অর্থায়ন
জলবায়ু দুর্গত দেশগুলোর অর্থায়ন নিশ্চিতে আয়োজিত হচ্ছে ন্যাপ এক্সপো
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপদাপন্ন দেশগুলোর জন্য জলবায়ু তহবিল হতে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে ন্যাপ এক্সপো একটি গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী ২২ থেকে ২৫ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) জাতিসংঘ জলবায়ু অভিযোজন সম্মেলন ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান (ন্যাপ) এক্সপো ২০২৪ অনুষ্ঠিত হবে।
ইউএনএফসিসিসির তত্ত্বাবধানে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিশেষজ্ঞ গ্রুপ এবং বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় এ এক্সপো আয়োজিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই সম্মেলনটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্সপোতে আরও থাকবেন ইউএনএফসিসিসির এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি সাইমন স্টিয়েল।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) ন্যাপ এক্সপো ২০২৪ উপলক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পরিবেশমন্ত্রী।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ন্যাপ এক্সপো একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম যেখানে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা ন্যাপ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করে।
ন্যাপ এক্সপোতে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা, ন্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন দেশের ন্যাপগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতির মূল্যায়ন করতে বিশেষজ্ঞদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান পরিবেশমন্ত্রী।
এছাড়াও, এই এক্সপো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত গ্যাপ এবং চাহিদা চিহ্নিতকরণের জন্য প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করবে।
সাবের হোসেন চৌধুরী জানান, ন্যাপ এক্সপো ২০২৪-এ অংশগ্রহণ করতে ১০৪টি দেশের ৩৮৩ জন ইউএনএফসিসিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধি, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, এনজিও প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীসহ সাড়ে ৫০০ জন অংশগ্রহণ করবেন।
এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের অভিযোজন কার্যক্রম সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় থেকে সবাই পারস্পরিকভাবে উপকৃত হতে পারবে বলে জানান পরিবেশমন্ত্রী।
মন্ত্রী জানান, এ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের অভিযোজনমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে ২০টি স্টল থাকবে। এছাড়াও, ৪ দিনে ১৬টি সেশনে বিশেষজ্ঞরা ট্রান্সফরমেশনাল এডাপটেশন, ফিনান্সিয়াল মেকানিজম, এডাপ্টেশন একটিভিটি মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন টুলস, জেন্ডার রেস্পন্সিভ এডাপটেশন প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করবেন।
বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দকৃত ১০টি স্টলে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং, পাহাড়ি অঞ্চলে সোলার এনার্জির মাধ্যমে পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা, জলবায়ু সহিষ্ণু বীজ, প্রাণিসম্পদ সংরক্ষণ এবং অন্যান্য কৃষি কার্যক্রম সংক্রান্ত বিষয়, অভিযোজন কর্মকাণ্ডের সমর্থনে ডেল্টা প্লানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, জলবায়ু অভিযোজনের জন্য সাইক্লোন সেল্টার, মুজিব কিল্লা, রাস্তাঘাট, কালভার্ট নির্মাণ, জলবায়ু সহিষ্ণু নগর ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু উদ্বাস্তু ইত্যাদি জলবায়ু অভিযোজনের বিষয়গুলো দেখানো হবে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, বিদেশি স্টলে প্রদর্শিত অভিযোজন কর্মকাণ্ড থেকেও অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও এক্সপোতে দেশের জলবায়ু অভিযোজন প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দেশি বিদেশি সংস্থা অংশগ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, অতিরিক্ত সচিব (পদূনি) তপন কুমার বিশ্বাস, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ এবং বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন চায়: পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগীদের নিকট হতে জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন প্রত্যাশা করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়তাকারী অর্থায়নের উপকরণ ও কাঠামোতে অংশগ্রহণ করতে গভীরভাবে আগ্রহী। আমরা সহযোগিতার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং টেকসই ও রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের জন্য বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বাঘ সংরক্ষণে ভারতের সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী
শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত আইএমএফের রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট (আরএসটি) তহবিল সংক্রান্ত বৈঠকে পরিবেশমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য আইএমএফ থেকে নীতি পরামর্শ এবং সক্ষমতা উন্নয়ন সহায়তা পেয়ে আমরা সন্তুষ্ট।
মন্ত্রী বলেন, আইএমএফ কিভাবে বাংলাদেশকে তার জলবায়ু এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে এবং জলবায়ু অর্থায়নকে গতিশীল করতে সহায়তা করতে পারে সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করার সুযোগ চাই।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শনে বাংলাদেশ বৈশ্বিক নেতৃত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ), মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রস্তুত করেছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ বাস্তবায়নে অগ্রণী।
আরও পড়ুন: জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্রিটেনের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ: পরিবেশমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা অনুসরণে দেশে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে: পরিবেশমন্ত্রী
অর্থায়ন ছাড়া কার্যকর জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা সম্ভব নয়: শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পর্যাপ্ত, টেকসই এবং সহজলভ্য জলবায়ু অর্থায়ন ছাড়া কার্যকর কর্মপরিকল্পনা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘এটি দুঃখজনক এবং হতাশাজনক যে এখন পর্যন্ত প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।’
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কপ-২৬ ভেন্যুতে ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম লিডারস ডায়ালগ: ফরজিং এ সিভিএফ-কপ-২৬ ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি প্যাক‘ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং সিভিএফ-এর দূত সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত অস্তিত্ব হুমকির মুখোমুখি হয়ে সিভিএফ সদস্যরা, এই কপ-এ ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই পাঁচ বছরের অভিযোজন ও প্রশমনের ৫০:৫০ আনুপাতিক হারে প্রতিবছর মোট ৫০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন বিতরণের দাবি জানাই।’
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সিভিএফ সদস্য দেশগুলোকে বেশি ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিজেরাই নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বকে জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী