���������������������������
তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
গ্রীষ্ম শুরুর পর থেকে প্রতিটি দিন পূর্বাপেক্ষা বেশি দাবদাহ নিয়ে হাজির হয়। জুলাইয়ের শুরুতে তা নিতান্ত প্রকট আকার ধারণ করে। এমনকি এই মাত্রা প্রতি বছর বেরেই চলেছে। তাই গরমের এই তীব্রতা আগের তুলনায় অধিক গুরুত্ব সহকারে নেওয়া আবশ্যক। তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মকভাবে ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাপের সংস্পর্শে আশা ব্যক্তির শরীরের বাইরের অংশের সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভেতরের প্রত্যঙ্গগুলোও। জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই এই বিপজ্জনক তাপের সংস্পর্শে থাকতে হয়। অসহনীয় গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচবার জন্য করণীসমূহ নিয়েই আজকের স্বাস্থ্য কথন।
প্রচন্ড গরমে হিট স্ট্রোক এড়িয়ে চলার উপায়
শরীরকে যথেষ্ট পরিমাণে হাইড্রেটেড রাখা
সঠিকভাবে হাইড্রেটেড থাকা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যাদের খুব বেশি ঘরের বাইরে থাকার প্রয়োজন হয়, তাদের শরীরকে ভালভাবে হাইড্রেটেড করে বাইরে বের হওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে। এখানে নিছক এক গ্লাস পানি পান যথেষ্ট নয়। সারা দিন হাইড্রেটেড থাকা মানে সাথে সব সময় পানির বোতল রাখতে হবে।
যখনি ঘামের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তখনি সাথে সাথে স্পোর্টস ড্রিঙ্কে চুমুক দেয়া উচিত। এতে ঘামের কারণে শরীরের হারিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রোলাইটগুলোকে পুনরায় পূরণ করা যায়। পানি পানের সাথে এমনভাবে অভ্যস্ত হতে হবে যে, পানির পিপাসা পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না।
পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
উষ্ণ মৌসুমের উপযুক্ত পোশাক পরিধান
মৌসুম অনুযায়ী পোশাক পরিধানটা সুস্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতার জন্য খুবই দরকারি। আঁটসাঁট, রঙিন এবং একাধিক স্তরের মোট পোশাক শরীর থেকে ঘামকে বাষ্পীভূত করা কঠিন করে তুলতে পারে। ফলে শরীরের অতিরিক্ত তাপ মুক্তি বাধাগ্রস্ত হয়। আশপাশের অপরিবর্তিত আর্দ্রতা শরীরে ঘামের হওয়ার প্রবণতাকে বাড়াতে থাকে। পোশাক এমনিতেই গরম থাকে আর ঘাম কাপড়কে আর্দ্র করে উষ্ণতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে শরীরের তাপমাত্রা ভারসাম্য হারিয়ে কেবল অস্বস্তি বাড়াতে থাকে।
তাই প্রচন্ড গরম আবহাওয়াতে সাদা, অথবা যে কোনো হাল্কা রঙের এবং সুতি ফেব্রিকের কাপড় পড়া উচিত। এতে শরীরের অতিরিক্ত তাপ বের করে দিতে সুবিধা হয়। মুখমন্ডল রক্ষার জন্য একটি চওড়া হ্যাট পরা উত্তম।
শরীরের উন্মুক্ত জায়গাগুলোকে সূর্য থেকে বাঁচানোর জন্য প্রচুর ঘাম-প্রতিরোধী সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
পড়ুন: মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
অতিরিক্ত গরম স্থান থেকে দূরে থাকা
প্রচন্ড গরমের সময় সব জায়গাতেই তাপের ভয়াবহতা বিরাজ করে। এরপরেও যতটা সম্ভব তীব্র তাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা শরীরকে স্বাভাবিক রাখার কার্যকরি উপায় হতে পারে। ইঞ্জিনযুক্ত যে কোন গাড়ি তাপের এক বিরাট উৎস। তাই যতটা পারা যায় এ ধরনের যানবাহনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত। হোক সেটা ইঞ্জিন চালুরত অথবা পার্ক করা, উভয় ক্ষেত্রেই গাড়িটি বিপজ্জনক।
রাস্তা দিয়ে হাটার সময় ছায়ার নিচ দিয়ে চলাচল করা উচিত। যতটা সম্ভব অতিরিক্ত ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। সম্ভব হলে দিনের অধিকাংশ সময় বিশেষ করে উষ্ণতম সময়গুলো তথা- দুপুরবেলায় বাড়ির ভিতরে থাকতে হবে। সারাটা সময় বাইরে থাকতে হলে ঘন ঘন বিরতি নিয়ে কাজ করতে হবে।
ঘরের ভেতরে থাকার ক্ষেত্রে ঘরটাকেও ঠান্ডা রাখার কথা বিবেচনা করা উচিত। টেবিল ফ্যানের সামনে কতগুলো বরফ রেখে এবং ভেজা কাপড় দিয়ে ঘরের মেঝে মুছে ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা যেতে পারে। রান্নার সময় এক্সস্ট ফ্যান চালিয়ে রাখা আবশ্যক।
পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত খাবার ও জীবন ধারণ পদ্ধতি
ভারী খাবার এড়িয়ে চলা
যে কোন খাবার গ্রহণের সময় শরীরের তাপ তৈরি হয়। খাবারে পরিমাণের সাথে সমানুপাতিক হারে শরীরে তাপের যোগান হতে থাকে। তাই দুপুর এমনকি রাতের খাবারও যারা ভরপেট খান তাদেরকে সাবধান হতে হবে। ছায়ায় বা ফ্যানের নিচে বসে খাওয়া-দাওয়া করলেও এর ব্যতিক্রম হয় না। এই তাপ বৃদ্ধিটা ভেতর থেকে শরীরকে জ্বালিয়ে দিতে থাকে।
খাবারের পর হেটে হেটে হজমের চিন্তা করলেও লাভ নেই। উল্টো হাটার ফলে শরীরের তাপ আরো বেড়ে যাবে। আবার অনেক কম খাবার খাওয়া শরীরকে দুর্বল করে তুলবে। তাই কোন এক বেলা একদম ভরপেট খাবার না খেয়ে অল্প করে ৩ ঘন্টা পর পর খাবার খাওয়া যেতে পারে। এতে শরীরে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকবে।
জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া
প্রচন্ড গরমের কারণে অনেক সুঠাম দেহের অধিকারিও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারে। এগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি, প্রচন্ড মাথাব্যথা প্রভৃতি লক্ষণগুলো গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও রয়েছে হঠাৎ বিভ্রান্তি বা হ্যালুসিনেশন, হাঁটতে অসুবিধা, খিঁচুনি এবং মূর্ছা যাওয়া।
পড়ুন: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
এ অবস্থায় অতিরিক্ত গরম কমানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হলে হিট স্ট্রোক চরম আকার ধারণ করতে পারে। এমনকি খুব খারাপ অবস্থায় এটি জীবনের জন্য হুমকিতে পরিণত হয়। এতে মস্তিষ্কসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষতি সাধন হতে পারে। তাই হিট স্ট্রোকের এই অবস্থায় অবশ্যই অবিলম্বে ডাক্তারের সরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
প্রচন্ড গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় খাবার
ফলের সালাদ
শরীরে খাবারের চাহিদা, মুখে স্বাদের ভিন্নতা এবং শরীরকে পুনরায় হাইড্রেটিং-এর জন্য সেরা খাবার হচ্ছে ফলের সালাদ। বিভিন্ন রসাল ফলের ককটেল দারুণ একটি খাবার হতে পারে ব্রেকফাস্ট অথবা সন্ধ্যার স্ন্যাকসে।
তরমুজে পানির পরিমাণ শতকরা ৯০ ভাগ, কমলায় ৮৭ ভাগ, আর শসাতে ৯৫ ভাগ।
পড়ুন: কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
এক কাপ শসার টুকরোতে মাত্র ১৬ ক্যালোরি থাকে, যা ভারী খাবারের ঝামেলা থেকে অনেক অনেক দূরে। আপেল গরমের মাসগুলোতে দেহকে সতেজ রাখার গ্যারান্টিযুক্ত।
টমেটো শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু খাবারই নয়, এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। টমেটোতে থাকা লাইকোপিন মুলত একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এই ফলগুলোর সংমিশ্রণে তৈরি স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ডিশ-ই যথেষ্ট গরমের অস্বস্তির সাথে যুদ্ধ করতে।
পাতাযুক্ত সবুজ শাক
পালং শাকের মত এক গাঢ় সবুজ শাকেই পানি আছে শতকরা ৯২ ভাগ। এটি যা ঘামের মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যাওয়া ভিটামিন এবং ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মত খনিজের ঘাটতি পূরন করে। পুদিনা আরও প্রাণবন্ত ভেষজগুলোর মধ্যে একটি। তাজা পুদিনা কয়েক শতাব্দী ধরে গরম আবহাওয়ায় মানুষকে শীতল করতে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। কখনো চা-এ বা ঠান্ডা পানীয়তে কখনো বা সালাদে অভিজাত উপস্থিতি পাওয়া যায় এই পাতাটির।
পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
ডাবের পানি
ডাবের পানি ইলেক্ট্রোলাইট দিয়ে ভরা থাকে যা শরীরকে হাইড্রেটেড এবং ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এই পাওয়ার পানীয়টি তাপকে পরাস্ত করে সারাদিন ধরে শরীরকে সক্রিয় রাখে। এটি হজম ক্ষমতা বাড়াতেও কাজে লাগে। গরমের সময়ে পাকস্থলি সংক্রান্ত জটিলতায় অনেককে হরহামেশাই ভুগতে দেখা যায়।
মাছ
মাংসের উপর নির্ভর না করে ডায়েটে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে মাছের রাখা উত্তম। ভাল ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ মাংসের একটি উপযুক্ত বিকল্প। এটি আহারের পর কম তাপ উৎপন্ন করে, তাই অস্বস্তিকরভাবে ভরপেট বোধ হবে না, যা সাধারণত মুরগি এবং গো-মাংস খাবারের সময় অনুভূত হয়।
দই
দই গরমের সময় জনপ্রিয় কারণ এতে জলের পরিমাণ বেশি এবং শীতল প্রভাব রয়েছে। দই অন্ত্রের উপকারি ব্যাকটেরিয়ার অনূকুলে থাকে, যা শরীরকে খাদ্যের বিষক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। উষ্ণ মৌসুমে ঘরের বাইরে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বেড়ে যায়। এখানে দই একটি প্রতিরোধী খাবার হিসেবে কাজ করে।
পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এই মিষ্টান্নটি প্রচন্ড উষ্ণতায় ঠান্ডা পানীয়ের বিকল্প হিসেবে কার্যকরি ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন বি এবং অন্ত্র-বান্ধব ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ দই শরীরকে ভেতর থেকে প্রশান্তি দেয়। বিভিন্ন ফলের সাথে মিশিয়ে দইয়ে দারুণ স্বাদ যোগ করা যেতে পারে।
পরিশিষ্ট
প্রচন্ড দাবদাহে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে উপরোক্ত উপায়গুলো অনেকটাই স্বাস্থ্যের অনুকূলে আসতে পারে। যদিও মানুষ সৃষ্ট কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতার দরুণ প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নিজের ও আশেপাশের মানুষগুলোর সুরক্ষায় প্রত্যেকেরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। বিশেষ করে যারা তুলনামুলক ভাবে বেশি ঝুঁকিতে আছেন তাদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। এদের মধ্যে আছেন শিশু, বৃদ্ধ, স্থুলকায় ব্যক্তি এবং বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় অসুস্থ মানুষেরা। পারস্পরিক যত্নশীল হওয়ার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তীব্র গরমে দুর্ভোগকে কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে।
পড়ুন: গরমকালে কম খরচে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন?
উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রা অপেক্ষা বেশি হয়ে থাকে। প্রতিটি মানুষের নিত্য-নৈমিত্তিক কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে তার রক্তচাপের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এই পরিবর্তন কখনো এতটাই জটিল আকার ধারন করে যে, মানবদেহের ভেতরে ধমনীর প্রাচীরে দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত রক্তচাপের সৃষ্টি হয়। একটি স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা প্রতি পারদ চাপে ১২০/৮০ মিলিমিটারের মধ্যে থাকে। রক্তচাপকে এই মাত্রার মধ্যে রাখার জন্য কিছু কিছু খাবার ও পানীয়ের পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর অভ্যাস পরিত্যাগ করা জরুরি। চলুন, সেই করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
উচ্চ রক্তচাপে যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত
লবণযুক্ত খাবার
উচ্চ রক্তচাপে সবচেয়ে ক্ষতিকর ভূমিকা হচ্ছে লবণের, যার প্রধান উপাদান সোডিয়াম। বেশিরভাগ চিপস, ক্র্যাকার এবং পপকর্ন সোডিয়ামে ভরপুর থাকে। ১-আউন্স প্লেইন পটেটো চিপসে সোডিয়ামের পরিমাণ প্রায় ৫০ থেকে ২০০ মি.গ্রা. (মিলিগ্রাম)। একজন প্রাপ্তবয়স্কের দিনে ২,৩০০ মি.গ্রা. বা এক চামচের বেশি সোডিয়াম খাওয়া উচিত নয়। এছাড়াও যে লবণযুক্ত খাবারগুলো প্রায় খাওয়া হয় সেগুলো হলো- রুটি, পনির পিজা, স্যান্ডউইচ, প্রোসেস করা মাংস, স্যুপ, এবং টাকোস।
আরো পড়ুন: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
চিনিযুক্ত খাবার
রক্তচাপ বাড়ানোর পেছনে কোন কোন ক্ষেত্রে চিনিযুক্ত খাবার লবণের চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। চিনি প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের ওজন বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বাড়ায়। এছাড়া উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ যুক্ত খাবার রক্তচাপ বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ। এধরনের খাবারের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত মিষ্টি, বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত খাবার, পিনাট বাটার অন্যতম।
ট্রান্স বা স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার
একজন প্রাপ্তবয়স্কের জন্য নির্ধারিত দৈনিক ক্যালোরির ৫ থেকে ৬ শতাংশের বেশি ক্যালোরি স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে আসা উচিত নয়। এধরনের খাবার এখন খুব বেশি দেখা যায় আর এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।
মিষ্টি খাবারের মধ্যে চকোলেট, টফি, কেক-পেস্ট্রি, পুডিং, এবং বিস্কুটে অনেক স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। লাল মাংস যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষে মাংস, আর প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন সসেজ, বার্গার এবং কাবাবের মধ্যে এ ধরনের ফ্যাট প্রচুর পরিমাণে থাকে। রান্নার চর্বি যেমন মাখন, ঘি, হাসের চর্বি থেকেও এই ফ্যাট আসে। এছাড়া তেলের মধ্যে আছে নারকেল তেল এবং পাম তেল আর পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য, যেমন ক্রিম, দুধ, দই এবং পনিরও এধরনের খাবারের অন্তর্ভূক্ত।
আরো পড়ুন: হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে করণীয়
সস এবং মশলাদার খাবার
যারা অতিরিক্ত মশলাদার খাবার পছন্দ করেন তাদেরকে সাবধান হতে হবে। অতিরিক্ত মশলা মানেই উচ্চ পরিমাণে চিনি বা সোডিয়ামের যোগান। অনেক সময় নোনতা স্বাদের না হওয়া সত্ত্বেও মশলাগুলোতে সোডিয়াম ভরপুর থাকতে পারে। বেশিরভাগ টিনজাত টমেটো সস ও কেচাপ, পাস্তা সস, টমেটোর রস, চিলি সস, ও সয়া সসে সোডিয়াম বেশি থাকে।
আচারযুক্ত খাবার
আচারযুক্ত খাবার লবণের একটি ভালো উৎস। আচার তৈরির প্রক্রিয়াটাই এমন যে, এখানে খাবার লবণের সাথে অন্যান্য স্বাদ বর্ধক উপাদান মিশিয়ে খাবার সংরক্ষণ করা হয়। এই কারণে আচারযুক্ত খাবারে প্রায়শই লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। তাছাড়া খাবার লবণ যে কোন খাবারকে ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং এর মাধ্যমে খাবারটি দীর্ঘ সময় ধরে খাবারের উপযুক্ত থাকে। যাদের প্রায় আচার খাওয়ার অভ্যেস তাদের উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বেশি।
আরো পড়ুন: মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
উচ্চ রক্তচাপে যে পানীয়গুলো এড়িয়ে চলা উচিত
ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়
ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন কফি, সোডা এবং এনার্জি ড্রিংক্স শরীরে অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণের মাধ্যমে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। অনেকেরই সাত সকালে ক্যাফেইন নেয়ার অভ্যেস আছে। এ বিষয়টি তাদের খেয়াল রাখা উচিত যে ক্যাফেইন গ্রহণটি নিমেষেই আসক্তিতে পরিণত হতে পারে।
আর ইতোমধ্যে যারা কফির প্রতি আসক্ত তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য এখনি সাবধান হতে হবে। কেননা এক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের ঘটনাগুলো প্রথমে অস্থায়ী থাকে তারপর ধীরে ধীরে জটিল সমস্যার সৃষ্টি করবে। সারাদিনে একবার এক কাপ কফি তেমন ক্ষতিকর কিছু নয়। তবে কফি দিয়ে দিন শুরুর পর দুপুরের খাবারের সাথে ক্যাফেইনযুক্ত সোডা এবং বিকেলে এনার্জি ড্রিংক নেয়া সব মিলিয়ে দিনটিতে বিপজ্জনক মাত্রার ক্যাফেইন সরবরাহ করতে পারে।
চিনিযুক্ত পানীয়
লেবুর শরবতে হালকা চিনি তেমন ক্ষতিকর নয়। এমনকি সপ্তাহে দু’একবার চিনি একটু বেশি দিয়ে কোন মিষ্টি শরবত পান করাটা সমস্যা করবে না। কিন্তু শরীরে চিনির এই প্রবেশটা নিয়মিত হতে থাকলে রক্তচাপের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। এমনকি, অনেক চিনিযুক্ত পানীয়তে ক্যাফেইন থাকে, যা রক্তচাপকে অতিরিক্ত মাত্রায় বাড়িয়ে তুলতে পারে। উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপযুক্ত সোডা এবং ফলের রস এই পানীয়ের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।
আরো পড়ুন: মধু কি সত্যি অমৃত?
দোকানের স্যাকারিন দেয়া ফলের জুসগুলো সাময়িকভাবে গলা ঠান্ডা করলেও তা সামগ্রিকভাবে শরীরকে দুর্বল করে ফেলে। প্রতিদিন যে কোন কাজে বা খেলাধুলার সময় এগুলোর একটি করে পান করা শরীরে প্রচুর চিনির যোগান দেয়। ফলে বেশ স্বল্প হারে বাড়তে থাকে রক্তচাপ। এরকম মিষ্টি স্বাদের জুস বা কার্বনেটেড পানীয় দিনে ৩৫৫ মিলিলিটারের বেশি পান করা মানেই শরীরে রক্তচাপের ভারসাম্য নষ্ট করা।
অ্যালকোহল
অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন নিশ্চিত ভাবে রক্তচাপের মাত্রা ছাড়িয়ে দিতে পারে। যারা রক্তচাপ সহ অন্যান্য রোগের জন্য নিয়মিত ঔষধ খাচ্ছেন তাদের শরীরের জন্য অ্যালকোহল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। কারণ অ্যালকোহল ওষুধগুলোকে রোগ প্রতিরোধে সক্রিয় হতে দেয় না। এভাবে একসময় ঔষধগুলো কার্যকারিতা হারায়।
সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো, ঔষধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শরীরে থেকে যাওয়ার দরুণ ঔষধ খাওয়ার ফলে উল্টো হিতে বিপরীত ঘটে। এছাড়াও অনেক অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়তে চিনি এবং ক্যালোরির পরিমাণ এতটাই থাকে যে, তা অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতার কারণ হয়ে দাড়ায়। এ সবকিছু একত্রে উচ্চ রক্তচাপের দিকে ধাবিত করে।
আরো পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
উচ্চ রক্তচাপের সময় যে অভ্যাসগুলো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে
অতিরিক্ত ওজন এবং পর্যাপ্ত ব্যায়ামের অভাব
যারা নিজেদের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ভাবছেন না তাদের জন্য রক্তচাপ অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ নিয়ে আসতে পারে। একটি স্বাস্থ্যকর ওজন শুধু উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণই করে না; পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যারও সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। নিয়মিত শরীরচর্চা এরকমাত্র উপায় এই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার। একটি প্রাপ্তবয়স্ক দেহে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াই ঘন্টা মাঝারি ব্যায়ামের চাহিদা থাকে। অল্প সময়ের জন্য ম্যারাথন হাঁটা হৃদপিণ্ডের স্পন্দন দ্রুত করে এবং ফুসফুসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অক্সিজেন প্রবেশ করে।
ধূমপান
প্রতিটি সিগারেট ধূমপান শেষ করার পর কয়েক মিনিটের জন্য রক্তচাপ বাড়ায়। এভাবে ঘন ঘন ধূমপান রক্তচাপ বাড়ানোর বিরতিটাকে কমিয়ে এনে বিপদের কারণ হতে পারে। তাই বলে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ধূমপান মানে এই নয় যে সে সময়টাতে ফুসফুস আবার তার আগের সুস্থতায় ফিরে আসবে।
আরো পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
অল্প ধূমপানও ধীরে ধীরে উচ্চ রক্তচাপের অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে মারা না গেলেও জীবনের আয়ু তো কমেই; পাশাপাশি শেষ বয়সে বিধ্বস্ত ফুসফুস নিয়ে মৃত্যুর দিন গুণতে হয়। যারা কখনো ধূমপান ছাড়েন নি, তাদের চেয়ে যারা ধূমপান ত্যাগ করেন তারা বেশি দিন বাঁচতে পারেন।
দীর্ঘ সময় যাবত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকা
দুশ্চিন্তা শুধুমাত্র মানসিক সমস্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর দৈহিক প্রভাবও বেশ ভয়াবহ। সবচেয়ে বড় ফলাফল হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ। আর এটিই দেহের মধ্যে অনেক বিপজ্জনক রোগের ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে পারে। অনেকে দুশ্চিন্তার কারণে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, অ্যালকোহল পান বা ধূমপানের দিকে অগ্রসর হন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সারা দেহ উচ্চ রক্তচাপের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। জীবনের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব, বদরাগ, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাও দুশ্চিন্তার সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর কারণেও রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে মাত্রাতিরিক্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
শেষাংশ
উচ্চ রক্তচাপের সময় ক্ষতিকর খাবার ও পানীয়গুলো এড়িয়ে চললে রক্তচাপকে স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হবে । এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এই উদ্যোগকে ফলপ্রসু করতে প্রয়োজন জীবন ধারণ পদ্ধতি তথা কিছু উপরোক্ত অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করা। এ কথা অনস্বীকার্য যে, রাতারাতি সুস্বাস্থ্যের অধিকারি হওয়া সম্ভব নয়। এখানে প্রয়োজন দীর্ঘ দিনের পরিশ্রম, ধৈর্য্য ও আত্মবিঃশ্বাস। যৌবন থেকে বার্ধক্যে পদার্পণের পরেও সুস্থ দেহ ও মন নিয়ে দিন যাপনে স্বাস্থ্যচর্চার কোন বিকল্প নেই।
আরো পড়ুন: ‘মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে ৪৫ শতাংশ গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়’
‘মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে ৪৫ শতাংশ গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়’
মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে ৪৫ শতাংশ গ্যাস্ট্রিক আলসার হয় বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, প্রোটন-পাম্প ইনহিবিটর (পিপিআই) বা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ মাত্রাতিরিক্ত খাবার ফলে ৪৫ শতাংশ গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়। এর ফলে মাইক্রো নিউক্রিয়েন্ট যে গুলো লস হচ্ছে, যার ফলে দেহের ফ্রাকচার হয়। এমনকি এই পিপিআই ব্যবহারের ফলে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বিটামিন -১২ ও আয়রন ডিফিসিয়েন্সি হচ্ছে।
রবিবার সকাল সাড়ে ৮ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লকের মিলনায়তনে ‘ওভারইউজ অব পিপিআই: এ রিভিউ অব এমার্জিং কনসার্ন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, তাই বলে এসব রোগের ভয়ে হঠাৎ করে পিপিআই বন্ধ করা যাবে না। পিপিআই ক্রমে দুই সপ্তাহ, এক সপ্তাহ করে কমিয়ে দিতে হয়ে। দিনে একটি, দুদিন পরে আরেকটি করে ওষুধ দেয়া যেতে পারে। আমরা যদি ডিসিপ্লিনড ভাবে চলাফেরা করি তাতেও অ্যাসিডিটি হবে না। অ্যাসিডিটি না হলে ওষুধ খাওয়া লাগবে না। ওষুধ খাওয়া হলে আরেকটি রোগ তৈরী করা। একটি রোগের জন্য ওষুধ খেলে আরেকটি রোগের সৃষ্টি হতে পারে। কারণ প্রোটন-পাম্প ইনহিবিটর হচ্ছে এমন ধরনের ওষুধ যার প্রধান কাজ হলো পাকস্থলীর প্যারাইটাল কোষ থেকে এসিড নিঃসরণ কমানো।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, আমরা দেখছি বাংলাদেশের মানুষ পণ্যের মত রাস্তাঘাটে ওষুধও কিনে থাকে। অনেকে আবার ফার্মাসিতে গিয়ে দামী ওষুধ কিনে থাকেন। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ফলে আমরা যে অবস্থায় রয়েছি, তাতে দেশে ২০৫০ সালের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক এর অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে করোনা ভাইরাসের চেয়ে বেশি লোক মারা যাবে। আমাদের অনেকে যখন-তখন স্টোরয়েড কিনে খাই, এগুলো খেয়ে মোটাতাজা হই; কিন্তু এর ভবিষ্যৎ খুব খারাপ।
এসময় বিএসএমএমইউ উপাচার্য করোনাভাইরাসের প্রকোপের সময়ের মত এখনও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি মাংকিপক্স নিয়ে সকলকে সতর্ক থাকতেও বলেন।
আরও পড়ুন: ‘মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্লান্টের সাফল্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজীবুল আলম বলেন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের বড় অংশ বিক্রি হচ্ছে ব্যবস্থাপনাপত্র ছাড়া। রোগীর একটু পাতলা পায়খানা, মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথাসহ নানা জটিলতা দেখা দিলে ফার্মেসির দোকানীরা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিচ্ছেন। এই ক্ষেত্রেই একটু পানি পান করালে বা হালকা কিছু ওষুধ ব্যবহার করলে এই সমস্যা সমাধান করা যেত। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবস্থাপনাপত্র ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের কারণে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের কারণে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার ও স্মৃতিভ্রম মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম কমে আসতে পারে।
তিনি বলেন, রোগীর প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই এ ধরনের ওষুধ ব্যবস্থাপনা লিখতে হবে কিন্তু অপ্রয়োজনীয় অতিমাত্রায় এর ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। যত্রতত্র এবং অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ব্যবহার কমাতে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইউএস ও ইউকে যখন ইচ্ছা তখন ওষুধ বিক্রি এবং কেনা সম্ভব না। বছরে তিনবার গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ কিনতে পারবেন। এর বেশি কিনতে পারবেন না আপনি। কারণে ওখানে সবকিছুর রেকর্ড থাকে, আর এর বিল পে করে কোন বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠান। যদি আমাদের দেশে স্বাস্থ্যবীমা থাকতো, তবে ওষুধ বিক্রি ও কেনা এবং তদারকি করা সম্ভব হতো; তাহলে এই অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্যাস্ট্রোএন্টারলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজিবুল আলম, ফার্মাকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শরবিন্দু কান্তি সিনহা।
নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সবুজের সঞ্চালনায় প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররাফ হোসেন, উপ উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
আরও পড়ুন: ইউনাইটেড হাসপাতালে বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত
কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
বিশ্বব্যাপী উষ্ণতায়নের নিরন্তর প্রভাব বিস্তারে বিলাসবহুল এসি বা এয়ার কন্ডিশনার পরিণত হয়েছে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পণ্যে। ফ্যানের নিচে থেকেও ঘর্মাক্ত কলেবর অবস্থাটা এখন নিত্যদিনের প্রতিচ্ছবি। লোডশেডিংয়ের শহরে এসির শতভাগ সুবিধা পাওয়া নিয়ে মুশকিলে পড়তে হয়। এছাড়া মাস শেষে মোটা অঙ্কের বিদ্যুৎ বিলের চাপ তো আছেই। এরপরে কয়েক মাস পর পর মেরামতের হয়রানি। একদিকে প্রচন্ড গরমে ডিহাইড্রেশন সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়, আরেক দিকে কৃত্রিম ঠান্ডা বাতাসের সাথে মানিয়ে নিতে না পারার কারণে নানা শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি। সর্বোপরি স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকিটা থেকেই যাচ্ছে। এ অবস্থায় চলুন জেনে নেয়া যাক- এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই কিভাবে ঘরকে ঠান্ডা রাখবেন।
গ্রীষ্ম ঋতুতে ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা রাখতে এয়ার কন্ডিশনার-এর বিকল্প উপায়সমূহ
ঘরের ভেতর গাছ রাখা
ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই কাজটি অনেকেই করে থাকেন। অনেকেরই বারান্দায় ছোট বাগান করার শখ থাকে। ঘরের ভেতর জানালার কাছে বা বারান্দায় এভাবে গাছ রাখা হলে তা বাইরের গরম তাপ শুষে নেয়। তাছাড়া গাছগুলো সারা ঘরের শোভাবর্ধনও করে। এগুলোর মধ্যে মানিপ্লান্ট, স্নেক প্লান্ট, অ্যালো ভেরা, এবং অ্যারিকা পাম বেশ জনপ্রিয়। তবে কারো উদ্ভিদে অ্যালার্জি থাকলে সতর্ক থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আগে থেকেই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেয়া উত্তম।
পড়ুন: ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে কোথায় ঘুরতে যাবেন?
তাছাড়া গাছ শুধু রাখলেই হবে না, এর যথাযথ পরিচর্যাও করতে হবে। ঘরের ভেতর রাখা এই গাছগুলো সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার জন্য ঘরের গরম বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নেয়। এতে বাতাসে আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে ঘরে ঠান্ডা ভাব বজায় থাকে। সম্ভব হলে বাড়ির বাইরের দিকেও গাছ লাগানো উচিত। এতে করে বাইরের যত গরম তাপ বাড়ির দেয়ালের বাইরে অংশেই রয়ে যায়। অন্যদিকে ঘরের ভেতরটা শীতল থাকে।
ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
বাংলাদেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে ডায়রিয়া রোগের ভয়াবহ রূপ নতুন নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ডায়রিয়া সংক্রমণ দেশজুড়ে শঙ্কার সৃষ্টি করছে। আইসিডিডিআরবি (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ)-এর তথ্যানুসারে, বিগত নয় দিনে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ১৬১ জন। কর্মকর্তাদের দাবি-প্রতিষ্ঠানটির ৬০ বছরের ইতিহাসে রোগীর এমন চাপ নজিরবিহীন। এমনকি হাসপাতালের বাইরেও তাঁবু টানিয়ে চিকিৎসা চলছে। বিশুদ্ধ পানির যথেষ্ট যোগান না থাকায় এবং অতি ব্যস্ততার ফলে বাসি খাবারের উপর নির্ভরশীলতা ডায়রিয়ার সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। এমন সংকটাপন্ন সময়ে সতর্ক থাকতে চলুন, ডায়রিয়া রোগের ব্যাপারে বিশদ জেনে নেয়া যাক।
কী কী কারণে ডায়রিয়া হয়
ভাইরাস
ডায়রিয়া সংক্রমণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখা ভাইরাসগুলোর মধ্যে রয়েছে নরোভাইরাস, অ্যাস্ট্রোভাইরাস, এন্টারিক অ্যাডেনোভাইরাস, ভাইরাল হেপাটাইটিস এবং সাইটোমেগালোভাইরাস। রোটাভাইরাস বাচ্চাদের ডায়রিয়ার তীব্রতার জন্য দায়ী। কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসও ডায়রিয়া সংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টির পেছনে কাজ করে।
দূষিত পানি নরোভাইরাস, অ্যাস্ট্রোভাইরাস, হেপাটাইটিস এ ভাইরাস, এবং স্যাপোভাইরাসের একটি বড় উৎস। হিমায়িত সবজি হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের বড় উৎস। নোরোভাইরাস থাকে পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি এবং তাজা ফলের মধ্যে। হেপাটাইটিস এ এবং নোরোভাইরাস সংক্রমণ অনুপযুক্ত খাদ্য পরিচালনার মাধ্যমেও হয়ে থাকে।
ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী
দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ই কোলাইয়ের মত প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবীর সংস্পর্শে আসার ফলে ডায়রিয়া হয়। দূষিত পানি ছাড়াও ই কোলাই কাঁচা বা কম রান্না করা গরুর মাংস, কাঁচা শাকসবজি এবং পাস্তুরিত দুধে থাকে।
পড়ুন: খুলনায় শিশুরোগ ও ডায়রিয়া বেড়েছে
ওষুধ সেবন
কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে যেগুলো দেহের খারাপ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলার পাশাপাশি ভালো ব্যাকটেরিয়াও মেরে ফেলে। ফলে অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটে, যা পুরো শারীরিক অবস্থাকে ডায়রিয়ার দিকে ধাবিত করে। এছাড়াও অ্যান্টি-ক্যান্সার ওষুধ এবং ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত অ্যান্টাসিড ডায়রিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী।
ল্যাকটোজ সমস্যা
ল্যাকটোজ হল দুধ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যে পাওয়া এক ধরনের চিনি। যাদের ল্যাকটোজ হজম করতে অসুবিধা হয় তাদের দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার পর ডায়রিয়া হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যাটি বাড়তে পারে, কারণ যে এনজাইমটি ল্যাকটোজ হজম করতে সাহায্য করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার মাত্রা কমতে থাকে।
ডায়রিয়ার লক্ষণসমূহ
ডায়রিয়ার প্রধান উপসর্গগুলো হল মলত্যাগের জন্য প্রচন্ড চাপ অনুভূত হওয়া, এবং ঘন ঘন পাতলা পায়খানা। এছাড়াও বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, পেটে চাপ অনুভূত হওয়া, পেট ফোলা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত অবস্থায় ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা হয়।
ডায়রিয়ার গুরুতর জটিলতা হল পানিশূন্যতা। ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে প্রয়োজনী তরলের একটি বিশাল অংশ বেরিয়ে যায়। আর এর ফলেই পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ে। পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো হলো প্রচন্ড ক্লান্তি, শুকনো শ্লেষ্মা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, মাথাব্যথা, তৃষ্ণা বৃদ্ধি, প্রস্রাব হ্রাস এবং শুষ্ক মুখ।
বাচ্চারা ডায়রিয়া এবং পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে বেশ সংবেদনশীল। এ সময় বাচ্চাদের প্রস্রাব কমে যায়, মুখ শুকিয়ে যায়, মাথাব্যথা হয়, ক্লান্ত দেখায়, কান্নার সময় চোখে পানি থাকে না, চোখ আধবোজা- আধখোলা অবস্থায় থাকে, তন্দ্রাতুর দেখায় এবং সবসময় বিরক্ত থাকে।
পড়ুন: ফরিদপুরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে
ডায়রিয়া হলে করণীয়
সাধারণ অবস্থায় ডায়রিয়া কয়েক দিনের মধ্যে চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যেতে পারে। শরীর খারাপের সময়টুকু বিশ্রামের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানীয় পান করতে হয় এবং অন্যান্য খাবারের সময় সতর্ক থাকতে হয়।
শরীরকে পানিপূর্ণ রাখার জন্য পরিষ্কার তরল পান ও ফলের রস খেতে হবে। এ সময় দিনে প্রায় ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। একবারে টান দিয়ে পুরো গলধঃকরণের পরিবর্তে অল্প পরিমাণে চুমুক দিয়ে পান করা যেতে পারে।
ডায়রিয়া হলে দেহকে পানিপূর্ণ রাখতে ডাক্তার লবণ, পটাসিয়াম এবং ক্লোরাইড-এর মত স্পোর্টস পানীয়গুলো পানের পরামর্শ দিতে পারে। ঘন ঘন বমি বমি ভাব হলে ধীরে ধীরে তরলে চুমুক দিয়ে পান করা ভালো। এ সময়ের জন্য উপযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে আলু, চিনাবাদামের মাখন, টার্কির মাংস এবং দই।
যে খাবারগুলো ডায়রিয়া বা শরীরে গ্যাসের অবস্থা আরও খারাপ করে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলোর মধ্যে আছে চর্বিযুক্ত বা ভাজা খাবার, কাঁচা ফল এবং শাকসবজি, মশলাদার খাবার, মটরশুটি এবং বাঁধাকপি এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, যেমন কফি ও সোডা।
যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই শরীর উন্নতির দিকে যায় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডায়রিয়া ভালো হয়ে যায়। যদি উপসর্গ ২ দিনের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তখন ডাক্তারের সরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ গুরুত্বের সাথে নিতে হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি অবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এগুলো হলো- অবিরাম বমি, ক্রমাগত ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা, উল্লেখযোগ্য হারে ওজন হ্রাস, মলের মধ্যে পুঁজ ও রক্ত, কালো মল বের হওয়া ইত্যাদি।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যে উপসর্গগুলো অবিলম্বে চিকিৎসার দাবি রাখে সেগুলো হলো- ২৪ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ধরে ডায়রিয়া, জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি, রক্ত ও পুঁজ মল এবং কালো মল।
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে ডায়রিয়া হলে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কথা বলতে পারেন। অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পূর্বে ডাক্তার রোগীর কিছু শারীরিক অবস্থা নিরীক্ষা করবেন। সেগুলো হলো- ডায়রিয়া তীব্রতা, পানিশূন্যতার তীব্রতা, রোগীর স্বাস্থ্যের সামগ্রিক অবস্থা, চিকিৎসা ইতিহাস, বয়স, এবং রোগীর বিভিন্ন পদ্ধতি বা ওষুধ সহ্য করার ক্ষমতা।
পড়ুন: চট্টগ্রামে বেড়েছে ডায়রিয়া: চাপ সামলাতে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখার নির্দেশ
ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায়
নিয়মিত হাত ধোয়া
যে কোন ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচার মোক্ষম উপায় হলো খাবার তৈরি ও খাওয়া আগে এবং পরে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেয়া। রান্না করা, টয়লেট ব্যবহার, বাচ্চার ডায়াপার পরিবর্তন, হাঁচি, কাশি এবং নাক ফুঁকানোর পরে হাত ধুয়ে নেয়া জরুরি। হাতে সাবান লাগানোর পরে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য দুই হাত একসাথে ঘষতে হবে। হাত ধোয়ার বিকল্প হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অ্যালকোহল-যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিত। এ সময় হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এমনভাবে প্রয়োগ করতে হবে যেন তা উভয় হাতের সামনে এবং পিঠে ভালোভাবে লাগে। একটি ভালো হ্যান্ড-স্যানিটাইজারে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে।
ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা
ডায়রিয়া বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের সময় সংক্রমণ হতে পারে। যেখানে ভ্রমণ করা হচ্ছে সেখানকার অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন এবং দূষিত খাবার নিমেষেই শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে নিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমাতে করণীয়গুলো হলোঃ
নতুন জায়গায় খাবারের ব্যাপারে সতর্কতা
গরম ও ভালোভাবে রান্না করা খাবার খান। কাঁচা ফল এবং শাকসবজি এড়িয়ে চলতে হবে। অবশ্য সেগুলো রান্নার জন্য প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ নিজেই করলে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও কাঁচা বা কম রান্না করা মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি।
পড়ুন: রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবে হাসপাতালে ভর্তি শতাধিক
নতুন জায়গার পানীয়র ব্যাপারে সতর্কতা
বোতলজাত পানি বা সোডা বোতল থেকেই পান করা উচিত। কলের পানি এবং বরফের টুকরো এড়িয়ে চলতে হবে। এমনকি দাঁত ব্রাশ করার জন্যও বোতলজাত পানি ব্যবহার করা জরুরি। গোসল করার সময় বোতলের মুখ বন্ধ রাখতে হবে। সিদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি কফি এবং চা নিরাপদ। এক্ষেত্রে মনে রাখা উচিত যে অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন ডায়রিয়াকে বাড়িয়ে তোলে যা পানিশূন্যতাকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দেয়।
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ
দীর্ঘ সময়ের ভ্রমণের জন্য আগে থেকেই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া যেতে পারে। এ সময় ডাক্তার শরীরের যাবতীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এবং রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাচাই করে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ দিবেন।
পরিশিষ্ট
কোভিডের চাপটা কমতে না কমতেই শুরু হয়ে গেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। মুলত এরকম সংক্রমণ আকস্মিক নয়। বরং সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার অস্থিতিশীলতা এ ধরণের রোগবালাইয়ের কারণকে সুসঙ্গত করে। জীবন ও জীবিকা সামলানোর অনিয়ন্ত্রিত দৌড়ে আশেপাশের পরিবেশ ও শরীর-স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে। আর এর সাথে যখন উদাসীনতা যোগ হয় তখনই চাপের ভয়াবহতা বাড়তে থাকে।
পড়ুন: ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার
‘মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্লান্টের সাফল্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’
সম্প্রতি ইউনাইটেড হসপিটাল লিমিটেড এ ৪২ বছর বয়স্ক এক নারীর হৃদপিণ্ডে সফল মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্লান্ট এর মধ্য দিয়ে দেশের স্বাস্থ্যসেবার ওপর আস্থা সৃষ্টি হচ্ছে নতুনভাবে।
রবিবার (২৭ মার্চ) ‘মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্লান্টের সাফল্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ নামক এক অনুষ্ঠানে এ সর্ম্পকে রোগী ও তাদের আপনজনেরা বক্তব্য রাখেন।
ইউনাইটেড হসপিটালের প্রধান কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবির এবং তার দক্ষ সহকর্মীরা সফলভাবে ৪২ বছর বয়স্ক এক নারীর হৃদপিণ্ডে গত ২ মার্চ, ২০২২ ইউনাইটেড হসপিটালে একটি মেকানিক্যাল হার্ট বা এল্ভ্যাড স্থাপন করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট সম্পন্ন
প্রেস কনফারেন্সে রোগী ও তার পরিবারের সদস্যরা অস্ত্রোপচারের বিষয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ।
এসময় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য তারা ডা. জাহাঙ্গীর কবির এবং তার দক্ষ দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সঙ্গে তারা ইউনাইটেড হাসপাতালের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ আইসিইউ থেকে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী পরিচর্যা নিয়েও সন্তুষ্টির কথা জানান।
অনুষ্ঠানে ডা. জাহাঙ্গীর কবির ও তার দক্ষ সহকর্মীদের কৃতিত্বের জন্য সম্মাননা দেয়া হয়। বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় হার্ট সার্জনদের এই দলটি ইউনাইটেড হাসপাতালের সূচনা থেকে দেড় হাজার জনেরও বেশি মানুষের হৃদযন্ত্রের সফল অস্ত্রোপচার করেছেন।
আরও পড়ুন: ইউনাইটেড হাসপাতালে বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত
ইউনাইটেড হাসপাতালে বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত
প্রতি বছরের মতো এবারও ইউনাইটেড হাসপাতালে বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক,নার্স ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হাসপাতালে আগত রোগীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালের লবীতে একটি হেলথ চেক বুথ উদ্ধোধনের মাধ্যমে দিবসটির সূচনা করেন। দিনব্যাপী এই ফ্রি হেলথ চেক বুথে প্রায় পাঁচ শতাধিক রোগী ও তাদের স্বজনেরা স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুবিধা গ্রহণ করে। এছাড়াও দুপুরে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের উপস্থিতিতে সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এই উপলক্ষে হাসপাতালের ডিরেক্টর মেডিকেল সার্ভিসেস (ডিএমএস) ডা. শান্তি বানসাল বলেন, এ বছর কিডনি দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘সুস্থ কিডনি সবার জন্য- জ্ঞানের সেতুবন্ধনে সাফল্য’।
বিশ্ব কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তিনি বলেন, কিডনির যত্নে, জ্ঞানের শূন্যতা দূর করে, আমাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে, সচেতন করতে হবে। কিডনি ও এর জটিলতার সৃষ্ট সকল রোগের চিকিৎসায়,ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট সম্পন্ন
এ সময় ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ কনসালটেন্ট, নেফ্রোলজি এবং পরিচালক, রেনাল সেন্টার, প্রফেসর ডা. মো. নুরুল ইসলাম বলেন,ইউনাইটেড হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৩৯টি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এখন তা সাময়িক বন্ধ আছে। আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে আবার ইউনাইটেড হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হবে।
নেফ্রোলজি কনসালটেন্ট ডা.তানভীর বিন লতিফ বলেন, এ দেশে বেশ কিছু ডায়ালাইসিস সেন্টার গড়ে উঠেছে, যেখানে প্রধানত হেমোডায়ালাইসিসই দেয়া হয়ে থাকে। হেমোডায়ালাইসিস শুধুমাত্র একটি মেশিন নয়, এর সঙ্গে জড়িত আছে চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং কারিগরী দক্ষতা। যা ইউনাইটেড হসপিটালে অত্যন্ত মনোযোগ ও যত্ন সহকারে পরিচালনা করা হয়।
নেফ্রোলজি কনসালটেন্ট ডা. তানিয়া মাহবুব জানান, ডায়ালাইসিস চলাকালীন সময়ে মাসে ২-৩ বার নিয়মিত ফলোআপ করা জরুরি। এছাড়া নারী রোগীদের ঝুঁকি বেশী বিধায় তাদের ইউনাইটেড হসপিটালে বিশেষ স্ক্রীনিং এর আওতায় জরুরি রোগ নির্ণয় সুবিধা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট সম্পন্ন
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট বা যান্ত্রিকভাবে হৃদপিণ্ডের কাজ প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
ইউনাইটেড হসপিটালের প্রধান কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবির গতকাল বুধবার ইউনাইটেড হসপিটালে ৪২ বছর বয়স্ক এক নারীর হৃদপিণ্ডে মেকানিক্যাল হার্ট স্থাপন করেন। যিনি দীর্ঘদিন শেষ পর্যায়ের বা তীব্র হার্ট ফেইলিওর নামক হৃদপিণ্ডের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের বর্তমান উৎকর্ষতায় উন্নত বিশ্বে এর একমাত্র চিকিৎসা আরেকটি সুস্থ হার্ট দিয়ে প্রায় অকার্যকর হার্টটি প্রতিস্থাপন। তবে যদি সুস্থ হার্ট না পাওয়া যায় কিংবা পেতে দেরী হচ্ছে এবং হার্টের অবস্থা যদি দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে তবে মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। এতে রোগীর হার্ট কিছুটা বিশ্রাম পায় এবং সমস্ত শরীরের রক্ত চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে । ফলে শরীরে অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার ইত্যাদি সেরে ওঠার সুযোগ পায়। তীব্র হার্ট ফেইলিওরে আক্রান্ত কিছু রোগী হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট এর উপযুক্ত না হলে তাদের জন্য একমাত্র বিকল্প এল্ভ্যাড, যা স্থাপনের মাধ্যমে বাকি জীবন সুস্থভাবে অতিবাহিত করতে পারেন।
আরও পড়ুন: কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
ডা. জাহাঙ্গীর কবির ও তার দক্ষ সহকর্মীরা প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় ধরে সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে হার্টমেট-৩ নামের একটি মেকানিক্যাল হার্ট রোগীর হৃদপিণ্ডের বাম নিলয়ে স্থাপন করেন এবং তার পুরো হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন। আশা করা যাচ্ছে এর মাধ্যমে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমে আসবে এবং হার্ট ফেইলিওরের লক্ষণ সমূহের উন্নতি ঘটবে।
বাংলাদেশে হার্ট সার্জারীর প্রথম সারির এ চিকিৎসক দল ইউনাইটেড হসপিটালের শুরু থেকেই ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষের হার্টের সফল সার্জারী করেছেন ।
বর্তমানে সারা বিশ্বে দশ মিলিয়ন এরও বেশি মানুষ ‘হার্ট ফেইলিওর’ রোগে আক্রান্ত । এশিয়ায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব এক দশমিক ২৬ শতাংশ থেকে ৬দশমিক সাত শতাংশ ।
আরও পড়ুন: শীতকালে কেনো বেশি ঘুম পায়?
শীতকালে কেনো বেশি ঘুম পায়?
বছরান্তে সময়টা যতই পৌষ-মাঘের কাছাকাছি হতে শুরু করে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে অত্যধিক ঘুম ঘুম ভাব প্রবণতা। এরকম অনস্বীকার্য শীতের ক্লান্তিটা প্রায়ই কাজের রুটিনটাকে ওলোট-পালোট করে দেয়। কখনো মনে হতে পারে সারাদিন শারীরিক পরিশ্রম বা অতিরিক্ত কাজের জন্য হয়ত ঘুম ঘুম ভাবটা বেড়েছে। কিন্তু শীতের মৌসুমে ঘুমের এমন অদ্ভূত আচরণটা স্বাভাবিক। চলুন জেনে নেয়া যাক, কেন এরকমটা হয়, আর এ থেকে উত্তরণের উপায়ই বা কি।
শীতে যে কারণে বেশি ঘুম আসে
এক কথায় বলতে গেলে শীতকালে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাবের মুল কারণ হলো সূর্যালোকের তুলনামুলক ভাবে কম উপস্থিতি। অর্থাৎ দিনের স্বল্পতা এবং রাত দীর্ঘ হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই শরীর প্রয়োজনের তুলনায় কম সূর্যালোক পেয়ে থাকে। এর প্রভাবেই শরীর ও মনে সৃষ্টি হয় নানা জটিলতা। সেগুলোর মধ্যে প্রধান তিনটি সমস্যা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।
১। নিদ্রা উদ্রেক হরমোনের নিয়ন্ত্রণহীনতা
মেলাটোনিন হরমোন শরীরকে ঘুমের দিকে ধাবিত করার জন্য মুল ভুমিকা পালন করে। শীতকালে প্রাকৃতিক আলোর অভাবে শরীরের অভ্যন্তরে অত্যধিক মেলাটোনিন তৈরি হয়। ফলস্বরূপ, মানবদেহের অভ্যন্তরীণ সার্কাডিয়ান ছন্দ বা ঘুম ও জেগে ওঠার চিরায়ত চক্রকে ব্যাহত হয়। গরমের সময়ে সূর্যালোকের উপস্থিতি মেলাটোনিন নিঃসরণের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই সে সময় ঘুম ঘুম ভাব থাকে না। বরং সার্কাডিয়ান ছন্দটি সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকে গরমের দিনগুলোতে।
পড়ুন: মধু কি সত্যি অমৃত?
২। শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি
ভিটামিন ডি এর ঘাটতি এবং নিদ্রাহীনতার মাঝে একটি লক্ষণীয় যোগসূত্র রয়েছে। অন্ধকার আকাশ এবং ঝাপসা আবহাওয়া এই পুষ্টির অপর্যাপ্ত মাত্রাকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। এটি শুধুমাত্র ঘুম ঘুম ভাব বাড়িয়ে তোলা নয়; শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মন-মেজাজের ওপরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে।
৩। মানসিক অবসাদগ্রস্ততা
এসএডি (সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার) হলো একটি সাধারণ মানসিক অবস্থা, যা প্রায়ই শীতকালে দেখা দিয়ে থাকে। 'উইন্টার ব্লুজ' নামে পরিচিত এই অবস্থাটি মুলত প্রতি বছরের শীতনিদ্রা প্রবণতার প্রতিফলন হিসেবে ঘটে থাকে। এর কারণে প্রতি বছর শীত এলেই শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং সূর্যালোকের স্বল্পতা মস্তিষ্ক থেকে সেরোটোনিন হরমোন নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। এই হরমোনটি সুখের অনুভূতি উদ্দীপিত করে মেজাজ উন্নত রাখতে সাহায্য করে। শীতে এই হরমোনের ঘাটতি অবসাদগ্রস্ততার সৃষ্টি করে।
পড়ুন: নিপা ভাইরাস এড়িয়ে খেজুর রস খাওয়ার উপায়
শীতকালে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব দূর করার উপায়
১। প্রতিদিন ভোরবেলা শরীরচর্চা করা
শীতে দিন ছোট হলেও যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকুর সদ্ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে ভিটামিন ডি-এর বিশাল উৎস ভোরের টাটকা সূর্যালোক কোন ভাবেই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। নিত্য দিন কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার আগে কমপক্ষে এক ঘন্টা সূর্যালোকে শরীরচর্চা অথবা খেলাধুলা করা সারাদিনের জন্য শরীরটাকে সতেজ রাখতে পারে। এছাড়াও মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় সূর্যালোকে হাটাহাটি করা যেতে পারে। এটি ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে অলসতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
২। পুষ্টিকর বিশেষত ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খাওয়া
সুষম খাবার গ্রহণ সব ঋতুর জন্যই প্রযোজ্য। আর শীতের ঘুম ঘুম ভাব কাটানো জন্য শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ডি-এর যোগান দিতে হবে। ডিমের কুসুম এবং মাশরুম ভিটামিন ডি-এর একটি ভালো উৎস। এছাড়া প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় গরুর দুধ ও মাংস বিশেষ করে কলিজা, সয়া দুধ, কমলার জুস ও পনির রাখা যেতে পারে। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খুব দ্রুত কাজ করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
পড়ুন: ঢাকার কোথায় ভালো পরিবেশে সাঁতার শেখা যায়
৩। ভ্রমণ করা
শীতকাল এমনিতে ভ্রমণের ঋতু হিসেবে জনপ্রিয়। আর এই ঘুমের রেশ কাটানোর জন্য দূরে কোথাও ভ্রমণে যাওয়া খুব ভালো একটা উপায় হতে পারে। সাইক্লিং, হাইকিং, রাফটিং, ও ম্যারাথন শীতের স্বল্প দিনে শরীরকে অনায়াসেই কর্মক্ষম এবং রোগমুক্ত রাখতে পারে।
এভাবে শীতের প্রকৃতিগত একঘেয়েমি সহ ঘুম ঘুম ভাব ও ক্লান্তি কাটানো যেতে পারে। যদিও শীতপ্রিয় মানুষেরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন এই সময়টির জন্য, তবে অতিরিক্ত শীত অনেকের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। তবে সঠিক রুটিন মেনে চলাটা বছরের যে কোন সময়েই শরীরকে ফিট রাখার জন্য সহায়ক হতে পারে।
পড়ুন: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
কান পেতে রই হচ্ছে দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেল্পলাইন। মানসিক দুর্দশায় জর্জরিত অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এই ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি কাজ করে। উদ্যোগটা অভিনব হলেও এই কাজটি নিতান্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এরকম বিশ্বের প্রায় ৪২টি দেশে নজির রয়েছে। বরং বাংলাদেশে আরও আগেই এরকম কার্যক্রম শুরু হওয়াটা জরুরি ছিল। এবার প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
প্রতিষ্ঠানটির শুরুর গল্প
একবার যুক্তরাজ্যের এক ধর্মযাজকের খুব প্রিয় একজন মানুষ আত্মহত্যা করল। এতে প্রচণ্ড মনোকষ্টে ভুগলেও ধর্মযাজক শোককে শক্তিতে পরিণত করলেন। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, মানসিকভাবে পর্যুদস্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মধ্যে শক্তি-সাহস যোগাবেন এবং বেঁচে থাকার প্রেরণা দেবেন।
১৯৫২ সাল থেকে শুরু করলেন টেলিফোনের মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত লোকদের মানসিক সেবা দেয়া। সেখানে একটি নির্দিষ্ট নাম্বার থেকে একদল স্বেচ্ছাসেবী কর্মকর্তা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষদের কথা শুনত। নিজেদের দুঃখের কথা বলতে যেয়ে তারা খেয়াল করত যে তাদের বুকের বোঝাটা কমে আসছে। সে সময়ের জন্য এটি ছিল এক অভিনব উদ্যোগ এবং এটি ব্যাপকভাবে বেশ সফলতাও পেয়েছিল।
আরও পড়ুন: মধু কি সত্যি অমৃত?
এই কাহিনীটি থেকে শিক্ষা নিয়েই মূলত কান পেতে রই সংগঠনের অভিযাত্রা শুরু।
আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষা নেবার সময় বাংলাদেশের ইয়েশিম ইকবালের কাজ করার সুযোগ হয়েছিল বোস্টন শহরের টেলিফোনের মাধ্যমে মানসিক সেবা দেয়া একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। সেখানে প্রায় তিন বছর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তিনি যুক্ত ছিলেন।
সেখান থেকেই ইয়েশিমের পরিকল্পনায় কান পেতে রই’র গোড়াপত্তন হয়েছিল। বাংলাদেশে প্রতিদিনি বাড়তে থাকা আত্মহত্যার সংখ্যাকে কমাতে আত্মহত্যাপ্রবণ লোকদের মানসিক সমর্থন দিতে ২০১২ সালে তিনি শুরু করলেন কান পেতে রই’র প্রাথমিক কার্যক্রম। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ এর ২৮ এপ্রিল।
প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমসমূহ
কান পেতে রই (http://shuni.org/) এ আছে কিছু নির্দিষ্ট হেল্পলাইন, যেগুলোর মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত মানুষের কল গ্রহণ করে তাদের কথা শুনে তাদের মাঝে থাকা নিঃস্বঙ্গতা, এবং আত্মহত্যার প্রবণতা দূর করতে সহায়তা করা হয়। এই কাউন্সেলিংয়ের প্রতিক্রিয়া বেশ ফলপ্রসূ আর এই সেবার জন্য কোন ধরনের চার্জ নেয়া হয় না।
করোনা মহামারির আগে প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সেবা দেয়া হতো। শুধু বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা কথা বলার সুযোগ ছিল।
পরবর্তীতে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সেবা দাতা সাজিদা ফাউন্ডেশনের যৌথ সহযোগে করোনা মহামারির ভেতর নাগরিকদের জন্য কান পেতে রই’র সেবা প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়।
কাউন্সিলিংয়ের সময় বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন, পরীক্ষায় খারাপ করা, পারস্পরিক অভিমান প্রভৃতির কারণে সৃষ্ট জটিলতার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হয়।
এই পদ্ধতির নাম ‘বিফ্রেন্ডিং’ যেটি মূলত কাউন্সিলিংয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মডেল।
কান পেতে রই গ্রাহকদের কোন তথ্য নিজেদের প্রচারের স্বার্থে ব্যবহার করে না। কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া থাকে কলকারীদের পরিচয় সম্পর্কিত কোনো তথ্য জিজ্ঞাসা না করার। এমনকি স্বেচ্ছাসেবীদের অত্যন্ত কঠোর গোপনীয়তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হয়।
অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন কলকারী ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে ফেললে তা নোট না করার জন্যও প্রশিক্ষকরা স্পষ্টভাবে বলে দেন। সর্বপরি এখানে মূল ফোকাস ব্যক্তিগত পরিচয় নয়; কলকারীর মানসিক সমস্যা সমাধান।
এতে করে গ্রাহকরা স্বাচ্ছন্দ্যে কোন অস্বস্তি ছাড়াই কান পেতে রই’তে ফোন দিতে পারেন। একই সঙ্গে গ্রাহকদের এক রকম নির্ভরতার জায়গা তৈরি হয়, যেটা এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয়।
আরও পড়ুন: নিপা ভাইরাস এড়িয়ে খেজুর রস খাওয়ার উপায়
এখন পর্যন্ত কান পেতে রই আট বছর ধরে প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষকে সেবা দিয়েছে। এদের মধ্যে শতকরা প্রায় ২০ ভাগরেই প্রধান সমস্যা আত্মহত্যার প্রবণতা।
কান পেতে রই দলের সদস্যর
কান পেতে রই’র প্রতিষ্ঠাতা ইয়েশিম ইকবাল কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের স্নাতক। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছেন।
তিনি ছাড়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন হেল্পলাইন সমন্বয়কারী রোজি হোসেন, জনসংযোগ ও যোগাযোগ সমন্বয়কারী সওগাত মাহমুদ, স্বেচ্ছাসেবক সমন্বয়কারী অরুণ দাস, আউটরিচ কো-অর্ডিনেটর রুবিনা জাহান রুমি ও আউটরিচ এক্সিকিউটিভ আশিক আব্দুল্লাহ শুভ। সঙ্গে রয়েছে প্রশিক্ষিত পরিশ্রমী এক ঝাঁক তরুণ স্বেচ্ছাসেবী, যারা যে কোন কল অবিলম্বে গ্রহণ করে তার জরুরি কাউন্সিলিং নিশ্চিত করে যাচ্ছেন।
স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাউন্সিলিংয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়। প্রশিক্ষণের মধ্যে থাকে মনযোগ দিয়ে কথা শোনার পদ্ধতি, বিপদের মাত্রা উপলব্ধি করার উপায় ও বন্ধুর মত আচরণ। মানসিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত বিশেষত আত্মহত্যা প্রবণ ব্যাক্তিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পর্যাপ্ত অনুশীলনের মাধ্যমে প্রত্যেককে প্রস্তুত করা হয়
এখানের কাজের পদ্ধতি হলো শিফটিং বা পর্যায়ক্রমে। একজন স্বেচ্ছাসেবক চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রতি সপ্তাহে তিন ঘণ্টা করে কাজ করতে পারে। প্রতিটি কল গ্রহণের সময় হেল্পলাইনের তত্ত্বাবধায়করা পুরো কথোপোকথোনটি মনিটরিং করে থাকেন।
আরও পড়ুন: ওজন কমাতে ১০ কার্যকরী পানীয়
কান পেতে রই’র সময়োপযোগিতা
বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আত্মহত্যার কারণে মৃতের সংখ্যা শতকরা ২.০৬ ভাগ বাংলাদেশি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশিদের আত্মহত্যার হার ছিল ৩.৭০, যা ২০১৮ থেকে শতকরা ২.৭৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক অস্থিরতা, জনসংখ্যা সংক্রান্ত জটিলতার পাশাপাশি পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে জীবন ধারণে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক মূল্যবোধ বিনষ্টের ফলে ভাঙন ধরছে সম্পর্কগুলোতে। ইতোমধ্যেই রীতিমত প্রসার লাভ করা পরস্পর থেকে দূরত্বে থাকার বিষয়টিকে যেন আরও গতিময় করেছে করোনা মহামারি। এই নেতিবাচক উত্তেজক পরিস্থিতিগুলোর কারণে অতিরিক্ত আবেগের তাড়নায় চরম অবস্থায় মানুষ ধাবিত হচ্ছে আত্মঘাতী ঘটনার দিকে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঘটে গেল ২০২২ সালের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা। একই সঙ্গে দেশব্যাপী ১২টি আত্মহত্যা।
এমতাবস্থায় মন খারাপের লাগাম টেনে ধরার জন্য কিছু শক্ত হাতের প্রয়োজন। প্রয়োজন নিঃস্বার্থভাবে আলো জ্বালানো মানুষের অন্তরের গহীনে অন্ধকূপের মত জেঁকে বসা অন্ধকারে। হোক সেটা কোন বন্ধুর অন্তরঙ্গ আলাপে বা কোন টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অথবা নির্দিষ্ট কোন নাম্বারে ফোন করার মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন ডালিমের খোসার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার
সবশেষে বলা যায়, কান পেতে রই বাংলাদেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেল্পলাইন হিসেবে একটি যুগান্তকারি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে। বাংলাদেশের চলমান প্রতিকূল প্রেক্ষাপটে তাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার প্রতিক্রিয়াটি খুব ধীর গতির হলেও মানুষের মনে আশা জাগাচ্ছে। নিদেনপক্ষে যে মানুষগুলো তাদের থেকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পাচ্ছে, তারা সেই অনুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছে আরও কিছু হতাশাগ্রস্ত মানুষের মাঝে। অর্থাৎ আলোকের দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়া থেমে নেই। আসলে এরকম প্রেরণা ও সাহস যোগানোর চর্চা শুধু কান পেতে রই’রই দায়িত্ব নয়; প্রতিটি মানুষেরই হওয়া উচিত।