������������������
সরকারের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা: বিএনপি
সরকারের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আরও বাড়লে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, ‘গতরাতে (শুক্রবার রাত) জ্বালানি তেলের মূল্য একধাপে প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা ছাড়া কিছুই নয়।’
শনিবার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সেখানে গত ৩১ জুলাই পুলিশের গুলিতে ভোলা জেলা শাখার ছাত্রদল সভাপতি নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানানো হয়।
শনিবার সড়কে গণপরিবহনের কমতির বিষয়টি উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে এবং সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘কারণ যাতায়াতের ভাড়া বাড়বে; এছাড়া চাল, ডাল, লবণ ও ভোজ্য তেলসহ সকল প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো দেশে এর প্রভাব পড়বে।’
বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কে জনগণকে সরকার ভুল তথ্য দিয়েছে। কিন্তু রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তারা (সরকার) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে।
তিনি বলেন, ঋণ মঞ্জুর করার জন্য আইএমএফ কঠিন শর্ত জুড়ে দিয়েছে। যেখানে বিভিন্ন পণ্য ও খাতে সরকারের ভর্তুকি উঠিয়ে নেয়ার কথাও আছে। তাই সরকার এখন এসব করছে (লোন পাওয়ার জন্য)।
এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী গত শুক্রবার জ্বালানি তেলের কিছুটা মূল্যবৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু শুক্রবার রাতে তা অসহনীয় মাত্রায় বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার প্রতিনিয়ত জ্বালানি তেল, গ্যাস ও সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দেশের মানুষকে মারাত্মক ভোগান্তিতে ফেলেছে। কাঁচামরিচের দাম এখন ৩০০ টাকা। এধরনের নিপীড়নে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
সরকার ‘অতিকায় দানব’ এ পরিণত হচ্ছে বলে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এই অত্যাচারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা দেশপ্রেমিকদের এখন একমাত্র দায়িত্ব।
আরও পড়ুন: আর কান্না নয়, জেগে উঠুন: কর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল
লোডশেডিংয়ের পেছনে সরকারের ‘মেগা’ দুর্নীতি, লুটপাট: বিএনপি
ষড়যন্ত্রকারীদের নাম প্রকাশ্যে আনুন: প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ফখরুল
সরকারবিরোধী আন্দোলন কোনো চক্রান্ত হতে পারে না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের নাম প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বুধবার বলেছেন যে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য একটি নতুন চক্রান্ত শুরু হয়েছে এবং তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের চেনেন। আমি তাকে অনুরোধ করতে চাই... আপনি স্পষ্টভাবে তাদের নাম প্রকাশ করুন দয়া করে। জাতি জানতে চায় তারা কারা।’
বৃহস্পতিবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
সরকার পতনের যে কোনো আন্দোলন কোনো ষড়যন্ত্র নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা সুস্পষ্টভাবে এবং প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে চাই যে আমরা গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী শাসনকে সরিয়ে একটি গণমুখী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এখানে কোনো চক্রান্তের প্রশ্নই আসে না। আওয়ামী লীগই ২০০৮ সালে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসে।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে ২০০৮ সালে বিএনপিকে হারানোর ষড়যন্ত্র করেছিল এবং আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছিল।
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচন একইভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল... এমনকি, জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেছিলেন যে রাতে ভোট হয়েছে এবং তারা নিজেরাই করেছে।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বিএনপিপন্থী অংশ জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশ আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে বলে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার নতুন চক্রান্ত শুরু হয়েছে।
‘২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। তারা আবারও আমাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করছে। আমি তাদের [ষড়যন্ত্রকারীদের] সবাইকে চিনি,’ তিনি বলেছিলেন।
ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ অনেক গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে, অনেক সাংবাদিককে দমন ও হত্যা করেছে, অনেককে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়েছে এবং মিডিয়াকে আটকানোর জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে। ‘আওয়ামী লীগের জন্য এটা স্বাভাবিক কারণ এটা তাদের মৌলিক চরিত্র। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। মানুষকে ধোঁকা দেয়াও দলের চরিত্র। এই দল যা বলে তার ঠিক উল্টোটা করে।’
৬৪ জেলার মধ্যে ৪০টিতে পুলিশ সুপার (এসপি) বদল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনে নতুন করে রদবদলের মাধ্যমে যারা প্রকৃত আওয়ামী লীগের সদস্য তাদের এসপি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আর কান্না নয়, জেগে উঠুন: কর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল
সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যমত্যে বিএনপি-গণফোরাম
আর কান্না নয়, জেগে উঠুন: কর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল
ভোলায় পুলিশের গুলিতে নিহত নূরে আলম ও আবদুর রহিম হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার শপথ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের সকলকে চোখের জল ফেলা বন্ধ করে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতিকে বাঁচাতে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন,‘আর কান্নাকাটি নয়, আমাদের এখনই কান্না ভুলে জেগে উঠতে হবে, কারণ এই ভয়ঙ্কর স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের নিপীড়ন থেকে জাতিকে বাঁচাতে হবে।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভোলা জেলা শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলমের নামাজে জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ফখরুল এ মন্তব্য করেন।
রবিবার ভোলায় পুলিশ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ নূরে আলম বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান, তার মৃত্যুতে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দুজন হয়েছে। এর আগে রবিবার ভোলায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিম নিহত হন।
ফখরুল বলেন, তাদের দলের নেতাকর্মীদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে এবং তাদের (বিএনপির নেতাকর্মীদের) বিরুদ্ধে দায়ের করা ৩৫ লাখ মামলা থেকে মুক্তির জন্য শোককে শক্তিতে পরিণত করে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যমত্যে বিএনপি-গণফোরাম
তিনি বলেন, তাদের দল বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সমগ্র জাতিকে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করে শান্তিপূর্ণভাবে শক্তিশালী আন্দোলন করবে। ‘আমরা আমাদের ছেলেদের, আমাদের ভাই নূরে আলম ও আবদুর রহিমকে হত্যার প্রতিশোধ নেব গণআন্দোলনের মাধ্যমে।’
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বিএনপি নেতা বলেন, বাবার কাঁধে ছেলের লাশ বহন করার চেয়ে বড় কষ্ট আর কিছু নেই।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের সামনে আমাদের ছেলে ভোলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলমের লাশ দেখছি। যিনি এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। আমাদের ভোলা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিমকেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং আরও ১৯ জন ঢাকা ও বরিশালের হাসপাতালে বাঁচার জন্য লড়াই করছে।’
ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের হাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা নতুন কিছু নয়। ‘আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে আমাদের এক হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে এবং প্রায় ৬০০ জনকে গুম করেছে স্বৈরাচারী শাসনকে মজবুত করার জন্য।’
সকাল ১১টায় নিহত ছাত্রদলের সভাপতি জানাজা হওয়ার কথা থাকায় সকাল থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের শত শত নেতাকর্মীদের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিতে থাকে। সেসময় ব্যস্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে নূরে আলমের মরদেহ নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানে মরদেহ আসার পর অনেক ছাত্রদল নেতাকর্মীকে কাঁদতে দেখা যায়।
ফখরুল দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নূরে আলমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এবং দলীয় পতাকা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
পরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে তার নামাজের জানাজা শেষে লাশ দাফনের জন্য ভোলায় পাঠানো হয়।
বিদ্যুৎ খাতে চলমান লোডশেডিং ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে বিএনপি’র দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত রবিবার ভোলায় তাদের জেলা দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন দলটির নেতাকর্মীরা।
একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কালীনাথ রায়ের বাজারে বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
পরে পুলিশ গুলি ছুড়ে এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম নিহত এবং নূরে আলমসহ দল ও এর সহযোগী সংগঠনের আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়।
তিন দিনের শোক
নূরে আলম ও আবদুর রহিমের স্মরণে শুক্রবার থেকে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, শোক পালনকালে সারাদেশে বিএনপির সকল কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। নিহত দুই নেতার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
এছাড়া তাদের হত্যার প্রতিবাদে আগামী ৬, ৭ ও ৮ আগস্ট যথাক্রমে ছাত্রদল,কৃষকদল ও যুবদল সমাবেশ করবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: লোডশেডিংয়ের পেছনে সরকারের ‘মেগা’ দুর্নীতি, লুটপাট: বিএনপি
সড়কে নৈরাজ্যের জন্য সরকারের সমালোচনা বিএনপির
ভোলায় শুরুর ৬ ঘণ্টা পর হরতাল প্রত্যাহার করল বিএনপি
ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ জেলা ছাত্রদল সভাপতি নূরে আলমের মৃত্যুর ঘটনায় জেলা বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। হরতাল শুরুর ছয় ঘণ্টা পর জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
দুপুরে ভোলা জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারের উপরের নির্দেশ না থাকলে পুলিশের বিরুদ্ধে কোন শাস্তি মূলক ব্যবস্থা বা কোন এ্যাকশন আজ পর্যন্ত আমরা লক্ষ করিনি।’
এসময় তিনি ওই দিনের ঘটনায নিহত ও আহত পরিবারের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পুলিশদের বিচার দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিমের স্ত্রী ও সন্তানদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।
এ ঘোষণার পর জেলা সড়কে দোকানপাট খুলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিএনপির ভোলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির শোপান বলেন, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে।
শহরের মহাজনট্টি সদর রোড, বিএনপির কার্যালয় এলাকায় সকাল থেকে অধিকাংশ দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।
হরতালের কারণে জেলার সড়কে যান চলাচল কম করতে দেখা গেছে। তবে ভোলা-চরফ্যাশন রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে।
এছাড়া যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শহরের প্রধান কয়েকটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
রবিবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নূরে আলম গুলিবিদ্ধ হন।
হুমায়ুন কবির জানান, ওই দিনই রাজধানীর কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে বুধবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে নূরে আলম মারা যান। তিনি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
চলমান লোডশেডিং এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে বিএনপির দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবিবার ভোলায় জেলা দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন দলটির নেতাকর্মীরা।
এক পর্যায়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা কালীনাথ রায় বাজারে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
পরবর্তীতে পুলিশ গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম নিহত হন এবং দলের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন।
পড়ুন: ছাত্রদল নেতার মৃত্যু: ভোলায় চলছে বিএনপির হরতাল
ছাত্রদল নেতার মৃত্যু: ভোলায় বৃহস্পতিবার হরতালের ডাক বিএনপির
সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যমত্যে বিএনপি-গণফোরাম
বিএনপি ও মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের একটি অংশ মঙ্গলবার সংলাপে বসে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যুগপৎ আন্দোলনে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে।
রাজধানীর আরামবাগে গণফোরামের কার্যালয়ে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও গণমুখী সরকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্য গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের চলমান সংলাপের অংশ হিসেবে গণফোরাম নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান দানবীয় শাসনব্যবস্থাকে উৎখাতের জন্য অন্য সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একযোগে আন্দোলন করার জন্য আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি যা আমাদের সকল অর্জনকে ধ্বংস করছে।’
আরও পড়ুন: সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যমতে বিএনপি-জাসদ
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা এবং সব দলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলেছেন তারা।
সেই নির্বাচনের পর, তিনি বলেছিলেন যে তাদের দলের রাষ্ট্র সংস্কার এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মন্টু বলেন, তারা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় ঐক্য তৈরি করে বর্তমান শাসনকে পরাজিত করতে চান এবং এভাবে দেশের জনগণের মালিকানা পুনরুদ্ধার করতে চান।
বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে হতে পারে না বলে বিশ্বাস করেন তিনি। তাই আমরা চাই আগামী সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হোক।
২৪ মে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে প্রথম বৈঠকের মাধ্যমে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে।
দলটি লেবার পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (জাগপা), ন্যাপ (ভাসানী), মুসলিম লীগ, ইসলামী ঐক্যজোট এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করেছে। সাম্যবাদী দল ও ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল), বাংলাদেশ পিপলস লীগ, বাংলাদেশ ন্যাপের সঙ্গেও বৈঠক করে।
আরও পড়ুন: লোডশেডিংয়ের পেছনে সরকারের ‘মেগা’ দুর্নীতি, লুটপাট: বিএনপি
লোডশেডিংয়ের পেছনে সরকারের ‘মেগা’ দুর্নীতি, লুটপাট: বিএনপি
সরকারের ‘মেগা’ দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে দেশবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের এখন প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এখন কেন লোডশেডিং হচ্ছে? এর পেছনের কারণ হলো মেগা দুর্নীতি ও চুরি।’
এক জনসভায় বক্তৃতাকালে তিনি অভিযোগ করেন যে সরকার কুইক-রেন্টাল এবং অন্যান্য পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে এই জাতীয় চুক্তি স্বাক্ষর করার পর থেকে ১০টি কোম্পানিকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে হাজার হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে যদিও তারা কোনও বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি।
চলমান লোডশেডিং, জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনা এবং জ্বালানি-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপি।
আরও পড়ুন: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য পদত্যাগ করলে আপনাদের সঙ্গে চা খাব: প্রধানমন্ত্রীকে ফখরুল
ফখরুল বলেন, অফশোর গ্যাস অনুসন্ধানে জনগণের কাছ থেকে সারচার্জ নিয়ে একটি তহবিল তৈরি করা হয়েছে। এটা উদ্বেগজনক যে সরকার এই তহবিল থেকে গ্যাস কিনতে (বিদেশ থেকে) প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। ‘এটি আরেকটি প্রতারণা ও ডাকাতি।’
তিনি অভিযোগ করেন, একদিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন, অন্যদিকে জ্বালানি হিসেবে এলএনজি ও এলপিজি গ্যাস আমদানি করে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ীরা। এভাবে তারা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
চলমান লোডশেডিং, জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনা এবং জ্বালানি-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপি।
ফখরুল বলেন, ‘অফশোর গ্যাস অনুসন্ধানে জনগণের কাছ থেকে সারচার্জ নিয়ে একটি তহবিল তৈরি করা হয়েছে। এটা উদ্বেগজনক যে সরকার এই তহবিল থেকে গ্যাস কিনতে (বিদেশ থেকে) প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। এটি আরেকটি প্রতারণা এবং ডাকাতি।’
তিনি অভিযোগ করেন, একদিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন, অন্যদিকে জ্বালানি হিসেবে এলএনজি ও এলপিজি গ্যাস আমদানি করে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ীরা। এভাবে তারা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: সড়কে নৈরাজ্যের জন্য সরকারের সমালোচনা বিএনপির
মাথাপিছু আয় বেশি দেখানোর জন্য সরকার কম জনসংখ্যা দেখাচ্ছে: ফখরুল
সড়কে নৈরাজ্যের জন্য সরকারের সমালোচনা বিএনপির
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, সরকার দেশের পুরো সড়ক ব্যবস্থাপনাকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দামী স্যুট পরে সুন্দরভাবে বলেছেন, আওয়ামী লীগ যা করছে, তা অতীতে কখনো হয়নি। কিন্তু আপনি তো পুরো সড়ক ব্যবস্থাপনাকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।’
শনিবার চলমান লোডশেডিং, জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনা এবং জ্বালানি ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এই বিএনপি নেতা বলেন, সড়কে বিশৃঙ্খলার কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় শত শত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। ‘আমরা দেখেছি যে গতকাল মাইক্রোবাসে করে ১১ জন শিক্ষার্থী যাচ্ছিল, ট্রেন সবাইকে হত্যা করেছে। এমন অসংখ্য নজির আমরা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি।’
সরকার দেশের জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নকে নস্যাৎ করছে বলে এসময় অভিযোগ করেন ফখরুল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার চুরি, ডাকাতি ও লোভের কারণে গণতন্ত্র, বিচার বিভাগ ও ব্যাংকিং খাতকে ধ্বংস করেছে।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন,‘বাংলা সাহিত্যে একটি কথা আছে যে রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট হয়, কিন্তু জনগণ কষ্ট পায়।আমরা যে দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তার জন্য শেখ হাসিনার সরকার দায়ী।’
তিনি বিএনপির নেতা-কর্মীদের এক দফা দাবিতে ‘দানব’ ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারকে উৎখাতের শপথ গ্রহণের আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের দুঃশাসনের হাত থেকে দেশ ও দেশের জনগণকে রক্ষা করার দায়িত্ব বিএনপির। জনগণের আন্দোলনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে অবশ্যই সকল সমস্যার সমাধান করে এদেশকে সত্যিকারের জনগণের রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব।
আরও পড়ুন: মাথাপিছু আয় বেশি দেখানোর জন্য সরকার কম জনসংখ্যা দেখাচ্ছে: ফখরুল
আ.লীগের ‘মেগা দুর্নীতি’ দেশকে অন্ধকার খাদের প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে: ফখরুল
দেশে রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি নেই: ফখরুল
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের পর আগামী দিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও শেষ হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘সরকারের পতনের ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। বর্তমানে বিদ্যুতের সংকট ‘তৈরি হয়েছে, এরপর আমরা জ্বালানি তেলের ঘাটতির মুখোমুখি হব। তারপর আপনারা দেখবেন রিজার্ভ ফুরিয়ে যাচ্ছে।’
শুক্রবার ‘নজিরবিহীন’ লোডশেডিং এবং জ্বালানি ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির ঢাকা উত্তর মহানগর শাখা আয়োজিত এক সমাবেশে ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় দেশের মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। তাদের উদ্দেশ্য একটাই; দুর্নীতি ও লুটপাট করা। তাই আমাদের এখন এক দফা দাবি সরকারের পদত্যাগ।’
তিনি সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপির এই নেতা তার দলের নেতাকর্মীদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমাদের হাতে আর সময় নেই, তাই জেগে উঠুন। আমাদের অবশ্যই এই ফ্যাসিবাদী ও দুর্নীতিবাজ শাসকদের উৎখাত করতে হবে।’
আরও পড়ুন: মাথাপিছু আয় বেশি দেখানোর জন্য সরকার কম জনসংখ্যা দেখাচ্ছে: ফখরুল
ফখরুল বলেন, এখন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের কথা স্বীকার করলেও, গত সপ্তাহে তিনি তা অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘এভাবে এই সরকার নির্লজ্জ মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয় এবং মানুষকে ধোঁকা দেয় ও বোকা বানায়। কিন্তু ভিতরে তারা খালি। তারা অর্থ-সম্পদ নষ্ট করে দেশকে দেউলিয়া বানাচ্ছে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে ভীতিজনক বর্ণনা করে বলেন, সরকারের কাছে ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি নেই। তারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। তাই আওয়ামী লীগকে আর সময় ও সুযোগ দিতে পারি না। তারা যতই ক্ষমতায় থাকবে, ততই দেশের ধ্বংস ত্বরান্বিত হবে।’
দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের কোনো ঘাটতি নেই এমন মন্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে কটাক্ষ করেন।
তিনি বলেন, ‘স্বল্পতা না থাকলে ৮ ঘণ্টা লোডশেডিং করছেন কেন? আপনি গ্যাস রেশন করছেন কেন? কেনো আজকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন অশনি সংকেত?
সরকার দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতকে ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন,‘শহরের মানুষ এখন দুই-তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হচ্ছেন এবং গ্রামাঞ্চলের মানুষ যেখানে বোরো মৌসুমে সেচের জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, তারা সাত-আট ঘণ্টা এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু এই সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে বিদেশে টাকা পাচার করেছে।’
আরও পড়ুন: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য পদত্যাগ করলে আপনাদের সঙ্গে চা খাব: প্রধানমন্ত্রীকে ফখরুল
আ.লীগের ‘মেগা দুর্নীতি’ দেশকে অন্ধকার খাদের প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে: ফখরুল
মাথাপিছু আয় বেশি দেখানোর জন্য সরকার কম জনসংখ্যা দেখাচ্ছে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেছেন, শুধু মাথাপিছু আয় বেশি দেখানোর জন্য সরকার সদ্য প্রকাশিত '৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২'-এ দেশে জনসংখ্যা কম দেখিয়েছে।
তিনি বলেছেন, ‘দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেশি দেখানোর জন্য (প্রকৃত চিত্রের চেয়ে) জনসংখ্যা কম দেখানো হয়েছে। আমরা সাধারণত আমাদের দেশে ১৮ কোটি লোক গণনা করি। কিন্তু জনসংখ্যা ১৬ কোটি গণনা করা হলে মাথাপিছু আয় আরও অনেক বেশি দেখানো সহজ হবে।’
দলের চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শুমারির প্রাথমিক ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন আদমশুমারির হিসাব সঠিক না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ করা হয়নি।
এর আগে বুধবার ষষ্ঠ আদমশুমারির অস্থায়ী তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের মোট জনসংখ্যা হল ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬, আগের ১.৩৭ শতাংশের জায়গায় ১.২২ শতাংশ বৃদ্ধির হার।
ফখরুল বলেন, ‘প্রতিটি বাড়ি থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে জাতীয় জনগণনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হবে।
কিন্তু সরকার ভুল তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত ও প্রতারণা করছে। পুরো সরকারই প্রতারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটা সম্পূর্ণ ভুয়া সরকার।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা বলেন, সরকার গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করায় দেশ দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক সংকটের সম্মুখীন। ‘নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রধান পথ বা প্রবেশদ্বার। সারা দেশের মানুষ এখন জোর গলায় বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
ফখরুল বলেন, ‘এমনকি নির্বাচন কমিশন বলতে বাধ্য হচ্ছে যে, বড় দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এমন পরিস্থিতিতে, সরকার জনগণের চাহিদাকে বাইপাস করে বিষয়টিকে অন্য দিকে মোড় নেয়ার কৌশল গ্রহণ শুরু করেছে।’
আরও পড়ুন: ২০২১ সালে আয়ের চেয়ে এক কোটি ১০ লাখ টাকা বেশি খরচ করেছে বিএনপি
বিদ্যুৎ বিভ্রাট: ৩ দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
২০২১ সালে আয়ের চেয়ে এক কোটি ১০ লাখ টাকা বেশি খরচ করেছে বিএনপি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে তাদের ২০২১ ক্যালেন্ডার বছরের বার্ষিক আর্থিক বিবরণী জমা দিয়েছে। যাতে দেখা যায় দলটি এ বছরে আয়ের চেয়ে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ টাকা বেশি ব্যয় করেছে।
২০২১ সালে ৮৪ লাখ টাকা (ঠিক ৮৪ লাখ ১২ হাজার ৪৪৪ টাকা) আয়ের বিপরীতে বিএনপির ব্যয় ছিল ১৯৮ লাখ টাকা (ঠিক এক কোটি ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৭১ টাকা)।
এ নিয়ে গত তিন বছরে দলটি আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তার দলের ২০২১ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছেন।
আইন অনুসারে, প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল প্রতি বছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পূর্ববর্তী ক্যালেন্ডার বছরের আর্থিক বিবরণী জমা দিতে বাধ্য।
বিএনপির আয়ের উৎসের মধ্যে রয়েছে- দলের সদস্যদের চাঁদা, অনুদান ও মনোনয়নপত্র বিক্রি।
ব্যয়ের প্রধান উৎস ছিল- তাদের অফিস কর্মীদের বেতন ও উৎসব বোনাস, ইউটিলিটি বিল, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ এবং নির্যাতিত দলীয় নেতাকর্মীদের আর্থিক সহায়তা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে বাকি টাকা এসেছে।
২০২০ সালে এক কোটি ২২ লাখ টাকার বিপরীতে বিএনপি খরচ করেছে এক কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ বিভ্রাট: ৩ দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
আ.লীগের ‘মেগা দুর্নীতি’ দেশকে অন্ধকার খাদের প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে: ফখরুল