ভাঙন
তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন, ৫ নম্বর ঘাট বন্ধ
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিযা ফেরিঘাট এলাকায় হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়ায় ৫ নম্বার ফেরিঘাট বন্ধ করেছে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষ। আরও তিনটি ঘাট ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানা গেছে।
পদ্মার পানি বৃদ্ধি এবং তীব্র স্রোতের কারণে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে এই ভাঙন দেখা দেয়।
আরও পড়ুন: মেঘনা চরে ফেরি আটকা, যাত্রীদের উদ্ধার
বুধবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, দৌলতদিয়ার পাঁচটি ফেরি ঘাটের মধ্যে ভাঙনের কারণে ৫ নম্বর ঘাটের পন্টুন পাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে। উক্ত ঘাটের নদীর পাড় জুড়ে আড়াআড়িভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঘাটের লোওয়াটার লেভেল, মিডওয়াটাল লেভেল ও হাইওয়াটার লেভেলের তিনটি ঘাটের সংযোগ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৩, ৪ ও ৬ নম্বর ঘাট ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন দেখা দেয়ায় ওই এলাকার স্থানীয় দোকানপাট ও হোটেলসহ অন্তত ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ভয়াবহ ভাঙনের মুখে উলিপুরের তিস্তা পাড়ের মানুষ
আবারও ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের তিস্তাপাড়ের মানুষ।
গত তিন দিনে ভাঙনের তোড়ে তিন গ্রামের মানুষ হারিয়েছেন আড়াই শতাধিক বাড়িঘর। ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির, ঈদগাহ মাঠ, বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, পুরাতন বজরা বাজার ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙন কবলিতরা আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে।
আরও পড়ুন: বিপদসীমার ২৮ সেমি ওপরে তিস্তার পানি
গত এক মাস আগে ভাঙন শুরু হয় উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম কালপানি বজরা, কালপানি বজরা ও সাতালস্কর গ্রামে। উত্তরে জজমিয়ার বাড়ী থেকে দক্ষিণে রোস্তম মৌলভীর বাড়ী পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ব্যাপী ভাঙন শুরু হয়েছে।
কালপানি বজরার মোজাম্মেল হক (৬৫) জানান, ‘তিনদিন থাকি এটে (খোলা মাঠে) পরি আছি। গরীব মানুষ জায়গা নাই কোটে যাই। আজকে বজরা বাজারের বাসিন্দা দূর সম্পর্কের জেঠতো ভাই টিটু মিয়া তার খুলিত (আঙিনায়) ঘর তোলার অনুমতি দিছে। দেখি ওটে যায়া আপাতত উঠি, তারপর মাবুদ দেখপে।’
আরও পড়ুন: তিস্তাপাড়ে ভাঙনে মানুষের মানবেতর জীবন
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার জানান, ‘দ্রুততম সময়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের ভাঙন কবলিতদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। তালিকা পেলেই সহযোগিতা শুরু করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সঙ্গে আমরা ভাঙনের বিষয়গুলো আপডেট করেছি। বাজেট না থাকায় তারা মুভমেন্ট করতে পারছে না বলে জানিয়েছে। আর খোলা আকাশে কেউ থাকলে সেটা আমার নজরে আসেনি। আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘গত ২০-২৫ বছর আগে মূল নদীর স্রোত ছিল এই এলাকায়। গ্রামগুলোর উজানে নদী শাসনের ব্যবস্থা নেয়ায় এখানে হঠাৎ করে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন: তিস্তার ভাঙন: গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে শতাধিক পরিবার গৃহহীন
চুড়ি-ফিতা বিক্রেতা মৌসুমী!
অনেকদিন পর আবারও পুরোনো আমেজে ফিরছে ঢালিউড। একের পর এক সিনেমা রয়েছে মুক্তির তালিকায়। আর দর্শকরাও এখন হলমুখী। এরমধ্যে ‘ভাঙন’ শিরোনামে নতুন সিনেমা নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ফিরছেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী।
২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘ভাঙন’ নির্মাণ করেছেন মির্জা সাখাওয়াৎ হোসেন। শিগগিরই সেন্সরবোর্ডে জমা পড়বে। জীবন ঘনিষ্ঠ সাহিত্যনির্ভর ‘ভাঙন’ নির্মিত হয়েছে ‘মোহন গায়েনের বাঁশি’ নামক একটি ছোটগল্প অবলম্বনে। এতে উঠে আসবে এক পুরোনো রেলওয়ে স্টেশনকে কেন্দ্র করে হকার, বংশীবাদক, চুড়িওয়ালী, ভিখেরি, পকেটমার, দালাল, মাদকসেবীসহ কতিপয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মানুষের যাপিত জীবনের কথা।
পড়ুন: ফিল্মমেকিংয়ের চেয়ে বড় কোনো অপরাধ তো আর নাই: ফারুকী
তিস্তাপাড়ে ভাঙনে মানুষের মানবেতর জীবন
বর্ষায় ভয়াবহ বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভাঙনের মুখে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। গেল সপ্তাহে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে কেউ কেউ রাস্তার পাশে কিংবা বাঁধের ওপর মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভাঙনের কবলে রয়েছে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানান, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নীলফামারীর কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে তিস্তা নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। নদীটি লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।
অভিযোগ রয়েছে, ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে দেশেটির সরকার একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় শীতের আগেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয় এবং বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। তবে বন্যায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় লালমনিরহাট।
আরও পড়ুন: অসময়ে যমুনার ভাঙনে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ
জন্মলগ্ন থেকে তিস্তা নদী খনন না করায় পলি পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানি প্রবাহের পথ না পেয়ে বর্ষাকালে উজানের ঢেউয়ে লালমনিরহাটসহ পাঁচ জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এ সময় নদী ভাঙনও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। প্রতি বছরই নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে। ফলে লালমনিরহাটে বিস্তৃর্ণ জমি বালুময় চরাঞ্চলে পরিণত হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহে সদরের খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের খামারটারী ও পূর্ব কালমাটি গ্রামের প্রায় ১০ থেকে ১৫ টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের কবলে চোংগাডারা উচ্চ বিদ্যালয়, খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, খুনিয়াগাছ উচ্চ বিদ্যালয়সহ নানান প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। এছাড়া নদীর পাড়ে নির্মাণাধীন চোংগাডারা উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা বিশিষ্ট ভবনসহ শতাধিক বসত বাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে।
কুড়িগ্রামে কমেছে নদ-নদীর পানি, বেড়েছে ভাঙন
কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে। তবে বানভাসিদের কষ্ট রয়েই গেছে। বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যেতে শুরু করলেও নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছেন না তারা। আরও বেশ কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
এদিকে, এক সপ্তাহ ধরে জেলার সবকটি নদ-নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। একদিকে বন্যার চাপ অন্যদিকে নদী ভাঙন। এতে বন্যার্ত ও নদী পাড়ের মানুষের মধ্যে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
আরও পড়ুন: অসময়ে যমুনার ভাঙনে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ
তাছাড়া বন্যার পানি নেমে গেলেও পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দিয়েছে। খাদ্য সংকট অনেক এলাকায় দেখা দিলেও সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে যে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছে বানভাসিরা। অনেকেই একবার ত্রাণ পেলেও আরও প্রয়োজন বলে জানান।
একদিকে বন্যার চাপ অন্যদিকে নদী ভাঙন। এতে বন্যার্ত ও নদী পাড়ের মানুষের মধ্যে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার বিকালে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমর ও ব্রহ্মপুত্র নদের ২২টি পয়েন্টে এখন ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়াল ডাঙা ইউনিয়নের পাড়ামৌলা,ঘড়িয়ালডাঙা ও খিতাব খাঁ এলাকায় এবং সদর উপজেলার ধরলা নদীর ভাঙনে হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রাম এবং উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে বজরা গ্রামে দেড় শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। আরও ঘর বাড়ি,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থাপনা নদী ভাঙনে হুমকিতে রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে নদী ভাঙনে হুমকির মুখে বিশ্বনাথের গোবিন্দনগর গ্রাম
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তিস্তা ও ধরলার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে তীব্র নদী ভাঙন চলছে। তবে ভাঙন প্রতিরোধে বিভিন্ন পয়েন্টে বালুর বস্তা ফেলে নিবারণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
শাহজাদপুরে ৪৫০ বাড়িঘর যমুনায় বিলীন
সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও যমুনা তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে প্রচণ্ড ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বহু ঘরবাড়ি ও জায়গা জমি যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এক সপ্তাহে শাহজাদপুর উপজেলার ভেকা, ঘাটাবাড়ি, জালালপুর ও পাকুরতলা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০টি ঘরসহ চার গ্রামের অন্তত সাড়ে চারশ বাড়িঘর যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙণ ঝুঁকিতে রয়েছে নদী তীর এলাকার পাকুরতলা (আশ্রয়ণ) প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (হেডকোয়ার্টার) নাসির উদ্দিন জানান, জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বিশেষ করে যমুনা তীরবর্তী শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকার কাঁচা ও পাকা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং অনেক স্থানে বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
তিনি জানান, তবে যমুনায় পানি কমতে থাকায় যমুনা তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার অনেক স্থানে প্রচণ্ড ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, কাজিপুর ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলে ইতোমধ্যেই অনেক ঘরবাড়ি, জায়গা জমি, গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, বন্যায় নিম্নাঞ্চলের ৯ হাজার ১০৬ হেক্টর জমির রোপা আমন, পাট, তিল, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে বিনষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং তিনি ভাঙনের বিষয়টি স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছেন।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের সহায়তায় শাবি শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম অব্যাহত
উপজেলার বন্যার্তদের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
তিনি বলেন, দুই-একদিনের মধ্যেই কয়েকটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মধ্যে বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করা হবে এবং ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোকে পরে নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসন করা হবে।
কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়ি-ঘর
কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভাঙনে দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন ও লালমসজিদ এলাকার প্রায় ১০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এছাড়া গত দুই মাসের ব্যবধানে আরও অর্ধশতাধিক পরিবারের বাড়িঘর নদী গর্ভে চলে গেছে। নিঃস্ব এসব পরিবারের মানুষজন উঁচু বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সরেজমিন উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের গ্রাম দুটিতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর সহায় সম্বল চোখের নিমিষেই নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও ভাঙন রোধে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে আমাদের সব কিছু তিস্তা নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে।
মাগুরায় মধুমতি নদীতে আবার ভাঙন শুরু
পানি কমতে শুরু করায় মাগুরার মহম্মদপুরে মধুমতি নদীতে আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। গত সাত দিনে উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের প্রায় ১৫টি বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ওই গ্রামের প্রায় ২৫টি বাড়িসহ বেশ কিছু স্থাপনা।
এদিকে, বাজেট না থাকায় ভাঙনরোধে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অনুমতি পেলে কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে।
সরেজমিন মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম, মো. ফরিদ আহম্মদ, মো. আক্কাচ আলী, হাফেজ মো. আহম্মদ আলীসহ অনেকে তাদের শেষ সম্বল বসত ঘর ভেঙে, গাছপালা কেটে সরিয়ে নিচ্ছেন।
পানি কমতে থাকায় নদীভাঙন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ভাঙন ভয়ংকর আকার ধারণ করায় নদীতীরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভাঙনের মুখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন শাহাদত মোল্যা, ইবাদত মোল্যা, রমজান মিয়া, নান্নু, মৃদুল শেখ, মন্নু শেষ, পান্নু ও সুলেমান শেখ।
এছাড়া উপজেলার নদী তীরবর্তী চরপাচুড়িয়া, মহেষপুর, কাশিপুর, ভোলানাথপুর, আড়মাঝি, হরেকৃষ্ণপুর ও রুইজানি এলাকার ভাঙনকবলিত অধিবাসীদের এখন দিন কাটছে আতঙ্কে। এসব গ্রামের মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে। গত দুই বছরে বর্ষা মৌসুমে মধুমতীর ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ৪৫টি পরিবারের শতাধিক ঘরবাড়ি। এ বছর ভাঙনের মুখে রয়েছে অসংখ্য দোকানপাটসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি।
আরও পড়ুন: তিস্তা নদী ভাঙনে দিশেহারা কুড়িগ্রামের মানুষ
হরেকৃষ্ণপুর এলাকায় নদী ভাঙনে মাফুজার ও মিটুর মিয়ার বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে মিটুর মিয়া অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
অন্যদিকে মাফুজার মিয়া রাস্তার পাশে ছাপড়াঘর তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তারা বলেন, ‘আমাদের এখন কোন জমিজমা নেই। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মোট সাত বার বসত ঘর সরিয়ে শেষ রক্ষা হয়নি। এবার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে মধুমতি ভাঙন বৃদ্ধি পায়। এই ভাঙনে আমাদের বসতবাড়ি নদীতে নিয়ে গেছে।’
এ ব্যাপারে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে তালিকা করা হচ্ছে।’
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, ‘ফের ভাঙনের খবর পেয়েছি। সরেজমিনে লোক পাঠানো হয়েছে। যেহেতু বাজেট নেই, তাই অনুমতির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলে কাজ শুরু করবো।’
আরও পড়ুন: নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে নয় হাজার পরিবারকে জমিসহ ঘর দেয়া হবে
শরীয়তপুরে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
শরীয়তপুরে সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীর তীরবর্তী গ্রামের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে।
শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীর পানি সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চ প্লাবিত
শনিবার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নড়িয়ার কিছু নিচু এলাকায় তীর উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে কীর্তিনাশা নদীতেও পানি বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পদ্মা নদীতে স্রোত বেড়েছে। স্রোতের কারণে জাজিরার পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ও কীর্তিনাশার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর তীরের খাল, ডোবা, বাঁওর ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: পদ্মায় পানি বেড়ে নাটোরের লালপুরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
শরীয়তপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, ভাঙন রোধে জাজিরার ৩৭টি স্থানে, নড়িয়ার ১২টি, ভেদরগঞ্জের ২২টি, গোসাইরহাটের ১৪টি ও সদর উপজেলার কীর্তিনাশা নদীর ১৫টি স্থানে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলা হচ্ছে।
ভাঙনে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে বাঁধে আশ্রয়!
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে নদ-নদীর পানি বাড়া-কমার পাশাপাশি ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ। ভাঙনের শিকার হয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারানো এসব পরিবার স্থান নিয়েছে ওয়াপদার বাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও খোলা আকাশের নিচে।
উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত দুধকুমার, গঙ্গাধর ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীর সারা বছর ধরে ভাঙলেও এখন বন্যার পানি বাড়া-কমার সাথে তা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এক সপ্তাহে দুধকুমার নদের ভাঙনে রায়গঞ্জ ইউনিয়নের বড় মিনাবাজার এলাকা, হাজীর মোড়, বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের বড়মানি, বেরুবাড়ি ইউনিয়নের ফান্দের চর এলাকায় প্রায় ৫০টি বাড়ি নদীতে চলে গেছে। আর এক মাসে রায়গঞ্জ ইউনিয়নের বড়বাড়ি, বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের তেলিয়ানিরকুটি, ওয়াপদাঘাট, বেরুবাড়ী ইউনিয়নের চরবেরুবাড়ীসহ কয়েক গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, শতশত বিঘা আবাদী জমি, গাছপালাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে গঙ্গাধর নদীর তীব্র ভাঙন, দিশেহারা ৩ গ্রামের মানুষ
এদিকে, গঙ্গাধর নদীর ভাঙনে বল্লভের খাষ ইউনিয়নের রঘুর ভিটা, কৃষ্ণপুর, রাম দত্ত এলাকার প্রায় ২০টি বাড়ি ও আবাদী জমি বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ভাঙন অব্যাহত রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের নারায়ণপুর ও নুনখাওয়া ইউনিয়নে।
রায়গঞ্জ ইউনিয়নের হাজীর মোড় এলাকার মামুনুর রশিদ জানান, গেল এক সপ্তাহ জুড়ে দুধকুমার নদের ভাঙন বেড়ে গেছে। এতে করে নদের তীরবর্তী এলাকার বসত ভিটা, আবাদী জমি নদের গর্ভে চলে যাচ্ছে।
বেরুবাড়ি ইউনিয়নের ফান্দেরচর এলাকার মজিদুল ইসলাম জানান, একমাস থেকে ফান্দের চর এলাকায় তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরের এক তৃতীয়াংশ দুধকুমার নদে বিলিন হয়েছে।
বল্লভের খাষ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আকমল হোসেন জানান, গঙ্গাধরের ভাঙনে তার ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার তাদের ভিটেমাটি হারিয়েছে। বসত ভিটা হারানো কিছু পরিবার স্থানীয় স্কুল ঘরে কিছু পরিবার খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে।
রায়গঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম আব্দুলাহ আল ওয়ালিদ মাছুম জানান, প্রায় দুইমাস থেকে দুধকুমার নদের ভাঙন তীব্র হয়েছে। তার ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এসব মানুষ অসহায়ভাবে দিন যাপন করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তাদের জন্য কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর আহমেদ মাছুম জানান, ভাঙনে নিঃস্ব হওয়া পরিবারগুলোর তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
আরও পড়ুন: তিস্তার ভাঙন: কুড়িগ্রামের ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক মো. মোক্তার হোসেন জানান, ইতোমধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় আপদকালীন ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা তা আমরা দেখছি।