স্বাস্থ্য
ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
বাংলাদেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে ডায়রিয়া রোগের ভয়াবহ রূপ নতুন নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ডায়রিয়া সংক্রমণ দেশজুড়ে শঙ্কার সৃষ্টি করছে। আইসিডিডিআরবি (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ)-এর তথ্যানুসারে, বিগত নয় দিনে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ১৬১ জন। কর্মকর্তাদের দাবি-প্রতিষ্ঠানটির ৬০ বছরের ইতিহাসে রোগীর এমন চাপ নজিরবিহীন। এমনকি হাসপাতালের বাইরেও তাঁবু টানিয়ে চিকিৎসা চলছে। বিশুদ্ধ পানির যথেষ্ট যোগান না থাকায় এবং অতি ব্যস্ততার ফলে বাসি খাবারের উপর নির্ভরশীলতা ডায়রিয়ার সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। এমন সংকটাপন্ন সময়ে সতর্ক থাকতে চলুন, ডায়রিয়া রোগের ব্যাপারে বিশদ জেনে নেয়া যাক।
কী কী কারণে ডায়রিয়া হয়
ভাইরাস
ডায়রিয়া সংক্রমণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখা ভাইরাসগুলোর মধ্যে রয়েছে নরোভাইরাস, অ্যাস্ট্রোভাইরাস, এন্টারিক অ্যাডেনোভাইরাস, ভাইরাল হেপাটাইটিস এবং সাইটোমেগালোভাইরাস। রোটাভাইরাস বাচ্চাদের ডায়রিয়ার তীব্রতার জন্য দায়ী। কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসও ডায়রিয়া সংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টির পেছনে কাজ করে।
দূষিত পানি নরোভাইরাস, অ্যাস্ট্রোভাইরাস, হেপাটাইটিস এ ভাইরাস, এবং স্যাপোভাইরাসের একটি বড় উৎস। হিমায়িত সবজি হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের বড় উৎস। নোরোভাইরাস থাকে পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি এবং তাজা ফলের মধ্যে। হেপাটাইটিস এ এবং নোরোভাইরাস সংক্রমণ অনুপযুক্ত খাদ্য পরিচালনার মাধ্যমেও হয়ে থাকে।
ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী
দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ই কোলাইয়ের মত প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবীর সংস্পর্শে আসার ফলে ডায়রিয়া হয়। দূষিত পানি ছাড়াও ই কোলাই কাঁচা বা কম রান্না করা গরুর মাংস, কাঁচা শাকসবজি এবং পাস্তুরিত দুধে থাকে।
পড়ুন: খুলনায় শিশুরোগ ও ডায়রিয়া বেড়েছে
ওষুধ সেবন
কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে যেগুলো দেহের খারাপ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলার পাশাপাশি ভালো ব্যাকটেরিয়াও মেরে ফেলে। ফলে অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটে, যা পুরো শারীরিক অবস্থাকে ডায়রিয়ার দিকে ধাবিত করে। এছাড়াও অ্যান্টি-ক্যান্সার ওষুধ এবং ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত অ্যান্টাসিড ডায়রিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী।
ল্যাকটোজ সমস্যা
ল্যাকটোজ হল দুধ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যে পাওয়া এক ধরনের চিনি। যাদের ল্যাকটোজ হজম করতে অসুবিধা হয় তাদের দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার পর ডায়রিয়া হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যাটি বাড়তে পারে, কারণ যে এনজাইমটি ল্যাকটোজ হজম করতে সাহায্য করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার মাত্রা কমতে থাকে।
ডায়রিয়ার লক্ষণসমূহ
ডায়রিয়ার প্রধান উপসর্গগুলো হল মলত্যাগের জন্য প্রচন্ড চাপ অনুভূত হওয়া, এবং ঘন ঘন পাতলা পায়খানা। এছাড়াও বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, পেটে চাপ অনুভূত হওয়া, পেট ফোলা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত অবস্থায় ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা হয়।
ডায়রিয়ার গুরুতর জটিলতা হল পানিশূন্যতা। ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে প্রয়োজনী তরলের একটি বিশাল অংশ বেরিয়ে যায়। আর এর ফলেই পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ে। পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো হলো প্রচন্ড ক্লান্তি, শুকনো শ্লেষ্মা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, মাথাব্যথা, তৃষ্ণা বৃদ্ধি, প্রস্রাব হ্রাস এবং শুষ্ক মুখ।
বাচ্চারা ডায়রিয়া এবং পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে বেশ সংবেদনশীল। এ সময় বাচ্চাদের প্রস্রাব কমে যায়, মুখ শুকিয়ে যায়, মাথাব্যথা হয়, ক্লান্ত দেখায়, কান্নার সময় চোখে পানি থাকে না, চোখ আধবোজা- আধখোলা অবস্থায় থাকে, তন্দ্রাতুর দেখায় এবং সবসময় বিরক্ত থাকে।
পড়ুন: ফরিদপুরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে
ডায়রিয়া হলে করণীয়
সাধারণ অবস্থায় ডায়রিয়া কয়েক দিনের মধ্যে চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যেতে পারে। শরীর খারাপের সময়টুকু বিশ্রামের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানীয় পান করতে হয় এবং অন্যান্য খাবারের সময় সতর্ক থাকতে হয়।
শরীরকে পানিপূর্ণ রাখার জন্য পরিষ্কার তরল পান ও ফলের রস খেতে হবে। এ সময় দিনে প্রায় ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। একবারে টান দিয়ে পুরো গলধঃকরণের পরিবর্তে অল্প পরিমাণে চুমুক দিয়ে পান করা যেতে পারে।
ডায়রিয়া হলে দেহকে পানিপূর্ণ রাখতে ডাক্তার লবণ, পটাসিয়াম এবং ক্লোরাইড-এর মত স্পোর্টস পানীয়গুলো পানের পরামর্শ দিতে পারে। ঘন ঘন বমি বমি ভাব হলে ধীরে ধীরে তরলে চুমুক দিয়ে পান করা ভালো। এ সময়ের জন্য উপযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে আলু, চিনাবাদামের মাখন, টার্কির মাংস এবং দই।
যে খাবারগুলো ডায়রিয়া বা শরীরে গ্যাসের অবস্থা আরও খারাপ করে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলোর মধ্যে আছে চর্বিযুক্ত বা ভাজা খাবার, কাঁচা ফল এবং শাকসবজি, মশলাদার খাবার, মটরশুটি এবং বাঁধাকপি এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, যেমন কফি ও সোডা।
যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই শরীর উন্নতির দিকে যায় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডায়রিয়া ভালো হয়ে যায়। যদি উপসর্গ ২ দিনের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তখন ডাক্তারের সরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ গুরুত্বের সাথে নিতে হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি অবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এগুলো হলো- অবিরাম বমি, ক্রমাগত ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা, উল্লেখযোগ্য হারে ওজন হ্রাস, মলের মধ্যে পুঁজ ও রক্ত, কালো মল বের হওয়া ইত্যাদি।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যে উপসর্গগুলো অবিলম্বে চিকিৎসার দাবি রাখে সেগুলো হলো- ২৪ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ধরে ডায়রিয়া, জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি, রক্ত ও পুঁজ মল এবং কালো মল।
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে ডায়রিয়া হলে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কথা বলতে পারেন। অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পূর্বে ডাক্তার রোগীর কিছু শারীরিক অবস্থা নিরীক্ষা করবেন। সেগুলো হলো- ডায়রিয়া তীব্রতা, পানিশূন্যতার তীব্রতা, রোগীর স্বাস্থ্যের সামগ্রিক অবস্থা, চিকিৎসা ইতিহাস, বয়স, এবং রোগীর বিভিন্ন পদ্ধতি বা ওষুধ সহ্য করার ক্ষমতা।
পড়ুন: চট্টগ্রামে বেড়েছে ডায়রিয়া: চাপ সামলাতে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখার নির্দেশ
ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায়
নিয়মিত হাত ধোয়া
যে কোন ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচার মোক্ষম উপায় হলো খাবার তৈরি ও খাওয়া আগে এবং পরে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেয়া। রান্না করা, টয়লেট ব্যবহার, বাচ্চার ডায়াপার পরিবর্তন, হাঁচি, কাশি এবং নাক ফুঁকানোর পরে হাত ধুয়ে নেয়া জরুরি। হাতে সাবান লাগানোর পরে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য দুই হাত একসাথে ঘষতে হবে। হাত ধোয়ার বিকল্প হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অ্যালকোহল-যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিত। এ সময় হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এমনভাবে প্রয়োগ করতে হবে যেন তা উভয় হাতের সামনে এবং পিঠে ভালোভাবে লাগে। একটি ভালো হ্যান্ড-স্যানিটাইজারে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে।
ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা
ডায়রিয়া বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের সময় সংক্রমণ হতে পারে। যেখানে ভ্রমণ করা হচ্ছে সেখানকার অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন এবং দূষিত খাবার নিমেষেই শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে নিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমাতে করণীয়গুলো হলোঃ
নতুন জায়গায় খাবারের ব্যাপারে সতর্কতা
গরম ও ভালোভাবে রান্না করা খাবার খান। কাঁচা ফল এবং শাকসবজি এড়িয়ে চলতে হবে। অবশ্য সেগুলো রান্নার জন্য প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ নিজেই করলে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও কাঁচা বা কম রান্না করা মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি।
পড়ুন: রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবে হাসপাতালে ভর্তি শতাধিক
নতুন জায়গার পানীয়র ব্যাপারে সতর্কতা
বোতলজাত পানি বা সোডা বোতল থেকেই পান করা উচিত। কলের পানি এবং বরফের টুকরো এড়িয়ে চলতে হবে। এমনকি দাঁত ব্রাশ করার জন্যও বোতলজাত পানি ব্যবহার করা জরুরি। গোসল করার সময় বোতলের মুখ বন্ধ রাখতে হবে। সিদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি কফি এবং চা নিরাপদ। এক্ষেত্রে মনে রাখা উচিত যে অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন ডায়রিয়াকে বাড়িয়ে তোলে যা পানিশূন্যতাকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দেয়।
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ
দীর্ঘ সময়ের ভ্রমণের জন্য আগে থেকেই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া যেতে পারে। এ সময় ডাক্তার শরীরের যাবতীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এবং রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাচাই করে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ দিবেন।
পরিশিষ্ট
কোভিডের চাপটা কমতে না কমতেই শুরু হয়ে গেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। মুলত এরকম সংক্রমণ আকস্মিক নয়। বরং সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার অস্থিতিশীলতা এ ধরণের রোগবালাইয়ের কারণকে সুসঙ্গত করে। জীবন ও জীবিকা সামলানোর অনিয়ন্ত্রিত দৌড়ে আশেপাশের পরিবেশ ও শরীর-স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে। আর এর সাথে যখন উদাসীনতা যোগ হয় তখনই চাপের ভয়াবহতা বাড়তে থাকে।
পড়ুন: ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার
‘মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্লান্টের সাফল্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’
সম্প্রতি ইউনাইটেড হসপিটাল লিমিটেড এ ৪২ বছর বয়স্ক এক নারীর হৃদপিণ্ডে সফল মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্লান্ট এর মধ্য দিয়ে দেশের স্বাস্থ্যসেবার ওপর আস্থা সৃষ্টি হচ্ছে নতুনভাবে।
রবিবার (২৭ মার্চ) ‘মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্লান্টের সাফল্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ নামক এক অনুষ্ঠানে এ সর্ম্পকে রোগী ও তাদের আপনজনেরা বক্তব্য রাখেন।
ইউনাইটেড হসপিটালের প্রধান কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবির এবং তার দক্ষ সহকর্মীরা সফলভাবে ৪২ বছর বয়স্ক এক নারীর হৃদপিণ্ডে গত ২ মার্চ, ২০২২ ইউনাইটেড হসপিটালে একটি মেকানিক্যাল হার্ট বা এল্ভ্যাড স্থাপন করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট সম্পন্ন
প্রেস কনফারেন্সে রোগী ও তার পরিবারের সদস্যরা অস্ত্রোপচারের বিষয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ।
এসময় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য তারা ডা. জাহাঙ্গীর কবির এবং তার দক্ষ দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সঙ্গে তারা ইউনাইটেড হাসপাতালের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ আইসিইউ থেকে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী পরিচর্যা নিয়েও সন্তুষ্টির কথা জানান।
অনুষ্ঠানে ডা. জাহাঙ্গীর কবির ও তার দক্ষ সহকর্মীদের কৃতিত্বের জন্য সম্মাননা দেয়া হয়। বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় হার্ট সার্জনদের এই দলটি ইউনাইটেড হাসপাতালের সূচনা থেকে দেড় হাজার জনেরও বেশি মানুষের হৃদযন্ত্রের সফল অস্ত্রোপচার করেছেন।
আরও পড়ুন: ইউনাইটেড হাসপাতালে বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত
ইউনাইটেড হাসপাতালে বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত
প্রতি বছরের মতো এবারও ইউনাইটেড হাসপাতালে বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক,নার্স ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হাসপাতালে আগত রোগীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালের লবীতে একটি হেলথ চেক বুথ উদ্ধোধনের মাধ্যমে দিবসটির সূচনা করেন। দিনব্যাপী এই ফ্রি হেলথ চেক বুথে প্রায় পাঁচ শতাধিক রোগী ও তাদের স্বজনেরা স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুবিধা গ্রহণ করে। এছাড়াও দুপুরে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের উপস্থিতিতে সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এই উপলক্ষে হাসপাতালের ডিরেক্টর মেডিকেল সার্ভিসেস (ডিএমএস) ডা. শান্তি বানসাল বলেন, এ বছর কিডনি দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘সুস্থ কিডনি সবার জন্য- জ্ঞানের সেতুবন্ধনে সাফল্য’।
বিশ্ব কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তিনি বলেন, কিডনির যত্নে, জ্ঞানের শূন্যতা দূর করে, আমাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে, সচেতন করতে হবে। কিডনি ও এর জটিলতার সৃষ্ট সকল রোগের চিকিৎসায়,ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট সম্পন্ন
এ সময় ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ কনসালটেন্ট, নেফ্রোলজি এবং পরিচালক, রেনাল সেন্টার, প্রফেসর ডা. মো. নুরুল ইসলাম বলেন,ইউনাইটেড হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৩৯টি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এখন তা সাময়িক বন্ধ আছে। আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে আবার ইউনাইটেড হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হবে।
নেফ্রোলজি কনসালটেন্ট ডা.তানভীর বিন লতিফ বলেন, এ দেশে বেশ কিছু ডায়ালাইসিস সেন্টার গড়ে উঠেছে, যেখানে প্রধানত হেমোডায়ালাইসিসই দেয়া হয়ে থাকে। হেমোডায়ালাইসিস শুধুমাত্র একটি মেশিন নয়, এর সঙ্গে জড়িত আছে চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং কারিগরী দক্ষতা। যা ইউনাইটেড হসপিটালে অত্যন্ত মনোযোগ ও যত্ন সহকারে পরিচালনা করা হয়।
নেফ্রোলজি কনসালটেন্ট ডা. তানিয়া মাহবুব জানান, ডায়ালাইসিস চলাকালীন সময়ে মাসে ২-৩ বার নিয়মিত ফলোআপ করা জরুরি। এছাড়া নারী রোগীদের ঝুঁকি বেশী বিধায় তাদের ইউনাইটেড হসপিটালে বিশেষ স্ক্রীনিং এর আওতায় জরুরি রোগ নির্ণয় সুবিধা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট সম্পন্ন
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট বা যান্ত্রিকভাবে হৃদপিণ্ডের কাজ প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
ইউনাইটেড হসপিটালের প্রধান কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবির গতকাল বুধবার ইউনাইটেড হসপিটালে ৪২ বছর বয়স্ক এক নারীর হৃদপিণ্ডে মেকানিক্যাল হার্ট স্থাপন করেন। যিনি দীর্ঘদিন শেষ পর্যায়ের বা তীব্র হার্ট ফেইলিওর নামক হৃদপিণ্ডের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের বর্তমান উৎকর্ষতায় উন্নত বিশ্বে এর একমাত্র চিকিৎসা আরেকটি সুস্থ হার্ট দিয়ে প্রায় অকার্যকর হার্টটি প্রতিস্থাপন। তবে যদি সুস্থ হার্ট না পাওয়া যায় কিংবা পেতে দেরী হচ্ছে এবং হার্টের অবস্থা যদি দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে তবে মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। এতে রোগীর হার্ট কিছুটা বিশ্রাম পায় এবং সমস্ত শরীরের রক্ত চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে । ফলে শরীরে অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার ইত্যাদি সেরে ওঠার সুযোগ পায়। তীব্র হার্ট ফেইলিওরে আক্রান্ত কিছু রোগী হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট এর উপযুক্ত না হলে তাদের জন্য একমাত্র বিকল্প এল্ভ্যাড, যা স্থাপনের মাধ্যমে বাকি জীবন সুস্থভাবে অতিবাহিত করতে পারেন।
আরও পড়ুন: কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
ডা. জাহাঙ্গীর কবির ও তার দক্ষ সহকর্মীরা প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় ধরে সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে হার্টমেট-৩ নামের একটি মেকানিক্যাল হার্ট রোগীর হৃদপিণ্ডের বাম নিলয়ে স্থাপন করেন এবং তার পুরো হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন। আশা করা যাচ্ছে এর মাধ্যমে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমে আসবে এবং হার্ট ফেইলিওরের লক্ষণ সমূহের উন্নতি ঘটবে।
বাংলাদেশে হার্ট সার্জারীর প্রথম সারির এ চিকিৎসক দল ইউনাইটেড হসপিটালের শুরু থেকেই ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষের হার্টের সফল সার্জারী করেছেন ।
বর্তমানে সারা বিশ্বে দশ মিলিয়ন এরও বেশি মানুষ ‘হার্ট ফেইলিওর’ রোগে আক্রান্ত । এশিয়ায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব এক দশমিক ২৬ শতাংশ থেকে ৬দশমিক সাত শতাংশ ।
আরও পড়ুন: শীতকালে কেনো বেশি ঘুম পায়?
শীতকালে কেনো বেশি ঘুম পায়?
বছরান্তে সময়টা যতই পৌষ-মাঘের কাছাকাছি হতে শুরু করে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে অত্যধিক ঘুম ঘুম ভাব প্রবণতা। এরকম অনস্বীকার্য শীতের ক্লান্তিটা প্রায়ই কাজের রুটিনটাকে ওলোট-পালোট করে দেয়। কখনো মনে হতে পারে সারাদিন শারীরিক পরিশ্রম বা অতিরিক্ত কাজের জন্য হয়ত ঘুম ঘুম ভাবটা বেড়েছে। কিন্তু শীতের মৌসুমে ঘুমের এমন অদ্ভূত আচরণটা স্বাভাবিক। চলুন জেনে নেয়া যাক, কেন এরকমটা হয়, আর এ থেকে উত্তরণের উপায়ই বা কি।
শীতে যে কারণে বেশি ঘুম আসে
এক কথায় বলতে গেলে শীতকালে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাবের মুল কারণ হলো সূর্যালোকের তুলনামুলক ভাবে কম উপস্থিতি। অর্থাৎ দিনের স্বল্পতা এবং রাত দীর্ঘ হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই শরীর প্রয়োজনের তুলনায় কম সূর্যালোক পেয়ে থাকে। এর প্রভাবেই শরীর ও মনে সৃষ্টি হয় নানা জটিলতা। সেগুলোর মধ্যে প্রধান তিনটি সমস্যা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।
১। নিদ্রা উদ্রেক হরমোনের নিয়ন্ত্রণহীনতা
মেলাটোনিন হরমোন শরীরকে ঘুমের দিকে ধাবিত করার জন্য মুল ভুমিকা পালন করে। শীতকালে প্রাকৃতিক আলোর অভাবে শরীরের অভ্যন্তরে অত্যধিক মেলাটোনিন তৈরি হয়। ফলস্বরূপ, মানবদেহের অভ্যন্তরীণ সার্কাডিয়ান ছন্দ বা ঘুম ও জেগে ওঠার চিরায়ত চক্রকে ব্যাহত হয়। গরমের সময়ে সূর্যালোকের উপস্থিতি মেলাটোনিন নিঃসরণের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই সে সময় ঘুম ঘুম ভাব থাকে না। বরং সার্কাডিয়ান ছন্দটি সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকে গরমের দিনগুলোতে।
পড়ুন: মধু কি সত্যি অমৃত?
২। শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি
ভিটামিন ডি এর ঘাটতি এবং নিদ্রাহীনতার মাঝে একটি লক্ষণীয় যোগসূত্র রয়েছে। অন্ধকার আকাশ এবং ঝাপসা আবহাওয়া এই পুষ্টির অপর্যাপ্ত মাত্রাকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। এটি শুধুমাত্র ঘুম ঘুম ভাব বাড়িয়ে তোলা নয়; শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মন-মেজাজের ওপরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে।
৩। মানসিক অবসাদগ্রস্ততা
এসএডি (সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার) হলো একটি সাধারণ মানসিক অবস্থা, যা প্রায়ই শীতকালে দেখা দিয়ে থাকে। 'উইন্টার ব্লুজ' নামে পরিচিত এই অবস্থাটি মুলত প্রতি বছরের শীতনিদ্রা প্রবণতার প্রতিফলন হিসেবে ঘটে থাকে। এর কারণে প্রতি বছর শীত এলেই শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং সূর্যালোকের স্বল্পতা মস্তিষ্ক থেকে সেরোটোনিন হরমোন নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। এই হরমোনটি সুখের অনুভূতি উদ্দীপিত করে মেজাজ উন্নত রাখতে সাহায্য করে। শীতে এই হরমোনের ঘাটতি অবসাদগ্রস্ততার সৃষ্টি করে।
পড়ুন: নিপা ভাইরাস এড়িয়ে খেজুর রস খাওয়ার উপায়
শীতকালে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব দূর করার উপায়
১। প্রতিদিন ভোরবেলা শরীরচর্চা করা
শীতে দিন ছোট হলেও যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকুর সদ্ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে ভিটামিন ডি-এর বিশাল উৎস ভোরের টাটকা সূর্যালোক কোন ভাবেই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। নিত্য দিন কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার আগে কমপক্ষে এক ঘন্টা সূর্যালোকে শরীরচর্চা অথবা খেলাধুলা করা সারাদিনের জন্য শরীরটাকে সতেজ রাখতে পারে। এছাড়াও মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় সূর্যালোকে হাটাহাটি করা যেতে পারে। এটি ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে অলসতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
২। পুষ্টিকর বিশেষত ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খাওয়া
সুষম খাবার গ্রহণ সব ঋতুর জন্যই প্রযোজ্য। আর শীতের ঘুম ঘুম ভাব কাটানো জন্য শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ডি-এর যোগান দিতে হবে। ডিমের কুসুম এবং মাশরুম ভিটামিন ডি-এর একটি ভালো উৎস। এছাড়া প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় গরুর দুধ ও মাংস বিশেষ করে কলিজা, সয়া দুধ, কমলার জুস ও পনির রাখা যেতে পারে। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খুব দ্রুত কাজ করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
পড়ুন: ঢাকার কোথায় ভালো পরিবেশে সাঁতার শেখা যায়
৩। ভ্রমণ করা
শীতকাল এমনিতে ভ্রমণের ঋতু হিসেবে জনপ্রিয়। আর এই ঘুমের রেশ কাটানোর জন্য দূরে কোথাও ভ্রমণে যাওয়া খুব ভালো একটা উপায় হতে পারে। সাইক্লিং, হাইকিং, রাফটিং, ও ম্যারাথন শীতের স্বল্প দিনে শরীরকে অনায়াসেই কর্মক্ষম এবং রোগমুক্ত রাখতে পারে।
এভাবে শীতের প্রকৃতিগত একঘেয়েমি সহ ঘুম ঘুম ভাব ও ক্লান্তি কাটানো যেতে পারে। যদিও শীতপ্রিয় মানুষেরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন এই সময়টির জন্য, তবে অতিরিক্ত শীত অনেকের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। তবে সঠিক রুটিন মেনে চলাটা বছরের যে কোন সময়েই শরীরকে ফিট রাখার জন্য সহায়ক হতে পারে।
পড়ুন: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
কান পেতে রই হচ্ছে দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেল্পলাইন। মানসিক দুর্দশায় জর্জরিত অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এই ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি কাজ করে। উদ্যোগটা অভিনব হলেও এই কাজটি নিতান্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এরকম বিশ্বের প্রায় ৪২টি দেশে নজির রয়েছে। বরং বাংলাদেশে আরও আগেই এরকম কার্যক্রম শুরু হওয়াটা জরুরি ছিল। এবার প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
প্রতিষ্ঠানটির শুরুর গল্প
একবার যুক্তরাজ্যের এক ধর্মযাজকের খুব প্রিয় একজন মানুষ আত্মহত্যা করল। এতে প্রচণ্ড মনোকষ্টে ভুগলেও ধর্মযাজক শোককে শক্তিতে পরিণত করলেন। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, মানসিকভাবে পর্যুদস্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মধ্যে শক্তি-সাহস যোগাবেন এবং বেঁচে থাকার প্রেরণা দেবেন।
১৯৫২ সাল থেকে শুরু করলেন টেলিফোনের মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত লোকদের মানসিক সেবা দেয়া। সেখানে একটি নির্দিষ্ট নাম্বার থেকে একদল স্বেচ্ছাসেবী কর্মকর্তা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষদের কথা শুনত। নিজেদের দুঃখের কথা বলতে যেয়ে তারা খেয়াল করত যে তাদের বুকের বোঝাটা কমে আসছে। সে সময়ের জন্য এটি ছিল এক অভিনব উদ্যোগ এবং এটি ব্যাপকভাবে বেশ সফলতাও পেয়েছিল।
আরও পড়ুন: মধু কি সত্যি অমৃত?
এই কাহিনীটি থেকে শিক্ষা নিয়েই মূলত কান পেতে রই সংগঠনের অভিযাত্রা শুরু।
আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষা নেবার সময় বাংলাদেশের ইয়েশিম ইকবালের কাজ করার সুযোগ হয়েছিল বোস্টন শহরের টেলিফোনের মাধ্যমে মানসিক সেবা দেয়া একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। সেখানে প্রায় তিন বছর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তিনি যুক্ত ছিলেন।
সেখান থেকেই ইয়েশিমের পরিকল্পনায় কান পেতে রই’র গোড়াপত্তন হয়েছিল। বাংলাদেশে প্রতিদিনি বাড়তে থাকা আত্মহত্যার সংখ্যাকে কমাতে আত্মহত্যাপ্রবণ লোকদের মানসিক সমর্থন দিতে ২০১২ সালে তিনি শুরু করলেন কান পেতে রই’র প্রাথমিক কার্যক্রম। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ এর ২৮ এপ্রিল।
প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমসমূহ
কান পেতে রই (http://shuni.org/) এ আছে কিছু নির্দিষ্ট হেল্পলাইন, যেগুলোর মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত মানুষের কল গ্রহণ করে তাদের কথা শুনে তাদের মাঝে থাকা নিঃস্বঙ্গতা, এবং আত্মহত্যার প্রবণতা দূর করতে সহায়তা করা হয়। এই কাউন্সেলিংয়ের প্রতিক্রিয়া বেশ ফলপ্রসূ আর এই সেবার জন্য কোন ধরনের চার্জ নেয়া হয় না।
করোনা মহামারির আগে প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সেবা দেয়া হতো। শুধু বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা কথা বলার সুযোগ ছিল।
পরবর্তীতে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সেবা দাতা সাজিদা ফাউন্ডেশনের যৌথ সহযোগে করোনা মহামারির ভেতর নাগরিকদের জন্য কান পেতে রই’র সেবা প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়।
কাউন্সিলিংয়ের সময় বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন, পরীক্ষায় খারাপ করা, পারস্পরিক অভিমান প্রভৃতির কারণে সৃষ্ট জটিলতার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হয়।
এই পদ্ধতির নাম ‘বিফ্রেন্ডিং’ যেটি মূলত কাউন্সিলিংয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মডেল।
কান পেতে রই গ্রাহকদের কোন তথ্য নিজেদের প্রচারের স্বার্থে ব্যবহার করে না। কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া থাকে কলকারীদের পরিচয় সম্পর্কিত কোনো তথ্য জিজ্ঞাসা না করার। এমনকি স্বেচ্ছাসেবীদের অত্যন্ত কঠোর গোপনীয়তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হয়।
অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন কলকারী ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে ফেললে তা নোট না করার জন্যও প্রশিক্ষকরা স্পষ্টভাবে বলে দেন। সর্বপরি এখানে মূল ফোকাস ব্যক্তিগত পরিচয় নয়; কলকারীর মানসিক সমস্যা সমাধান।
এতে করে গ্রাহকরা স্বাচ্ছন্দ্যে কোন অস্বস্তি ছাড়াই কান পেতে রই’তে ফোন দিতে পারেন। একই সঙ্গে গ্রাহকদের এক রকম নির্ভরতার জায়গা তৈরি হয়, যেটা এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয়।
আরও পড়ুন: নিপা ভাইরাস এড়িয়ে খেজুর রস খাওয়ার উপায়
এখন পর্যন্ত কান পেতে রই আট বছর ধরে প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষকে সেবা দিয়েছে। এদের মধ্যে শতকরা প্রায় ২০ ভাগরেই প্রধান সমস্যা আত্মহত্যার প্রবণতা।
কান পেতে রই দলের সদস্যর
কান পেতে রই’র প্রতিষ্ঠাতা ইয়েশিম ইকবাল কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের স্নাতক। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছেন।
তিনি ছাড়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন হেল্পলাইন সমন্বয়কারী রোজি হোসেন, জনসংযোগ ও যোগাযোগ সমন্বয়কারী সওগাত মাহমুদ, স্বেচ্ছাসেবক সমন্বয়কারী অরুণ দাস, আউটরিচ কো-অর্ডিনেটর রুবিনা জাহান রুমি ও আউটরিচ এক্সিকিউটিভ আশিক আব্দুল্লাহ শুভ। সঙ্গে রয়েছে প্রশিক্ষিত পরিশ্রমী এক ঝাঁক তরুণ স্বেচ্ছাসেবী, যারা যে কোন কল অবিলম্বে গ্রহণ করে তার জরুরি কাউন্সিলিং নিশ্চিত করে যাচ্ছেন।
স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাউন্সিলিংয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়। প্রশিক্ষণের মধ্যে থাকে মনযোগ দিয়ে কথা শোনার পদ্ধতি, বিপদের মাত্রা উপলব্ধি করার উপায় ও বন্ধুর মত আচরণ। মানসিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত বিশেষত আত্মহত্যা প্রবণ ব্যাক্তিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পর্যাপ্ত অনুশীলনের মাধ্যমে প্রত্যেককে প্রস্তুত করা হয়
এখানের কাজের পদ্ধতি হলো শিফটিং বা পর্যায়ক্রমে। একজন স্বেচ্ছাসেবক চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রতি সপ্তাহে তিন ঘণ্টা করে কাজ করতে পারে। প্রতিটি কল গ্রহণের সময় হেল্পলাইনের তত্ত্বাবধায়করা পুরো কথোপোকথোনটি মনিটরিং করে থাকেন।
আরও পড়ুন: ওজন কমাতে ১০ কার্যকরী পানীয়
কান পেতে রই’র সময়োপযোগিতা
বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আত্মহত্যার কারণে মৃতের সংখ্যা শতকরা ২.০৬ ভাগ বাংলাদেশি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশিদের আত্মহত্যার হার ছিল ৩.৭০, যা ২০১৮ থেকে শতকরা ২.৭৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক অস্থিরতা, জনসংখ্যা সংক্রান্ত জটিলতার পাশাপাশি পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে জীবন ধারণে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক মূল্যবোধ বিনষ্টের ফলে ভাঙন ধরছে সম্পর্কগুলোতে। ইতোমধ্যেই রীতিমত প্রসার লাভ করা পরস্পর থেকে দূরত্বে থাকার বিষয়টিকে যেন আরও গতিময় করেছে করোনা মহামারি। এই নেতিবাচক উত্তেজক পরিস্থিতিগুলোর কারণে অতিরিক্ত আবেগের তাড়নায় চরম অবস্থায় মানুষ ধাবিত হচ্ছে আত্মঘাতী ঘটনার দিকে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঘটে গেল ২০২২ সালের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা। একই সঙ্গে দেশব্যাপী ১২টি আত্মহত্যা।
এমতাবস্থায় মন খারাপের লাগাম টেনে ধরার জন্য কিছু শক্ত হাতের প্রয়োজন। প্রয়োজন নিঃস্বার্থভাবে আলো জ্বালানো মানুষের অন্তরের গহীনে অন্ধকূপের মত জেঁকে বসা অন্ধকারে। হোক সেটা কোন বন্ধুর অন্তরঙ্গ আলাপে বা কোন টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অথবা নির্দিষ্ট কোন নাম্বারে ফোন করার মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন ডালিমের খোসার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার
সবশেষে বলা যায়, কান পেতে রই বাংলাদেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেল্পলাইন হিসেবে একটি যুগান্তকারি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে। বাংলাদেশের চলমান প্রতিকূল প্রেক্ষাপটে তাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার প্রতিক্রিয়াটি খুব ধীর গতির হলেও মানুষের মনে আশা জাগাচ্ছে। নিদেনপক্ষে যে মানুষগুলো তাদের থেকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পাচ্ছে, তারা সেই অনুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছে আরও কিছু হতাশাগ্রস্ত মানুষের মাঝে। অর্থাৎ আলোকের দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়া থেমে নেই। আসলে এরকম প্রেরণা ও সাহস যোগানোর চর্চা শুধু কান পেতে রই’রই দায়িত্ব নয়; প্রতিটি মানুষেরই হওয়া উচিত।
মধু কি সত্যি অমৃত?
মৌমাছিরা তাদের এনজাইম ঘটিত ক্রিয়াকলাপ ও তরলের বাষ্পীভবনের মাধ্যমে উদ্ভিদের চিনিজাত নিঃসরণ থেকে মধু তৈরি করে। বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা মোম ও রজন দিয়ে মৌচাক তৈরি করে তাতে মুধ সঞ্চয় করে। মৌয়ালরা সেই মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে বাজারজাত করে থাকে। এই আঠালো ও মিষ্টি স্বাদের খাবারটি রান্নাবান্নায় ও বাণিজ্যিক পানীয় তৈরিতে মিষ্টিবর্ধক হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া অসামান্য পুষ্টিগুণের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও এটি ব্যবহার করা হয়। মধুর গুণাগুণ ও উপকারিতা সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
বিভিন্ন ধরনের মধু
বাংলাদেশে হরেক রকমের মধু পাওয়া যায়। এর মধ্যে সুন্দরবন মধুর জন্য শ্রেষ্ঠ জায়গা। এখানকার মধুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সেরা হানিপ্ল্যান্ট গাছের খলিসা ফুলের মধু বা পদ্ম মধু। খলিসা ফুল হয় সাদা আর এর মধুর রং বেশ গাঢ় এবং খুব কড়া ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত। ফাল্গুমাস অর্থাৎ মার্চ থেকে এপ্রিলে এই মধু পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: নিপা ভাইরাস এড়িয়ে খেজুর রস খাওয়ার উপায়
এরপরেই চৈত্র মাসে আসে হালকা লালচে রঙের ও মিষ্টি পশুর ফুলের মধু। আষাঢ় মাসের বাইন মধু আবার খলিসা কিংবা পশুর মধুর মতো এতটা কড়া স্বাদের নয়।
সাদা রঙের কেওড়া মধুর মিষ্টি স্বাদের সঙ্গে একটু টক থাকে। এই মধু জ্যৈষ্ঠ মাসে পাওয়া যায়। শীতের সময় বেশি মেলে সরিষা ফুলের মধু। এই সাদাটে ও খুব ঘন মধুটি খুব তাড়াতাড়ি জমে যায়।
বিশ্বে প্রথমবারের মতো মানবদেহে সফলভাবে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন
এক সময় অচিন্তনীয় ঘটনা হলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমবিকাশে পশু ও মানুষের মাঝে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিষয়টি ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে স্বাভাবিক অভিজ্ঞতায়। পূর্বে জীন প্রকৌশলের মাধ্যমে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। আর এবার সম্ভব হলো মানবদেহে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন। এই অভিনব সার্জারিটি সফলতার সাথে সম্পন্ন করলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিকেল স্কুলের চিকিৎসকরা। যুক্তরাষ্ট্রের ৫৭ বছর বয়সী ডেভিড বেনেট হচ্ছেন সেই মানুষ যিনি শূকরের হৃৎযন্ত্র বুকে নিয়ে এখন পর্যন্ত সুস্থ আছেন। চলুন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই যুগান্তকারী অনবদ্য সংযোজনটির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিই।
মানবদেহে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন
এরকম ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের নিরীক্ষণের প্রচেষ্টাটা (মেডিকেল শাস্ত্রে যাকে বলা হয় জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন) শুরু হয় ১৭ শতকে। প্রাথমিক গবেষণাটি কেন্দ্রীভূত ছিল স্তন্যপায়ী গোত্রভুক্ত আদিম প্রাণীদের বা প্রাইমেটদের উপর। কিন্তু এই ধরনের সকল প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে মানবদেহের আভ্যন্তরীণ কাঠামোর সাথে সেই সব প্রাণীর অঙ্গগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ার কারণে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে নিকট অতীতের ঘটনা- শিশু ফা-এর কথা। ১৯৮৪ সালে শিশুটি একটি বেবুনের হৃৎপিণ্ড নিয়ে ২১ দিন বেঁচে ছিল।
অতঃপর ২১ শতকের এই তৃতীয় দশকের প্রারম্ভে মেরিল্যান্ডের ড. বার্টলি গ্রিফিথ ও তাঁর দলের অস্ত্রোপচারটি যুগান্তকারী একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করল। প্রায় আঠ ঘণ্টা লেগেছিল শূকরের হৃৎযন্ত্রটিকে ৫৭ বছর বয়সী ডেভিড বেনেটের বুকে প্রতিস্থাপন করতে। তাই ২০২২ এর ৭ জানুয়ারি শুক্রবার দিনটি বেনেটের পরিবারের পাশাপাশি তাঁর চিকিৎসকদের জন্যও বেশ উত্তেজনাকর ছিল।
সর্বমোট ১০টি অনন্য জীনের উপর কাজ করার জন্য ছয়টি মানব জীন প্রবেশ করানো হয়েছিল জীনোমে। এই জীনগত প্রকৌশলটি সম্পাদন করেছিল ২০২১ এর সেপ্টেম্বরে ভার্জিনিয়ার বায়োটেক ফার্ম রেভাইভিকোর। তারা অস্থায়ীভাবে একটি মৃত মানুষের শরীরে একটি শূকরের কিডনি সংযুক্ত করেছিলেন এবং এটি কাজ করতে শুরু করেছিল। আর মেরিল্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট তাদের সেই পরীক্ষাকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যায়। তারা এমন একটি শূকরের হৃৎপিণ্ড ব্যবহার করেছিলেন, যেটি তার কোষে চিনি অপসারণের জন্য জীনগত প্রকৌশলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এই শূকরগুলোর আকার, দ্রুত বৃদ্ধি এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধি বৈশিষ্ট্যের কারণে আদর্শ দাতা হিসেবে তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: স্মার্ট আইডি কার্ড: জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে যেভাবে সংশোধন করবেন
আর এই হৃৎপিণ্ডটি সরবরাহ করেছে সেই বায়োটেক ফার্ম রিভাইভিকোর। অঙ্গটি অস্ত্রোপচারের আগ পর্যন্ত সচল রাখার জন্য একটি অঙ্গ-সংরক্ষণ মেশিনে রাখা হয়েছিল। পাশাপাশি তাতে একটি পরীক্ষামূলক নতুন অ্যান্টি রিজেকশান ওষুধও ব্যবহার করা হয়, যেটি তৈরি করেছিল কিনিক্সা ফার্মাসিউটিক্যাল্স।
এই পরীক্ষামূলক অস্ত্রোপচারটির সবচেয়ে কঠিন দিক ছিল রোগীকে পুরো ব্যাপারটা জানানো। আর এই কাজটি বেশ বুদ্ধিমত্তার সাথেই করেছেন এই অস্ত্রোপচারের প্রধান চিকিৎসক ডা. বার্টলি গ্রিফিথ। প্রথম চিকিৎসা হওয়াতে পুরো ব্যাপারটিতে ছিল আদ্যোপান্ত অনিশ্চয়তা। এর আগে ডা. প্রিফিথ পাঁচ বছরে প্রায় ৫০টি বেবুনে শূকরের হৃদয় প্রতিস্থাপন করেছেন। অস্ত্রোপচার পরীক্ষামূলক ছিল এবং এর ফলাফল অনিশ্চিত ছিল।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত আবেগ হতে পারে শরীরের ক্ষতির কারণ
শূকরের হৃৎপিণ্ডধারী প্রথম মানুষ আমেরিকান ডেভিড বেনেট
ডেভিড বেনেট তাঁর সারাটা জীবন পুল মেরামত, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, পেইন্টিং সহ বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রায় এক দশক আগে একটি শূকরের ভাল্ব লাগিয়েছিলেন।
বেশ কয়েকবার হৃৎপিণ্ড দাতার খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে, কয়েকটি হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন পরীক্ষায় অযোগ্য হওয়ার পর একদম হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থা, হার্ট ফেইলিওর এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দন তাকে কৃত্রিমভাবে হার্ট পাম্পের জন্য অযোগ্য করে তুলেছিল। এভাবে নিজের হৃৎপিণ্ডটাকে বাঁচানোর জন্য দুই মাস চেষ্টা করেও কাজ হয়নি।
এই সবকিছু ভেবে শেষমেষ ডা. গ্রিফিথের প্রস্তাবে অনেকটা জুয়া খেলার মত করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বেনেট।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই প্রকৃতির মাঝে ক্যাম্পিং সাইট
জটিল অস্ত্রোপচারের পর রোগীর বর্তমান অবস্থা
অস্ত্রোপচারের পর প্রথম ৪৮ ঘণ্টা গুরুতর কোন ঘটনা ছাড়াই কেটেছে। গত সোমবার থেকে অবস্থার বেশ উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে। তখনো হার্ট-ফুসফুস বাইপাস মেশিনের সাথে সংযুক্ত ছিলেন বেনেট, এমনকি সে অবস্থায় নিজে নিজেই শ্বাস নিতে পারছিলেন। অবশ্য তবে এটি সদ্য নতুন হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপিত হওয়া রোগীর ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক নয়।
এখনো তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতিক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ঝুঁকি যদিও কম এরপরেও তার শূকর ভাইরাস বা পোরসিন রেট্রোভাইরাস-এর সংক্রমণের দিকটাও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তবে এ ধরনের প্রাথমিক স্টেজের প্রতিস্থাপন শেষ পর্যন্ত কাজ করতে পারে কিনা তা অন্বেষণ করার জন্য এটি আরও বেশি সময় প্রয়োজন। এখনো সম্ভাবনার দোলাচলটা থেকেই যাচ্ছে। এরপরও বেনেট আশা করেন যে, এটা চূড়ান্তভাবে কাজ করবে এবং পরবর্তীতে তিনি মানুষের হৃৎপিণ্ডও নিজের বুকে প্রতিস্থাপন করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
পরিশিষ্ট
মানবদেহে সফলভাবে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন, যার চূড়ান্ত ব্যবহারিক সফলতা জন্মগত বিকলাঙ্গ সহ অন্যান্য শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লক্ষাধিক রোগীদের আশা উদ্রেক করবে। রোগীদের সংখ্যার তুলনায় অধিক হারে অঙ্গগুলোর সরবরাহ মিলবে। গত বছর প্রায় ৩ হাজার ৮১৭ আমেরিকান রোগী মানব হৃৎপিণ্ড পেয়েছে। সংখ্যাটি পূর্বাপেক্ষা বেশি হলেও সম্ভাব্য চাহিদা আরও বেশি। তবে মেরিল্যান্ডের চিকিৎসকরা এই চিকিৎসাটিকে ওয়াটারশেড-এর সাথে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ এটি অনেক বড় সাফল্যের একটা ছোট ফলাফল। বেনেটের বুকে স্থাপিত হৃৎপিণ্ডটি যে শূকরের ছিল তার গোত্রের উপর জীনগত প্রকৌশল চলার কারণে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে এই হৃৎপিণ্ডে মানুষ বাঁচানোর বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া গেছে। সুতরাং হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে খুব শিগগিরই একটা বড় পরিবর্তনের আশা রাখা যায়।
নিপা ভাইরাস এড়িয়ে খেজুর রস খাওয়ার উপায়
নিপা ভাইরাস একটি জুনোটিক ভাইরাস। এটি বাঁদুড় থেকে বিভিন্ন মাধ্যম (বিভিন্ন পশু বা খাবার) হয়ে অথবা সরাসরি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। বাংলাদেশে খেজুরের রস খেকো বাঁদুড় হচ্ছে নিপা ভাইরাসের প্রধান উৎস।
বাঁদুড় খেজুরের রস খাওয়ার সময় তাদের মুখ থেকে নিঃসৃত লালা খেজুরের কাঁচা রসের সঙ্গে মিশে রসকে দূষিত করে। এর ফলে সংক্রামিত ব্যক্তি শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর সমস্যা ও মস্তিষ্কের প্রদাহ জনিত মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নিপা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে।
আরও পড়ুন: ওজন কমাতে ১০ কার্যকরী পানীয়
চলুন জেনে নিই কীভাবে নিপা ভাইরাস এড়িয়ে খেজুর রস খাবেন?
নিপা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে আরোগ্য লাভের কোন টিকা নেই, তাই এই ভাইরাস এড়ানোর একমাত্র উপায় প্রতিরোধ। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো হলো-
খেজুর রস সংগ্রহের স্থানটি বাঁদুড়ের উৎপাতমুক্ত রাখা
প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানকার খেজুর গাছগুলোর খেজুর রসের স্বাদ বাড়তে থাকে। এ সময় গাছগুলোতে রাতের বেলা শুরু হয় বাঁদুড়ের উৎপাত। তাই সংক্রমণ রোধ করার প্রচেষ্টায় প্রথমে খেজুর রস সংগ্রহের জায়গা অর্থাৎ এই গাছগুলো বাঁদুড়ের সংস্পর্শে আসা থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষামূলক আবরণ যেমন- বাঁশ, ধোইঞ্চা, পাট কাঠি ও পলিথিনের স্যাপ স্কার্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো খেজুর রস সংগ্রহের স্থান থেকে বাঁদুড়কে দূরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই সময়ে যারা নিয়মিত খেজুর রস সংগ্রহ করেন বিশেষ করে গাছিদের এই পদ্ধতি অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়।
খেজুর রস সংগ্রহের সরঞ্জামাদি পরিষ্কার রাখা
গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য মাটির হাড়ি ব্যবহার করা হয়। শীত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেজুর গাছগুলোতে একটি করে মাটির হাঁড়ি ঝুঁলে থাকতে দেখা যায়। বাঁদুড় খেজুর রস খাওয়ার সময় মল-মূত্র ত্যাগ করে এগুলো দূষিত করে ফেলে। এই ময়লাগুলোর মাধ্যমেও নিপা ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। তাই প্রতিবার রস সংগ্রহের সময় হাঁড়ির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। অবশ্য উপরোল্লিখিত স্যাপ স্কার্টগুলো ব্যবহার করা হলে বাঁদুড় বা অন্যান্য পাখির ময়লা লাগার সম্ভাবনা থাকে না।
সংগৃহীত খেজুর রস অন্যান্য পশুর সংস্পর্শে না রাখা
প্রতিরক্ষামূলক বেষ্টনী থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করলেই কাজ শেষ নয়। সংগৃহীত রস বাড়ির যে জায়গাটিতে রাখা হচ্ছে সে জায়গাটিতে গরু বা ছাগলের আনাগোনা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা বাঁদুড় থেকে প্রায় সময় গরু-বাছুর ও ছাগলেও নিপা ভাইরাস ছড়ায়। অতঃপর এগুলো খেজুর রস রাখার জায়গাগুলোকে দূষিত করে ফেলতে পারে। এই বিষয়টি বিশেষ করে যারা খেজুর রস সংগ্রহ করে বাজারজাত করে থাকেন বা গাছিদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
এই সংক্রমিত গবাদি পশু খেজুর রস দূষিত করা ছাড়াও সরাসরি মানুষের সংস্পর্শে এসে মানুষের মধ্যে নিপা ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই গৃহপালিত পশু পরিচালনার সময় গ্লাভস ও অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে থাকা নিরাপদ। তাছাড়া বাড়ির যে স্থানটিতে খেজুর রস রাখা হয়েছে সেখানে বাঁদুড়ই এসে দূষিত করে দিয়ে যেতে পারে। তাই বাড়িতে বাঁদুড় বা অন্যান্য পশুর ধরা ছোয়ার বাইরে নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে নতুন খামার করার সময়েই বাদুড়মুক্ত স্থান নির্বাচন করা উচিত। আর প্রাদুর্ভাবের এলাকাগুলো সপরিবারেই ত্যাগ করা উচিত।
আরও পড়ুন: জেনে নিন ডালিমের খোসার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার
ঢাকার কোথায় ভালো পরিবেশে সাঁতার শেখা যায়
সারা শরীরের রক্ত সঞ্চালন এবং হৃদযন্ত্রে কার্যকলাপ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার চমৎকার উপায় হলো সাঁতার। এক ঘণ্টা সাঁতার কাটা হাড় এবং জয়েন্টগুলোতে কোন নেতিবাচক প্রভাব ছাড়াই শরীরের ক্যালোরি খরচ করতে সাহায্য করে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা কমাতে বা শারীরিক সুস্থতাকে ত্বরান্বিত করার জন্যও সাহায্য করতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা শারীরিকভাবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন বা দীর্ঘ দিন ধরে আহত ব্যক্তিদের ব্যায়ামের জন্য সাঁতারকে বেছে নিতে বলেন। এছাড়া দুশ্চিন্তা কমিয়ে মানসিক প্রশান্তি লাভের ক্ষেত্রেও সাঁতার বেশ কার্যকর। তাই চলুন জেনে নিই, ঢাকার কোথায় ভালো পরিবেশে সাঁতার শেখা যায়।
ঢাকায় সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুইমিংপুল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে সাঁতার শেখার জন্য ২ হাজার ১০ টাকা দিয়ে ৪৫ মিনিট করে ১৬টি ক্লাস করা যায়। দ্বিতীয় মাসে অনুশীলন করতে চাইলে নবায়ন ফি বাবদ এক হাজার টাকা দিতে হয়। এখানকার শিক্ষার্থীরা ১০০ টাকা দিয়ে সপ্তাহে দুটো করে ক্লাস করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সুইমিংপুলের সদস্য নিতে পারেন ২৬০ টাকা দিয়ে। বিকালের শিফটে সুইমিংপুলের সদস্যদের ফি ছয় মাসের জন্য ৮ হাজার টাকা ও এক বছরের জন্য ১২ হাজার টাকা।
এখানে ভর্তি হওয়া যাবে সাত বছর বয়স থেকে, কিন্তু প্রশিক্ষনার্থীকে লম্বায় কমপক্ষে অবশ্যই চার ফুট হতে হবে। সুইমিংপুলের সাপ্তাহিক বন্ধ বৃহস্পতিবার।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্স, মিরপুর
এই সুইমিংপুলে এক ঘণ্টা করে সাঁতার কাটা যায়। এখানে ভর্তির বয়স কমপক্ষে আট বছর। রবিবার ও সোমবার বাদে প্রতিদিনি খোলা থাকে সুইমিংপুলটি। ভর্তি ফি তিন হাজার টাকা দিয়ে মাসের যে কোন দিন-ই সাঁতার প্রশিক্ষণে ভর্তি হওয়া যাবে। প্রশিক্ষণের মেয়াদ ত্রিশ দিন যেখানে প্রতি সপ্তাহে ক্লাস থাকবে পাঁচ দিন। দ্বিতীয় মাস থেকে আড়াই হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়া একদিন সাঁতার কাটতে চাইলে এক ঘণ্টার জন্য ২৫০ টাকা। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা সাঁতার শেখার ব্যবস্থা আছে। দশ বছরের নিচে প্রশিক্ষণার্থীর ক্ষেত্রে সাথে একজন অভিভাবক সুইমিংপুলে প্রবেশ করতে পারবেন।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম সুইমিংপুল
এই সুইমিংপুলটি শুধুমাত্র ছেলেদের জন্য। সাত বছর বয়স থেকে এখানে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি নেয়া হয়। প্রথম মাসে ভর্তি ফি আড়াই হাজার এবং দ্বিতীয় মাস থেকে দুই হাজার টাকা। মাসের যে কোন দিন ভর্তি হয়ে শুরু করা যাবে ত্রিশ দিনব্যাপি কোর্সটি। সপ্তাহে পাঁচ দিন এক ঘণ্টা করে ক্লাস। সাপ্তাহিক বন্ধ মঙ্গলবার, বুধবার এবং সোমবার বিকালে। শুধুমাত্র যারা সাঁতার জানেন তাদের একদিনের সাঁতার অনুশীলনের জন্য ঘণ্টা প্রতি নেয়া হয় ২০০ টাকা।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত আবেগ হতে পারে শরীরের ক্ষতির কারণ