কৃষি
কম্বাইন হারভেস্টার কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিপ্লব ঘটাবে: মন্ত্রী
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত দেশের জমিতে ব্যবহারের সবচেয়ে উপযোগী ও সুলভ মূল্যের ধান কাটার যন্ত্র-কম্বাইন হারভেস্টার কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিপ্লব ঘটাবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে গাজীপুরে ব্রির চত্বরে কম্বাইন হারভেস্টারটির কার্যক্রম পরিদর্শন কালে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ব্রির বিজ্ঞানীরা নিজেরা গবেষণা করে ধান কাটার মেশিনটি উদ্ভাবন করেছে। এটি একটি অসাধারণ সাফল্য। এটির ধান কাটার ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি, দেশের ছোট ছোট জমিতে ব্যবহারের উপযোগী। বিদেশের ইয়ানমারসহ বিভিন্ন কম্বাইন হারভেস্টারের দাম ২৫-৩০ লাখ টাকা, আর এটির খরচ পড়বে ১২-১৩ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: ফলের জাত উদ্ভাবন করে আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, ‘ব্রির উদ্ভাবিত যন্ত্রটি আমরা যদি স্থানীয়ভাবে তৈরি করে সারা দেশে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিপ্লব ঘটবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষিকে লাভজনক করতে অনন্য ভূমিকা রাখবে।’
ব্রির বিজ্ঞানীরা জানান, তাদের উদ্ভাবিত ব্রি হোল ফিড কম্বাইন হারভেস্টারের ইঞ্জিনটি বিদেশ থেকে আনা। অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থানীয়ভাবে তৈরি। এর ইঞ্জিনের ক্ষমতা ৮৭ হর্স পাওয়ার। ঘণ্টায় মেশিনটি ৩-৪ বিঘা জমির ধান কর্তন করতে পারে। জ্বালানি খরচ হয় ঘণ্টায় সাড়ে ৩- ৪ লিটার। হারভেস্টিং লস শতকরা এক ভাগের কম। আর দাম পড়বে মাত্র ১২-১৩ লাখ টাকা। খন্ড খন্ড জমিতেও ব্যবহার উপযোগী। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত যেকোন কম্বাইন হারভেস্টারের তুলনায় এটি ভাল বলে জানান ব্রির বিজ্ঞানীরা।
পরে কৃষিমন্ত্রী ব্রির চত্বরে ব্রির শ্রমিকদের জন্য নির্মিত পাঁচতলা নতুন আবাসিক ভবন 'ব্রি শ্রমিক কলোনী ভবন' উদ্বোধন করেন।
আরও পড়ুন: সকলের জন্য পুষ্টিজাতীয় খাবার নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ: কৃষিমন্ত্রী
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলায় পেঁয়াজ চারা সঙ্কটের আশঙ্কা
চলতি মৌসুমে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ছয় জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে ৪০ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক কর্মকর্তা জাহেদুল আমিন। তবে এ মৌসুমে দু’দফা বৃষ্টিতে পেঁয়াজের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এতে পেঁয়াজের চারা সঙ্কট হওয়ায় বাজারে চড়াদামে পেঁয়াজ চারা বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ন্যায্যমূল্য ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি ফরিদপুরের পেঁয়াজ চাষিদের
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা, মাগুরার শ্রীপুর, মহম্মদপুর ও সদর উপজেলা, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ চাষ হয়ে থাকে। আর মেহেরপুর জেলায় সুখসাগার নামে একটি ভারতীয় জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়ে থাকে। এ জাতটির ফলন বেশি হয়।
মাগুরার শালিখা উপজেলার শ্রীহট্র গ্রামের শাহাদৎ মোল্লা জানান, তাদের এলাকায় সুখসাগর পেঁয়াজ বীজ ছিটিয়ে বোনা হয়। বোনা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ পেঁয়াজ বিঘা প্রতি দেড়শো মন ফলন হয়। কোনো কোনো জমিতে ১৮০ মন পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা গোবিন্দপুর গ্রামের এবাদত আলী জানান, এবার ২২ কাঠা জমিতে মুড়িকাটি পেঁয়াজ চাষ করেছি। বিঘা প্রতি ৮০ মন ফলন হবে। দামও ভালো। আর হালি পেঁয়াজের চাষ সবে শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ বীজ ফরিদপুরের চাষিদের কাছে ‘কালো সোনা ’
একই উপজেলার ব্রহ্মপুর গ্রামের মফিজুল ইসলাম বলেন, এবার পেঁয়াজের চারার দাম চড়া। প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ চারার অভাব আবাদ ব্যাহত হতে পারে।
কৃষি কর্মকর্তা জাহেদুল আমিন বলেন, পেঁয়াজের চারা রোপণ পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। বাজারে দাম ভালো থাকায় চাষি পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছে। বৃষ্টিতে পেঁয়াজের বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। চারার অভাব দেখা দিতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’: চাঁদপুরে ৪৪২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’র কারণে চাঁদপুরে প্রায় ৪৪২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালালউদ্দীন।
দুর্যোগপূর্ণ উত্তর কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায় জরিপে দেখা গেছে, জেলার ৮ উপজেলায় আলু, সরিষা, গম, বোরো বীজতলা, পেঁয়াজ, মরিচ ও আগাম শীতকালীন শাক সবজি ও অন্যান্য ফসলসহ ক্ষতি হয়েছে চার হাজার ৫৫৫ হেক্টর ফসল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আগাম শীতকালীন শাক-সবজির। এতে কৃষকদের প্রায় ৪২৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ, মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত
সরিষায় সাত কোটি আড়াই লাখ টাকা, আলু ক্ষেতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি ৪১ লাখ টাকার। অন্যান্য বিভিন্ন জাতের ফলের ক্ষতি হয়েছে তিন কোটি সাড়ে ৪২ লাখ টাকার। পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে ২১ লাখ টাকার। বোরো বীজতলার চার লাখ ১৫ হাজার টাকার, মরিচের এক লাখ ৬৫ হাজার টাকার ও গমের ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকার।
জেলায় সবর্মোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৭৪ জন। এর মধ্যে শাকসবজির চাষির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ১৭ হাজার ৬৩০ জন। সবচেয়ে কম গম চাষি ১৯৫ জন।
সিরাজগঞ্জে মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ, মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত
সিরাজগঞ্জের মাঠে মাঠে এখন সরিষা ফুলের হলুদের সমারোহ। মৌমাছির গুঞ্জনে প্রকৃতি যেন নতুন সাজে সেজেছে। এবার জেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করা হয়েছে। একই সঙ্গে মৌমাছির ফুলের বাগানে বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছে মধু চাষিরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলার ৯ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৫৪ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা সরিষা চাষাবাদ করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতের সরিষার মধ্যে রয়েছে বারি ০৯, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮, বিনা ০৯, টোরি ০৭ ও স্থানীয় সরিষা। এর মধ্যে বারি ০৯ ও ১৪ বেশি চাষাবাদ করেছে কৃষকেরা।
আরও পড়ুন: মাগুরায় সরিষার বাম্পার ফলন
স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকেরা এ লাভজনক সরিষা চাষাবাদ করেছে। তবে এই সরিষা চাষাবাদ জেলার তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, বেলকুচি ও কামারখন্দ উপজেলার কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি করেছে।
জেলায় এবার ৬৬ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন
দেশে প্রথমবারের মতো লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিজ্ঞানীরা।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহে বিনায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বলেন, দেশের দুই মিলিয়ন হেক্টর জমি লবণাক্ত, যেখানে বছরে একটি ফসল হয়। খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করতে ও ভবিষ্যতে খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমরা লবণাক্ত, হাওরসহ প্রতিকূল এলাকায় বছরে দুই থেকে তিনটি ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছি। পূর্ণাঙ্গ জিনোম উন্মোচনের ফলে লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু জাতের ধান উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ সহজতর হবে।
আরও পড়ুন: ধানের নায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার: মন্ত্রীসংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় বিনা ও বাকৃবির যৌথ এ গবেষণায় বিভিন্ন মাত্রার গামা রেডিয়েশন প্রয়োগ করে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মিউট্যান্ট সৃষ্টি করে তা থেকে নানামুখী পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে এমসিক্স জেনারেশনে তিনটি উন্নত মিউট্যান্ট শনাক্ত করা হয়েছে। প্রাপ্ত মিউট্যান্টগুলো প্যারেন্ট অপেক্ষা উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এবং ৮ ডেসিমেল মাত্রার লবণাক্ততা ও ১৫ দিন জলমগ্নতা সহিষ্ণু।এ গবেষণালব্ধ তত্ত্ব-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিনা ও বাকৃবি’র বিজ্ঞানীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে সর্বপ্রথম লবণ ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের জীবন রহস্য উন্মোচন করেছে।সম্মেলনে আরও জানানো হয়,জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আকস্মিক বন্যা ও লবণাক্ততা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কার্যকরী উপায় হচ্ছে লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবন। এ লক্ষ্যে বিনার ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলামের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী প্রায় এক দশক ধরে কাজ করে চলেছেন।
আরও পড়ুন: ‘ফাতেমা’ জাতের ধানে বিঘায় ৫০ মণ ফলন
এবার খুলনার মাঠে শোভা পাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ জাতের ধান
স্বল্প সময়ে ফসল পাওয়ার লক্ষ্যে এবার খুলনার আট উপজেলায় বোরো খেতে বঙ্গবন্ধু জাতের ধান শোভা পাবে। পাঁচ বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এ জাত আবিস্কার করেছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।
ইতোমধ্যেই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন জাত দিয়ে বীজতলা তৈরি হয়েছে। অন্য জাতের তুলনায় গবেষণা ইনস্টিটিউটের নতুন জাতের ধানের ফলন হেক্টর প্রতি এক টন বৃদ্ধি পাবে। চালের আকার হবে মিনিকেট সাইজের।
আরও পড়ুন: ধান-চাল সংগ্রহ কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগোচ্ছে না: খাদ্যমন্ত্রী
জেলায় এখন বোরোর ভরা মৌসুম। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাষিরা হাইব্রিড জাতের বীজতলা বেশি তৈরি করেছে। গত দুই বছর যাবৎ হাইব্রিডে উৎপাদন বেশি এবং খাদ্যের সংকট মেটাচ্ছে। এসিআই, ব্রাক ও সরকারি হাইব্রিড জাতের পাশাপাশি ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানির বীজ দিয়ে বোরো বীজতলা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খুলনা মহানগর, রূপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়া, ফুলতলা, ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও কয়রায় বঙ্গবন্ধু জাতের বোরো ধানের বীজ পরীক্ষামূলকভাবে পাঠানো হয়েছে। প্রতি উপজেলায় বিনামূল্যে পাঁচ কেজি করে বীজ সরবরাহ হয়েছে। বীজতলায় ৩৫ দিন বয়স থেকে এ জাতের চারা রোপন করা যাবে। ১৪৮ দিনের মধ্যেই ফসল কাটার মত উপযুক্ত হয়ে উঠবে। ‘বিআর-৭৪ ও বিআর-৮৪’র চেয়ে এর ফলন বেশি। ক্ষেত্র বিশেষে হেক্টর প্রতি সাড়ে সাত টন থেকে সাড়ে আট টন পর্যন্ত উৎপাদন হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মহাদেব চন্দ্র সাহা জানান, এ জাতের ধানকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে এই প্রথম বারের মত আবাদ শুরু করা হলো। এতে রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড় আক্রমনের পরিমান কম হবে। ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিংক তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। নাজিরশাইল ও জিরা ধানের মতই বঙ্গবন্ধু জাতের ধানের আকৃতি।
আরও পড়ুন: চলতি বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের তথ্য মতে, বীজ দেরিতে পাওয়ায় বিতরণে বিলম্ব হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই বিতরণ করা হবে। নতুন জাতের জন্য উঁচু স্থানে বীজতলা তৈরি করা হবে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, গুটুদিয়া ও বলাবুনিয়ায় চারজন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। এ জাতের ধান ১৪৮ দিনের মধ্যে খামারে তোলা সম্ভব হবে। অন্য জাতের তুলনায় হেক্টর প্রতি এক টন বেশি উৎপাদন হবে। সে কারণেই দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবে।
বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে ফরিদপুরে ২০ হাজার হেক্টর ফসলের খেত
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ফরিদপুর জেলায় চলতি মৌসুমে ২০ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। বিশেষ করে মুড়িকাটা পেঁয়াজের খেত এখন বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত। পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় সর্বোচ্চ জেলা ফরিদপুরে চাষিরা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দুদিনের টানা বৃষ্টিতে ফরিদপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চলতি মৌসুমের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ (মুড়িকাটা) আবাদ হয়েছে পাঁচ হাজারের অধিক জমিতে। পেঁয়াজ তোলার প্রস্তুতিকালে হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে এখন মাথায় হাত চাষিদের।
সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ও অম্বিকাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে সরেজমিনে দেখা গেছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজের খেত এখন বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় ২ দিনের টানা বৃষ্টি, জনজীবন বিপর্যস্ত
চাষিরা বলেছেন, এক বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার বেশি। জেলার অধিকাংশ খেত থেকে চাষিরা আগামী সাত দিনের মধ্যে পেঁয়াজ তোলার কাজ শুরু করবে। কিন্তু বৃষ্টির পানি খেতে জমে তারা ফসলের মাঠে নামতে পারছেন না।
শুধু মুড়িকাটা পেঁয়াজ ছাড়াও রসুন,আলু ও সরিষা খেত তলিয়েছে। আকস্মিক বৃষ্টিতে সরিষার ফুল ঝড়ে গেছে। আলু খেত ডুবে যাওয়ায় গাছে পচন শুরু দিকে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ পরিচালক ড. হযরত আলী বলেন,‘দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে টানা বৃষ্টিতে জেলার ২০ হাজার হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব কৃষকদের অন্য ফসলের প্রণোদনা দিয়ে এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার।’
তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে তুলনামূলকভাবে ব্যয় বেশি। হঠাৎ এই বৃষ্টিপাতে চাষিদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হবে। প্রতিটি মাঠে গিয়ে পরিস্থিতি দেখার জন্য আমাদের কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের চাষি সুরত খান, সালাউদ্দিন মোল্ল্যাসহ অনেকেই বলেন, ‘খেতে পানি জমে গেছে। চলতি মৌসুমে মাঠে যে ফসল আছে সবই ক্ষতির মধ্যে। কীভাবে চলব, আর পুঁজিও বা কীভাবে উঠবে সেই চিন্তায় আমরা দিশেহারা।’
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ৭৩৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত
নগরকান্দা উপজেলার আশফরদী গ্রামের পেঁয়াজ চাষি রোকন উদ্দীন মাতুব্বর বলেন,‘আমি প্রতি বছর ১২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করি। তাই এবছর সেই জমিতে পেঁয়াজের চাষ করতে ১৪ কেজি দানা কিনে বীজতলা তৈরি করেছিলাম। বৃষ্টিতে সব শেষ। যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতি হয়েছে তাই সরকারের কাছে আমাদের বীজ কিনে দেয়ার দাবি জানাই।
নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন ইয়ামিন বলেন, ‘নগরকান্দা উপজেলায় পেঁয়াজের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করতে আমাদের উপ সহকারীরা মাঠে আছেন। আমরা চাষিদের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। আশা করছি সরকার এই চাষিদের বিষয়ে আন্তরিক হবে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন, কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা চুড়ান্ত ক্ষতির পরিমাণ জানার পর তাদের আর্থিক সহয়তাসহ সরকারি অন্যান্য সহযোগিতা করব।’
পান চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন অভয়নগরের চাষিরা!
কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন পান চাষে ঝুঁকছেন যশোরের অভয়নগরের চাষিরা। চাষে সাফল্যও পেয়েছেন তারা। তাই এই উপজেলায় দিন দিন পানের বরজের সংখ্যাও বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলার চেঙ্গুটিয়া এলাকায় সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয়। এছাড়া চাষের জন্য বাঘুটিয়া ইউনিয়নও অন্যতম। উপজেলার প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের পানের বরজ আছে। নওয়াপাড়া ও চেঙ্গুটিয়া হাটে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত এসব পান বেচাকেনার হয়। অনেকে আবার পানকে ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করছেন।
আরও পড়ুন: সাদা সোনা খ্যাত রসুন রোপনে ব্যস্ত মণিরামপুরের চাষিরা
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এই উপজেলায় চলতি বছরে ৪০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। পান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ৩০ মেট্রিক টন।
বাঘুটিয়া এলাকার পান চাষি হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্য চাষিরা জানান, পানের বরজে এক প্রকার ফাপপচা রোগ দেখা দেয়। এ থেকে বাঁচাতে পারলে একটি বরজ ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত থাকে। সাধারণ আষাঢ়-শ্রাবন মাসে এ রোগটি বেশি দেখা যায়। তবে এ রোগ দমনে ফোরি, এডমা ও কাফডার নামে তিনটি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও শীতের সময় এক প্রকার বিষাক্ত কুয়াশা পান গাছে লাগলে পান পাতা ঝরে যায়। এতে চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
আরও পড়ুন: শীতের প্রথম বাজার ধরতে ব্যস্ত যশোরের সবজি চাষিরা
পান চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দুই বিঘার ওপর একটা পানের বরজ আছে, তার বয়স প্রায় ১০ বছর হবে। বর্তমানে প্রতি বিড়া পান আকার ভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করতে পারছি। বাজারে চাহিদা থাকায় পুরাতন পানের যে দাম পেয়ে ছিলাম, নতুন পানেরও তেমনি দাম পাচ্ছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সামদামী জানান, জাইকার আয়োজনে উপজেলাতে পান চাষিদের কয়েকটি প্রশিক্ষণ করানো হয়েছে। যে কারণে এই এলাকায় পান চাষ ভালো হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এখানে পান চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উৎপাদিত পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও
সাদা সোনা খ্যাত রসুন রোপনে ব্যস্ত মণিরামপুরের চাষিরা
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের খালিয়া গ্রামের মাঠে মাঠে সারিবদ্ধভাবে বসে বাটি-ডালা হাতে নিয়ে ‘সাদা সোনা’ খ্যাত রসুন রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
জানা গেছে, প্রায় পাঁচ যুগেরও বেশি সময় ধরে এ গ্রামের মাঠে মাটে রসুন চাষ হয়ে আসছে। অনেক পরিবার রসুন চাষের মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। ভূমিহীন চাষিরা অন্যের জমি বর্গা নিয়েও রসুন চাষ করে থাকেন।
সোমবার সকালে সরেজমিনে রাজগঞ্জের ঝাঁপা ইউনিয়নের খালিয়া গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা সারিবদ্ধভাবে বসে রসুন রোপন করছেন। এই গ্রামের মাঠগুলোতে মূলত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে রসুন চাষ করা হয়।
বর্ষা মৌসুমের পরপরই সাধারণত কার্ত্তিক মাসের শুরুতে রসুনের বীজ রোপন করা হয়। দীর্ঘ পরিচর্যার পর ফাল্গুন মাসের শেষ দিকে জমি থেকে রসুন তোলা শুরু হয়। দেশি জাতের রসুন বাড়িতেই বীজ তৈরি করে সংরক্ষণ করে থাকেন এখানকার চাষিরা। প্রতিটি বীজ রসুন থেকে ২০/২৫টা বীজ রোপন করা যায়।
আরও পড়ুন: ন্যায্যমূল্য ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি ফরিদপুরের পেঁয়াজ চাষিদের
বিঘা প্রতি প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ রসুন উৎপাদন করে থাকেন তারা। রসুন আহরনের মৌসুমে বাজারে দাম প্রতি কেজি প্রায় ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করেন তারা।
চাষি আব্দুল হালিম জানান, এবছর প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে রসুন রোপন করেছেন। বিঘা প্রতি তার ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। প্রতি বিঘা জমি হতে তিনি প্রায় ৬০ হাজার টাকার বেশি রসুন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি। অনেকে আবার জমি লিজ নিয়ে রসুন চাষ করেছেন।
চাষিরা জানান, রসুন বিক্রি করতে আমাদের মোকামে যেতে হয় না। স্থানীয় রাজগঞ্জ বাজারে বিভিন্ন এলাকা থেকে বেপারীরা রসুন কিনতে আসেন। সেখান থেকে ট্রাক বোঝাই হয়ে এখানকার রসুন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায়।
আরও পড়ুন: খামারিরা বিপদে, খুলনায় ১০ লাখ মুরগি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত
স্থানীয় ইউনিয়ন কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, রাজগঞ্জের খালিয়া গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে রসুন উৎপাদিত হয়। বহু বছর ধরে এখানকার চাষিরা খেত থেকেই বাছাই করে বীজ সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে রোপন করেন। গুনে মানে উৎকৃষ্ট হওয়ায় স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে এর চাহিদাও রয়েছে অনেক।
ন্যায্যমূল্য ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি ফরিদপুরের পেঁয়াজ চাষিদের
শেখ মফিজুর রহমান শিপন
দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়ে সারা বছরের চাহিদা মেটাতে নানা পরামর্শ দিয়েছে পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় সর্বোচ্চ জেলা ফরিদপুরের চাষিরা।
তারা মনে করেন, উন্নত জাতের পেঁয়াজ বীজ সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকবে না।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দাবি, চাষিদের মাঝে আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও উন্নত বীজ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত বছর ফরিদপুরের ৯ উপজেলায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করে চার লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের (মুড়িকাটা) আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। যা থেকে উৎপাদিত হবে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ।
আরও পড়ুন: হিলিতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
ফরিদপুরের সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর মাঠে সরেজমিনে দেখা গেছে, মৌসুমে পেঁয়াজ সংগ্রহের পর পরবর্তী ফসল আবাদের অর্থ যোগান দিতে বাধ্য হয়ে কম মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রয় করতে হয় তাদের। এছাড়াও গ্রীষ্মকালীন মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। একর প্রতি চাষিদের খচর লাখ টাকার বেশি। এ কারণে এই পেঁয়াজ বাজারের তুলার সময়ে কেজি প্রতি কৃষক পর্যায়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা হারে দর না পেলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে তারা।
জেলার সালথার মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষি আকবর মাতুব্বর, সিরাজ মোল্লা, হানিফ ব্যাপারীসহ বেশ কয়েক জন চাষি জানান, মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম ও পেঁয়াজ সংরক্ষণের আধুনিক সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না এই পেঁয়াজ।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য এনবিআরকে অনুরোধ
চাষিরা বলেন, ‘পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য, বেশি দিন সনাতন পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায় না। এ কারণে ফরিদপুর অঞ্চলের পেঁয়াজ আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে সারা বছর চাষিরা বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ করতে পারবে।’