করোনা
৩০ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ৩০ দিনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি সম্পূরক আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ। বুধবার তিনি জনস্বার্থে এই আবেদন করেন।
ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, করোনা শুরু হলে তখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তাই শিক্ষার্থীরা কম আক্রান্ত হয়েছে। এখন আবার করোনা বাড়ছে। তবে এখন সব খোলা থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুল, মাদরাসা, কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার জন্য গণপরিবহন ব্যবহার করতে হয়। এতে অনেকেই হয়তো করোনাভাইরাস নিয়ে বাসায় ফিরবে। যার ফলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩০ দিনের জন্য বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আবেদনটি হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হতে পারে। এর আগে ২০২০ সালের ১৫ মার্চ তিনি এ সংক্রান্ত একটি রিট করেছিলেন বলেও জানান।
ওই রিটে সব বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও স্থলবন্দরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্তে এবং সব বন্দরের প্রবেশমুখে মনিটরিংয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: আবারও ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় যেতে হবে: প্রধান বিচারপতি
এছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশনা, সব বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও স্থলবন্দরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্তে এবং সব বন্দরের প্রবেশমুখে মনিটরিংয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বতীকালীন নির্দেশনা জারির আবেদন জানানো হয়েছিল।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, শিক্ষা সচিব, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ওই রিটে বিবাদী করা হয়।
সেই রিটের শুনানি নিয়ে একই বছরের ১৯ মার্চ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
আদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিদেশফেরতদের বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখতে ও স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা করতে তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ও পররাষ্ট্র সচিবের প্রতি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের বাস্তবায়ন প্রতিবেদন এখনও পাননি। তাই সেই রিটটি আজ আদালতে উপস্থাপন করেছেন।
আদালত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আদেশের জন্য রেখেছেন। এছাড়া ওই রিটের সম্পূরক হিসেবে অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩০ দিনের জন্য বন্ধ চেয়ে আবেদন করেছেন বলেও জানান ইউনুছ আলী আকন্দ।
এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে বুধবার থেকে ভার্চুয়ালি চলছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম ভার্চুয়ালি শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: সপ্তাহে ৪ দিন ভার্চুয়ালি চলবে চেম্বার আদালত
মুরাদের বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা: তদন্তের নির্দেশ আদালতের
করোনাভাইরাস সংক্রমণের রেড জোনে আরও ১০ জেলা
ঢাকা ও রাঙামাটির পর আরও ১০ জেলাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের রেড জোন বা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া হলুদ জোন বা মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে ৩২ জেলা। আর গ্রিন বা সবুজ জোনে রয়েছে ১৬ জেলা।
গত এক সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সাত দিনে দেশজুড়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৪০৫ জন, যা পূর্ববর্তী সাত দিনের (৩ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি) চেয়ে ২৩ হাজার ৯৩১ জন বেশি। এই সময়ে শতাংশ হিসাবে শনাক্ত বেড়েছে ২২৮ দশমিক ৪৮।
করোনা সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে ১০টি জেলাকে তালিকাভুক্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জেলাগুলোতে সংক্রমণের হার অন্তত ১০ শতাংশ।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস: সংক্রমণের রেড জোন ঢাকা-রাঙামাটি
লাল তালিকাভুক্ত জেলাগুলো হলো গাজীপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, লালমনরিহাট, খাগড়াছড়ি ও পঞ্চগড়। আগের দুটি ঢাকা ও রাঙ্গামাটি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, রাজধানীতে করোনা সংক্রমণের হার ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ। রাঙামাটিতে করোনা সংক্রমণের হার ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ।
এ ছাড়া গাজীপুর করোনা সংক্রমণের হার ১০ দশমিক ৪৯, রাজশাহী ১৪.৭৪ শতাংশ, যশোর ১১ দশমিক ২১ শতাংশ, কুষ্টিয়া ১১.৩৮ শতাংশ, বগুড়া ১১.৮৪ শতাংশ, দিনাজপুর ১১.২৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৮ দশমিক ৪৮, লালমনরিহাটে ১০ দশমিক ৭১, খাগড়াছড়ি ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ ও পঞ্চগড় ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
হলুদ জোন বা মধ্যম ঝুঁকিতে থাকা ৩২ জেলার শনাক্তের হার অন্তত ৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন: বাঘাইছড়িতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ৭৮, সাজেক রেড জোন
জেলাগুলো হলো সিলেট, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, নওগাঁ, ঝিনাইদহ, নাটোর, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, মাগুরা, নড়াইল, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, শেরপুর, ঝালকাঠি ও ঠাকুরগাঁও।
এছাড়া এখনও করোনা থেকে ঝুঁকিমুক্ত আছে ১৬ জেলা। এই জেলাগুলোতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে।
ঝুঁকিমুক্ত জেলাগুলো হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, ভোলা, নেত্রকোণা, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরগুনা, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী ও মেহেরপুর।
বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ৫৫ লাখ ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আতঙ্কের মাঝে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস্ হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৫ হাজার ৬৪০ এবং মোট মৃতের সংখ্যা ৫৫ লাখ ৫৪ হাজার ১৫২ জনে দাঁড়িয়েছে।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ আমেরিকায় এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ছয় কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ৯৯২ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে আট লাখ ৫৩ হাজার ৯৫১ জন।
এদিকে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ২১ হাজার ৮০৩ জনে। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে দুই কোটি ৩২ লাখ ২৯ হাজার ৮৫১ জন। মৃত্যুর দিক দিয়ে দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়।
বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশ ভারতে মোট তিন কোটি ৭৬ লাখ ১৮ হাজার ২৭১ জনের সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। একই সময়ে মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৮৬ হাজার ৭৬১ জনে।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকের করোনা শনাক্ত, বন্ধ ঘোষণা
বাংলাদেশ পরিস্থিতি
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শনাক্ত হয়েছে আরও আট হাজার ৪০৭ জন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১৬৪ জনে। মোট শনাক্তের সংখ্যা ১৬ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৪ জনে পৌঁছেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ হাজার ৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এইদিন শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭২ শতাংশ।
এদিকে ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ৪৭৫ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৯৫ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন: দেশে করোনা রোগীর ২০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত
দেশে করোনা রোগীর ২০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত
দেশে বর্তমানে করোনা রোগীর ২০ শতাংশই এই ভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। চলতি মাসে দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা গুণিতক হারে বাড়ার আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) জিনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক (সুপারভাইজার) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
এ সময় ডা.শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত স্যাম্পলের ২০ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এবং ৮০ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। পরবর্তী মাসে এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট গুণিতক হারে বৃদ্ধির আশঙ্কা করা যাচ্ছে। প্রকৃত ফলাফল সম্পর্কে আমরা এ মাসেই আপনাদের অবগত করব।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার উদ্দেশ্য কোভিড-১৯ এর জিনোমের চরিত্র উন্মোচন, মিউটেশনের ধরন এবং বৈশ্বিক কোভিড-১৯ ভাইরাসের জিনোমের সঙ্গে এর আন্তঃসম্পর্ক বের করা এবং বাংলাদেশি কোভিড-১৯ জিনোমের ডাটাবেজ তৈরি করা। এ প্রতিবেদন বিএসএমএমইউ-এর চলমান গবেষণার ছয় মাস ১৫ দিনের ফলাফল, আমরা আশা করি পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে হালনাগাদ করা ফলাফল জানাতে পারব।
আরও পড়ুন: ফের ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে দেশের করোনা পরিস্থিতি
দেশে করোনা রোগীর ২০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত
দেশে বর্তমানে করোনা রোগীর ২০ শতাংশই এই ভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। চলতি মাসে দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা গুণিতক হারে বাড়ার আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) জিনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক (সুপারভাইজার) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
এ সময় ডা.শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত স্যাম্পলের ২০ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এবং ৮০ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। পরবর্তী মাসে এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট গুণিতক হারে বৃদ্ধির আশঙ্কা করা যাচ্ছে। প্রকৃত ফলাফল সম্পর্কে আমরা এ মাসেই আপনাদের অবগত করব।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার উদ্দেশ্য কোভিড-১৯ এর জিনোমের চরিত্র উন্মোচন, মিউটেশনের ধরন এবং বৈশ্বিক কোভিড-১৯ ভাইরাসের জিনোমের সঙ্গে এর আন্তঃসম্পর্ক বের করা এবং বাংলাদেশি কোভিড-১৯ জিনোমের ডাটাবেজ তৈরি করা। এ প্রতিবেদন বিএসএমএমইউ-এর চলমান গবেষণার ছয় মাস ১৫ দিনের ফলাফল, আমরা আশা করি পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে হালনাগাদ করা ফলাফল জানাতে পারব।
২১ থেকে ৫৮ বছর বয়সের রোগীর সংখ্যা বেশি
ডা.শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০২১ সালের ২৯ জুন থেকে ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত সারা দেশব্যাপী রোগীদের ওপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণায় দেশের সব বিভাগের রিপ্রেজেন্টেটিভ স্যাম্পলিং করা হয়। গবেষণায় মোট ৭৬৯ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর নেজো ফ্যারিনজিয়াল সোয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়।
আরও পড়ুন: ফের ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে দেশের করোনা পরিস্থিতি
বিএসএমএমইউ’র গবেষণায় ৯ মাস থেকে শুরু করে ৯০ বছরের বয়স পর্যন্ত রোগী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২১ থেকে ৫৮ বছর বয়সের রোগীদের সংখ্যা বেশি। যেহেতু কোনো বয়স সীমাকেই কোভিড-১৯ এর জন্য ইমিউন করছে না, সে হিসেবে শিশুদের মধ্যেও করোনা সংক্রমণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
ষাটোর্ধ্বদের দ্বিতীয়বার সংক্রমণে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি
তিনি বলেন, গবেষণায় পাওয়া গেছে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের কো-মরবিডিটি রয়েছে যেমন- ক্যানসার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। পাশাপাশি ষাটোর্ধ্ব বয়সের রোগীদের দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হলে সে ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি।
এই গবেষক জানান, গত বছরের জুলাইয়ে কোভিড-১৯-এর জিনোম সিকোয়েন্সিং বিশ্লেষণ গবেষণায় দেখা যায়, মোট সংক্রমণের প্রায় ৯৮ শতাংশ হচ্ছে ইন্ডিয়ান বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এক শতাংশ হচ্ছে সাউথ আফ্রিকান বা বেটা ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমণ, এক শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে আমরা পেয়েছি মরিসাস ভ্যারিয়েন্ট অথবা নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। গত জুলাই থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জিনোম সিকোয়েন্স এ প্রাপ্ত ডাটা অনুযায়ী ৯৯ দশমিক ৩১ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, একটি করে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন- আলফা বা ইউকে ভ্যারিয়েন্ট ও বেটা বা সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট এবং অন্য একটি স্যাম্পল এ শনাক্ত হয় ২০বি ভ্যারিয়েন্ট, যা সার্স কভ-২ এর একটি ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট।
আরও পড়ুন: ৫ ডিসি ও ২ বিভাগীয় কমিশনার করোনায় আক্রান্ত
তিনি বলেন,ওমিক্রন ভাইরাস ডায়াগনোসিসের জন্য আরটিপিসিআর-এর মাধ্যমে তিনটি জিন- এস, এন২, বি দেখা হয় (বিবিসরি গবেষণা)। এর মধ্যে এস জিনটি ডিটেকটেড না হলে ওমিক্রনের সম্ভাবনা বেশি, কিন্তু উইজো গাইডলাইন্স অনুসারে জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর মাধ্যমে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কনফার্ম করতে হবে।
ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রন অনেক বেশি ইনফেকশন ছড়াচ্ছে
তিনি বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে অনেক বেশি ইনফেকশন ছড়াচ্ছে বলে প্রতীয়মান। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাসের জেনেটিক কোড এ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি ডিলিশন মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার বেশির ভাগ ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন রয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে বেশির ভাগ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। স্পাইক প্রোটিনের বদলের জন্যই প্রচলিত ভ্যাকসিনেশনের পরেও ওমিক্রন সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়।
তৃতীয়বারের মত সংক্রমিত রোগীও পাওয়া গেছে
তিনি বলেন, আমাদের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কোনো কোনো ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর দুই ডোজ টিকা দেয়া ছিল। তৃতীয়বারের মত সংক্রমিত রোগীও পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তি রোগী থেকে সংগৃহিত স্যাম্পলে আমার জিনোম সিকোয়েন্স করে পেয়েছি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। যেহেতু ওমিক্রন সংক্রমণে মৃদু উপসর্গ হয়েছে, সেটা হাসপাতালে ভর্তি রোগীতে ওমিক্রন না পাওয়ার কারণ হতে পারে।
এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন,পাশাপাশি মৃদু উপসর্গের রোগীদের মধ্যে টেস্ট না করার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। তাই আমাদের প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়েও অনেক বেশি ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী আনডিটেক্টেড অবস্থায় আছে বলে মনে করছি।
আরও পড়ুন: ২২ বিচারক করোনায় আক্রান্ত, প্রশিক্ষণ কর্মশালা স্থগিত
সবশেষে তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও টিকা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রত্যেক করোনা ভাইরাস ভ্যারিয়েন্ট বিপজ্জনক এবং তা মারাত্মক অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। পাশাপাশি ভাইরাসের নিয়মিত মিউটেশনের আমাদের প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে। তাই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি ও টিকা গ্রহণ করতে হবে।
করোনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের গবেষণায় সুপারভাইজার হিসেবে ছিলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ। প্রধান গবেষক ছিলেন ডা. লায়লা আনজুমান বানু, অধ্যাপক, জেনেটিক্স অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি ও চেয়ারম্যান, এনাটমি বিভাগ, বিএসএমএমইউ।
এছাড়া গবেষণা দলের অন্য সদস্যরা হলেন- ডা. জিন্নাত আরা ইয়াসমীন, সহযোগী অধ্যাপক, এনাটমি বিভাগ, ডা. বিষ্ণু পদ দে, সহকারী অধ্যাপক, প্যাথলজি বিভাগ, ডা.মো. মহিউদ্দিন মাসুম, সহকারী অধ্যাপক, এনাটমি বিভাগ, ডা. ইলোরা শারমিন, সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি বিভাগ, ডা. আবিদা সুলতানা, রেসিডেন্ট, ফেইজ- বি, এনাটমি বিভাগ, নাহিদ আজমীন, এমফিল, থিসিস, এনাটমি বিভাগ, অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছা, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, ভাইরোলজি বিভাগ, সোয়েব হোসেন, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, জিনোম রিসার্চ সেন্টার, বিএসএমএমইউ, শ্যামল চন্দ্র বিশ্বাস, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট, জিনোম রিসার্চ সেন্টার, বিএসএমএমইউ, অমল গনপতি, ফ্ল্যাবোটমিষ্ট, ল্যাবরেটরি সার্ভিস সেন্টার, বিএসএমএমইউ।
দেশে করোনায় শনাক্ত প্রায় সাড়ে ৮ হাজার, মৃত্যু ১০
দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শনাক্ত হয়েছে আরও আট হাজার ৪০৭ জন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১৬৪ জনে। মোট শনাক্তের সংখ্যা ১৬ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৪ জনে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ হাজার ৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এইদিন শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭২ শতাংশ।
এদিকে ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ৪৭৫ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৯৫ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ফের ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে দেশের করোনা পরিস্থিতি
বিশ্ব পরিস্থিতি
বিভিন্ন দেশে ওমিক্রন সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ কোটি ছাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস্ হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ কোটি দুই লাখ ৭৫ হাজার ৭৩৪ জনে ছাড়িয়েছে। এছাড়া মোট মারা গেছেন ৫৫ লাখ ৪৪ হাজার ৬৮৮ জন।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ আমেরিকায় এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ছয় কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে আট লাখ ৫১ হাজার ৪৫১ জন।
ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে এক কোটি ৪২ লাখ ৮৮ হাজার ৪৭২ জন। এছাড়া মোট মারা গেছেন এক লাখ ২৭ হাজার ৯৭২ জন।
যুক্তরাজ্যে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা এক কোটি ৫৪ লাখ ৬ হাজার ৩৫০ জন। মোট মারা গেছেন এক লাখ ৫২ হাজার ৫৭১ জন।
বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশ ভারতে মোট তিন কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার ২৫৩ জনের সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। একই সময়ে মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৮৬ হাজার ৪৫১ জন।
আরও পড়ুন: ৫ ডিসি ও ২ বিভাগীয় কমিশনার করোনায় আক্রান্ত
২২ বিচারক করোনায় আক্রান্ত, প্রশিক্ষণ কর্মশালা স্থগিত
সিলেটে একদিনে ২ শতাধিক করোনা রোগী শনাক্ত
সিলেটে গত ২৪ ঘন্টায় দুই শতাধিক ব্যক্তি করোনা শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার ১৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারী) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১১৭৯টি। এর মধ্যে ২০৯ জন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হন। শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৭৩ ভাগ।
আরও পড়ুন: খুলনায় একদিনে করোনায় মৃত্যু ২, শনাক্ত ১৫৮
শনাক্তদের মধ্যে ১৪৭ জনই সিলেট জেলার। বাকিদের মধ্যে সুনামগঞ্জে সাত, মৌলভীবাজারের ২৯ ও হবিগঞ্জের ২৬ জন রয়েছেন।
এ পর্যন্ত সিলেটে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ হাজার ৬৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ১০ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার ১৮৫ জন। এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনায় মারা গেছেন এক হাজার ১৮৬ জন।
আরও পড়ুন: করোনা: চট্টগ্রামে মৃত্যু ৩, শনাক্ত ৭৪২
বুধবার থেকে ভার্চুয়ালি চলবে সুপ্রিম কোর্ট
দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে আগামীকাল বুধবার থেকে ফের সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে শুরু হচ্ছে।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নির্দেশক্রমে এ বিষয়ে পৃথক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জন্য জারিকৃত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয়ে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, করোনা সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী বুধবার থেকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০’ এবং এতদসংক্রান্তে জারিকৃত প্র্যাকটিস ডাইরেকশন অনুসরণ করত: তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
হাইকোর্ট বিভাগের জন্য জারিকৃত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয়ে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, করোনা সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী বুধবার থেকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০’ এবং এতদসংক্রান্তে জারিকৃত প্র্যাকটিস ডাইরেকশন অনুসরণ করত: তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগের সব বেঞ্চে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলে প্রধান বিচারপতি বলেন,‘চারদিকে করোনার সংক্রমণের যে অবস্থা, তাতে মনে হচ্ছে আবারও হয়ত ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় যেতে হবে। ভার্চুয়ালি মামলা যে কম নিষ্পত্তি হয় তা কিন্তু নয়, ভার্চুয়ালি বেশিই নিষ্পত্তি হয়।’
এসময় আদালতে উপস্থিত রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন,‘আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল মহোদয় এবং একজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলসহ কয়েকজন আইন কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন।’
আরও পড়ুন: বিএসএমএমইউ চিকিৎসকের মানহানিকর ভিডিও সরানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
তখন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন,‘আমাদের হাইকোর্টের ১৩ জন বিচারপতি, স্টাফ এবং নিম্ন আদালতের বেশ কিছু বিচারকও আক্রান্ত হয়েছেন।’
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে বিচার বিভাগকে সচল রাখার প্রয়োজনীয়তায় একপর্যায়ে ২০২০ সালের ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ- ২০২০’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
এরপরে ৯ মে ভার্চুয়াল উপস্থিতিকে স্বশরীরে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য করে অধ্যাদেশটি জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। এরপর একই বছরের ১০ মে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে ১১ মে থেকে সীমিত পরিসরে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে দেশে ভার্চুয়াল আদালত চালু হয়েছিল। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের উভয় (আপীল ও হাইকোর্ট) বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম ফের শারীরিক উপস্থিতিতে চালু করে কোর্ট প্রশাসন।
তবে ধীরে ধীরে করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়ছে। দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ছয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শনাক্তের হার বেড়ে হয়েছে ২০ শতাংশের ওপরে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (রবিবার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে করোনা সংক্রমিত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ছয় হাজার ৬৭৬ জন। এরই মধ্যে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ফের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ভার্চুয়ালি শুরু হয়েছে। এরপর বুধবার থেকে সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম ভার্চুয়ালি শুরু হচ্ছে।
আরও পড়ুন: যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চান হাইকোর্ট
অর্থপাচার মামলায় হাইকোর্টে জামিন পেলেন বগুড়ার তুফান
খুলনায় একদিনে করোনায় মৃত্যু ২, শনাক্ত ১৫৮
খুলনা বিভাগে গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে বিভাগের ১০ জেলায় ১৫৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সোমবার শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১৭৭ জন।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এই সব তথ্য জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা: চট্টগ্রামে মৃত্যু ৩, শনাক্ত ৭৪২
এতে বলা হয়, খুলনা বিভাগের করোনায় মৃত দু’জনের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। গত ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত ১৫৮ জনের মধ্যে খুলনা জেলায় সর্বোচ্চ ৫০ জন, যশোরে ৩৩, কুষ্টিয়ায় ২৯, ঝিনাইদহে ২৮ জন রয়েছেন। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় ছয় জন, নড়াইল, বাগেরহাট ও মাগুরায় তিন জন করে, সাতক্ষীরায় দুই, মেহেরপুরে এক জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিবেদন জানা যায়, খুলনা বিভাগে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে আজ সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট এক লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৯ হাজার ৩৪৭ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন তিন হাজার ১৯৭ জন।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেয়া শুরু
শনাক্ত সংখ্যা বিবেচনায় জেলাগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে খুলনা এবং সবচেয়ে কম সংখ্যা হচ্ছে মাগুরা জেলায়।
ডিসিদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ২৪ দফা নির্দেশনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে দুর্নীতি দূর এবং সরকারি দপ্তরে হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ২৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন-২০২২ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ কর্মসূচিতে যোগ দেন।
নির্দেশনাগুলো হলো:
(১) করোনাভাইরাসজনিত সংকট মোকাবিলায় সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত নির্দেশনাসমূহ মাঠপর্যায়ে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
(২) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে গৃহীত উন্নয়ন ও সেবামূলক কার্যক্রমসমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং এর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হবে।
(৩) খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
(৪) সরকারি অফিসসমূহে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘ্নে যথাযথ সেবা পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সেবাপ্রত্যাশীদের সন্তুষ্টি অর্জনই যেন হয় সরকারি কর্মচারীদের ব্রত।
(৫) এসডিজি স্থানীয়করণের আওতায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
(৬) গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাসজমি বন্দোবস্তসহ সকল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
(৭) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পাঠদান কার্যক্রমের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হতে হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থায় অনলাইনে বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠদান কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
আরও পড়ুন: জ্ঞানভিত্তিক সমৃদ্ধ দেশ গড়তে চায় সরকার: প্রধানমন্ত্রী
(৮) কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো যেন কার্যকর থাকে তা প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধান করতে হবে এবং নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হবে।
(৯) শিশু-কিশোরদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে তাদের জন্য প্রত্যেক এলাকায় সৃজনশীলতার চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও ক্রীড়া সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
(১০) নাগরিকদের সুস্থ জীবনাচারের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির সংরক্ষণ এবং নতুন পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।
(১১) পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে সংগতি রেখে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে উচ্চ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে।
(১২) জনসাধারণের মাঝে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কাজ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার, গুজব ইত্যাদি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা বৃদ্ধির তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর
(১৩) বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
(১৪) মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রাখতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করতে হবে।
আবারও ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় যেতে হবে: প্রধান বিচারপতি
দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আবারও আদালতের কার্যক্রম ভার্চুয়ালি পরিচালনার আভাস দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মঙ্গলবার সকালে আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘চারদিকে করোনার সংক্রমণের যে অবস্থা, তাতে মনে হচ্ছে আবারও হয়ত ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় যেতে হবে। ভার্চুয়ালি মামলা যে কম নিষ্পত্তি হয় তা কিন্তু নয়, ভার্চুয়ালি বেশিই নিষ্পত্তি হয়।’
এসময় আদালতে উপস্থিত রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, ‘আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল মহোদয় এবং একজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলসহ কয়েকজন আইন কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন।’
আরও পড়ুন: দুর্নীতির বিষয়ে ‘নো কম্প্রোমাইজ’: প্রধান বিচারপতি
তখন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের হাইকোর্টের ১৩ জন বিচারপতি, স্টাফ এবং নিম্ন আদালতের বেশ কিছু বিচারকও আক্রান্ত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে বিচার বিভাগকে সচল রাখার প্রয়োজনীয়তায় একপর্যায়ে ২০২০ সালের ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ- ২০২০’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এরপরে ৯ মে ভার্চুয়াল উপস্থিতিকে স্বশরীরে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য করে অধ্যাদেশটি জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। এরপর একই বছরের ১০ মে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে ১১ মে থেকে সীমিত পরিসরে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে দেশে ভার্চুয়াল আদালত চালু হয়েছিল।
করোনা সংক্রমণ কমে আসায় গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় (আপিল ও হাইকোর্ট) বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম ফের শারীরিক উপস্থিতিতে চালু করে কোর্ট প্রশাসন।
আরও পড়ুন: শপথ নিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী
দেশে করোনা পরিস্থিতি
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শনাক্ত হয়েছে আরও ছয় হাজার ৬৭৬ জন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১৫৪ জনে। মোট শনাক্তের সংখ্যা ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৭ জনে পৌঁছেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১ হাজার ৯৮০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এইদিন শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন: উচ্চ আদালতে বিচারপতির নিয়োগ সংক্রান্ত আইন অপরিহার্য: প্রধান বিচারপতি