%E0%A6%AB%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%A8
হাই হিল কিভাবে পুরুষের পা থেকে নারীর পায়ে এলো?
বেশ চমকে যাওয়ার মতো হলেও ব্যাপারটি আসলেই সত্যি! বর্তমানে নারীদের ফ্যাশনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও প্রথম দিকে হাই হিল জুতা তৈরি করা হতো পুরুষদের পরার জন্য। নানান সুবিধা-অসুবিধার ঊর্ধ্বে প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভব ঘটিয়েছিলো হাই হিল ফ্যাশনের। সময়ের বিবর্তনে পা বদলের পাশাপাশি বদলেছে হাই হিল ব্যবহারের জায়গা ও উপাদান। কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই একটি দরকারি টুল্স হিসেবে নারী-পুরুষ উভয়েরই পায়ের পরিধেয়ের স্বতন্ত্র সংযোজন ছিলো হাই হিল। চলুন, পুরুষের পা থেকে নারীর পায়ে হাই হিলের এই স্থানান্তরের ঘটনাটি জেনে নেয়া যাক।
হাই হিল ফ্যাশনের গোড়াপত্তন
ইতিহাসের সর্বপ্রথম দশ শতকের প্রাচীন ইরান বা পারস্যের অশ্বারোহী সৈন্যরা হাই হিল জুতা পরতো। ঘোড়াতে চড়ার সময় ভূমি থেকে পা কে উঁচু রাখার জন্য তারা এ ধরনের বিশেষ জুতাটি ব্যবহার করতো। এছাড়া এটি তাদেরকে ছুটন্ত ঘোড়ায় চড়া অবস্থায় তীর-ধনুক ও গুলি চালানোর সময় জুতার ভেতর তাদের পা কে ধরে রাখতো। ফলশ্রুতিতে সে সময়কার পারস্যের সাধারণ অশ্বারোহীরাও এক ইঞ্চি হাই হিল জুতা পরা শুরু করে।
আরও পড়ুন: নিউইয়র্ক সিটি ফ্যাশন উইকে ট্রান্স মডেল হিসেবে বাংলাদেশের তাসনুভা আনান শিশির
ইতিহাস জুড়ে পুরুষের হাই হিল চর্চা
শিল্প যুগের আগের সময়ে একটি ঘোড়ার মালিক হওয়া ঐশ্বর্য্যের পরিচয় ধারণ করতো, কারণ ঘোড়ার দেখাশোনা বেশ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এর ফলে হাই হিল পরিধানকারীর ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতো।
১১ শতকের গোড়ার দিকে হাই হিল পরার জন্য স্বনামধন্য ছিলেন গ্রেট স্কিজমের পোপগণ, যারা লাল রঙের হাই হিল জুতা পরতেন।
পারস্য সৈন্য ও অভিবাসীরা হাই হিল জুতার চর্চাকে ইউরোপে নিয়ে আসে, যা পরবর্তীতে হাই হিল ফ্যাশনের জন্ম দিয়েছিলো। ইউরোপীয় অভিজাত ব্যক্তিরা নিজেদের লম্বা দেখানোর জন্য একটি শক্তিশালী সামরিক কৌশল হিসেবে এই নতুন ধারাটিকে ব্যবহার করতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে পুরুষদের পোশাকের সেরা ব্র্যান্ডসমূহ
ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুই হাই হিলের রাজা হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন। তাঁর শাসনামলে মনে করা হতো- যে হিল যত উঁচু ও লাল হবে, পরিধানকারী তত বেশি শক্তিশালী হবে। তিনি ১৬৭০ সালে একটি আইন পাস করেন যে, শুধুমাত্র উচ্চবিত্তরা হাই হিল জুতা পরতে পারবে। রাজা নিজে লাল রঙের হিল বা সোলের জুতা পরার পাশাপাশি তাঁর দরবারের লোকদেরও লাল হিল পরার অনুমতি দিতেন। তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিতে অনুপ্রাণিত হয়েই ৯০ দশকে জুতার ডিজাইনার ক্রিশ্চিয়ান লুবউটিন বিশ্ব জোড়া খ্যাতি পেয়েছেন।
১৭ শতকে ম্যাসাচুসেটসে একটি অদ্ভূত আইন প্রবর্তন হয়। যে মহিলারা হাই হিল জুতা ব্যবহারের মাধ্যমে পুরুষদের প্রলুব্ধ করবে, তাদেরকে ডাইনি হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে।
১৮ শতকে ইউরোপ জুড়ে রেনেসাঁ এবং ইনলাইটেনমেন্ট বিপ্লব শুরু হওয়ার সাথে সাথে পুরুষদের হিল পরার প্রবণতা কমে যেতে শুরু করে। শুধুমাত্র সামাজিক অবস্থা প্রদর্শনের জন্য হাই হিল পরা এ সময় অযৌক্তিক হিসেবে গণ্য হয়েছিলো। ১৭৪০ সালের মধ্যে পুরুষরা হাই হিল জুতা পরা বন্ধ করে দেয়।
আরও পড়ুন: মাইকেল শিরোনামে নির্মিত হবে ‘কিং অফ পপ’ মাইকেল জ্যাকসনের বায়োপিক
নারীর পায়ে হাই হিল
নারীর পায়ে হাই হিলের সবচেয়ে পুরাতন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় ১২ শতকে ভারতের রামাপ্পা মন্দিরে একজন ভারতীয় নারীর ভাস্কর্যতে।
১৪০০-এর দশকে ইউরোপের মহিলারা বিশেষ করে স্পেন ও ভেনিসে উচু প্ল্যাটফর্ম যুক্ত এক বিশেষ ধরনের জুতা পরতেন যাকে চপইন বলা হতো। এগুলো মূলত এক ধরনের খড়ম, যা পা কে রাস্তায় জমে থাকা নোংরা ও আবর্জনা থেকে বের করে আনার জন্য সাধারণ জুতার উপরে পরা হত।
ফরাসী রানী ক্যাথরিন ডি মেডিসি প্রথম নারী যিনি হাই হিল পরতেন। সময়টি ছিলো ১৫০০ দশকের মাঝামাঝি পর্যায়। এর আগ পর্যন্ত মহিলারা শুধুমাত্র চপইন পরতেন।
১৮ শতকে প্রথমবারের মত সাধারণ মহিলারা হাই হিল ফ্যাশন চর্চা করতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ ইতিহাসের এক অসাধারণ দলিল: জাফর ইকবাল
নিউইয়র্ক সিটি ফ্যাশন উইকে ট্রান্স মডেল হিসেবে বাংলাদেশের তাসনুভা আনান শিশির
বাংলাদেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার সংবাদ পাঠিকা তাসনুভা আনান শিশির এবার ট্রান্স মডেল হিসেবে হেঁটে গেলেন নিউইয়র্ক সিটি ফ্যাশন উইকের র্যাম্প ধরে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এই শো’টিতে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করেন তাসনুভা। তার ক্যারিয়ারের অগ্রগতিটা আর দশটা সফল মানুষের মত নয়। শত শত উপহাসের সয়লাবের পর প্রথম নিউজ রুমের চেয়ারে বসাটা ছিলো স্বপ্নের মত। আর আমেরিকার মত একটি দেশ থেকে এত বড় একটি প্রাপ্তি মহিমান্বিত করেছে তাসনুভা আনানের অস্তিত্বকে। চলুন, তার এই অসামান্য প্রাপ্তির পাশাপাশি জেনে নেই তার জীবনের গল্প।
একজন তাসনুভা আনান শিশির-এর গল্প
১৯৯১ সালের ১৬ জুন; খুলনার বাগেরহাটে জন্ম নেয়া শিশুটির নাম রাখা হয় কামাল হোসেন। উচ্চ-মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোনোর আগেই কামাল নিজের চলাফেরা ও বেশভূষার পুরোটা জুড়ে নারীত্বের উপস্থিতি টের পেতে শুরু করেন। এ নিয়ে আশেপাশে অনেক কথাবার্তাও রটতে থাকে। এক সময় বাবা-মার সম্মানের কথা ভেবে ঘর ছাড়তে হয় কামাল হোসেনকে।
বাগেরহাট থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে সেখানকার সরকারি তোলারাম কলেজে সমাজকর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে অনার্স ও মাস্টার্স-এর পর ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ের উপর এক বছরের আরও একটি মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। এই পুরো সময়টাতে নারী বেশে নিজেকে সমাজের সামনে মেলে ধরেছেন কামাল হোসেন। অতঃপর ২০১৬ সালের শেষের দিকে চূড়ান্তভাবে মনস্থির করে ফেলেন। কলকাতায় চিকিৎসকের পরামর্শে শারীরিকভাবে কামাল হোসেন থেকে পরিণত হন তাসনুভা আনান শিশিরে।
আরও পড়ুন: টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ছবিতে তাসনুভা আনান শিশির
এরপর ক্যারিয়ার নিয়ে সংগ্রাম মুখর জীবনের এক পর্যায়ে পরিচয় হয় প্রখ্যাত নাট্য পরিচালিকা চয়নিকা চৌধুরীর সাথে। আর এই পরিচয়ের রেশ ধরেই তার সুযোগ মেলে বৈশাখী টিভি'র নিউজ রুমে প্রবেশের।
নিউইয়র্ক সিটি ফ্যাশন উইকে তাসনুভা আনান শিশির
সেরা বাংলাদেশি সংবাদ উপস্থাপিকার পুরস্কার নিতে তাসনুভা উত্তর আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন শো টাইম মিউজিকের আমন্ত্রণে। তখনি খবর পান নিউইয়র্ক সিটি ফ্যাশন উইকের। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যানহাটন শহরে বসে এই আন্তর্জাতিক আসর।
বিশ্বনন্দিত ইভেন্টটির স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ওমর চৌধুরী এবং ফোর এএম টিভি ইউএসএ-এর নির্বাহী প্রযোজক আরিফুল ইসলাম তাসনুভা আনানকে আমন্ত্রণ জানান অতিথি হিসেবে র্যাম্পে অংশ নেয়ার জন্য। আমেরিকায় শিশিরের ওয়ার্ক-পারমিট না থাকায় তাকে অতিথি হিসেবে পারফর্ম করার আমন্ত্রণ জানানো হয়।
আরও পড়ুন: সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর: ভারতীয় সংগীতের জগতে অবিস্মরণীয় উজ্জ্বল নক্ষত্র
তজ, ফোর এএম টিভি ইউএসএ ফ্যাশন এবং মিউজিকপেস আয়োজিত ‘প্লিৎজ নিউইয়র্ক সিটি ফ্যাশন উইক’ শিরোনামের আয়োজনটির প্রযোজনায় ছিলো প্লিৎজ্স্ ফ্যাশন মার্কেটিং। বিভিন্ন দেশের মডেলদের সঙ্গে সেখানে প্রথম বাংলাদেশি ট্রান্স মডেল হিসেবে অংশ নেন তাসনুভা আনান শিশির।
তার পরনে ছিলো বিখ্যাত পোশাক ডিজাইনার অস্কার গঞ্জালেজ মন্টানিজ-এর ডিজাইনকৃত পোশাক।
ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে পোশাকের থিম নির্ধারণ করা হয়েছিলো। রঙের ক্ষেত্রে বাছাই করা হয়েছে সাদা, কালো আর লাল রঙকে। ইভেন্টের দিনে তাসনুভা পড়েছিলেন দুটি পোশাক; একটা গাউন আরেকটা শীতকালের হুডি।
আরও পড়ুন: রাজু ভাস্কর্যের সামনে নৃত্যরত ইরা: সপ্রতিভ উত্থানে এক বাংলাদেশি ব্যালেরিনা
স্টেরিওটাইপ সমাজের শিকল ভাঙার আদর্শ তাসনুভা শিশির
ট্রান্স নারীতে রূপান্তরের পর জীবনটা আরও বেশি সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছিলো তাসনুভার জন্য। কৈশোরে ছেলেদের মতো চলাফেরা করে টিউশনি ও নৃত্য সহ অন্যান্য কাজ চালিয়ে নেয়া যেতো। কিন্তু এখন আর সে সুবিধা নেই। কিছুদিন ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবেও কাজ করেছিলেন। এবার সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। এক সময় এমন হয় যে, কোন প্রোগ্রাম থেকেই আর ডাক পাওয়া যাচ্ছে না।
এরপরেও তীব্র পরিশ্রম আর অধ্যবসায়-এ নতুন সূর্যোদয় ঘটে তাসনুভার জীবনে। দেখা না হলেও অসুস্থ বাবা-মার ভরণপোষন করছেন তাসনুভাই। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা বাড়িতে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলেও আশেপাশের মানুষের কটুকথার ভয়ে এখনও তিনি বাড়িমুখী হন না।
তার অন্য চার বোন আর এক ভাইয়ের সাথে ঠিকমত কথা হয় না। বোনেরা সবাই সংসার-বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত। তাদের সঙ্গে বছরে দুয়েক মিনিট কথা হলেও এড়িয়ে যেতে হয় পরস্পরের ঠিকানা ভাগ করে নেয়ার ব্যাপারটা।
আরও পড়ুন: বাঁধাধরা নিয়ম ভেঙে নতুন উচ্চতায় তাসনুভা আনান শিশির
ছেলেবেলায় বন্ধ হয়ে যাওয়া নৃত্য চর্চা এখন আবার শুরু করেছেন। অভিনয় করেছেন ‘কসাই’ নামক একটি সিনেমায়। বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছেন। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছেন সকল প্রতিবন্ধকতাকে ডিঙিয়ে সময়কে জয় করার লক্ষ্যে।
এখন তাসনুভা আনান শিশির-এর দেখানো পথ ধরে ভাগ্য ফিরছে আরও ট্রান্সজেন্ডারদের। নতুন করে জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন যুগ যুগ ধরে হাজারো অবজ্ঞায় অবদমিত হয়ে থাকা মানুষগুলো। তাসনুভার এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শুধু এই নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্যই আশার আলো দেখাচ্ছে না, গোটা দেশের জন্য এক বিপুল অর্জন হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। সেই নিরিখে যে যুগান্তকারি বিষয়টি উঠে আসে, তা হলো- শ্রেণী, ধর্ম, বর্ণ, ও গোষ্ঠী কোন মানুষের পরিচয় ও সম্মানের নির্ণায়ক হতে পারে না।
আরও পড়ুন: ‘মাসুদ রানা’র লেখক-প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন আর নেই
পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হলো প্রথম বাংলাদেশ কউচার উইক
দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ কউচার উইক ২০২১। শনিবার বাংলাদেশের ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিলের (এফডিসিবি) আয়োজনে গুলশানের এজ গ্যালারিতে জাকজমকপূর্ণ বিশেষ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে কউচার উইক। অনুষ্ঠানে সম্মান জানানো হয়েছে বিখ্যাত বাংলাদেশি স্টাইল ও ফ্যাশন আইকনদের।
অনুষ্ঠানে স্টাইল হল অব ফেম পুরস্কার পেয়েছেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী শম্পা রেজা। জনপ্রিয় গায়ক-অভিনেতা-সংগীতশিল্পী তাহসান খান ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান পেয়েছেন স্টাইল গেম চেঞ্জার পুরস্কার।
অনুষ্ঠানে মোস্ট স্টাইলিশ পার্সোনালিটির পুরস্কার পেয়েছেন বিউটি আইকন ফারজানা শাকিল; প্রখ্যাত গায়িকা, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও লেজার ট্রিটমেন্টের পথপ্রদর্শক ডা. ঝুমু খান এবং গুলশান সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শুক্লা সারওয়াত সিরাজ।
আরও পড়ুন: সেরাস্পেস: বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন ইনটেরিয়র ডিজাইন প্লাটফর্ম
তরুণ হার্টথ্রব অভিনেতা সিয়াম আহমেদ, 'রেহানা মরিয়ম নূর' খ্যাত অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন এবং মডেল, টেলিভিশন উপস্থাপক ও ফ্যাশন কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদ স্টাইল ট্রেলব্লেজার পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া স্টাইল ইনোভেটর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন গায়িকা মেহরীন মাহমুদ এবং জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জেফার রহমান মোস্ট স্টাইলিশ মিউজিক স্টার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
সেরাস্পেস: বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন ইনটেরিয়র ডিজাইন প্লাটফর্ম
আপনি কখনও নিজ থেকে গৃহ সজ্জা করেছেন? কিংবা এটি করতে গিয়ে কঠিন মনে হয়েছে? সম্ভবত আপনি প্রফেশনাল কোনো ডিজাইনার দিয়ে কাজটি করাতে চেয়েছেন। কিন্তু অত্যধিক খরচ, সমন্বয় করার ভোগান্তি কিংবা দীর্ঘ সময়রেখা আপনাকে তা করতে নিরুৎসাহিত করেছে।
সেরাস্পেস, অনলাইন ইনটেরিয়র ডিজাইন প্লাটফর্ম, কম খরচে, স্বল্প মেয়াদে অনলাইন সমাধানের মাধ্যমে ইনটেরিয়র ডিজাইন সকলের সাধ্যের মধ্য দিয়ে এসেছে। তাদের অনলাইন ইনটেরিয়র ডিজাইন কনসালটেশন সেবা প্রথাগত সেবার সম্পূর্ণ বিকল্প।
মাত্র দুই হাজার ৮০০ টাকার ফি প্রদান করে সেরাস্পেস থেকে আপনি পাচ্ছেন আপনার গৃহের ইনটেরিয়র ডিজাইনের জন্য একজন প্রফেশনাল ইনটেরিয়র ডিজাইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।
সেরাস্পেস বিশ্বাস করে আপনার বাসা কিংবা বাজেট কোনো বিষয় না। আপনি এমন একটি গৃহের দাবি রাখেন যা আপনার রুচি ও লাইফস্টাইলের প্রতিফলন করে। আর এ বিশ্বাস থেকেই সেরাস্পেসের উদ্দেশ্য ইনটেরিয়র ডিজাইনকে সকলের সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসা।
বাংলাদেশে অনলাইন ইনটেরিয়র ডিজাইন কনসালটেশন সেবার ধারণা প্রথম নিয়ে আসে সেরাস্পেস। ২০২০ সালের মে মাসে এ প্লাটফর্ম যাত্রা শুরু করে।
আরও পড়ুন: ফ্রাঙ্কফুর্ট ৭৩তম আন্তর্জাতিক বইমেলা: বাংলাদেশ স্টলের উদ্বোধন
সেরাস্পেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেড় বছর ধরে এ সেবার চাহিদা বেড়ে চলেছে। এ সেবা যে কোনো স্থান থেকেই পাওয়া যাবে। এর জন্য কাস্টমারকে ভ্রমণ, অপেক্ষা কিংবা খরচ করতে হবে না। সেরাস্পেস এমন একটি প্রয়োজন চিহ্নিত করেছে যা নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কাজ হয়নি।
সেরাস্পেস টিম নিয়মিত ও ক্রমাগত তাদের সুবিধা বাড়িয়ে চলছে এবং সেবার মান আরও বাড়াতে শিগগিরই তারা আরও প্রযুক্তি যোগ করছে।
কোম্পানিটি ঢাকাসহ সারাদেশে এখন পর্যন্ত চার হাজারের বেশি গৃহের ইনটেরিয়র ডিজাইন করেছে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সারজিনা মাওদুদের নেতৃত্বে ৩৫ জনের একটু তরুণ দল সেরাস্পেস পরিচালনা করছেন।
আরও পড়ুন: কালিদাস কর্মকারের স্মরণে গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী আয়োজন
আপন ঠিকানা : হারানো স্বজনদের খুঁজে পেতে আরজে কিবরিয়ার মহৎ উদ্যোগ
সাদমুআ: বাংলাদেশের প্রথম পুরুষ বিউটি ব্লগার
বাংলাদেশের প্রথম পুরুষ বিউটি ব্লগার হিসেবে ইতিহাস গড়লেন সাদ বিন রাবি ওরফে সাদমুয়া। ফেসবুকে ২ লাখ ও ইন্সটাগ্রামে ২৭ হাজার ফলোয়ার এবং ইউটিউব চ্যানেলে ৫৬ হাজার সাবস্ক্রাইবার নিয়ে একজন মেকআপ শিল্পী হিসেবে সাদ বিন রাবি সবার কাছে এখন একটি পরিচিত মুখ। তার ভিডিও কন্টেন্ট মূলত মেকআপ টিউটোরিয়াল নিয়ে, যেখানে তিনি নিজের মুখের উপর বিভিন্ন ধরনের বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবহার করে দেখান। একইসাথে তিনি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিউটি ব্র্যান্ডগুলোর প্রোমোশনও করেন।
ভিডিও কন্টেন্টগুলো তিনি তৈরি করেন মহিলা দর্শকদের লক্ষ করে। বিষয়গুলো বহুমুখী হওয়ার কারণে মেকআপগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ আর সমসাময়িক হয়।
চলুন, প্রচলিত ধ্যান-ধারণা বহিঃর্ভূত এই শিল্পী সম্পর্কে আরও কিছু জানা যাক।
একজন ব্যক্তি সাদমুআ
২১ বছর বয়সী সাদ সোশ্যাল মিডিয়ায় যাত্রা শুরু করেছিলেন ২০১৮ সালে। এখন ক্রমান্বয়ে তিনি একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হয়ে উঠছেন। মেকআপের প্রতি আকর্ষণটা তার শৈশব থেকেই, যখন তিনি প্রায়ই তার মায়ের মেকআপ প্রসাধনীগুলো লুকিয়ে ব্যবহার করার চেষ্টা করতেন। তার এই মেয়েলি বৈশিষ্ট্যের কারণে তাকে বেশ কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করার পাশাপাশি নিজের স্বপ্নকে জীবনে বাস্তবায়ন করা। এমনকি এই একবিংশ শতাব্দীতেও পুরোনো চিন্তাধারার সামাজিক ব্যবস্থার মাঝে তাকে খুঁজতে হয়েছিলো একটি সাহায্যের হাত।
বিঃশ্বাস তার যা-ই হোক না কেন, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার সম্প্রদায়কে সেবা দেওয়ার জন্য তাকে কিছু একটি খুঁজে বের করতেই হবে।
আর এখানেই এলো মেকআপের বিষয়টি। আসলে, তাকে কোথাও যেতে হয়নি। তার সবচেয়ে বড় সম্পদ ছিল - তার মুখ এবং তিনি জানতেন যে কীভাবে আঁকতে হয়। তার মানে তিনি অবশ্যই একজন পুরুষ বিউটি ব্লগার হতে পারেন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, তার বিঃশ্বাস ছিল যে- এই দক্ষতাটি সম্পূর্ণরূপে তার ব্যক্তিত্বের সাথে যায়।
সাদ বিশ্বাস করেন যে মেকআপ কেবল একটি মহিলার জিনিস নয়। এটি একজন পুরুষের ক্ষেত্রেও স্বাভাবিক। আপনি যা পছন্দ করেন তা কখনোই জোর করে আসার কথা নয়। এর জন্য প্রয়োজন স্বতঃস্ফূর্ততা।
এরপরও, মহান বিপ্লবের পথে একটি ছোট পদক্ষেপের জন্য প্রয়োজন একটুখানি উৎসাহ। আর এই উৎসাহ ছিলেন সাদের দাদী। তিনি সাদের পিতামাতার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সাদকে মেকআপ সরঞ্জাম কিনতে সহায়তা করেছিলেন। এছাড়া সাদের নিজেরও যথেষ্ঠ চেষ্টা ছিলো তার মেকআপের উপর দক্ষতা অর্জনের জন্য।
আরও পড়ুন: ত্বক থেকে শুরু করে চুলের যত্নে ব্যবহার করুন ভাতের মাড়!
যাইহোক, সাদের কাজের মূল্যায়ন হওয়া শুরু করে নারী-পুরুষ উভয়ের দিক থেকেই। এখন তিনি প্রায়ই নতুন কিছু নিয়ে স্ক্রিনে আসার চেষ্টা করেন।
সম্প্রতি, তিনি কোরিয়ান মেকআপের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এইভাবে, তিনি প্রতিটি ছিটেফোটায় তার ভিতরের শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি তার দর্শকদের পরিবেশন করে থাকেন।
পুরুষ বিউটি ব্লগার হিসাবে আবির্ভাব
শৈশবকাল থেকেই সাদ বিন রাবী চাইতেন যে, সব সময় তাকে যেন সুন্দর দেখায়। আসলে, সবাই এমনটাই আশা করে থাকে। প্রথমে, তার মা তার ভ্রু এঁকে দিতেন। বড় হওয়ার পরে, তিনি নিজে থেকেই তা করার চেষ্টা করতেন। পরবর্তীতে তিনি অনলাইনে মেকআপ নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেন। আর এভাবেই তিনি একদিন জানতে পারেন বিশ্বের প্রথম পুরুষ বিউটি ব্লগার জেমস চার্লস সম্পর্কে। জেফ্রি স্টার, প্যাট্রিক স্টার এবং ম্যানি মুআ তার সব থেকে বড় অনুপ্রেরণা ছিল। সাদ আসলে তাদের মধ্যে নিজেকে দেখতে পেতেন কারণ তারাও উঠে এসেছিলেন রক্ষণশীল সমাজ থেকে।
তিনি তার স্বপ্ন বাস্তব করতে তাদের অনুসরণ করতেন। যদিও তিনি একদম সরাসরি কোনও শিক্ষক পান নি, উপরন্ত তাকে বার বার তার নিজের পথ খুঁজে বের করতে হয়েছিল।
শুরুতে, তাকে সমর্থন বা কাজ করার কোনও পৃষ্ঠপোষক- কোনটাই তিনি পাননি। তবে সময়ের সাথে সাথে এখন তিনি প্রতিদিন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোম্পানি থেকে ডাক পান। ধীরে ধীরে সোশ্যাল মিডিয়া ফলোয়ার পাওয়ার পরে তিনি এখন আগের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী। সর্বোপরি, একটি ব্যাপারে এটি নিশ্চিত করে যে, সে তার স্বপ্নের পথেই আছে।
সব মিলিয়ে তিনি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের উপস্থিতি এবং নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের একটি চক্রের মধ্যে রয়েছেন। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং যত বেশি উপস্থিতি তৈরি করে, অধিক উপস্থিতি তত বেশি নতুন নেটওয়ার্কের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
ভিডিওগুলোর ভেতরে যে বিশেষত্বটি তাকে বিশ্বমানের একজন পুরুষ বিউটি ব্লগারে পরিণত করেছে, তা হলো বিভিন্ন ধরণের কৌশল যেগুলো তিনি তার মেকআপে ব্যবহার করেন। আপনি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মেকআপ শিল্পীদের ইউটিউব চ্যানেলে এর সাদৃশ্য দেখতে পাবেন। তারা তাদের ভিডিও কন্টেন্টে নতুন মান যুক্ত করার জন্য প্রায়ই এটি চেষ্টা করেন। সাদের চেষ্টা থাকতো সেই মানগুলোকে একসাথে এক জায়গায় নিয়ে আসা এবং একই সাথে সেগুলো নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠা। এটি অবশ্যই তেমন সহজ ছিল না, তবে ফলাফলটি তিনি পেয়েছিলেন সময় মতই।
সব মিলিয়ে তিনি যা করেছিলেন তা ছিল- প্রতিটি সমালোচনাকে পায়ে দলে সামনে এগিয়ে যাওয়া এবং মেকআপ সম্পর্কিত জিনিসগুলো বাছাইয়ের দিকে মনোনিবেশ করা। এখন তিনি সবার রোল মডেল। সাদমুআ এখনও আশা করছেন যে তিনি আরও অনেক দুর যাবেন এবং শিগগরই গোটা বিশ্ব পুরোনো ধ্যান-ধারণার শিকল থেকে মুক্ত হবে।
বাংলাদেশে মেকআপ শিল্প
কথা যদি হয় শুধুমাত্র মেকআপ শিল্পী নিয়ে, সেক্ষেত্রে পুরুষ মেকআপ শিল্পী বাংলাদেশে নতুন কোনও বিষয় নয়। এখানে বরং আপনি বেশিরভাগ মেকআপ শিল্পী খুঁজে পাবেন পুরুষ। উদাহরণস্বরূপ, জনপ্রিয় ব্যক্তিরা হলেন- জাহিদ খান, মনির হোসেন এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী মেকআপ শিল্পী মাহবুবুর রহমান মানিক, খলিলুর রহমান।
এই এক দশক আগেও মেকআপ শিল্পী বা যারা তথাকথিত মেকআপ ম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তাদের টিকে থাকাটা খুব কঠিন ছিল। তবে এখন চলচ্চিত্র জগতে উত্তরোত্তর উন্নতি এবং প্রতিনিয়ত বিবাহের অনুষ্ঠানের কারণে মেকআপ শিল্পীরা নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন।
প্রতিদিন-ই বিয়ের সাজ এবং পার্টি মেকআপের চাহিদা বাড়ছে। তদুপরি, বিনোদন শিল্পের অস্তিত্ব যত দিন বিলীন না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত মেকআপ শিল্পীর প্রয়োজনীয়তা কখনোই শেষ হবে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর দ্রুত অগ্রগতির পাশাপাশি তারা একজন পুরুষ বিউটি ব্লগার হওয়ার মাধ্যমে নিজের দেশ থেকে শুরু করে গোটা বিশ্বব্যাপী পাড়ি জমাতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সার থেকে শুরু করে বড় কোম্পানি, প্রতিটি উপায়ে তারা তাদের দর্শকদের কাছে যেতে পারছেন।
নারীদের পাশাপাশি পুরুষ মেকআপ শিল্পীরাও বড় পরিসরে সাফল্য অর্জন করছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে পুরুষদের পোশাকের সেরা ব্র্যান্ডসমূহ
এখন বিউটি ব্লগারের প্রসঙ্গে বলতে গেলে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোনও একজন পুরুষের জন্য বিউটি ব্লগার একদম নতুন ধারণা, যদিও সাদমুয়া ইতোমধ্যে উপায়টি দেখিয়ে দিয়েছে। আপনার সদিচ্ছা ও ধৈর্য্য শক্তি-ই পারে আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছে দিতে। আসলে দিন শেষে, আপনি যা সবচেয়ে ভাল জানেন তা করা কোনও অপরাধ নয়। যদিও এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে, অনেকে কিছু মূল্যহীন কার্যকলাপ নিয়ে আসে, যা সমাজকে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দেয়।
সেখানে এই মেকআপ শিল্প অবশ্যই একটি দুর্দান্ত কাজ। সবচেয়ে বড় কথা, লিঙ্গ বা ধর্ম বা সীমানা কখনো কোনও শিল্প নিরীক্ষার চাবিকাঠি হতে পারে না। এই বিশ্বায়নের যুগে আপনি যে-ই হন না কেন, আপনি অবশ্যই শিল্প তৈরী করতে পারবেন। এমনকি আপনি যদি বাংলাদেশের মতো কোন ক্ষুদ্র দেশের নাগরিক হন না কেন, তা আপনার সৃজনশীলতায় কোন বাধা হতে পারবেন না।
শেষ কথা
একজন পুরুষ বিউটি ব্লগার হয়ে ওঠা সাদমুআর মতোই আপনার কঠিন সময়ে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে। আপনি তার ভিডিওতে তাকে যেরকম হাস্যজ্জ্বল দেখেন, ঠিক সেভাবেই তিনি হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন তার সমস্ত অপমানগুলোকে। আপনি যখন নিজের পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে পরিবর্তন করতে এগোবেন, তখন আপনাকে প্রচুর ধাক্কার সম্মুখীন হতে হবে। তখন অতিরঞ্জিত সমালোচনাগুলো না শুনে আপনার বড় পদক্ষেপটা দিয়ে ফেলুন, শুধু নিশ্চিত হয়ে নিন কেউ যেন আঘাত না পায়।
বাংলাদেশে পুরুষদের পোশাকের সেরা ব্র্যান্ডসমূহ
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত যা গত দুই দশক ধরে মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৩৫% অবদান রেখে চলেছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে গত তিন দশক ধরে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং প্রায় প্রতি বছরই বেশ কয়েকটি নতুন ব্র্যান্ড উঠে আসে, যা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে তোলে। শত শত ব্র্যান্ডের মধ্যে সেরাগুলো বাছাই করা এবং ছোট একটি তালিকা তৈরি করা কঠিন। তবুও, আমরা বাংলাদেশে পুরুষদের পোশাকের সেরা ১০ ব্র্যান্ডের তালিকা করেছি। তালিকাটি দেখে নিন এবং সেগুলো আপনারও শীর্ষ ১০ব্র্যান্ডের তালিকায় রয়েছে কিনা তা দেখুন।
ক্যাটস আই
আজকের তরুণ প্রজন্ম ক্যাটস আই-র নস্টালজিক অনুভূতি বুঝতে পারবে না; শুধুমাত্র ৯০ দশকের লোকেরাই এই ব্র্যান্ডের মূল্য জানে। নতুন ব্র্যান্ডের প্রবর্তনের সাথে সাথে ক্যাটস আই তার আবেদন হারিয়ে ফেলবে। তবে এটি এখনও বাংলাদেশের শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে একটি। ক্যাটস আই সবসময় পুরুষদের জন্য ক্যাজুয়াল আউটফিট পরিবেশন করে থাকে। পরে তারা নতুন ব্র্যান্ড মনসুন রেইন- এর সাথে আনুষ্ঠানিক প্রোডাক্ট লাইন চালু করে। এছাড়াও, তারা শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, কামিজ, জুতা, এক্সেসোরিজ এবং আরও অনেক কিছুসহ পুরুষ এবং নারী উভয়ের পোশাক সরবরাহ করে।
সাঈদ সিদ্দিকী রুমী এবং আশরাফুন সিদ্দিকী ডোরা ১৯৮০ সালে ক্যাটস আই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সারা দেশে গত চার দশকে তারা অনেক শোরুম খুলেছে, তবে সবচেয়ে বিখ্যাত একটি নিউ এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত, যা ব্র্যান্ডটিকে এক নতুন স্তরে নিয়ে গেছে । আপনি অনলাইন পেইজwww.catseye.com.bd এ পণ্যগুলো খুঁজে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন: অনলাইনে ঈদের কেনাকাটা
রিচম্যান
রিচম্যান ২০০৩ সালের দিকে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এটি মূল সংস্থা লুবনান ট্রেড কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের একটি শাখা। তারা সব ধরনের ফ্যাশনেবল পোশাক যেমন ক্যাজুয়াল, ফর্মাল, লেডিস ড্রেস এবং বাচ্চাদের আইটেমও তৈরি করেন। তবে মূল সংস্থাটি তিনটি পৃথক ব্র্যান্ড- লুবানান, রিচম্যান এবং ইনফিনিটির মাধ্যমে পরিচালনা করে। স্টোর থেকে রিচম্যানের পণ্য ক্রয় করা ছাড়াও আপনি অনলাইনেও www.richmanbd.com কিনতে পারবেন। মোহাম্মদ জুনায়েদ বাংলাদেশের মধ্য স্তরের ক্রেতাদের প্রথম শ্রেণির পোশাক সরবরাহ করার লক্ষ্যে রিচম্যান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ইয়েলো
বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠিত ইয়েলো বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও তারা স্বল্প সময়ের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছেছে। সাধারণত, ইয়েলো পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্যই তরুণ প্রজন্মের রুচি অনুযায়ী পণ্য পরিবেশন করে। সুতরাং, আপনি পুরুষদের, নারীদের, শিশুদের পোশাক এবং এক্সেসোরিজ পাবেন। অনলাইনেwww.yellowcloming.net এ এই পণ্যের অ্যাক্সেস পাবেন।
আড়ং
আড়ং ১৯৭৮ সালে আয়েশা আবেদ এবং মার্থা চেন নগর ও বিশ্বে বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আড়ং ব্র্যাক পরিচালনা করছে। তারা মূলত পাঞ্জাবি, পাজামা, শাড়ি এবং ফতুয়ার মতো ঐতিহ্যবাহী পোশাককে প্রাধান্য দেয়। তবে আড়ং গিফট সেট, জুতা, গৃহস্থালি কারুশিল্প, এক্সেসোরিজ এবং আরও অনেক কিছু সরবরাহ করে। অন্যান্য ব্র্যান্ডের মতো আড়ংয়ের এতগুলো শাখা নেই। বর্তমানে, তারা নয়টি মহানগর অঞ্চলে তাদের ২১টি আউটলেট পরিচালনা করে। তারা তাদের ওয়েবসাইট www.aarong.com এর মাধ্যমে অনলাইন শপিংয়ের অফারও দেয়।
আরও পড়ুন: অনলাইন শপিং জনপ্রিয় হলেও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকে
সেইলর
বাংলাদেশের ফ্যাশন শিল্পে একটি নতুন সংযোজন সেইলর ২০১৫ সালে তাদের ব্যবসা শুরু করে এবং মাত্র ৬ বছরের মধ্যে তারা তুলনামূলক কম দামে উচ্চ মানের পোশাকের কারণে ক্রেতাদের যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তাদের পণ্য লাইনে পাঞ্জাবী, জুতা, শার্ট, টি-শার্ট, এক্সেসোরিজ এবং আরও অনেক কিছু রয়েছে। পুরুষদের পণ্যের পাশাপাশি তারা নারীদের জন্য পণ্য যেমন- কামিজ, কুর্তি, টপস, জুতা, বোটমস এবং আরও অনেক কিছু সরবরাহ করে। সেইলর এপিলিয়ন গ্রুপের একটি সিস্টার কনসার্ন। অনলাইনে https://www.sailor.cloming/ এ সেইলরের পণ্য পাবেন।
গ্রামীণ ইউনিক্লো
গ্রামীণ ইউনিক্লো লিমিটেড বাংলাদেশের আরেকটি জনপ্রিয় পোশাক ব্র্যান্ড। এটি গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানাধীন সামাজিক ব্যবসায়ের উদ্যোগ। শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনুস এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গ্রামীণ ইউনিক্লো ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৮সালের মধ্যে ঢাকা শহরে প্রায় ১৫ টি স্টোর চালু করে। বর্তমানে ঢাকার কিছু স্টোরসহ তাদের মোট ২১ টি স্টোর রয়েছে। তারা টি-শার্ট, প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবী, এক্সেসোরিজএবং আরও অনেক কিছুসহ ক্যাজুয়াল এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাককে প্রাধাণ্য দেয়। ইউনিক্লো-এর মূল লক্ষ্য হল কারখানার শ্রমিকদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা। এদের পণ্য অনলাইনে http://www.grameenuniqlo.com/ এ পেতে পারেন।
এক্সটেসি
এক্সটেসি আরও একটি ব্র্যান্ড যা ইয়াং স্টারদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। ফ্যাশন সচেতন এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বাসামাজিক অনুষ্ঠানে ফ্যাশনেবল পোশাক পরতে চান এমন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এক্সটেসি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এবং ব্র্যান্ডটি সফলভাবে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করে চলেছে। তানজিম হক ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ফ্যাশন রিটেইলার হয়ে উঠেছে। তারা পুরুষদের জিন্স, ক্যাজুয়াল শার্ট, টি-শার্ট, ক্যাজুয়াল প্যান্ট, নারীদের টপ, কামিজ, ব্যাগ, এক্সেসোরিজ,বাচ্চাদের পোশাক এবং আরও অনেক কিছু সরবরাহ করে। বাড়ি থেকে আপনার ঈদের কেনাকাটার জন্য আপনি http://ecstasybd.com এ তাদের ওয়েবসাইটটি দেখতে পারেন।
লা রিভ
একটি ছোট আউটলেট থেকে শুরু করে এখন লা রিভ বয়স নির্বিশেষে পছন্দসই ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে। শিশু থেকে বয়স্ক সকলের জন্যই তাদের সংগ্রহ রয়েছে। লা রিভ ঐতিহ্যবাহী পোশাক, পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্য ক্যাজুয়াল পোশাক, ডেনিম, এক্সেসোরিজ এবং আরও অনেক কিছু সরবরাহ করে। লা রিভ রিভ টেক্স লিমিটেডের একটি সিস্টার কনসার্ন এবং লা রিভ ২০০৯ সালে সর্বজনীনভাবে ব্যবসা শুরু করে।
আরও পড়ুন: নতুন পোশাক কেনার আসক্তি কমানোর উপায়
ফ্রিল্যান্ড
ফ্রিল্যান্ড ২০০৩ সালে তাদের যাত্রা শুরু করে এবং পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে তারা বিশাল আকারে বেড়ে ওঠে। তরুণ ও অফিসগামী মানুষের জন্য তারা বাংলাদেশের ফ্যাশন শিল্পে একটি নতুন ট্রেন্ড চালু করেছে। 'ফ্রিল্যান্ড' নামটি দ্বারা তারা আপনার পোশাক নির্বাচনের স্বাধীনতা বোঝায়। তারা জুতা এবং এক্সেসোরিজসহ পুরুষদের এবং নারীদের পোশাক সরবরাহ করে। তাদের ওয়েবসাইট ঠিকানা http://freeland.com.bd/.
ট্রেন্ডজ
ট্রেন্ডজ ২০০৪ সালে বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে প্রথম আউটলেট দিয়ে ফ্যাশন শিল্পে পা রাখে। গত ১৭ বছরের মধ্যে তারা সারা দেশে ৮ টি শোরুম খুলেছে। তারা মাঝারি মূল্যের পণ্য সরবরাহ করে। ফলস্বরূপ, তারা বৃহত্তর উচ্চ মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা সাধারণত ট্রেন্ডি টি-শার্ট এবং শার্টের পাশাপাশি নারীদের পোশাকও সরবরাহ করে। ট্রেন্ডজ-এর পণ্যগুলো দেখতে www.trendzbd.com দেখুন।
আপনি ফ্যাশন সচেতন বা মানসম্পন্ন পণ্য চান এমন কেউ হোন না কেন, আমরা নিশ্চিত যে আপনি কমপক্ষে আপনার জীবনে একবার এই স্টোরগুলোতে গেছেন এবং কিছু কিনেছেন। এখন আপনি এই কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাইরে না গিয়ে ঘরেই নিরাপদে অনলাইনে কিনতে পারেন।
মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২০: সেরা ৫০ প্রতিযোগীর নাম ঘোষণা
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা ‘ফ্লোরা ব্যাংক মিস ইউনিভার্স ২০২০’ বুধবার সেরা ৫০ প্রতিযোগীর নাম ঘোষণা করেছে।
ঘরোয়া উপায়ে ব্ল্যাকহেডস দূর করার উপায়
মারাত্মক বায়ুদূষণের কবলে রয়েছে বাংলাদেশ। বাইরে বের হলেই মুখে ধুলোবালির আস্তরণ পড়ে ও ব্ল্যাকহেডস তৈরি হয়।
জেনে নিন কোন লিপস্টিক আপনাকে সবচেয়ে বেশি মানাবে
সাজ সামগ্রীর মধ্যে মেয়েদের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় প্রসাধনী হচ্ছে লিপস্টিক। ঠোঁট রাঙাতে এই প্রসাধনীর জুড়ি মেলা ভার। লিপস্টিক কেনার সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রংকেই গুরুত্ব দেয়া হয়।
চুলের যত্নে তেলের বিকল্প নেই
ঢাকা, ০৫ জুলাই (ইউএনবি)- উজ্জ্বল নরম রেশমের মতো চুল কার না পছন্দ। অকালে টাক পড়ে যাওয়া প্রতিরোধ ও চুলের পাক ধরা ঠেকাতে আমরা কত কিছুই না করি।