পর দীর্ঘদিন পদোন্নতি-বঞ্চিত থাকার পর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এবার নড়েচড়ে বসেছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের পদোন্নতি দিতে হবে।
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে বুধবার (৭ আগস্ট) পদোন্নতি-বঞ্চিত বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভিড় জমান। এর আগে, মঙ্গলবারও তারা সচিবালয়ে এসে ভিড় জমান, বৈঠক করেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে প্রশাসনে পদোন্নতি-বঞ্চিত হয়েছেন ভিন্ন মতের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এমন কর্মকর্তাও আছেন যিনি গত দেড় দশকে একটি পদোন্নতিও পাননি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বঞ্চিত এসব কর্মকর্তা সামনে আসতে শুরু করেছেন।
বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তাদের বৈঠক
মঙ্গল ও বুধবার সচিবালয়ে বৈঠক করেন বঞ্চিত এসব কর্মকর্তা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পাঠাগারে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অবসরে যাওয়া বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তা এবং প্রশাসনে বর্তমানে কর্মরত পদোন্নতি-বঞ্চিত অন্তত ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
সচিবালয়ে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কমর্চারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দীর্ঘদিন তারা নানাভাবে বঞ্চিত রয়েছেন। বিএনপিকে সমর্থন করাই ছিল তাদের অপরাধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, সর্বশেষ সরকার গঠনের পর অতিরিক্ত সচিবদের পদোন্নতি দেয় সরকার। অথচ আমরা যারা বিএনপি করি, তাদের যোগ্যতা থাকলেও পদোন্নতি দেয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে সচিবালয়ে অচলাবস্থা
আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিবসহ যাদের পদোন্নতি দেয়া হয়, অথচ যাদের বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টতা আছে তাদের কোনো পদোন্নতি দেয়া হয়নি।
এরকম আরও কয়েকজনের সঙ্গে কখা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই বিএনপি-জামায়াত চিহ্নিত করে ঢালাওভাবে উচ্চপদের দায়িত্ব থেকে সবাইকে বাদ দিয়েছে, অনেককে ওএসডি করেছে এবং উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিবসহ কোনো পদেই পদন্নোতি দেয়নি। অনেক কর্মীকে উপসচিব ও যুগ্মসচিব থেকেই অবসরে যেতে হয়েছে। এছাড়া অনেক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গল ও বুধবার দুদিন সরেজমিনে সচিবালয়ে গিয়ে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা পদ হারিয়েছেন এবং পদোন্নতি-বঞ্চিত হয়েছেন, সেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ে ভিড় জমিয়েছেন। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ নানা জায়গায় ভিড় জমাচ্ছেন, নানা জায়গায় তারা বৈঠকও করছেন।
বুধবার সকাল ৯ টায় নির্ধারিত সময়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিনও ফটকে পুলিশের কাউকে দেখা যায়নি। সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে, মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। কক্ষের সামনে থেকে নেম-প্লেটগুলোও সরানো হয়।
সেদিন সকাল থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে সচিবালয়ে। আওয়ামী লীগপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বর্তমানে অফিসে আসছেন না বলে জানা গেছে। আর এই সময়ে পুনরায় সংগঠিত হচ্ছেন বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকে সচিবালয়ে কর্মচারীরা আসার পর বেলা ১২টার দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পাঠাগারে একত্রিত হন পদোন্নতি-বঞ্চিতরা। এ মন্ত্রণালয়ের পদোন্নতি-বঞ্চিত প্রায় একশ কর্মচারী একত্রিত হয়ে জরুরি আলোচনা করেন, তৈরি করেন বঞ্চিতদের নামের তালিকা। পরে এ তালিকা নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) রিপন চাকমার দপ্তরে যান তারা। তবে তাকে না পেয়ে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগান দেন তারা। পরবর্তীতে তারা আবার আলোচনায় বসেন।
এ মন্ত্রণালয়ের পদোন্নতি-বঞ্চিত কর্মচারীদের সভাপতি এ বি এম আলামিন ইউএনবিকে বলেন, আমরা চাই আজকের মধ্যেই আমাদের পদোন্নতি দিতে হবে। আওয়ামী সরকারের আমলে অনেকে আমাদের পরে যোগদান করেও তারা আমাদের আগে পদোন্নতি পেয়েছে। অনেকেই পরে যোগদান করে জ্যেষ্ঠতার তালিকায় স্থান পেয়ে গেছে। এতদিন আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে।