%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF
মশা কেন আপনাকেই কামড়ায়?
কোথাও ঘুরতে যেয়ে বা আড্ডাতে অন্যান্যরা যখন দীর্ঘ সময় ধরে আনন্দ-উৎসবে ব্যস্ত থাকে, তখন আপনাকে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে হয় মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য। এত মানুষ থাকতে মশা যেন বেছে বেছে আপনাকেই খুঁজে পায়। আপনার রক্ত মিষ্টি-বন্ধুদের কাছে এ কথা শুনতে শুনতে আপনি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কথাটা যদিও একদম ফেলে দেয়ার মত নয়। মশারা সত্যিই মিষ্টি জিনিসের পেছনে ছুটে। তবে এটি তাদের রক্ত চোষার আসল কারণ নয়। মশা মানুষকে কামড়ায় কারণ মানুষের রক্তে মশার ডিম তৈরির প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে। আর তার জন্যে রক্ত মিষ্টি হওয়ার প্রয়োজন নেই। মশা কেন আপনাকে কামড়ায় তা যাচাই করার জন্য চলুন, আগে খুঁজে বের করা যাক- ঠিক কিভাবে এত মানুষের ভীড়ে মশা আপনাকেই খুঁজে নেয়।
বেছে বেছে মশা কিভাবে আপনাকেই খুঁজে নেয়
শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় নিঃসৃত কার্বন-ডাই-অক্সাইড
মশা তার ম্যাক্সিলারি প্যাল্প নামক প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শনাক্ত করতে পারে। শ্বাস ছাড়ার সময় মানুষ বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত করে। আর গ্যাস নির্গত হওয়ার অনুপাত আরো বেড়ে যায় অত্যধিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামের সময়। মশা পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের তারতম্য বুঝতে পারে। আর এভাবে সে শনাক্ত করতে পারে বেশি পরিমাণের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণটা ঠিক কোন উৎস থেকে আসছে। এগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত কাছাকাছি থাকা হোস্টের দিকে মশা অগ্রসর হয়। একটি মশা ১৬৪ ফুট দূর থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণকারিকে শনাক্ত করতে পারে।
শরীরের গন্ধ
মশা কিছু নির্দিষ্ট যৌগের প্রতি আকৃষ্ট হয় যা মানুষের ত্বক এবং ঘামে থাকে। এগুলোর মধ্যে ল্যাকটিক অ্যাসিড, অ্যামোনিয়ার, ইউরিক অ্যাসিড এবং কোলেস্টেরলের প্রভাব বেশি। এই কেমিক্যাল গুলোর তারতম্য মানুষের জীনগত বৈশিষ্ট্য এবং ত্বকে থাকা নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপর নির্ভরশীল। ল্যাকটিক অ্যাসিডের উপস্থিতি মশাদের প্রিয় মানব গন্ধ হিসেবে মনে করা হয়। ব্যায়াম করার সময় প্রচুর পরিমাণে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হয়। তাই ব্যায়াম করার পর পরই সাবান দিয়ে গোসল করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।
মানুষের ত্বক আসলে বেশ কিছু আণুবীক্ষণিক ব্যাকটেরিয়ার আশ্রয়স্থল। এই ব্যাকটেরিয়া ঘামের সাথে মিশে একটি স্বতন্ত্র গন্ধ তৈরি করে। কখনো কখনো ত্বকের জীবাণুর উচ্চ বৈচিত্র্য শরীরে গন্ধের উপর প্রভাব ফেলে, যার ফলে শরীরটির প্রতি মশাদের আকর্ষণ কমে যায়। প্রভাবের এই ভালো-খারাপটি আসলে নির্ভর করে ব্যক্তির ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার ধরনের উপর। কখনো কখনো এই ব্যাকটেরিয়াই মানুষের গোড়ালি এবং পায়ের পাতার প্রতি মশাদের বিশেষ আকর্ষণটা নির্ধারণ করে দেয়।
পড়ুন: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু কম, তবুও আমরা উদ্বিগ্ন: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
দেহের তাপ
মশা আপনার যত কাছাকাছি হয়, এটি ততই আপনার শরীরের তাপ অনুভব করতে পারে। মশার পায়ে এক ধরনের সেন্সর আছে, যা ব্যবহার করে সে যে কারো শরীরের অধিক তাপ উৎপাদনকারি অংশ খুঁজে বের করতে পারে। প্রতিটি মানুষের শরীরই নির্দিষ্ট পরিমাণে তাপ উৎপন্ন করে। তাই কোন ভাবে একবার আপনার শরীরের উপর বসতে পারলেই মশা কামড়ানোর জন্য আপনার শরীরের সবচেয়ে সেরা জায়গাটি খুঁজে নিতে পারে। আর পরিশ্রম ও ব্যায়াম তাপ ও জলীয় বাষ্পের উৎপাদনশীলতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া তাপ উৎসের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রতি স্বাভাবিকভাবেই ছোট-উড়ন্ত কীটপতঙ্গগুলোর এক ধরনের বাতিক আছে।
অন্যদের তুলনায় মশা কেন আপনাকেই বেশি কামড়ায়
রক্তের গ্রুপ
আপনার রক্তের গ্রুপ মশা কেন আপনাকেই কামড়ায়-এর ঊত্তর অনেকটাই নিশ্চিত করে দেয়। যাদের রক্তের গ্রুপ এ, তাদের প্রতি মশারা তেমন একটা আকৃষ্ট হয় না। অন্যদিকে ও গ্রুপের রক্ত মশাদের জন্য সুস্বাদু পানীয় হিসেবে দেখা হয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, যে মশাটি আপনাকে কামড়ায় সে যদি ম্যালেরিয়া জীবাণু বহনকারী হয়, তবে অন্যান্য রক্তের গ্রুপের লোকদের তুলনায় আপনার ম্যালেরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।
স্ত্রী মশারা ডিম উৎপাদনের জন্য মানুষের রক্তের প্রোটিনের উপর নির্ভর করে। এই রক্তের ধরন নির্ধারিত হয় মানুষের জীনগত বৈশিষ্ট্য দ্বারা। প্রতিটি রক্তের ধরন নির্ভর করে লোহিত রক্তকণিকার পৃষ্ঠে অ্যান্টিজেন নামক প্রোটিনের উপর। তবে রক্তের এই প্রোটিন সংগ্রহের ব্যাপারটা একেক মশার জন্য একেক রকম। যেমন এডিস মশা ও গ্রুপ থেকে প্রোটিন নেয়, যেখানে অ্যানোফিলিস পছন্দ করে এবি গ্রুপকে।
পড়ুন: ডেঙ্গুতে আজও ১ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৩৯৯
শরীরের স্থুলতা
মশারা সাধারণত মোটা, লম্বা বা দীর্ঘদেহী লোকদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কারণ জায়গা যেহেতু বিশাল, সঞ্চালিত রক্ত ও পরিবহনকৃত তাপের পরিমাণও তাই একটু বেশিই হয়। এর সাথে সেই স্থুল শরীরের মানুষটি যত বেশি শ্বাস ছাড়বেন, তত বেশি মশারা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উঠবে। যেহেতু নাক ও মুখ দিয়েই সাধারণত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছাড়া হয়, তাই মশা বিশেষ করে মাথাকে টার্গেট করে।
পরিধেয় কাপড়ের রঙ
মশারা কালো রঙের দিকে বেশি অগ্রসর হয়। তাই পরিধেয়ের ক্ষেত্রে যারা কালো বা অন্যান্য গাঢ় রঙ পছন্দ করেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ। আসলে রক্ত চোষার জন্য সঠিক দেহ খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে মশারা অত্যন্ত পাকা শিকারী। তাই যারা বেশি উপদ্রবে ভুগছেন, তাদের অবশ্যই গাঢ় রঙের পোশাক যেমন কালো, নেভি এবং লাল এড়িয়ে চলা জরুরি।
গর্ভাবস্থা
সাধারণ মহিলাদের তুলনায় গর্ভবতী মহিলারা বেশি মশার উৎপাতের শিকার হন। এর কারণ গর্ভবতী মহিলাদের শরীরের তাপমাত্রা অন্যান্যদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডও বেশি নিঃসরণ করে। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের রক্তের পরিমাণ এবং বিপাকীয় হার বেশি থাকে। এটি গর্ভবতী মহিলাদেরকে মশার কামড়ের জন্য সংবেদনশীল করে তুলে।
পড়ুন: তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
নানা ধরনের রোগ-জীবাণু
মানুষের দেহে নানান প্রজাতির ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবীর সংক্রমণের সাথে মশার প্রতিক্রিয়ার তারতম্য ঘটে। ডেঙ্গি এবং জিকা ভাইরাস মানবদেহের গন্ধে বেশ পরিবর্তন আনে, যা তাদেরকে মশার কামড়ের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। এটি বেশ ফলপ্রসূ পরিস্থিতি, কারণ এটি মশাকে পোষককে কামড় দিতে, সংক্রামিত রক্ত বের করতে এবং তারপর জীবাণুটি অন্য ব্যক্তিতে ছড়াতে সহায়তা করে।
কিছু ভাইরাস আছে যেগুলো অ্যাসিটোফেনন নামের সুগন্ধযুক্ত কিটোনের নির্গমনকে পরিবর্তন করে দেহকে মশার জন্য উপযুক্ত পোষকে পরিণত করে।
মানুষের ত্বক সাধারণত একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পেপটাইড তৈরি করে যা ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তার করে। ডেঙ্গ বা জিকা দ্বারা সংক্রমিত মানুষের ক্ষেত্রে, এই পেপটাইডের ঘনত্ব কমে যায় এবং কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে অ্যাসিটোফেনন উৎপাদনকে সহায়তা করে। ডেঙ্গু রোগীদের শরীরের গন্ধে সুস্থ মানুষের তুলনায় বেশি অ্যাসিটোফেনন থাকে।
কিছু জীবাণু মানবদেহকে সংক্রমনযোগ্য করে তোলার পাশাপাশি দেহের গন্ধেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে। ম্যালেরিয়া সৃষ্টিকারী পরজীবী প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপ্যারাম দ্বারা সংক্রমিত ব্যক্তিরা রোগের বাহক অ্যানোফিলিস মশার জন্য প্রিয় পোষক দেহ।
এই পরজীবিটি মশার রক্ত-সন্ধান, রক্ত চোষা এবং সংক্রমণের সংবেদনশীলতাকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে মানুষের লোহিত রক্ত কণিকাকে সক্রিয় করার মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, অ্যালডিহাইড এবং মনোটারপিনের নির্গমন বাড়িয়ে তোলে। এতে পুরো শরীরটা মশা কামড়ানোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে দুর্বল হয়ে পড়ে। ম্যালেরিয়া ছাড়াও এই পরজীবী অ্যানোফিলিস ও এডিস প্রজাতির মশাকে তীব্র ভাবে আকর্ষণ করে।
পড়ুন: হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে করণীয়
শেষাংশ
আপনার দেহের উপর উপরোক্ত কারণগুলোর প্রভাব পৃথকভাবে যাচাই না করে সবগুলো একসাথে মিলিয়ে বা কয়েকটি একসাথে পর্যবেক্ষণ করুন। তবেই মশা কেন কামড়ায়- তার সঠিক উত্তরটি আপনি পেয়ে যাবেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে-এমনো কিছু লোক আছেন যারা অস্বাস্থ্যকর জায়গা বা উপদ্রবের সময়ের বাইরে স্বাভাবিক অবস্থায় মশার উৎপাতের বাইরে থাকেন। এদেরকে আসলে মশা কামড়ের প্রতি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায় না। ঘন ঘন না চুলকানোর কারণে এদের শরীরে ফোলা ফোলা ভাব বা যখম হয়ে যায় না। এই মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটির বাইরেও ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে মশার কামড় সাধারণত এদের উপর তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে না।
অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগ: কেন অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না?
১৯২৮ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং-এর পেনিসিলিন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয় অ্যান্টিবায়োটিক। গিণিপিগ হিসেবে পশুর উপর সর্বপ্রথম অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ শুরু হয় ১৯৮০-এর দশকে। অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ক্যান্সারের চিকিৎসা, অঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করেছে, যা ওষুধ শিল্পে অভাবনীয় পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ এবং কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
ভুল সময়ে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার রোগাক্রান্ত অবস্থার আরো অবনতি ঘটায়। প্রেসক্রিপশন ছাড়া রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ তো আছেই, কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক ডাক্তারও ছোট ছোট ক্ষেত্রে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক নেয়ার পরামর্শ দেয়। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে অ্যান্টিবায়োটিকটি এক সময় কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। চলুন, অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ না করার সাথে অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগের সম্পর্কটি নিরূপণ করা যাক।
বিশ্বজুড়ে অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগ
শিশুদের আপাত ভাইরাল শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা প্রায়ই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ প্রধানত ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হওয়া সত্ত্বেও, ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। শিশুদের কানে টিউবযুক্ত সমস্যায় কানে অ্যান্টিবায়োটিক ইয়ারড্রপ না দিয়ে মুখে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানোহয়। এতে অবাঞ্ছিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। সাঁতারুদের কানে অ্যান্টিবায়োটিক ইয়ারড্রপ দিয়ে চিকিৎসা করা উচিত, মুখে অ্যান্টিবায়োটিক খাইয়ে নয়।
পড়ুন: তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
মানসম্মত নির্দেশিকা ছাড়া অনেক দেশে এমনকি উন্নত বিশ্বেও প্রায়শই স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকরা জনসাধারণকে অ্যান্টিবায়োটিক নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
চিকিৎসা ছাড়াই সমাধানযোগ্য সাইনোসাইটিস-এর সমস্যার ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিক নিতে বলা হয়। প্রায়ই রোগীর ব্যাকটেরিয়াজনিত কনজাংটিভাইটিস আছে কিনা তা নিশ্চিত না হয়েই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রস্রাবে ব্যাকটেরিয়া থাকে যা নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষায় সনাক্ত করা হয়। এখানে ব্যক্তির মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণ না থাকলেও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে ধাবিত করা হয়। মুখ দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ একজিমার চিকিৎসা নয়। শুষ্ক ত্বক বা অন্যান্য উপসর্গের চিকিৎসায় লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
অস্ত্রোপচারের ক্ষতগুলো সারানোর জন্য নন-অ্যান্টিবায়োটিক মলম বা কোনও মলমের চেয়ে ভালো কাজ না করলেও টপিক্যাল অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।
পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগের কুফল
যখন প্রথম সারির অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা সংক্রমণের চিকিৎসা করা যায় না, তখন আরও ব্যয়বহুল ওষুধ ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে। এতে অসুস্থতা এবং চিকিৎসার দীর্ঘ সময়কাল প্রায়ই হাসপাতালটিতে চিকিৎসা খরচ বাড়ায়; সেইসাথে পরিবার এবং সমাজের উপর আর্থিক বোঝা গেড়ে বসে। কখনো কখনো এর কারণে মৃত্যুর আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলায় সমূহ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়। অঙ্গ প্রতিস্থাপন, কেমোথেরাপি এবং সিজারিয়ানের মত অস্ত্রোপচারগুলো অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এন্টিবায়োটিকগুলো কম কার্যকর হওয়ার কারণে সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান তালিকা - যেমন নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, রক্তে বিষক্রিয়া, গনোরিয়া এবং খাদ্যজনিত রোগের চিকিৎসা করা কঠিন এবং কখনও কখনও অসম্ভব হয়ে উঠছে।
যে কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি আগে থেকেই অ্যালার্জি থাকলে, সেই রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া যাবে না। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে ত্বকের ফুসকুড়ির মতো উপসর্গগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে, যাকে অ্যানাফিল্যাক্সিস বলা হয়। এই রোগে শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে এবং ঠোঁট বা জিহ্বা এবং মুখ ফুলে যেতে পারে।
পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
অ্যান্টিবায়োটিক-এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরূপ পেট খারাপ বা ফুসকুড়ির মতো হালকা উপসর্গ থেকে শুরু করে মারাত্মক অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া, কিডনির আঘাত এবং লিভারের ক্ষতি পর্যন্ত হতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার কারণ: অ্যান্টিবায়োটিক নিরোধক
অ্যান্টিবায়োটিক নিরোধক হল সেই অবস্থা, যখন ব্যাকটেরিয়াকে তাকে ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে আর ধ্বংস করা যায় না। অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অপব্যবহারের ফলাফল-ই হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক নিরোধক।
অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ তখনি ঘটে যখন ব্যাকটেরিয়া এই ওষুধগুলো ব্যবহারের প্রতিক্রিয়াতে আর সাড়া দিতে পারে না। আর এই সময়টি হলো যখন অ্যান্টিবায়োটিক অত্যধিক হারে ব্যবহার করা হয়।
পড়ুন: হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে করণীয়
যতবারই একটি নতুন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রবর্তিত হয়, তার সাথে সাথে ঔষধের প্রতিরোধী হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিকও আসে। পেনিসিলিনের প্রথম ক্লিনিকাল ট্রায়ালের এক দশকের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক নিরোধকের আবির্ভাব ঘটে। অতঃপর এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকে।
শেষাংশ
অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগ সমগ্র জাতিকে ঠেলে দিচ্ছে এক পোস্ট-অ্যান্টিবায়োটিক যুগের দিকে, যেখানে ছোটখাটো আঘাতই মৃত্যু ঘটাতে পারে। চিকিৎসকদের অপর্যাপ্ত পেশাদার দক্ষতা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের সাথে সম্পর্কিত জটিলতাগুলোকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। প্রেসক্রিপশন বা রোগ নির্ণয় ছাড়াই শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা এবং উচ্চ কার্যকারিতা অত্যধিক ব্যবহার বিশেষ করে অপব্যবহারের দিকে পরিচালিত করছে। তাই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের নিমিত্তে শিগগিরই অ্যান্টিবায়োটিক নিরোধকের ব্যাপকতা রুখতে হবে। আর তার জন্য প্রয়োজন অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা।
পড়ুন: টেক্সট নেক সিন্ড্রোম: অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলাফল
অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সারাদেশে অনিবন্ধিত, অব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে চিকিৎসা সেবা না দেয়া সব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা নগরীর সদর জেনারেল হাসপাতালে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কুমিল্লা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আয়োজনে বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালীসহ ছয় জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য স্থাপনা উদ্ধোধন এবং প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে ল্যাপটপ বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই টিকা পাবে শিশুরা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হবে অব্যবস্থাপনা হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগেুলো। এছাড়া বহু বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে লাইসেন্স নবায়ন করতে নোটিশ দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধন নবায়ন না করলে এবং সংশোধন না হলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ করে দেয়া হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মীর মোবারক হোসাইন বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রাত ১০টার পর বন্ধ থাকবে: ডিএসসিসি
সরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষক ও আসনসংখ্যা বাড়ানো হবে
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষক এবং আসনসংখ্যা আরও বৃদ্ধি করবো, যাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিনা পয়সায় ডাক্তারি শিক্ষা লাভ করতে পারে৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে দেশের হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম সংক্রান্ত এক সভা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন:শিগগিরই ৫-১২ বছরের শিশুরা করোনা টিকা পাবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আসন বাড়াচ্ছি। বেসরকারিতে সিট সাড়ে ছয় হাজারের মতো আছে। আর সরকারি মেডিকেল কলেজে সিট আছে সাড়ে চার হাজারের মতো। আমরা সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে গত তিন বছরে প্রায় ১২'শ সিট বাড়িয়েছি। এছাড়া আমরা আমাদের মেডিকেল কলেজের শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, নার্সিংয়ের শিক্ষা, ম্যাটস আইএইচটি-এ সবগুলোর বিষয়ে আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি যে আমাদের শিক্ষকের হার খুব কম। প্রফেসর যা প্রয়োজন তার তুলনায় বাংলাদেশে বর্তমানে অর্ধেক আছে। আমরা এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। নতুন নিয়োগের মাধ্যমে, পদোন্নতি দিয়ে এবং ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে আমরা এটি পূরণ করার চেষ্টা করবো। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একটা নির্দেশনা আছে, গবেষণায় গুরুত্ব দেয়া৷ গবেষণা আমাদের দেশে খুব কম হয়। তাই আমরা এখন গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি৷
আরও পড়ুন:ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই টিকা পাবে শিশুরা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
হৃদরোগে আক্রান্ত ৯২ শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিল কাতার চ্যারিটি
জন্মগতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত ৯২ গরীর ও অসহায় শিশুর বিনামূল্যে অপারেশন হয়েছে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে।
আর্ন্তজাতিক দাতব্য সংস্থা কাতার চ্যারিটির অর্থায়নে গত ১৩ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী মেডিকেল ক্যাম্পে শিশুদের এই ব্যয়বহুল অপারেশন হয়। কাতার থেকে আসা একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল এই মেডিকেল ক্যাম্পে অংশ নেয়।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলোজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার জানান, ‘ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার পুরোপুরি অর্থায়ন করেছে কাতার চ্যারিটি। ৯২ শিশুকে হৃৎপিনণ্ডে ছিদ্রজনিত কারণে প্রয়োজনীয় ডিভাইস দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
তিনি বলেন, ‘এসব শিশুরা খুবই দরিদ্র পরিবারের। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা বহন করার কোন সামর্থ্যই তাদের পরিবারের ছিল না। কাতার চ্যারিটি দরিদ্র এই পরিবারগুলোর সন্তানদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।’
কাতার চ্যারিটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ড.আমিন হাফিজ ওমর বলেন, ‘জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা কার্যক্রমে বিভিন্ন দেশের প্রখ্যাত শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, টেকনোলোজিস্ট ও অ্যানেসথেটিস্টরা অংশ নিয়েছেন। খুব শিগগিরই এসব শিশু পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে।’
প্রতিবছরই এই হেলথ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন:উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
টেক্সট নেক সিন্ড্রোম: অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলাফল
স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে চার ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন ই-মেইল পড়তে, টেক্সট পাঠাতে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ চেক করতে। সব মিলিয়ে যার পরিমাণ বছরে প্রায় ৭০০ থেকে ১৪০০ ঘন্টা। সম্প্রতি এই বিষয়টি এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে যে মার্কিন কাইরোপ্র্যাক্টর ডিন ফিশম্যান এটিকে একটি স্বতন্ত্র স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে ‘টেক্সট নেক সিন্ড্রোম’- নাম দিয়েছেন।
টেক্সট নেক সিন্ড্রোম মুলত প্রচণ্ড ঘাড় ব্যথার পুনরাবৃত্তি, যা দীর্ঘ সময় ধরে মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে রাখার জন্য ঘটে থাকে। এই অবস্থাটি ‘টার্টল নেক পশ্চার’, ‘অ্যান্টেরিয়র হেড সিন্ড্রোম’ এবং ‘টেক নেক সিন্ড্রোম’ নামেও পরিচিত। এই আসুন অভিনব এই স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক:
টেক্সট নেক সিন্ড্রোমের কারণ
টেক্সট নেক সিন্ড্রোম মোবাইলের মাধ্যমে ম্যাসেজ পাঠানোর সঙ্গে যুক্ত হলেও এটি বর্তমানের যে কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যেমন ট্যাবলেটে সম্পাদিত বিভিন্ন কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর মধ্যে আছে- ওয়েব ব্রাউজ করা, গেম খেলা বা কোন ডাটা প্রসেস করা। এ সময় স্বাভাবিক ভাবেই মাথা একটু সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে। টিভি এবং কম্পিউটারের তুলনায় স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের স্ক্রিনগুলো দেখার জন্য সাধারণত টেবিল বা হাতে কাছাকাছি নিয়ে নির্দিষ্ট কোণে মাথা বাঁকা করতে হয়।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
বর্তমানের টাচস্ক্রিন সেটগুলো কাঁধ এবং মাথাকে আরও সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে আনে। স্মার্টফোনে ওয়েব ব্রাউজিং বা ভিডিও দেখার তুলনায় ম্যাসেজ করার সময় মাথার ভঙ্গি বেশি থাকে। ম্যাসেজ করার ক্ষেত্রে বেশি সময় ধরে দুই হাতের ব্যবহার এবং আঙুলগুলো স্ক্রিনে স্পর্শ করে রাখার দরকার পড়ে। এর ফলে স্মার্টফোন ব্যবহারকারিকে নিজের কাঁধ আরও সামনের দিকে বাঁকা করে রাখতে হয়।
এছাড়া কিন্ডেলে বই পড়া, কিচেনে থালা বাসন ধোয়া, ঘর ঝাড়ু দেয়া প্রভৃতি কাজও মাথা কাত করতে বাধ্য করে। এখানে সময়টা গুরুত্ব বিষয়, কেননা, স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটগুলো সাধারণের থেকে অনেক বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা হয়। এমনকি এই দীর্ঘ সময়টাতে ব্যবহারকারিরা তাদের অবস্থানও পরিবর্তন করেন না। ফলে শরীর তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও পেশীর প্রয়োজনীয় নড়াচড়া থেকে বঞ্চিত হয়। এটি শরীরের নির্দিষ্ট অংশে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার দরুণ নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতা সৃষ্টি হয়।
যখন মাথা ১৫ ডিগ্রি সামনে কাত হয়, ঘাড়ের ওপর তখন ২৭ পাউন্ড ভর চাপে, ৩০ ডিগ্রি হলে ৪০ পাউন্ড, ৪৫ ডিগ্রির বেলায় ৪৯ পাউন্ড এবং ৬০ ডিগ্রির ক্ষেত্রে চাপটা ৬০ পাউন্ডে ওঠে যায়। ঘাড়ের এই বাড়তি চাপটা বুঝার জন্য ৮ বছর বয়সী কোন বাচ্চাকে দুই থেকে চার ঘন্টা ধরে ঘাড়ে নিয়ে চলার কথা কল্পনা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
টেক্সট নেক সিন্ড্রোমের লক্ষণ
স্মার্টফোন ব্যবহার করার সময় তাৎক্ষণিকভাবে উপরের পিঠ বা ঘাড়ে ব্যথা অনুভূত হবে। দিনের শেষ ভাগে বা রাতে ঘুমাতে যাবার সময় ঘাড়ে বা কাঁধে তীব্র ব্যথা বাড়তে থাকবে। সাধারণত প্রাথমিকভাবে কাঁধে হাল্কা ব্যথা এবং চাপের মাধ্যমে এই ব্যথা তীব্রতার দিকে এগিয়ে যায়। নিচের দিকে তাকালে বা কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মাঝে মাঝে অথবা ক্রমাগত মাথাব্যথা হবে। ধীরে ধীরে এই ব্যথা অসহনীয় হয়ে উঠবে। কোন একটি নির্দিষ্ট ভঙ্গিমায় দাড়িয়ে থাকতে সমস্যা হবে। এমনকি দাঁড়ানো অবস্থা, কোন এক দিকে ঝুঁকে পড়া বা নড়াচড়াতেও সমস্যা হবে।
টেক্সট নেক সিন্ড্রোমের স্বাস্থ্য ঝুঁকি
দীর্ঘক্ষণ সামনের দিকে ঝুঁকে থাকলে মেরুদণ্ড, ঘাড় ও কাঁধের পেশী এবং আনুষঙ্গিক অস্থি বন্ধনীগুলো বাঁকা হয়ে যেতে পারে। চরম পর্যায়ে ঘাড় এবং কাঁধ বরাবর পেশীগুলোর ন্যূনতম ব্যথা হাড় বা মেরুদণ্ডের ডিস্কের অবক্ষয় করতে পারে। এ অবস্থায় হাত দিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সমস্যা হতে পারে। এমনকি কাজ ছাড়া অবস্থাতেও বাহুর ব্যথা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। ব্যথা তীব্রতায় রূপ নিলে ঘাড় বরাবর মেরুদণ্ড বা স্নায়ু অবশ বা অসাড় হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে করণীয়
টেক্সট নেক সিন্ড্রোমের প্রতিকার
মোবাইল ফোন ব্যবহারে সতর্কতা
স্মার্টফোন সহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করার সময় শরীরের ভঙ্গিমা এবং ব্যবহারকারির ডিভাইস ব্যবহারের আচরণকে সামঞ্জস্য করার মাধ্যমে এই জটিলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। ঘাড়কে মেরুদণ্ড বরাবর যতটা সম্ভব সমান রাখার চেষ্টা করা উচিত। খেয়াল রাখতে হবে কাঁধ যেন কুঁচকে না যায় এবং পিঠ বাঁকা না থাকে।
দীর্ঘ সময়ের জন্য ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পরপর শরীরের ভঙ্গিমা পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে। ম্যাসেজ করা বা অন্য যে কোন কাজ করা হোক না কেন, চেষ্টা করতে হবে মোবাইল ডিভাইসটিকে একদম চোখের সঙ্গে একই স্তরে ধরে রাখা। একটু নিচে বা ওপরে কোন কোণ করে নয়; একদম ঘাড় সোজা রেখে চোখের দৃষ্টি বরাবর। কিছুক্ষণ পরপর চিবুকটি সোজা রেখে কাঁধের ব্লেডগুলো পিছনের দিকে বৃত্তকারে ঘোরোনো অনুশীলনটা করা যেতে পারে।
প্রতি ১৫ মিনিট পর মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারে বিরতি নিতে হবে। শরীরের ভঙ্গিমা এমনকি পুরো অবস্থান পরিবর্তন করা যেতে পারে। বাচ্চাদের জন্য ডিভাইসটিকে হাতে বা মেঝেতে না রেখে টেবিলে বাচ্চাদের চোখের সামনাসামনি রাখা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ঢাকার কোথায় ভালো পরিবেশে সাঁতার শেখা যায়
সঠিক শয়ন পদ্ধতি
মেঝে বা শক্ত পৃষ্ঠে পিঠ দিয়ে শুতে হবে। ঘাড়ের নিচে একটি পরিপাটি করে ভাঁজ করা তোয়ালে রাখতে হবে, যাতে করে ঘাড় একটি আরামদায়ক মঞ্চ পায় আর চিবুকটা একটু উঁচু হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বালিশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একটি স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য শয়নের পদ্ধতিটি আরামদায়ক হতে হয় তাই এখানে অবশ্যই আরামপ্রদ অবস্থাকে গুরুত্ব দিতে হবে। শরীরের ভঙ্গিমাকে সুস্থ ঘুমের অনুকূলে রাখতে বালিশের বিকল্প নেই।
হাঁটুর কাছে পা বাঁকা করে রাখতে হবে এবং শরীরের পাশে দুই হাত সমান ভাবে ফেলে রাখতে হবে। উপুর হয়ে শোয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যে কোন এক পাশ বা চিত হয়ে ঘুমানো প্রায়শই পিঠের ব্যথা উপশমের জন্য সহায়ক। যে কোন এক পাশ ফিরে ঘুমানোর সময় পায়ের মাঝে কোল বালিশ রাখা যেতে পারে। চিত হয়ে ঘুমানোর ক্ষেত্রে হাঁটুর নিচে বালিশ রাখা যেতে পারে।
সঠিক ভাবে বসার ভঙ্গিমা
দুই পা সমান ভাবে পাশাপাশি মেঝেতে রাখতে হবে। পা মেঝে অব্দি না পৌঁছলে সমান ভাবে পাশাপাশি মুক্ত ভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। তবে গোড়ালি সহ পায়ের পাতা হাঁটু থেকে একটু সামনে রাখা উত্তম। কিন্তু কোন ভাবেই পায়ের ওপর পা তুলে, বা ক্রস আকৃতিতে রাখা যাবে না। হাঁটুর পশ্চাৎ ভাগ চেয়ারের সঙ্গে একদম ঠেস দিয়ে রাখা যাবে না। হাঁটুর পিছন এবং আসনের মধ্যে অল্প একটু ফাঁক রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
হাঁটু এবং কোমড়ের মাঝে ৯০ ডিগ্রী কোণ রাখা একটি স্বাস্থ্যকর বসার উপায়।
পিঠের নিচ থেকে শুরু করে মধ্য ভাগ পর্যন্ত চেয়ারের সঙ্গে যুক্ত রাখতে হবে। মাঝে ফাঁক রেখে হেলান দিয়ে থাকা যাবে না। কাঁধকে শিথিল রাখতে হবে এবং দুই হাতের কনুই থেকে হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত অংশকে মাটির সমান্তরালে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে সঠিক ভাবে বসার অনুকূলে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ আসন বাছাই করা আবশ্যক। তবে দীর্ঘ সময় ধরে একই অবস্থানে বসে থাকা যাবে না।
সঠিক ভাবে দাড়ানোর ভঙ্গিমা
প্রাথমিকভাবে পায়ের আঙ্গুলের অংশের ওপর দেহের ওজন ফেলতে হবে। হাঁটু সামান্য বাঁকিয়ে রাখা ভালো। কাঁধের প্রস্থের সমান দূরত্ব রাখা উচিত দু’পায়ের মাঝে। কাঁধ পিছনে টান দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। দেহের ওজন পায়ের আঙ্গুল থেকে পেছনে হিল পর্যন্ত স্থানান্তর করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে দাড়িয়ে থাকার ক্ষেত্রে এক পা থেকে অন্য পায়ে ভর স্থানান্তর করা উচিত।
আরও পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
পরিশিষ্ট
মোবাইল ফোন নিঃসন্দেহে জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার যে কোন নেশাজাত দ্রব্য অতিরিক্ত সেবনের থেকে কম কিছু নয়। তাছাড়া এখানে মানুষ ও যন্ত্রমানবের পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে নিরূপণ করা যায়। রোবট দীর্ঘ সময় ধরে একটি কাজ কোন সমস্যা ছাড়াই করে যেতে পারে। কিন্তু মানুষের বিরতি প্রয়োজন হয়, প্রয়োজন হয় হাওয়া বদলের এবং দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও পেশীগুলো সঞ্চালনের।
মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় সামনের দিকে ঝুঁকে থাকার প্রবণতা ‘টেক্সট নেক সিন্ড্রোম’ বা আরো জটিল ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই কাজ ও সময় থেকেও অধিক যত্নশীল হওয়া উচিত স্বাস্থ্যের প্রতি। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে তবেই সময়গুলোকে কাজে ভরিয়ে দিয়ে ফলপ্রসূ করে তোলা যাবে।
ইউনাইটেড হসপিটালে হেপাটাইটিস দিবস পালিত
সারা বিশ্বে ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালিত হয়। এবছর এই দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- হেপাটাইটিস নির্মূলের এখনই সময়।
বিশ্বে প্রায় ৩৩ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতি ১০ জনের ৯ জন জানেনই না,তারা হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাসে আক্রান্ত। এছাড়া হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন মারা যাচ্ছেন। লিভার ক্যানসার ও সিরোসিসের প্রধান কারণ হচ্ছে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে প্রায় এক কোটি মানুষ আক্রান্ত। বেসরকারি হিসাবে হেপাটাইটিসে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় দেশে। কাজেই এই রোগ থেকে বেঁচে থাকার সহজ উপায়গুলো প্রতিদিন মেনে চললে এই রোগ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। এই জন্য জনসচেতনতা প্রয়োজন। আর জনসচেতনতার লক্ষ্যে হসপিটালে আগত রোগী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য, ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড (ইউএইচএসএল)- এর ডিরেক্টর মেডিকেল সার্ভিসেস ডা. মাহবুব উদ্দিন আহমেদ চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে হসপিটাল লবিতে একটি হেলথ চেক বুথ উদ্বোধন করেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন ইন্টারভেনশনাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট এবং হেপাটোলজিস্ট, ইউনাইটেড গ্যাস্ট্রোলিভার সেন্টার এর ডিরেক্টর ডা. এ কিউ এম মোহসেন এবং সিনিয়র কনসাল্টেন্ট ডা. মাহবুব আলম। এ সময় বক্তারা ইউনাইটেড হসপিটালের এডভান্সড টেকনোলজি সম্পন্ন গ্যাস্ট্রোলিভার সেন্টার ও ইউনাইটেড হসপিটালের হেপাটাইটিস প্যাকেজ এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ক্যাপসুল এন্ডোসকপি সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন। অনুষ্ঠানে হেপাটাইটিস দিবস নিয়ে জনসচেতনতার লক্ষ্যে বেশ কিছু দিক তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে ইউনাইটেড হসপিটাল সপ্তাহব্যাপী সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যার মধ্যে বিভিন্ন ক্লাবে ও কর্পোরেট হাউসে সচেতনতামূলক সেমিনার ও অনলাইন সেমিনার কার্যক্রম এবং বিভিন্ন টেলিভিশনে আলোচনা সভায় ইউনাইটেড হসপিটালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা উপস্থিতি ও পরামর্শ প্রদান করছেন।
আরও পড়ুন: ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি পেলো বঙ্গভ্যাক্স
‘মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে ৪৫ শতাংশ গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়’
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি পেলো বঙ্গভ্যাক্স
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) দেশি কোম্পানি গ্লোব বায়োটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে।
রবিবার ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সালাউদ্দিন ইউএনবিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) প্রথম ধাপের এই ট্রায়াল হবে।
বিএসএমএমইউ-এর হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব এই ট্রায়ালের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
অনুমোদন দিয়ে ডা. মামুনকে পাঠানো ডিজিডিএ এর দেয়া চিঠি অনুসারে, গবেষণা প্রটোকলটি ডিজিডিএ কর্তৃক অনুমোদনের তারিখ থেকে এক বছরের জন্য অনুমোদিত হবে।
বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের পরে এমআরএনএ ভ্যাকসিন সক্ষমতা নিয়ে বিশ্বের নয়টি দেশের অভিজাত গ্রুপে যোগ দিলো।
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড দাবি করেছে, ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সহ কোভিড-১৯ এর ১১টি রূপের সঙ্গে লড়াই করার জন্য বঙ্গভ্যাক্স ১০০ শতাংশ কার্যকর।
গত বছরের ১৭ জানুয়ারি গ্লোব বায়োটেক, একমাত্র বাংলাদেশি কোম্পানি যেটি করোনা টিকা তৈরির চেষ্টা করছে, বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার জন্য অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) কাছে একটি আবেদন জমা দেয়।
২৩ নভেম্বর বিএমআরসি বঙ্গভ্যাক্সকে মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়।
গ্লোব বায়োটেক ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর টিকা তৈরির লাইসেন্স পায়।
বিএমআরসি, যারা এই ধরনের সমস্ত ট্রায়ালের তত্ত্বাবধান করে, গত বছরের জুনে কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি পাওয়ার আগে এ শর্তগুলো পূরণ করতে হয়।
মূল শর্ত ছিল গ্লোব বায়োটেককে প্রথমে বানর বা শিম্পাঞ্জির ওপর ট্রায়াল চালাতে হবে।
সেই সময়ে সংস্থাটির চিহ্নিত বাধাগুলির মধ্যে একটি ছিল যে দেশে কোনও তৃতীয় পক্ষের ক্লিনিক্যাল গবেষণা সংস্থা (সিআরও) ছিল না যা প্রাণীর ওপর এই জাতীয় পরীক্ষা পরিচালনা করতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘বঙ্গভ্যাক্স’ মানবদেহে ট্রায়ালের অনুমোদন
শর্ত পূরণ করলে ‘বঙ্গভ্যাক্সের’ ট্রায়ালের অনুমতি: বিএমআরসি
তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
গ্রীষ্ম শুরুর পর থেকে প্রতিটি দিন পূর্বাপেক্ষা বেশি দাবদাহ নিয়ে হাজির হয়। জুলাইয়ের শুরুতে তা নিতান্ত প্রকট আকার ধারণ করে। এমনকি এই মাত্রা প্রতি বছর বেরেই চলেছে। তাই গরমের এই তীব্রতা আগের তুলনায় অধিক গুরুত্ব সহকারে নেওয়া আবশ্যক। তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মকভাবে ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাপের সংস্পর্শে আশা ব্যক্তির শরীরের বাইরের অংশের সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভেতরের প্রত্যঙ্গগুলোও। জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই এই বিপজ্জনক তাপের সংস্পর্শে থাকতে হয়। অসহনীয় গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচবার জন্য করণীসমূহ নিয়েই আজকের স্বাস্থ্য কথন।
প্রচন্ড গরমে হিট স্ট্রোক এড়িয়ে চলার উপায়
শরীরকে যথেষ্ট পরিমাণে হাইড্রেটেড রাখা
সঠিকভাবে হাইড্রেটেড থাকা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যাদের খুব বেশি ঘরের বাইরে থাকার প্রয়োজন হয়, তাদের শরীরকে ভালভাবে হাইড্রেটেড করে বাইরে বের হওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে। এখানে নিছক এক গ্লাস পানি পান যথেষ্ট নয়। সারা দিন হাইড্রেটেড থাকা মানে সাথে সব সময় পানির বোতল রাখতে হবে।
যখনি ঘামের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তখনি সাথে সাথে স্পোর্টস ড্রিঙ্কে চুমুক দেয়া উচিত। এতে ঘামের কারণে শরীরের হারিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রোলাইটগুলোকে পুনরায় পূরণ করা যায়। পানি পানের সাথে এমনভাবে অভ্যস্ত হতে হবে যে, পানির পিপাসা পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না।
পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
উষ্ণ মৌসুমের উপযুক্ত পোশাক পরিধান
মৌসুম অনুযায়ী পোশাক পরিধানটা সুস্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতার জন্য খুবই দরকারি। আঁটসাঁট, রঙিন এবং একাধিক স্তরের মোট পোশাক শরীর থেকে ঘামকে বাষ্পীভূত করা কঠিন করে তুলতে পারে। ফলে শরীরের অতিরিক্ত তাপ মুক্তি বাধাগ্রস্ত হয়। আশপাশের অপরিবর্তিত আর্দ্রতা শরীরে ঘামের হওয়ার প্রবণতাকে বাড়াতে থাকে। পোশাক এমনিতেই গরম থাকে আর ঘাম কাপড়কে আর্দ্র করে উষ্ণতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে শরীরের তাপমাত্রা ভারসাম্য হারিয়ে কেবল অস্বস্তি বাড়াতে থাকে।
তাই প্রচন্ড গরম আবহাওয়াতে সাদা, অথবা যে কোনো হাল্কা রঙের এবং সুতি ফেব্রিকের কাপড় পড়া উচিত। এতে শরীরের অতিরিক্ত তাপ বের করে দিতে সুবিধা হয়। মুখমন্ডল রক্ষার জন্য একটি চওড়া হ্যাট পরা উত্তম।
শরীরের উন্মুক্ত জায়গাগুলোকে সূর্য থেকে বাঁচানোর জন্য প্রচুর ঘাম-প্রতিরোধী সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
পড়ুন: মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
অতিরিক্ত গরম স্থান থেকে দূরে থাকা
প্রচন্ড গরমের সময় সব জায়গাতেই তাপের ভয়াবহতা বিরাজ করে। এরপরেও যতটা সম্ভব তীব্র তাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা শরীরকে স্বাভাবিক রাখার কার্যকরি উপায় হতে পারে। ইঞ্জিনযুক্ত যে কোন গাড়ি তাপের এক বিরাট উৎস। তাই যতটা পারা যায় এ ধরনের যানবাহনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত। হোক সেটা ইঞ্জিন চালুরত অথবা পার্ক করা, উভয় ক্ষেত্রেই গাড়িটি বিপজ্জনক।
রাস্তা দিয়ে হাটার সময় ছায়ার নিচ দিয়ে চলাচল করা উচিত। যতটা সম্ভব অতিরিক্ত ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। সম্ভব হলে দিনের অধিকাংশ সময় বিশেষ করে উষ্ণতম সময়গুলো তথা- দুপুরবেলায় বাড়ির ভিতরে থাকতে হবে। সারাটা সময় বাইরে থাকতে হলে ঘন ঘন বিরতি নিয়ে কাজ করতে হবে।
ঘরের ভেতরে থাকার ক্ষেত্রে ঘরটাকেও ঠান্ডা রাখার কথা বিবেচনা করা উচিত। টেবিল ফ্যানের সামনে কতগুলো বরফ রেখে এবং ভেজা কাপড় দিয়ে ঘরের মেঝে মুছে ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা যেতে পারে। রান্নার সময় এক্সস্ট ফ্যান চালিয়ে রাখা আবশ্যক।
পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত খাবার ও জীবন ধারণ পদ্ধতি
ভারী খাবার এড়িয়ে চলা
যে কোন খাবার গ্রহণের সময় শরীরের তাপ তৈরি হয়। খাবারে পরিমাণের সাথে সমানুপাতিক হারে শরীরে তাপের যোগান হতে থাকে। তাই দুপুর এমনকি রাতের খাবারও যারা ভরপেট খান তাদেরকে সাবধান হতে হবে। ছায়ায় বা ফ্যানের নিচে বসে খাওয়া-দাওয়া করলেও এর ব্যতিক্রম হয় না। এই তাপ বৃদ্ধিটা ভেতর থেকে শরীরকে জ্বালিয়ে দিতে থাকে।
খাবারের পর হেটে হেটে হজমের চিন্তা করলেও লাভ নেই। উল্টো হাটার ফলে শরীরের তাপ আরো বেড়ে যাবে। আবার অনেক কম খাবার খাওয়া শরীরকে দুর্বল করে তুলবে। তাই কোন এক বেলা একদম ভরপেট খাবার না খেয়ে অল্প করে ৩ ঘন্টা পর পর খাবার খাওয়া যেতে পারে। এতে শরীরে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকবে।
জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া
প্রচন্ড গরমের কারণে অনেক সুঠাম দেহের অধিকারিও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারে। এগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি, প্রচন্ড মাথাব্যথা প্রভৃতি লক্ষণগুলো গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও রয়েছে হঠাৎ বিভ্রান্তি বা হ্যালুসিনেশন, হাঁটতে অসুবিধা, খিঁচুনি এবং মূর্ছা যাওয়া।
পড়ুন: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
এ অবস্থায় অতিরিক্ত গরম কমানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হলে হিট স্ট্রোক চরম আকার ধারণ করতে পারে। এমনকি খুব খারাপ অবস্থায় এটি জীবনের জন্য হুমকিতে পরিণত হয়। এতে মস্তিষ্কসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষতি সাধন হতে পারে। তাই হিট স্ট্রোকের এই অবস্থায় অবশ্যই অবিলম্বে ডাক্তারের সরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
প্রচন্ড গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় খাবার
ফলের সালাদ
শরীরে খাবারের চাহিদা, মুখে স্বাদের ভিন্নতা এবং শরীরকে পুনরায় হাইড্রেটিং-এর জন্য সেরা খাবার হচ্ছে ফলের সালাদ। বিভিন্ন রসাল ফলের ককটেল দারুণ একটি খাবার হতে পারে ব্রেকফাস্ট অথবা সন্ধ্যার স্ন্যাকসে।
তরমুজে পানির পরিমাণ শতকরা ৯০ ভাগ, কমলায় ৮৭ ভাগ, আর শসাতে ৯৫ ভাগ।
পড়ুন: কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
এক কাপ শসার টুকরোতে মাত্র ১৬ ক্যালোরি থাকে, যা ভারী খাবারের ঝামেলা থেকে অনেক অনেক দূরে। আপেল গরমের মাসগুলোতে দেহকে সতেজ রাখার গ্যারান্টিযুক্ত।
টমেটো শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু খাবারই নয়, এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। টমেটোতে থাকা লাইকোপিন মুলত একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এই ফলগুলোর সংমিশ্রণে তৈরি স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ডিশ-ই যথেষ্ট গরমের অস্বস্তির সাথে যুদ্ধ করতে।
পাতাযুক্ত সবুজ শাক
পালং শাকের মত এক গাঢ় সবুজ শাকেই পানি আছে শতকরা ৯২ ভাগ। এটি যা ঘামের মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যাওয়া ভিটামিন এবং ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মত খনিজের ঘাটতি পূরন করে। পুদিনা আরও প্রাণবন্ত ভেষজগুলোর মধ্যে একটি। তাজা পুদিনা কয়েক শতাব্দী ধরে গরম আবহাওয়ায় মানুষকে শীতল করতে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। কখনো চা-এ বা ঠান্ডা পানীয়তে কখনো বা সালাদে অভিজাত উপস্থিতি পাওয়া যায় এই পাতাটির।
পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
ডাবের পানি
ডাবের পানি ইলেক্ট্রোলাইট দিয়ে ভরা থাকে যা শরীরকে হাইড্রেটেড এবং ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এই পাওয়ার পানীয়টি তাপকে পরাস্ত করে সারাদিন ধরে শরীরকে সক্রিয় রাখে। এটি হজম ক্ষমতা বাড়াতেও কাজে লাগে। গরমের সময়ে পাকস্থলি সংক্রান্ত জটিলতায় অনেককে হরহামেশাই ভুগতে দেখা যায়।
মাছ
মাংসের উপর নির্ভর না করে ডায়েটে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে মাছের রাখা উত্তম। ভাল ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ মাংসের একটি উপযুক্ত বিকল্প। এটি আহারের পর কম তাপ উৎপন্ন করে, তাই অস্বস্তিকরভাবে ভরপেট বোধ হবে না, যা সাধারণত মুরগি এবং গো-মাংস খাবারের সময় অনুভূত হয়।
দই
দই গরমের সময় জনপ্রিয় কারণ এতে জলের পরিমাণ বেশি এবং শীতল প্রভাব রয়েছে। দই অন্ত্রের উপকারি ব্যাকটেরিয়ার অনূকুলে থাকে, যা শরীরকে খাদ্যের বিষক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। উষ্ণ মৌসুমে ঘরের বাইরে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বেড়ে যায়। এখানে দই একটি প্রতিরোধী খাবার হিসেবে কাজ করে।
পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এই মিষ্টান্নটি প্রচন্ড উষ্ণতায় ঠান্ডা পানীয়ের বিকল্প হিসেবে কার্যকরি ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন বি এবং অন্ত্র-বান্ধব ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ দই শরীরকে ভেতর থেকে প্রশান্তি দেয়। বিভিন্ন ফলের সাথে মিশিয়ে দইয়ে দারুণ স্বাদ যোগ করা যেতে পারে।
পরিশিষ্ট
প্রচন্ড দাবদাহে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে উপরোক্ত উপায়গুলো অনেকটাই স্বাস্থ্যের অনুকূলে আসতে পারে। যদিও মানুষ সৃষ্ট কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতার দরুণ প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নিজের ও আশেপাশের মানুষগুলোর সুরক্ষায় প্রত্যেকেরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। বিশেষ করে যারা তুলনামুলক ভাবে বেশি ঝুঁকিতে আছেন তাদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। এদের মধ্যে আছেন শিশু, বৃদ্ধ, স্থুলকায় ব্যক্তি এবং বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় অসুস্থ মানুষেরা। পারস্পরিক যত্নশীল হওয়ার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তীব্র গরমে দুর্ভোগকে কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে।
পড়ুন: গরমকালে কম খরচে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন?
উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রা অপেক্ষা বেশি হয়ে থাকে। প্রতিটি মানুষের নিত্য-নৈমিত্তিক কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে তার রক্তচাপের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এই পরিবর্তন কখনো এতটাই জটিল আকার ধারন করে যে, মানবদেহের ভেতরে ধমনীর প্রাচীরে দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত রক্তচাপের সৃষ্টি হয়। একটি স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা প্রতি পারদ চাপে ১২০/৮০ মিলিমিটারের মধ্যে থাকে। রক্তচাপকে এই মাত্রার মধ্যে রাখার জন্য কিছু কিছু খাবার ও পানীয়ের পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর অভ্যাস পরিত্যাগ করা জরুরি। চলুন, সেই করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
উচ্চ রক্তচাপে যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত
লবণযুক্ত খাবার
উচ্চ রক্তচাপে সবচেয়ে ক্ষতিকর ভূমিকা হচ্ছে লবণের, যার প্রধান উপাদান সোডিয়াম। বেশিরভাগ চিপস, ক্র্যাকার এবং পপকর্ন সোডিয়ামে ভরপুর থাকে। ১-আউন্স প্লেইন পটেটো চিপসে সোডিয়ামের পরিমাণ প্রায় ৫০ থেকে ২০০ মি.গ্রা. (মিলিগ্রাম)। একজন প্রাপ্তবয়স্কের দিনে ২,৩০০ মি.গ্রা. বা এক চামচের বেশি সোডিয়াম খাওয়া উচিত নয়। এছাড়াও যে লবণযুক্ত খাবারগুলো প্রায় খাওয়া হয় সেগুলো হলো- রুটি, পনির পিজা, স্যান্ডউইচ, প্রোসেস করা মাংস, স্যুপ, এবং টাকোস।
আরো পড়ুন: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
চিনিযুক্ত খাবার
রক্তচাপ বাড়ানোর পেছনে কোন কোন ক্ষেত্রে চিনিযুক্ত খাবার লবণের চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। চিনি প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের ওজন বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বাড়ায়। এছাড়া উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ যুক্ত খাবার রক্তচাপ বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ। এধরনের খাবারের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত মিষ্টি, বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত খাবার, পিনাট বাটার অন্যতম।
ট্রান্স বা স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার
একজন প্রাপ্তবয়স্কের জন্য নির্ধারিত দৈনিক ক্যালোরির ৫ থেকে ৬ শতাংশের বেশি ক্যালোরি স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে আসা উচিত নয়। এধরনের খাবার এখন খুব বেশি দেখা যায় আর এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।
মিষ্টি খাবারের মধ্যে চকোলেট, টফি, কেক-পেস্ট্রি, পুডিং, এবং বিস্কুটে অনেক স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। লাল মাংস যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষে মাংস, আর প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন সসেজ, বার্গার এবং কাবাবের মধ্যে এ ধরনের ফ্যাট প্রচুর পরিমাণে থাকে। রান্নার চর্বি যেমন মাখন, ঘি, হাসের চর্বি থেকেও এই ফ্যাট আসে। এছাড়া তেলের মধ্যে আছে নারকেল তেল এবং পাম তেল আর পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য, যেমন ক্রিম, দুধ, দই এবং পনিরও এধরনের খাবারের অন্তর্ভূক্ত।
আরো পড়ুন: হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে করণীয়
সস এবং মশলাদার খাবার
যারা অতিরিক্ত মশলাদার খাবার পছন্দ করেন তাদেরকে সাবধান হতে হবে। অতিরিক্ত মশলা মানেই উচ্চ পরিমাণে চিনি বা সোডিয়ামের যোগান। অনেক সময় নোনতা স্বাদের না হওয়া সত্ত্বেও মশলাগুলোতে সোডিয়াম ভরপুর থাকতে পারে। বেশিরভাগ টিনজাত টমেটো সস ও কেচাপ, পাস্তা সস, টমেটোর রস, চিলি সস, ও সয়া সসে সোডিয়াম বেশি থাকে।
আচারযুক্ত খাবার
আচারযুক্ত খাবার লবণের একটি ভালো উৎস। আচার তৈরির প্রক্রিয়াটাই এমন যে, এখানে খাবার লবণের সাথে অন্যান্য স্বাদ বর্ধক উপাদান মিশিয়ে খাবার সংরক্ষণ করা হয়। এই কারণে আচারযুক্ত খাবারে প্রায়শই লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। তাছাড়া খাবার লবণ যে কোন খাবারকে ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং এর মাধ্যমে খাবারটি দীর্ঘ সময় ধরে খাবারের উপযুক্ত থাকে। যাদের প্রায় আচার খাওয়ার অভ্যেস তাদের উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বেশি।
আরো পড়ুন: মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
উচ্চ রক্তচাপে যে পানীয়গুলো এড়িয়ে চলা উচিত
ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়
ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন কফি, সোডা এবং এনার্জি ড্রিংক্স শরীরে অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণের মাধ্যমে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। অনেকেরই সাত সকালে ক্যাফেইন নেয়ার অভ্যেস আছে। এ বিষয়টি তাদের খেয়াল রাখা উচিত যে ক্যাফেইন গ্রহণটি নিমেষেই আসক্তিতে পরিণত হতে পারে।
আর ইতোমধ্যে যারা কফির প্রতি আসক্ত তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য এখনি সাবধান হতে হবে। কেননা এক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের ঘটনাগুলো প্রথমে অস্থায়ী থাকে তারপর ধীরে ধীরে জটিল সমস্যার সৃষ্টি করবে। সারাদিনে একবার এক কাপ কফি তেমন ক্ষতিকর কিছু নয়। তবে কফি দিয়ে দিন শুরুর পর দুপুরের খাবারের সাথে ক্যাফেইনযুক্ত সোডা এবং বিকেলে এনার্জি ড্রিংক নেয়া সব মিলিয়ে দিনটিতে বিপজ্জনক মাত্রার ক্যাফেইন সরবরাহ করতে পারে।
চিনিযুক্ত পানীয়
লেবুর শরবতে হালকা চিনি তেমন ক্ষতিকর নয়। এমনকি সপ্তাহে দু’একবার চিনি একটু বেশি দিয়ে কোন মিষ্টি শরবত পান করাটা সমস্যা করবে না। কিন্তু শরীরে চিনির এই প্রবেশটা নিয়মিত হতে থাকলে রক্তচাপের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। এমনকি, অনেক চিনিযুক্ত পানীয়তে ক্যাফেইন থাকে, যা রক্তচাপকে অতিরিক্ত মাত্রায় বাড়িয়ে তুলতে পারে। উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপযুক্ত সোডা এবং ফলের রস এই পানীয়ের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।
আরো পড়ুন: মধু কি সত্যি অমৃত?
দোকানের স্যাকারিন দেয়া ফলের জুসগুলো সাময়িকভাবে গলা ঠান্ডা করলেও তা সামগ্রিকভাবে শরীরকে দুর্বল করে ফেলে। প্রতিদিন যে কোন কাজে বা খেলাধুলার সময় এগুলোর একটি করে পান করা শরীরে প্রচুর চিনির যোগান দেয়। ফলে বেশ স্বল্প হারে বাড়তে থাকে রক্তচাপ। এরকম মিষ্টি স্বাদের জুস বা কার্বনেটেড পানীয় দিনে ৩৫৫ মিলিলিটারের বেশি পান করা মানেই শরীরে রক্তচাপের ভারসাম্য নষ্ট করা।
অ্যালকোহল
অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন নিশ্চিত ভাবে রক্তচাপের মাত্রা ছাড়িয়ে দিতে পারে। যারা রক্তচাপ সহ অন্যান্য রোগের জন্য নিয়মিত ঔষধ খাচ্ছেন তাদের শরীরের জন্য অ্যালকোহল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। কারণ অ্যালকোহল ওষুধগুলোকে রোগ প্রতিরোধে সক্রিয় হতে দেয় না। এভাবে একসময় ঔষধগুলো কার্যকারিতা হারায়।
সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো, ঔষধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শরীরে থেকে যাওয়ার দরুণ ঔষধ খাওয়ার ফলে উল্টো হিতে বিপরীত ঘটে। এছাড়াও অনেক অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়তে চিনি এবং ক্যালোরির পরিমাণ এতটাই থাকে যে, তা অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতার কারণ হয়ে দাড়ায়। এ সবকিছু একত্রে উচ্চ রক্তচাপের দিকে ধাবিত করে।
আরো পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
উচ্চ রক্তচাপের সময় যে অভ্যাসগুলো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে
অতিরিক্ত ওজন এবং পর্যাপ্ত ব্যায়ামের অভাব
যারা নিজেদের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ভাবছেন না তাদের জন্য রক্তচাপ অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ নিয়ে আসতে পারে। একটি স্বাস্থ্যকর ওজন শুধু উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণই করে না; পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যারও সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। নিয়মিত শরীরচর্চা এরকমাত্র উপায় এই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার। একটি প্রাপ্তবয়স্ক দেহে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াই ঘন্টা মাঝারি ব্যায়ামের চাহিদা থাকে। অল্প সময়ের জন্য ম্যারাথন হাঁটা হৃদপিণ্ডের স্পন্দন দ্রুত করে এবং ফুসফুসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অক্সিজেন প্রবেশ করে।
ধূমপান
প্রতিটি সিগারেট ধূমপান শেষ করার পর কয়েক মিনিটের জন্য রক্তচাপ বাড়ায়। এভাবে ঘন ঘন ধূমপান রক্তচাপ বাড়ানোর বিরতিটাকে কমিয়ে এনে বিপদের কারণ হতে পারে। তাই বলে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ধূমপান মানে এই নয় যে সে সময়টাতে ফুসফুস আবার তার আগের সুস্থতায় ফিরে আসবে।
আরো পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
অল্প ধূমপানও ধীরে ধীরে উচ্চ রক্তচাপের অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে মারা না গেলেও জীবনের আয়ু তো কমেই; পাশাপাশি শেষ বয়সে বিধ্বস্ত ফুসফুস নিয়ে মৃত্যুর দিন গুণতে হয়। যারা কখনো ধূমপান ছাড়েন নি, তাদের চেয়ে যারা ধূমপান ত্যাগ করেন তারা বেশি দিন বাঁচতে পারেন।
দীর্ঘ সময় যাবত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকা
দুশ্চিন্তা শুধুমাত্র মানসিক সমস্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর দৈহিক প্রভাবও বেশ ভয়াবহ। সবচেয়ে বড় ফলাফল হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ। আর এটিই দেহের মধ্যে অনেক বিপজ্জনক রোগের ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে পারে। অনেকে দুশ্চিন্তার কারণে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, অ্যালকোহল পান বা ধূমপানের দিকে অগ্রসর হন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সারা দেহ উচ্চ রক্তচাপের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। জীবনের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব, বদরাগ, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাও দুশ্চিন্তার সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর কারণেও রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে মাত্রাতিরিক্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
শেষাংশ
উচ্চ রক্তচাপের সময় ক্ষতিকর খাবার ও পানীয়গুলো এড়িয়ে চললে রক্তচাপকে স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হবে । এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এই উদ্যোগকে ফলপ্রসু করতে প্রয়োজন জীবন ধারণ পদ্ধতি তথা কিছু উপরোক্ত অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করা। এ কথা অনস্বীকার্য যে, রাতারাতি সুস্বাস্থ্যের অধিকারি হওয়া সম্ভব নয়। এখানে প্রয়োজন দীর্ঘ দিনের পরিশ্রম, ধৈর্য্য ও আত্মবিঃশ্বাস। যৌবন থেকে বার্ধক্যে পদার্পণের পরেও সুস্থ দেহ ও মন নিয়ে দিন যাপনে স্বাস্থ্যচর্চার কোন বিকল্প নেই।
আরো পড়ুন: ‘মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে ৪৫ শতাংশ গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়’