কৃষি
ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমাতেই দাম বৃদ্ধি: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আমরা ইউরিয়া সারের ব্যবহার হ্রাস ও ডিএপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করে যাচ্ছি। তাই ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমাতেই দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সারের দাম বৃদ্ধি ও মজুদসহ সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ডিএপি সার মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় ও মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদনে কার্যকর এবং পরিবেশবান্ধব। ডিএপি সারে শতকরা ১৮ ভাগ নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের উপাদান রয়েছে। সেজন্য ডিএপির ব্যবহার বাড়িয়ে ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকার ডিএপি সারের মূল্য প্রতিকেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করে কৃষকদের দিয়ে যাচ্ছে। এ উদ্যোগের ফলে বিগত কয়েক বছরে ডিএপি সারের ব্যবহার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, ডিএপির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ভেবেছিলাম ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমবে, কিন্তু কমে নি।
আরও পড়ুন: খাদ্যের জন্য কোনক্রমেই বিদেশের ওপর নির্ভরশীল থাকা যাবে না: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, ফসলের জমিতে সুষম সার প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ইউরিয়া সারের বর্তমান ব্যবহার কমপক্ষে ২০ শতাংশ কমিয়ে ইউরিয়ার ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারি। এতে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, বরং উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। একইসাথে, কৃষকের খরচও কমবে। এটি করতে হলে আমাদের কৃষক ভাইসহ সকলের সচেতনতা প্রয়োজন।
মন্ত্রী বলেন, কোভিড পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সারের মূল্য অস্বাভাবিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়ার আমদানি ব্যয় ৮১ টাকা, টিএসপি ১০৮ টাকা, এমওপি ১০৬ টাকা এবং ডিএপিতে ১২৩ টাকা। এর ফলে বর্তমানে ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ইউরিয়া ৫৯ টাকা, টিএসপি ৮৬ টাকা, এমওপি ৯১ টাকা এবং ডিএপিতে ১০৭ টাকা।
তিনি বলেন, এছাড়া নন ইউরিয়া সার (টিএসপি, ডিএপি, এমওপি) বছরে ব্যবহার হয় ৩২ লাখ টনের বেশি। এর পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এসব সারের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে চারগুণ বেড়েছে, কিন্তু দেশে আমরা দাম বাড়াই নি। কাজেই, ইউরিয়া সারের কেজিতে ৬ টাকা দাম বৃদ্ধির ফলে ফসলের উৎপাদনে তা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
বর্তমানে দেশে চাহিদার বিপরীতে সব ধরণের সারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সারের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেশের কোথাও যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে- সে ব্যাপারে আমরা নিবিড়ভাবে মনিটর করছি। কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে দাম বেশি নিলে সংশ্লিষ্টদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।
কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বন্যায় বড় ক্ষতি হবেনা, মোকাবিলার ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
ফল উৎপাদনে বিশ্বে সফলতার উদাহরণ বাংলাদেশ: কৃষিমন্ত্রী
বাগেরহাটে চলছে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলা
বাগেরহাটে বৃক্ষমেলায় দেশি-বিদেশি ফলজ, বনজ ঔষধিসহ নানা জাতের গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে। নার্সারিতে মিলছে ৫০ প্রজাতির ক্যাকটাস, ৪০ প্রজাতির অ্যাডেনিয়াম এবং ৪০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি আমের চারা। সেইসঙ্গে লাল, সাদা, নীল, গোলাপীসহ নানা রঙের ফুলের চারা রয়েছে মেলায়। মেলায় আসা নার্সারিগুলোতে দেশি-বিদেশি নানা জাতের গাছের চারা ভরপুর থাকলেও এখনো বিক্রি জমে উঠেনি।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বাগেরহাট শহরের শালতলার জেলা পরিষদ মিলনায়তন চত্ত্বরে সাতদিন ব্যাপী এই মেলা শুরু হয়েছে।
মেলায় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫টি নার্সারি স্টল দিয়েছে। বাগেরহাট জেলা প্রশাসন, সামাজিক বন বিভাগ ও সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ এই মেলার আয়োজন করেছে। আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী এই মেলা চলবে।
শনিবার বেলা ১২টার দিকে বৃক্ষমেলায় গিয়ে দেখা গেছে, নার্সারি মালিকরা তাদের স্টলের সামনে দেশি-বিদেশি ফলজ, বনজ এবং ঔষধিসহ নানা জাতের গাছের চারা সাজিয়ে রেখেছে। দর্শনার্থীদের জানার সুবিধার্থে অনেক গাছের চারার সাথে নাম লিখে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। মেলায় ঘুরে আর আর মর্ডান নার্সারিতে ৫০ প্রজাতির ক্যাকটাস এবং ৪০ প্রজাতির অ্যাডেনিয়াম দেখা মিলেছে। আল্লাহর দান নার্সারিতেও দেখা গেছে দেশি-বিদেশি অনেক জাতের গাছের চারা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ায় পর বাড়ি ফেরার পথে শিক্ষার্থীরা মেলায় প্রবেশ করে ঘুরে ঘুরে দেখছে। এসময় নানা বয়সের নারী-পুরুষ দর্শনার্থী ও ক্রেতা ছিল হাতে গোনা কয়েকজন।
মেলায় আসা নার্সারির মালিকরা জানান, তাদের বিক্রি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তবে আগামিতে বিক্রি বাড়ার আশায় রয়েছে নার্সারি মালিকরা।
আরও পড়ুন: বিজয়নগর বছরে ৫০ কোটি টাকার ফল বিক্রি
বিজয়নগরে বছরে ৫০ কোটি টাকার ফল বিক্রি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী উপজেলার বিজয়নগর ফলের স্বর্গ রাজ্য নামে পরিচিত। জেলা সদর থেকে দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। বর্তমানে এখানে দেশি ও বিদেশি অনেক ধরনের ফলেরই বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে। এছাড়া এই উপজেলায় প্রতি বছর প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রয় হয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উৎপাদিত দেশি ফলের মধ্যে রয়েছে লিচু, কাঁঠাল, আম, জাম ও লটকন। বিদেশি ফলের মধ্যে রয়েছে মাল্টা কমলা, আপেল, আঙ্গুর, ড্রাগন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বিজয়নগরে ৪১৪ হেক্টর জমিতে লিচু, ৩১৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল ও ৬৫ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ করা হয়েছিল। বর্তমানে প্রায় ১৮ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই লকটন বিক্রিও শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি লটকন পাইকারিভাবে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বৃষ্টিহীন, তীব্র তাপদাহে রোপা আমন ও সবজি নিয়ে বিপাকে নওগাঁর কৃষকরা
সংশ্লিষ্টরা জানায়, চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় কোটি টাকার লটকন বিক্রি করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় লটকনের চাষ নিয়ে চাষিদের মধ্যেও আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষি অফিস জানায়, লটকনের রয়েছে পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। ভিটামিন ‘সি’সমৃদ্ধ এই ফল প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা যায়। ১০০ গ্রাম পাকা লটকনে আছে খাদ্যশক্তি ৯১ কিলোক্যালোরি। এছাড়া আমিষ আছে এক দশমিক ৪২ গ্রাম, চর্বি শূন্য দশমিক ৪৫ গ্রাম, ভিটামিন-সি ৫৫ মিলিগ্রাম। লটকনের বৈজ্ঞানিক নাম ব্যাকারিয়াস্যাপাডিয়া। ইংরেজিতে লটকনকে বলা হয় বার্মিজ গ্রেপ। বাংলাদেশে লটকন এলাকাভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন-হাড় ফাটা, ভুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ, লোটকা ইত্যাদি।
জানা গেছে, এই বছর বিজয়নগরে প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি কাঁঠাল, প্রায় ১৫ কোটি টাকার লিচু ও প্রায় ১৩ কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয়েছে। চলতি বছর এক কোটি টাকার লটকন বিক্রি করা হবে বলে আশাবাদ করা যাচ্ছে। বিজয়নগর উপজেলার ১৮ হেক্টর লটকন বাগানের মধ্যে প্রায় ১০ হেক্টর লটকনের বাগান রয়েছে উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে।
এই ইউনিয়নের বামুটিয়া গ্রামের লকটন চাষি তোফাজ্জল হোসেন জানান, তার বাগানে মাল্টা, লটকন, কমলা, কয়েক জাতের আম, লিচু, পেঁপে, কাঁঠাল, ড্রাগন ও সৌদি আরবের খেজুর গাছ রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম ‘মিয়াজাকি’ ধরে আছে তার বাগানে। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম হিসেবে পরিচিত।
বৃষ্টিহীন, তীব্র তাপদাহে রোপা আমন ও সবজি নিয়ে বিপাকে নওগাঁর কৃষকরা
সীমান্ত জেলা নওগাঁতে গত দেড় মাস ধরে বৃষ্টির দেখা মিলছে না। ফলে চরমভাবে রোপা আমন ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। অতিরিক্ত তাপদাহে শুধু ধানই নয়, সবজির খেতও পুড়ছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কদিন আগেই আমন ধান রোপন করা হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে তা মরতে বসেছে। জমির মাটি ফেটে চৌচির এবং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বীজতলা। নওগাঁর প্রতিটি মাঠের চিত্রই একইরকম। ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজির খেতও নষ্ট হতে বসেছে।
নওগাঁ সাপাহার সদর উপজেলার কৃষক কুদ্দুস আলী জানান, মাঠজুড়ে যখন ব্যস্ততা থাকার কথা ধান রোপনের। ঠিক এমন সময়ে বসে বসে দিন কাটছে কৃষকদের। সারাদিন অতিরিক্ত রোদে ঘরের বাহিরে বের হওয়ায় কষ্টর হয়ে পড়েছে। এরপর আবার বৃষ্টি নেই প্রায় মাস পার হতে চললো। এভাবে চলতে থাকলে এ মৌসুমের আবাদ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন: তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
তিনি জানান, এই মুহূর্তে কৃষক যদি গভীর নলকূপ থেকে পানি সেচে চাষাবাদ করে, তাহলে অনেক খরচ বেড়েছে যাবে। অতিরিক্ত খরচ করে চাষাবাদ করলে এই ফসল থেকে কৃষকের কিছুই থাকবে না।
নওগাঁ সদর উপজেলার বাইপাস মাঠ এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, অনেক কষ্টে মাঠের পাশে একটি ডোবা থেকে পানি সেচে আড়াই বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছি। কিন্তু ১৫ দিনের মাথায় রোপণ করা ধান গাছগুলো পুড়ে গেছে, জমির মাটি ফেটে গেছে। অল্প দিনের মধ্য যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে এসব ধান আর হবে না। শুধু দুই এক জনের নয়, পুরো মাঠ জুড়ে একই অবস্থা। এই বছর পানির অভাবে অনেক কৃষক বীজতলা তৈরি করতে পারেনি। ফলে ধান রোপণ করা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
নওগাঁ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারহানা নাজনিন জানান, এই সময়ে রোপা আমন চাষ মূলত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে চাষাবাদ হয়। সেহেতু এক মাসের বেশি সময় ধরে জেলায় বৃষ্টিপাত নেই, ফলে এমন দুর্যোগ মোকাবিলায় এরই মধ্যেই বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে গভীর নলকুপগুলো চালুর বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
তবে কিছুটা আশাবাদী আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন: অসময়ের বন্যা থেকে ফসল রক্ষায় নতুন প্রকল্প আসছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, আগামী ১৯ তারিখের পর থেকে বৃষ্টিপাতে সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই জেলায় কেমন বৃষ্টিপাত হবে সেটা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না৷ তবে সার্বিকভাবে বৃষ্টির একটা পূর্বাভাস আছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ মৌসুমে নওগাঁ জেলার ১১ উপজেলায় এক লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
আগামী মাসে আরেকটি বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
দেশে আগামী মাসে (আগস্টে) আরেকটি বন্যা হতে পারে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘দেশের কৃষি প্রকৃতিনির্ভর এবং কৃষি সবসময়ই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকে। সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জসহ ১২টি জেলায় ফসলের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগস্টে আরেকটি ভয়াবহ বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে, এটি একটি রুটিন কাজ। আমরা ব্যাপক পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। একইসাথে, নাবী জাতের (লেইট ভ্যারাইটি) ধান চাষে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে কৃষিখাতে সরকারি বেসরকারি অংশিদারিত্ব (পিপিপি) নিয়ে পর্যালোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কৃষিতে বন্যা, খরা, সাইক্লোনসহ যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি রয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিতে সরকারের এখন মূল লক্ষ্য হলো কৃষিকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিকীকরণ করা, যাতে কৃষকের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটে। সেলক্ষ্য সরকার কাজ করছে। তবে এক্ষেত্রে বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তাদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও যান্ত্রিকীকরণে বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। কৃষিযন্ত্র অনেক ব্যয়বহুল, ৯০ শতাংশ যন্ত্র আমদানিনির্ভর। এসব কৃষিযন্ত্র আমরা দেশে উৎপাদন করতে চাই। পিপিপি এখানে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে।
বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে তাদেরকে প্রযুক্তিগত, অর্থনৈতিক, পলিসিসহ সকল বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। এছাড়া, বর্তমানে ডাল, তেলসহ যেসব কৃষিপণ্য আমদানি করতে হয়, তা উৎপাদনে ৪ সতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে সকল কৃষিপণ্যে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী বলেন, চাল আমদানির ফলে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ‘বাজার স্থিতিশীল রাখতেই সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, চাল আমদানির আমাদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টার্গেট আছে। সেই পরিমাণ চাল দেশে এসে গেলে আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে। আমরা প্রতিদিনই নিবিড়ভাবে বাজার মনিটর করছি। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয় একত্রে কাজ করছে। কাজেই চাল আমদানির ফলে দেশীয় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থা প্রধান এবং কৃষি-শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
পড়ুন: দেশের নির্বাচনে বিদেশিরা ভূমিকা রাখতে পারবে না: রাজ্জাক
বন্যা থেকে বাঁচতে নদীগুলো খনন করতে হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ ভাগ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে চাহিদার শতকরা ৪০ ভাগ স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের লক্ষ্যে তিন বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে কর্মপরিকল্পনা বিষয়ক সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানান কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগ আমদানি করতে হয়। এ বছর দেশে ভোজ্যতেল নিয়ে সংকট চলছে। অনেক বেশি দাম দিয়ে বিদেশ থেকে তেল আমদানি করতে হচ্ছে। এতে একদিকে ভোক্তাদের কষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও চাপ পড়ছে। এ অবস্থায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে আমরা তিন বছর মেয়াদি এ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
আরও পড়ুন: দেশে তেলের দাম কমবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, আমরা আগামী তিন বছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে ১০ লাখ টন তেল উৎপাদন করবো, যা চাহিদার শতকরা ৪০ ভাগ। এ পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে।
কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের মধ্যে সরিষা, তিল, বাদাম, সয়াবিন, সূর্যমুখীসহ তেল জাতীয় ফসলের আবাদ তিন গুণ বৃদ্ধি করে বর্তমানের ৮ লাখ ৬০ হেক্টর জমি থেকে ২৩ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরে উন্নীত করা হবে। তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বর্তমানের ১২ লাখ টন থেকে ২৯ লাখ টনে এবং তেলের উৎপাদন বর্তমানের তিন লাখ টন থেকে ১০ লাখ টনে উন্নীত করা হবে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার তেল আমদানি ৯০ শতাংশ কমাতে একমত ইইউ
এছাড়া সভায় জানান হয়, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী থেকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় মাত্র তিন লাখ টন, যা চাহিদার শতকরা ১২ ভাগ। বাকি ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়।
২০২০-২১ অর্থবছরে তেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর এ বছর প্রথম ১০ মাসে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
খাদ্য শিল্পের টেকসই উন্নয়নে ডাচ কৃষি প্রযুক্তি চায় বাংলাদেশ
বাংলাদেশি কৃষি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নেদারল্যান্ডের কৃষি ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের মাঝে হর্টিকালচার, পশুসম্পত্তি, পোল্ট্রি ও মৎস খাতে সুস্পষ্ট অংশিদারিত্ব তৈরিতে এগ্রি-বিজনেস কনক্লেভ আয়োজন করছে বাংলাদেশ দূতাবাস। আগামী ৩০ মে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই কনক্লেভে বাংলাদেশ থেকে কৃষি ও খাদ্যশিল্পে নিয়োজিত ৪০ জন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী/উদ্যোক্তা যোগ দেবেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০টি ডাচ প্রতিষ্ঠান এই সভায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কৃষি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় ওয়াগেনিঙ্গেন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রির্চাসের সহযোগিতায় এই সভা ওয়ার্ল্ড ক্যাফে ফরমেটে অনুষ্ঠিত হবে। ডাচ উদ্যোক্তারা বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশে সম্ভাব্য ডাচ প্রযুক্তি-সমাধান-উদ্ভাবন ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগ চূড়ান্তে আলোচনা করবেন।
আরও পড়ুন: কৃষি পদ্ধতির যান্ত্রিকীকরণে কাজ করছে সরকার: কৃষিমন্ত্রী
সভার দ্বিতীয় দিন (৩১ মে) চারটি উপখাত সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা ওয়াগেনিঙ্গেন, ফ্রিজল্যান্ড, বক্সমির, ওয়ার্ল্ড হর্টি সেন্টার এ ডাচ প্রযুক্তির প্রায়োগিক দিকগুলো দেখতে যাবেন।
কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনে নেদারল্যান্ড শীর্ষে। অন্যদিকে বাংলাদেশ গত পাঁচ দশকে কৃষি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করলেও অভ্যন্তরীণ ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করে কৃষি প্রবৃদ্ধি অর্জন ও কৃষিখাতকে একটি রপ্তানিমুখী খাতে উন্নীত করতে উন্নত ডাচ কৃষি প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তাই উন্নত ডাচ কৃষি প্রযুক্তি বাংলাদেশে সূচনা করার জন্য দুই দেশের ব্যবসায়িক সংযোগ সুদৃঢ় করতে দূতাবাস নতুন উদ্যোগ হিসেবে এই কনক্লেভ আয়োজন করছে।
আরও পড়ুন: দেশে উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা প্রণীত হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
কনক্লেভটি আয়োজনে প্রথমবারের মত দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ড এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ড ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজ ডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ এবং লাইট-ক্যাসেল পার্টনার্স।
এবার ভাঙল হালীর হাওরের বাঁধ, ঝুঁকিতে হাজার হেক্টর পাকা ধান
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও শঙ্কা কাটছে না সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের কৃষকদের। একের পর এক হাওরডুবির ঘটনা ঘটছে। এবার বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের হালীর হাওরে। তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় হাজার হেক্টর জমির পাকা ধান।
সোমবার রাত ১০টায় হালীর হাওরের আছানপুর গ্রামের স্কুলের পাশের বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। হালীর হাওরে বোরো জমির পরিমাণ পাঁচ হাজার ২০০ হেক্টর।
এরই মধ্যে ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হলেও কৃষকরা জানিয়েছেন হাওরে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ধান কাটা বাকি রয়েছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ভাঙল আরেকটি বাঁধ
আছানপুর গ্রামের কৃষকরা জানান, রাতে হঠাৎ করে বাঁধটি ভেঙে যায় এবং প্রবল বেগে হাওরে পানি ঢুকতে থাকে। বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে কৃষকরা ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
কৃষক আলী নুর বলেন, অনেক কষ্ট করে ঋণ নিয়ে ফসল করেছিলাম। কিন্তু বাঁধ ভেঙে আমাদের সকল ফসল তলিয়ে গেছে।
কৃষক রাজু মিয়া বলেন, বাঁধ নির্মাণের কাজে গাফিলাতির কারণে বাঁধটি ভেঙে ফসল তলিয়ে গেলো।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিশ্বজিৎ দেব জানান, হালীর হাওরে সাড়ে পাঁচ হাজার ২০০ হেক্টর বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। হঠাৎ করে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। তবে কৃষকরা ধান কেটে তোলার চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন: তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
সুনামগঞ্জের শাল্লায় সবচেয়ে বড় ছায়ার হাওরের মাউতির বাঁধ ভেঙে রবিবার সকাল থেকে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। দেখতে দেখতে হাওরের সব জমির পাকা ধান ডুবে যায়। একই সঙ্গে কেটে রাখা ধানের বোঝা ও খড়কুটোও তলিয়ে যায়। এই ঘটনায় হাজারো কৃষকের কান্নায় পুরো হাওর ভারি হয়ে উঠেছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে যে হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ। কিন্তু কৃষকদের দাবি, ৬০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে অনেক কাটা ধান আবার জমিতেই রয়ে গেছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, শাল্লার মাউতির বাঁধ (৮১ নম্বর পিআইসি) ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ শুরু হতে থাকলে কৃষকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। কৃষকরা কাটা ধান, নাকি জমির পাকা ধান, না খড় তুলে আনবেন এই নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ আবার কাটা ধানের স্তুপের পাশে বসে কাঁদতে আছেন।
আরও পড়ুন: অসময়ের বন্যা থেকে ফসল রক্ষায় নতুন প্রকল্প আসছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
ভাঙা বাঁধের পাশে কাটা ধানের স্তুপের কাছে বসে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন আভা রানী দাস। স্বামী কানন দাসের মাথায় ধানের বোঝা তুলে দিতে দিতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘তারা খালি নিজের চিন্তা করে, বাঁধে লাখ লাখ টেকা দুর্নীতি করে। আমি ২৫ কেয়ার (আট একর) ধান করছিলাম। ৫ কেয়ার (আধ একরের কম) কাটছিলাম, অখন নিতাম পাররাম না, নিতে নিতে ইগুন নষ্ট অই যাইবো।’
আভা রানীর মতো তলিয়ে যাওয়া ফসলের চিন্তায় হাওরে বসেই কাঁদছেন আফাজ মিয়া, সিরাজ উদ্দিন, মনির মিয়াসহ হাজারো কৃষক।
ফসল হারানোর সংশয় নিয়ে তারা বললেন, ‘এই বাঁধ ভাঙতে পারে না, তদারকি ও অবহেলায় বাঁধটি ভেঙে আমাদের সর্বনাশ হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও হাজারো পরিবার পানিবন্দি
কৃষক জামাল মিয়া বলেন, ‘যারা বাঁধের কাজে গাফলতি করেছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।’
তলিয়ে যাওয়া বাঁধের কাছে দাঁড়ানো আঙ্গাউড়ার হিমেল সরকার নামে স্থানীয় একজন বলেন, রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মোটরসাইকেলে যাত্রী নিয়ে খালিয়াজুরীর কৃষ্ণপুরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ বাঁধের নিচে বুরুঙ্গা দিয়ে পানি যাচ্ছে দেখে হাওরে থাকা কয়েকজন কৃষককে জানাই। তারা বাঁশ বস্তা ছাড়াই খড় দিয়ে একঘণ্টা পানি ঠেকানোর চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই বাঁধ ভেঙে যায়। পরে সকাল ৭টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসেন, কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারেননি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের শাল্লার সভাপতি তরুন কান্তি দাস বললেন, হাওরে ৭০ ভাগ ধানকাটা হয়েছে তবে ২০ ভাগ কাটা ধান খেতেই আছে। ৪৮ ঘণ্টায় পুরো হাওর ডুবে যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) বাঁধের কাজে মনোযোগী ছিল না,তাই আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
একই মন্তব্য করেন শাল্লা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মাউতির বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি কৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি ভালো করে বাঁধের কাজ করেছি। পানির চাপে বাঁধ ভেঙে গেছে। আমি শনিবার রাতেও বাঁধের ওখানে ছিলাম।’
আরও পড়ুন: আগাম প্রস্তুতির কারণে এবার হাওরে ক্ষতি কম হয়েছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তালেব বলেন, পানির চাপ বেশি থাকায় বাঁধ রক্ষা করা যায়নি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এসএম শহীদুল ইসলাম বলেন, রবিবার সকালে দায়িত্বশীলদের বাঁধ ঠেকানোর কাজ করতে কোনো বাধা ছিল না। কেন করলেন না তারাই ভালো বলতে পারবেন।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হাওরে ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধটি মেরামতের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে এবং বাঁধ নির্মাণে যদি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি কোনো অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরকার ভর্তুকি মূল্যে কৃষককে সার পৌঁছে দিচ্ছে: খাদ্যমন্ত্রী
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, সারা বিশ্বে সারের দাম বাড়লেও সরকার ভর্তুকি মূল্যে কৃষককে সার পৌঁছে দিচ্ছে। এদেশের বিজ্ঞানীরা উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করে কৃষকের কাছে নিয়ে গেছেন। এ কারণে জমি কমলেও কৃষকের উৎপাদন বেড়েছে।
রবিবার নওগাঁর পোরশা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উফশী আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষকদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের দেয়া প্রণোদনার বীজ ও সার আপনাদের কাছে আমানত স্বরূপ। এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আউশের উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখুন।’
আরও পড়ুন: ভোক্তার সচেতনতা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে: খাদ্যমন্ত্রী
প্রকৃত কৃষকের হাতে প্রণোদনা পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কৃষক নন কিংবা চাষের জমি নেই এমন কেউ যেন প্রণোদনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হন তা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী কৃষকদের উফশী আউশ চাষে আগ্রহী করে তোলার জন্য (২০২১-২০২২ অর্থ বছরে) পোরশা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে এক হাজার ১০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে ৪৭ জন নারীর মাঝে চার লাখ ৮৯ হাজার টাকার চেক বিতরণ করেন তিনি।
পরে খাদ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাস্তবায়নাধীন সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত) শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় ৫০ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ করেন এবং ২১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর হাতে শিক্ষাবৃত্তির চেক তুলে দেন।
আরও পড়ুন: সততা ও নিষ্ঠার সাথে দেশ গঠনে অবদান রাখার আহ্বান খাদ্যমন্ত্রীর