সুন্দরবন
বাঘ শিকারি ‘বাঘ হাবিব’ আটক
সুন্দরবনে দুর্ধর্ষ বাঘ শিকারি বাঘ হাবিবকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার ভোর রাতে পুলিশের হাতে আটক হন দুর্ধর্ষ এই বাঘ শিকারী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বনবিভাগ ও স্থানীয়দের কাছে বাঘ হাবিব নামেই পরিচিত তিনি। বাঘ শিকার করাই তার নেশা।
বিভিন্ন সূত্রমতে, গত ২০ বছরে কমপক্ষে ৭০টি বাঘ মারা পড়েছে তার হাতে। তার নামে রয়েছে ৯টি বন অপরাধের মামলা। এর মধ্যে তিনটিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এতোগুলো মামলাও শিকারের নেশা থেকে ফেরাতে পারেনি তাকে। সুন্দরবনে বাঘ হাবিবের প্রবেশ নিষিদ্ধ, তবুও গোপনে ঢুকে একের পর এক শিকার করেন বাঘ-হরিণ-কুমির।
আরও পড়ুন: বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের শিকারি চক্র
আটক বাঘ হাবিব ওরফে হাবিব তালুকদারের (৫০) বাড়ি বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন মধ্যে সোনাতলা গ্রামে। তারা বাবার নাম কদম আলী তালুকদার। বাঘ হাবিব বর্তমানে বাগেরহাট জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাঘ হাবিব দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। মাঝেমধ্যে গোপনে বাড়িতে এসে অন্যের ঘরে ঘুমাতেন। শনিবার ভোর রাতে প্রতিবেশী রফিকুলের বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন হাবিব। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ঐদিন রাত আড়াইটার দিকে শরণখোলার মধ্য সোনাতলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে রফিকুলের বারান্দা থেকে তাকে আটক করা হয়।
কে এই বাঘ হাবিব
তার বাবা কদম আলী তালুকদার সুন্দরবনের এক সময়ের দুর্ধর্ষ বনদস্যু ছিলেন। ৫ থেকে ৬ বছর আগে মারা যান সাবেক বনদস্যু বাবা। বনের পাশে বাড়ি হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই সুন্দরবনে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করতেন তারা। সেই থেকে বনের সব এলাকা তার নখদর্পণে। তাছাড়া, বাবা বনদস্যু হওয়ায় জন্মসূত্রেই অপরাধী এই বাঘ শিকারী হাবিব। তার গোটা পরিবারই বন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। বন্যপ্রাণি শিকারের সহযোগী হিসেবে এখন কাজ করেন তার ছেলে হাসান (২০) ও জামাই মিজান (২৫)। তাদের নামেও একাধিক মামলা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন থেকে উদ্ধার হওয়া মৃত বাঘের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন
হাবিবের নামে যতো মামলা
তার নামে মামলা রয়েছে মোট ৮টি। গত ২০ বছর ধরে ৭০ টির মতো বাঘ হত্যা করলেও তার নামে বাঘ শিকারের ৩টি এবং হরিণ শিকারের ৫টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩টিতে রয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এর পরও তিনি বাঘ-হরিণ শিকার থেকে ফিরতে পারেননি।
বাঘ শিকার করেই চালান বাঘের মামলা
হাবিব এসব মামলা ও গ্রেপ্তারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে নিজের বাড়িতে থাকতেন না। বেশিরভাগ সময় বনেই কাটে তার জীবন। মাঝেমধ্যে রাতে এলাকায় এসে অন্যের বাড়িতে ঘুমাতেন। কোনো মামলাকেই পাত্তা দেন না। এ বছরের ১৯ জানুয়ারি শরণখোলার রাজৈর বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি বাঘের চামড়াসহ গাউস ফকির নামে এক পাচারকারী আটক হয়। ওই চামড়াটিও হবিবের হাতে শিকার হওয়া বাঘের। ওই মামলায় তাকেও আসামি করা হয়েছে। এর চার দিনের মাথায় ২৩ জানুয়ারি একই এলাকা থেকে ১৯টি হরিণের চামড়াসহ দুই পাচারকারীকে আটক করে র্যাব। সেখানেও এই শিকারী হাবিব জড়িত। বনের বাঘ, হরিণ, কুমির শিকার করেই এসব মামলা পরিচালনা করেন এই দুর্ধর্ষ হাবিব।
দুর্যোগে অরক্ষিত সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবন থেকে জোয়ারের পানিতে ভেসে লোকালয়ে এসেও প্রাণে রক্ষা পাচ্ছে না হরিণ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী। ইতোমধ্যে শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় চারটি মৃত ও দু’টি জীবিত হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। পটুয়াখালী ও পিরোজপুরেও ভেসে যাওয়া জীবিত হরিণ উদ্ধার হয়েছে। ভোলায় ভেসে যাওয়া হরিণ উদ্ধার করার পর জবাই করা হয়েছে।
সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘প্রাকৃতিক, মনুষ্য সৃষ্ট কারণ বা দুর্যোগ যেটাই হোক, বন্যপ্রাণী সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে কেন হরিণ বা বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে, কেন লোকালয়ে চলে আসছে এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। আর পনিতে ভেসে আসার বাইরেও বনের অভ্যন্তরেও মৃত বন্যপ্রাণী থাকতে পারে। সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার। বনের অভ্যন্তরে প্রাণীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’
আরও পড়ুন: জলোচ্ছ্বাসে ডুবেছে সুন্দরবন, ভেসে আসছে বন্য প্রাণী
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বন্যপ্রাণী রক্ষায় বনের মধ্যে বেশি করে উঁচু স্থান তৈরি, মিষ্টি পানির স্থান সুরক্ষা ও সংখ্যা বৃদ্ধি করা উচিত। এছাড়া মানব সমস্যা সমাধানের মতো প্রাণিকুলের জন্যও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন ও তাদের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা দরকার। যাতে করে তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে ও পরে প্রতিটি নদী নালায় ঘুরে ঘুরে বন্যপ্রাণীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সুরক্ষায় কাজ করতে পারে। সর্বোপরি গবেষণা ও যাচাই-বাছাই করে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। যার মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সুরক্ষা স্থায়ীভাবে ভিত্তি পাবে।’
খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মঈন উদ্দিন খান বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে হরিণ লোকালয়ে ভেসে যাওয়ার বিষয়টিতে বন কর্মকর্তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। কমিউনিটি গ্রুপগুলোকেও নজরদারি জোরদার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বন ও বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে রেঞ্জভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে এবং বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কাজ করছে।’
আরও পড়ুন: বন্যপ্রাণী হত্যা ও পাচার রোধে সুন্দরবনে রেড এ্যালার্ট
শরণখোলার বাসিন্দা সোলাইমান ফরাজি বলেন, ‘২৬ মে বিকালে রাজেশ্বর গ্রামের মোড় এলাকায় একটি মৃত হরিণ ভেসে আসে। এলাকাবাসী সেটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগকে খবর দেন। হরিণটির শরীরে কোনও ক্ষতচিহ্ন ছিল না। জোয়ারের পানিতে ডুবেই হরিণটির মৃত্যু হয়েছে।’
তাফালবাড়ী গ্রামের দুলাল খান বলেন, ‘জোয়ারে এত পানি আগে দেখিনি। জোয়ারের কারণে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণী ভেসে গেছে। হরিণ মরে ভেসে আসছে।’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারের পানি ৫ থেকে ৬ ফুট উঁচু হয়। এ জোয়ারের পানিতে করমজল বণ্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র তলিয়ে গেছে। বনের অভ্যন্তরে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে। এজন্য বনের বিভিন্ন উঁচু স্থানে বন্য শুকর ও হরিণ আশ্রয় নেয়। জোয়ারের পানিতে প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরের শেডগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুন্দরবনে এত পানি আগে কখনও দেখা যায়নি। এমন অবস্থায় সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে প্রায় ৫-৬ ফুট পানি উঠে যায় সুন্দরবনে। এর ফলে পানিতে ডুবে বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে। এরই মধ্যে চারটি মৃত ও দু’টি জীবিত হরিণ উদ্ধার হয়েছে। পানির তোড় ও ঝড়ো হাওয়ায় পূর্ব সুন্দরবনের ১৯টি জেটি, ৬টি জলযান (ট্রলার) দু’টি গোলঘর, একটি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি স্টাফ ব্যারাক ও একটি রেস্ট হাউজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে অন্তত ছয়টি অফিসের টিনের চালা উড়ে গেছে। ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণের জন্য রেঞ্জে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: জোয়ারে ডুবছে সুন্দরবন: ভেসে আসা ৬টি হরিণ উদ্ধার
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর একমাত্র সুপেয় পানির উৎস ছিল মিঠা পানির পুকুর। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পশ্চিম সুন্দরবনের ৫৪টি সুপেয় পানির পুকুরের মধ্যে ৫৩টি ডুবে গেছে। সাতক্ষীরার মাত্র একটি পুকুরে পানি ঢোকেনি। পুকুরে নোনা পানি ঢুকে যাওয়ায় বন্যপ্রাণীরা সুপেয় পানির অভাবে পড়বে।
তিনি বলেন, ‘প্রবল বাতাসে প্রায় ১১টি জেটি ও দু’টি কাঠের অফিস ভেঙে গেছে। জেটি থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার প্রায় ৩০টি মাটির রাস্তা জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ধুয়ে গেছে। রাস্তাগুলো আবার করতে হবে। কোনও বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার খবর এখনও পাওয়া যায়নি। গাছ-গাছালির ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কোথাও ৭ ফুট কোথাও ৮ ফুট বেশি জোয়ারের পানি উঠেছে।’
ইয়াসের প্রভাবে সুন্দরবনে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে ৪টি টিম গঠন
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের জন্য চারটি টিম গঠন করা হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মইউদ্দিন খান ওই চারটি টিম গঠন করেন।
তিনি জানান, ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের জন্য সুন্দরবনের চারজন রেঞ্জ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনে সরজমিনে ঘুরে দেখে আগামী সপ্তাহের মধ্যে তারা রিপোর্ট দাখিল করবে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে সুন্দরবনের বন্য প্রাণী এবং বনজ দ্রব্যের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত সুন্দরবন থেকে ভেসে যাওয়া চারটি মৃত এবং দুটি জীবিত হরিণ উদ্ধারের তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তবে সুন্দরবনের বনজদ্রব্যের তেমন ক্ষতির কোন খবর পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বাগেরহাটে সাড়ে ৬ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে : মৎস্য বিভাগ
তথ্য মতে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব প্রথমে সুন্দরবনে পড়ে। নদ-নদী ও খালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়।
বন বিভাগ জানায়, বুধবার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে সুন্দরনবনের বিভিন্ন অংশ ডুবে যায় এবং প্রায় ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। বৃহস্পতিবারও জোয়ারের সময় সুন্দরবনে দুই ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। তবে নদ-নদীতে প্রচন্ড ঢেউ ও পানির চাপ থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনের কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস : খুলনায় অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা এবং চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষকরা সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনে কাজ করছে।
শরণখোলা রেঞ্জর সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের কাজ শুরু করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: সাতক্ষীরার ৪৪ পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ
জলোচ্ছ্বাসে ডুবেছে সুন্দরবন, ভেসে আসছে বন্য প্রাণী
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ডুবে যায়। কয়েক ঘণ্টা ধরে নোনা পানি (লবণ পানি) সুন্দরবনে আটকে ছিল। বনের মধ্যে ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। সুন্দরবনের মধ্যে জোয়ারের সময় পানি বাড়তে থাকায় বন্য প্রাণী দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে।
জলোচ্ছ্বাসের কারণে দুদিন জোয়ারের সময় গোটা সুন্দরবন জলোমগ্ন হয়ে পরে। বনের কোন কোন অংশে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট গাছ-পালা সম্পূর্ণ পানিতে ডুবে ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বণ্য প্রাণীর খাদ্য ও আবাসস্থল। জলোচ্ছাসে বন থেকে ভেসে যাওয়া মৃত এবং জীবিত ৬টি হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। লবণ পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরবনে মিষ্টি পানির উৎস পুকুর।
আরও পড়ুন: ভারত উপকূলে আঘাত আনলো ঘূর্ণিঝড় ইয়াস
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবন বন্য প্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল। জলোচ্ছাসের কারণে বনের সব ধরণের বন্য প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লবণ পানি বনে আটকে থাকার কারণে বনভূমিও অতিমাত্রায় লবণাক্ত হবে। সুন্দরবনে বন্য প্রাণীর প্রজননের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়বে। সব মিলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের উপর প্রভাব পড়বে ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসের কারণে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে উঠেছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য সুন্দরবন এক প্রাকৃতিক দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সুন্দরবন নিজে ক্ষতবিক্ষত হয়ে বিভিন্ন সময় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবাসীকে রক্ষা করে চলেছে। প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, বুলবুল এবং আম্ফান প্রথম তাণ্ডব চালায় সুন্দরবনে। পরে দুর্বল হয়ে এসব ঝড় উপকূলে আছড়ে পড়ে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব প্রথমে সুন্দরবনে পড়ে। নদ-নদী ও খালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়। বুধবার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে সুন্দরনবনের বিভিন্ন অংশ ডুবে যায়। জোয়ারের সময় সুন্দরবনের মধ্যে ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবারও জোয়ারের সময় সুন্দরবনে দুই ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয় বলে বন বিভাগ জানান।
আরও পড়ুন: ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের সম্ভব্য ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রামে প্রস্তুতি সম্পন্ন
বৃহস্পতিবার বিকালে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের কাছে একটি ছোট এবং একটি বড় হরিণকে গলা সমান পানির মধ্যে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছে স্থানীয় সাংবাদিকরা।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন চালতেবুনিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর জমাদ্দার জানান, জোয়ারের সময় সুন্দরবনের দিক দিকে একটি বন্যশুকর ভেসে যেতে দেখেছে।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
বন সংলগ্ন খুড়িয়াখালী গ্রামের জেলে তুহিন ও ইউসুফ জানান, মাছ ধরে তারা জীবিকা নির্বাহ করে। দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনে তাদের আসা যাওয়া। কিন্তু বনের মধ্যে এত পানি তারা আগে কখনো দেখেনি। সুন্দরবনের মধ্যে মাথা সমান উচু পানিতে বিভিন্ন ধরণের বন্য প্রাণী ভেসে যাওয়ার কথা। এখনো বনের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে আছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) গবেষক অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে ক্রমাগত এই ধরণের ঝড় জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে। এই ধরণের দুর্যোগ মোকাবিলা করে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসতে সাধারণত ২৫ বছর সময় লাগে। কিন্তু প্রায়ই সুন্দরবনের উপর দিয়ে ঝড়-জলোচ্ছাস বয়ে যাচ্ছে।
প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারে গোটা সুন্দরবনে লবণ পানি প্রবেশ করেছে। বনের মধ্যে ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। পানিতে সুন্দরবনের ৫৫টি মিষ্টি পানির পুকুরে লবণ পানি প্রবেশ করেছে। মিষ্টি পানির সংরক্ষণের জন্য ওই সব পুকুর খনন করা হয়। বনের স্টাফ এবং বন্য প্রাণীরা তাদের পানির চাহিদা মিটাতো ওই সব পুকুর থেকে। পানির কারণে কিছু বন্য প্রাণী বনের মধ্যে পুকুর পাড়ে উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ছোট এবং দুর্বল প্রকৃতির কিছু হরিণ ভেসে যেতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে বন্য প্রাণীর কিছু ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী আরও জানান, ভবিষ্যতে এই ধরণের জলোচ্ছ্বাসের কথা বিবেচনায় নিয়ে সুন্দরবনে বন্য প্রাণীদের আশ্রয়ের কথা চিন্তা করে বনের মধ্যে উচু কেল্লা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
জোয়ারে ডুবছে সুন্দরবন: ভেসে আসা ৬টি হরিণ উদ্ধার
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা ছয়টি চিত্রল হরিণ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। এর মধ্যে দুটি জীবিত এবং ৪টি মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার কচুবাড়িয়া গ্রাম থেকে স্থানীয় লোকজন জীবিত হরিণ দু’টি উদ্ধার করে। এছাড়া বেলা ১১টার দিকে সুন্দরবনের কচিখালী এবং শরণখোলার বলেশ্বর নদ থেকে দু’টি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে বুধবার বিকালে সুন্দরবনের দুবলারচর ও শরণখোলার বলেশ্বর নদ থেকে দুটি মৃত হরিণ উদ্ধার করে বন বিভাগ।
এনিয়ে দুই দিনে সুন্দরবন থেকে ভেসে যাওয়া চারটি মৃত এবং দুটি জীবিত হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ২২ কেজি হরিণের মাংসসহ যুবক আটক
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরেও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে আবারও সুন্দরবন ডুবেছে। সুন্দরবনের মধ্যে দুই থেকে আড়াই ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। পানিতে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশ ডুবে যাওয়ায় বন্য প্রাণী দিকবিদিক ছুটছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়।
সুন্দরবন থেকে ১৫ বস্তা চিনিসহ ৭ মৌয়াল আটক
সুন্দবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে ১৫ বস্তা চিনি ও ভেজাল মধু তৈরির সরঞ্জামাদীসহ সাত মৌয়ালকে আটক করেছে বনবিভাগের সদস্যরা।
শুক্রবার রাতে সুন্দরবনের বাদুড়ঝুলি এলাকার কুমনিওয়ালা খাল থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটক মৌয়ালরা হলেন, গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রামের মৃত নুরমান মোড়লের ছেলে সত্তার মোড়ল ৪৫, একই গ্রামের মৃত হাজের আলীর ছেলে কুবাত আলী (৫০), মৃত এলাহী বক্স মালীর ছেলে শাহাদাত (৫০), মৃত সফদুল গাজীর ছেলে সাহেব আলী (৫২), মৃত ফুলচাঁদ গাজীর ছেলে ইয়াসিন গাজী (৪৫),মজিদ গাজী (৫০) এবং পাতাখালী ইউনিয়নের গড়কোমরপুর গ্রামের মোসলেম সানার ছেলে আবু বক্কর (৫২)।
বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রামের আব্দুল হাকিম শেখের ১৫ জনের একটি মৌয়াল দল বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশন থেকে বৈধ পাশ নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেন। এরপরই বনবিভাগের কাছে গোপন খবর আসে কিছু অসাধু মৌয়াল অভিনব কায়দায় চিনি দিয়ে ভেজাল মধু তৈরি করছেন। এই সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে সুন্দরবনের বাদুড়ঝুলি এলাকার কুমনিওয়ালা খালে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখান থেকে ওই সাত মৌয়ালকে আটক করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে ১৫ বস্তা চিনি, দুটি নৌকা ও ৩৫টি ড্রামসহ ভেজাল মধূ তৈরির সরঞ্জামদি জব্দ করা হয়।
আরও পড়ুন: ঈদে সুন্দরবনে টহল জোরদার, বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল
তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে; তদন্ত কমিটি গঠন
সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায় লাগা আগুন অবশেষে মঙ্গলবার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মঙ্গলবার সকাল থেকে দমকল বাহিনী কাজ করছে।’
শরণখোলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আমরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পানিছিটানো শুরু করেছি।’
আরও পড়ুন: সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকরী কৌশলপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে: মন্ত্রী
শরণখোলা, মোংলা এবং বাগেরহাট থেকে তিনটি ইউনিট আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বলে তিনি জানান।
ইতোমধ্যে বন বিভাগ আগুনের ঘটনা তদন্তের জন্য শরণখোলা রেঞ্জের প্রধান বন সংরক্ষণকারী মোহাম্মদ জয়নালকে প্রধান করে নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে: ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন
এর আগে সোমবার দুপুরে দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগে।খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। পরে দিনের আলো ফুরিয়ে গেলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে কাজ বন্ধ রাখা হয়।
আরও পড়ুন: বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের শিকারি চক্র
মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্তত ৫ একর বনজুড়ে আগুন জ্বলছিল বলে জানায় এলাকাবাসী।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স শরণখোলা স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার জানান, সোমবার দুপুরে সুন্দরবনে আগুন লাগার খবর আসে। খবর পেয়ে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ স্টেশনের ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ওই এলাকায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক তেমন ভালো না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পারস্পারিক যোগাযোগ করতে পারছিল না। পরে বাগেরহাট থেকে আরও একটি ইউনিট আসে।
এর আগে মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেছেন, ‘সুন্দরবনের দাসের ভারানি এলাকায় অল্প কিছু জায়গায় আগুন লেগেছে। যে এলাকায় আগুন লেগেছে ওই এলাকায় সুন্দরী গাছের পরিমাণ কম। ফায়ার সার্ভিস ও বনকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। আগুন যাতে বনে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য ফায়ার লাইন কেটে তাতে পানি ভরে দেয়া হচ্ছে।’
অপরদিকে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের তথ্য মতে, গত ২০ বছরে সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগে ২৫ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে সুন্দরবনের প্রায় ৭৫ একর বনভূমির গাছ, বিভিন্ন ধরনের ঘাস, লতাপাতা পুড়ে যায়। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, সুন্দরবনে ২০০২ সালে শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য এলাকায়, ২০০৪ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্প এলাকায় ও আড়ুয়াবের খালে এবং ২০০৫ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের আড়ুয়াবের খালের পশ্চিমে তুলাতলা ও খুটাবাড়ি এলাকায় আগুন লাগে। এর পরের বছর ২০০৬ সালে তেরাবেকা খালের পাড়ে, আমুরবুনিয়া, কলমতেজিয়া, পচাকুড়ালিয়া বিল ও ধানসাগর স্টেশন এলাকায় মোট ৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও ২০০৭ সালে বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী নলবন, পচাকুড়ালিয়া বিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০১০ সালে ধানসাগর স্টেশনের গুলিশাখালী, ২০১১ সালে ধানসাগর স্টেশনের নাংলী, ২০১৪ সালে আবারও ধানসাগর স্টেশন সংলগ্ন বনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালেও ধানসাগর স্টেশনের নাংলী, পচাকুড়ালিয়া, তুলাতলী এবং ২০১৭ সালে একই স্টেশনের মাদরাসার ছিলা এলাকায় আগুন লাগে।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ধানসাগার স্টেশন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
বৃহত্তর বাণিজ্য, সংযোগ ব্যবস্থা ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে ধারণ করে: দোরাইস্বামী
পণ্যের ভবিষ্যতে মূল্য সংযোজনকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের সম্ভাব্য মূল চালক হয়ে উঠতে পারে বলে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী জানিয়েছেন। তবে, এক্ষেত্রে পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে থাকবে।
তিনি বলেন, 'আমাদের বাণিজ্য ও সম্পূর্ণ নতুন কাঠামোর দিকে নজর দেয়া উচিত। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে বাণিজ্য আমাদের বন্ধুত্বের মূল চালিকা হয়ে উঠবে।' তিনি আরও জানান, পরবর্তী প্রজন্মের সমস্যা কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে সে সম্পর্কে দুই দেশকে দুরদর্শী হওয়া দরকার।
বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে প্রিমিয়ার করা 'বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: ভবিষ্যতের সম্ভাবনা' শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য দেয়ার সময় হাইকমিশনার দোরাইস্বামী এই মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে কসমসের ভার্চুয়াল সভা বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশ ও ভারতের অভিজ্ঞ রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক, সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সি রাজা মোহন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী, পলিসি ডায়ালগ সেন্টারের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয়া ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএস) সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ. ন. ম মুনিরুজ্জামান, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, ব্রিগেডিয়ার ড. জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান এবং সাবেক ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব কৃষ্ণান শ্রীনীবাসন- দু'দেশের সম্পর্কের অবস্থা মূল্যায়ন এবং এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াসে যে চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলো রয়েছে তা শনাক্ত করার জন্য অনলাইন আলোচনা সভায় অংশ নেন।
সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা ও সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনায় সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বনবিভাগ।
শুক্রবার থেকে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। তবে মৌয়াল বা জেলেরা এ নিষেধাজ্ঞার বাহিরে থাকবে।
খুলনা সার্কেলের বনসংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে একে একে সবগুলো পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সুন্দরবনের পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন: করোনা: অনির্দিষ্টকালের জন্য মিরপুর ও রংপুর চিড়িয়াখানা বন্ধ
তিনি জানান, সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম জোন মিলিয়ে সাতটি পর্যটন স্পট রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমে দুটি ও পূর্বে পাঁচটি স্পট অবস্থিত। এগুলো সবই আজ থেকে বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ: ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা
বনসংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান জানান, প্রতি বছর দেশি-বিদেশি প্রায় ২ লাখ পর্যটক সুন্দরবনে ঘুরতে আসেন। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত বছরও সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ছিল। তারপরও গতবছর ১ লাখ ৭২ হাজারের মতো পর্যটক এসেছিল। মূলত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটনের মৌসুম। এ সময়ে সুন্দরবনে পর্যটকরা বেশি আসে। সেটি মার্চ পর্যন্ত গড়ায়।
আরও পড়ুন: সব পর্যটন স্পট ২ সপ্তাহ বন্ধের ঘোষণা সিলেটে
সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু
সুন্দরবনে বৃহস্পতিবার থেকে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হয়েছে।
প্রতিবছরের মতো এ বছরও একই সময় পারমিট দেয়া শুরু করে বন অফিসগুলো। এজন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রায় পাঁচ হাজার মৌয়াল।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের তথ্য মতে, এ বছর মৌসুমের তিন মাসে ৮০০ কুইন্টাল মধু এবং ২৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বন বিভাগ। সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বৃহস্পতিবার স্টেশন অফিসগুলো থেকে পাস-পারমিট দেয়া শুরু হয়।
আরও পড়ুন: বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের শিকারি চক্র
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে শরণখোলা রেঞ্জের বন থেকে ৭১১ দশমিক ৫০ কুইন্টার মধু এবং ২১৩ দশমিক ৪৫ কুইন্টাল মোম আহরণ করা হয়।
পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, সুন্দরবনে মধু কম-বেশি হওয়া অনেকটা বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ঠিক থাকবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকরী কৌশলপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে: মন্ত্রী
মৌয়ালদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে খলিশা ফুলের মধু আসে। এরপর আসে গারণ ফুলের। শেষ আসে কেওড়া ও ছইলা ফুলের মধু। এই তিন প্রজাতির মধুর মধ্যে সবচেয়ে দামী হচ্ছে খলিশার মধু। কিন্তু এ বছর এ অঞ্চলে কোনো বৃষ্টি হয়নি। আর বৃষ্টি না হলে ফুল শুকিয়ে ঝরে যায় বলে মধু জমে না। তাই এ বছর মধু কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন মৌয়ালরা।
মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে বনে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বন অফিসের ঘাটে পারমিটের অপেক্ষা করছেন মৌয়ালরা। আবার এখনো নৌকা প্রস্তুতির কাজ চলছে অনেকের।
মধু ব্যবসায়ী মো. রাসেল আহমেদ জানান, তিনি এ বছর তিনটি নৌকায় দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তার আরও বেশি বিনিয়োগের ইচ্ছা ছিল এবার। কিন্তু বৃষ্টির না হওয়ায় তিনি বেশি বিনিয়োগে সাহস করেননি।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন থেকে উদ্ধার হওয়া মৃত বাঘের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন
মৌয়াল মো. ইউনুচ হাওলাদার (৬৫) জানান, তার নৌকাটি প্রস্তুত করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। কাজ প্রায় শেষের পথে। তার নৌকায় ১২ জন সহযোগী রয়েছে। মৌসুমের তিন মাসে মধু আহরণ করতে গিয়ে একেকজন মৌয়ালের খরচ হয় ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।
তিনি জানান, গত বছর একেকজন সহযোগী দুই মন করে মধু পেয়েছেন ভাগে। ২৫ হাজার টাকা মন দরে তা বিক্রি করেছেন।
এসিএফ জানান, এবারে সংশ্লিষ্ট বন অফিস থেকে ১৪ দিনের পারমিট নিয়ে বনে প্রবেশ করে মৌয়ালরা। সংরক্ষিত অভয়ারণ্য এলাকা থেকে মধু আহরণ করা যাবে না এবং কোনো মৌয়াল নিষিদ্ধ বনাঞ্চলে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক তার পারমিট বাতিল করা হবে।
এছাড়া, পাসধারী মৌয়ালরা মধু আহরণের জন্য মৌমাছি তাড়াতে অগ্নিকুন্ড, মশাল বা অনুরূপ কোনো দাহ্য পদার্থ এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে পারবে না। এগুলোসহ ৯টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মৌয়ালদের। এই নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে বন আইনে শাস্তিও রয়েছে।