ইউরোপ
রানির মৃত্যু, ভারত কি এবার ফেরত পাবে কোহিনূর?
যুক্তরাজ্যের দীর্ঘমেয়াদী রাজত্বকারী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর কোহিনূর বা কোহ-ই-নূর নামক হীরা ফেরত দেয়ার দাবি করছেন অনেক ভারতীয়। হীরা এই প্রয়াত রানির মায়ের জন্য তৈরি করা মুকুটে রাখা হয়েছিল।
ভারতীয় টুইটারাটি দাবি করতে শুরু করেছে যে ১০৫-ক্যারেট ডিম্বাকৃতির ‘আলোর পাহাড়’ রত্নটি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পরপরই তার উৎপত্তিস্থলে ফিরিয়ে আনা হোক।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্পর্কে ১০টি বিষয়
কোহিনূর হলো রানির মায়ের মুকুটের মাঝ বরাবর শোভা পাচ্ছে। এটি বর্তমানে সবচেয়ে দামি রত্নগুলোর একটি। ১৪ শতকে ভারতের গোলকুণ্ডা খনিতে হীরাটি পাওয়া গিয়েছিল এবং কয়েক শতাব্দীতে এটির মালিকানা বেশ কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৪৭ সালে ও পরবর্তীতে ভারত সরকার বহুবার কোহিনূরের প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুরোধ করেছে। তবে ব্রিটেন ক্রমাগত এই দাবির বিরোধিতা করেছে।
রানি এলিজাবেথের মৃত্যুর পর কে পাচ্ছেন কোহিনূরের মুকুট?
সর্বশেষ বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রানি কনসোর্ট ক্যামিলা এখন বিখ্যাত হীরার মুকুটটি পড়বেন। রাজা চার্লস তৃতীয় যখন আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে বসবেন তখনই রানি ক্যামিলা এটি প্রথম পড়বেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতিকৃতি বিশিষ্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রার এখন কি করা হবে?
ব্রিটেন কি ভারতকে কোহিনূর ফেরত দেবে?
রত্ন ফেরত দেয়ার কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানা গেছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী অলোক শর্মা ২০১৬ সালে ভারত সফরের সময় বলেছিলেন, ‘যুক্তরাজ্য সরকার বিশ্বাস করে যে হীরা পুনরুদ্ধারের জন্য কোনও আইনি ভিত্তি নেই।’
কোহিনূর যেভাবে ভারত থেকে ব্রিটেনে গেল
লিখিত রেকর্ডে দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোহিনূর প্রথম সামনে আসে। মুঘল সম্রাট শাহজাহান ১৬২৮ সালে সিংহাসনকে একটি বড় রত্নখচিত করার আদেশ দেন। স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনের মাধ্যমে ইহুদি ধর্ম এবং খ্রিস্টান ধর্মের ইতিহাসে দেখা যায়, অলঙ্কৃত সৃষ্টিটি তার নকশার ইঙ্গিত নিয়েছিল ইসলামের কিংবদন্তী হিব্রু সুলতান সুলেমানের সিংহাসন থেকে।
আরও পড়ুন: রানির মৃত্যু: 'দ্য ক্রাউন' সিরিজের প্রোডাকশন স্থগিত
কোহিনূর হীরা এবং তৈমুর রুবি দুটি খুব বড় রত্ন ছিল যা অবশেষে সিংহাসনকে সাজানোর জন্য ব্যবহার করা সমস্ত মূল্যবান পাথরের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান হয়ে উঠে। হীরাটি সিংহাসনের একেবারে শীর্ষে ময়ূরের মাথায় একটি উজ্জ্ল রত্নপাথর হিসেবে স্থাপন করা হয়।
পারস্যের নাদের শাহসহ মধ্য এশিয়ার অন্যান্য রাজাদের এই ধরনের সম্পদে আগ্রহ জন্মেছিল।
১৭৩৯ সালে নাদের শাহের দিল্লী আক্রমণে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ যায় এবং মুঘল সাম্রাজ্যের অর্থনীতি ক্ষতিসাধন হয়। স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনের ফিচার আরও তুলে ধরে যে নাদের তার লুটের অংশ হিসেবে ময়ূর সিংহাসনটি করায়ত্ত করেছিলেন এবং তিনি সিংহাসন থেকে বের করে কোহিনূর হীরা ও তৈমুর রুবি তার বাহুবন্ধনিতে পড়েছিলেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু, রাজপরিবারের উত্তরাধিকারের নতুন আদেশ
কোহিনূর হীরাটি ৭০ বছর ভারত থেকে দূরে ছিল, যা শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানের সম্পদে পরিণত হয়। একের পর এক ট্র্যাজেডিতে, এটি বেশ কয়েকটি রাজার হাত বদল হয়। এসব রাজাদের মধ্যে একজন নিজের ছেলেকে অন্ধ করেছিলেন, অন্যজন ক্ষমতাচ্যুত হন এবং তার মাথা গলিত স্বর্ণ দিয়ে আবৃত করা হয়।
বছরের পর বছর সংঘর্ষের পর, হীরাটি ভারতে ফিরে আসে এবং ১৮১৩ সালে শিখ রাজা রঞ্জিত সিং অধিগ্রহণ করে। কোহিনূরের প্রতি সিং-এর নির্দিষ্ট সখ্যতা রত্নটির মর্যাদা এবং ক্ষমতার আভাকে দৃঢ় করে। ১৮৩৯ সালে রঞ্জিত সিং-এর মৃত্যুর পর চার বছরে চারটি ভিন্ন লোকের হাতে মুকুটটি ছিল। সমস্ত বিশৃঙ্খলা অবসানের পর বালক দুলীপ সিং ও মা রানি জিন্দানের জন্য হীরাখচিত মুকুটটি রাখা ছিল।
স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনের ফিচারে বলা হয়েছে, ব্রিটিশরা, যারা ততদিনে ভারতের ওপর তাদের দখলদারিত্ব শক্ত করেছিল, তারা দুলীপকে একটি আইনি নথিতে সই করতে বাধ্য করেছিল। যার জন্য ১০ বছর বয়সী ছেলেটিকে কোহিনূর এবং সার্বভৌমত্বের সমস্ত দাবি ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
সেই দিক থেকে, রানি ভিক্টোরিয়া হীরাটির গর্বিত মালিক ছিলেন। ভিক্টোরিয়া একটি ব্রোচ হিসেবে কোহিনূর পরতেন, পরে এটি ক্রাউন অলঙ্কারের একটি অংশে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন প্রথমবার বাংলাদেশে আসেন
আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের রাজা হলেন তৃতীয় চার্লস
প্রাচীন ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক প্রথা অনুযায়ী তৃতীয় চার্লস আনুষ্ঠানিকভবে ব্রিটেনের রাজা ঘোষিত হয়েছেন। শনিবার প্রথমবারের মতো এই অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
বৃহস্পতিবার মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যাওয়ার পর প্রথা অনুযায়ী চার্লস তৃতীয় রাজা হন। তবে যোগদান অনুষ্ঠানটি দেশে নতুন রাজাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক এবং আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ।
প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং তার পাঁচজন পূর্বসূরিসহ অতীত ও বর্তমান অনেক সিনিয়র রাজনীতিবিদ, অ্যাকসেসন কাউন্সিলের বৈঠকের জন্য সেন্ট জেমস প্রাসাদে অলঙ্কৃত রাষ্ট্রীয় অ্যাপার্টমেন্টে জড়ো হয়েছিলেন।
তারা চার্লসকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা চার্লস তৃতীয় হিসেবে সম্বোধন না করেই মিলিত হয়েছিল। ব্যক্তিগত ঘোষণার মাধ্যমে রাজা তাদের সঙ্গে যোগ দেন। দায়িত্বপালনকালে তিনি তার মায়ের ‘উৎসাহের উদাহরণ’ অনুসরণ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি আপনারা ও সমগ্র জাতি কতটা গভীরভাবে শোকাহত এবং আমি মনে করি এই অপূরণীয় ক্ষতিতে আমার প্রতি সমগ্র বিশ্ব সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।’
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৫২ সালে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর এই প্রথম অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে চার্লসের সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ক্যামিলা, রানী কনসোর্ট এবং তার বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম। উইলিয়াম এখন সিংহাসনের উত্তরাধিকারী এবং চার্লস দীর্ঘদিন ধরে ওয়েলস প্রিন্স উপাধিতে পরিচিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের পরে, একজন কর্মকর্তা সেন্ট জেমস প্যালেসের একটি বারান্দা থেকে উচ্চস্বরে ঘোষণাপত্রটি পাঠ করবেন। এটি লন্ডনের পুরনো শহর এবং যুক্তরাজ্যের অন্যান্য স্থানেও পড়া হবে।
ব্রিটিশ সিংহাসনে অভূতপূর্ব ৭০ বছর শাসনের পর স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে ৯৬ বছর বয়সী রানি মারা যাওয়ার দু'দিন পরও লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসের বাইরে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এখনও হাজার হাজার লোক আসছেন। যুক্তরাজ্যের অন্যান্য রাজকীয় বাসভবন এবং বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ দূতাবাসগুলোতে দৃশ্যটির পুনরাবৃত্তি হয়েছিল।
শুক্রবার রাজা তার রাজত্বের শুরুতে, একটি টেলিভিশন ভাষণে তার নিজস্ব আধুনিকীকরণ স্ট্যাম্প সহ রানির ‘আজীবন সেবা’ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
চার্লস মায়ের মতো ‘সার্বভৌমত্বের প্রতি একনিষ্টতা ও ভক্তি’ অটুট রাখার কথা উল্লেখ করে ভবিষ্যৎ ২১ শতকের স্থিরতার রাজতন্ত্র গড়ার ইঙ্গিত দেন।
‘আপনার ভূমিকা বা বিশ্বাস যাই হোক না কেন, রানির রাজত্বকালে দেশটি ‘অনেক সংস্কৃতি এবং অনেক বিশ্বাসের’ একটি সমাজ নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল এবং ব্রিটেন ও অন্যান্য ১৪টি দেশ যেখানে তিনি রাজা ছিলেন সেখানে মানুষের সেবা করার
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং তিনি প্রতিফলিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন:বিশ্বজুড়ে রানির জন্য অশ্রু ও শ্রদ্ধা
তিনি রাজা হিসেবে তার প্রথম ঘন্টাগুলোতে উদাসীন হিসেবে যে পরিচিতি রয়েছে তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেছিলেন, বাকিংহাম প্রাসাদের গেটে ফুল দিয়ে রানিকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা কয়েক হাজার মানুষের সঙ্গে হাত
মিলিয়ে সময় কাটান। ‘সাবাশ, চার্লি!, ‘ঈশ্বর রাজাকে রক্ষা করুন!’ বলে চিৎকার করে জনগণ তাকে স্বাগত জানান। এ সময় এক নারী তার গালে চুমু দেন।
ব্রিটেন রানির জন্য শোক পালন করছে, রানিকে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে শেষ বিদায় জানানো হবে। এই আনুষ্ঠানিকতা সতর্কতার সঙ্গে কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে, যা বেশিরভাগ মানুষ আগে থেকেই জানে।
কয়েক দিনের মধ্যে রানির মরদেহ বালমোরাল থেকে প্রথমে এডিনবার্গে এবং তারপরে লন্ডনে আনা হবে, যেখানে সম্ভাব্য ১৯ সেপ্টেম্বরের দিকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে শেষকৃত্যের আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে শায়িত করা হবে।
ভাষণে চার্লস একটি ব্যক্তিগত উদ্ধৃতিতে মাকে হারানোর কষ্টের কথা লিখতে গিয়ে লিখেছেন, ‘আমার প্রিয় মামা’।
‘আমাদের পরিবার এবং জাতির পরিবারের প্রতি আপনার ভালবাসা এবং ভক্তির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ যে আপনি এত বছর ধরে এত পরিশ্রমের মাধ্যমে সেবা করেছেন,’ তিনি শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেট’-এর একটি উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন -‘আপনার পরবর্তী যাত্রায় উড়ন্ত দেবতারা গান গাইবে।’
আরও পড়ুন:রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু, রাজপরিবারের উত্তরাধিকারের নতুন আদেশ
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতিকৃতি বিশিষ্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রার এখন কি করা হবে?
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতিকৃতি বিশিষ্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রার এখন কি করা হবে?
কয়েক দশক ধরে ব্রিটিশ নোট ও মুদ্রায় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে চিত্রিত করা হয়েছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের একটি স্মারক হিসেবে তার প্রতিকৃতি বিশ্বের আরও ডজনখানেক দেশের মুদ্রায় দেখা যায়।
তাহলে সম্প্রতি তার মৃত্যুর পর এসবের কি হবে?
যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও অন্যান্য দেশের মুদ্রায়র তাদের নতুন রাজার ছবি প্রতিস্থাপন করতে সময় লাগবে।
তবে এর অর্থ এই নয় যে মুদ্রাগুলো কাজ করবে না।
রানির মুত্যুর পর তার প্রতিকৃতি অঙ্কিত কাগজের মুদ্রার জন্য পরবর্তীতে কি হচ্ছে তা জেনে নেয়া যাক:
রাজার পরিবর্তন
ব্রিটিশ নোট ও মুদ্রায় রানির প্রতিকৃতিগুলোকে নতুন রাজা চার্লস তৃতীয় এর অনুরূপ প্রতিকৃতি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে অবিলম্বে তা করা সম্ভব হবে না।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছে, ‘মহামান্য রানির প্রতিকৃতি সম্বলিত বর্তমান ব্যাংক নোটগুলো বৈধ মুদ্রা হিসেবে অব্যাহত থাকবে।’
ব্যাংকের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, দেশটিতে চলমান ১০ দিনের শোক শেষ হওয়ার পরে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা বিদ্যমান কাগজের মুদ্রার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে।
ব্রিটিশ মুদ্রার অফিশিয়াল নির্মাতা রয়েল মিন্ট জানিয়েছে, রানির প্রতিকৃতি সম্বলিত মুদ্রা বৈধ মুদ্রা হিসেবেই থাকবে এবং প্রচলন অব্যাহত থাকবে। এ বিষয়ে আরও তথ্য পরবর্তীতে জানানো হবে।
রয়েল মিন্টের ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে, চলমান শোক সময়কে আমরা সম্মান করে মুদ্রাগুলো অব্যাহত রেখেছি।
৮২ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের চার দশমিক সাত বিলিয়ন ব্রিটিশ ব্যাংক নোট ও প্রায় ২৯ বিলিয়ন কয়েনসহ রানির ছবি বিশিষ্ট ব্রিটিশ মুদ্রা সম্ভবত বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকবে।
মুদ্রা বিশেষজ্ঞ একটি ব্রিটিশ মুদ্রা গবেষণা ওয়েবসাইট অনুসারে, বরং বর্তমানের সব কয়েন ও নোট হস্তান্তর করা হচ্ছে। প্রক্রিয়াটি ধীরে ধীরে হবে এবং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতিকৃতি সম্বলিত অনেক মুদ্রা আগামী বহু বছর ধরে প্রচলিত থাকবে।
ওয়েবসাইটটি বলা হয়েছে, চার্লস তার রাজ্যাভিষেকের সময় মুকুট নেয়ার পরে নতুন করে নকশা করা নোট ও কয়েন ব্যবহার করার জন্য একটি নতুন প্রতিকৃতি তৈরি করতে হবে।
১৭ শতকের ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রানির ডানদিকে তাকানো প্রতিকৃতিকে প্রতিস্থাপন করে নতুন রাজার বাম দিকে তাকানো প্রতিকৃতি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে। পূর্বের সম্রাটের ঠিক বিপরীত দিকের প্রতিকৃতি ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া আছে।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন প্রথমবার বাংলাদেশে আসেন
অন্যান্য দেশ ক্ষেত্রে কি হবে?
মুদ্রা বিশেষজ্ঞ ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ান, কানাডিয়ান ও বেলিজিয়ান ডলারের রানির প্রতিকৃতি সম্বলিত অন্যান্য দেশের মুদ্রাতেও নতুন রাজার প্রতিকৃতি যুক্ত করা হবে। তবে এই প্রক্রিয়া বেশ বিলম্বিত হবে। কারণ যে দেশে উৎপত্তি সে দেশে নতুন নকশা প্রতিস্থাপন করা তুলনামূলক সহজ। তবে আইনি ব্যবস্থায় ভিন্নতার জন্য অন্যান্য দেশে তুলনামূলক বেশি সময় লাগতে পারে।
ব্যাংক অব কানাডা বলেছে যে সিন্থেটিক পলিমার দিয়ে তৈরি বর্তমান ২০ ডলারের ব্যাংক নোটটি আগামী বেশ কয়েক বছরের জন্য প্রচলনের উদ্দেশে ডিজাইন করা হয়েছে।
ব্যাংকটি জানিয়েছে, সম্রাট পরিবর্তনের সময় একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নকশা পরিবর্তন করার কোনো আইনি প্রয়োজন নেই।
ব্যাংক আরও জানিয়েছে, সাধারণভাবে যখন কানাডিয়ান অর্থের জন্য একটি নতুন প্রতিকৃতির বিষয় বেছে নেয়া হয় তখন প্রক্রিয়াটি নতুন নকশা আঁকার মাধ্যমে শুরু হয় এবং কয়েক বছর পরে নতুন নোটটি জারি করার জন্য প্রস্তুত হয়।
রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউজিল্যান্ড বলেছে, চার্লসের প্রতিকৃতি সম্বলিত নতুন মুদ্রা বের হওয়ার আগে তারা রানির প্রতিকৃতি সম্বলিত মুদ্রার সব স্টক প্রচলন করবে।
২০ ডলারের নোটের স্টক শেষ না হওয়া পর্যন্ত চার্লস তৃতীয় সম্বলিত মুদ্রা প্রচলন করতে এখনও বেশ কয়েক বছর লেগে যাবে।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু, রাজপরিবারের উত্তরাধিকারের নতুন আদেশ
মুদ্রায় রানি
তিনি যখন রাজকুমারী ছিলেন তখন তাকে প্রথম মুদ্রায় দেখা যায়। এটি ছিল ১৯৩৫ সাল, যখন কানাডার ২০ ডলার নোটে আট বছর বয়সী এলিজাবেথের প্রতিকৃতি নোটের একটি নতুন সিরিজের অংশ হিসেবে যুক্ত করা হয়। তার দাদা রাজা জর্জ পঞ্চম ছিলেন তখনকার সম্রাট।
কানাডিয়ান ২০ ডলার নোটে ১৯৫৪ সালে রানির রাজ্যাভিষেকের এক বছর পরে একটি নতুন প্রতিকৃতি দিয়ে হালনাগাদ করা হয়েছিল। তার প্রতিকৃতি বিশ্বের অন্যান্য মুদ্রায় প্রধানত ব্রিটিশ উপনিবেশ ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে প্রচলিত হতে শুরু করে।
তার রাজ্যাভিষেকের সাত বছর পর ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ মুদ্রাগুলো তার কোনো প্রতিকৃতি পায়নি। তখনই ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকে এক পাউন্ডের নোট থেকে শুরু করে কাগজের মুদ্রায় তার প্রতিকৃতি ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়। যদিও আনুষ্ঠানিক ও রাজকীয় প্রতিকৃতিটি ততটা সমালোচিত হয়েছিল।
তিনি ব্রিটিশ ব্যাংক নোটে চিত্রিত হওয়া প্রথম সম্রাট। ব্রিটিশ কয়েনে এক হাজারেরও বেশি সময় ধরে রাজা ও রানিদের প্রতিকৃতি স্থান পেয়ে আসছে।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্পর্কে ১০টি বিষয়
যুক্তরাজ্যের বাইরের মুদ্রা
এক পর্যায়ে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতিকৃতি কমপক্ষে ৩৩টি ভিন্ন মুদ্রায় স্থান পায়। সংখ্যায় তা অন্য যে কোনো রাজার চেয়ে বেশি। যা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নেয়।
কানাডার মতো যেখানেই তিনি একজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে রয়ে গেছেন, সেখানকার মুদ্রায়ই তার ছবি রয়েছে এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো তাদের পতাকায় ইউনিয়ন জ্যাক যুক্ত করা অব্যাহত রয়েছে।
ইস্টার্ন ক্যারিবিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, ডোমিনিকা, গ্রেনাডা, মন্টসেরাট, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, ও সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনসসহ কয়েকটি ছোট দেশের জন্য আর্থিক কর্তৃপক্ষের জারি করা নোট ও কয়েনেও তার প্রতিকৃতি রয়েছে।
অন্যান্য দেশ তাদের মুদ্রায় তার প্রতিকৃতির ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। ১৯৬২ সালে জ্যামাইকা ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর এর কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কাস গার্ভে এর মতো রানির প্রতিকৃতির বদলে জাতীয় বীরদের প্রতিকৃতি ব্যবহার শুরু করে।
সেশেলসের নোটগুলোতে এখন রানির প্রতিকৃতির পরিবর্তে স্থানীয় বন্যপ্রাণী স্থান পেয়েছে। বারমুডা একই ধরনের পরিবর্তন করেছে, তবে অল্প কিছু নোটে রানিকে ধরে রাখা হয়েছে। ত্রিনিদাদ ও টোবাগো প্রজাতন্ত্র হওয়ার পরে তাদের মুদ্রা পরিবর্তন করে।
১৯৯৭ সালে ব্রিটেন তার উপনিবেশ বেইজিংয়ের কাছে হস্তান্তর করার পর হংকং ডলার জারি করেছে, তাদের মুদ্রায় আকাশে চীনা ড্রাগন ও আকাশচুম্বী দালানের ছবি রয়েছে।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাক্রম
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু, রাজপরিবারের উত্তরাধিকারের নতুন আদেশ
বৃহস্পতিবার বালমোরালে ব্রিটেনের দীর্ঘ মেয়াদী রাজত্বকারী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর রাজপরিবারে নতুন উত্তরাধিকারের একটি তালিকা করা হয়েছে।
চার্লস ব্রিটেনের রাজা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ছেলে এবং নাতি-নাতনিরা রাজতন্ত্রের পরবর্তী উত্তরাধীকারী হলেন।
ক্রমানুসারে প্রথম ১৫ জনের তালিকা হলো-
১. প্রিন্স উইলিয়াম, চার্লস ও প্রয়াত রাজকুমারী ডায়ানার বড় ছেলে। তিনি কেমব্রিজের ডাচেস কেটকে বিয়ে করেছেন। তাদের তিন সন্তান উত্তরাধিকার সূত্রে তাকে অনুসরণ করে।
২. ক্যামব্রিজের প্রিন্স জর্জ, ২০১৩ সালের জুলাইতে জন্মগ্রহণ করে
৩. ক্যামব্রিজের রাজকুমারী শার্লট, ২০১৫ সালের মে মাসে জন্মগ্রহণ করে
৪. কেমব্রিজের প্রিন্স লুই, ২০১৮ সালের এপ্রিলে জন্মগ্রহণ করে
৫. প্রিন্স হ্যারি, চার্লস ও ডায়ানার ছোট ছেলে
৬. আর্চি মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর, ২০১৯ সালের মে মাসে সাসেক্সের ডাচেস হ্যারি ও মেগানের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন
৭. লিলিবেট মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর, ২০২১ সালের জুনে জন্মগ্রহণ করে
৮. প্রিন্স অ্যান্ড্রু, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপের দ্বিতীয় বড় ছেলে
৯. প্রিন্সেস বিট্রিস, অ্যান্ড্রু ও তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সারা ফার্গুসনের বড় মেয়ে
১০. সিয়েনা এলিজাবেথ, বিট্রিস ও এডওয়ার্ড ম্যাপেলি মোজির কন্যা, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জন্মগ্রহণ করে
১১. রাজকুমারী ইউজেনি, অ্যান্ড্রু ও সারার ছোট মেয়ে
১২. আগস্ট ব্রুকসব্যাঙ্ক, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউজেনি এবং জেমস ব্রুকসব্যাঙ্কের জন্ম।
১৩. প্রিন্স এডওয়ার্ড, রানি ও ফিলিপের কনিষ্ঠ সন্তান
১৪. জেমস, ভিসকাউন্ট সেভার্ন, এডওয়ার্ডের ছোট সন্তান এবং তার স্ত্রী সোফি, ওয়েসেক্সের কাউন্টেস
১৫. লেডি লুইস মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর, এডওয়ার্ড ও সোফির কন্যা
বিশ্বজুড়ে রানির জন্য অশ্রু ও শ্রদ্ধা
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যার শাসনামলে যুক্তরাজ্যকে কয়েক দশকের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেখেছে ও অনুভব করেছে সারা বিশ্ব, তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার ব্রিটেনের দীর্ঘ মেয়াদী রাজত্বকারী রানিকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষ জড়ো হয়।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্পর্কে ১০টি বিষয়
ব্রিটেনের দীর্ঘ মেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞী
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০২২ সালে তার সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পূর্ণ করেছেন। এরমধ্য দিয়ে তিনি ব্রিটিনের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক ও দীর্ঘ মেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞীর খেতাব অর্জন করেছেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি তার প্রপিতামহী রানী ভিক্টোরিয়ার রেকর্ড ভঙ্গ করেন, যিনি ৬৩ বছর সাত মাস রাজত্ব করেছিলেন।
২০১৬ সালে, থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের মৃত্যুর পর এলিজাবেথ ছিলেন বিশ্বের দীর্ঘ মেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞী।
২০২২ সালে তিনি ১৭ শতকের ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুই এর পরে বিশ্ব ইতিহাসে দ্বিতীয়-দীর্ঘকাল-শাসনকারী সম্রাজ্ঞী হন। চতুর্দশ লুই, মাত্র ৪ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেছিলেন।
এলিজাবেথ ও ভিক্টোরিয়া ছাড়াও ব্রিটিনের ইতিহাসে অন্য চারজন রাজা ৫০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে রাজত্ব করেছেন। তারা হলেন- তৃতীয় জর্জ (৬৯ বছর), তৃতীয় হেনরি (৫৬ বছর), এডওয়ার্ড তৃতীয় (৫০ বছর) ও স্কটল্যান্ডের ষষ্ঠ জেমস (৫৮ বছর)।
বাড়িতে শিক্ষাগ্রহণ
তার সময়ের ও আগের অনেক রাজপরিবারের সদস্যদের মতো, এলিজাবেথও কখনই কোনো পাবলিক স্কুলে যাননি। তিনি তার ছোট বোন মার্গারেটের সঙ্গে বাড়িতেই শিক্ষা গ্রহণ করেন।
তিনি তার বাবার কাছেও শিক্ষা গ্রহণ করেন। এছাড়া তার শিক্ষকদের মধ্যে ইটন কলেজের একজন সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন ফরাসি ও বেলজিয়ান গভর্নেস তাকে ফরাসি শিখিয়েছিলেন এবং ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ তাকে ধর্ম শিখিয়েছিলেন।
এছাড়াও এলিজাবেথ বাইক চালানো, সাঁতার কাটা, নাচ, ফাইন আর্টস ও সঙ্গীত শেখেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাক্রম
‘নং ২৩০৮৭৩’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, প্রিন্সেস এলিজাবেথ সংক্ষেপে ‘নং ২৩০৮৭৩’ নামে পরিচিত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের হয়ে কাজ করার জন্য এলিজাবেথকে অক্সিলারি টেরিটোরিয়াল সার্ভিসে একজন সাবল্টার্ন (জুনিয়র অফিসার) করা হয়।
যুদ্ধের কাজে সম্পৃক্ত হতে তার বাবা-মায়ের অনুমতিতে তিনি অ্যাম্বুলেন্স ও ট্রাক চালাতে ও প্রয়োজনে সেগুলো মেরামত করতে শিখেছিলেন।
‘গ্রেট মিমিকার'
এলিজাবেথ প্রায়ই চেহারায় ভারিক্কি অভিব্যক্তি বজায় রাখতেন, তাই অনেকেই তাকে ‘জুজু মুখো’ বলে অভিহিত করতেন। কিন্তু যারা তাকে কাছে থেকে চিনতেন, তারা তাকে একটি দুষ্টু, হাস্যরসিক ও অন্যের অভিব্যক্তি নকল করার অসামান্য প্রতিভাধর বলে বর্ণনা করতেন।
ক্যান্টারবারির সাবেক আর্চবিশপ রোয়ান উইলিয়ামস বলেছেন, রানি ‘ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত মজা করতে পারে। কেউ তার এ বিষয়টির প্রশংসা করে না যে, তিনি কতটা মজা করতে পারেন।’
রানির পারিবারিক যাজক বিশপ মাইকেল মান একবার বলেছিলেন যে ‘রানির কনকর্ড অবতরণ করাকে অনুকরণ করা আপনাদের দেখা সবচেয়ে মজার কাজগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে।’
এছাড়াও ইয়ান পাইসলি নামের একজন আইরিশ পাদ্রী ও রাজনীতিবিদ বলেছেন, এলিজাবেথ একজন ‘দারুন অনুকরণকার’ ছিলেন।
রাজকীয় করদাতা
তিনি রানি হয়েও ১৯৯২ সালে থেকে ট্যাক্স দিতেন।
১৯৯২ সালে যখন রানির অবকাশ যাপনের বাসভবন উইন্ডসর ক্যাসেল আগুনে পুড়ে যায়, তখন জনসাধারণ মেরামতের জন্য কয়েক লাখ পাউন্ড দেয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (১৯২৬-২০২২) : ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘমেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞীর বিদায়
তখনন তিনি স্বেচ্ছায় তার ব্যক্তিগত আয়ের ওপর কর দিতে রাজি হয়েছেন।
রানি বলেছিলেন, মেরামত কাজের ব্যয়ের ৭০ শতাংশ তিনি পূরণ করবেন এবং তিনি অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহ করতে প্রথমবারের মতো বাকিংহাম প্যালেসে তার বাড়িটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
ছোট্ট লিলিবেট
তার মা, মাতামহী ও প্রমাতামহীর সম্মানে রানিকে ইয়র্কের এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি উইন্ডসর নামে নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু শৈশবে তার পরিবাররের সদস্যদের কাছে তিনি ছোট্ট লিলিবেট নামেই পরিচিত ছিলেন। কারণ তিনি সঠিকভাবে ‘এলিজাবেথ’ নামটি উচ্চারণ করতে পারতেন না।
তার নানী কুইন মেরির কাছে একটি চিঠিতে, তরুণ রাজকুমারী লিখেছেন: ‘প্রিয় ঠাকুরমা। সুন্দর ছোট্ট জার্সির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা আপনার সঙ্গে স্যান্ড্রিংহামে থাকতে পছন্দ করি। আমি গতকাল সকালে সামনের একটি দাঁত হারিয়ে ফেলেছি।’ চিঠিটির শেষে লেখা- ‘লিলিবেটের পক্ষ থেকে ভালবাসা।’
প্রিন্স হ্যারি ও সাসেক্সের ডাচেস মেগান ২০২১ সালে তাদের মেয়ের নাম লিলিবেট ডায়ানা রাখার পরে রানির ডাকনামটি আরও ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
দীর্ঘ দাম্পত্যজীবন
এলিজাবেথ ও তার স্বামী প্রিন্স ফিলিপ ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক উপভোগ করেছেন। তাদের এই বন্ধনের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে তার চার সন্তানের মধ্যে তিনজন দীর্ঘ বৈবাহিক জীবন কাটান। তারা হলেন- চার্লস, অ্যান ও অ্যান্ড্রু।
রানী তাদের ৫০তম বিবাহ বার্ষিকীতে ফিলিপ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তিনি খুব আন্তরিকভাবে এত বছর ধরে আমার অবলম্বন হয়ে আছেন।’
তাদের গল্প শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালে, যখন গ্রিসের ১৮ বছর বয়সী সুদর্শন নৌ ক্যাডেট প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে ১৩ বছর বয়সী এলিজাবেথের দেখা হয় একদিনের জন্য। এর বেশ কয়েক বছর পরে ফিলিপকে ক্রিসমাসে উইন্ডসর ক্যাসেলে রাজপরিবারে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
এই দম্পতি ১৯৪৭ সালে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে বিয়ে করেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে দেখতে যাচ্ছেন স্বজনরা
তার ছেলে অ্যান্ড্রুর মতে, ফিলিপ যখন ২০২১ সালে ৯৯ বছর বয়সে মারা যান, তখন এলিজাবেথ তার জীবনে একটি ‘বিশাল শূন্যতা’ তৈরি হওয়ার কথা বলেছিলেন।
একাধিক জন্মদিন
এলিজাবেথ ১৯২৬ সালের ২১শে এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কবে তার জন্মদিন উদযাপন করা হবে তা জনসাধারণের জন্য কখনও কখনও বিভ্রান্তির বিষয়ে পরিণত হতো। কেননা তার ‘অফিসিয়াল জন্মদিন’ এর জন্য সর্বজনীনভাবে কোনো তারিখ নির্ধারিত ছিল না- এটা জুনের প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শনিবার হতো, তবে কবে উদযাপিত হবে সরকার সেই সিদ্ধান্ত নিত।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় তার জন্মদিন জুনের দ্বিতীয় সোমবার উদযাপিত হতো।
শুধুমাত্র রানি ও তার কাছের মানুষেরা পারিবারিক পরিসরে তার প্রকৃত জন্মদিন উদযাপন করতেন।
অনেকগুলো কর্গির মালিক
এটি সর্বজনবিদিত যে এলিজাবেথ কর্গি (এক ধরনের ছোট জাতের কুকুর) ভালোবাসতেন। এমনকি প্রিন্সেস ডায়ানা এই কুকুরগুলোকে রানির ‘চলন্ত কার্পেট’ বলে অভিহিত করেছেন, কারণ এগুলো তার সঙ্গে সর্বত্র চলাফেরা করতো।
তিনি অনেক বছর ধরে ৩০ টিরও বেশি কর্গির মালিক ছিলেন। তার দুটি ‘ডরগিস’ ছিল-ড্যাচসুন্ড ও কর্গির ক্রস ব্রিড। যাদের নাম ছিল- ক্যান্ডি ও ভলকান।
এলিজাবেথ ১৯৩৬ সালে ১০ বছর বয়সে একটি কুকুরকে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলেছিলেন এবং তার ১৮ তম জন্মদিনে সুসান নামে তাকে একটি কর্গি দেয়া হয়েছিল।
১৯৩৩ সালে স্থানীয় ক্যানেল থেকে ডুকি নামে একটি পুরুষ কর্গি কেনার মধ্য দিয়ে তার বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ রাজপরিবারের সঙ্গে এই প্রাণীর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
রানি হিসেবে তিনি ব্রিটেনের উন্মুক্ত জলাশয়ের কয়েক হাজার রাজহাঁসের মালিক ছিলেন এবং ১৩২৪ সালের একটি আইন অনুসারে তার সমস্ত স্টার্জন, পোর্পোইজ, তিমি ও ডলফিন দাবি করার অধিকার ছিল।
‘এ প্রিটি নাইস গার্ল’
রানী অনিবার্যভাবে পপ গানের বিষয় হয়ে ওঠে।
দ্য বিটলসের পল ম্যাককার্টনির গাওয়া ‘হার ম্যাজেস্টি’ গানটি সেসময় মানুষের মুখে মুখে ফিরেছিল। রানিকে নিয়ে পল গেয়েছিলেন ‘হার ম্যাজেস্টি এ প্রিটি নাইস গার্ল, বাট শি ডাজেন্ট হ্যাভ আ লট টু সে…’। ১৯৬৯ সালে রেকর্ড করা সংক্ষিপ্ত এই গানটি ‘অ্যাবে রোড’ অ্যালবামের শেষে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
তবে তাকে নিয়ে রচিত অন্যান্য গানগুলো অবশ্য এতটা মধুর ছিল না। ১৯৭৭ সালে তার রজত জয়ন্তীর ঠিক আগে প্রকাশিত `দ্য সেক্স পিস্তল’ ব্যান্ডের রাজতন্ত্রবিরোধী ‘গড সেভ দ্য কুইন’ গানটি ব্রিটিশ টেলিভিশনে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাক্রম
সাত দশকেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করে বৃহস্পতিবার ৯৬ বছর বয়সে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যান।
তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ধারাবাহিক ঘটনাক্রম হচ্ছে:
২১ এপ্রিল, ১৯২৬: লন্ডনের মেফেয়ারে প্রিন্সেস এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সে সময়ের ভবিষ্যতের রাজা ষষ্ঠ জর্জ ও রানি এলিজাবেথের প্রথম সন্তান তিনি। পরে তাকে রানির মা বলা হয়।
১০ ডিসেম্বর, ১৯৩৬: এলিজাবেথ তার চাচা রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড সিংহাসন ত্যাগ করার পর এবং তার বাবা রাজা হওয়ার পর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন।
১৩ অক্টোবর, ১৯৪০: যেসব শিশু বিমান হামলার (ব্লিটজ) সময় তাদের মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাদের উদ্দেশ্যে এলিজাবেথ ১৪ বছর বয়সে বিবিসি চিলড্রেনস আওয়ার অনুষ্ঠানে প্রথম বক্তব্য দেন।
১৯৪৫: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের হয়ে কাজ করার জন্য এলিজাবেথকে অক্সিলারি টেরিটোরিয়াল সার্ভিসে একজন সাবল্টার্ন (জুনিয়র অফিসার) করা হয়।
২০ নভেম্বর, ১৯৪৭: এলিজাবেথ ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে গ্রিস ও ডেনমার্কের প্রিন্স ফিলিপ মাউন্টব্যাটেনকে বিয়ে করেন।
১৪ নভেম্বর, ১৯৪৮: প্রিন্স চার্লস জন্মগ্রহণ করেন। ফলে তিনি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন।
আরও পড়ুন: রানির মৃত্যু: অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও দাফন
১৫ আগস্ট, ১৯৫০: এলিজাবেথের দ্বিতীয় সন্তান ও একমাত্র কন্যা অ্যান জন্মগ্রহণ করেন।
৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২: এলিজাবেথ তার বাবা জর্জ ষষ্ঠের মৃত্যুর পর রানি হন।
২ জুন, ১৯৫৩: ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে একটি জমকালো রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে তাকে মুকুট পরানো হয়। তিনি কমনওয়েলথ সফরে বারমুডা, ফিজি, টোঙ্গা, অস্ট্রেলিয়া ও জিব্রাল্টারসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে বের হন।
১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০: এলিজাবেথের তৃতীয় সন্তান প্রিন্স অ্যান্ড্রু জন্মগ্রহণ করেন।
১০ মার্চ, ১৯৬৪: এলিজাবেথের চতুর্থ সন্তান প্রিন্স এডওয়ার্ড জন্মগ্রহণ করেন।
মে, ১৯৬৫: এলিজাবেথ পশ্চিম জার্মানিতে এক ঐতিহাসিক সফর করেন। যা ছিল ৫২ বছরের মধ্যে কোনো ব্রিটিশ সম্রাটের প্রথম জার্মান সফর।
১৯৭৭: এলিজাবেথ সিংহাসনে বসার রজত জয়ন্তী উদযাপন করেন।
১৯৯২: এ বছরটি ছিল এলিজাবেথের ভাষায় ‘অনুস হরিবিলিস’ বা ভয়ংকর বছর। তার চার সন্তানের মধ্যে তিন সন্তানের বিয়ে ভেঙ্গে যায়। সে বছর আগুনে উইন্ডসর ক্যাসেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মন্দার মধ্যে মেরামতের খরচ জোগাতে রানিকে আয়কর দিতে হয়।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (১৯২৬-২০২২) : ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘমেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞীর বিদায়
৩১ আগস্ট, ১৯৯৭: প্রিন্সেস ডায়ানা প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। তার দুঃখ প্রকাশের জন্য জনসাধারণের চাপের মুখে এলিজাবেথ ডায়ানার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি অভূতপূর্ব টেলিভিশন সম্প্রচার করেন।
২০০২: এলিজাবেথ তার সিংহাসনে আরোহণের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেন। এ বছরে এলিজাবেথের মা ও তার বোন মার্গারেটের মৃত্যু হয়।
২০ ডিসেম্বর, ২০০৭: ভিক্টোরিয়াকে ছাড়িয়ে এলিজাবেথ সবচেয়ে দীর্ঘজীবী ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী হন।
মে, ২০১১: এলিজাবেথ আয়ারল্যান্ডে এক ঐতিহাসিক সফর করেন। যা আইরিশ স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ সম্রাটের প্রথম সফর।
২০১২: এলিজাবেথ সিংহাসনে তার হীরক জয়ন্তী পূর্ণ করেন।
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫: এলিজাবেথ রানি ভিক্টোরিয়াকে ছাড়িয়ে ব্রিটিশ ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী সম্রাট হন।
১১ জুন, ২০১৬: ব্রিটেন এলিজাবেথের আনুষ্ঠানিক ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে তিন দিনের জাতীয় উৎসব উদযাপন করে।
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭: প্রথম ব্রিটিশ সম্রাট হিসেবে এলিজাবেথ সিংহাসনে ৬৫ বছর পূর্ণ করে নীল জয়ন্তী উদযাপন করেন।
মার্চ, ২০২০: করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে এলিজাবেথ ও ফিলিপ লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেস থেকে উইন্ডসর ক্যাসেলে চলে যান।
৯ এপ্রিল, ২০২১: প্রিন্স ফিলিপ ৯৯ বছর বয়সে মারা গেলে এলিজাবেথের ৭৩ বছরের বিবাহিত জীবনের অবসান হয়।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে দেখতে যাচ্ছেন স্বজনরা
২০ অক্টোবর, ২০২১: এলিজাবেথ লন্ডনের একটি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে একটি রাত কাটান। ডাক্তারদের নির্দেশে তিনি পরবর্তী মাসগুলোতে তিনি শুধুমাত্র তুলনামূলক হালকা দায়িত্ব পালন করেন।
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২: এলিজাবেথ ৭০ বছরের সার্বভৌম সিংহাসন জীবনের মধ্য দিয়ে প্রথম ব্রিটিশ সম্রাট হিসেবে প্লাটিনাম জুবিলি পালন করেন।
জুন, ২০২২: প্লাটিনাম জুবিলি উদযাপনে চারদিনের সরকারি ছুটির সময় এলিজাবেথ সীমিত পরিসরে জনসম্মুখে এসেছিলেন।
৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২: বরিস জনসন ও লিজ ট্রাসে এলিজাবেথের সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডে রানির গ্রীষ্মকালীন বাসভবন বালমোরাল প্রাসাদে দেখা করেন। ঐতিহ্যগতভাবে লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলো অনুষ্ঠিত হলেও তার রানির চলাফেরার সমস্যার জন্য প্রথমবারের মতো এ বৈঠক বালমোরালে সম্পন্ন করা হয়।
৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২: এলিজাবেথ স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে ৯৬ বছর বয়সে মারা যান। তার বড় ছেলে তৃতীয় চার্লস রাজা হন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে
জীবনভর প্রস্তুতি নিয়ে ৭৩ বছর বয়সে রাজা হলেন প্রিন্স চার্লস
অবশেষে ৭৩ বছর বয়সে সিংহাসনে বসলেন প্রিন্স চার্লস।
চার্লস, ব্রিটিশ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়া সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি। তার মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার তৃতীয় চার্লস রাজা হন। তার রাজ্যাভিষেকের কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
তিনিই প্রথম রাজ উত্তরাধিকারী যিনি রাজপরিবারের প্রথাগত নিয়মানুসারে বাড়িতে শিক্ষা গ্রহণ না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেন।
রাজকুমারী ডায়ানার সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ, রাজপরিবারের সদস্যদের জনসাধারণের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করে,পরিবেশ সুরক্ষা ও স্থাপত্য সংরক্ষণের মতো বিষয় নিয়ে একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন চার্লস।
ইতিহাসবিদ এড ওয়েনস বলেন, অবশেষে তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন; জীবনের শরৎকালে এসে কীভাবে নিজেকে একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে তিনি তার ইমেজ প্রতিষ্ঠা করেন সেটা এখন দেখার বিষয়। কেননা কোথাও তার মায়ের মতো জনপ্রিয়তা তার নেই।
ওয়েন্স বলেন, চার্লসকে অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে কিভাবে ‘জনসাধারণের সমর্থন ও ভালোবাসার’ তৈরি করা যায়, ব্রিটিশ জনসাধারণের সঙ্গে এলিজাবেথের যে ধরনের সম্পর্ক ছিল।
অন্য কথায়, চার্লস কি তার প্রজাদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠবে? এটি এমন একটি প্রশ্ন যা তার পুরো জীবনে বহুবার আলোচিত হয়েছে।
তার সিংহাসনে আরোহণ সম্ভবত ব্রিটেনের বৃহৎ আনুষ্ঠানিক রাজতন্ত্রের ভবিষ্যত সম্পর্কে বিতর্ককে উস্কে দেবে। কেউ কেউ এটিকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে এবং অন্যরা এটিকে সামন্ততান্ত্রিক ইতিহাসের অপ্রচলিত চিহ্ন হিসেবে মনে করে।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (১৯২৬-২০২২): ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘ মেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞীর বিদায়
চার্লস একাধারে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান হবেন এবং অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও পাপুয়া নিউ গিনি সহ ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হবেন।
২০১৮ সালের একটি ডকুমেন্টারি ‘প্রিন্স, সন অ্যান্ড হেয়ার: ৭০ বছর বয়সী চার্লস’-এ তিনি বলেছিলেন, রাজা হিসেবে তিনি কথা বলতে বা রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কারণ প্রিন্স অব ওয়েলসের সার্বভৌম ভূমিকা আলাদা।
চার্লস বলেছেন যে তিনি রাজপরিবারের সদস্যদের সংখ্যা কমাতে চান, খরচ কমাতে চান ও আধুনিক ব্রিটেনের প্রতিনিধিত্ব করতে চান।
কিন্তু ডায়ানার সঙ্গে তার বিবাহের বিচ্ছেদের পর অনেকেই সিংহাসনের দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
জীবনীকার স্যালি বেডেল স্মিথ, ‘প্রিন্স চার্লস: দ্য প্যাশনস অ্যান্ড প্যারাডক্সেস অব অ্যান ইম্পরোবেবল লাইফ’-এর লেখক বলেন, তার সৌভাগ্য সত্ত্বেও বরাবরই তাকে পরিবারের অন্যদের সামনে ম্লান বলে মনে হয়েছে।
স্মিথ পিবিএসকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি হতাশা এটা নয় যে তাকে সিংহাসনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল, আমি মনে করি তার প্রধান হতাশা হল যে সে অনেক কিছু করেছে এবং ... তাকে ব্যাপক ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
১৯৯৭ সালে প্যারিসের একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় ‘সাধারণ মানুষের রাজকুমারী’ মারা যাওয়ার আগে ডায়ানার সঙ্গে স্বীকারোক্তিমূলক বিশ্বাসঘাতকতার জন্য চার্লসকে ক্ষমা করতে ব্রিটেনে অনেকেরই অনেক বছর লেগেছিল। কিন্তু ২০০৫ সালে ক্যামিলা পার্কার বোলসকে বিয়ে করার পর জনসাধারণের মন নরম হয় এবং তিনি কর্নওয়ালের ডাচেস হন।
যদিও চার্লস ও ডায়ানার বিচ্ছেদে ক্যামিলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তবুও তার ব্যক্তিত্ব ও সেন্স অফ হিউমার অবশেষে অনেক ব্রিটিশের মন জয় করে।
গত ফেব্রুয়ারিতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ জনসমক্ষে বলেছিলেন যে এটি তার ‘আন্তরিক ইচ্ছা’ ছিল যে তার ছেলে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পরে ক্যামিলাকে ‘কুইন কনসোর্ট’ হিসেবে পরিচিত করা উচিত।
প্রিন্স চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ ১৪ নভেম্বর, ১৯৪৮ সালে বাকিংহাম প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন। যখন তার মা ১৯৫২ সালে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন, ৩ বছর বয়সী রাজকুমার কর্নওয়ালের ডিউক হন। তিনি ২০ বছর বয়সে প্রিন্স অব ওয়েলস হন।
তার স্কুলজীবন সুখকর ছিল না, একটি স্কটিশ বোর্ডিং স্কুলে তিনি সহপাঠীদের দ্বারা নিপীড়নের শিকার হয়েছিল।
চার্লস কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে ইতিহাসে পড়েন এবং ১৯৭০ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জনকারী প্রথম ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সদস্য হন।
এরপর তিনি রয়্যাল নেভিতে যোগদানের আগে রয়্যাল এয়ার ফোর্স পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। সেখানে তিনি হেলিকপ্টার চালানো শিখেছিলেন। তিনি ১৯৭৬ সালে একজন মাইনসুইপার এইচএমএস ব্রনিংটনের কমান্ডার হিসেবে তার সামরিক কর্মজীবন শেষ করেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে দেখতে যাচ্ছেন স্বজনরা
ক্যামিলার সঙ্গে চার্লসের সম্পর্ক নেভিতে যোগ দেয়ার আগে থেকেই। তবে ক্যামিলা তখন একজন অশ্বারোহী অফিসারকে বিয়ে করেছিলেন।
অন্যদিকে, ১৯৭৭ সালে চার্লসের ১৬ বছর বয়সী লেডি ডায়ানা স্পেনসারের সঙ্গে দেখা হয়, যখন তিনি তার বড় বোনের সঙ্গে প্রেম করছিলেন। ডায়ানা ১৯৮০ সালে চার্লস ও রাজপরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য আমন্ত্রিত হওয়ার পরেই তাদের বাগদানের গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
তারা ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের বাগদানের ঘোষণা দেন।
এই দম্পতি ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালে বিয়ে করেন। এর এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বর্তমান সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়াম জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৪ সালে তার ভাই প্রিন্স হ্যারি জন্মগ্রহণ করেন।
তবে বহুল আলোচিত এই রূপকথার গল্প শিগগিরই শেষ হয়ে যায়। চার্লস ১৯৯৪ সালে এক টিভি ইন্টারভিউয়ে পরকীয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন।
এছাড়া আরেক সাক্ষাত্কারে ডায়ানা ক্যামিলার সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্কের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন: ‘এই বিয়েতে আমরা তিনজন ছিলাম।’
এই বিষয়গুলো চার্লসের জনপ্রিয়তা হ্রাস করেছিল।
তবে, ২০১৮ সালে তাকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ৫৪টি দেশ নিয়ে গঠিত কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে রানির মনোনীত উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল। চলতি বছরের ১০মে পার্লামেন্টের রাষ্ট্রীয় উদ্বোধনের আগে রানি চার্লসকে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক দায়িত্ব অর্পণ করে সভাপতিত্ব করতে বলেছিলেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (১৯২৬-২০২২) : ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘমেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞীর বিদায়
৭০ বছর রাজত্ব করার পর বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয় দীর্ঘ মেয়াদী সম্রাজ্ঞী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৯৬ বছর বয়সে বালমোরাল ক্যাসেলে মারা গেছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি মারা যান বলে বাকিংহাম প্যালেস জানিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ জানানোর পর তার পরিবারের সদস্যরা স্কটল্যান্ডের এই প্রাসাদে জড়ো হন।
বর্তমান রাজা চার্লস, বর্তমান রানি ক্যামিলা, প্রিন্সেস অ্যানে আগে থেকেই রানির সঙ্গে বালমোরালে ছিলেন।
চার্লসের ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি পরিবার নিয়ে পথে রয়েছেন।
রানি ১৯৫২ সালে ব্রিটেনের সিংহাসন আরোহণ করেন এবং বিশাল সামাজিক পরিবর্তনের সাক্ষী হন।
বিবিসি জানিয়েছে, তাঁর মৃত্যুর পর এখন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও প্রাক্তন প্রিন্স অব ওয়েলস প্রিন্স চার্লস ব্রিটেনের নতুন রাজা এবং তিনি ১৪টি রাষ্ট্রের কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিবেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে দেখতে যাচ্ছেন স্বজনরা
এক বিবৃতিতে বাকিংহাম প্যালেস বলেছে, রানি আজ বৃহস্পতিবার বিকালে বালমোরালে শান্তিপূর্ণভাবে মারা গেছেন। রাজা প্রিন্স চার্লস ও রানি ক্যামিলা সন্ধ্যায় বালমোরালে থাকবেন এবং শুক্রবার লন্ডনে ফিরে আসবেন।
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কার্যকাল যুদ্ধ-পরবর্তী কঠোরতা, সাম্রাজ্য থেকে কমনওয়েলথে উত্তরণ, স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যুক্তরাজ্যের প্রবেশ এবং ইইউ থেকে প্রত্যাহারের নানা ঘটনা ঘটে।
১৮৭৪ সালে জন্মগ্রহণকারী উইনস্টন চার্চিল এবং ১০১ বছর পরে এই সপ্তাহের শুরুতে রানি কর্তৃক নিযুক্ত হওয়া ১৯৭৫ সালে জন্মগ্রহণকারী লিজ ট্রাসসহ তাঁর শাসনামলে ১৫ জন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
তিনি তাঁর শাসনামলে তার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাপ্তাহিক আলোচনার আয়োজন করেছিলেন।
লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে, রানির অবস্থার আপডেটের অপেক্ষায় থাকা মানুষরা তার মৃত্যুর কথা শুনে কাঁদতে শুরু করেন।
রানি ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডনের মেফেয়ারে এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি উইন্ডসরের জন্মগ্রহণ করেন।
খুব কম লোকই ভাবতে পেরেছিলেন যে তিনি রানি হবেন। কিন্তু ১৯৩৬ সালের ডিসেম্বরে তাঁর চাচা এডওয়ার্ড অষ্টম দুইবার তালাকপ্রাপ্ত আমেরিকান ওয়ালিস সিম্পসনকে বিয়ে করার জন্য সিংহাসন ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে
এলিজাবেথের বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ ১০ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন।
তিন বছরের মধ্যে ব্রিটেন নাৎসি জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এলিজাবেথ এবং তার ছোট বোন, প্রিন্সেস মার্গারেট যুদ্ধকালীন বেশিরভাগ সময় উইন্ডসর ক্যাসেলে কাটিয়েছিলেন যখন তাদের বাবা-মা তাদের কানাডায় সরিয়ে নেয়ার পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে প্রিন্স ফিলিপকে বিয়ে করেন এবং ফিলিপ এডিনবার্গের ডিউক উপাধি লাভ করেন।
৭৪ বছরের বিবাহিত জীবনের পর ২০২১ সালে ৯৯ বছর বয়সে মৃত্যুর আগে ফিলিপ রানিকে তার ‘শক্তি এবং অস্তিত্ব’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
আরও পড়ুন: থ্যাঙ্কসগিভিং অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন না রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে দেখতে যাচ্ছেন স্বজনরা
শারিরীক অসুস্থতার কারণে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা রানির শারিরীক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পর রানিকে দেখতে স্বজনরা স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে যাচ্ছেন। এখানে তিনি গ্রীষ্মকালীন সময় কাটাতে এসেছেন।
বাকিংহাম প্যালেস বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ও ছেলে প্রিন্স চার্লস, পুত্রবধূ ক্যামিলা, কন্যা প্রিন্সেস অ্যানে রানির সঙ্গে বালমোরাল ক্যাসেলে আছেন।
প্রিন্স চার্লসের ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি দাদীকে দেখতে যাওয়ার জন্য পরিবার নিয়ে পথে রয়েছেন।
মঙ্গলবার প্রিভি কাউন্সিল সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের আনুষ্ঠানিক অভিষেক অনুষ্ঠান বাতিলের একদিন পরেই চিকিৎসকরা ৯৬ বছর বয়সী রানির শারিরীক অবস্থার অবনতির কথা জানিয়েছেন।
রাজ প্রাসাদের একজন মুখপাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আজ সকালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে রানির চিকিৎসকরা তার শারিরীক অবস্থার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন এবং তারা তাকে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।’
গত সাত দশক ধরে ব্রিটেনের রানি। সম্প্রতি তিনি চার্লস ও রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই তিনি শারিরীক অসুস্থতায় ভুগছেন।
ট্রাস এক টুইটে বলেন,‘বাকিংহাম প্যালেসের পক্ষ থেকে দেয়া এই খবরে পুরো দেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
তিনি আরও লিখেন, ‘আমি এবং আমাদের ইউনাইটেড কিংডমের মানুষের গভীর সমবেদনা এই সময়ে মহামান্য রানি এবং তার পরিবারের সঙ্গে রয়েছে।’
প্রিভি কাউন্সিল, রানির সিনিয়র উপদেষ্টাদের একটি দল। বুধবারের বৈঠকে ট্রাস ও তার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেয়ার কথা ছিল। অধিবেশন পরবর্তী তারিখে অনুষ্ঠিত হবে।