কৃষি
নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসছে বিনা উদ্ভাবিত ‘শেখ রাসেল’ ধান
বোরো আবাদে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউিট (বিনা) উদ্ভাবিত নতুন জাতের বিনাধান-২৫। আর এর নামকরণ করা হয়েছে শেখ রাসেল ধান।
বিনাধানের বিজ্ঞানীরা জানান, উচ্চ ফলনশীল ‘চিকন’ এ ধানটি ইতোমধ্যেই গবেষণা খামারে আলোড়ন তুলেছে। তাছাড়া নতুন জাতের এই ধানটি কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলবে এবং কৃষি অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তারা।
আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি
সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে শেখ রাসেলের নামে ছাড়পত্র নেয়া বিনাধান-২৫’র বীজ শেরপুরে নালিতাবাড়ী বিনা উপকেন্দ্রের খামারে উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১০ কেজি ধানের বীজ ফেলা হয়েছে। সেখান থেকে উৎপাদিত শেখ রাসেল ধানবীজ পরবর্তীতে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য দেয়া হবে।
বিনাধানের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নালিতাবাড়ী উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষি বিজ্ঞানীরা ড. মাহবুবুল আলম তরফদার বলেন, বিনা উদ্ভাবিত সর্বশেষ জাত এই ‘শেখ রাসেল’ ধান। সম্প্রতি বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির থেকে নতুন জাতের এই ধানটি ছাড়পত্র পেয়েছে।
তিনি বলেন, এটি বোরো আবাদে চাষযোগ্য প্রমিয়াম কোয়ালিটির একটি জাত। এই ধান খুবই চিকন ও লম্বা। জীবনকাল ১৪০ দিন। খামারে এ ধানের গড় ফলন মিলেছে হেক্টর প্রতি সাড়ে আট টন, অর্থাৎ বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০ মণ। এটি বাসমতি চালের বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হবে এবং কৃষকরা উৎপাদিত ধানের ভালো দাম পাবেন।
আরও পড়ুন: যশোরাঞ্চলে বোরো ধানের মিষ্টি গন্ধে মাতোয়ারা কৃষক-কৃষাণি
কৃষি বিজ্ঞানীরা ড. মাহবুবুল আলম তরফদার বলেন, ‘আমরা বাজারে চিকন চাল হিসেবে যেগুলো দেখতে পাই, তার বেশিরভাগই মেশিনে কেটে চিকন করে বাজারজাত করা হয়ে থাকে। কিন্তু বিনাধান-২৫ বা শেখ রাসেল ধানের চাল কেটে চিকন করতে হবে না। এটা এমনিতেই বেশ সরু। যে কারণে এ ধানের চালের পুষ্টিমান বজায় থাকবে।
এছাড়া এ চালের ভাত খেতেও বেশ সুস্বাদু ও ঝরঝরে। সামনের দিনে শেখ রাসেল ধান খুবই জনপ্রিয় একটি জাত হিসেবে পরিচিতি পাবে হবে আশা করছেন বিনার কৃষি বিজ্ঞানীরা।
রাজগঞ্জে শীতকালীন পেঁয়াজের চাষে ব্যস্ত কৃষক
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ অঞ্চল জুড়ে পেঁয়াজের চাহিদা পূরণের জন্য শুরু হয়েছে শীতকালীন পেঁয়াজের আবাদ। প্রতি বছরের মতো এ বছরও রাজগঞ্জ বাজারে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজের চারা। মণিরামপুর উপজেলাসহ উপজেলার বাইরে থেকেও ব্যাপারীরা এ বাজারে পেঁয়াজের চারা বিক্রি করতে আসছেন।
রাজগঞ্জ বাজারে পেঁয়াজের চারা বিক্রি করতে আসা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের আব্দুল খালেক (৫০), কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের মিঠু মিয়া (৫২) ও হাসাডাঙ্গা গ্রামের মাহাবুর রহমান (৪৫) জানান, দীর্ঘদিন ধরে নিজের জমিতে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করি, আবার কিনেও বিক্রি করি। আমরা শুধু রাজগঞ্জ বাজারে না, বিভিন্ন হাট-বাজারে এভাবেই পেঁয়াজের চারা বিক্রি করি।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলায় পেঁয়াজ চারা সঙ্কটের আশঙ্কা
এদিকে পেঁয়াজের চারার দাম সহনীয় হওয়ায় অনেক কৃষক খুশি।
রাজগঞ্জের হরিহরনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক সোহেল (৪৫) জানান, এখন শীতকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করেছি। রাজগঞ্জ হাটে এসেছি পেঁয়াজের চারা কিনতে। এখান থেকে চারা কিনে খেতে রোপন করবো।
একই ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের আরেক কৃষক মিজান (৪০) জানান, এবার বাজারে পেঁয়াজের চারার দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। তাতে অসুবিধা নেই। পেঁয়াজের চারা যে পাওয়া যাচ্ছে, এটায় বড় কথা।
হানুয়ার-খালিয়া গ্রামের কৃষক হারুন (৫০) জানান, ১১ জন শ্রমিক দিয়ে জমিতে শীতকালীন পেঁয়াজের চারা রোপন করছি। আশা করছি ফলন ভালো হবে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে পুলিশের উদ্ধার করা চোরাই পেঁয়াজ নিলামে
স্থানীয় উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ভগীরত চন্দ্র বলেন, ‘আমরা মাঠে মাঠে যেয়ে কৃষকের সার্বিক সহযোগীতাসহ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এই মৌসুমে সব ধরনের আবাদ ভালো হবে। এজন্য কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক কৃষকের পাশে আছে।’
জাওয়াদ’র ক্ষতি পোষাতে বোরো বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত মাগুরার কৃষকরা
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাগুরার কৃষকরা পাকা আমন ধান সুষ্ঠুভাবে ঘরে তুলতে না পারায় কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বোরো মৌসুমে ভালো ফসল উৎপাদনে বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষকরা।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা নিয়ে বীজতলা তৈরি করছেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার আট ইউনিয়নের কৃষকেরা। পাঁকা আমন ধানের ক্ষতি হওয়ায় কৃষি অফিসের পরামর্শে আবারও ধান রোপন করেছেন তারা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ছয় হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। দুই হাজার হেক্টর হাইব্রিড ও চার হাজার হেক্টর উফশী ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কৃষকদের আদর্শ বীজতলা তৈরির জন্য কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিচ্ছে। তবে এ বছর এলাকার বেশির ভাগ কৃষক উফশী ব্রি- ২৮, হাইব্রিড এ এসএল ৮ এইস জাতের ধান চাষের লক্ষ্যে বীজতলা তৈরি করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে উফশী অন্য জাতের মধ্যে ব্রি- ২৯ ব্রি- ৮১, ব্রি-৮৪ ব্রি- ৮৯ ব্রি- ৯২ ইত্যাদি জাতের ধান চাষ হয়েছে।
আরও পড়ুন: খুলনাঞ্চলে যেসব কারণে বোরোর আশানুরূপ ফলন হয়নি
সরেজমিনে দেখা গেছে, আট ইউনিয়নের বাবুখালী, দীঘা, বিনোদপুর, রাজাপুর, নহাটা, বালিদিয়া, পলাশবাড়ীয়া ও মহম্মদপুর সদরের কৃষকদের আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। নিচু জমিতে বীজতলা তৈরি করে বোরোর চারা তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেক কৃষক।
উপজেলার বাবুখালী ইউনিয়নের চালিমিয়া গ্রামের কৃষক জিবলু মোল্যা বলেন,ভালো ফলন হওয়ায় এই বছর ব্রি-২৮ রোপন করেছি। তবে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের সময় প্রচুর বৃষ্টিতে আমার ৫০ শতক জমির ধান পানিতে ডুবে যায়। বোরো ধান চাষ দ্রুত করার চেষ্টা করছি।
কৃষক আকিদুল মোল্যা বলেন, আমার নিজের জমি নেই। তাই বর্গাচাষ করি। চারা তৈরি করতে বীজতলা করেছি। আশা করছি কয়েক সপ্তাহ পরে রোপন শুরু করতে পারব। এবার ডিজেলের দাম বেশি হওয়াতে গত বছরের তুলনায় বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ বাড়বে সাত হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: যশোরাঞ্চলে বোরো ধানের মিষ্টি গন্ধে মাতোয়ারা কৃষক-কৃষাণি
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব কুমার বলেন, আমার ব্লকে কৃষকদের সুষম মাত্রার সার ব্যবহার, জৈব, অজৈব ও গুটি ইউরিয়া সার প্রয়োগ এবং পোকামাকড় দমনসহ কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি।
মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান বলেন, অতিবৃষ্টিতে কৃষকদের অনেকের আমনের ফলন ভালো হয়নি। বোরোর আবাদে তারা যেন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন সে বিষয়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা পরামর্শ দিচ্ছেন।
জৈব সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে কুষ্টিয়ায় ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ
জমিতে অতিরিক্ত মাত্রায় রাসনায়িক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি, ফসল ও ফল উৎপাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কুষ্টিয়ায় হয়ে গেল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় মিরপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও কৃষিভিক্তিক ইউটিউব চ্যানেল কৃষিবিডি’র যৌথ উদ্যোগে এই পুতুল নাচ অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: অভিনব কায়দায় চলছে অতিথি পাখি শিকার
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জালাল আহম্মেদ বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের অভিনব এই কৌশল নিঃসন্দেহে কৃষকদের আরও উদ্বুদ্ধ করবে। এ ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ আরও বেগবান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: মৃদু শৈত্যপ্রবাহ: পঞ্চগড়ে জনজীবনে দুর্ভোগ
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, কৃষি জমিতে যাতে অতিরিক্ত মাত্রায় কৃষকরা কীটনাশক ও রাসনায়িক সার ব্যবহার না করে এবং জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করার লক্ষ্যে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতেই ব্যতিক্রমধর্মী এই আয়োজন।
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলায় পেঁয়াজ চারা সঙ্কটের আশঙ্কা
চলতি মৌসুমে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ছয় জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে ৪০ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক কর্মকর্তা জাহেদুল আমিন। তবে এ মৌসুমে দু’দফা বৃষ্টিতে পেঁয়াজের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এতে পেঁয়াজের চারা সঙ্কট হওয়ায় বাজারে চড়াদামে পেঁয়াজ চারা বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ন্যায্যমূল্য ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি ফরিদপুরের পেঁয়াজ চাষিদের
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা, মাগুরার শ্রীপুর, মহম্মদপুর ও সদর উপজেলা, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ চাষ হয়ে থাকে। আর মেহেরপুর জেলায় সুখসাগার নামে একটি ভারতীয় জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়ে থাকে। এ জাতটির ফলন বেশি হয়।
মাগুরার শালিখা উপজেলার শ্রীহট্র গ্রামের শাহাদৎ মোল্লা জানান, তাদের এলাকায় সুখসাগর পেঁয়াজ বীজ ছিটিয়ে বোনা হয়। বোনা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ পেঁয়াজ বিঘা প্রতি দেড়শো মন ফলন হয়। কোনো কোনো জমিতে ১৮০ মন পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা গোবিন্দপুর গ্রামের এবাদত আলী জানান, এবার ২২ কাঠা জমিতে মুড়িকাটি পেঁয়াজ চাষ করেছি। বিঘা প্রতি ৮০ মন ফলন হবে। দামও ভালো। আর হালি পেঁয়াজের চাষ সবে শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ বীজ ফরিদপুরের চাষিদের কাছে ‘কালো সোনা ’
একই উপজেলার ব্রহ্মপুর গ্রামের মফিজুল ইসলাম বলেন, এবার পেঁয়াজের চারার দাম চড়া। প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ চারার অভাব আবাদ ব্যাহত হতে পারে।
কৃষি কর্মকর্তা জাহেদুল আমিন বলেন, পেঁয়াজের চারা রোপণ পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। বাজারে দাম ভালো থাকায় চাষি পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছে। বৃষ্টিতে পেঁয়াজের বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। চারার অভাব দেখা দিতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’: চাঁদপুরে ৪৪২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’র কারণে চাঁদপুরে প্রায় ৪৪২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালালউদ্দীন।
দুর্যোগপূর্ণ উত্তর কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায় জরিপে দেখা গেছে, জেলার ৮ উপজেলায় আলু, সরিষা, গম, বোরো বীজতলা, পেঁয়াজ, মরিচ ও আগাম শীতকালীন শাক সবজি ও অন্যান্য ফসলসহ ক্ষতি হয়েছে চার হাজার ৫৫৫ হেক্টর ফসল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আগাম শীতকালীন শাক-সবজির। এতে কৃষকদের প্রায় ৪২৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ, মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত
সরিষায় সাত কোটি আড়াই লাখ টাকা, আলু ক্ষেতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি ৪১ লাখ টাকার। অন্যান্য বিভিন্ন জাতের ফলের ক্ষতি হয়েছে তিন কোটি সাড়ে ৪২ লাখ টাকার। পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে ২১ লাখ টাকার। বোরো বীজতলার চার লাখ ১৫ হাজার টাকার, মরিচের এক লাখ ৬৫ হাজার টাকার ও গমের ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকার।
জেলায় সবর্মোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৭৪ জন। এর মধ্যে শাকসবজির চাষির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ১৭ হাজার ৬৩০ জন। সবচেয়ে কম গম চাষি ১৯৫ জন।
সিরাজগঞ্জে মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ, মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত
সিরাজগঞ্জের মাঠে মাঠে এখন সরিষা ফুলের হলুদের সমারোহ। মৌমাছির গুঞ্জনে প্রকৃতি যেন নতুন সাজে সেজেছে। এবার জেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করা হয়েছে। একই সঙ্গে মৌমাছির ফুলের বাগানে বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছে মধু চাষিরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলার ৯ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৫৪ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা সরিষা চাষাবাদ করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতের সরিষার মধ্যে রয়েছে বারি ০৯, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮, বিনা ০৯, টোরি ০৭ ও স্থানীয় সরিষা। এর মধ্যে বারি ০৯ ও ১৪ বেশি চাষাবাদ করেছে কৃষকেরা।
আরও পড়ুন: মাগুরায় সরিষার বাম্পার ফলন
স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকেরা এ লাভজনক সরিষা চাষাবাদ করেছে। তবে এই সরিষা চাষাবাদ জেলার তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, বেলকুচি ও কামারখন্দ উপজেলার কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি করেছে।
জেলায় এবার ৬৬ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এবার খুলনার মাঠে শোভা পাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ জাতের ধান
স্বল্প সময়ে ফসল পাওয়ার লক্ষ্যে এবার খুলনার আট উপজেলায় বোরো খেতে বঙ্গবন্ধু জাতের ধান শোভা পাবে। পাঁচ বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এ জাত আবিস্কার করেছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।
ইতোমধ্যেই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন জাত দিয়ে বীজতলা তৈরি হয়েছে। অন্য জাতের তুলনায় গবেষণা ইনস্টিটিউটের নতুন জাতের ধানের ফলন হেক্টর প্রতি এক টন বৃদ্ধি পাবে। চালের আকার হবে মিনিকেট সাইজের।
আরও পড়ুন: ধান-চাল সংগ্রহ কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগোচ্ছে না: খাদ্যমন্ত্রী
জেলায় এখন বোরোর ভরা মৌসুম। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাষিরা হাইব্রিড জাতের বীজতলা বেশি তৈরি করেছে। গত দুই বছর যাবৎ হাইব্রিডে উৎপাদন বেশি এবং খাদ্যের সংকট মেটাচ্ছে। এসিআই, ব্রাক ও সরকারি হাইব্রিড জাতের পাশাপাশি ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানির বীজ দিয়ে বোরো বীজতলা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খুলনা মহানগর, রূপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়া, ফুলতলা, ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও কয়রায় বঙ্গবন্ধু জাতের বোরো ধানের বীজ পরীক্ষামূলকভাবে পাঠানো হয়েছে। প্রতি উপজেলায় বিনামূল্যে পাঁচ কেজি করে বীজ সরবরাহ হয়েছে। বীজতলায় ৩৫ দিন বয়স থেকে এ জাতের চারা রোপন করা যাবে। ১৪৮ দিনের মধ্যেই ফসল কাটার মত উপযুক্ত হয়ে উঠবে। ‘বিআর-৭৪ ও বিআর-৮৪’র চেয়ে এর ফলন বেশি। ক্ষেত্র বিশেষে হেক্টর প্রতি সাড়ে সাত টন থেকে সাড়ে আট টন পর্যন্ত উৎপাদন হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মহাদেব চন্দ্র সাহা জানান, এ জাতের ধানকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে এই প্রথম বারের মত আবাদ শুরু করা হলো। এতে রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড় আক্রমনের পরিমান কম হবে। ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিংক তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। নাজিরশাইল ও জিরা ধানের মতই বঙ্গবন্ধু জাতের ধানের আকৃতি।
আরও পড়ুন: চলতি বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের তথ্য মতে, বীজ দেরিতে পাওয়ায় বিতরণে বিলম্ব হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই বিতরণ করা হবে। নতুন জাতের জন্য উঁচু স্থানে বীজতলা তৈরি করা হবে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, গুটুদিয়া ও বলাবুনিয়ায় চারজন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। এ জাতের ধান ১৪৮ দিনের মধ্যে খামারে তোলা সম্ভব হবে। অন্য জাতের তুলনায় হেক্টর প্রতি এক টন বেশি উৎপাদন হবে। সে কারণেই দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবে।
তরমুজ চাষে সফল হওয়ার প্রত্যাশা পাঁচ তরুণের
কৃষিকে ঘিরেই সন্তুষ্টি পাঁচ তরুণের। পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষি নিয়েই মেতেছেন তারা। দিনের পর দিন যত্ন করে লালন করছেন প্রিয় ফসল। প্রত্যাশা সফল হওয়ার।
সুনামগঞ্জের ছাতকের কালারুকা ইউনিয়নের গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়কের তাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় সোয়া একর অনাবাদি জমিতে পাঁচ জাতের উচ্চ ফলনশীল জাতের তরমুজ চাষ করেছেন এ পাঁচ তরুণ।
এ তরমুজ চাষের মূল উদ্যোক্তা গড়গাঁও গ্রামের আশরাফুর রহমান। এ কাজে তার সঙ্গে যুক্ত করেন স্থানীয় রামপুর গ্রামের আব্দুর রহমান, শেখকান্দি গ্রামের নজরুল ইসলাম, রায়সন্তোষপুর গ্রামের নাঈম আহমদ ও একই গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান সাকিবকে। তারা পাঁচজনই পড়াশোনার পাশাশাশি এ কাজ করছেন।
জানা যায়, তারা একই মাঠে পাঁচ রঙের তরমুজ চাষাবাদ করেছেন। এতে রয়েছে গোন্ডেন ত্রুাউন (গোল), বাইরে হলুদ ভেতর লাল; ডায়না (লম্বা) ইয়েলো হানি, বাইরে কালো ভেতর হলুদ; থাই সুইট ব্লাক ২, বাইরে কালো ভেতর লাল, বাংলালিং নামে পরিচিত বাইরে ডোরাকাটা ভেতর লাল, কালো, হলুদ এবং সবুজ ডোরাকাটাসহ পাঁচ রঙের তরমুজ।
গত অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজ রোপন করেন তারা। উন্নত জাতের এসব তরমুজের চাষাবাদে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। বাগানের তরমুজ বিক্রি করে প্রায় ছয় লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন উদ্যোক্তা পাঁচ যুবক।
আরও পড়ুন: পান চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন অভয়নগরের চাষিরা!
বাগেরহাটে ৭৩৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় পাকা আমন ধান ও বোরো ধানের বীজতলাসহ ৭৩৯ হেক্টর জমির ফসল বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে।
এছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে দুবলার চরে জেলেদের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের শুটকি মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে চন্দ্রমহল ইকোপার্ক থেকে ৪৩টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার
কৃষি বিভাগ জানায়, সোমবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বাগেরহাটে গড়ে ২২ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। গত তিনদিন ধরে মাঠে ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। আরও দুই তিন দিন পানিতে থাকলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
এদিকে, চার দিন ধরে বৃষ্টিপাত ও হিমেল বাতাসের কারণে বিশেষ করে বাগেরহাটের নিম্ন আয়ের মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে ‘হত্যা’, স্বামী পলাতক
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. আজিজুর রহমান জানান, জেলায় ৭৩৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত। এর মধ্যে বোরো ধানের বীজতলা ২০৭ হেক্টর, রোপা আমন ধান ১৫০ হেক্টর, সরিষা ১৩৭ হেক্টর, ডাল ১৯৩ হেক্টর, শীতকালিন সবজি ৩৫ হেক্টর ও ১৭ হেক্টর জমির গম রয়েছে।