কৃষি
খাদ্য নিরাপত্তা আরও বাস্তবমুখী ও শক্তিশালী করা হচ্ছে:খাদ্যমন্ত্রী
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, কৃষি নির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতির বাংলাদেশে কৃষকের ফসলের নায্যমূল্য ও প্রান্তিক মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনা করে খাদ্য নিরাপত্তা আরও বাস্তবমুখী ও শক্তিশালী করতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে।
মঙ্গলবার (০২ নভেম্বর) উন্নয়ন সংগঠন ‘সুশীলন’ এর ৩০ বছর পূর্তির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সচিবালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এ সময় মন্ত্রী বলেন,প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ভিশন-২০৪১ ও ডেল্টা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও চরাঞ্চলসমূহের জন্য পৃথক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় ও চরাঞ্চলের মানুষকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করা হচ্ছে ।
আরও পড়ুন:নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান খাদ্যমন্ত্রীর
মন্ত্রী বলেন,সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে প্রান্তিক মানুষের মধ্যে সচেতনতার বার্তা প্রচার করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজনের মাধ্যমে তাদের উন্নয়ন অংশীদার করতে হবে। এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে তাদের অবদান যুক্ত হবে এবং সে উন্নয়ন টেকসই হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, দেশে লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধানের আবাদ শুরু হয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য এটা এক সুবর্ণ সুযোগ। এ জাতের ধানের চাষাবাদ সম্পর্কে স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অনাবাদী জমিতে লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধান আবাদের প্রসার ঘটিয়ে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তাকে টেকসই করার আহ্বান জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন,উন্নয়ন সংগঠন সুশীলন নারী ও যুব নেতৃত্বের বিকাশ, দূর্যোগ ব্যবন্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তা,শিক্ষা,সুপেয় পানি সরবরাহ,বনায়ন এবং স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ আয়োজন করে থাকে –যা প্রশংসার দাবী রাখে। এসময় তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করতে সুশীলন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
অশুভ শক্তি মাঝে মাঝে দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। এসময় তিনি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান তিনি।
সুশীলনের কার্য নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান আ জ ম আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ শমভু, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, মো. আকতারুজ্জামান বাবু,এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম তারিকুল ইসলাম এবং সুশীলনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোস্তাফা নুরুজ্জামান বক্তব্য দেন।
এসময় ‘সুশীলন’ এর ৩০ বছর পূর্তির মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন।
আরও পড়ুন:চালের মূল্য সহনীয় পরিস্থিতিতে রয়েছে, দাবি খাদ্যমন্ত্রীর
করোনাকালেও দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে: খাদ্যমন্ত্রী
কৃষিখাতে ব্রিটেনের প্রযুক্তিগত সহায়তা চায় বাংলাদেশ
কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষিপণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে ব্রিটেনের প্রযুক্তিগত ও পরিচালনা বিষয়ে সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (০২ নভেম্বর)সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসনের সৌজন্য সাক্ষাৎকালে কৃষিমন্ত্রী এ আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এসময় দেশের কৃষি উৎপাদনের অভাবনীয় সাফল্যের কথা তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, উৎপাদনে সাফল্য আসলেও রপ্তানি ও প্রক্রিয়াজাতকরণে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। আমাদের অর্থের অভাব নেই, প্রয়োজন কারিগরি ও ম্যানেজারিয়াল সহযোগিতা। এক্ষেত্রে আমরা ব্রিটেনের সাপোর্ট চাচ্ছি।
এসময় ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বাংলাদেশকে কৃষি প্রক্রিয়াজাত ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করে বলেন, কৃষিতে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য ব্রিটেনের প্রাইভেট সেক্টরকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: খামারিরা বিপদে, খুলনায় ১০ লাখ মুরগি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত
উল্লেখ্য, ইউরোপের বাজারে সতেজ শাকসবজি ও ফলমূল এবং প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি করতে কৃষিমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের একটি দল নেদারল্যান্ড ও ব্রিটেন সফরে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশের ফলমূল, আলু এবং শাকসবজি রপ্তানি ও প্রক্রিয়াজাতের সম্ভাবনা অনেক। আমাদের এখন অনেক উদ্বৃত্ত ফসল রয়েছে। এগুলোকে আমরা ইউরোপের মূল বাজারে রপ্তানি করতে চাই। এখন যা রপ্তানি হচ্ছে তার মূল ক্রেতা হলো প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ সফরে আমরা ব্রিটেনের ব্যবসায়ী সংগঠন ও শীর্ষস্থানীয় চেইনসপ বা সুপারমার্কেটের সাথে আলোচনা করব।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ব্রিটেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্র। স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকেই ব্রিটেনের সাথে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি,আমাদের এ সম্পর্ক অটুট থাকবে। ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন: বেশি লাভে আখ চাষে ঝুঁকেছেন মাগুরার কৃষকরা
আমনে পোকা, দুশ্চিন্তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকরা
খামারিরা বিপদে, খুলনায় ১০ লাখ মুরগি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত
খুলনায় বার্ড ফ্লু, অবরোধ ও করোনার লোকসান কাটিয়ে উঠতে না উঠতে রাণীক্ষেত নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে লাখ লাখ মুরগি।
সরকারি প্রাণি সম্পদ কেন্দ্রে মাঝে মধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে তবে বেশিরভাগ বাইরে থেকেই কিনতে হচ্ছে। এতে করে খুলনাঞ্চলের মুরগীর খামারিরা বিপদেই পড়েছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, খোলা বাজার থেকে ভ্যাকসিন কিনে খামারে ভাইরাস মুক্ত করতে যেয়ে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাছাড়া গামবোরা, ফাউল পক্স নামক ভাইরাস সালমোনেলা ও ফাউল কলেরা নামক ব্যাকটেরিয়াতেও মুরগি মারা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: আমনে পোকা, দুশ্চিন্তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকরা
আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় নয় লাখ ৯৬ হাজার ৯৫৯ টি মুরগি রাণীক্ষেত নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এই সময়ের মধ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ৯ হাজার ২৬৬ মুরগি মারা গেছে। জেলাগুলো হচ্ছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডঙ্গা ও মেহেরপুর। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত মাগুরা জেলায়। মৃত্যুর দিক থেকে নড়াইল শীর্ষে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশি, লেয়ার ও ব্রয়লার জাতের মুরগি রাণীক্ষেত ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। গামবোরা ভাইরাসও মারাত্মক। রাণীক্ষেত নামক ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি প্রাণি সম্পদ কেন্দ্র থেকে বিসিআরডি নামক ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে। সরকারি কেন্দ্রে মাঝেমধ্যে সংকট দেখা দিলে খোলা বাজার থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হয়।
আরও পড়ুন: বেশি লাভে আখ চাষে ঝুঁকেছেন মাগুরার কৃষকরা
খুলনার রূপসা উপজেলার জয়পুর গ্রামের খামারি মো. তারেক আল মামুন বলেন, গত এক মাসের ব্যবধানে এক এম্পোল ভ্যাকসিনের দাম বৃদ্ধি পেয়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা হয়েছে। গত ১৫ দিন আগে ভ্যাকসিন দেয়ার পরও ৬০টি মুরগি মারা গেছে। ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। ত
তার অভিযোগ, উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর থেকে ভ্যাকসিন বা পরামর্শ কোনটাই পান না। ফলে ভাইরাস প্রতিরোধ করতে গিয়ে খোলা বাজার থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে ।
একই গ্রামের খামারি ফারুক হোসেন জানান, তার খামারে মুরগি রাণীক্ষেত নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা খরচ বাবদ অতিরিক্ত আট হাজার টাকা ব্যয় হয়।
আরও পড়ুন: ৩০ বছর আগে লাগানো ছাদবাগানে ফুটেছে অপরূপ নাইট কুইন
জানা গেছে, খুলনাঞ্চলে এক কোটি ৬৩ লাখ দেশি, ৬০ লাখ লেয়ার ও ১৩ লাখ ব্রয়লার মুরগি লালন পালন হয়।
বিভাগীয় প্রাণি সম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. সুখেন্দু শেখর গায়েন বলেন, এ অঞ্চলের ৫৯টি প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। এক থেকে ২১ দিন বয়সী মুরগির জন্য বিসিআরডি ও তার ওপর বয়সী মুরগির আরডি ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। সরকারি প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ভ্যাকসিনেটরাও ভ্যাকসিন দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে ভ্যাকসিনের সংকট হচ্ছে।
‘ফাতেমা’ জাতের ধানে বিঘায় ৫০ মণ ফলন
নওগাঁর মান্দায় ‘ফাতেমা’ জাতের ধান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এর প্রতিটি শীষে ৭৫০ থেকে এক হাজার ধান পাওয়া গেছে। দেশে উৎপাদিত প্রচলিত জাতের ধানের চেয়ে এই ধানের ফলন প্রায় তিনগুণ। চলতি মৌসুমে নওগাঁয় দেড় বিঘা জমিতে প্রায় ৭৫ মণ ধানের ফলন হয়েছে।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের দোশতীনা গ্রামের সৌখিন কৃষক আশরাফুল ইসলাম বশিরই প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই প্রথম ‘ফাতেমা’ জাতের ধান চাষ শুরু করেন। তিনি পেশায় নওগাঁ জজ কোর্টের আইনজীবী। একই সাথে আধুনিক চাষাবাদে তার ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। গতানুগতিক কৃষির পরিবর্তে নতুন জাতের এ ধান উৎপাদনে তিনি সাফল্য পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: আমনে পোকা, দুশ্চিন্তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকরা
বর্তমানে ওই ধান দেখতে এবং কিনতে তার বাড়িতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষ জন ভিড় জমাচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় তার মতো এলাকার অনেকেই এখন নতুন এ জাতের ধান চাষের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এতে অধিক ফলনশীল জাতের ধান দেশের আর কোথাও আছে বলে তাদের জানা নেই। ‘ফাতেমা’ জাতের এই ধান কোন জাতের এবং কোথায় থেকে কীভাবে এলো এসব জানতে গবেষণার কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট।
আরও পড়ুন: বেশি লাভে আখ চাষে ঝুঁকেছেন মাগুরার কৃষকরা
দেখতে ব্রি-২৮ ধানের মতো এর জাতের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে আশরাফুল ইসলাম বশির জানান, এই ধানের চাষ পদ্ধতি অন্য ধানের মতোই। আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই এ ধানের চাষ করা যায়। তবে বোরো মৌসুমে এর উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। গাছের উচ্চতা প্রায় ৫ ফিট যা অন্য ধানের তুলনায় বেশি। গাছগুলো শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না। আর এক একটি ধানের শীষে ৭৫০ থেকে এক হাজার করে ধান হয়। সাধারণ ধানের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি। ফলে এর উৎপাদনও অনেক বেশি। চলতি মৌসুমে তিনি দেড় বিঘা জমিতে প্রায় ৭৫ মণ ধান পেয়েছেন। এধানে রোগ ও পোকামাকড়ের হার তুলনামূলক কম। এছাড়া চাল খুব চিকন ও ভাতও খেতে খুব সুস্বাদু।
তিনি জানান, বীজপাতা তৈরি করার পর ১৫০ থেকে ১৫৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা যায়। এই ধান ঝড়, খড়া এবং লবণাক্ততা সহনীয়। ওই জাতের প্রতিটি ধানগাছের দৈর্ঘ্য ১১৫ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার, গুছি গড়ে আটটি, প্রতিটি ধানের ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩৬ সেন্টিমিটার, গড়ে দানার সংখ্যা এক হাজারের ওপরে।
আরও পড়ুন: ৩০ বছর আগে লাগানো ছাদবাগানে ফুটেছে অপরূপ নাইট কুইন
জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলিয়া গ্রামে লেবুয়াত শেখ (৪০) নিজেদের জমিতে ২০১৬ সালে প্রথম ওই ধান চাষ করেন। ওই বছর বোরো মৌসুমে তার বাড়ির পাশে জমিতে হাইব্রিড আফতাব-৫ জাতের ধান কাটার সময় তিনটি ভিন্ন জাতের ধানের শীষ তিনি দেখতে পান। ওই তিনটি শীষ অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড় এবং শীষে ধানের দানার পরিমাণও অনেক বেশি ছিল। এরপর ওই ধানের শীষ তিনটি বাড়িতে এনে শুকিয়ে বীজ হিসেবে ব্যবহার করে এ ধান চাষ শুরু করেন। তিনি তার মায়ের নামানুসারে নাম না জানা এই ধানের নাম রাখেন ‘ফাতেমা ধান’।
বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কৃষক লিটন, রঞ্জু, মামুন, আতাব আলী জানান, অনেক ফলন হচ্ছে শুনে তারা কৃষক বশিরের এ ধান দেখতে এসেছেন এবং তার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করেছেন। আগামীতে তারা এ ধান চাষ করবেন।
আরও পড়ুন: চৌগাছায় ১৮০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ
জেলা কৃষি সশ্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সামসুল ওয়াদুদ বলেন, ‘ওই ধানের ফলন শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে পারে। এত বেশি ফলন পাওয়া যায়, এমন কোনো জাতের ধান দেশে আছে বলে আমার জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই ধান খড়া ও লবণ সহ্যকারী এবং সারাদেশে চাষের উপযোগী। মনে হচ্ছে, সারা দেশে ওই ধান চাষ করা যাবে। এই ধান যদি সারা দেশে চাষ করা যায় তাহলে বার্ষিক উৎপাদন পাঁচ কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে।’
বেশি লাভে আখ চাষে ঝুঁকেছেন মাগুরার কৃষকরা
আখ চাষে লাভ বেশি হওয়ায় মাগুরার কৃষকরা দিন দিন আখ চাষে ঝুঁকেছেন। জেলায় আখের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই চলতি মৌসুমে জেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। এখাকার আবহাওয়া ও মাটি চাষের উপযোগী হওয়ায় ফলনও ভালো হয়। বোম্বাই, মুগী জাতের আখ চাষে আগ্রহী এখানকার কৃষকরা।
আরও পড়ুন: চৌগাছায় ১৮০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ
কৃষক ইয়াকুব আলী বলেন, ‘এবারের মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছি। ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো আছে। এই রকম দাম থাকলে ভালো লাভ হবে বলে আশা করছি। চাহিদা বেশি থাকায় খেতেই আখ বিক্রি হয়ে যায়। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবারে তেমন একটা রোগ বালাই দেখা দেয়নি। অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি লাভের আশা করছি।’
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে মাল্টা ও কমলা চাষে লাভবান চাষিরা
কৃষক আলামিন হোসেন জানান, আখ একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল, যা জমিতে প্রায় ১৩-১৪ মাস থাকে। বাংলা সনের আশ্বিন ও কার্তিক মাসে আখ জমিতে রোপন করা হয়। আখ বাজারজাতকরণের উপযোগী হতে প্রায় ৮-১০ মাস সময় লাগে।
আরও পড়ুন: আবাদ মৌসুমে সারের দাম বৃদ্ধি, ফরিদপুরে আমন উৎপাদনে শঙ্কিত চাষিরা
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামানিক জানান, এই জেলার মাটি আখ চাষের জন্য উপযোগী। এবার জেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে ঈশ্বরদী ৪১, ৩৭, ১৬ ও ৮ জাতের আখ চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবারে আঁখের ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি কৃষকরা লাভবান হবেন।
সবজিতে সবুজ দিগন্ত!
সবজি চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে যশোরের মুনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের শাহপুর ও হায়াতপুরের কৃষকরা। এই খানে বছরের ১২ মাস সবজি চাষ করা হয়। শাহপুর ও হায়াতপুর গ্রামের অন্তত ৫০০ পরিবার সবজি চাষ করে এখন স্বাবলম্বী।
উপজেলার পশ্চিমে রাজগঞ্জ বাজারের পাশেই শাহপুর ও হায়াতপুর সবজি চাষের মাঠ। মাঠের পর মাঠ নানা ধরনের সবজি ছড়িয়ে আছে। গ্রাম দু’টিতে বিশাল খেত জুড়ে ১২ মাসই বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে। আর এই খেতে কাজ করছে শত শত নারী-পুরুষ ।
কৃষি বিভাগ জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এই মাঠে সবজি চাষিদের সব সময় উৎসাহ এবং সঠিক পরামর্শ দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: আবাদ মৌসুমে সারের দাম বৃদ্ধি, ফরিদপুরে আমন উৎপাদনে শঙ্কিত চাষিরা
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সরোজমিনে শাহপুর ও হায়াতপুরে দেখা গেছে, সবজি খেতগুলোতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, ঢেঁড়স, মুলা, লাউ, শিম, বরবটি,ক্ষীরা, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো, লালশাক, পালংশাক, কাঁচ কলা, বেগুন, শসা, মেটে আলু, ডাটা,পটল, ঝিংগা, উচ্ছে, কাকরোল, গাজর, চিচিঙ্গা ও ওলসহ বিভিন্ন ধরনের শীতের ও বারোমাসি সবজিতে ভরপুর। বিশাল এই মাঠে উত্তম কৃষি চাষের মাধ্যমে নিরাপদ ও বালাইমুক্ত সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে।এখানে সবজি চাষে জৈব সারও ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন: বিশ্বনাথে ফসলের পোকা নিধনে পরিবেশবান্ধব ‘আলোক ফাঁদ’
স্থানীয় চাষি রবিউল ইসলাম জানান, এই মাঠের উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যশোর, খুলনা ও ঢাকার বড় বড় বাজারেও সরবরাহ করা হয়।
শাহপুর গ্রামের চাষি শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি এবার ২ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। সেই খেত থেকে বুধবারও (১৫ সেপ্টেম্বর) তিনি তিন মণ শিম তুলে বাজারে বিক্রি করেছেন। দামও ভালো পেয়ে খুব খুশি তিনি।
একই গ্রামেরে সবজি চাষি ফয়সাল আহম্মেদ, রাজু, মেহেদীসহ অনেকেই জানান, কষ্ট করে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে মাঠে কাজ করে বিভিন্ন ধরনের সবজি ফলাই। সেই সবজি তারা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলা-উপজেলা শহরে সরবরাহ করে। সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার রাজগঞ্জ বাজারে বড় হাট বসে। এই দু’দিন শাহপুর ও হায়াতপুরের কৃষকরাই বেশিভাগ সবজি বিক্রির জন্য এই হাটে আনে। রাজগঞ্জ বাজার থেকে পাইকারি দরে সবজি কিনে বিভিন্ন জেলা শহরে নিয়ে যান ব্যাপারিরা।
আরও পড়ুন: রূপসা পাড়ে অফ সিজনাল তরমুজের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি
স্থানীয় ইউনিয়ন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা এসএম মারুফুল হক ও হাসানুজ্জামান জানান, কৃষি বিভাগ থেকে রাজগঞ্জের শাহপুর ও হায়াতপুর মাঠের সবজি চাষিদের সবধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া নতুন জাত ও নতুন ফসল সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রদর্শনী প্লটও স্থাপন করা হয়।
আবাদ মৌসুমে সারের দাম বৃদ্ধি, ফরিদপুরে আমন উৎপাদনে শঙ্কিত চাষিরা
ফরিদপুরে চলতি আমন ধান আবাদ মৌসুমে সরকারি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ছয় হাজার হেক্টর বেশি আবাদ হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে খুচরা বাজারে ইউরিয়া সারের দর বেড়ে যাওয়ায় কাঙ্খিত উৎপাদন নিয়ে শঙ্কিত জেলার চাষিরা।
জেলার ৯ উপজেলাতে মাসিক ইউরিয়া সারের চাহিদা তুলনায় সরবরাহ হয়েছে অর্ধেক। যে কারণে খুচরা বাজারের এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হযরত আলী জানান, চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর। কিন্তু সেখানে আবাদ হয়েছে ৭০ হাজার ২৯৪ হেক্টর।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে আমন আবাদে ব্যস্ত কৃষকরা
তিনি জানান, চারা রোপনের সময় সার কিটনাশকের দাম স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু কয়েক দিন হলো হঠাৎ করেই খুচরা বাজারে ইউরিয়ার সারের দর কিছু বেড়েছে। তবে এই দর বেশি দিন থাকবে না বলে জানান এই কর্মকর্তা।
তিনি জানান, আমন মৌসুমে আগস্ট মাসের ইউরিয়া সারের চাহিদা ছিল ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন এবং সেপ্টেম্বর মাসের চাহিদা ৪ হাজার ৫০২ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ৫ হাজার ৭০২ মেট্রিক টন।
জেলার আমন চাষিরা জানান, আমরা খেত-খামার করি নিজের ও দেশের উন্নয়নের জন্য। সেখানে যদি চাষাবাদের প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেড়ে যায় তাহলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা থাকে।
আরও পড়ুন: কয়রায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিনা চাষে আলু আবাদ
চাষিরা বলেন, ‘ধানের উৎপাদন খরচ আগের যে কোন সময়ে চেয়ে এখন বেশি। তার ওপর যদি সারের দাম বাড়ে তাহলে আমরা (চাষিরা) ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের ডোমরাকান্দি এলাকার চাষি নিজাম খলিফা বলেন, ‘আমার আমন খেতে চাহিদা রয়েছে ২৫ কেজি ইউরিয়া। সেখানে আমি কিনেছি এক কেজি। বাজারে সারের ঘাটতি রয়েছে যে কারণে দাম কেজিতে চার টাকা বেশি।’
আরও পড়ুন: ধান ও আম আবাদের পরিবর্তে মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষক
সারের দামের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফাটিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের ফরিদপুর শাখার সভাপতি আব্দুর সালাম বাবু বলেন, ‘ডিলার পর্যায়ে সারের দাম কম-বেশি হয়নি। তবে খুচরা বাজারে কিছুটা দাম বেড়েছে।’
তিনি জানান, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের জেলার ইউরিয়ার চাহিদা যা ছিল সে তুলনায় সরবরাহ কম হয়েছে চার হাজার মেট্রিক টন। এই কারণে হয়তো দামের কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।
বিশ্বনাথে ফসলের পোকা নিধনে পরিবেশবান্ধব ‘আলোক ফাঁদ’
এম মহসীন
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় পোকামাকড় নিধনের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ‘আলোক ফাঁদ’র (লাইট ট্র্যাপ) ব্যবহার বেড়েছে। এক সময় কীটনাশক ব্যবহার করে ফসলের মাঠে পোকা মারা থেকে সরে এসে আলোক ফাঁদের মাধ্যমে ফসলের মাঠে পোকামাকড়ের উপস্থিতি যাচাই ও নিয়ন্ত্রণ করছে কৃষকরা।
আরও পড়ুন: খুলনায় পোকা দমনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘আলোক ফাঁদ’
স্বল্প খরচের এ কৌশল ব্যবহারে একদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষককূল। অন্যদিকে, ক্ষতিকর কীটনাশক থেকে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষা পাচ্ছে। এই কারণে ফসলি জমি পোকামুক্ত করতে কীটনাশকের বিকল্প এ পদ্ধতি কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার আট ইউনিয়নে চলতি বছরে আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার পাঁচ হেক্টর ধরা হয়েছে। গেল বছরও একই লক্ষ্যমাত্রা ছিল।
এবার ফসলি খেতের ক্ষতিকারক পোকা নিধনে উপজেলার ২৪ ব্লকের সবগুলোতেই ১০টি করে ২৪০ ‘আলোক ফাঁদ’ বসানো হয়েছে। সপ্তাহে একদিন (প্রতি বুধবার) এর মাধ্যমে পোকা দমন করছেন কৃষকরা। পাশাপাশি ৮০ শতাংশ জমিতে পার্চিং পদ্ধতিও ব্যবহার করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে আমন খেতে পোকার আক্রমণে কৃষকের মাথায় হাত
সরেজমিন দেখা গেছে, আমন ধানের আবাদি জমির ফাঁকা স্থানে আলোক ফাঁদ তৈরি করেছেন কৃষকরা। বাঁশের তিনটি খুঁটি ত্রিকোণাকার করে মাটিতে পুঁতে, খুঁটির মাথায় ঝুলিয়ে রাখা বৈদ্যুতিক বাল্ব। এর নিচে পাত্র রাখা। এতে কেউ রেখেছেন ডিটারজেন্ট মিশ্রিত কেউবা কেরোসিন মিশ্রিত পানি। অনেকে আবার হারিকেন ও সৌর বিদ্যুতের বাতি জ্বালিয়ে ফাঁদ তৈরি করেছেন।
সন্ধ্যা নামলেই খেতের আইলে ‘আলোক ফাঁদ’ আলোয় আলোকিত হয়। তখন জ্বলমলে আলোয় আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় উড়ে এসে পাত্রে রাখা পানিতে পড়ে মারা যায়। এছাড়াও বেশ কযেকজন কৃষক খেতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। গাছের ডাল ও বাঁশের কঞ্চি খেতে পুঁতে রেখেছেন তারা। এগুলোতে পাখিরা বসে খেতে ক্ষতিকারক পোকামাকড় সাবাড় করবে।
আরও পড়ুন: শ্রমিক সংকট ও পোকার বিড়ম্বনায় ফরিদপুরের পাট চাষিরা
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক জাবের আহমদ বলেন, ‘আলোক ফাঁদ ব্যবহারে স্বল্প খরচে আমরা ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমন করতে পারছি। এতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের আর্থিকভাবে সাশ্রয় হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় জানান, ধানের জমিতে ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের উপস্থিতি নির্ণয়ে আলোক ফাঁদের বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে জমিতে কী কী ক্ষতিকর ও উপকারি পোকামাকড় রয়েছে তা শনাক্ত করে ক্ষতিকর পোকা নিধনে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
রূপসা পাড়ে অফ সিজনাল তরমুজের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি
খুলনায় রূপসার পাড়ে মাছের ঘেরের পাড়ে মাচায় সারি সারি হলুদ, কালো ও সবুজ ডোরাকাটা রঙের বাহারি তরমুজ ঝুলে আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অসময়ে (অফ সিজন) তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাজারে দামও ভালো। ফলে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি।
জানা গেছে, এ বছর উপজেলার নতুনদিয়া, শিয়ালী, গোয়াড়া, সামন্তসেনা, পাথরঘাটা, তিলক, জাবুসা, বাধাল ও ভবানীপুর গ্রামের মাছের ঘেরের পাড়ে প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে ইয়োলো হানি, ইয়োলো ড্রাগন, সুইট ক্রাঞ্চ, কারিশমা এসব হাইব্রিড জাতের অফ সিজনের তরমুজ চাষ হয়েছে।
আরও পড়ুন: সৌদি খেজুর চাষে সফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের রুবেল
রূপসা উপজেলার নতুনদিয়া গ্রামের চাষি লিটন শিকদার জানান, এ বছর অমৌসুমে (অফ সিজন) মৎস্য ঘেরের পাড়ে চার বিঘা জমিতে তৃপ্তি ও ইয়োলো ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। এতে সার, মাদা (বীজ) ও মাচা তৈরি, শ্রমিক এবং কীটনাশক বাবদ তার প্রায় ১১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বীজ বপনের ৬০ দিন পর থেকে তরমুজ সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি ২৪০ কেজি তরমুজ (প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে) পাইকারিভাবে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় ৫০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
একই উপজেলার সামন্তসেনা গ্রামের কৃষক সোহাগ জানান, এই বছর ঘেরের পাড়ে অমৌসুমে এক বিঘা জমিতে কারিশমা জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। এতে তার প্রায় সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি এ পর্যন্ত ১১ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় চার হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান।
কৃষক লিটন ও সোহাগের মতো এ উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক এই বছর প্রথম অমৌসুমে মৎস্য ঘেরের পাড়ে হাইব্রিড জাতের তরমুজ চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
আরও পড়ুন: যশোরে লক্ষ্যমাত্রার ৩ গুণ বেশি মাছ উৎপাদন
কৃষকরা জানান, মৎস্য ঘেরের পাড়ে চাষ করে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। ঘেরের পাড়ের মাটি বেশ উর্বর। চাষ করা তরমুজ গাছ চারদিক থেকেই সূর্যের আলো পায়। এতে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও ফলন ভালো হয়।
রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান বলেন, সাধারণত মৎস্য ঘেরের পাড় উঁচু হয়। তাই বৃষ্টির পানি দ্রুত সরে যায়। এই কারণে বর্ষাকালে ঘেরের পাড়ে খুব সহজে তরমুজ চাষ করা যায়। এছাড়া ঘেরের পাড়ে পানির ওপর মাচা তৈরি করে তা তরমুজ গাছের লতা বাউনির জন্য ব্যবহার করা হয়। একারণে জায়গা কম লাগে। আবার ঘেরে অবাধ পানি সরবরাহ থাকায় গাছে পানি সেচ দিতে সুবিধা হয়। এই সময় তরমুজে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয়। তাই অধিক ফলন পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি লাভ হওয়ায় মৎস্য ঘেরের পাড়ে অসময়ের তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এখানকার কৃষকেরা।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে সাড়ে ১০ লাখ বেল পাট উৎপাদন, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান জানান, ঘেরের পাড়ে অমৌসুমে তরমুজ চাষ হওয়ায় ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাই উপজেলায় প্রতি বছর এই তরমুজ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এসব কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে হাইব্রিড জাতের তরমুজ বীজ সরবরাহের পাশাপাশি উৎপাদন প্রযুক্তি সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এতে এলাকার কৃষকদের মধ্যে ঘেরের পাড়ে অমৌসুমে তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখা গেছে।
খাগড়াছড়িতে ৭১ কৃষকের মুখে হাসি ‘ফোটাল’ ইউসিবি
খাগড়াছড়ির ৭১ কৃষককে ২ কোটি ১০ লাখ টাকার ঋণ দিয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি)।
প্রাথমিকভাবে কৃষকের মুখে হাসি ফুটাতে মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) মারমা উন্নয়ন সাংসদ কমিনিউটি সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কৃষকদের হাতে ঋণ তুলে দেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মং সার্কেল চিফ (রাজা) সাচিংপ্রু চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘এখানে চাষিরা মনে করে প্রাইভেট ব্যাংক মানে অনেক কিছু কিন্তু এই ধারণা পাল্টে দিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি। অনেক সময় আমাদের চাষিরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার জন্য বারবার চেষ্টা করেও তারা নানা জটিলতার কারণে ঋণ নিতে পারে না। ফলে করোনার মাঝে কৃষকদের জীবন-যাপন আরও বেশি কঠোর হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় আমাদের কৃষকদেরকে সহজশর্তে জামানতবিহীন ঋণ দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে এই ব্যাংকের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে আমাদের চাষিদের যেকোন সমস্যায় আপনারা পাশে দাড়াঁবেন।’
আরও পড়ুন: অফিসার নেবে ইউসিবি ফিনটেকের `উপায়’
অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী বলেন, ‘দেশের এই সংকটের মাঝেও খাগড়াছড়ির কৃষকদের কাঁধে কাঁধ মিলাতে পেরে খুবই আনন্দিত। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে দরকার ক্ষতিগ্রস্তদের যতদ্রুত সম্ভব ঋণ দেয়া। এটি পালনে আমরা দৈনিক লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছি। আমরা এই প্রথম এক সাথে ৭১ জন কৃষককে মোট ২ কোটি ১০ লাখ টাকা দিয়েছে। যেটি আর কোথাও দেয়া হয়নি। তাছাড়া যেসব এলাকায় কৃষকের জন্য সংকট আর বিপর্যয়, আমরা সেই সব এলাকার কৃষকদের পাশে দাড়াঁনোর জন্য চেষ্টা করবো।’
আরও পড়ুন: ডিজিটাল দক্ষতা বিষয়ে ইউসিবির কর্মশালা
ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এন মুস্তাফা তারেক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানি সেক্রেটারি এটিএম তাহমিদুজ্জামান, খাগড়াছড়ির ফলজ মালিক সমিতির সভাপতি দিবাকর চাকমাসহ ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা মানবসত্তার মর্যাদা ও মানব উন্নয়নের সম্ভাব্য সব মাপকাঠিতেই অতি দরিদ্র বা অতি প্রান্তিকবহিঃস্থ মানুষ হলেও তাদের জীবন ধারণের একমাত্র ভরসা কৃষি। এমন অবস্থায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কৃষকদের সহায়তা করতেই এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি।