চট্টগ্রাম
ফেনীতে প্রবাসী হত্যা, পলাতক স্ত্রী চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার
ফেনীতে এক প্রবাসী স্বামীকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত পলাতক স্ত্রীকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেফতারের সময় প্রবাসীর দুই সন্তানকেও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
নিহত ওই প্রবাসী সোহেল (৩৫) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের খাটরা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তার স্ত্রীর নাম রোকেয়া আক্তার শিউলী (২৮)।
শনিবার রাতে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মোঃ নুরুল আবছার। রবিবার সকালে র্যাব-৭ এর ফেনী ক্যাম্পে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে এক প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: পলাতক আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার
একটি সূত্রে জানা গেছে, ফেনী থেকে পালিয়ে রামগড় দিয়ে শিউলী দুই সন্তান নিয়ে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা চলে আসে। শনিবার দিনভর ফটিকছড়ির বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘরে ভাড়া বাসা খুঁজতে থাকে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাতে র্যাব-৭ এর একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করে।
উল্লেখ্য শুক্রবার ফেনী শহরের সুফি সদর উদ্দিন সড়কে চৌধুরী সুলতানা ভবনে প্রবাসী স্বামী মো. সোহেলকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার পর দুই সন্তান নিয়ে পালিয়ে যায় বলে রোকেয়া আক্তার শিউলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। প্রবাসী সোহেল (৩৫) পরিবার নিয়ে ওই ভবনের ষষ্ঠ তলায় থাকতেন।
আরও পড়ুন: শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসা শিক্ষক গ্রেপ্তার
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোহেল প্রায় ১২ বছর ধরে দুবাই ছিলেন। আট বছর আগে দেশে ফিরে তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথ ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের শিউলি আক্তারকে বিয়ে করেন। এরপর আবার দুবাই চলে যান। এক মাস আগে দুবাই থেকে তিন মাসের ছুটিতে দেশে আসেন সোহেল।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে সোহেলকে কুপিয়ে হত্যার পর দুই সন্তান রিহান (৭) ও জান্নাতকে (৪) নিয়ে পালিয়ে যান রোকেয়া আক্তার। গভীর রাতে বের হওয়ার সময় বাসার দারোয়ানকে জানান, তার বাবা মারা গেছেন, সেখানে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: বরিশালে ইউএনও’র অফিসে হামলা: গ্রেপ্তার ২১
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্ত্রীকে হত্যার পর আলামত নষ্ট করতে লাশ পুড়িয়ে ফেলেন স্বামী
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে ইয়াছমিন আকতার এ্যানী (২৪) নামে গৃহবধূ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার প্রধান আসামি স্বামী বাবলু দে (৩০) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
২১ আগস্ট (শনিবার) সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বন আদালত) বেগম আঞ্জুমান আরা’র আদালতে আসামি বাবলু স্বীকারোক্তিমূলক এ জবানবন্দি দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হাসান আলী বলেন, জবানবন্দিতে বাবলু দে তার স্ত্রী ইয়াছমিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে এবং এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মাতাব্বরদের পরামর্শে লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলে আদালতকে জানায়। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আসামি বাবলু দে প্রকাশ আদালতকে জানায়, ঝগড়ার সময় রাগের মাথায় স্ত্রী ইয়াছমিনকে মাথায় ও মুখে আঘাত (ঘুষি) করলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে তার মুখে পানি দিলেও জ্ঞান না ফেরায় পার্শ্ববর্তী ফার্মেসি থেকে একজনকে নিয়ে আসলে তিনি জানান ইয়াছমিন মারা গেছে। তখন বন্ধু সুমনের সহযোগিতা ও এবং মামলার অন্যান্য আসামি মেম্বার, চেয়ারম্যান ও মাতাব্বরের পরামর্শে হত্যার আলামত গোপন করতে হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী ইয়াছমিনের লাশ পুড়িয়ে ফেলি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে এক দম্পতির ‘আত্মহত্যা’
বাবুল দে বলেন, প্রেম করে বিয়ের পর স্ত্রী ইয়াছমিন আকতার এ্যানী শহরের ইপিজেডে বসবাস করতেন। আমি থাকতাম বোয়ালখালীর গ্রামে। এনিয়ে আমাদের মধ্যে প্রায় ঝগড়া হয়। ঘটনার দিন (৩ আগস্ট) দুপুরে কথা প্রসঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে রাগের বসে স্ত্রীর মাথায় জোরে আঘাত করি। এতে অজ্ঞান হয়ে যায় এ্যানী।
ঘটনার পরপরই তিনি স্ত্রী মারা যাওয়ার ঘটনা স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান ও মাতব্বরকে জানায়। ওদের জানিয়েই লাশ দাহ করে ফেলেন। এমনকি সৎকারের নামে মুসলিম মেয়েকে পুড়িয়ে আলামত নষ্ট করে ফেলেন।
জানা যায়, ইয়াছমিন আক্তার এ্যানি চট্টগ্রাম নগরীর কেপিজেড এলাকায় অবস্থিত ‘ক্যান পার্ক’ নামে একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কাজের সুবিধার্থে বন্দরটিলা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। বাসা থেকে কর্মস্থলে আসা যাওয়ার পথে ওই এলাকায় অবস্থিত একটি সেলুনের কর্মচারী বাবলুর সাথে পরিচয় হয়। পরে প্রণয় এবং তা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। বাবলু এবং এ্যানির সংসারে ইশা মনি নামে দেড় বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও বাবলু নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিয়ে এ্যানি’র সাথে সম্পর্ক এবং বিয়ে করে। পরে তার ধর্ম পরিচয় ফাঁস হলে এনিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। বাবলু জানায় সে মুসলমান হবে তার জন্য এফিডেভিট করতে ৫ হাজার টাক দিতে বলে। এ্যানি তার খালাতো বোন হাসি থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে দেয়। এতে বাবলু ধর্মান্তরিত না হয়ে উল্টো এ্যানিকে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
নিহতের মা ও মামলার বাদী রোকসানা বেগমের অভিযোগ, বিরোধের জেরে কৌশলে এ্যানিকে হত্যা করে হিন্দু রীতিতে পুড়িয়ে ফেলা হয় যাতে কোন রকম প্রমাণ পাওয়া না যায়।
তিনি বলেন, গত ৩ আগস্ট আমার মেয়েকে বোয়ালখালীর বাড়িতে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলে তার স্বামী বাবুল দে।
আরও পড়ুন: হঠাৎ চট্টগ্রামে মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা দেয়া বন্ধ
চট্টগ্রামে যুবকের লাশ উদ্ধার
১৬ আগস্ট মামলা করেন তিনি। মামলায় স্বামী বাবলু দে ও এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ ১৮ জনকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে বোয়ালখালী থানা পুলিশ অভিযানে প্রধান আসামি বাবলুকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বোয়ালখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন দে বলেন, প্রধান আসামি বাবলু দে আদালতে স্বীকারাক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি মাথায় আঘাত করে স্ত্রীকে হত্যা করে পরে পুড়িয়ে ফেলেছেন বলে স্বীকার করেছেন।
চট্টগ্রামে আহমদ শফির পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত বাবুনগরী
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতের নিজের দীর্ঘদিনের কর্মস্থল হাটহাজারী মাদরাসা কবরস্থানে হেফাজতের সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির কবরের পাশেই শায়িত হলেন হেফাজতের সদ্য প্রয়াত আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে হাজারও মানুষের অংশগ্রহণে হাটহাজারী মাদরাসা মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার ইমামতি করেন বাবুনগরীর মামা এবং বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। এসময় দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: হেফাজতের ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা মুহিবুল্লাহ
এর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বক্তব্য দেন।
পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল হাটহাজারী মাদরাসা কবরস্থানে হেফাজতের সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
বাবুনগরী হেফাজত আমিরের পাশাপাশি চট্টগ্রামের মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষা পরিচালক পদেও ছিলেন। তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহসভাপতি, চট্টগ্রাম নুরানি তালিমুল কুরআন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মাসিক মুঈনুল ইসলামের প্রধান সম্পাদক ছিলেন।
আরও পড়ুন: হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী মারা গেছেন
এদিকে, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর জানাজাকে ঘিরে মানুষের ভিড়ের কারণে রাত ১০টার পর থেকেই হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
হেফাজতের ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা মুহিবুল্লাহ
হেফজাতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে মাওলানা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে সংগঠনটির শুরা কমিটির বিশেষ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আরও পড়ুন: বিশ্বনাথে হেফাজত নেতা মুফতি ফারুক গ্রেপ্তার
হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস জানান, বৃহস্পতিবার রাতে শুরা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জুনায়েদ বাবুনগরীর জানাজার নামাজ শুরুর আগে মাদরাসার মাইকে হেফাজত মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম এই ঘোষণা করেন। মাওলানা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এর আগে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। সম্পর্কে তিনি সদ্য প্রয়াত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা।
আরও পড়ুন: হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী মারা গেছেন
২০২০ সালে হেফাজতের আমির হন জুনায়েদ বাবুনগরী। আমৃত্যু তিনি এই পদে ছিলেন। এর আগে তিনি এ সংগঠনের মহাসচিব পদে ছিলেন। তখন আমির ছিলেন প্রয়াত আল্লামা আহমদ শফী।
চট্টগ্রামে এক দম্পতির ‘আত্মহত্যা’
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক দম্পতি এক সঙ্গে আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার রাতে উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড কুরমাইকুল এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- এলাকার শাহ আলমের ছেলে প্রবাস ফেরত মো. ইসকান্দর (২৪) ও তার স্ত্রী রুমা আক্তার (২২)। স্বামী-স্ত্রী দুজন এক সঙ্গে এক রশিতে আত্মহত্যার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছর আগে ইসকান্দরের সাথে রুমা আক্তারের সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ১৫ মাস বয়সী এক ছেলে সন্তানও রয়েছে। ইসকান্দর কাতার প্রবাসী ছিল। গত ১০ আগস্ট সে দেশে ফিরেছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ট্রাকের ধাক্কায় এএসআই নিহত
নিহত ইসকান্দরের মা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে মাত্র তিনদিন আগে গত ১০ আগস্ট কাতার থেকে দেশে ফিরেছে। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে আমি আমার নাতিকে নিয়ে উঠানে খেলছিলাম। পরে ঘরে এসে তাদের রুম বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করি। কিন্তু তাদের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে জানালা খুলে দেখি তারা দু’জনেই ফাঁসিতে ঝুলে আছে। পরে এলাকার মানুষজন ডেকে দরজা ভেঙে তাদের ফাঁসি থেকে নামাই।’
নিহত গৃহবধূর বাবা জামাল উদ্দিন জানান, ‘দুপুর ৩টার দিকেও আমার মেয়ের সাথে মুঠোফোনে কথা হয়েছিল। মেয়েকে বেড়াতে আসতে বলেছিলাম। তারা পরে আসবে বলে জানায়। এরপর রাত হতেই শুনি এই ঘটনা।’
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, আমার মেয়েকে প্রায়শই তার দেবর আরিফ (২০) নানাভাবে কুপ্রস্তাব দিতো। এই নিয়ে বিভিন্ন সময় তাকে সতর্ক করা হয়েছে। আমার ধারণা তারা আমার মেয়েকে হত্যা করে এভাবে ঝুলিয়ে রেখেছে।
আরও পড়ুন: হঠাৎ চট্টগ্রামে মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা দেয়া বন্ধ
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি (তদন্ত) খান নুরুল ইসলাম জানান, কি কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে তা এখনো জানা যায়নি। আমরা এসে তাদের মুখে শুনেছি, দু’জনেই এক ওড়নায় একই কক্ষে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। শ্বাশুড়ি এলাকাবাসীকে নিয়ে দরজা ভেঙে তাদের লাশ নামিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনা তদন্ত করে দেখছি। তবে দু’জনে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত দুজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। কি কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।’
হঠাৎ চট্টগ্রামে মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা দেয়া বন্ধ
চট্রগ্রামে হঠাৎ করে মডার্না ও সিনোফার্মের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে স্বাস্থ্যবিভাগ।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম নগরীতে মডার্না ও সিনোফার্মের টিকাদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বিভিন্ন কেন্দ্র ও হাসপাতালে টিকা দিতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে শত শত টিকা প্রত্যাশীদের।
তবে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ ও উপজেলা পর্যায়ে সিনোফার্মের প্রথম ডোজ চালু রয়েছে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ৩৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টিকা দেয়া শুরু
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. তানজিম জানান, জেনারেল হাসপাতালে করোনা টিকা কার্যক্রমে মডার্না ও সিনোফার্মের টিকার প্রথম ডোজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে অক্সেফোর্ড অ্যাস্ট্রেজেনেকার (কোভিশিল্ড) দ্বিতীয় ডোজের টিকা যথারীতি চলবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী জানান, মজুদ শেষ হওয়ায় আপাতত টিকা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। টিকা পাওয়া সাপেক্ষ টিকা কার্যক্রম আবারও চালু করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি জানান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মডার্না ও সিনোফার্মের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হলেও যারা এসএমএস পেয়েছে তারা সবাই বিকেল ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে পারবেন। যারা এসএমএস পাননি অথবা ডিলিট হয়ে গেছে তারা আগামী ২১, ২২ ও ২৩ আগস্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে পারবেন। তবে উপজেলা পর্যায়ে সিনোফার্মের টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত আছে।
জানা গেছে, নগরীর সবকটি টিককেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপজেলাগুলোতে আরও কয়েকদিন টিকা কার্যক্রম চলবে।
এদিকে টিকা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণার পরও বৃহস্পতিবার জেনারেল হাসপাতালের সামনে ভিড় করেন শতাধিক মানুষ। তাদের দাবি, কোন রকম নির্দেশনা না দিয়েই হুট করেই বন্ধ করে দিয়েছে টিকাদান কার্যক্রম। এছাড়া টিকাদান বন্ধের ব্যাপারে কোনো প্রচারনাও ছিল না বলে অভিযোগ টিকা গ্রহীতাদের।
আরও পড়ুন: টিকা নিয়ে সমালোচনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ: তথ্যমন্ত্রী
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী জানান, টিকা পাওয়া সাপেক্ষ টিকা কার্যক্রম আবারও চালু করা হবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের হাতে কিছু টিকা মজুদ রয়েছে। যা দিয়ে আজ টিকাদান কার্যক্রম চালানো যাবে। তবে আগামীকাল থেকে বন্ধ থাকবে। তিনি কোভিশিল্ডের টিকার দ্বিতীয় ডোজ চালু থাকবে বলে জানান।
নিখোঁজ চীনা নাগরিকের লাশ উদ্ধার
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নে নির্মাণাধীন এস আলম গ্রুপের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিক নিখোঁজ চীনা নাগরিকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের দক্ষিণাংশে একটি জলাশয় থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে মৃত চীনা শ্রমিক জি কিন কুংওয়েন (৩৪) বুধবার সকালে নিখোঁজ হন।
আরও পড়ুন: এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চীনা নাগরিক নিখোঁজ
বাঁশখালী থানার সেকেন্ড অফিসার আকতার হোসেন জানান, সকালে জলাশয়ে ওই চীনা নাগরিকের লাশ ভাসমান অবস্থায় দেখতে পায় এলাকার লোকজন। পরে পুলিশ গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে।
এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রধান সমন্বয়ক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘সকালে প্রকল্প এলাকার পাশে জলাশয় থেকে নিখোঁজ শ্রমিকের লাশ পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। পুলিশ এ ঘটনা তদন্ত করে দেখছে।’
আরও পড়ুন: সিলেটে ছুরিকাঘাতে চীনা নাগরিক খুনের ঘটনায় মামলা
উল্লেখ্য, বুধবার সকালে ওই চীনা শ্রমিক সাগরপাড়ে পাইপলাইনের কাজে গিয়েছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক নিরাপত্তা কর্মী তাকে মাছ ধরতে দেখে ডেকে উপরে নিয়ে এসেছিলেন।
এ সময় পাইপলাইনের কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর তাকে আর কেউ বিদ্যুৎকেন্দ্রে দেখেননি। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে বাঁশখালী থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরি করে কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রামে ট্রাকের ধাক্কায় এএসআই নিহত
চট্টগ্রামে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশের এক উপ সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) নিহত হয়েছেন। বুধবার বিকেলে মহানগরীর পাঁচলাইশ থানার দুই নম্বর গেট এলাকার ষোলশহর মেয়র গলিতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. মাসুদুর রহমান (৫০) চট্টগ্রাম নবম এপিবিএনে কর্মরত ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানা এলাকায়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক বলেন, ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটর সাইকেল আরোহী এএসআই মো.মাসুদুর রহমান গুরুত্বর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনা হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
আরও: চট্টগ্রামে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫, আহত ২০
ওমানে সড়ক দুর্ঘটনা: চট্টগ্রামের ৩ প্রবাসী নিহত
চট্টগ্রামে টিকা নিতে ভিড়, সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছে
চট্টগ্রাম মহানগরীতে টিকা কেন্দ্রগুলোতে প্রচন্ড ভিড়ের কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। উপচে পড়া ভিড় আর অব্যবস্থাপনার কারণে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
এক সময় করোনা টিকা গ্রহণে মানুষের মধ্যে অনীহা থাকলেও বর্তমানে টিকা গ্রহণে মানুষের মধ্যে প্রবণতা বাড়লেও বাড়েনি তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা। আবার মোবাইল ফোনে কোন মেসেজ না পেয়েও কেন্দ্রেগুলোতে অবাঞ্ছিত ভিড় অনেকটা নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে একদিকে টিকা কেন্দ্রগুলোতে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি, অন্যদিকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও অনেকে টিকা নিতে পারছেন না।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে নগরীতে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন করে করোনা রোগী মারা যাচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিন ৮ থেকে ৯শ’ জন।
বুধবার সকাল থেকে নগরীর কয়েকটি টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গছে। সকালে চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতাল টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, টিকা দিতে হাসপাতালের সামনে শত শত মানুষ সমবেত হয়েছেন। হাসপাতালের ভিতরে এক সঙ্গে এতো মানুষের প্রবেশ করানোর সুযোগ না থাকায় ধাপে ধাপে মানুষকে ভেতরে ঢুকানো হয়। কিন্তু প্রতিবার ভেতরে ঢুকানোর জন্য গেট খুলতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আবার কখনো রোদের তাপ সহ্য করে করোনার টিকা নিতে আসা মানুষ নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় না রেখেই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমনকি লাইনের কেউ কেউ চাইছেন সামনের জনকে ঠেলে টিকা কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে। এতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
আরও পড়ুন: টিকা পেতে ভোগান্তি, বিশৃঙ্খলা
সকাল ৮টায় টিকা নিতে আসা ৫৭ বছর বয়সী রহিম সোবাহান জানান, সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন কেন্দ্রের বাইরে। ১১টা পর্যন্ত ভেতরে যাওয়ার সুযোগ পাননি তিনি।
এই একই চিত্র দেখা গেছে বন্দর, ইপিজেড ও পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকার টিকা কেন্দ্রগুলোতে। তার মধ্যে বন্দরের ধোপপুলস্থ ৩৮নং ওয়ার্ড অফিসের টিকা কেন্দ্রেটি উল্লেখযোগ্য। এখানে অনেকেই টিকা নিবন্ধন করেই টিকার কোন মেসেজ না পেয়েও নিবন্ধন কার্ড নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।
পতেঙ্গার কাটগড় -স্টিল মিল এলাকায় টিকা দিতে আসা একাধিক নারী-পুরুষের লাইন এড়িয়ে তীব্র জটলার দৃশ্য দেখা যায়। তেমনি ইপিজেডের হক সাহেব রোডস্থ মোহাম্মদীয়া স্কুল এবং নিউ মুরিংস্থ আহম্মদীয় সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয় টিকা কেন্দ্রে এবং নিয়মিত টিকা কেন্দ্রে বন্দরটিলা মাতৃসদনের নিচে-উপরে ও মূল কেন্দ্রে ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি।
এখানে লাইনে অপেক্ষমান হাজেরা বেগম নামে এক নারী বলেন, কেন্দ্রের বাইরে যে ভিড় তাতে করোনা মুক্তির জন্য টিকা নিতে আসলাম নাকি করোনা সঙ্গে করে নিতে আসলাম ঠিক বুঝতে পারছি না।
এ ব্যাপারে বন্দর ইপিআই জোনের জোনাল মেডিকেল অফিসার ডা. হাসান মুরাদ চৌধুরী বলেন, আমরা বারবার সরকার ঘোষিত টিকার এসএমএস ছাড়া কাউকে কেন্দ্রে না আসতে অনুরোধ জানাচ্ছি। সকল কেন্দ্রের সামনে ব্যানার-সাইনবোর্ড লাগিয়ে টিকা কেন্দ্রে ভিড় এড়াতে নিরুৎসাহী করছি। তারপরও জনসাধারণ টিকার এসএমএস না পেয়ে অনলাইনে নিবন্ধন করেই টিকা নিতে চলে আসছে। যার ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমক ও করোনা উপসর্গ দ্বিগুণ বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন। আর এই অবস্থার রোধ করা না গেলে চট্টগ্রামে ভয়াবহ রূপ নিবে করোনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ ব্যাপারে বারবার ঘোষণা দিচ্ছে ভিড়-জনসমাগম রোধ করা না গেলে করোনাভাইরাস অতিমাত্রাই সংক্রমিত হবে।
আরও পড়ুন: টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে কাজ করছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, একসঙ্গে অনেক মানুষ সমবেত হয়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সারাদিন টিকা দেয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এক সঙ্গে অনেকে ভিড় করছে। এরপরও সুশৃঙ্খলভাবে সবাইকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন আরও জানান, চট্টগ্রাম মহনগরী ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মোট ৩২৬টি কেন্দ্রে করোনার গণটিকা কার্যক্রম চলছে। গতকাল শনিবার প্রথম দিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪১ ওয়ার্ডের ১২৩টি বুথে টিকাদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আখতার চৌধুরী জানান, সিটি করপোরেশন এলাকার প্রতি কেন্দ্রে ৩০০ জন করে টিকা নিতে পারছেন। তিনটি বুথে একদিনে ৯০০ জন টিকা পাবেন। এর বাইরে স্থায়ী ১১টি কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম চলমান আছে। কোন কেন্দ্রে অনিয়ম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম পৌঁছেছে চীনের টিকা
মায়ের সাথে পরকীয়া, প্রেমিককে হত্যা করে ছেলে
কিশোরগঞ্জ থেকে অপহরণ, চলন্তগাড়িতে কুমিল্লায় শ্বাসরোধ করে হত্যা, এরপর চট্টগ্রামের পটিয়ায় এনে লাশ ফেলা হয় নবী হোসেন নামে এক ব্যক্তির। প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে অত্যাধুনিক ‘ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন এন্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম’ এর মাধ্যমে ভুক্তভোগীর পরিচয় জানার পর হত্যার রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামে পুলিশের চৌকস টিম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
অবশেষে ১০ মাস আগে সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা।
রবিবার (৮ আগস্ট) হত্যা মামলার প্রধান আসামি আশরাফুল হক প্রকাশ সাব্বির (২৩) ও তার মা শিউলী বেগমকে (৪৫) আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম। আর তাদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে পরকীয়ার প্রেম ও হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর কাহিনী।
রবিবার রাতে গণমাধ্যমকে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান।
তিনি জানান, মায়ের সঙ্গে পরকীয়ার কারণে প্রেমিক নবী হোসেন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে ছেলে আশরাফুল হক প্রকাশ সাব্বির ও তার ভাড়াটে খুনিরা। নিহত নবী হোসেন (৩০) ভৈরব উপজেলার আগানগর গ্রামে মো. ইসমাইলের ছেলে।
পড়ুন: বিয়ের ৮ মাসের মাথায় গৃহবধূকে ‘হত্যার’ অভিযোগ
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চট্টগ্রাম পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. মনির হোসেন জানান, মোবাইলের প্রযুক্তি ব্যবহার করে শনিবার রাতে আশুগঞ্জের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মা-ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছি। গত বছর ১৬ অক্টোবর খুনের ঘটনাটি ঘটে। এরপর থেকে তারা পলাতক ছিলেন।
তিনি জানান, শিউলী বেগমের স্বামী আনোয়ার হোসেন সৌদি আরব থাকায় স্বামীর বন্ধু নবী হোসেনের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এরই মধ্য ওই নারী তার স্বামীকে তালাক দিয়ে নবী হোসেনকে বিয়ে করেন। মায়ের অসম প্রেম ও দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনাটি সহ্য করতে পারেননি তার ছেলে সাব্বির। তাই পরিকল্পনা করে মায়ের দ্বিতীয় স্বামী নবী হোসেনকে হত্যা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের ১৫ অক্টোবর ভাড়াটে খুনি দিয়ে নবী হোসেনকে অপহরণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরদিন ১৬ অক্টোবর কৌশলে সাব্বির নবী হোসেনকে দাওয়াতের কথা বলে একটি প্রাইভেটকারে তুলে কুমিল্লায় নিয়ে চলন্ত গাড়িতে তাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। এ সময় গাড়িতে সাব্বিরের তিন ভাড়া করা খুনি তুষার, সুমন আশিক হত্যায় অংশ নেয়। তারপর নবী হোসের লাশ চট্টগ্রামে চলে আসে তারা। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাবার পথে মহাসড়কের পটিয়ার মনসা আইডিয়াল স্কুলের পূর্ব-উত্তর পাশে ব্রীজের নীচে নবীর লাশ ফেলে দিয়ে কানিয়ে তারা কক্সবাজার চলে যায়।
পিবিআই’র এ কর্মকর্তা আরও জানান, খুনিরা কক্সবাজার থেকে ভৈরব ফেরত যাওয়ার পর হত্যার পরিকল্পনাকারী সাব্বির গাড়ি ভাড়া বাবদ ১৫ হাজার খুনের জন্য পূর্বের চুক্তি মোতাবেক ৬০ হাজার টাকা আসামি তুষারকে পরিশোধ করে। তুষার সে টাকা থেকে সুমনকে ১৭ হাজার এবং আশিককে ১৮ হাজার টাকা প্রদান করে এবং তুষার নিজে ২৫ টাকা রাখে।
এদিকে পটিয়া থানার পুলিশ পরদিন জঙ্গল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পকেটে থাকা আইডি কার্ড পেয়ে নিহতের পরিবারকে ভৈরব থানার মাধ্যমে খবর দেয়। খবর পেয়ে তার ভাই কবির হোসেন চট্টগ্রাম গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। এরপর কবির হোসেন বাদী হয়ে পটিয়া থানায় ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে। মামলাটি তদন্ত করতে চট্টগ্রামের পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে হত্যা মামলার আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত
সাক্ষ্যপ্রমাণই বলে দেয় জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন: তথ্যমন্ত্রী
পিবিআই মামলাটি তদন্ত নেয়ার পর এর আগে প্রাইভেটকারের চালক আশিক ও সহকারী সুমনকে ভৈরবের দুটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তারা দুজন চট্টগ্রাম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যার ঘটনাটি স্বীকার করেন।
আদালতে তারা কীভাবে নবী হোসেনকে গাড়ির ভিতর হত্যা করে পটিয়ার জঙ্গলে ফেলে পালিয়ে আসে সেই বর্ণনা দেন। এভাবেই নবী হোসেনের খুনের ঘটনাটি উদঘাটন হয়।
মামলার বাদী নিহত নবী হোসেনের ছোটভাই কবির হোসেন বলেন, আমার ভাইকে নির্মমভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে খুনিরা হত্যা করে। শনিবার গভীর রাতে পিবিআই পুলিশ প্রধান খুনি সাব্বিরসহ তার মাকে গ্রেপ্তার করেছে শুনেছি। আমি আমার ভাইয়ের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
পিবিআই জানায়, মা ছেলে গ্রেপ্তারের পর রবিবার বিকালে চট্টগ্রামে এনে আদালতে হাজির করলে আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।