আগুন
৪৮ ঘণ্টায়ও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি এস আলম সুগার মিলের আগুন
৪৮ ঘণ্টা পার হয়েছে, তবুও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি এস আলম গ্রুপের সুগার মিলের আগুন। কারখানার ভেতরে এখনও পুড়ছে চিনির কাঁচামাল।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুন নেভাতে সময় লাগতে পারে আরও দুই থেকে তিনদিন।
আজ বুধবার (৬ মার্চ) বিষয়টি জানান চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুন পাশা।
তিনি বলেন, আগুন বাইরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও সময় লাগবে। পুরো এলাকাজুড়েই চিনির কাঁচামাল মজুত আছে। শুধু নিচ থেকে আগুন নেভানো সম্ভব নয়।
এই মুহূর্তে উপর থেকে পানি ছেটানোর বিকল্প নেই। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট কাজ করছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায়ও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি এস আলম সুগার মিলের আগুন
এর আগে সোমবার বিকাল ৪টার দিকে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানার ১ নম্বর গুদামে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী ও কোস্ট গার্ড।
এস আলম গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (করপোরেট) মোহাম্মদ আকতার হোসেন জানান, সেখানে পাঁচটি গুদাম রয়েছে। প্রতিটি গুদামের ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার মেট্রিক টন। আগুন লাগার সময়ও কারখানা চালু ছিল। কারখানাটিতে প্রায় সাড়ে ৫০০ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন।
আরও পড়ুন: এস আলম সুগার মিলের আগুন সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে, ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে পুরোদমে প্রোডাকশনে নামতে পারব। এ আগুনের পরিপ্রেক্ষিতে বাজারে চিনি কমবে না। শুধু রমজান নয়; আমাদের ৬-৭ লাখ টন পাইপলাইনে রয়েছে। শুধু একটা গোডাউনে আগুন লেগেছে, সেটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। তবে সেটিতে ক্ষয়ক্ষতি হলেও পাশে আরও গোডাউন রয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি রয়েছে। বাজারে আগুনের কোনো প্রভাব পড়বে না।’
এদিকে আগুনের তাপ ও পুড়ে যাওয়া চিনির গলিত লাভার চাপে হেলে পড়েছে দুর্ঘটনাকবলিত গোডাউনের এক পাশের দেওয়াল। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।
এছাড়া, কারখানার পুড়ে যাওয়া চিনি গলে কর্ণফুলীতে নদীতে পড়ে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে বলে এলাকাবাসীরা জানান।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে এস আলম সুগার মিলের আগুনে পুড়ে গেছে এক লাখ টন চিনি
২৪ ঘণ্টায়ও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি এস আলম সুগার মিলের আগুন
প্রায় ২৪ ঘণ্টায়ও চট্টগ্রামে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন সুগার রিফাইনারি কারখানায় সৃষ্ট আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
সোমবার দিবাগত রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণের কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে সুগার মিলের ভেতরে আগুন আবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে।
ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে এস আলম সুগার মিলের আগুনে পুড়ে গেছে এক লাখ টন চিনি
চিনির কাঁচামালগুলো দাহ্য পদার্থ হওয়ায় সেগুলো না সরানো পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ করতে দুই থেকে তিন দিন লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, চিনির কাঁচামালগুলো দাহ্য পদার্থ হওয়ায় আগুন নিভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। আগুন সম্পূর্ণ নেভাতে আরও দুই দিন সময় লাগতে পারে।
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, গোডাউনের ভেতরে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আগুন জ্বলছে। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঢুকতে পারছেন না, কারণ আগুনের তাপমাত্রা বেশি।
এর আগে সোমবার বিকাল ৪টার দিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের এই চিনিকলের একটি গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
খবর পেয়ে শুরুতে দুটি ইউনিট, পরে আরও পাঁচটি ইউনিটসহ মোট আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবু আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় যুক্ত হয় আরও সাতটি ইউনিট। সবমিলিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট কাজ করে।
এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের পাওয়ার প্লান্টের সহকারী ফিটার মনির জানান, ওই গুদামে প্রায় ১ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি ছিল। এগুলো পুড়ে গেছে। কাছেই পরিশোধিত চিনি আছে আরও কয়েক লাখ টন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ফের আগুন, এবার দুটি গরুসহ পুড়ল ১৮ ঘর
এস আলম সুগার মিলের আগুন সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে, ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
চট্টগ্রামে ফের আগুন, এবার দুটি গরুসহ পুড়ল ১৮ ঘর
চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলায় ফের আগুনের ঘটনা ঘটেছে। ভয়াবহ আগুনে এস আলম সুগার মিল পুড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় এবার পুড়েছে ১৮টি বসতবাড়ি ও দুটি গরু।
সোমবার দিবাগত রাত (৫ মার্চ) সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর গ্রামের সৈন্যার গুষ্ঠির বাড়িতে (৮ নম্বর ওয়ার্ড) এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। গরুর গোয়ালে মশা তাড়ানোর কয়েল থেকে আগুন ছড়িয়ে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা শোয়েব হোসাইন মুন্সী। তিনি জানান, ওই গ্রামের মো. ইসলামের গোয়াল ঘরে লাগানো মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
আরও পড়ুন: এস আলম সুগার মিলের আগুন সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে, ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
তিনি আরও বলেন, আগুন নিমিষেই ছড়িয়ে পড়ে পাশের মো. তাহের, দিল আহম্মদ, আবুল হোসেন, মো. শুক্কুর, মো. সৈয়দ, আব্দুস সালাম, মো. টিপু, শাহ আলম, বদিউল আলম, আলা উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন, মো. ফয়েজ, মো. ছবির, আব্দুল গণি, ওমর আলী, মো. রফিক, সোনা মিয়া ও মো. শুক্কুর এর বাড়িতে। এই ১৮টি বাড়িতে প্রায় ৪০-৫০ পরিবারের বসবাস ছিল। যারা বেশ অসহায় ও গরিব বলে জানা গেছে।
আগুনে তাদের সবার টিনের ও বেড়ার ঘর, নগদ টাকা, আসবাবপত্রসহ প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকার সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ সময় দুটি গরু অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। যার আনুমানিক মূল্যও প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে এস আলম সুগার মিলের আগুনে পুড়ে গেছে এক লাখ টন চিনি
তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে কর্ণফুলী ফায়ার সার্ভিস দমকল বাহিনীর একটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে ফায়ার সার্ভিস আসায় আগুন আশেপাশে বেশি বিস্তার করতে পারেনি বলে জানান স্থানীয়রা।
কর্ণফুলী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মাহমুদুল হক সুমন বলেন, ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে তার আগেই অনেকটা পুড়ে যায়। যেহেতু সবার বেড়া ও টিনের ঘর ছিলো।
প্রসঙ্গত, গতকাল ৪ মার্চ বিকাল ৪টার দিকে কর্ণফুলী থানাধীন ইছানগর এলাকায় এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ নামের ওই চিনি কারখানায় আগুন লাগে। আগুন নেভাতে ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায় । এতে ১ লাখ মেট্টিক টন চিনি পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার দাবি করা হয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ৪ ঘণ্টার মাথায় আবারও একই এলাকায় অগ্নিকাণ্ড ঘটল।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ঝিনাইদহে কয়েলের আগুনে ১১টি গবাদি পশুর মৃত্যু
এস আলম সুগার মিলের আগুন সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে, ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
সোমবার (৪ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন সম্পন্নরূপে নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানান কর্ণফুলী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা শোয়েব হোসাইন মুন্সী।
এদিকে আগুন লাগার ঘটনা খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রাতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ও ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা এ কমিটি গঠন করেছে। কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা জান্নাত এই তথ্য জানান।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে এস আলম সুগার মিলে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ৮ ইউনিট
তিনি জানান, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের আগুন নির্বাপণ কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০০ সদস্য, নৌবাহিনীর ১২ সদস্যের ২টি টিম, বিমানবাহিনী, কোস্ট গার্ড, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য সহযোগিতা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমানকে।
উল্লেখ্য, সোমবার বিকাল ৪ টার দিকে কর্ণফুলী ইছানগর এলাকায় এস আলম সুগার মিলে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।
কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, আগুনে তাদের গোড়াউনে রাখা এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি সম্পূর্ণ পড়ে গেছে। মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে এস আলম সুগার মিলের আগুনে পুড়ে গেছে এক লাখ টন চিনি
চট্টগ্রামে এস আলম সুগার মিলে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ৮ ইউনিট
চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগরে এস আলম শিল্প গ্রুপের এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলস লিমিটেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।
সোমবার (৪ মার্চ) বিকালে ৪টার দিকে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগরের সুগার কারখানায় এ ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর গাফিলতির কারণেই বার বার আগুনের ঘটনা
রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর গাফিলতির কারণেই বার বার আগুনের ঘটনা
রাজধানী ঢাকায় কয়েক দশক ধরেই ঢাকায় অগ্নিকাণ্ড গটে চলেছে। পর্যবেক্ষণ ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে বার বার প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ক্রমাগত অবহেলা ও যথাযথ তদারকির অভাবের ফল এসব ঘটনা।
রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নির্দেশনা পুরোপুরি না মেনে। এসব ভবনে অগ্নিসংকেতের ব্যবস্থা নেই। নেই পর্যাপ্ত পানি ও অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: তালাক দেওয়ায় সাবেক স্ত্রীর গায়ে আগুন দিয়ে নিজেও পুড়ে মরল যুবক
আগুনের ঘটনায় গাফিলতির জন্য রাজউকসহ সংশ্লিস্ট সংস্থা, ভবন মালিকসহ যারা দায়ী তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত নজির সৃষ্টি করতে পারলে আগুনের ঘটনা কমবে। বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণে একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে বলে নগর পরিকল্পনাবিদদরা মনে করেন।
প্রায় প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর তদন্ত কমিটি হয়। কিন্তু এসব তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেন বললেই চলে।
নানা অব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবন এবং রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমোদনের বাইরে ভবন ব্যবহার নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে নিমতলী, চূড়িহাট্টা, এফআর টাওয়ার, আরমানিটোলা, নিউমার্কেট, মগবাজার বিস্ফোরণ, গুলিস্তান ট্রাজেডিসহ একের পর এক হৃদয় বিদারক ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে ঢাকার বাসিন্দাদের। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে রাজধানীর বেইলি রোড ট্রাজেডি। নতুন করে মারা গেছেন ৪৬ জন। এসব প্রতিটি ট্রাজেডির পরেই সংশ্লিষ্ট সবারই মুখেই ঝুঁকিমুক্ত শহর গড়ার প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছুটেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সময়ের সঙ্গে আড়ালে চলে গেছে প্রতিটি ঘটনা।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে আগুনে পুড়েছে ৩টি ঝুটের গোডাউন
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান ইউএনবিকে বলেন, ‘আগুনের ঘটনায় ইমারত অনুমোদন ও তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্হা, ভবন মালিকসহ যারা দায়ী তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারলে আগুনের ঘটনা কমবে, না হলে অতীতের মতো ছাড় দিলে একটার পর একটা ঘটনা ঘটবে।’
এসব অগ্নিকাণ্ডের দায় রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা, ভবন মালিকের পাশাপাশি জেনে শুনে ভাড়া নেওয়া দোকান মালিকদের নিতে হবে বলে জানান তিনি।
ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মিশ্র ব্যবহার রাজধানীকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। পৃথিবীর কোথাও ঢাকার মতো মিশ্র ব্যবহারের উদাহরণ নেই। রাজউক বাইরের দেশের উদাহরণ দিচ্ছে, কিন্তু বাইরে হয়তো আবাসিক জোনে ছোট্ট একটা কফি শপ বা ছোট্ট কোনো দোকান আছে। কিন্তু ঢাকায় রাজউক যেভাবে আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিকে রূপান্তরের বৈধতা দিচ্ছে, এতে রাজধানীকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঢাকার অধিকাংশ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নির্দেশনা পুরোপুরি না মেনে। নেই পর্যাপ্ত পানি ও অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।’
আরও পড়ুন: নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে
অগ্নি দুর্ঘটনা নিরসনে জাতীয় বিল্ডিং কোড ও ফায়ার কোডের যথাযথ প্রয়োগ কেন জরুরি
আধুনিক নকশার আকাশচুম্বী অট্টালিকায় গতিশীল হচ্ছে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। কিন্তু অন্যদিকে শিল্পের এই দ্রুত প্রসারই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে জন-জীবনের জন্য। নির্মাণের ন্যূনতম মাপকাঠি মেনে না চলায় রীতিমতো মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে ভবনগুলো।একের পর এক আগুন লাগার ঘটনায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে দেশের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধার শহর ঢাকা। ভবন নির্মাণের সুস্পষ্ট বিধিমালা ও আইন থাকলেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে। এমতাবস্থায় জাতীয় বিল্ডিং কোড ও ফায়ার কোড-এর বাস্তবায়ন কেন অত্যাবশ্যক হয়ে দাড়িয়েছে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
জাতীয় বিল্ডিং কোড
অবকাঠামো নির্মাণকল্পে পূর্ব নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট নীতি সম্বলিত নথির নাম বিল্ডিং কোড, যার উপর নির্ভর করে স্থাপনা তৈরির মানদণ্ড। সরকারি বা বেসরকারি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রণীত হওয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পায় এই নীতিমালা। সাধারণত স্থানীয় কাউন্সিলের কাছ থেকে পরিকল্পনার অনুমতি পাওয়ার জন্য ভবনগুলোকে এই কোড মেনে চলতে হয়। বিল্ডিং কোডের মূল উদ্দেশ্য হল জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বিল্ডিং কোড বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমন- আন্তর্জাতিক, জাতীয়, রাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয় কোড। স্থানভেদে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও সামগ্রিকভাবে প্রতিটি কোডেরই উদ্দেশ্য এক।
বাংলাদেশের নির্মাণ প্রকল্পের জন্য সর্বতভাবে বিএনবিসি (বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড) অনুসরণ করা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে হালনাগাদকৃত কোডটি এখনও বহাল রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প ঝুঁকি কমাতে বিল্ডিং কোড হালনাগাদ হচ্ছে: দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী
জাতীয় বিল্ডিং কোডের অগ্নি সুরক্ষা সম্পর্কিত বিধান
অগ্নি দুর্ঘটনা ঝুঁকি নিরসনে পূর্ব সতর্কতা এবং জরুরী অবস্থায় করণীয় সমূহ নিয়ে অগ্নি সুরক্ষার জন্য বিএনবিসি’র সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। সেগুলো হলো:
- আগুনের বিস্তার প্রতিরোধের জন্য অগ্নি-প্রতিরোধী উপকরণ নিয়ে প্রতিটি ভবন নির্মাণ করতে হবে।
- ভবনগুলো আগুন সনাক্তকরণ এবং অ্যালার্ম সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত করতে হবে। আগুনের ধোঁয়া, তাপ ও আগুন শনাক্ত করতে এবং আগুনের ব্যাপারে বাসিন্দাদেরকে দ্রুত সতর্ক করতে এগুলো কার্যকর হতে হবে।
- অগ্নি-দুর্ঘটনার সময় দ্রুত বাইরে বের হওয়ার জন্য ভবনগুলোতে একাধিক উপায় থাকতে হবে। যেমন- সিঁড়ি, করিডোর এবং এক্সিট অগ্নিকাণ্ডের সময় বাসিন্দাদেরকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সহায়তা করে।
- আগুন নিয়ন্ত্রণ ও নেভানোর জন্য সহায়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করণে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে ভবনকে সজ্জিত করতে হবে।
- আগুন লাগার সময় ধোঁয়ার বিস্তার নিয়ন্ত্রণের জন্য ভবনে ধোঁয়া পরিচালন ব্যবস্থা যেমন স্মোক ভেন্ট, এক্সস্ট ফ্যান এবং প্রেসারাইজেশন সিস্টেম থাকতে হবে।
- অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে ভবনের মালিক এবং বাসিন্দাদের জন্য অবশ্যই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডের ভবনে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিসের ডিজি
জাতীয় ফায়ার কোড
অগ্নি প্রতিরোধ এবং অগ্নি সুরক্ষায় জরুরি নির্দেশনামুলক এবং দক্ষতা-সম্পর্কিত বিধিমালার নাম ফায়ার কোড।
বাংলাদেশের বর্তমান অনুসৃত ফায়ার কোড হচ্ছে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ বিধিমালা-২০১৪, যেটি নির্ধারিত হয়েছে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩-এর আওতায়।
এই আইন অনুযায়ী একটি বহুতল বাণিজ্যিক কাঠামোগত নকশা বা বিন্যাসের জন্য ডিপার্টমেন্ট অফ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (এফএসসিডি)-এর মহাপরিচালকের অনুমোদন নিতে হয়। বিল্ডিং নিরাপত্তা যাচাই করে একটি অকুপেন্সি সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে এই সম্মতি প্রদান করা হয়। এই ছাড়পত্র দেয়ার পূর্বে যে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হয় সেগুলো হচ্ছে-
- ভবনের সামনে সড়কের প্রশস্ততা
- নকশা অনুসারে ভবনের অগ্নি-নিরাপত্তা পরিকল্পনা
- ভবন থেকে বের হওয়ার বিকল্প পথ
- কাছাকাছি পানির সংস্থান
- গাড়ি ঢুকতে পারবে কি না
অতঃপর এই ছাড়পত্র দেখিয়ে রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) থেকে ভবনের নকশার অনুমোদন নিতে হয়। এরপর শুরু হয় ভবন নির্মাণের কাজ। নির্মাণকাজ আংশিক বা পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর ভবনটি ব্যবহারের জন্য পুনরায় রাজউকের সরণাপন্ন হতে হয়। এ সময় রাজউক অনুমিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কিনা তা তদারক করে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তবেই প্রদান করা হয় বসবাস বা ব্যবহারের সনদ।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডের ভবনটিতে ‘ফায়ার এক্সিট’ নেই: প্রধানমন্ত্রী
গাজীপুরে আগুনে পুড়েছে ৩টি ঝুটের গোডাউন
গাজীপুরের মনিপুরে আগুনে পুড়ে গেছে ৩টি ঝুটের গোডাউনের মালামাল। ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
শনিবার দিবাগত রাত (৩ মার্চ) সোয়া ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, গাজীপুরের পিরুজালী ইউনিয়নের মনিপুর এলাকায় রাত সোয়া ২টার দিকে একটি ঝুট গোডাউনে এই আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আরও দুটি গোডাউনে।
আরও পড়ুন: নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে
তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার স্টেশনের ৪টি ইউনিট আগুন নির্বাপনের কাজ শুরু করে। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় এ আগুন নিয়ন্ত্রণ আসে।
এ সময় আগুনে পুড়ে যায় ৩টি ঝুটের গোডাউনের মালামাল। তবে এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও আগুন লাগার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় আগুনে পুড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন হিমাগারে আগুন
বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় মোদির শোক
ঢাকার বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে রাষ্ট্রপতির শোক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে রাজধানীর গ্রিন কোজি কটেজ শপিং মলে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। এ দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত সুস্থতাও কামনা করেছেন মোদি।
শুক্রবার (১ মার্চ) চিঠিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, এই দুঃসময়ে ভারত বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম জনগণের জন্য তার শুভকামনা থাকবে।
আরও পড়ুন: বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: ভোলার দুই যুবকের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া
গাজীপুরে মার্কেটের গোডাউনের আগুন নিয়ন্ত্রণে
গাজীপুরের টঙ্গীতে আগুনে পুড়ে গেছে একটি মার্কেটের কয়েকটি গোডাউনের মালামাল। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট দুঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে আগুন।
বুধবার(২৮ ফেব্রুয়ারি)ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুন লাগে।
স্থানীয়রা জানায়, টঙ্গী বাজারের মিতালী ম্যানসনে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুন লাগে। ভবনটির পাঁচ তলা ভবনে আগুন লাগে। পরে আগুন তিনতলা ও চারতলায় ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় করাতকলের আগুন নিয়ন্ত্রণে
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, খবর পেয়ে টঙ্গী ও আশপাশের ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে সকাল সাড়ে ৭টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। কোনো হতাহতের খবরও পাওয়া যায়নি বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: শেরপুর আগুনে পুড়ে দাদি-নাতির মৃত্যু