বিএনপি
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তারেক-জুবাইদার বিরুদ্ধে দুর্নীতির রায়: বিএনপি
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের দেওয়া রায় প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।
বুধবার (২ আগস্ট) বিএনপি বলেছে, চলমান এক দফা আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই রায় দেওয়া হয়েছে।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশের জনগণ বিচারের নামে বিদ্বেষমূলক প্রহসন প্রত্যাখ্যান করেছে। এই রায়ে সরকার প্রধানের প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, তাদের বর্তমান আন্দোলন যখন দাবানলের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, তখন জনগণকে বিভ্রান্ত করার কৌশল হিসেবে এই রায় দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘চলমান আন্দোলন নেতৃত্বহীন করতে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড দিয়ে বিএনপির চলমান আন্দোলন দমন করা যাবে না। আমরা এই রায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
তাদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলায় সাজা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:বিএনপির আন্দোলনে আ.লীগ গুগলিতে বোল্ড আউট হয়ে গেছে: ফখরুল
ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘আদালতে প্রায় ৪৯ লাখ মামলা বিচারাধীন। অথচ এই মামলার কার্যক্রম দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হয়েছে, যাতে বোঝা যায় শেখ হাসিনার নির্দেশেই এই রায় দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, এই রায় বিচার বিভাগের রাজনীতিকরণের আরেকটি উদাহরণ। ‘এই নির্দেশিত রায় দেশের গণতন্ত্রকে বিলুপ্ত করার ক্রমাগত ষড়যন্ত্রের অংশ।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: আ.লীগ বাংলাদেশকে ‘ডিপ স্টেটে’ পরিণত করেছে: ফখরুল
এর আগে ২০০৭ সালের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা একটি মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছর ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত।
ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক আসাদুজ্জামান লন্ডনে অবস্থানরত তারেক ও জুবাইদার বিরুদ্ধে এ রায় দেন।
একই সঙ্গে তারেককে ৩ কোটি টাকা ও জুবাইদাকে ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত।
আরও পড়ুন: তারেক-জোবাইদার কারাদণ্ডের প্রতিবাদে নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ
তারেক-জোবাইদার কারাদণ্ডের প্রতিবাদে নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ
দুর্নীতির মামলায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের রায়ের প্রতিবাদে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছে বিএনপির শত শত নেতা-কর্মী।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যে বুধবার (২ আগস্ট) দুপুর ১টা থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা এলাকায় জড়ো হতে শুরু করে।
আদালতের রায় ঘোষণার পর বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে নয়াপল্টন থেকে নাইটিঙ্গেল ক্রসিংয়ের দিকে মিছিল বের করেন বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা।
আরও পড়ুন: বিএনপির আন্দোলনে আ.লীগ গুগলিতে বোল্ড আউট হয়ে গেছে: ফখরুল
তারা ‘শেখ হাসিনার রায়’ মানি না বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
২০০৭ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা একটি মামলায় তারেককে ৯ বছরের কারাদণ্ড এবং জোবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক আসাদুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক ও জোবাইদার বিরুদ্ধে এ রায় দেন।
একই সঙ্গে তারেককে ৩ কোটি টাকা ও জোবাইদাকে ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত।
এদিকে বিএনপিপন্থী একদল আইনজীবীও সকাল থেকে ঢাকা কোর্ট এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।
এর আগে মঙ্গলবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশঙ্কা করেছিলেন, সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী দুর্নীতি মামলার ‘আজ্ঞাবহ’ রায়ে তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের সাজা হতে পারে।
আরও পড়ুন: আ.লীগ বাংলাদেশকে ‘ডিপ স্টেটে’ পরিণত করেছে: ফখরুল
আ.লীগ বাংলাদেশকে ‘ডিপ স্টেটে’ পরিণত করেছে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আঁকড়ে ধরে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বাংলাদেশকে 'ডিপ স্টেটে' পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, ‘তারা (আ.লীগ) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে। এর মানে তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে একটি ‘ডিপ স্টেটে’ পরিণত করেছে।’
মঙ্গলবার এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ জন্মগতভাবেই একটি সন্ত্রাসী দল কারণ তারা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো জাতীয় নেতাকে পিটিয়ে দল থেকে বের করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: সংঘর্ষের পর গয়েশ্বর ও আমানসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের আটক করেছে পুলিশ
তিনি আরও বলেন, ‘তারা (আ.লীগ) নিজেরাই সন্ত্রাসী। তাই তারা দেশকে একেবারেই সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়ে টিকিয়ে রাখা দল। তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছুই নেই।’
শনিবার ধোলাইখালে দলের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপির কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ শাখা।
পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন এবং আটকের পর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দলীয় নেতা আমানউল্লাহ আমানের জন্য উপহার পাঠানোর বিষয়ে ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে দিতে সরকার এটা করেছে।
আরও পড়ুন: বিএনপির আন্দোলনে আ.লীগ গুগলিতে বোল্ড আউট হয়ে গেছে: ফখরুল
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে এতটাই দেউলিয়া হয়ে গেছে যে তাদের এখন এসব করতে হচ্ছে এবং ভিডিও ছড়াতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ শিষ্টাচার জানে? তারা এটা জানেন না. আওয়ামী লীগ কখনই ভদ্রলোকের দল ছিল না। সুতরাং, তাদের কাছ থেকে ভদ্রতা আশা করার কোন কারণ নেই।’
তিনি আরও বলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান উল্লাহ আমানের দেশপ্রেম নতুন করে প্রমাণ করার দরকার নেই। ‘তারা তাদের আজীবন রাজনীতি এবং গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে তাদের দেশপ্রেম প্রমাণ করেছে।’
বিএনপি নেতা বলেন, ২৮ জুলাই নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে লাখ লাখ মানুষের সমাগম দেখে সরকার ভীত হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন,বিএনপি নয় অগ্নিসংযোগে লিপ্ত আওয়ামী লীগ। ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে সরকারকে পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানান ফখরুল। ‘সংকট কাটিয়ে ওঠার এটিই একমাত্র উপায়।’
আরও পড়ুন: হামলার প্রতিবাদে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসমাবেশ শুরু
বিএনপির আন্দোলনে আ.লীগ গুগলিতে বোল্ড আউট হয়ে গেছে: ফখরুল
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের আন্দোলনের 'গুগলিতে' ক্লিন বোল্ড হয়েছে দাবি করে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার উল্লেখ করেন, রাজপথে দলের বিজয় অর্জনে লক্ষ্যের ‘অনেকদূর’এগিয়েছে।
সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক প্রতিবাদ জনসমাবেশে বক্তব্যে ফখরুল বলেন,‘আরেকটি স্পিন (ক্রিকেটে) যাকে বলা হয় গুগলি যার মাধ্যমে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিডল স্টাম্প উড়িয়ে দিয়ে ব্যাটসম্যানকে বোল্ড আউট করা হয়। সেই অনুযায়ী গত ২৮ ও ২৯ জুলাই বিএনপির গুগলিতে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে গেছে।
বিএনপি নেতা আরও দাবি করেন যে, বৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপ সহ্য করে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ গত ২৮ জুলাই নয়াপল্টনে তাদের দলের মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছিল। 'টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া' পর্যন্ত সারা দেশ থেকে রাজধানীতে মানুষ আসছে।
আরও পড়ুন: ডিবি অফিসে খাবার খাওয়ার ব্যাখা দিলেন গয়েশ্বর
বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘সেই মহসমাবেশে জনতা শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার বার্তা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, পরদিন (২৯ জুলাই) তারা হরতাল বা অবরোধের পরিবর্তে রাজধানীর প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি দিলেও অস্ত্র ও সাঁজোয়া যানে সজ্জিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের শত শত ‘গুন্ডা’ ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান নেয়।
তিনি বলেন, সবচেয়ে জঘন্য ব্যাপার হলো, পুলিশ বিএনপির সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমানউল্লাহ আমানকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। ‘পরে, তারা স্ক্রিপ্ট প্রস্তুত করে এবং গল্প এবং ভিডিও তৈরি করেছিল। এমনই অপহরণকারী সরকার!’
বিএনপি নেতা বলেন, জনগণের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নেই তারাই এ ধরনের অপহরণ ও কাল্পনিক গল্পের আশ্রয় নেয়। ‘মানুষ তাদের গল্প গ্রহণ করেনি। আমাদের নেতা গয়েশ্বর বাবু ও আমানউল্লাহ আমানকে কি সেই গল্পগুলো হেয় করা হয়েছে? আপনারা যারা এই ধরনের নোংরা নাটক তৈরি করেছেন তারা লজ্জিত হয়েছেন।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে ফখরুল বলেন, তারা শেখ হাসিনা ও তার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন চান না। ‘আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। আমাদের দাবি সোজাসুজি মানা না হলে রাজপথে ফায়সালা করা হবে। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি এবং আমাদের জয় নিশ্চিত।’
আরও পড়ুন: ঢাকায় বিএনপির ৫৪৯ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ১১টি মামলা
দলের দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিতে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর ‘হামলার’ প্রতিবাদে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর শাখা ঐতিহাসিক সভাস্থলে জনসমাবেশের আয়োজন করে।
জনসমাবেশস্থলের চারপাশে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
শনিবার দলের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন। একই ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করেছে বিএনপির সব জেলা ও মহানগর শাখা।
শনিবার ঢাকার মূল প্রবেশপথে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি সংঘর্ষ ও সহিংসতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে রাজধানী। এতে অসংখ্যক মানুষ আহত হয়।
আরও পড়ুন: হামলার প্রতিবাদে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসমাবেশ শুরু
হামলার প্রতিবাদে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসমাবেশ শুরু
রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে শনিবারের অবস্থান কর্মসূচিতে দলের নেতা-কর্মীদের উপর ‘হামলার’ প্রতিবাদে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসমাবেশ শুরু হয়েছে।
সোমবার বিকাল ৩টার দিকে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমাবেশ শুরু হয়।
আরও পড়ুন:ঢাকায় বিএনপির ৫৪৯ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ১১টি মামলা
দলের দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর শাখা এ জনসমাবেশের আয়োজন করেছে।
চারটি ট্রাকের সমন্বয়ে একটি অস্থায়ী মঞ্চ করা হয়েছে। সমাবেশস্থলের চারপাশে প্রায় ৫০টি মাইক স্থাপন করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম জানান, সমাবেশের জন্য স্বল্প সময়ের নোটিশে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তারা।
তিনি বলেন, আমি আশাবাদী জনসমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম হবে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আরও পড়ুন: ২.০৩ কোটি জামানত দেখিয়ে ইসিতে বিএনপির অডিট রিপোর্ট জমা
দুপুর ১টা থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলটির নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে ভিড় করতে থাকেন।
যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সমাবেশস্থলের চারপাশে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিতে দলের নেতা-কর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদে সব মহানগর ও জেলা শহরে জনসমাবেশ করার ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল।
এদিকে, শনিবার ঢাকার প্রধান প্রবেশপথে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি সংঘর্ষ ও সহিংসতায় বিপর্যস্ত হয়েছে, এতে অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় মাতুয়াইল, শ্যামলীসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: ডিবি অফিসে খাবার খাওয়ার ব্যাখা দিলেন গয়েশ্বর
ডিবি অফিসে খাবার খাওয়ার ব্যাখা দিলেন গয়েশ্বর
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় শনিবার আটকের সময় পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
রবিবার (৩০ জুলাই) নয়াপল্টন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ডিবি কার্যালয়ে তার দুপুরের খাবারের ভিডিও ও ছবি জনগণকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয়েছে।
গয়েশ্বর বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনার ভিডিও এবং ছবি ছড়িয়ে দেওয়া একটি নিম্ন রুচির পরিচায়ক এবং একটি অত্যন্ত লজ্জাজনক ও ঘৃণ্য কাজ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও জানান, সোনারগাঁও হোটেল থেকে ডিবি অফিসের আনা খাবার খান নি তিনি; তার পরিবর্তে ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশিদের বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খান তিনি।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘যারা এটা করেছে (ভিডিও ও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে) তারা তাদের নিম্নরুচির পরিচয় দিয়েছে। এটি এক ধরনের তামাশাপূর্ণ নাটক এবং আমি জানি না কে এর স্ক্রিপ্ট লিখেছেন।’
আরও পড়ুন: আটকের পর ডিবি প্রধানের সঙ্গে গয়েশ্বরের দুপুরের ভোজ
শনিবার ডিবি অফিসের প্রধান হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে গয়েশ্বর দুপুরের খাবার খাচ্ছেন এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় ধোলাইখাল থেকে ওই বিএনপি নেতাকে আটক করা হয়। পরে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গয়েশ্বর বলেন, রক্তচাপ কমে যাওয়ায় ডিবি কর্মকর্তারা তাকে খেতে অনুরোধ করেন।
প্রবীণ এই নেতা বলেন, ‘তারা বলল, স্যার আপনি সারাদিন কিছু খাননি। আমরা শুনেছি আপনি পানিও পান করেননি। আপনাকে স্যালাইন দিয়ে ইনজেকশন দেওয়া হবে। কিছু না খেয়ে স্যালাইন নেবেন? আমাদের যা আছে তা একটু খান। আমরা আপনাকে না খাইয়ে রাখতে পারি না। কারণ আমরা আপনাকে গ্রেপ্তার না করলেও আমাদের দায়িত্ব রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডাইনিং রুমে ঢুকে দেখলাম খাবারের বিশাল আয়োজন…আমি বললাম সোনারগাঁও বা অন্য কোন হোটেলের খাবার আমি খাই না। আমি ৯০ভাগ নিরামিষাশী এবং আমি এক বা দুটি আইটেমের বেশি খাই না। আমি দেখেছি যে তারা ছবি তুলছে এবং আমি তাদের বলেছিলাম যে খাবারের সময় ছবি তোলা কোনও ভদ্রলোকের কাজ নয়।’
পরে তিনি বলেন, ডিবি প্রধান তার (হারুনের) বাড়ি থেকে আনা খাবার নিয়ে আসতে বলেছেন তার কর্মীদের।
আরও পড়ুন: নিরাপত্তাহীনতায় বাংলাদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক ক্রমান্বয়ে দেশ ছাড়ছে: গয়েশ্বর
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (হারুন) টিফিন ক্যারিয়ার থেকে আমাকে দুই চামচ সাদা ভাত দিয়েছিলেন। আমি তাকে শুধু তার সবজি দিতে বললাম। তারপর তিনি বললেন, স্যার এক টুকরো রুই মাছ নিন, এটা কিশোরগঞ্জ থেকে আনা হয়েছে।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, এর আগেও অনেকবার ডিবি অফিসে গিয়েয়েন তিনি। সেসময় আশেপাশের হোটেল থেকে খাবার দিয়ে তাকে আপ্যায়ন করা হত। কিন্তু সোনারগাঁ থেকে এবার খাবার কেনার তহবিল দিল কে? তাদের কি এটা করার নিয়ম আছে? যাদের তারা হেফাজতে নেয় তারা কি তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করে? তাই বোঝা যায়, তারা লোক দেখানো নাটক মঞ্চস্থ করেছে। এটি একটি নিম্ন রুচির পরিচয়। বাংলাদেশের মানুষ এতটা বোকা নয় যে সাজানো ছবি ও ভিডিও দেখে বিপথগামী হবে।
গয়েশ্বর বলেন, গয়েশ্বর রায়ের মাথা কেনার মতো এত টাকা রাষ্ট্রের নেই। ‘রাষ্ট্রের ক্ষমতা আছে আমাকে এক গুলিতে মেরে ফেলার এবং ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের মতো আমাকে গুম করার ক্ষমতা আছে... কিন্তু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মতো একজনকে কেনার ক্ষমতা সরকারের নেই।’
রাজধানীর ধোলাইখালে দলটির অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে শনিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গয়েশ্বরকে পিটিয়ে আহত করে।
পরে মাথা কেটে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে আটক করে প্রথমে ওয়ারী থানায় ও পরে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: মানুষের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই বিএনপির দায়িত্ব: গয়েশ্বর
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন। তারপরে তাকে তার কার্যালয়ের সামনে নামিয়ে দেওয়া হয়।
তার ওপর হামলার বর্ণনা দিয়ে গয়েশ্বর বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা ধোলাইখালে রাজধানীর প্রবেশপথে তাদের দলের অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে জড়ো হলে পুলিশ তাদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে, যার ফলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
তিনি বলেন, ‘আপনারা মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছেন যে কীভাবে তারা আমাদের নেতাকর্মীদের লাঠি দিয়ে পিটিয়েছিল... তারা আমাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে আমি মাটিতে পড়ে যাই এবং তারপরও তারা আমাকে মারধর করে। দেখে মনে হচ্ছে তারা একটি সাপকে মারছে।’
এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনে তার কার্যালয়ে গয়েশ্বরকে দেখতে যান এবং তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন।
২.০৩ কোটি উদ্বৃত্ত দেখিয়ে ইসিতে বিএনপির অডিট রিপোর্ট জমা
বিএনপি রবিবার (৩০ জুলাই) নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ২০২২ ক্যালেন্ডার বছরের জন্য তাদের বার্ষিক আর্থিক বিবরণী জমা দিয়েছে। যেখানে ২ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮২৯ টাকার তহবিল দেখানো হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল রাজধানীর নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলমের কাছে আর্থিক প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সহ-দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন ও আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে বিএনপি আয় করেছে ৫ কোটি ৯২ লাখ ৪ হাজার ৬৩২ টাকা এবং ব্যয় করেছে ৩ কোটি ৮৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮০৩ টাকা।
আরও পড়ুন: বিএনপিকে দোষারোপ করতে গাড়িতে আগুন দিয়েছে আওয়ামী লীগ: ফখরুল
গত বছর দলটির আয় ও ব্যয় উভয়ই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২১ ক্যালেন্ডার বছরে দলটি ১ কোটি ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৭১ টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ৮৪ লাখ ১২ হাজার ৯৪৪ টাকা আয় দেখিয়েছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রিজভী বলেন, তারা রুটিন ওয়ার্ক অনুযায়ী অডিট রিপোর্ট ইসিতে জমা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিএনপির আয়ের বড় উৎস ছিল দলের সদস্যদের চাঁদা, অনুদান এবং ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার মুনাফা।
এই বিএনপি নেতা বলেন, তাদের কার্যালয়ের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও উৎসব বোনাস, রাজনৈতিক কর্মসূচি, পোস্টার ছাপানো, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ এবং দলের দমন-পীড়িত নেতাকর্মীদের আর্থিক সহায়তা ব্যয়ের প্রধান খাত।
আইন অনুসারে, প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল প্রতি বছরের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আগের ক্যালেন্ডার বছরের আর্থিক বিবরণী জমা দিতে বাধ্য।
আরও পড়ুন: রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর সমাগম
মহাসমাবেশের আগে বিএনপির ৫ শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার: রিজভী
ঢাকায় বিএনপির ৫৪৯ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ১১টি মামলা
ঢাকার মূল প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৫৪৯ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অন্তত ১১টি মামলা করা হয়েছে।
এসব মামলায় অন্তত ১৪৯ বিএনপি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অভিযুক্তদের মধ্যে ৪৬৯ জনের নাম রয়েছে এবং আরও ৭০-৮০ জন অজ্ঞাত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন জানান, শনিবার অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে এসব মামলা করা হয়েছে।
মামলার মধ্যে রাজধানীর বংশাল, সূত্রাপুর ও কদমতলী থানায় একটি করে, যাত্রাবাড়ি থানায় দুটি, বিমানবন্দর থানা একটি, উত্তরা পশ্চিম থানায় দুটি, উত্তরা পূর্ব থানায় তিনটি।
আরও পড়ুন: বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে সহিংসতা-অগ্নিসংযোগ
তিনি বলেন, ডিএমপির অসম্মতি উপেক্ষা করে গতকাল বিএনপি ‘অবৈধ সমাবেশ’ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা বাস ভাঙচুর করে এবং ককটেল বোমা বিস্ফোরণ, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে, পুলিশ অফিসারদের ওপর হামলা করে এবং তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়।’
শনিবার ঢাকার মূল প্রবেশপথে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে সংঘর্ষ ও সহিংসতার কারণে বহু সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছে।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় মাতুয়াইল, শ্যামলীসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কেও পিটিয়ে আহত করে পুলিশ। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ঘটনাস্থল থেকে তুলে নিয়ে যায়।
দুপুর ১২টার দিকে গাবতলী বাসস্টেশন থেকে বিএনপির ঢাকা উত্তর মহানগর শাখার আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানকেও ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
পাঁচ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা ঢাকার কয়েকটি প্রবেশপথে জড়ো হলে বিএনপি নেতা-কর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ধোলাইখাল, উত্তরা, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ ও গাবতলীতে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালন করে অবস্থান নিলে পুলিশের সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: সংঘর্ষের পর গয়েশ্বর ও আমানসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের আটক করেছে পুলিশ
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে বিএনপির ৫ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি শনিবার
বিএনপিকে দোষারোপ করতে গাড়িতে আগুন দিয়েছে আওয়ামী লীগ: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, বিরোধীদের মিথ্যা দোষারোপ করার জন্য সরকারের চক্রান্তের অংশ হিসেবে রাজধানীতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এবং ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা গাড়িতে আগুন দিয়েছে।
তিনি বলেন, আটক বিএনপি নেতাদের খাবার ও ফুল পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির ফল।
শনিবার (২৯ জুলাই) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি মাতুয়াইল ও শ্যামলীতে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করার অপচেষ্টা চলছে। সরকারি সংস্থার সদস্যরা, এমনকি আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা পুলিশের সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে এবং মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাওয়ার আগে ভিডিও ধারণ করেছে।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, হামলা চালিয়ে এবং এসব ঘটনার ভিডিও করে অপরাধীরা পুলিশের সামনে কোনো বাধা ছাড়াই পালিয়ে গেছে। ‘এটি সহজেই অনুমান করা যায় যে ঘটনাগুলো কারা সাজাতে পারে।’
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ স্বৈরাচার ও সামন্তবাদ পছন্দ করে: ফখরুল
নিজেরাই অপরাধ করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, পোড়া বাসের চালক ও প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের পেছনে কারা জড়িত ছিল। ‘এটা খুব স্পষ্ট যে সরকার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ও নাটকীয়তায় এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।’
রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি নস্যাৎ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের ব্যবহার করে সরকার রাজধানীতে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও অনেক নেতাকর্মীর ওপর হামলা এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার প্রমাণ করেছে বর্তমান সরকারের হাতে দেশের কোনো নাগরিক নিরাপদ নয়। ‘এই সরকার এখন শুধুমাত্র ঘৃণা ও নিন্দার প্রাপ্য।’
তিনি বলেন, সরকার ও তার বিভিন্ন শক্তির অবৈধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়ার ক্ষমতা বিএনপি ও দেশের জনগণের রয়েছে। ‘কিন্তু আমরা সবসময় সেই শক্তি প্রয়োগের ফলে যে অপ্রীতিকর এবং দুঃখজনক পরিস্থিতি হতে পারে তা এড়াতে চেয়েছি। এটা আমাদের দুর্বলতা নয়, বরং এটা জনগণ ও গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের দায়িত্ব।’
আরও পড়ুন: 'সময় শেষ, পদত্যাগ করুন': সরকারের প্রতি ফখরুল
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, তাদের দল দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে আসছে। যদিও অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা, গুম, নিপীড়ন, কারাবরণ, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু সবকিছুর একটা সীমা আছে। আশা করি সরকার এটি মাথায় রাখবে।’
আটকের পর দলের সিনিয়র নেতা আমানুল্লাহ আমানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের জন্য ডিবি পুলিশের মধ্যাহ্নভোজের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সমালোচকরা বলছেন যে এটি মার্কিন ভিসা নীতির ফলাফল।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা নিজেদেরকে (ভিসা নীতি থেকে) রক্ষা করতে এবং নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে এই নাটক মঞ্চস্থ করেছে। অতীতেও তারা এ ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করেছে। তাই এসব বিষয় আমাদের নেতা, কর্মী ও জনগণের কাছে তুচ্ছ।’
আরও পড়ুন: আ. লীগের ভয় দেখানোর কৌশল আর চলবে না, জনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে: ফখরুল
ফখরুল বলেন, সরকার ও পুলিশ অতীতে বিএনপি নেতাদের প্রতি এমন আন্তরিক মনোভাব কখনো দেখায়নি।
তিনি বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে আমাদের প্রায় ৪৫০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। মির্জা আব্বাস ও আমাকেও কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা তখন সুস্বাদু আম, ফল, ফুল পাঠায়নি। তারা এখন ভিসা নীতির প্রভাব থেকে বাঁচাতে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য এটি করছে।’
এর আগে শনিবার ঢাকার প্রধান প্রবেশপথে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি সংঘর্ষ ও সহিংসতায় ভেস্তে যায়।
বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় মাতুয়াইল ও শ্যামলীসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
আটকের পর ডিবি প্রধানের সঙ্গে গয়েশ্বরের দুপুরের ভোজ
বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
শনিবার (২৯ জুলাই) ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায় বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশিদ এক সঙ্গে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন।
শনিবার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমানউল্লাহ আমানসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে সহিংসতা-অগ্নিসংযোগ
এর আগে পুলিশ তুলে নিয়ে গেলে আমান অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় তাকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তার সহকারী একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান হাসপাতালে বিএনপি নেতা আমানকে দেখতে যান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ সময় হাফিজুর প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো দুপুরের খাবার, এক ঝুড়ি ফল ও জুস গ্রহণের প্রস্তাব দেন এই বিএনপি নেতার কাছে।
তিনি আরও বলেন, আমান দেশের অন্য কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে চাইলে তার ব্যবস্থাও করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হাফিজুর আরও বলেন, বিএনপি নেতা উপহার গ্রহণ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে তার সদয় আচরণ এবং তার রাজনৈতিক শিষ্টাচারের জন্য ধন্যবাদ জানান।
আরও পড়ুন: যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের সময় ২ বাসে আগুন
বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ পুলিশ আহত, আটক ৯০: ডিএমপি