সুন্দরবন
কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে প্রাণে বেঁচে গেলেন যুবক
সুন্দরবনের খালে গোসল করতে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে প্রাণে বেঁচে গেলেন কলেজ পড়ুয়া এক যুবক। সম্প্রতি সুন্দরবনের ঢাংমারী খালে গোসল করতে নামলে একটি কুমির আক্রমণ করে ওই যুবককে।
ওই যুবকের নাম রাজু হাওলাদার (২৪)। তিনি খুলনার দাকোপ উপজেলার পূর্ব ঢাংমারী এলাকার খ্রিষ্টান পাড়ার বাসিন্দা নজির হাওলাদারের ছেলে।
কুমিরের আক্রমণ থেকে ফিরে এসে লোমহর্ষক বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে তিনি নিজ বাড়ি লাগোয়া সুন্দরবনের ঢাংমারী খালে গোসল করতে নামেন। এক পর্যায়ে কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে মাথায় শ্যাম্পু মাখছিলেন তিনি। এই সময় হঠাৎ করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একটি কুমির তাকে আক্রমণ করে। কুমিরটি রাজুর ডান পায়ের হাঁটুর ওপরের দিকে কামড়ে ধরে প্রায় ১৫-১৬ হাত পানির গভীরে টেনে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: কুমিরের চোখে ঘুষি মেরে প্রাণে বাঁচল কিশোর
রাজু কুমিরটির সঙ্গে ধস্তাধস্তি করার একপর্যায়ে কুমিরের চোখে আঙুল ঢুকিয়ে দেয়। কুমিরের চোখে আঘাত করলে কুমিরটি রাজুর পায়ের কামড় ছেড়ে দেয়। তখন রাজু দ্রুত উপড়ে উঠে আসে। তখন তিনি দ্রুত নদী থেকে উঠে মা-বাবা বলে চিৎকার করেন। তাৎক্ষণিক তার মা-বাবা গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন।
কুমিরের কামড়ে রাজুর পায়ের ক্ষত জায়গায় চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তিনি এখন অনেকটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন।
রাজুর বাবা নজরুল হাওলাদার, মা মরিয়ম বেগম এবং বড় ভাই মনির হাওলাদার ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে জানান, তারাসহ গ্রামের অধিকাংশ লোকজন ঢাংমারী খালে নেমে মাছ ধরা ও গোছলসহ বিভিন্ন কাজে করে থাকেন। কিন্তু কুমির কখনও কাউকে আক্রমণ করেনি। তবে হাঁস-মুরগি ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রাজুকে এভাবে আক্রমণ করবে এটা কেউ ভাবতে পারেননি।
তবে তারা রাজু বেঁচে ফেরায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও তার চিকিৎসার অর্থ যোগান নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বাড়ির একটি ছাগল বিক্রি করে তার চিকিৎসা চলছে। কিন্তু বন বিভাগের পক্ষ থেকে বা কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের সহায়তায় এগেয়ি আসেনি।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সুন্দরবনে ৩টি কুমির অবমুক্ত
এ বিষয়ে দরিদ্র এ পরিবারের পক্ষে সহায়তার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তারা।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা মো. সাইফুল বারী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ঢাংমারী খালে প্রায় সময়ই বড় বড় দুইটি কুমির দেখা যায়। তাই বনবিভাগের পক্ষ থেকে খালের পাড়ের আশপাশের মানুষদের খালে নামতে প্রতিনিয়ত নিষেধ করা হচ্ছে। তারপরও তারা তা না শুনে খালে গোসল ও মাছ ধরতে নামেন। ফলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।
বাগেরহাটে ধরা পড়ছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা
বঙ্গোপসাগরে পশুর এবং বলেশ্বর নদীর মোহনায় বেহুন্দিসহ নানা ধরনের জাল পেতে রাখার কারণে ইলিশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ঝাঁক বেঁধে ইলিশ নির্বিগ্নে উপকূলের নদ-নদীতে প্রবেশ করতে পারছে না। এতে করে সাগর এবং নদ ও নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য কমে গেছে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইলিশের ওপর পড়েছে।
বিচরণ কমে যাওয়ায় জেলেরা জাল ফেললেও কাঙ্খিত ইলিশ ধরা পড়ছে না। ট্রলারের সক্ষমতা না থাকায় এই অঞ্চলের জেলেরা গভীর সাগরে যেতে পারেনা। ফলে উপক‚লীয় জেলা বাগেরহাটের পাইকারি মাছের আড়তে ইলিশের সরবারহ অনেক কমে গেছে। এ অবস্থায় জেলে, ট্রলার মালিক, আড়তদার এবং ইলিশ ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, মাছের প্রজননের সময় কেবলমাত্র বাংলাদেশে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণায় আপত্তি জানিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে সাগরে অবরোধের দাবি করেছেন সুন্দরবন অধ্যুষিত উপকূলীয় বাগেরহাট জেলার জেলেরা। তবে প্রজনন বাড়াতে নদ ও নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখার পক্ষে মৎস্য বিভাগ।
অপরদিকে, জেলা মৎস্য বিভাগ এবং সুন্দরবন বিভাগ সাগর মোহনায় ইলিশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
বাগেরহাট অঞ্চলের জেলে ও ট্রলার মালিকরা বড় বড় টোলিং জাহাজ বন্ধ এবং ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সাগরে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ অবরোধের দাবি জানিয়েছে। জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করে ইলিশ ধরে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: স্কুলশিক্ষকের তৈরি ভাসমান সেতুতে দুর্ভোগের অবসান হলো গ্রামবাসীর
মৎস্য বিভাগ বলছে, সুন্দরবন মাছের অনেক বড় প্রজনন ক্ষেত্র। এজন্য গোটা সুন্দরবনের নদ-নদীতে সারা বছর জুড়ে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা গেলে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের উৎপাদন কয়েকগুন বেড়ে যাবে।
সুন্দরবন বন বিভাগ জানায়, গোটা সুন্দরবনে সারা বছর মাছ আহরণ বন্ধ রাখতে হলে আগে জেলেদের বিকল্প কর্মস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
শনিবার বাগেরহাট কেবি বাজার পাইকারি মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, ইলিশ নিয়ে কোনো ট্রলার ঘাটে ভেড়েনি। ট্রলার শূন্য আড়তের ঘাট। আড়তে ইলিশ নেই বললেই চলে। সামান্য পরিমাণ ইলিশ ছিল যা কোল্ডস্টোর থেকে আড়তে তোলা হয়েছে। তবে আড়ত জুড়ে ইলিশের ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
সুন্দরবনে বাঘ স্থানান্তর করতে চায় বন বিভাগ
বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনে বাঘের অবাধ বিচরণ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নিজেদের মধ্যে আন্তঃপ্রজনন হওয়ায় বাঘ রোগাক্রান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আন্তঃপ্রজনন রোধ করতে সুন্দরবনের মধ্যে বাঘ স্থানান্তর করতে চায় বন বিভাগ।
এ বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, সুন্দরবনের মধ্যে শিপশা, পশুর ও পাঙ্গাশিয়াসহ বড় বড় নদীর কারণে বাঘ আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সুন্দরবনের কিছু অংশে বাঘের ভ্যারাইটি কমে গেছে। ফলে নিজেদের মধ্যে বাঘের আন্তঃপ্রজনন হচ্ছে। আন্তঃপ্রজননের কারণে বাঘ নানা ভাবে দুর্বল এবং রোগাক্রান্ত হচ্ছে। সুন্দরবনের একস্থান থেকে নিয়ে অন্য স্থানে বাঘ স্থানান্তর করা গেলে প্রজননের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন।
‘বাঘ আমাদের অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শুক্রবার (২৯ জুলাই) বাগেরহাটে সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় আলাদা ভাবে বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হয়।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, শতবছরে বিশ্বের বনাঞ্চল থেকে বাঘের সংখ্যা এক লাখ থেকে কমে মাত্র চার হাজারের নিচে দাঁড়িয়েছে। বাঘের আটটি উপ-প্রজাতির তিনটি এরইমধ্যে বিশ্ব থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগেও বিশ্বের মাত্র ১৩টি দেশে বাঘ ছিল। সেখান থেকে আরও একটি দেশ বাঘ হারিয়েছে। এখন বাংলাদেশসহ মাত্র ১২টি দেশে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে। সারা বিশ্বের বন উজাড়, চোরশিকারি ও পাচারকারিদের কারণে বাঘ মহাবিপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বর্তমানে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের আনাগোনা দেখা গেছে। পর্যটক এবং বন বিভাগের সদস্যদের নজরে পড়ছে বাঘ ও তার বাচ্চা। এ অবস্থায় সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিচরণের খবর আশার আলো জাগিয়েছে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, বাঘের আটটি উপ-প্রজাতির মধ্যে ইতোমধ্যে বালিনীজ টাইগার, জাভানীজ টাইগার ও কাম্পিয়ান টাইগার বিশ্ব হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে পাঁচটি উপ-প্রজাতি কোন রকম টিকে আছে। সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার ও আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরিত প্রটোকল অনুসারে সুন্দরবনে বাঘ রক্ষার জন্য বন বিভাগ কাজ করছে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে টাইগার অ্যাকশান প্লান নামে ১০ বছর মেয়াদি প্লানের আওতায় বাঘ রক্ষায় কাজ চলছে।
জানা গেছে, দেশে বাঘের একমাত্র আবাসস্থল সুন্দরবন। চোরাশিকারীচক্র ও জলদস্যু-বনদস্যুদের তৎপরতার কারণে কয়েক বছর আগেও সুন্দরবনে অনেকটা হুমকির মুখে ছিল বাঘ। দস্যুরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায়, বিগত কয়েক বছর ধরে সুন্দরবনে দস্যুতা প্রায় শুন্যের কোঠায়। এছাড়া চোরাশিকারিদের তৎপরতাও কমে এসেছে। একারণে সুন্দরবনে বাঘ অনেকটা সুরক্ষিত এবং বাঘের বিচারণ ক্ষেত্র নিরাপদ বলে মনে করছে বন বিভাগ।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বাঘের পাশাপাশি গণনা করা হবে হরিণ ও শূকর
বন বিভাগ জানায়, ২০১৩-২০১৫ সালে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে প্রথম জরিপ করে বাঘ পাওয়া গেছে ১০৬টি। দ্বিতীয় বার ২০১৭-২০১৮ একই পদ্দতিতে জরিপ করে সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশে বাঘের ১১৪টি সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়।
জানা গেছে, সুন্দরবনের মোট আয়াতন ছয় হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ চার হাজার ১৪৩ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে সুন্দরবনের মোট আয়াতনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আর গোটা সুন্দরবন জুড়েই রয়েল বেঙ্গল টাইগার কম বেশি বিচরণ করে থাকে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে নানা ভাবে প্রায় অর্ধশত বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ২২ টি এবং পশ্চিম বিভাগে ১৬টি বাঘের মৃত্যু হয়। এছাড়া ওই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা ১১টি বাঘের চামড়া এবং বাঘের অঙ্গপ্রতঙ্গ উদ্ধার করে।
বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোংলা উপজেলার দেলোয়ার হোসেন, জামাল হোসেন, ইউসুফ আকনসহ কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সম্প্রতি তারা সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় নদী-খালের চড়ে বাঘের পায়ের ছাপ দেখেছে। মাঝে মধ্যে তাদের কানে বাঘের ডাক ভেসে আসে।
বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী আরও জানান, চোরাশিকারী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে সুন্দরবনে বাঘ হুমকির মুখে রয়েছে। বাঘের আবাস্থল নিরাপদ রাখতে বন বিভাগ কাজ করছে।
বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর তথ্যমতে, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের পর সুন্দরবনে আর বাঘ গণনা হয়নি। সম্প্রতি সুন্দরবন ‘বাঘ সংরক্ষণ’ নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন হলেও এখন পর্যন্ত অর্থবরাদ্ধ পাওয়া যায়নি। অর্থবরাদ্ধ পাওয়া গেলে চলতি বছরের শীত মৌসুমে সুন্দরবনে বাঘ গণনার কাজ শুরু করা হবে। নতুন করে বাঘ গণনা হলে জানা যাবে সুন্দরবনে বাঘের সঠিক সংখ্যা।
বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দরবনে বাঘের ধারণক্ষমতা ২০০টি। বাঘের বর্তমান সংখ্যা থেকে ২০০টিতে উন্নীত করতে বন বিভাগ নানা উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়ন করছে। বাঘসহ সব ধরণের বন্যপ্রাণির প্রজনন নির্বিঘ্নে করতে জুন, জুলাই ও আগস্ট-এই তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক ও জেলেসহ সব ধরণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সর্বশেষ জরিপ অনুসারে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। তবে সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে পর্যটক ও বনের স্টাফরা ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের বাঘ দেখেছে। একই সাথে বনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের পায়ের চিহ্ন দেখা গেছে; এতে করে মনে হচ্ছে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডিএফও মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন আরও জানান, বাঘ শিকারিদের তৎপরতা রুখে দিতে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি স্মার্ট পেট্রোল চলছে সুন্দরবনে। বন বিভাগের পাশাপাশি সিএমসি, সিপিজি ও বিটিআরসি নিয়মিত সুন্দরবন বাউন্ডারি এলাকায় নিয়মিত টহল দেয়।
বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষ্যে বাগেরহাটে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ ও শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় পৃথক র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। চাঁদপাই রেঞ্জে বাঘ দিবসের আলোচনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ২১ বছরে ৪০ বাঘের মৃত্যু
বাঘ সংরক্ষণে সুন্দরবনে মানুষের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে: পরিবেশ উপমন্ত্রী
জেলে-পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: নিজস্ব রূপে ফিরেছে সুন্দরবন
জুন, জুলাই ও আগস্ট তিন মাস সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম। এই সময়ে বনের নদী-খালে মাছ শিকারে বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞা চলছে। এছাড়া নির্দিষ্ট এ সময়ে বনের অভ্যন্তরে ও অভয়ারণ্যে পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর ফলে যেন নিজস্ব রূপে ফিরেছে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন।
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বণ্যপ্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত সুন্দরবন দেখার আগ্রহ রয়েছে দেশ-বিদেশের সব বয়সী মানুষের। প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে সুন্দরবনে ছুটে আসেন পর্যটকরা। কিন্তু চলমান নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই ভ্রমণের সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘সুনসান নীরবতায় বনের প্রকৃতিতে ভিন্ন রূপের সৃষ্টি হয়েছে। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বনজুড়ে নীরবতা বিরাজ করছে। গাছপালা যেন হাত বাড়িয়ে ডাকছে। পাখির কলকাকলীতেও মুখর সুন্দরবন। সেই ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দেখা মিলছে।’
জানা গেছে, নানা প্রজাতির গাছপালা, পশুপাখি ও প্রাণীর বিচরণস্থল সুন্দরবনে সারা বছর পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দর্শনার্থীরা শুধু হরিণ, বানর, কচ্ছপ ও কুমিরের দেখা পান। বাকি সব প্রাণী মানুষের কোলাহল ও নৌযানের শব্দে বনের গহীনে বিচরণ করে। কিন্তু গত দেড় মাস ধরে মানুষের পদচারণা ও নৌযানের শব্দ না থাকায় প্রাণীর ঝাঁক চলে আসছে নদী ও খালের পাড়সহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিনের নীরবতার কারণে আগে যে সব প্রাণী অহরহ দেখা যেতো না, সেগুলোর দেখা মিলছে। পুরো সুন্দরবনে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ভ্রমণ করে থাকেন। আর তাদের পরিবহনে ব্যবহার হয় প্রায় ২৫ হাজার নৌযান। গত ১ জুন থেকে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে। তাই মানুষ ও নৌযান চলাচল না থাকায় বনের পরিবেশ পাল্টে গেছে।’
পড়ুন: সুন্দরবনে ৩ মাস মাছ ধরা নিষেধ
ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ গাইড: দর্শনীয় স্থান সমূহ, খরচ
সাতক্ষীরায় লোকালয়ে বাঘ, আতঙ্কে গ্রামবাসী
সুন্দরবন সংলগ্ন জনবসতি এলাকায় বাঘের দেখা পাওয়ার পর থেকে শ্যামনগর উপজেলার গোলাখালী দ্বীপে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
রবিবার গ্রামের রফিকুল নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন চিংড়ির খামারের কাছে বাঘটিকে ঘুরে বেড়াতে দেখে স্থানীয়রা। বাঘটি সেখানে প্রায় ২০ মিনিটের মতো ছিলো বলে জানা গেছে।
গ্রামের বাসিন্দা ভোলানাথ মণ্ডল বলেন,‘বাঘের ভয়ে কেউ এখন তাদের ঘর থেকে বের হতে সাহস করছে না।’
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান বলেন, গ্রাম্য টাইগার রেসপন্স ফোর্স এবং বন বিভাগের একটি যৌথ দল ২৪ ঘণ্টা নজরে রাখছে। তবে গ্রামের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বাঘের পাশাপাশি গণনা করা হবে হরিণ ও শূকর
পদ্মা সেতু: খুলনার পর্যটন শিল্পের দুয়ার উন্মোচন
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুলনার পর্যটন খাতে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। ইতোমধ্যে ইউনেস্কো ঘোষিত মসজিদের শহর বাগেরহাটের ১৭ স্থাপনা, সুন্দরবন ও কুয়াকাটাকে ঘিরে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে এবং কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সেতুর চালুর ফলে এ অঞ্চলের সরকারি-বেসরকাররি পর্যটন খাতের আয় ব্যাপ্তি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে দুটিই বাগেরহাটে অবস্থিত। ইউনেস্কো ঘোষিত সুন্দরবন ও ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মজসিদসহ ১৭টি স্থাপন। ২০২১-২২ অর্থবছরে সুন্দরবনের বাগেরহাট অংশে এক লাখ ২০ হাজার পর্যটক এসেছেন। এখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় এসেছে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। একই সময়ে ষাটগম্বুজ মসজিদে এক লাখ ৮০ হাজার দর্শনার্থীর কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: বাগেরহাট হবে নতুন অর্থনৈতিক হাব
সুন্দরবন টুরিস্ট ক্লাবের শেখ শাকির হোসেন বলেন, বাগেরহাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য যাতায়াতের প্রধান ব্যবস্থা হচ্ছে সড়ক পথ। আর এই সড়ক পথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের দুর্ভোগে পড়তে হতো। তবে পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে সেই চিরচেনা রূপ একেবারেই পাল্টে যাবে। সম্ভাবনাময় বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পও ঘুরে দাঁড়াবে।
মোংলার ট্রলার ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন বলেন, সুন্দরবনের ইকো টুরিজমকেন্দ্র ও বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্র করমজলকে কেন্দ্র করে আমাদের ব্যবসা। মোংলা থেকে ট্রলার করে আধাঘণ্টায় করমজল যাওয়া যায়। কিন্তু সড়ক পথে ভোগান্তি থাকার কারণে দর্শনার্থী কম আসত। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আশাকরি সুন্দরবনে দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে সেই সঙ্গে আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
মোংলা জয়মনির ঘোল এলাকার বিজন কুমার রায় বলেন, সুন্দরবনের কাছেই আমাদের বসবাস। তাই বন কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্পের সঙ্গে আমরা জড়িত। পদ্মা সেতুর চালুর ফলে সুন্দবনের বিভিন্ন পয়েন্টের অবকাঠামো ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি ফলে আমাদেরও ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হবে।
স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড ও ফটোগ্রাফার সোহেল হোসেন বলেন, বাগেরহাটে যে পরিমান দর্শনার্থী বর্তমানে ঘুরতে আসে, পদ্মা সেতুর ফলে সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। দর্শনার্থী বাড়লে গাইডের প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে। ফলে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: ফরিদপুরের অর্থনৈতিক দ্বার উন্মোচিত
খানজাহান আলী (রহ.) মাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী মো. কামরুজ্জামান বলেন, পথের ভোগান্তির কারণে বাগেরহাটে পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকে। এ কারণে হোটেল ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পদ্মা সেতু চালু ফলে বাগেরহাটে পর্যটকদের আগমন ঘটবে। হোটেল-মোটেল গুলোতেও চাপ থাকবে।
ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, সেতুর ফলে বাগেরহাটসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে সমৃদ্ধি ফিরে আসবে। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে।
বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ জানান, পদ্মা সেতু যে অমীত সম্ভাবনা দেখাচ্ছে তাতে দর্শনার্থী সংখ্যা ধারণার চেয়েও বেশি হবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ষাটগম্বুজের সামনের বিশ্রামাগার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদ সংলগ্ন ঘোড়াদিঘিকে নান্দনিক করতে ওয়াক ওয়ে তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, আগত পর্যটকদের সুবিধার্থে পর্যটন করপোরেশনের অর্থায়নে ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে খানজাহান আলী (রহ.) এর মাজার মোড়ে একটি তিন তারকা মানের হোটেল নির্মাণের কাজ চলছে। যার প্রায় ৮০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে কয়েক গুণ বেশি পর্যটক বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সুন্দরবনকে আরও বেশি পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তুলতে সুন্দরবনের আলীবান্ধা ও আন্ধারমানিক দুটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেড় লাখের বেশি কোরবানি পশু প্রস্তুত: জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো.আজিজুর রহমান বলেন, বাগেরহাটে অসংখ্য দর্শনীয় স্থাপনা রয়েছে। এসবের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি যাতায়েত ব্যবস্থা উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি পদ্মা সেতুর হাত ধরে বাগেরহাটের পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। এই খাতে ব্যাপক আর্থিক উন্নতি ঘটবে।
সুন্দরবনে ৩ মাস মাছ ধরা নিষেধ
সুন্দরবনে ১ জুন থেকে মাছ আহরণ ও দর্শণার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্লানেলের (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী এই তিন মাস বেশিরভাগ প্রজাতির মাছের প্রজনন সময়। তাই সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখা হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বাঘের পাশাপাশি গণনা করা হবে হরিণ ও শূকর
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রবেশের অনুমতি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে বন বিভাগ এবং সুন্দরবনেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ডিএফও বলেন, সাধারণ ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। এই বছর মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এই নিষেধাজ্ঞা এক মাস বৃদ্ধি করে ১ জুন থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় মাছের প্রজনন আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে পর্যটন: সেবা কার্যক্রম উন্নত করতে অটোমেশনের দিকে নজর
সুন্দরবনের ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে ২১০ প্রজাতির সাদামাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও এক প্রজাতির লবস্টার রয়েছে।
সাতক্ষীরায় জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে ডেনমার্কের প্রিন্সেসের মতবিনিময়
ডেনমার্কের ক্রাউন প্রিন্সেস মেরি এলিজাবেথ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শন করে সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রত্যক্ষ করেছেন।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নে পৌঁছান।
পরে প্রিন্সেস মেরি একটি গাড়িতে করে কুলতলী গ্রামে যান এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন: ডেনমার্কের রাজকুমারীর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন
পরিদর্শনকালে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তন তাদের জীবন পরিবর্তন করেছে এবং তাদের কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে-তা তিনি আবিষ্কার করেন।
ওই এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর প্রিন্সেস মেরি একটি স্থানীয় বহুমুখী সাইক্লোন শেল্টার পরিদর্শন করেন এবং ঘূর্ণিঝড়ের সময় এর কার্যকারিতা এবং এর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে পারেন।
দুপুরে তিনি ও তার সফরসঙ্গীরা সুন্দরবনের উপকূলীয় মৌসুমী রিসোর্টে এসে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
সুন্দরবনে কীটনাশক ছিটিয়ে মাছ ধরার অভিযোগে ১২ জেলে আটক
বাগেরহাটের মোংলায় সুন্দরবনে কীটনাশক ছিটিয়ে মাছ ধরার অভিযোগে ১২ জেলেকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার ভোরে উপজেলার সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের জাপসি এলাকায় গোলের খাল থেকে তাদের আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এসময় তাদের কাছ থেকে ৪০০ কেজি মাছ, পাঁচটি নৌকা, ছয় বোতল কীটনাশক, চারটি জাল ও পাঁচটি টর্চলাইট জব্দ করা হয়।
আরও পড়ুন: ইলিশ শিকারের দায়ে মেঘনা থেকে ১২ জেলে আটক
আটক জেলেরা হলেন- সাদ্দাম বৈদ্য (২৭), শফিকুল ইসলাম বৈদ্য (৩৮), জাকির হোসেন (২৮), খায়রুল মোড়ল (২৫), আব্দুস সালাম গাজী (৩৬), বাচ্চু সানা (৩৫), আবু সাইদ সরদার (৩০), নাজমুল সরদার (২৮), আবুল হোসেন গাজী (২৮), শাহজাহান শেখ (৪৫), সালাম সানা (৩০) ও ইকরামুল সরদার (৩১)। তাদের সবার বাড়ি জেলার দাকোপ ও রূপসা উপজেলায়।
র্যাব খুলনা-৬ এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার ভোরে সুন্দরবনের অভয়াশ্রম এলাকায় নদী-খালে কীটনাশক ছিটিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে র্যাব সদস্যরা অভিযান শুরু করে। অভিযান চলাকালে র্যাব সদস্যরা দেখতে পায় জাপসি নদী ও গোলের খালে অসংখ্য মাছ মরে ভেসে আছে এবং ওই ভাসা মাছ কয়েকটি নৌকায় তোলা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরায় ভোলায় ১৫ জেলে আটক
এসময় জেলেরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে নৌকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে র্যাব সদস্যরা ধাওয়া করে ১২ জেলেকে আটক করে। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪০০ কেজি মাছ,পাঁচটি নৌকা,ছয় বোতল কীটনাশক, চারটি জাল এবং পাঁচটি টর্চলাইট জব্দ করা হয়।
আটক জেলেদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে মোংলা থানায় হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বাগেরহাটে সবজি খেত থেকে অজগর উদ্ধার, সুন্দরবনে অবমুক্ত
বাগেরহাটের শরণখোলায় সবজি খেত থেকে একটি অজগর উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার বিকালে উপজেলার গাবতলা বাজারসংলগ্ন স্লুইসগেট এলাকার একটি সবজি খেত থেকে ওই অজগরটি উদ্ধার করে ওয়াইল্ড টিমের সদস্যরা। পরে অজগরটিকে সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
উদ্ধার করা অজগরটি ১০ ফুট লম্বা এবং ওজন ১২ কেজি।
আরও পড়ুন: বরিশালে ৭ ফুট লম্বা অজগর সাপ উদ্ধার
ওয়াইল্ড টিমের সদস্য মো. সোলায়মান জানান, তারা খবর পেয়ে গিয়ে দেখে সবজি খেত ঘিরে রাখা ইলিশ ধরা জাল বিশাল আকৃতির ওই অজগরটি জড়িয়ে আছে। অক্ষত অবস্থায় তারা অজগরটি উদ্ধার করে বন বিভাগের কাছে নিয়ে যায়। অজগরটি সুন্দরবন ছেড়ে বলেশ্বর নদ পাড়ি দিয়ে ওই সবজি খেতে ঢুকে পড়ে। মাঝে মধ্যে সুন্দরবন ছেড়ে অজগর বনসংলগ্ন লোকালয়ে চলে আসছে বলে তিনি জানান।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের বগী স্টেশন কর্মকর্তা মো. সাদিক মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, উপজেলার স্লুইসগেট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দোলেয়ার হোসেনের বাড়ির সবজি খেত ঘিরে রাখা জালে আটকা পড়ে অজগড়টি। খবর পেয়ে স্থানীয় ওয়াইল্ড টিমের সদস্যরা অজগরটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় অজগরটিকে অবমুক্ত করা হয়েছে। খাবারের সন্ধানে অজগরটি সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে গিয়েছিল বলে ওই বন কর্মকর্তা জানান।
আরও পড়ুন: শরণখোলায় অজগর উদ্ধার, সুন্দরবনে অবমুক্ত
কাপ্তাইয়ে ১৫ ফুট দীর্ঘ অজগর উদ্ধারের পর অবমুক্ত