সিলেট
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ভোগান্তিতে বানভাসিরা
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেট নগরী এবং জেলার ১৩ উপজেলার গ্রাম থেকে গ্রামান্তর নদীর পানিতে একাকার। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সিলেট নগরীতে আরও দুই ইঞ্চি পানি বেড়েছে।
এছাড়াও উপজেলাগুলোতেও বন্যার পানি বেড়েছে। এ অবস্থায় সিলেট জেলা ও মহানগরের অন্তত ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব মানুষ বিশুদ্ধ পানি, খাবার, বিদ্যুৎ ও নানামুখী সংকটে দুর্বিষহ সময় কাটাচ্ছেন। এছাড়া গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন মানুষ।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিলেটের প্রধান নদী সুরমা কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সিলেট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ (সিলেট) পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে এখন বিপদসীমার ১৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে শেওলা (সিলেট) পয়েন্টে নদীটির পানি বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার, এখন তা বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের কতিপয় স্থানে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।
আগামী বর্ষার আগেই সুরমা ও কুশিয়ারা নদী খনন করতে হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবুল মোমেন বলেছেন, সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এই দুই নদী খনন করতে হবে। এ ব্যাপারেও আমাদের সরকার ও প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। আমরা নদী খননের পরিকল্পনা নিয়েছি। আগামী বর্ষার আগেই নদীগুলো খনন করতে হবে।বুধবার দুপুরে সিলেট নগরের চালিবন্দর এলাকার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, সিলেটে এই মৌসুমে সবসময়ই ঢল নামে। আমাদের ছেলেবেলায়ই এমনটি দেখেছি। কিন্তু পানি আটকে থাকতো না, চলে যেতো। কারণ আমাদের শহরেও অনেক পুকুর ও দিঘী ছিল। প্রত্যেক বাড়ির সামনে পুকুর ছিল। আর সিলেটকে বলা হতো দিঘীর শহর। কিন্তু এখন আমরা নগরের ভেতরের সব পুকুর- দিঘী ভরাট করে বড় বড় বিল্ডিং করেছি। হাওরগুলো ভরাট করে ফেলেছি। এছাড়া প্রধান নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। খালি মাঠগুলো ভরাট হয়ে গেছে। একারণে পানি নামতে পারছে না। যে কোনো দুর্যোগেই সিলেটের জন্য এটা একটা ভয়ের কারণ।মন্ত্রী নগরের ভেতরের পুকুর-দিঘীসহ জলাশয়গুলো রক্ষায় সবাইকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া ড্রেনগুলো খনন করা ও আরও বড় করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক সিস্টেমটাকে নষ্ট করা যাবে না।
বন্যার্তদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই পানি বেশি দিন থাকবে না। দ্রুতই নেমে যাবে। ফলে কয়েকটা দিন কষ্ট করতে হবে। এই সময়ে সরকার আপনাদের পাশে আছে।ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুল হক।
আরও পড়ুন: বহির্বিশ্বে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধির আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরএসময় তিনি বলেন, সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকায় ২৫ লাখ টাকা ও ২০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ দেয়া হবে।তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত আছে। আমরা আজকে সিলেটের দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখবো। প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবো। সবার সাথে আলাপ করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে জানবো। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক বছরই এই অঞ্চলে ঢল নামে। কিন্তু এবার ব্যাপক আকারে ঢল নামছে। সিলেটের উজানে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। ফলে এবার বন্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।বন্যা মোকাবিলায় আগামীতে এই অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর নব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানান এই প্রতিমন্ত্রীও।
তিনি বলেন, নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। এই নদীগুলো ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।চালিবন্দরে ত্রাণ বিতরণ শেষে দুই মন্ত্রী মিরাবাজার এলাকার একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করেন। এরপর সিলেট সদর উপজেলার বিভিন্ন বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন।এসময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসান, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সর্বত্র শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ঢাকা থেকে ভিসা দেয়ায় রোমানিয়াকে ধন্যবাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
সিলেটে হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
সিলেটে হাফিজ সাদিকুর রহমান সাদিক হত্যা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড এবং একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত চারজনকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডেরও নির্দেশ দেন আদালত।
মঙ্গলবার সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারপতি আব্দুর রহিম এই রায় ঘোষণা করেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট পিপি নওশাদ আহমদ চৌধুরী।
এডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট জোবায়ের বখত জুবের রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সৈয়দা রাখা বেগম, আলী হোসেন ও রেজওয়ান ওরফে রেদওয়ান।
আর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেন- খালিকুজ্জামান লায়েক। আসামিদের মধ্যে সৈয়দা রাখা বেগম ও খালিকুজ্জামান লায়েক বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
আরও পড়ুন: কিশোরী পাচার মামলায় খুলনায় স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড
মামলার বিবরণের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ২০১৫ সালের অক্টোবরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সিলেট সদর উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকার সাদিকুর রহমান সাদিক ও সৈয়দা রাখা বেগম নগরীর কালীবাড়িস্থ পীর মঞ্জিলে বিয়ে না করেও স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করছিলেন। সে সময় দুই পরিবারের অমতে তাদের অবস্থান থাকায় দেখা দেয় পারিবারিক কলহ। এক পর্যায়ে সাদিকের পরিবার থেকে তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে অসম্মতি জানালে সৈয়দা রাখা বেগম তার সহযোগী সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিদের নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট কবির আহমদ বাবর।
মামলার বাদীপক্ষের কাওছার আলী তিনজন আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ও চার আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের নির্দেশ দেয়ায় মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন এবং আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে স্বামী হত্যার দায়ে স্ত্রী ও প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড
পিরোজপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
সুনামগঞ্জের ছাতকে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বুধবার পর্যন্ত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় ইতোমধ্যে উপজেলার ১৩ ইউপি ও একটি পৌরসভাসহ নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে এ অঞ্চলের বহু রাস্তাঘাট, প্লাবিত হয়েছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শতাধিক মৎস্য খামার।
ছাতক-সিলেট সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়ক পথে ঝুঁকি নিয়ে কিছু কিছু যান চলাচল করলেও গত বুধবার সকাল থেকে ছাতকের সঙ্গে জেলা সদরসহ দেশের সব অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১৮০ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত বুধবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা চৈলা নদী, পিয়াইন নদী ও সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫৯ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারি বর্ষণ ও সীমান্ত এলাকা মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধির ফলে পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ সড়ক বন্যা প্লাবিত হওয়ায় ১৮টি সড়ক ও উপজেলা সদরের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছেন।
আরও পড়ুন: সিলেটের বন্যায় দুর্ভোগে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নদীগুলো এখন পানিতে টুইটম্বুর। সুরমা-কুশিয়ারায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ওপর দিয়ে। সদর উপজেলার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী গোয়াইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও জকিগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আছে। এসব এলাকায় পানিবন্দি রয়েছে কয়েক লক্ষাধিক মানুষ।
মঙ্গলবার (১৭ মে) দিনে ও রাতে সিলেট জেলায় বৃষ্টি হয়নি। তবে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (১৮ মে) সকাল পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় বেড়েছে দুর্ভোগ। বিপর্যস্ত হয়ে আছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিভিন্ন উপজেলায় প্লাবিত এলাকায় বাঁধ ও পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়া লোকজন বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও শৌচাগার সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ওষুধ ও জ্বালানি তেলের দোকান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানবিক বিপর্যয়ের শংকা দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বাঁধ ও পাকা রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় মানুষজনকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: টানা বর্ষণে সিলেট-সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি
বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও সিলেট নগরীর কয়েকটি এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট এখনও পানির নিচে। বাসাবাড়ি ও সরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেও প্রবেশ করেছে পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা জানান, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। নতুন করে বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভাঙনের খবর সংগ্রহ করছেন তারা।
সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতার ব্যাপারে তিনি জানান, নগরীর জলাবদ্ধতার মূল কারণ হচ্ছে ড্রেনেজ সমস্যা। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতিতে নগরীর দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সিলেটে আগামী ২০-২১ জুন পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। যে কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এছাড়াও চাল ও শুকনো খাবার বিভিন্ন উপজেলার বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার্তদের জন্য ১৯৯ আশ্রয়কেন্দ্র
সুনামগঞ্জে নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপরে
পানিতে ভাসছে সিলেট, বন্যার্ত মানুষের চরম দুর্ভোগ
সিলেট নগরীতে বন্যার্ত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বাসা-বাড়ি বিশেষ করে বিভিন্ন কলোনীতে পানি উঠায় লোকজন ছুটছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। নগরীতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে খোলা হয়েছে দুটি আশ্রয় কেন্দ্র।
সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে সিলেট নগরীতে বন্যার পানি প্রবেশ করতে থাকে। বন্যার পানিতে এরই মধ্যে উপশহর, তালতলা, কানিশাইল এবং দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি লোকজন ঘর-বাড়ির জিনিসপত্র সামলাতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে।মঙ্গলবার সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বেড়েছে নদ-নদীর পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।উজানে বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা পানি উন্নয়ন বোর্ডের। ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার লক্ষাধিক মানুষ।মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট ও কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার প্রায় দেড় সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। বেড়েছে কুশিয়ারা নদীর পানিও।নদীর পানি উপচে সোমবার থেকেই তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নগরের বিভিন্ন এলাকা। মঙ্গলবার প্লাবিত এলাকার পানি আরও বেড়েছে। নগরের উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ার পাড়, সোবহানিঘাট, মাছিমপুর, তালতলা, কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদীঘির পাড়, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।সকালে নগরের উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অভিজাত এই এলাকার প্রধান সড়কে হাঁটুর ওপরে পানি। পানি ঢুকে পড়েছে আশপাশের দোকানপাট ও এলাকার বাসাবাড়িতেও। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল।উপশহরের বি ব্লকের ব্যবসায়ী আজমল আলী বলেন, ‘দোকানের ভেতরে হাঁটুর ওপরে পানি। কাল রাতেও পানি ছিল না। সকালে এসে দেখি দোকানে পানি ঢুকে সব মালপত্র ভিজে গেছে।’
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, হাজারো মানুষ পানিবন্দি
সিলেটে নৌকাডুবি, নিখোঁজ একজনের লাশ উদ্ধার
সিলেট সদর উপজেলার ১ নম্বর জালালাবাদ ইউনিয়নে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ দুই জনের মধ্যে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।সোমবার সন্ধ্যে ৬টার দিকে নিখোঁজ হওয়া আছকন্দর আলীর লাশ উদ্ধার করা হয়। বিকেলে তার লাশ ভেসে উঠলে স্থানীয়দের দেয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।আছকন্দর উপজেলার পুটামারা গ্রামের মৃত রিফাত আলীর ছেলে।
আরও পড়ুন: সিলেটে ট্রাকচাপায় ব্যবসায়ী নিহতনিখোঁজ অপর ব্যক্তি হচ্ছেন- রায়ের গাঁও গ্রামের ইকন্দর আলীর ছেলে রজাখ আলী।সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত খারইল বিলের একাধিক স্থানে নিখোঁজদের সন্ধানে অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিাসের ডুবুরি দল।লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান।এর আগে রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইউনিয়নের রায়েরগাঁও থেকে কালারুকা আসার পথে স্থানীয় খারইল বিলের মধ্যবর্তী স্থানে এই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: সিলেটের কৈলাশটিলার ৭ নাম্বার কূপ থেকে জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সরবরাহ শুরু
জালালাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওবায়দুল্লাহ ইসহাকের বরাত দিয়ে ওসি জানান, বন্যার কারণে রাতে নৌকাযোগে বাড়ি ফিরছিলেন নিখোঁজ দুই জনসহ অন্যরা। রাতে ঝড়ের কবলে পড়ে স্থানীয় খারইল বিলে নৌকাটি ডুবে গেলে তারা নিখোঁজ হন।
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, হাজারো মানুষ পানিবন্দি
টানা ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে। জেলার সুরমা নদীর পানি বিপদসীমায় অবস্থান করছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
সোমবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত সুরমা নদীর নবীনগর পয়েন্টে ৭ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর মাত্র ১০ সেন্টিমিটার পানি বাড়লেই বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঢলের পানিতে ভেসে গেছে হাওরের উঁচু এলাকার বোরো ফসল। পানিতে বাদামসহ নষ্ট হয়েছে মৌসুমী সবজি। জেলার সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহীম, সদরগড়, সৈয়দপুর এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার তিন ইউনিয়নের বরকতনগর, শরীপপুর গোজাইড়া, মহব্বাতপুর মামদপুর, মারফতি গ্রামসহ অনন্ত ১০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এছাড়াও জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের সড়ক ও ঘড়বাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, ঢলের পানিতে তাহিরপুর ও সদর উপজেলার উচ্চ এলাকার ২০ হেক্টর বোরো জমি তলিয়ে গেছে। ঢলের পানি নেমে যাওয়ার আশায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা যাচ্ছে না বলে মুটোফোনে জানিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র সোম। যদিও হাওর পাড়ের ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন ঢলের পানিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতে পারে। অজানা কারণে কৃষি বিভাগ ক্ষয়ক্ষতির তথ্য গোপন করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
আরও পড়ুন: বন্যার পানি হাওরে ঢুকে ফসলহানির আশঙ্কা সুনামগঞ্জের কৃষকদের
টানা বৃষ্টিপাতে রোদের দেখা না পাওয়ায় মারাইকৃত ধান নিয়ে বিপাকে রয়েছেন নন হাওর এলাকার কৃষকরা। ভেজা ধান শুকাতে না পারায় ধানে চারা গজানোর কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন হাজারো কৃষক। সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর গ্রামের বাসিন্দা উজ্জল মিয়া জানান, ঢলের পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। পানির কারণে চলাচল করা যাচ্ছে না। অনেক ঘরে পানি উঠেছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মুন্না মিয়া জানান, ঢলের পানি দোয়ারাবাজার উপজেলার কাংলা, নাইন্দা, গোজাউরা, সিংরাই হাওরের স্কীমের ধান তলিয়েগেছে। পাহাড়ের সীমান্তবর্তী অন্তত ১০ টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি রয়েছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ঢলের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনও পুরোপুরি নিরুপণ হয়নি। আমরা পরিস্থিতি অভজার্ব করছি। পানি নেমে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত তাহিরপুর উপজেলা ১০ হেক্টর ও সদর উপজেলার ১০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: অসময়ের বন্যা থেকে ফসল রক্ষায় নতুন প্রকল্প আসছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
সিলেটে ট্রাকচাপায় ব্যবসায়ী নিহত
সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকায় ট্রাকাচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী এক ব্যবসায়ীর নিহত হয়েছেন। রবিবার রাত ১১টার দিকে আখালিয়া আনসার ভিডিপির ক্যাম্পের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. ফয়জুর রহমান (২৪) আম্বরখানা সামস সুপার মার্কেটের সোহাগ বস্ত্র বিতানের পরিচালাক ও শহরতলীর কান্দিগাও ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের মৃত কুতুব উদ্দিনের ছেলে।
আরও পড়ুন: রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারে সড়ক দুর্ঘটনা যুবক নিহত
সিলেট মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি উত্তর) আজবার আলী শেখ জানান, ফয়জুর রহমান মোটরসাইকেলযোগে আম্বরখানা থেকে আখালিয়ায় যাচ্ছিলেন। পথে আখালিয়া মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে দ্রুতগতির একটি ট্রাক তার মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
এদিকে ঘটনার পর ট্রাক চালক পালিয়ে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা ট্রাকে ভাঙচুর করে ও রাস্তা অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে জালালাবাদ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। এসময় পুলিশ পাল্টা ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আরও পড়ুন: নীলফামারীতে দুর্ঘটনায় আহত সরকারি কর্মকর্তার মৃত্যু
পরে পুলিশ ট্রাকটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। এঘটনার পর বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।
সিলেটে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সিলেটের ওসমানীনগরে যাত্রীবাহী বাসচাপায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও এক আরোহী। রবিবার ভোরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের উপজেলার গয়নাঘাট নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।নিহত আব্দুল্লাহ আল মামুন হাওলাদার (২৫) পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া থানার নদমোল্লা গ্রামের বাদল হাওলাদারের পুত্র।এঘটনায় আহত মিরাজ হোসেনকে (৩০) সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর বাসচালককে আটক করেছে পুলিশ।জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস একটি মোটর সাইকেলকে পিছন থেকে চাপা দিলে মোটর সাইকেলে থাকা দুই আরোহী গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন হাওলাদারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। গুরুতর আহত অবস্থায় মিরাজ হোসেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলটি বাসের নিচে চাপা পড়ায় বাসটি ঘটনাস্থলেই আটকে যায়।
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মা-মেয়েসহ নিহত ৩খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসচালক আমিরুল ইসলামকে আটক করে। আটক আমিরুল চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার আলীনগর মাঝপাড়া গ্রামের মৃত ইকদিল হোসেনের পুত্র।শেরপুর হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিধু ভূষন দাস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসচালককে আটকসহ বাস এবং মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো ও আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি হতাহতরা স্থানীয় একটি নির্মাণাধীন ক্লিনিকে ঠিকাদারীর কাজ করতেন।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯
রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১