তরুণরা দৃঢ়ভাবে কাজ করছে
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে তরুণরা দৃঢ়ভাবে কাজ করছে: রাষ্ট্রদূত মাসদুপুই
ক্লাইমেট অ্যাকশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তরুণদের প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই।
তিনি বলেন, ‘তাদের একটি উদাহরণ হিসেবে নেওয়া উচিত। তারা স্থানীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে কাজ করে এবং মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর সঙ্গে কার্যকরভাবে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করে।’
ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রবীণ রাজনীতিবিদরা তাদের কথা শুনতে শুরু করেছেন এবং এটি স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি ভবিষ্যতে আরও বাড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তিনি বলেন, ‘আপনারা হয়তো বলতে পারেন তারা মাঠ পর্যায়ের রাজনীতি থেকে অনেক দূরে। আমি মনে করি না এটা সত্য। তারা প্রকৃতপক্ষে রাজনীতির ভবিষ্যৎ: বৈশ্বিক সমস্যা, স্থানীয় সমাধানের অগ্রদূত।’
হারনেট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে 'বাংলাদেশ ডিসাইডস: দ্য ইয়ুথ স্পিকস' (বিডিওয়াইএস) এর সর্বশেষ পর্ব।
হারনেট টিভির প্রতিষ্ঠাতা সিইও ও এমডি আলিশা প্রধান এই অনুষ্ঠানের গ্রন্থনা ও পরিকল্পনা করেছেন।
আয়োজকরা বলেন, বাংলাদেশে ইইউ দূতাবাসের সহ-অর্থায়নে ও সহযোগিতায় আয়োজিত এই আয়োজন বাংলাদেশের তরুণদের ক্ষমতায়নে তাদের অঙ্গীকারের একটি দৃঢ় প্রমাণ।
তরুণদের তাদের স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, চরমপন্থী চিন্তাভাবনা পরিহার করে ইতিহাস অধ্যয়ন করতে, তাদের নিজের এবং বাকি বিশ্বের ইতিহাস অধ্যয়ন করার জন্য তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত মাসদুপুই।
তিনি বলেন, ‘এটি আপনাদের আপনার নিজের গ্রাম, শহর বা দেশের জন্য সেরা পছন্দগুলো কী তা আরও ভালোভাবে জানতে দেবে। এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভুল তথ্য প্রচারণা চালানো থেকে সতর্ক থাকুন।’
আরও পড়ুন: মিনি ফিল্ম ফেস্টিভেলের মাধ্যমে মানবাধিকার সপ্তাহ পালন ডাচ দূতাবাসের
রাষ্ট্রদূত তার নিজের জীবনের গল্পে বলেন, 'আমার বাবা কখনো কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেননি, আমার মাও ছিলেন না। কিন্তু আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের মধ্যে উত্তপ্ত আলোচনা চলছিল এবং তারা ট্রেড ইউনিয়নে, তাদের নিজ নিজ পেশাদার শাখায় সক্রিয় ছিলেন।’
তিনি বলেন, এটা সত্য তরুণরা প্রতিনিধিত্ব করে কম, ব্যাপকভাবে কোনো ব্যালটে তাদের ভোট দেয় না এবং কম বেশি রাজনৈতিক দলগুলোকে মেনে চলে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'এর ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মতামত বিবেচনায় নেওয়া হবে না।’
রাষ্ট্রদূত মাসদুপুই বলেন, চ্যালেঞ্জ করা সবসময়ই ভালো বিষয়। ‘১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে আমাদের উদ্দেশ্য, আদর্শ ও লক্ষ্যগুলো মনে রাখবেন: উদাহরণস্বরূপ, আমরা নারীদের জন্য আরও অধিকার এবং একটি ইউরোপের একত্রীকরণ চেয়েছিলাম। আমরা পরেরটি অর্জন করেছি এবং লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখেছি।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, তাদের শুধু সবাইকে বলার আছে এমন নয়, তাদের বিশেষ দায়িত্বও রয়েছে। তারা ভবিষ্যতের জন্য প্রধান সমস্যা হিসেবে কোন ইস্যু চিহ্নিত করেছে সে বিষয়েও তাদের দায়িত্ব রয়েছে। ‘জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুটি আজ স্পষ্ট।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, সামাজিক প্রতিবাদ আন্দোলনে তরুণরা বেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেটা ‘মি টু’ আন্দোলন হোক, ফ্রান্সের ইয়েলো জ্যাকেটের মতো প্রতিবাদ হোক বা জলবায়ু বিক্ষোভ।
রাষ্ট্রদূত বলেন, একটি ভোট না দেওয়ার অর্থ হলো একজন ব্যক্তি মতামত দেওয়া থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরে যাওয়া এবং দেশের উন্নয়নে সহায়তা করা বন্ধ করে দেওয়া।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ দূতাবাস, ইয়াঙ্গুনের উদ্যোগে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা দিবস পালিত
মাসদুপুই বলেন, ‘এটি অন্যদের সেরা ধারণা হিসেবে ভালো নয় এমন ধারণাটি দ্বিগুণ করার সুযোগ দেয়।’
তিনি আরও বলেন, 'গতানুগতিক রাজনীতি থেকে সরে আসার এই ধরনের আচরণ আজকাল কার্যত সামাজিক মাধ্যমে সহজতর হচ্ছে। তরুণরাই সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় প্রধান দল।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'আমি বলছি না যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত, বরং ছোটবেলা থেকেই তাদের সম্পর্কে আমাদের শিক্ষিত হওয়া উচিত। সত্য ও মিথ্যাকে কীভাবে আলাদা করা যায়, সেটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’
বাংলাদেশে ফরাসি দূতাবাস, রোটারি ক্লাব, ইউএনবি, হারনেট টিভি, সময় টিভি, বাংলাদেশ প্রতিদিন, গোল্ড স্যান্ডস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস, কাজী অ্যান্ড কাজী টি, মেঘনা ব্যাংক, হারনেট ব্লিসমাইন্ড, জোন্টা, ব্লু প্ল্যানেট গ্রুপের সহযোগিতায় বিডিওয়াইএস এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ইউল্যাবের ছয়জন মেধাবী শিক্ষার্থী এই সংলাপে অংশ নেন।
আরও পড়ুন: আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে 'ক্ষমতায় অংশগ্রহণ: নীতি প্রণয়ন, আইনের শাসন, মানবাধিকার, নাগরিক শিক্ষা' শীর্ষক এই পর্ব ছিল।
ইউল্যাবের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ইমরান রহমান, হারনেট গ্রুপের উপদেষ্টা মনির প্রধান; হারনেট টিভির চেয়ারপারসন হোসনে প্রধান; ইউল্যাবের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর জুড ডব্লিউ আর জেনিও; সার্ক চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জসিম উদ্দিন; বাংলাদেশে ইউনিসেফের কান্ট্রি ডিরেক্টর শেলডন ইয়েট; বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউসুফ ফারুক; জোন্টা ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি দিলরুবা আহমেদ; মেঘনা ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কিমিওয়া সাদ্দাত এবং ঢাকা ট্রিবিউনের প্রধান সম্পাদক জাফর সোবহান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপটি সঞ্চালনা করেন হারনেট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও সামাজকর্মী আলিশা প্রধান।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আগামী ২৩ ডিসেম্বর সৌদি দূতাবাসে অনুষ্ঠিত হবে 'বাংলাদেশ ডিসাইডস: দ্য ইয়ুথ স্পিকস'-২০২৩ এর সমাপনী পর্ব।
আরও পড়ুন: 'মুজিব: দ্য মেকিং অব এ নেশন' ঐতিহাসিক দলিল: গওহর রিজভী
১ বছর আগে