল ঘেরা অনুষ্ঠানস্থলে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে তাদের দল স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। ‘এখানে থেকে সহজে প্রবেশ করার এবং বেরিয়ে আসার কোন রাস্তা নেই। একটি মাত্র গেট আছে, যেখান দিয়ে দু-একজন লোক ঢুকতে পারে।’
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতাদের কারাগারে রেখে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করছে সরকার: ফখরুল
এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তাদের দলকে শান্তিপূর্ণভাবে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
অন্যথায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন এই বিএনপি নেতা।
দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর শাখা।
এর আগে মঙ্গলবার ২৬ শর্তে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
মিথ্যা মামলা বন্ধ করুন
ফখরুল বলেন, নয়াপল্টনে জনসভা হলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হবে বলে সরকার খোঁড়া অজুহাত দেখাচ্ছে। ‘শনিবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় এ ধরনের কোনো যানজটের সৃষ্টি হবে না।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, দেয়ালে লেখা ও জনগণের চোখের ভাষা বুঝতে চায় না বলেই সরকার একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
এর পরিণতি বিবেচনা করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক মামলা করা থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এখন জনগণও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই বানোয়াট মামলা, হামলা, গ্রেপ্তার বন্ধ করে জনগণের আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চলতে দিন।
আরও পড়ুন: তুলনামূলক সহজ পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির কুমিল্লা সমাবেশ
ঢাকা সমাবেশ চ্যালেঞ্জ
এই বিএনপি নেতা বলেন, ১০ ডিসেম্বরের জনসভা সফল করা ঢাকাবাসীর জন্য চ্যালেঞ্জ।
ফখরুল বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশের জনগণ নতুন আশা নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এটি (১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ) ঢাকা ও এই বিভাগের জনগণের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। ইনশাআল্লাহ সমাবেশ সফল হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার অকারণে বিএনপির সমাবেশে বাধা দিচ্ছে, যা গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। ‘এটা আপনাদের (সরকার) জন্য মোটেও ভালো হবে না। আপনারা পথ খোলা রাখছেন না। আমি আবারও আপনাদেরকে অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলছি।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে মুক্তির জন্য সর্বস্তরের মানুষ এতে যুক্ত হওয়ায় বর্তমান আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়, সারা দেশের মানুষের সংগ্রামে পরিণত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, সরকার ব্যাপক লুটপাটের মাধ্যমে শুধু ব্যাংকিং খাত নয়, গোটা দেশ ও এর সব সেক্টরকে ধ্বংস করেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীকে ব্যবহার করছে।
আরও পড়ুন: ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে আ.লীগের ফাঁদে পা দিবে না বিএনপি: গয়েশ্বর
বিএনপি নেতাদের কারাগারে রেখে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করছে সরকার: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার 'মিথ্যা' মামলায় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মতো তাদের দলের সিনিয়র নেতাদের কারাগারে রেখে আগামী নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা সহজেই দূর করার ষড়যন্ত্র করছে।
শনিবার এক বিশাল জনসভায় বক্তৃতাকালে তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, যতদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করবেন না, ততদিন বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই শাসন কিছুই অক্ষত রাখে নি। আমরা এখন বিচার পাচ্ছি না। তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক মামলা দায়ের করে আমাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করে। আমাদের সকল সিনিয়র নেতাদের নামে ১০-৬০টি মামলা রয়েছে।’
ফখরুল বলেন, সরকার এখন বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘মিথ্যা’ মামলার বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছে। ‘এর মানে এই যে, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে যেভাবে কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল, সেভাবে তারা (সরকার) আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের কারাগারে নিক্ষেপ করে সহজেই নির্বাচনের বাধা অতিক্রম করতে চায়।’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দেশের জনগণ এবার সরকারকে আর কোনো একতরফা জাতীয় নির্বাচন করতে দেবে না।
বিএনপির বিভাগীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে সমাবেশের আয়োজন করে দলটির কুমিল্লা মহানগর শাখা।
এবারের সমাবেশে পরিবহন ধর্মঘট ছাড়া কিছুটা স্বস্তির মধ্যে কুমিল্লায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন।
মানুষ আর নৌকায় চড়ে না
ফখরুল বলেন, ‘অবৈধ’ প্রধানমন্ত্রী তার অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচন জোর করে ক্ষমতা দখল করেছেন।
এই বিএনপি নেতা বলেন, রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ ও রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বৃহস্পতিবার যশোরে জনসভা করেছেন শেখ হাসিনা। ‘সেই জনসভায়, তিনি (তার অধীনে) আবার নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং নৌকা (আ.লীগের) নির্বাচনী প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন…কিন্তু সারা বাংলাদেশের মানুষ এখন গান গাইছে, যদি তারা পরিণতি জানত তাহলে তারা নৌকায় চড়ত না। ’
তিনি বলেন, তাই সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার আগে মর্যাদার সঙ্গে ক্ষমতা ছেড়ে দিন, কারণ মানুষ এখন চায় আপনি চলে যান।’
ফখরুল আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও জনগণকে তাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করতে হবে, জীবন উৎসর্গ করতে হবে।
জামানতের টাকা হারাবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা
বিএনপি বলেছে, সরকার এর অধীনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে একটি মঞ্চ-পরিচালিত নির্বাচন করার জন্য আবারও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। কারণ একটি নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা তাদের জামানতের অর্থ হারাবেন।
তিনি বলেন, সরকার দল ও এর কর্মসূচি দমন করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে কাল্পনিক মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করছে। ‘এটা একটা নির্লজ্জ শাসন। এদের চামড়া গন্ডারের মতো পুরু।’
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ হবে
ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ১০ ডিসেম্বরের জনসভা ঠেকাতে সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও রাজধানীতে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি শুরু করেছে। ‘আপনারা কুমিল্লাসহ কোথাও আমাদের সমাবেশ থামাতে পারেননি। আপনিও ১০ ডিসেম্বর ঢাকায়ও এটি করতে পারবেন না।’
ঢাকা মহানগরীতে বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেয়ার বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নানা মন্তব্য করলেও ফখরুল বলেন, তারা এখন বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে এসে নয়াপল্টনে সমাবেশ হবে।
তিনি বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র, ভোট ও জনগণের অন্যান্য অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেমেছে কিন্তু সরকার একে অন্য দিকে মোড় নেয়ার চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন: আপেক্ষিক স্বস্তির মধ্যেই কুমিল্লায় বিএনপির অষ্টম বিভাগীয় সমাবেশ শুরু
আইএমএফের লোন নিলে আরও ভারী হবে ঋণের বোঝা: বিএনপি
বিএনপি অভিযোগ করেছে যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার লোন জনগণের ঋণের বোঝাকে ভারী করে তুলবে। কারণ সরকার 'ব্যাপক লুটপাটের' মাধ্যমে জাতীয় কোষাগার খালি করেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আপনি আইএমএফ থেকে ঋণ নিচ্ছেন এটা ভালো কথা, কিন্তু কীভাবে শোধ করবেন? আপনি ইতোমধ্যেই রিজার্ভ শেষ করে ফেলেছেন এবং আপনি সমস্ত অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। আপনি কীভাবে এবং কোন খাতে অর্থ ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করছেন না। সুতরাং, আপনি জনগণের ওপর আরেকটি ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তারেক ও জুবাইদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা: মির্জা ফখরুল
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি আরও বলেন, সরকারের আইএমএফের ঋণ দরকার। কারণ এরই মধ্যে তারা চুরি করে সরকারি কোষাগার খালি করেছে।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ‘বেসামরিক-সামরিক অভ্যুত্থান’ স্মরণে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদেও এ সমাবেশ করা হয়।
এর আগে বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিশ্চিত করেছেন যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাবে এই আশার মধ্যে যে ঋণদাতা সংস্থাটি আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় দেবে।
ফখরুল বলেন, করোনাভাইরাস যখন দেশে আঘাত হানে তখন তাদের দল সরকারকে মেগাপ্রকল্প বন্ধ করার পরামর্শ দেয়। যাতে বরাদ্দকৃত অর্থ দরিদ্র মানুষের সুরক্ষায় ব্যবহার করা যায়। ‘কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত করেনি। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।’
তিনি বলেন, একজন বাংলাদেশি বিদ্যুৎ ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরের ধনকুবেরদের একজন হয়ে উঠেছেন, বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের নামে কত টাকা পাচার হয়েছে তা প্রকাশ করেছেন।
বিএনপি নেতা বলেন, হুন্ডি ব্যবসা এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নানাভাবে বিদেশে অর্থ পাচারের কৌশলের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। ‘আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য দুর্নীতি, চুরি এবং দেশের সম্পদ খালি করা।’
তিনি বলেন, এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক সাধারণ নেতা এখন রাজধানীতে বহুতল অ্যাপার্টমেন্টের মালিক এবং বিলাসবহুল যানবাহন ব্যবহার করেন।
ফখরুল বলেন, বিএনপি জনগণের ভোট ও অন্যান্য অধিকার পুনরুদ্ধার এবং দেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে আন্দোলনে নেমেছে।
আরও পড়ুন: জনগণ সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে: মির্জা ফখরুল
বিএনপি নেতা বলেন, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের বর্তমান আন্দোলনে ইতোমধ্যেই পাঁচজন বিরোধীদলীয় নেতা নিহত হয়েছেন। তাদের ত্যাগ ও রক্ত বৃথা যাবে না। ‘বাংলাদেশের জনগণ জেগে ওঠার কারণে দমনমূলক কর্মকাণ্ড দিয়ে তাদের দমন করা সম্ভব হবে না।’
তিনি একটি নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ তৈরি করতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ ভেঙে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, সরকার বিএনপির আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে মোড় নিতে নানা কৌশল করছে।
আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে এতটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে এখন মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিচ্ছে।
‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাকে তাদের দমনের প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কাল্পনিক মামলাও করেছে।
সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, নরসিংদীতে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতাকে অপরিশোধিত বোমা ও গানপাউডারসহ গ্রেপ্তার করা হলেও নরসিংদী যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এটা প্রমাণ করেছে যে তারা কতটা ভীত এবং তারা এই ধরনের কাজ করতে পারে।
তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের জন্য সরকারের নিন্দা জানান।
ফখরুল অভিযোগ করেন, ঢাকা মহানগরীতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা করা শুরু করেছে সরকার। পুরনো মামলায় বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার করছে। ‘মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে বিরোধীদের দমন করার এটা একটা পুরনো খেলা এবং তারা ১৪ বছর ধরে এই খেলা খেলছে।’
আরও পড়ুন: জামায়াতের সাথে বিএনপির রাজনীতির আদর্শিক মিল নেই; ভারত বিশেষ বন্ধু: ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান হবে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া বিভাগীয় শহরে তাদের দলের সমাবেশের মধ্য দিয়ে সারাদেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি সমাবেশের মাধ্যমে একটি গণঅভ্যুত্থান হবে। হাজার হাজার মানুষ এই সমাবেশে অংশ নেবে। আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এই শাসনের পতন ঘটাব।’
মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের দুই অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ঐক্যজোট ও ডেমোক্রেটিক লীগের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফখরুল এ মন্তব্য করেন।
দলের পরিকল্পিত বিভাগীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল (বুধবার) চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি বন্দরনগরীর পলো গ্রাউন্ডে সমাবেশ করতে যাচ্ছে, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন মির্জা ফখরুল।
চলমান বিদ্যুৎ সংকট, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং বিএনপির আন্দোলনের সময় ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও যশোরে পুলিশের গুলিতে বিরোধী দলের পাঁচ নেতাকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এটিই হবে প্রথম বিভাগীয় সমাবেশ।
চলমান আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২৭ সেপ্টেম্বর ১০টি বিভাগীয় শহরে জনসভা করার ঘোষণা দেয় বিএনপি।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়নের নামে সরকারের ব্যাপক লুণ্ঠন প্রকাশ পেয়েছে: বিএনপি
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরীতে বিশাল জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করবে দলটি।
দুই পক্ষের সঙ্গে কথা হয়
দুই দলের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণকারী বর্তমান অনির্বাচিত ও লুটেরা শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন সেই দ্বিতীয় দফা আলোচনা করছি এবং আমরা যুগপৎ আন্দোলনের মূল দাবিগুলো নিয়ে কথা বলছি।’
ফখরুল বলেন, তারা ইতোমধ্যে ১১টি দলের সঙ্গে তাদের দ্বিতীয় ধাপের রাজনৈতিক সংলাপে বসেছেন। ‘বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার জন্য আমরা যুগপৎ আন্দোলন শুরু করতে একমত হয়েছি।’
আলোচনায় নিজ নিজ দলের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব ও ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি।
দুই দলের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানও উপস্থিত ছিলেন।
গত ২ অক্টোবর কল্যাণ পার্টির সঙ্গে প্রথম বৈঠকের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু করে বিএনপি।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের দাবি ও ইস্যু চূড়ান্ত করতে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) এবং অলি আহমেদের এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এবং মুসলিম লীগের সঙ্গেও আলোচনায় বসে দলটি।
এর আগে, গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার ‘পুনরুদ্ধার’ করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করার রূপরেখা তৈরি করতে ২৪ মে থেকে শুরু হওয়া সংলাপের প্রথম পর্বে ২৩টি দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে বিএনপি।
আরও পড়ুন: পুলিশ ‘অবৈধভাবে’ বিরোধীদের তথ্য সংগ্রহ করছে: মির্জা ফখরুল
আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘ভয়ংকর স্বৈরাচারী’ বলে অভিহিত করেছে বিএনপি