আইনশৃঙ্খলা
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে না: আইনমন্ত্রী
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল হবে না। এটা আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা আইনের মধ্যেই সাংবাদিকদের, যারা সত্য সাংবাদিকতা করেন, তাদের সুরক্ষার জন্য অবশ্যই প্রভিশন থাকবে।
বুধবার (৩ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘শেপিং আ ফিউচার অব রাইটস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনাগুলো বিবেচনা করা হবে: আইনমন্ত্রী
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধে সরকার কাজ করছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি আগেও বলেছি, আজও বলছি, এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, শুধমাত্র সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করার জন্য।
আমি আপনাদের নিশ্চিত করেই বলতে পারি, বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার কখনও সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতা হরণ করবে না। কারণ, বঙ্গবন্ধু তার দেওয়া সংবিধানে সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দানসহ একে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন।
জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তিনি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করে দিয়েছেন; ৪০টির অধিক টেলিভিশন চ্যানেল, ২২টি এফএম রেডিও এবং ১৭টি কমিউনিটি রেডিও অনুমোদন দিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংবিধান উপহার দেন, তার ৩৯ অনুচ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হয়। শুধু তাই নয়, বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়-এটাই হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির অঙ্গীকার এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি আওয়ামী লীগের উদার গণতান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর, তার দেওয়া সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে যেসব মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো নির্বিচারে লঙ্ঘন করা হয়।
সামরিক স্বৈর শাসকরা সংবাদ মাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতার সবকিছুই লঙ্ঘন করে এবং বাধাগ্রস্ত করে। বলতে গেলে সেসময় বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার কিছুই ছিল না।
এটা নিয়ন্ত্রিত হতো একটি বিশেষ জায়গা থেকে।
তিনি আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠনের পর দেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুমোদন দেন। এসব টেলিভিশন চালু হওয়ার পর সেগুলোতে প্রচলিত অনুষ্ঠান সম্প্রচারের পাশাপাশি নতুন ধারার অনুষ্ঠান টকশো ও লাইভ নিউজ সম্প্রচার শুরু হয় এবং এর মাধ্যমে দেশে সংবাদ মাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতার নব দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
তিনি ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে অভিযাত্রা শুরু করেন, তার ফলে আজ বাংলাদেশে অনলাইন মিডিয়া ও স্যোসাল মিডিয়ার বিপ্লব ঘটেছে।
আরও পড়ুন: শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র পাওয়ার অধিকারের ওপর জোর দিলেন আইনমন্ত্রী
জননেত্রী শেখ হাসিনার গড়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে দেশে প্রায় কয়েক হাজার অনলাইন মিডিয়া ও নিউজ পোর্টাল কাজ করছে।
এর পাশাপাশি ফেইসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন স্যোসাল মিডিয়া রয়েছে। এসব নিউ মিডিয়ায় দেশের কোটি কোটি মানুষ প্রতি মুহুর্তে অবাধে অডিও-ভিজুয়াল সংবাদ ও মতামত প্রকাশ করছে।
ফলে নিউ মিডিয়া এখন অনেক ক্ষেত্রেই প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদের সোর্স হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের গুরুত্ব তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রচলিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোকে সর্বক্ষণ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করে টিকে থাকতে হয়।
সে কারণে তাদেরকে সবসময় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হয়। কিন্তু অনলাইন মিডিয়া ও স্যোসাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে এই দায়িত্বশীলতার বড়ই অভাব দেখা যায়। যেকারণে হর-হামেশাই এসব নিউ মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
এসব সাইবার অপরাধ দমনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
সাইবার অপরাধ দমনের জন্য সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম. ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশে আইন প্রণয়নের উদাহরণ টেনে আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারও ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে একটি আইন প্রণয়ন করেছে।
আইনটি প্রণয়নের পূর্বে এডিটরস কাউন্সিল, এটকো, সাংবাদিক সংগঠনসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করা হয়।
এমনকি এই আলোচনার দ্বার সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আইনটি বাস্তবায়নের প্রথম দিকে, এর কিছু মিসইউজ ও অ্যাবিউজ হয়েছে- এটি আমি অস্বীকার করবো না।
তবে আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সেই মিসইউজ ও অ্যাবিউজ আগের তুলনায় অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
আমরা এসব মিসইউজ ও অ্যাবিউজ আরও কমানোর লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-কে পরিশুদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি।
আরও পড়ুন: কোনো মতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা যায় না: আইনমন্ত্রী
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় প্রথম আলো সম্পাদকের জামিন
রাজধানীর রমনা থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় বিচারিক আদালত (নিম্ন আদালত) থেকেও জামিন পেয়েছেন দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।
বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে মতিউর রহমানের জামিননামা দাখিল করা হয়। এরপর মতিউর রহমান আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন।
আরও পড়ুন: খোকন-কায়সারসহ ২৪ আইনজীবীর আগাম জামিন
আদালত আগামী ১৬ আগস্ট পর্যন্ত তার জামিন বহাল রাখেন। একই সঙ্গে সিএমএম আদালত থেকে মামলার নথি তলব করেন।
ওইদিন পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত ২ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান মতিউর রহমান। হাইকোর্ট তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
সে অনুযায়ী বুধবার জামিননামা দাখিল করে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট আদালতের অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল এসব তথ্য জানান।
গত ২৯ মার্চ রাতে রমনা থানায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন আইনজীবী আবদুল মালেক।
এ মামলায় পত্রিকাটির সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস ও ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়।
মামলায় প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহার করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ আনেন বাদী আব্দুল মালেক।
এছাড়া এ মামলায় শামসুজ্জামানও জামিনে আছেন।
আরও পড়ুন: ৫ মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক
শাকিব খানের মামলায় জামিন পেলেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ
৫ মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ভাংচুরের অভিযোগের করা পৃথক পাঁচটি মামলায় হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এসব মামলার মধ্যে চারটি রাজধানীর পল্টন থানায় এবং একটি মামলা চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা। মামলা গুলো ২০২১ সালে দায়ের করা হয়। তার পৃথক আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ (বুধবার) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চ এই জামিন দেন। আদালতে মামুনুল হকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন মোল্লা।
পরে হেলাল উদ্দিন মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, তার বিরুদ্ধে মোট ৪১টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে আগে ১২টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। আজ পাঁচটি জামিন পেলেন। মামুনুল হকের কারামুক্তির জন্য বাকি ২৪টি মামলায় জামিন প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: ধর্ষণ মামলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আরও ২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টকাণ্ডের পর থেকেই মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ তাকে নজরদারির মধ্যে রেখেছিল।
তার বিরুদ্ধে করা ৪১টি মামলার মধ্যে মতিঝিল থানায় করা চারটি, পল্টন থানায় ৯টি, নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় তিনটি, সিদ্ধিরগঞ্জে তিনটি, হাটহাজারী মডেল থানায় আটটি, খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় একটি, কুমিল্লার চান্দিনা থানায় একটি, রাজধানীর ভাটার থানায় ১টি, মোহাম্মদ থানায় ১টি, দারুস সালাম থানায় পাঁচটি ও মিরপুর মডেল থানায় তিনটি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনালেও দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে।
আরও পড়ুন: মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ
রাবি অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলা: দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে বাধা নেই
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিজবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ তিনজনের রিভিউ আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।
বুধবার (৩ মে) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীনই আট বিচারপতির বেঞ্চ ২১ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেছেন।
এতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্য করে আইনগত কোনো বাধা থাকল না। এখন তারা শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের সুযোগ পাবেন।
অধ্যাপক তাহেরের মেয়ে অ্যাডভোকেট শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
নিয়ম অনুসারে, সুপ্রিম কোর্ট থেকে এ রায় রাজশাহীর আদালতে পাঠানো হবে। রাজশাহীর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন। এরপর তা কারাকর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছালে তাদের ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার রিভিউ খারিজ, ২ আসামির ফাঁসি বহাল
জানা যায়, এর আগে গত ২ মার্চ অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামিসহ দণ্ডিত তিনজনের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আট সদস্যদের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
শিক্ষক তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড ও দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে গত বছরের ৫ এপ্রিল রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে তাহেরের একসময়ের ছাত্র, পরে বিভাগীয় সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। সালাম ও নাজমুলের যাবজ্জীবন বহাল থাকে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। পরে মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর এবং যাবজ্জীবন সাজা পুনর্বিবেচনা চেয়ে সালাম পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। চেম্বার আদালত হয়ে এই রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে গত ২ মার্চ আদেশ দিলেন আপিল বিভাগ।
২০০৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসার বাইরের ম্যানহোলে তাহেরের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় সেদিন তার ছেলে মতিহার থানায় মামলা করেন।
মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। দুজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। আসামি সালাম ও নাজমুলকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: অধ্যাপক তাহের হত্যা: মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত
মিরসরাই থেকে অপহৃত ব্যক্তি ভারতীয় সীমান্ত থেকে উদ্ধার, আটক ১
চট্টগ্রামের মিরসরাই ইকোনমিক জোন থেকে অপহরণ হওয়া এক ব্যক্তিকে জেলার ফটিকছড়ির ভুজপুর ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় অপহরণ চক্রের মূলহোতাকে আটক করেছে র্যাব-৭। মঙ্গলবার (২ মে) র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান।
ভুক্তভোগী নূর হাশেম চট্টগ্রামের কর্ণফুলির উপজেলা এলাকার বাসিন্দা।
আটক মো. মামুন (৩৭) মিরসরাই করেরহাট এলাকার আব্দুস সোবহানের ছেলে।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার জানান, গতকাল সোমবার (১ মে) ভোরে ভুজপুরের রহমতপুর এলাকায় রাবার বাগানে অভিযান চালিয়ে অপহৃতকে উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
নুরুল আবছার বলেন, অপহৃত ভিকটিম নূর হাশেম মিরসইয়ের জোরারগঞ্জ থানার অর্থনৈতিক অঞ্চলের মর্ডান সিনটেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সে সুবাধে আসামি মো. মামুন ও মো. জসিমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। গত ২৮ এপ্রিল দুপুরে জসিম তাকে ফোন করে করেরহাট এলাকায় যাওয়ার জন্য বলে। দেখা করতে ভিকটিম করেরহাট গেলে এক সিএনজি অটোরিকশার ড্রাইভার তাকে ভুজপুরের কৈলারছড়া এলাকায় জসিমের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে মামুন এবং অজ্ঞাত ৪-৫ জন মিলে ভিকটিমকে অপহরণ করে ভুজপুরের ভারতীয় সীমান্তবর্তী একটি অজ্ঞাত এলাকায় নিয়ে যায় এবং শারীরিক নির্যাতন শুরু করে।
তিনি আরও বলেন, অপহরণকারীরা ভিকটিমের পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং টাকা না দিলে ভিকটিমকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এছাড়া অপহরণকারীরা ভিকটিমকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে তার পরিবারের লোকদেরকে মোবাইলের মাধ্যমে তা শুনাতো। ভিকটিমের পরিবার তাকে উদ্ধারে র্যাব-৭ এ অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে র্যাব। সোমবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভুজপুরের রাবার বাগানে অভিযানে চালিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার ও অপহরণের মূলহোতা মামুনকে আটক করা হয়। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু
মিরসরাইয়ে র্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় আটক ১৩
রাজউকের ২৬ হাজার ৭৭৭ নথি উদ্ধার
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সার্ভার থেকে গায়েব হয়ে যাওয়া ২৬ হাজার ৭৭৭ নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাজউক। মঙ্গলবার (২ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ তথ্য জানিয়েছেন রাজউকের আইনজীবী ইমাম হাসান।
তিনি আদালতকে জানান, হ্যাকাররা সার্ভার থেকে নথি হ্যাক করেছিল। সব নথি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
এরপর এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিকে আদেশ পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৯ জুলাই দিন রেখেছেন।আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান, আর রাজউকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইমাম হাছান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
‘রাজউক থেকে ৩০ হাজার গ্রাহকের নথি গায়েব’ শিরোনামে গত ২৯ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। ২ জানুয়ারি প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। এরপর এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে ব্যাখ্যা চান হাইকোর্ট। পাশাপাশি দুদককে অনুসন্ধান করতে বলেন।সে অনুসারে মঙ্গলবার রাজউক একটি হলফনামা দেন। আর দুদক জানায়, তারা তিন সদস্য দিয়ে ঘটনাটি অনুসন্ধান করছে। ইতোমধ্যে কমিটির পক্ষ থেকে রাজউকের কাছে এ ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজউক আওতাধীন এলাকায় ৬৬ শতাংশ ভবন অপরিকল্পিত: মন্ত্রী
অন্যদিকে, রাজউকের হলফনামার একটি অংশে বলা হয়, গত ৬ ডিসেম্বর ম্যালিসিয়াস অ্যক্সেস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে রাজউকের কনস্ট্রাকশন পারমিট (সিপি) সিস্টেম শীর্ষক সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিডিসিএসলের ডাটা সেন্টারে সংরক্ষিত ২৬ হাজার ৭৭৭ নথি মুছে যায় এবং সিপি সিস্টেমটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২১ ডিসেম্বর সিস্টেমটি পুনরায় চালু করা হয়।এ বিষয়ে ২২ ডিসেম্বর রাজউক মতিঝিল থানায় জিডি করে। পাশাপাশি ২৬ জানুয়ারি এ বিষয়ে বুয়েটের সঙ্গে একটি চুক্তি করে রাজউক।
বুয়েটের তদন্ত টিম ২৯ এপ্রিল এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দেয়। শীঘ্রই বুয়েটের তদন্ত টীম চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। মুছে যাওয়া সকল ফাইল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টেকনোহেভেন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সার্ভার থেকে ভবন নির্মাণের অনুমোদনসংক্রান্ত প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের আবেদনের নথিপত্র গায়েব হয়ে গেছে। ৬ ডিসেম্বর বিষয়টি প্রথম জানতে পারে রাজউক। এটি নিছক কারিগরি ত্রুটি, নাকি এ ঘটনায় কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত, সে বিষয়ে এখনো অন্ধকারে রাজউক। অন্যদিকে এই বিপর্যয়ের কারণ উদঘাটনে রাজউকের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ ঘটনার তিন সপ্তাহ পরও সরকারি এই সংস্থা কোনো তদন্ত কমিটিও করেনি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মে থেকে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহক ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেতে আবেদন করেছিলেন।
রাজউক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ এসব নথি হারিয়ে যাওয়ার কারণে ওই গ্রাহকেরা নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে পারেন। তবে নথি গায়েবের ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: হাতিরঝিলে স্থাপনা নিষিদ্ধ: আপিলের অনুমতি পেল রাজউক
ঢাকার দুই মেয়র ও রাজউক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রুল
বঙ্গবন্ধুর দুর্নীতি বিরোধী ভাষণগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে রুল জারি হাইকোর্টের
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্নীতি ও অর্থপাচার বিরোধী ভাষণগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ট্রেনিং সেন্টারের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
রাজউকের নথি গাযেব সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিকালে মঙ্গলবার (২ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত হয়ে এ রুল জারি করেন।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব, শিক্ষা সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্নীতি বিরোধী (ভাষণ) বক্তব্যগুলোকে আদর্শ হিসেবে ধারণ করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) কাজ করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
এছাড়া, আদালত তার আদেশে বঙ্গবন্ধুর দুর্নীতি বিরোধী বক্তব্যসমূহ আগামী ১ মাসের মধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করতে জাতীয় আর্কাইভের ডিজির প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।আগামী ৪ জুন এ রুলের পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, দুদকের আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান ও রাজউকের আইনজীবী ইমাম হাছান।
আরও পড়ুন: রকেটের গতিতে মামলা তদন্ত: সেই কর্মকর্তাকে বরখাস্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
হজ প্যাকেজের অতিরিক্ত খরচ কেন জনস্বার্থ পরিপন্থী নয়: হাইকোর্ট
যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কেন অসাংবিধানিক নয়: হাইকোর্ট
কুমিল্লায় কলেজ শিক্ষক হত্যা মামলায় ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড
কুমিল্লা নগরীর বারপাড়া এলাকার কলেজ শিক্ষক সাইফুল আলম সুজনকে হত্যার ঘটনায় ছয় জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৫ম আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন এ রায় দেন।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় পরিবহন নেতাকে হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা আদালতের এপিপি জাকির হোসেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে জামাল, ইলিয়াস ও জাকির হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি তিনজন নয়ন, কামাল ও মিঠুন পলাতক।
এছাড়া মোট ৯ আসামির মধ্যে দুই আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। একজন বিচারাধীন সময়ে মারা যান।
২০১০ সালের ১০ আগস্ট বিকালে কুমিল্লা নগরীর বারপাড়া এলাকায় শিক্ষক সাইফুল আজম সুজনকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
পরদিন কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় সুজনের বাবা ১১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে।
আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জে বিষাক্ত ট্যাবলেট খাইয়ে নিজ শিশুকন্যাকে হত্যা, মায়ের মৃত্যুদণ্ড
কুমিল্লায় হত্যা মামলায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড
নারায়ণগঞ্জে রাতভর মাদক ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ, মাদক ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটক ১৩
মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় ‘মাদকের স্বর্গরাজ্য’ খ্যাত চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে আবারও মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক সংষর্ষ হয়েছে।
রবিবার দিবাগত রাতভর সংঘর্ষের পর সোমবার সকালে সেখানে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালিয়ে ১৩জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় মাদক ও দেশীয় অস্ত্র জব্দ করে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি চিহ্নিত মাদকের আস্তানা।
সোমবার সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত টানা সাড়ে তিন ঘন্টা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে জেলা পুলিশের এই বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়।
এর আগে রবিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চনপাড়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমার নেতৃত্বে পরিচালিত এই মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে অন্তত দুই শতাধিক ডিবি ও পুলিশ সদস্য অংশ নেয়।
চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দারা জানান, মাদক সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রবিবার সন্ধ্যায় চনপাড়ার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী রায়হান ও তার লোকজন তাদের প্রতিপক্ষ মাদক ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনের সহযোগী মারুফকে ব্যাপক মারধর করে।
এ ঘটনার পর রায়হানের পক্ষ নিয়ে মাদক ব্যবসায়ী শমসের আলী ও শাহাবউদ্দিন এবং মারুফের পক্ষ নিয়ে জয়নাল আবেদীনের লোকজন দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িঘর, দোকাপাটে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।
স্থানীয়রা জানান, এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। তাদের দাবি, এক সময় পুরো চনপাড়ায় আধিপত্য ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক ইউপি সদস্য বজলুর রহমান। সম্প্রতি তার মৃত্যুর পর তারই সহযোগীরা আধিপত্য ধরে রাখতে এক পক্ষ আরেক পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।
স্থানীয়রা আরও জানান, হত্যা, মাদক, ডাকাতিসহ অন্তত ২৬ টি মামলার আসামি সাবেক ইউপি সদস্য বজলুর রহমান ওরফে বজলু মেম্বার গত বছর বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর পর আলোচনায় এলে র্যাবে অভিযানে গ্রেপ্তার হন। পরে গত ৩১ মার্চ কারা তত্ত্বাবধানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বজলুর রহমানের মৃত্যুর পর চনপাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠে। ফলে তাদের নিজেদের কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। গত ১১ এপ্রিল শমসের আলী ও শাহাউদ্দিনের বাহিনীর সঙ্গে জয়নাল আবেদীনের বাহিনীর মধ্যে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়। তবে গুলিবিদ্ধ তিনজনই ছিল জয়নালের সহযোগী।
এদিকে সোমবার সকালে চনপাড়ায় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শেষে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা জানান, রবিবার রাতে মাদক ব্যবসায়ীদের কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সকালে ডিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে সেখানে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। এসময় বেশ কয়েকটি চিহ্নিত মাদকস্পট ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, মাদকের এই স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করে জয়নাল, শমসের, শাহাবউদ্দিন, রায়হান, ইয়াসমিন, নাজমা, রহিমা, শাওন, শাহ্ আলম নামে চিহ্নিত কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী। এই মাদক ব্যবসায়ীরা বর্তমানে পলাতক থাকলেও তাদের সহযোগী ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে কয়েকজন গত রাতের সংঘর্ষের ঘটনাতেও জড়িত ছিল। অন্যরা মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। পুলিশের এই বিশেষ অভিযানে মাদক, চায়নিজ কুড়াল, রাম দা, টেঁটা ও সুইচযুক্ত আধুনিক চাকুসহ বেশ কিছু দেশীয় ধারালো অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে পুলিশের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রামে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা: বরখাস্ত সেই ওসি কারাগারে
চট্টগ্রামে কলেজ ছাত্রীকে জোর করে তুলে নিয়ে হোটেল কক্ষে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় কসবা থানার সাবেক (বরখাস্ত) পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মিজানুর রহমান ওরফে ওসি মিজানের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আগামী ১০ মে এ মামলার রায়ের জন্য সময় ধার্য করা হয়েছে।
রবিবার চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক ফেরদৌস আরা জামিন বাতিল ও মামলার রায়ের এ তারিখ ঘোষণা করেন।
ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আদালত ইতোমধ্যে এই মামলায় ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। ‘আজ আদালতে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। এ সময় আসামি জামিন পুনর্বহালের আবেদন করেন। পরে আদালত তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’
আরও পড়ুন: নাটোরে কাঠ ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের অভিযোগে ওসিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
উল্লেখ্য ২০১১ সালের ১২ জুলাই নগরীর ফয়’স লেক এলাকা থেকে ইস্পাহানি স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রী ও তার বন্ধুকে তুলে নিয়ে ঘুরতে গেলে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে গাড়িতে তুলে নগরীর চকবাজারে একটি হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে ছেলে মেয়ে দুজনকে আলাদা কক্ষে আটকে রেখে মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে মেয়েটি বাথরুমের কাঁচ ভেঙ্গে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। পরে হোটেলের লোকজন তাকে উদ্ধার করে।। এ ঘটনায় ওই বছরের ১৬ জুলাই মেয়েটির বাবা হুমায়ন কবির বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় ওসি মিজান সহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। বাকি দু’আসামী হোটেলের কর্মচারী।
আদালত সূত্রে জানা যায়, হুমায়ন কবিরের দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে একটি ছিল নারী নির্যাতন দমন আইনের ৭/৯ (৪)-খ ধারায়। আরেকটি মামলা ছিল, জোরপূর্বক মেয়েটিকে তুলে নিয়ে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে খালি স্ট্যাম্পে সাক্ষর করানোর অভিযোগে দণ্ডবিধির ৪২০, ১৭০ ও ৩৮৬ ধারায় দায়ের করা।
প্রথম মামলায় ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে ওসি মিজান সহ তিন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। ঘটনার পর প্রায় সাড়ে তিনমাস পলাতক থাকা ওসি মিজানুর রহমান ২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে হাজির হলে বিচারক তাকে জেলহাজতে পাঠান। হাইকোর্টের আদেশে ২০১২ সালের জুলাই মাসে তিনি জামিনে মুক্তি পান। ওসি মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠার পরই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ: ওসি ও এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
খুলনায় দুর্নীতির মামলায় সাবেক ওসির জামিন নামঞ্জুর