ডব্লিউএইচও
দেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে ১৪ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু
বাংলাদেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে ১৪ হাজারের বেশি শিশু মারা যায় বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফ।
সারাদেশে হাজারো শিশুর অকাল মৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও কাজ করতে সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, কমিউনিটি ও সাধারণ মানুষের প্রত্যেককে তাদের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানায় সংস্থা দুটি।
বিশ্ব পানিতে ডোবা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে সোমবার তারা এ আহ্বান জানায়।
আরও পড়ুন: পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
ব্যাপকভাবে স্বীকৃত না হলেও দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ পানিতে ডোবা যা একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ‘প্রতি বছর এত মানুষ প্রাণ হারায় তা দুঃখজনক। আমরা জানি এসব মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। প্রতিটি শিশুর বেঁচে থাকা ও বেড়ে উঠার অধিকার নিশ্চিতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও কাজ করতে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে আমরা সাধারণ মানুষ, কমিউনিটি ও সরকারকে আহ্বান জানাই।’
বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়।
পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার প্রতি ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টি ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে যেখানে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর বন্যায় দেশের বিশাল এলাকা পানিতে তলিয়ে যায় এবং সচেতনতা ও সাঁতারের দক্ষতার অনুপস্থিতি জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে।
গ্রামীণ এলাকার শিশু যারা জলাশয়ের কাছে বড় হয় তারাও প্রতিদিন পানিতে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
আরও পড়ুন: নানার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে পানিতে ডুবে কিশোরীর মৃত্যু
পানিতে ডোবা একটি উল্লেখযোগ্য জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং বিশ্বব্যাপী অনিচ্ছাকৃত মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। বাংলাদেশে শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ পানিতে ডোবা।
বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ড. বরদান জং রানা বলেন, ‘ডব্লিউএইচও পানিতে ডোবা রোধে কৌশল ও হস্তক্ষেপের সুপারিশ করে এবং একটি মাল্টিসেক্টরাল প্রচেষ্টার প্রচার করে। মাল্টিসেক্টরাল সহযোগিতা বৃদ্ধি, ডোবা প্রতিরোধে শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রচার এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা পানিতে ডোবার ট্র্যাজেডি প্রতিরোধ করতে পারি এবং সবার জন্য একটি নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারি।’
করোনার কারণে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হয়েছে
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি আনুমানিক ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হয়েছে বলে জাতিসংঘের এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত শুক্রবারের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ডিপথেরিয়া, ধনুষ্টঙ্কার ও হুপিং কাশি (ডিটিপি৩) এর বিরুদ্ধে তিনটি ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে এমন শিশুদের সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ৫ শতাংশ কমে ৮১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷
ফলস্বরূপ, শুধুমাত্র ২০২১ সালেই ২৫ মিলিয়ন শিশু ডিটিপির নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির এক বা একাধিক ডোজ মিস করেছে।
২০২১ সালে টিকা মিস করা শিশুর সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় ২ মিলিয়ন বেশি এবং ২০১৯ সালের তুলনায় ৬ মিলিয়ন বেশি।
এই টিকাগ্রহণ ব্যাহত হওয়ার কারণ হলো- যুদ্ধাবস্থায় বসবাসকারী শিশুদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ভঙ্গুর সামাজিক কাঠামো। কেননা এর ফলে টিকাদান কর্মসূচি প্রায়ই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
এছাড়া ভুল তথ্য, কোভিড-১৯ এর কারণে পরিষেবা ও সরবরাহ শৃঙ্খল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, টিকার স্বল্পতা এবং অসম স্বাস্থ্য সুবিধাপ্রাপ্তি ইত্যাদিও প্রভাব রেখেছে।
আরও পড়ুন: কাউকে পেছনে না ফেলে ন্যায়সঙ্গত ও বর্ধনশীল কর্মী তৈরির আহ্বান জাতিসংঘ প্রধানের
এ বিষয়ে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘এটি শিশু স্বাস্থ্যের জন্য একটি বিপদ সঙ্কেত। আমরা একটি প্রজন্মকে শৈশবকালীন টিকাদানে সবচেয়ে বেশি ঘাটতির শিকার হতে দেখছি। এর পরিণতি জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।’
তিনি আরও বলেন,‘যদিও গত বছর কোভিড-১৯ মহামারি ও লকডাউনের ফলে মহামারির বিরুদ্ধে কার্যকর টিকাগ্রহণের পরিমাণ প্রত্যাশিত ছিল, তবে বর্তমানে তা হ্রাস পেয়েছে।’
বছরে ২৫ মিলিয়ন শিশুর মধ্যে ১৮ মিলিয়ন পর্যন্ত ডিটিপি টিকার একটি ডোজও পায়নি। এসব শিশুদের বেশিরভাগই ভারত, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইথিওপিয়া, ফিলিপাইন এবং অন্যান্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বাস করে।
২০১৯ ও ২০২১ সালের মধ্যে একটিও টিকা না পাওয়া শিশুদের সংখ্যা আপেক্ষিকভাবে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে মিয়ানমার ও মোজাম্বিক রয়েছে।
ডব্লুউএইচও মহাপরিচালক ড. তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেছেন, ‘হাম, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার মতো ঘাতক রোগের টিকা দেয়ার সঙ্গে কোভিড-১৯ টিকাদানের পরিকল্পনা ও সমন্বয় করা উচিত।’
আরও পড়ুন: যুদ্ধ, জলবায়ু বিপর্যয় বহুমুখী খাদ্য সংকট সৃষ্টি করছে: জাতিসংঘ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিপুল সংখ্যক শিশুর অপুষ্টি ঝুঁকি বাড়িয়েছে: জাতিসংঘ
করোনার ৪র্থ ঢেউ: সতর্কতার আহ্বান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের
প্রায় চার মাস পর গত বুধবার দেশে একদিনে করোনা শনাক্ত আবার এক হাজার ছাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় মহামারির চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়েছে।
তারা অমিক্রনের দুটি সাব-ভেরিয়েন্ট-বিএ.৪-৫ কে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কোভিড সংক্রমণের হার বেড়েছে বলে মনে করছেন। তাদের আশঙ্কা, আগামী সপ্তাহগুলোতে করোনা শনাক্ত আরও বাড়তে পারে, শুরু হতে পারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন।
তবে নতুন ঢেউ আগেরগুলোর মতো মারাত্মক হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, খুব বেশি সংখ্যক লোক সংক্রমণ বা টিকা দেয়ার মাধ্যমে কিছু ধরণের অ্যান্টিবডি অর্জন করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. রোবেদ আমিন, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা মুজাহেরুল হক ইউএনবির সাথে আলাপকালে এসব পর্যবেক্ষণের কথা জানান।
তারা কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার ওপর জোর দেন। যার মধ্যে রয়েছে সবাইকে মাস্কের ব্যবহার এবং সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের সংক্রমণ কমাতে কোভিড ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজের কভারেজের আওতায় আনার জন্য ভ্যাকসিনেশন বৃদ্ধি করা।
বাংলাদেশে বুধবার ১ হাজার ১৩৫ এবং বৃহস্পতিবার ১ হাজার ৩১৯ জন নতুন করে করোনায় শনাক্ত হয়েছে।
এর আগে দেশে ২৫ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ দৈনিক ১ হাজারের বেশি (১ হাজার ৪০৯ জন) করোনা শনাক্ত হয়েছিল, যেখানে ১১ জন মারা গিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজার ২১৪ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ১১ কোটি ৮৬ লাখের বেশি মানুষ এখন পর্যন্ত কোভিড ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ পেয়েছে এবং ১২ কোটি ৮৯ লাখের বেশি মানুষ প্রথম ডোজ পেয়েছে।
এছাড়া দেশে ২ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ বুস্টার ডোজ পেয়েছেন। সরকার এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ১২ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের কোভিড এর টিকা দিয়েছে।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ওমিক্রনের সাব-ভেরিয়েন্ট বিএ.৪-৫ বিশ্বব্যাপী অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। আমি মনে করি এই দুটি সাব-ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ আমাদের দেশে কোভিড শনাক্ত বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রাখছে। আমরা এটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিন সিকোয়েন্সিং রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি।’
তিনি বলেন, ভাইরাসে আক্রান্তে বৃদ্ধি আরও অন্তত তিন সপ্তাহ অব্যাহত থাকবে। তবে এই ঢেউ মারাত্মক নাও হতে পারে। যেহেতু ক্রমবর্ধমান শনাক্তের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এখনও খুব কম, আমরা ধরে নিতে পারি যে এই ঢেউ গুরুতর নাও হতে পারে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন গোষ্ঠী এখন বিভিন্ন ভাইরাসের ক্লাস্টার সংক্রমণ প্রত্যক্ষ করছে। লোকজন মাস্ক না পরে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি বজায় না রেখে এখানে এবং সেখানে ঘোরাফেরা করার কারণে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
পড়ুন: বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ছাড়াল
তিনি আরও বলেন, এখনও কোভিড সংক্রমণের আসল চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ ভাইরাসের লক্ষণ রয়েছে এমন অনেক লোক কোভিড পরীক্ষা করছে না।
রোবেদ বলেন, কোভিড পরিস্থিতির আরও অবনতি হলেও আমরা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। প্রায় ২ হাজার হাসপাতালের বেড কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত।
তিনি জনগণকে ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ গ্রহণের আহ্বান জানান।
ডা. রোবেদ বলেন, এখনও অনেকে তৃতীয় ডোজ পাননি। টিকা দেয়ার মাধ্যমে সংক্রমণ বন্ধ নাও হতে পারে, তবে এটি তীব্রতা কমাতে পারে। সুতরাং, বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের সহবাসজনিত রোগ আছে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ম কঠোরভাবে বজায় রাখার পাশাপাশি তৃতীয় ডোজ গ্রহণ করা উচিত।
ফের করোনায় মৃত্যু হার বেড়েছে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, টানা পাঁচ সপ্তাহ করোনাভাইরাসে মৃত্যু হ্রাস পাওয়ার পর গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৪ শতাংশ বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার মহামারি সম্পর্কে প্রকাশিত সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, গত সপ্তাহে আট হাজার ৭০০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এর মধ্যে আমেরিকায় ২১ শতাংশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলে মৃতের সংখ্যা ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডব্লিউএইচও আরও বলেছে, তবে করোনাভাইরাস আক্রান্তের হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহে প্রায় ৩২ লাখ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংক্রমণের হার চূড়ায় পৌঁছানোর পর থেকেই করোনা সংক্রমণের হার হ্রাস পেয়েছে। তবে এসময়েও কিছু অঞ্চলে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বগতি ছিল। যেমন মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংক্রমণ যথাক্রমে ৫৮ শতাংশ এবং ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইসাস চলতি সপ্তাহের শুরুতে বলেন, যেহেতু অনেক দেশ নজরদারি এবং পরীক্ষা কমিয়ে দিয়েছে, তাই শনাক্তের সংখ্যা কম জানা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে মহামারিতে মৃতের সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যানের প্রায় ৫ গুণ বেশি: ডব্লিউএইচও
বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ১৯ শতাংশ কমেছে, মৃত্যু স্থিতিশীল: ডব্লিউএইচও
ব্রাজিলে আরও একজন মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত
মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তে আরও একজনের তথ্য নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল। ২৯ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি এই সপ্তাহে স্পেন ভ্রমণ করেছেন বলে জানা গেছে।
শনিবার সাও পাওলো স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবার ব্রাজিলে অবতরণের পর তাকে ভিনহেডো শহরে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। স্পেনের একটি পরীক্ষাগারে ওই ব্যক্তি মাঙ্কিপক্সে পিজিটিভ হয়েছেন বলে জানানো হয়েছিল।
এর আগে ব্রাজিল সাও পাওলোতে বৃহস্পতিবার মাঙ্কিপক্সে প্রথম আক্রান্তের কথা নিশ্চিত করেছিল। ৪১ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিও সম্প্রতি স্পেন এবং পর্তুগাল ভ্রমণ করেছেন। তিনি আইসোলেশনে রয়েছেন।
ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মাঙ্কিপক্সের অন্তত আটটি সন্দেহজন কেস তদন্ত করছে।
বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেইয়েসাস বলেছেন, ২৯টি দেশ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কাছে মাঙ্কিপক্সের এক হাজারেরও বেশি শনাক্তের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।
পড়ুন: চুয়াডাঙ্গার সেই সন্দেহভাজন রোগী মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত নয়: মেডিকেল বোর্ড
মাঙ্কিপক্সের আতঙ্ক: ভারত ফেরত যুবক যশোর হাসপাতালে ভর্তি
বাংলাদেশে মহামারিতে মৃতের সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যানের প্রায় ৫ গুণ বেশি: ডব্লিউএইচও
বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাস মহামারিতে বাংলাদেশে ২৯ হাজারের কম মানুষ মারা গেছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান- দেশে করোনায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা এক লাখ ৪১ হাজার; যা সরকারি গণনার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।
ডব্লিউএইচও’র অনুমান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি এবং ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এর মধ্যে করোনা মহামারির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন ( পরিসীমা ১৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন থেকে ১৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন)। যা বর্তমান সরকারি পরিসংখ্যানের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। গত বছরের শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মাত্র পাঁচ দশমিক ৪ মিলিয়ন মৃত্যুর কথা জানা যায়।
এই সংখ্যার মধ্যে সরাসরি করোনভাইরাসজনিত কারণে বা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মহামারির প্রভাবের জন্য দায়ী কারণগুলোর কারণে মৃত্যুও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যেমন- হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে পূর্ণ থাকায় চিকিত্সা নিতে না পারায় অনেক ক্যান্সারের রোগী চিকিৎসা নিতে পারেনি।
আরও পড়ুন: ডব্লিউএইচও থেকে বিনামূল্যে করোনার টিকা পাওয়া দেশের মধ্যে শীর্ষে বাংলাদেশ
তবে লকডাউন এবং বাড়ি থেকে কাজ করার ফলে মোটর-যান দুর্ঘটনা বা পেশাগত আঘাতের মতো নির্দিষ্ট কিছু দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম থাকার কারণে মহামারি চলাকালীন মৃত্যুর আনুমানিক সংখ্যা প্রভাবিত হতে পারে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ডব্লিউএইচও’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ মৃত্যু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকায় ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে করোনায় ৪৭ লাখ মৃত্যু হয়েছে। যা দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানের ১০ গুণ এবং বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যুর প্রায় এক তৃতীয়াংশ।
নিউ ইয়র্ক টাইমস এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যে ভারত সরকারের আপত্তির কারণে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। তা না হলে এটি এপ্রিলের শুরুতে প্রকাশ পাওয়ার কথা ছিল।
ভারত সরকার বলেছে, ডব্লিউএইচও’র নেয়া পদ্ধতিটি সম্পর্কে তাদের ‘উদ্বেগ’ রয়েছে।
তবে অন্যান্য গবেষণায় বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর অনুমান ডব্লিউএইচও’র থেকেও বেশি।
ল্যানসেটে প্রকাশিত এই গবেষণার মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে প্রভাবশালী। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী ১৮ দশমিক ২ মিলিয়ন অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ১৯ শতাংশ কমেছে, মৃত্যু স্থিতিশীল: ডব্লিউএইচও
প্রভাবশালী ইনস্টিটিউট অফ হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএমএইচই) এর একটি দলের পরিচালিতএই সমীক্ষা, করোনায় বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যা চার লাখ ১৩ হাজার, যা সরকারি পরিসংখ্যান থেকে ১৫ গুণ বেশি।
সে সময় একজন বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তা এটিকে ‘অনুমানমূলক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
ডব্লিউএইচও-এর অনুমানে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ মাসের মধ্যে বয়স ও লিঙ্গের ভিত্তিতে অতিরিক্ত মৃত্যুহার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তারা নিশ্চিত করে যে বিশ্বব্যাপী নারীদের তুলনায় পুরুষদের মৃত্যের সংখ্যা বেশি ছিল (পুরুষ ৫৭ শতাংশ ও নারী ৪৩ শতাংশ ) এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এ হার বেশি ছিল।
ডব্লুএইচও’র ডেটা, অ্যানালিটিক্স এবং ডেলিভারির সহকারি মহাপরিচালক ডা. সামিরা আসমা বলেছেন, ‘অতিরিক্ত মৃত্যুর পরিমাপ মহামারির প্রভাব বোঝার জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। মৃত্যুর প্রবণতার পরিবর্তন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মৃত্যুহার কমাতে এবং কার্যকরভাবে ভবিষ্যতের সঙ্কট রোধে নীতি নির্দেশক তথ্য প্রদান করে। অনেক দেশে ডেটা সিস্টেমে সীমিত বিনিয়োগের কারণে, অতিরিক্ত মৃত্যুর প্রকৃত মাত্রা প্রায়ই লুকিয়ে থাকে।’
ডব্লিউএইচও’র করা পরিসংখ্যানের পদ্ধতিগুলো সংস্থাটির ‘টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ ফর কোভিড-১৯’- এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডেবি ব্র্যাডশ ও ডক্টর কেভিন ম্যাককরম্যাক।
ডব্লিউএইচও বলেছে, বাংলাদেশে, বিশেষ করে ২০২০ সালের জুন-জুলাই-আগস্ট সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত মৃত্যুর হার প্রথমবার বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডব্লিউএইচও অনুমান করেছে, সাধারণ পরিস্থিতিতে প্রত্যাশিতের চেয়ে অতিরিক্ত ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।
মহামারির প্রথম বছর শেষে বাংলাদেশে ৪৬ হাজার ৪১ জন মানুষের অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছিল।
দ্বিতীয় বছর এপ্রিল ১৪ হাজার ২৭৬ জনের, জুনে ১৩ হাজার ১৩ জনের, জুলাইয়ে ২০ হাজার ৩০ জনের এবং আগস্টে ১৮ হাজার ৯১৫ জনের অতিরিক্ত মৃত্যু হয়।
ডব্লিউএইচও’র হিসেব অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশে অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ৪০ হাজার ৭৬৪ জনে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: ডেল্টার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ওমিক্রন প্রতিরোধ করতে হবে: ডব্লিউএইচও
বিশ্বের ৯৯ শতাংশ মানুষ নিম্নমানের বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়: ডব্লিউএইচও
ডব্লিউএইচও-এর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিশ্বের ৯৯ শতাংশ মানুষ খুবই নিম্নমানের বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়। এ ধরণের বাতাস দূষিত পদার্ত ও কণা দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে, যা ফুসফুসের গভীরে বা শিরা-ধমনীতে প্রবেশ করায় বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণ হতে পারে।
জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের বায়ুর মান নিয়ে প্রায় ছয়মাস গবেষণার পর সোমবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই গবেষণার তথ্যসমূহ বিশ্বের বিভিন্ন শহর ও গ্রাম থেকে সংগৃহীত।
ডব্লিউএইচও-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফ্রিকার পরে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে বায়ুর গুণমান সবচেয়ে খারাপ।
ডব্লিউএইচও বলেছে, গবেষণায় পিএম২.৫ এবং পিএম১০ নামে পরিচিত দুই ধরনের কণা বিবেচনা করে প্রথমবারের জন্য নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের স্থল পরিমাপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বে আত্মহত্যা প্রবণতায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম: ডব্লিউএইচও
নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের উৎপত্তি মূলত মানব সৃষ্ট জ্বালানী পোড়ানোর ফলে। যেমন-গাড়ির কালো ধোঁয়ার মাধ্যমে এবং এটি শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
এর ফলে হাঁপানির মতো শ্বাসযন্ত্রের রোগ, কাশি এবং শ্বাসকষ্টের মতো রোগীর সংখ্যা সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের সর্বাধিক ঘনত্ব পাওয়া গেছে।
কণা পদার্থের অনেক উৎস রয়েছে। যেমন পরিবহন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কৃষি, বর্জ্য পোড়ানো এবং শিল্পকারখানা; সেইসঙ্গে মরুভূমির ধুলোর থেকেও এর উৎপত্তি হতে পারে।
উন্নয়নশীল বিশ্বে বাতাসের অবস্থা শোচনীয়। ভারতে উচ্চ মাত্রার পিএম১০। এছাড়া চীনে পিএম২.৫-এর উচ্চ মাত্রা দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: করোনার টিকা পায়নি ৩৬টি দেশ: ডব্লিউএইচও
কোভিড ভ্যাকসিনের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ দরকার: ডব্লিউএইচও
বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ১৯ শতাংশ কমেছে, মৃত্যু স্থিতিশীল: ডব্লিউএইচও
গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ শতাংশ কমেছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে।
মহামারি নিয়ে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার মঙ্গলবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী ১৬ মিলিয়ন নতুন করোনা সংক্রমণ এবং প্রায় ৭৫ হাজার মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরই একমাত্র অঞ্চল যেখানে গত সপ্তাহে করোনা ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রায় ৩৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ৩৮ শতাংশ এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মৃতের সংখ্যা বেড়েছে।
পড়ুন: দেশে করোনায় কমেছে মৃত্যু ও শনাক্ত
রাশিয়ায় নতুন করোনা সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটিতে এবং পূর্ব ইউরোপের অন্যন্য কিছু দেশে শনাক্ত দ্বিগুণ হয়েছে, যার অধিকাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আতংকের মাঝে করোনার আলফা, বিটা এবং ডেল্টাসহ অন্যান্য সমস্ত রূপগুলোর হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহে বিশ্বের বৃহত্তম ভাইরাস ডাটাবেসে আপডেট করা চার লাখের বেশি করোনাভাইরাস সিকোয়েন্সের মধ্যে ৯৮ শতাংশের বেশি ছিল ওমিক্রন।
ডব্লিউএইচও জানায়, ওমিক্রনের বিএ.২ ধরন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা, ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশে এর ব্যাপকতা বেড়েছে।
সংস্থাটির আফ্রিকার পরিচালক ড. মাতশিদিসো মোয়েতি গত সপ্তাহে বলেছেন, ‘কম টিকা দেয়ার হার সত্ত্বেও আমরা ‘সুড়ঙ্গের শেষে আলোর পথে রয়েছি’ এবং আফ্রিকা এর তীব্র মহামারি পর্ব থেকে উত্তরণ করছে।’
পড়ুন: বিশ্বে করোনা সংক্রমণ সাড়ে ৪১ কোটি ছাড়িয়েছে
সুনামির মতো ছড়িয়ে পড়ছে ওমিক্রন ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
করোনার ওমিক্রন ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সুনামির মতো ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস। তবে তিনি আশাবাদী যে বিশ্ব ২০২২ সালে মহামারির সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাবে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকাদানে যে লক্ষ্য নিয়েছিল বিশ্বের ১৯৪টি সদস্য দেশের মধ্যে ৯২টি দেশই তা পূরণে সক্ষম হয়নি।
আগামী জুলাইয়ের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: দেশে আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত
ডব্লিউএইচও এর পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে ১১ শতাংশ বেড়েছে।
টেড্রস বলেন, আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে ওমিক্রন ডেল্টার মতো একই সময়ে আরও বেশি সংক্রমণযোগ্য ও সঞ্চালিত হওয়ার কারণে বিষয়টি সুনামির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এটি ক্লান্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ডব্লিউএইচও এর সাপ্তাহিক মহামারি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওমিক্রন সম্পর্কিত ‘সামগ্রিক ঝুঁকি’ ‘খুব বেশি’। এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রমাণ উদ্ধৃত করে জানিয়েছে যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এটির সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে করোনা শনাক্তের ৭৩ শতাংশ এখন ওমিক্রন
ডেল্টার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ওমিক্রন প্রতিরোধ করতে হবে: ডব্লিউএইচও
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কর্মকর্তারা বলছেন, সংক্রমিত দেশসমূহের সীমান্ত বন্ধ করে ওমিক্রন ছড়ানো বন্ধ করা যায়। তবে শুধু সীমান্ত বন্ধ না করে, ডেল্টার বিরুদ্ধে করা লড়াইয়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামা উচিত।
শুক্রবার ফিলিপাইনের ম্যানিলা থেকে সম্প্রচারিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচও’র পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. তাকেশি কাসাই বলেছেন, একদিকে যেমন কয়েকটি দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, অন্যদিকে কিছু দেশে আবার ক্রমে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
কাসাই বলেন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সময় পেছাতে পারে, ফলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আরও বেশি সময় পাওয়া যাবে। প্রতিটি দেশেরই এর বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
কাসাই আরও বলেন, এরমধ্যে সবচেয়ে ইতিবাচক খবর হল, ওমিক্রন সম্পর্কে আমাদের কাছে বর্তমানে যে তথ্য রয়েছে, এর ভিত্তিতে বলা যায় এতদিন ধরে অনুসরণ করা স্বাস্থ্যবিধিতে ওমিক্রনের জন্য নতুন কোনও পরিবর্তন প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: ওমিক্রন: ৭ আফ্রিকান দেশের যাত্রীদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন
কাসাই বলেছেন, মিউটেশনের সংখ্যার কারণে ওমিক্রনকে নিয়ে অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ প্রাথমিক তথ্য থেকে জানা যায়, এটি ভাইরাসের অন্যান্য রূপের চেয়ে বেশি সংক্রামক হতে পারে। অনেকের প্রশ্ন, এতে আক্রান্ত হলে মানুষ কি আরও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা এটা কি করোনা টিকার সুরক্ষাকে বাতিল করে দেবে?
এর উত্তর এখনও আমাদের কাছে নেই, এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার জন্য আরও পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অন্যদিকে ডব্লিউএইচও’র আঞ্চলিক জরুরি পরিচালক ড. বাবাতুন্ডে ওলোওকুরে বলেছেন, এখন পর্যন্ত পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চারটি দেশে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এগুলো হলো- অস্ট্রেলিয়া, হংকং, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ভারতে প্রথম ওমিক্রন শনাক্তের কথা জানা গেছে।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ফিলিপাইনের সরকারি মহামারি ব্যুরোর পরিচালক আলথিয়া ডি গুজম্যান বলেছেন, গত দুই সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশটিতে আসা ৭১ জনের মধ্যে একজন করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। তবে তিনি ওমিক্রন আক্রান্ত কি না তা শনাক্তের জন্য এখনও পরীক্ষা চলছে।
আরও পড়ুন: ভারতে প্রথম ২ জনের ওমিক্রন শনাক্ত
ডি গুজম্যান আরও বলেন, আমরা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ওমিক্রন মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করছি।
ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক জরুরি পরিচালক ড. বাবাতুন্ডে ওলোওকুরে ম্যানিলায় বলেছেন, দেশগুলোর এখন কী করা উচিত সে প্রসঙ্গে, গত কয়েক বছরের আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। সেইসাথে কীভাবে আরও টেকসই উপায়ে ভবিষ্যৎ মহামারির সাথে মোকাবিলা করা যায় তা আলোচনা করতে হবে। নাগরিকদের টিকাদান, সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরা ইত্যাদি বিধি অনুসরণ করতে হবে।
অন্যদিকে ডব্লিউএইচওর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. তাকেশি কাসাই আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হল আমরা সঠিক সময়ে, সঠিক রোগীদের, সঠিক জায়গায়, সঠিকভাবে চিকিৎসা করছি তা নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা, ওমিক্রনের ঝুঁকি ‘খুব বেশি’