ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই পণ্য উৎপাদনে দায়িত্বশীল উদ্যোগ নিতে আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার
নির্মাতাদের টেকসই ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে দায়িত্বশীল উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এছাড়াও শুধুমাত্র সাময়িক ট্রেন্ডিং অনুসরণ করতে গিয়ে কম সময়ের মধ্যে ইলেকট্রনিক পণ্য বাতিল না করতে ভোক্তাদের অনুরোধ করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ই-বর্জ্য দিবস উপলক্ষে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে ‘ফরমাল ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
সেমিনারে রিজওয়ানা হাসান সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ই-ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনা বিধিমালা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়কে সহায়তা এবং পরামর্শ দিতে আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাবাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ
তিনি বলেন, সরকার ই-ওয়েস্ট বিধিমালা ২০২১ বাস্তবায়ন করবে, যা ইলেকট্রনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ইলেকট্রনিক বর্জ্য কমানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে এবং রিসাইক্লিং শিল্পকে নিয়মিত ও উৎসাহিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
দেশব্যাপী একটি ব্যাপক ই-ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, সরকার, বেসরকারি খাত ও সাধারণ নাগরিকদের একত্রিত হয়ে এ বিষয়ে কাজ করা উচিত।
অনানুষ্ঠানিকভাবে ক্ষতিকর বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী, ডব্লিউইইই সোসাইটি-বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির ও বুয়েটের রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর ইসলাম।
সেমিনারে নীতিনির্ধারক, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও শিল্প নেতারা ই-ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন।
অনানুষ্ঠানিক রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া, যেমন উন্মুক্ত স্থানে পোড়ানোর মাধ্যমে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কারণে সৃষ্ট দূষণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বক্তারা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
এবারের দুর্গাপূজায় প্রায় দ্বিগুণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
২ মাস আগে
খুলনা সিটি করপোরেশনে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা নেই, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
প্রতিদিনই খুলনা নগরীতে জমা হচ্ছে কয়েক শত কেজি ইলেট্রনিক বর্জ্য বা ই-বর্জ্য। কিন্তু এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা নেই খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি)। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিত্যক্ত টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, এয়ারকন্ডিশনার, মাইক্রোওভেন, সিএফএল বাতি, ওয়াশিং মেশিন, মুঠোফোন, ডিভিডি প্লেয়ার, ইলেকট্রনিক খেলনাসামগ্রী ইত্যাদি ই-বর্জ্যের প্রধান উৎস।
আরও পড়ুন: কেসিসি’র ৬০৮ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
ইলেকট্রনিক সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেলেও উপাদানগুলো নিঃশেষ হয় না, বর্জ্যের মধ্যেই থেকে যায়। এগুলো পচনশীল নয়, বিধায় পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে।
কেসিসি থেকে জানা গেছে, নগরীতে দৈনিক উৎপাদিত হয় প্রায় এক হাজার টন বর্জ্য। এর মধ্যে কেসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা ৮০০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে রাজবাঁধ ও শলুয়া ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলে। বাকি ২০০ টন বর্জ্য ড্রেনে বা খালে পড়ে।
কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. আবদুল আজিজ বলেন, নগরীতে প্রতিদিন এক টনের কাছাকাছি ই-বর্জ্য উৎপাদন হয়। কিন্তু পৃথকভাবে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দক্ষতা তৈরি হয়। গৃহস্থালী বর্জ্যের মতো এগুলো রাজবাঁধে ফেলা হয়। ড্রেন থেকে আসা বিপুল পরিমাণ টিভি-কম্পিউটারসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের খোলস রূপসা স্লুইচগেট এলাকায় জমা হয়। সেগুলোও সংগ্রহ করে রাজবাঁধে ফেলা হয়।
প্রায় ১৫ বছর ধরে ভাঙারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মো. কবির বলেন, এখানে আগে টিভি, বিদ্যুতের মিটার, ব্যাটারি, পানির মোটর বেশি আসতো। গত সাত থেকে আট বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের মোবাইল, ছোট মটর বিক্রি বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, পণ্য খুলে পরিষ্কার করে বিক্রির জন্য রাখা হয়। কখনও কেউ সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের কথা বলেনি।
নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়ি থেকে পণ্য কিনে নিয়ে শেখপাড়ায় বিক্রি করেন দুলাল।
তিনি জানান, অনেকে নষ্ট জিনিস কিনে নিয়ে মেরামত করেন। বাকিটা ভাঙারি হিসেবে বিক্রি হয়। তার পুড়িয়ে তামা বের করি। বাকিটা ফেলে দেই। এসব কাজ করতে গিয়ে হাতে ফুসকুড়ির মতো উঠেছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ই-বর্জ্যের মধ্যে সিসা, ক্যাডমিয়াম, পারদসহ নানা ধরনের রাসায়নিক থাকে। যার ক্ষতিকর রশ্মি পরিবেশ ও প্রাণিকূলের জন্য ক্ষতিকর। অনেক সময় এগুলো প্রাণির রূপান্তরকেও ব্যাহত করে।
এছাড়া পারদ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরিবেশ ও মানবদেহে প্রবেশ করে। পারদ মস্তিষ্কের ক্ষতি করে, শ্রবণশক্তি হ্রাস ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ই-বর্জ্যের সিসা নবজাতকের স্নায়ুতন্ত্রে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে।
মো. আবদুল আজিজ জানান, কেসিসিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপার ওপর মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া শলুয়ায় আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ হচ্ছে। সেখানে সব ধরনের বর্জ্য পৃথক করে ব্যবস্থাপনা করা হবে।
প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় চলে আসবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ট্রাকের ধাক্কায় কেসিসির টোল আদায়কারী নিহত
কেসিসির ৮৬১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
১ বছর আগে