বিশেষ-সংবাদ
খুলনায় লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম, তদারকির ঘাটতির অভিযোগ
রমজানে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দুই সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করে ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করেছে, যার প্রভাব ইতোমধ্যে খুলনার বাজারে পড়তে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগের ৩০-৩৫ টাকার পেঁয়াজ এখন খুলনার পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে। নগরীর পাইকারি বাজার ঘুরে সেই পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০ টাকায়। শনিবার ( ১৯ এপ্রিল) দিনজুড়ে নগরীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। তদারকির ঘাটতিতে এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে অভিযোগ ভোক্তাদের।
হঠাৎ করে পেঁয়াজের বাড়তি দামের কারণ হিসাবে জানা গেছে, বাজারে সরবরাহের জন্য কৃষকের কাছ থেকে যারা সরাসরি পেঁয়াজ কেনেন, তারা সেই পেঁয়াজ বাজারে না ছেড়ে অবৈধভাবে মজুত শুরু করেছেন। ওই চক্রটি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের অজুহাত সামনে এনে বাজারে অস্থিরতার পাঁয়তারা করছে। এমন অজুহাতে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজের অবৈধ মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
খুলনার বাজারে পেঁয়াজের এমন দামের পরিবর্তনে ক্রেতা সাধারণ দিশেহারা এবং সামনে আরও দাম বৃদ্ধির ব্যাপারেও শঙ্কিত। পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ ক্রেতারা। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও সামনে আরও দাম বাড়তে পারে এমন শঙ্কায় অধিকাংশ ভোক্তারা বাড়িতে পেঁয়াজ মজুত করছেন। যে কারণে স্বাভাবিক কেনাবেচার তুলনায় বর্তমানে নগরীর বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা বেশ বেড়েছে। এমন বাস্তবতায় পেঁয়াজের বাজার রমজানের মতো সহনীয় রাখতে সাধারণ ভোক্তারা সংশ্লিষ্টদের প্রতি অবৈধ মজুতকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত বাজার তদারকির দাবি জানিয়েছেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা সূত্র থেকে জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম কারা বাড়িয়েছে, তা চিহ্নিত করে তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
আরও পড়ুন: মোংলা-চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে চালু হচ্ছে কনটেইনারবাহী জাহাজ চলাচল
শনিবার (১৯ এপ্রিল) খুলনা নগরীর পাইকারী পেঁয়াজের বাজার ঘুরে জানা গেছে, বর্তমানে খুলনায় ঝিনাইদহের শৈলকূপা, লাঙ্গলবাঁধ, ফরিদপুর রাজবাড়ীর পানশা, কুষ্টিয়ার কুমারখালি, পানথি, চৌরঙ্গী, রাশগ্রাম, শ্মশান, চাঁকমোহড়া, হাজিরহাটসহ বিভিন্ন হাট ও মোকাম থেতে বাজারে সরবরাহের জন্য কৃষকের কাছ থেকে যারা সরাসরি পেঁয়াজ কেনেন, তারা সেই পেঁয়াজ বাজারে না ছেড়ে অবৈধভাবে মজুত শুরু করেছেন। পাশাপাশি বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহের জন্য পাইকাররা পেঁয়াজের যে দাম বলছেন, তারা (মজুতকারী) কয়েক মাস পর বাড়তি দামে ওই পেঁয়াজ বিক্রির হিসাব ধরে বাড়তি দামে কিনছেন। যে কারণে মোকামে বা হাটে পেঁয়াজের দামে বর্তমানে ঊর্ধ্বগতি। তারা (ব্যাপারীরা) বলছেন, যদি পেঁয়াজের অবৈধ মজুত বন্ধ করা যায়, তবে দাম আগের মতোই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বর্তমানে মোকামে প্রতি মন পেঁয়াজ কেনা লাগছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা দরে। সে হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে ৪৫-৪৭ টাকা। এরপর পাইকারি ঘর পর্যন্ত পৌঁচ্ছাতে খরচ রয়েছে। সামান্য লাভে তো বিক্রি করতেই হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের আগুনের কারণ না জানাতে পারলেও ১৮ সুপারিশ কমিটির
পাইকারি ব্যবসায়ীদের বিপরীতে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা নগরীর পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করি। যে সময় যে দামে কিনি, সেই সময় সেই দামে বিক্রি করি, সামান্য লাভে বিক্রি করি। খুলনা বাজারে পেঁয়াজের হঠাৎ ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, প্রতি বছর পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে থাকেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ইতোমধ্যে সিন্ডিকেট শুরু হয়ে গেছে। ঈদের আগে অর্থাৎ রমজানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ তারা কিনেছেন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে। ঈদের পর তা ৪০ টাকা এবং এখন কেনা লাগছে ৬০ টাকা দরে। শনিবার নিউ মার্কেট, ময়লাপোতা খুচরা বাজারে পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৬০ টাকা ও দৌলতপুর বাজারে ৫৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে দেখা গেছে।
দৌলতপুর পাইকারি কাঁচা বাজারে আসা ক্রেতা জাহিদ জানান, বাজারে ফের অস্থিরতা শুরু হয়েছে। রোজা ও ঈদে বাজারে এক প্রকার স্বস্তি ছিল। হঠাৎই অসাধুরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে নাজেহাল করে ফেলছে। যে পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কিনতাম, এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় কেনা লাগছে। পেঁয়াজের দামের এমন গতি দেখে মনে হচ্ছে সামনে দাম আরও বাড়বে। সরকারের উচিত হবে রোজা ও ঈদে যেভাবে বাজার তদারকি করে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল, এখনো একইভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা। এতে আমাদের মতো ভোক্তারা একটু হলেও স্বস্তিতে থাকবে।
কেসিসির সোনাডাঙ্গা পাইকারী বাজারে ব্যবসায়ী মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, বর্তমানে চাহিদার কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ভোক্তা ভাবছে সামনে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে, ওই শঙ্কায় তারা বাসা-বাড়িতে পেঁয়াজ মওজুদ শুরু করেছে। এছাড়া কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এল.সি পেঁয়াজ আসবে না, ওই শঙ্কায় পেঁয়াজ মজুত করছে। এ কারণে চাহিদা ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদার কারণে দাম বাড়তি। তবে আশা করা যাচ্ছে সামনে দাম কমে যাবে।
মের্সাস জোনাকী ভান্ডারের সত্বাধিকারী আবু সুফিয়ান জানান, বর্তমানে মোকামে পেঁয়াজের দাম বেশি। মোকামে মজুত করার জন্য কৃষকের কাছ থেকে অনেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনছে। যে কারনে ব্যাপারীদেরও বাজার ঠিক রাখতে বাড়তি দামে পেঁয়াজ কেনা লাগছে। ওই প্রভাব গোটা বাজারের উপর পড়ছে।
খুচরা বিক্রেতা হারুন মোড়ল জানান, ‘দাম বাড়ার পেছনে খুচরা বিক্রেতাদের কোনো হাত নেই। পাইকারি বাজার থেকে যে দামে কিনি, সেই অনুযায়ী বিক্রি করি। তবে যতটুকু জানি পেঁয়াজ মজুত করার কারণে দাম বাড়তি।’
নগরীর ময়লাপোতা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী কাওসার জানান, সোনাডাঙ্গা পাইকারি বাজার থেকে বাছাই করা পেঁয়াজ ৫৪ টাকা কেজি দরে কেনা লাগছে। এরপর খরচ আছে, খুচরা ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি। যে সময় যেমন কেনা, সেই সময় সময় তেমন দামে বিক্রি করি। রাখি বা মজুতের কারণে বর্তমানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
নগরীর নিউ মার্কেট বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী কালু জানান, দাম তো আর আমাদের হাতে নেই। পাইকারি বাজার হতে যে দামে কিনি, সামান্য লাভে বিক্রি করি। গতকাল সোনাডাঙ্গা পাইকারি বাজার থেকে ৫৩ টাকা দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। খরচ-খরচা বাদে কয় টাকা দরে বিক্রি করব বলেন। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি। যখন দাম কমবে, তখন কম দামে বিক্রি করব।
এ ব্যাপারে সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা জানান, সরকার রমজানে বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে করলেও সিন্ডিকেট কিন্তু এখনো সক্রিয়। তার প্রমাণ কয়েক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুন হয়েছে। সিন্ডিকেটদের যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, যদি বাজার তদারকি জোরদার না করা যায়, তবে বাজার আবার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। পেঁয়াজের সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কঠোর ভূমিকায় থাকতে হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মাদ সেলিম জানান, খুলনার নিত্যপণ্যের বাজারে আমরা নিয়মিত তদারকিসহ অভিযান অব্যাহত রেখেছি। ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘিত করলে ওই ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা হিসাবে জরিমানা আরোপসহ আদায় করা হচ্ছে। যেহেতু পেঁয়াজের মজুতকে কেন্দ্র করে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে অবগত করা হয়েছে, এ ব্যাপারে বাজার তদারকির করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কোনো ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠান সরকার প্রদত্ত নিয়মনীতির বাইরে ব্যবসা পরিচালনা করলে তাদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৯ ঘণ্টা আগে
পুঁজিবাজার: সপ্তাহজুড়ে চলল সূচক, লেনদেন ও শেয়ারের মূল্যপতন
সপ্তাহজুড়ে টানা পতনে সবদিক থেকে বড় রকমের হোঁচট খেয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পুঁজিবাজার। সূচক কমার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে লেনদেন এবং বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চার কার্যদিবসের লেনদেনে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১০৮ পয়েন্ট। ৫ হাজার ২০৫ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তাহ শুরু করে পতনে শেষমেষ সূচক ঠেকেছে ৫ হাজার ৯৭ পয়েন্টে।
সারা সপ্তাহের লেনদেনে প্রধান সূচক ২ শতাংশের বেশি কমার পাশাপাশি বাকি সূচকের রীতিমতো ভরাডুবি হয়েছে। শরীয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সূচকও (ডিএসইএস) কমেছে ২৯ পয়েন্ট। এতে করে প্রায় আড়াই শতাংশ সূচক হারিয়েছে এই খাত।
গত সপ্তাহে ভালো কোম্পানির শেয়ারও ভালো করতে পারেনি। বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ৫২ পয়েন্ট।
এক ধাক্কায় সূচক ২.৭২ শতাংশ কমে যাওয়ায় যারা ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন তারাও চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন।
ছোট ও মাঝারি কোম্পানির এসএমই সূচক কমেছে ৪.১৫ শতাংশ। এক সপ্তাহে ডিএসএমইএক্স সূচক হারিয়েছে ৪০ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে সূচকের হিসাবে ঢাকার পুঁজিবাজারের বেহাল দশা।
একই অবস্থা লেনদেনেও। আগের সপ্তাহে যেখানে গড় লেনদেন ছিল ৪৮৭ কোটি টাকা, এবার সেটি কমে নেমেছে ৩৯৯ কোটি টাকায়। এক ধাক্কায় লেনদেন কমেছে ১৮.১১ শতাংশ।
বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, যার ছাপ পড়েছে শেয়ার হাতবদলের পরিমাণের ওপরে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে যেখানে ৯৮ কোটি টাকার ওপরে শেয়ার এবং ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে, তৃতীয় সপ্তাহে এসে তা কমে হয়েছে ৫৭ কোটি।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে আবারও পতন, সূচক কমলো ১০৮ পয়েন্ট
সারা সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ৭৭টির। বিপরীতে ২৯৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হারিয়েছে দর, ২০টির দর ছিল অপরিবর্তিত।
সপ্তাহজুড়ে মাত্র দুই খাতে রিটার্ন জমা বেড়েছে। করপোরেট বন্ড আর সাধারণ বীমা খাতে রিটার্ন জমা বাড়লেও বাকি খাতগুলো রীতিমতো ধুঁকছে। বিশেষ করে মিউচুয়াল ফান্ড ও সিরামিক খাতে রিটার্ন জমা কমেছে ৬ শতাংশের বেশি।
সামগ্রিক হিসাবে ব্যাংক খাতে শেয়ারের দাম বাড়লেও পৃথক প্রাতিষ্ঠানিক হিসাবে ভালো সময় যাচ্ছে না পুঁজিবাজারের গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ২৪টিরই শেয়ারের দাম কমেছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে শেয়ারের দাম কমেছে ৪১ শতাংশ এবং লেনদেন কমেছে ৩১ শতাংশ। ২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পুরো সপ্তাহে দাম বেড়েছে মাত্র একটির, কমেছে ১৭টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সাধারণ বীমা খাতে ৮৫ শতাংশ দাম বাড়লেও জীবন বীমা খাতে দাম কমেছে ৫০ শতাংশের ওপরে। টেলিকম খাতে শেয়ারের দাম কমেছে ৩২ শতাংশ এবং আইটি খাতে কমেছে ৩৮ শতাংশ। ভালো করতে পারেনি প্রকৌশল খাতও, ১৬ শতাংশ দর হারিয়েছে এই খাত।
পতনের মধ্যেও ব্লক মার্কেটে সবচেয়ে বেশি শেয়ার বিক্রি করেছে ম্যারিকো, বিচ হ্যাচারি ও এসিআই লিমিটেড। ম্যারিকো ২৫ কোটি ২০ লাখ, বিচ হ্যাচারি ২৫ কোটি ১০ লাখ ও এসিআই ২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
সপ্তাহের শীর্ষ শেয়ারে জায়গা করে নিয়েছে দেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। ‘বি’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটি চার কার্যদিবসে ২৪ শতাংশের ওপরে রিটার্ন দিয়েছে। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২৫ টাকা যা এ সপ্তাহে বেড়ে হয়েছে ৩১ টাকা।
অন্যদিকে, ১৫ শতাংশের ওপর রিটার্ন হারিয়ে তলানিতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স। ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ১২ টাকা থেকে কমে ১০ টাকায় নেমে এসেছে।
আরও পড়ুন: পতন যেন থামছেই না পুঁজিবাজারে
পর্যদুস্ত চট্টগ্রামও
ঢাকার মতো বেহাল দশা চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাপ্তাহিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এক সপ্তাহে সেখানকার সার্বিক সূচক কমেছে ২৫০ পয়েন্ট।
লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটাগরি বাদ দিয়ে চট্টগ্রামের সিলেক্টিভ ইনডেক্স সিএসসিএক্সেও পতন হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। সপ্তাহজুড়ে ‘এ’, ‘বি’, ‘জি’ ও ‘এন’ ক্যাটাগরির শেয়ারের সূচক কমেছে ১৪৯ পয়েন্ট।
চট্টগ্রামের বেঞ্চমার্ক সূচক সিএসই-৫০ কমেছে ১৭ পয়েন্ট এবং শরীয়াভিত্তিক সূচক সিএসআই কমেছে ২১ পয়েন্ট। এছাড়া সিএসই তালিকাভুক্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানির এসএমই সূচক কমেছে ৪.৫৭ শতাংশ।
সারা সপ্তাহে ৩০১টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে দাম বেড়েছে ৬৫টির, কমেছে ২১৮টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনে শীর্ষে আছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং লিমিটেড। চার কার্যদিবসে ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৮ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বাজার মূল্য ৮৭ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬৮ টাকা।
এদিকে, পুরো সপ্তাহে শেয়ারপ্রতি ২০ টাকা দর হারিয়ে তলানিতে আছে শমরিতা হাসপাতাল। সিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। চার দিনে কোম্পানিটির ৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।
আরও পড়ুন: দোদুল্যমান সূচকে লেনদেন চলছে পুঁজিবাজারে
হতাশ বিনিয়োগকারীরা
টানা দরপতনে বাজারের ওপর হতাশ হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। অনেকেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট শূন্য করে বাজার ছাড়ছেন।
সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) বিও অ্যাকাউন্টের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঈদের ছুটির আগে শূন্য ব্যালেন্সের বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২১০, যা সর্বশেষ কার্যদিবসে বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬৭। অর্থাৎ এই কদিনে ৪ হাজার ১৫৭ জন বিনিয়োগকারী নিজেদের বিও অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা তুলে নিয়েছেন।
পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী তারেক হোসেন জানান, ‘বাজার সংস্কারে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। যাদের জরিমানা করা হয়েছে এবং কারসাজির জন্য আটক করা হয়েছে, তাদের বিচারেরও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। সব মিলিয়ে বাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।’
আরেক বিনিয়োগকারী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের কোনো দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। খারাপ কোম্পানি থেকে বেরিয়ে আসতে বাই-ব্যাক আইন চালু কথা বারবার বলা হলেও কমিশন সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করছে না। আবার যারা মার্জিন ঋণ নিয়ে সর্বহারা হয়েছেন তাদের ব্যাপারেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’
মার্জিন ঋণ প্রসঙ্গে বিনিয়োগকারী ফরিদুর রহমান বলেন, “এই ঋণের কারণে খারাপ কোম্পানির শেয়ারে ধস নামলে বাধ্য হয়ে ভালো কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দিতে হয়। এতে করে ‘জেড’ ক্যাটাগরির অনেক কোম্পানির জন্য ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির দাম কমে। সব মিলিয়ে বাজারে সৃষ্টি হয় পতনের ধারা।”
আরও পড়ুন: পতনে পর্যদুস্ত পুঁজিবাজার
আইপিও কেন আসছে না?
পুঁজিবাজারের মুখ থুবড়ে পড়ার বড় আরেকটি কারণ হিসাবে দেখা হচ্ছে ভালো কোম্পানির আগ্রহ না থাকা। চলতি বছর ভালো কিছু কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত ওই সিদ্ধান্ত আর আলোর মুখ দেখেনি।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক পদের এক কর্মকর্তা জানান, ‘চলতি বছর নতুন আর কোনো আইপিও আসার সম্ভাবনা নেই। ভালো ভালো কোম্পানিগুলো বাজারে বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘সুপারিশ অনুযায়ী কোম্পানি তালিকাভুক্তির নিয়মনীতি ঢেলে সাজাচ্ছে বিএসইসি। গেজেট আকারে নতুন আইপিও আইন আসতে আসতে সেপ্টেম্বর মাস হয়ে যাবে। নতুন আইনের আওতায় নতুন কোম্পানি আসতে আরও পাঁচ-ছয় মাস। এতে করে ২০২৬ সালের মার্চ-এপ্রিলের আগে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা বড় চ্যালেঞ্জ।’
গত বছর আগস্টে দায়িত্ব নেওয়া নতুন কমিশন এতদিনে কেন ভালো কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে পারল না, এ প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা জানান, ‘যেসব কোম্পানি ভালো মুনাফা করছিল, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তাদের প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদে পরিবর্তন এসেছে। নতুন পর্ষদের অধীনে অনেক কোম্পানি এখনও গুছিয়ে উঠতে পারেনি। এদিকে ব্যাংক ঋণের সুদহার আগের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে কোম্পানির মুনাফার ওপরে। সব মিলিয়ে কোম্পানিগুলো ভালো করতে শুরু করলে তারা নিজ থেকেই পুঁজিবাজারের দিকে ঝুঁকবে।’
আরও পড়ুন: সপ্তাহের শুরুতেই সূচকের বড় পতন দেখল পুঁজিবাজার
ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে চাইলে তাদের বড় অঙ্কের কর ছাড়ের ব্যবস্থা করা জরুরি বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা। দেশের বড় বড় কোম্পানিকে নানা ধরনের সুবিধা দিয়ে বাজারে আনতে পারলে বাজার চাঙ্গা হবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
২২ ঘণ্টা আগে
মোংলা-চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে চালু হচ্ছে কনটেইনারবাহী জাহাজ চলাচল
রপ্তানি খরচ কমাতে দেশে প্রথমবারের মতো অভ্যন্তরীণ রুটে চালু হচ্ছে কনটেইনারবাহী জাহাজ চলাচল।
চলতি এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি নাগাদ চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের মধ্যে এই রুটটি চালু হওয়ার কথা জানিয়েছে চট্টগ্রামের শিপ এজেন্ট ‘সি গ্লোরি’। বৃহত্তম খুলনাঞ্চলের পণ্য আমদানি-রপ্তানি সুবিধা বাড়াতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় এই উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে মোংলা বন্দর বার্থ অ্যান্ড শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মোংলা বন্দরে কনটেইনার পণ্য আমদানি কম হয়। যেকারণ এখানে খালি কনটেইনার পাওয়া যায় না। আবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালি কনটেইনার আনতে গেলে অতিরিক্ত ভাড়া মাশুল দিতে হয়। ফলে এখানে কনটেইনারের ভাড়া বেশি পড়ে। একারণে চট্টগ্রাম-মোংলা রুটে কনটেইনারবাহী জাহাজ চালু হলে সময় ও রপ্তানি ব্যয় কমে আসবে।’
আরও পড়ুন: ভিয়েতনাম থেকে ১২ হাজার টন চাল নিয়ে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে
মোংলা সমুদ্রবন্দরটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর। নানা সংকটে থাকার পরেও এটি এখনও একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ব্যাপক কর্মতৎপরতায় এই বন্দরের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন হয়েছে। বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন বাড়ায় শ্রমিকদেরও কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। একই সঙ্গে আয়ও বেড়েছে মোংলা বন্দরের।
তবে নাব্য সংকট ও ব্যবসায়ী সুবিধাকে কাজে লাগাতে পারছে না বন্দরটি। এছাড়া বাড়তি ব্যয়সহ নানা কারণে এই বন্দরে কনটেইনার জাহাজ যাতায়াত করে মাসে একটির কম। অথচ এই অঞ্চলের মাছ, হিমায়িত পণ্য ও পাটসহ নানা ধরনের পণ্য রপ্তানির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
এই সম্ভাবনাকে ভিন্ন আঙ্গিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে সি গ্লোরি। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম-মোংলা রুটে ছোট জাহাজে কনটেইনার পরিবহন করতে চায়। চট্টগ্রাম থেকে খালি কনটেইনার নিয়ে মোংলা বন্দর থেকে পণ্য ভর্তি করে আবার চট্টগ্রাম হয়ে বিদেশি পাঠানোই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে এই উদ্যোগে।
সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে একবার জাহাজ পরিচালনা করে সুফলও মিলেছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়ীরা।
সি গ্লোরির ব্যবস্থাপক মাইনুল হোসাইন বলেন, ‘পানগাঁওয়ের মতো চট্টগ্রাম থেকে মোংলা বন্দরে যদি খালি কনটেইনার নিয়ে যাওয়া হয়, তখন প্রসেসগুলো সহজ হবে এবং এতে ব্যবসায় উন্নতি করা সম্ভব। সম্প্রতি পরীক্ষামূলক জাহাজ চলাচলে সুফলও মিলেছে।’
তিনি জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১০০টি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দরে পরীক্ষামূলক অভ্যন্তরীণ রুট পরিবহন চালানো হয়েছে। এটি সফল হওয়ায় এখন তারা চলতি এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে নিয়মিত আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দর রুটে কনটেইনার পরিবহন শুরু করবে। এসব কনটেইনারে মাছ, হিমায়িত পণ্যসহ পাট ভর্তি করে চট্টগ্রাম হয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হবে।
আরও পড়ুন: মোংলা বন্দর একসঙ্গে ভিড়েছে চার বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ
মোংলা থেকে নিয়মিত সরাসরি ট্রানশিপমেন্ট কনটেইনার যাতায়াতে ব্যয় কম। তবে তা না হওয়ায় ব্যয় এবং সময় দুটোই বাড়ে। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম হয়ে জাহাজে কনটেইনার আনা-নেওয়ায় যে ব্যয় এবং সময় লাগবে তা অনেকটা কম।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, ড্রাফ লিমিটেশনের (জাহাজ চলাচলের জন্য নির্ধারিত পানির গভীরতা) জন্য মোংলা বন্দরে সেভাবে জাহাজ যেতে পারে না, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সেগুলো রপ্তানি হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে কনটেইনারের কোনোরকম ঘাটতি থাকে না, শিপিং এজেন্টের চাহিদা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সেসব পণ্য বিদেশে যেতে পারে।
২ দিন আগে
হজযাত্রীদের সেবায় চালু হচ্ছে হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার: থাকবে অ্যাপ
হজযাত্রীদের নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত সেবা দিতে দেশে ও মক্কা-মদিনায় ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ স্থাপন করা হচ্ছে। সেন্টার থেকে হজযাত্রীদের লাগেজ হারানো ও অসুস্থ হওয়াসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান, উদ্ভূত সমস্যার সমাধান, অভিযোগ নিষ্পত্তি, প্রশ্নের জবাব এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত একত্রে পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণে একটি অ্যাপও চালু করা হচ্ছে।
এই সেন্টার থেকে নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকায় বসে সৌদি আরবে বাংলাদেশি হাজিদের মনিটর করা হবে। প্রত্যেক হজযাত্রীকে সেই অ্যাপের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক দেখভাল করা হবে।
এছাড়া এ বছরের হজে হজযাত্রীদের নগদ টাকা বহন করতে হবে না। এজন্য একটি ডেবিট কার্ড দেওয়া হবে। একই সঙ্গে স্বল্পমূল্যে হজযাত্রীদের রোমিং (বাংলাদেশি সিম ব্যবহার করে সৌদি আরবের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার) সুবিধা দিতে যাচ্ছে সরকার। হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার থেকে হজযাত্রীদের লাগেজ ট্র্যাকিং করারও ব্যবস্থাও চালু হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হচ্ছে: ধর্ম উপদেষ্টা
এসব সেবা শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উদ্বোধন করবেন বলে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে। ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন ইউএনবিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান তিনি।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় হজ পালন নির্বিঘ্ন করতে দেশে এবং মক্কা ও মদিনায় ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর একটি অ্যাপের মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিভিন্ন সেবা প্রদান, উদ্ভূত সমস্যার সমাধান, অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত একত্রে প্রাপ্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের কাজ চলছে। এটি আশকোনা হজ অফিসে স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে মক্কা ও মদীনায় আমাদের হজ অফিসে এটি থাকবে। একটি অ্যাপ করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা সেন্টার ও অ্যাপ উদ্বোধন করবেন। এবারের হজকে সামনে রেখেই এটা করা হবে। অ্যাপটি ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হজযাত্রীদের ডেবিট কার্ড দেওয়া হবে। হজযাত্রীরা এখন থেকে টাকা রিচার্জ করে যাবেন, ওখানে গিয়ে খরচ করবেন। মোবাইল ফোন রোমিংয়ের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত আছে। হজযাত্রীদের আর সেখানে গিয়ে সিম কিনতে হবে না, তারা স্বল্পখরচে রোমিং সুবিধা পাবেন। আগামী ২০-২২ এপ্রিলের মধ্যে এ বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। আশা করি, এবার আরও নির্বিঘ্নে আমাদের হজযাত্রীরা হজ পালন করতে পারবেন।’
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ থেকে জানান, হাজযাত্রীদের যাত্রার আগে, যাত্রা চলাকালীন এবং ফিরে আসার পরেও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিবে অ্যাপটি। অ্যাপটি বাংলা ভাষায় রিয়েল-টাইম নির্দেশনা ও সহায়তা দিবে। সরকার-সমর্থিত ইসলামী ব্যাংকের বিশেষ ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশের স্থানীয় মুদ্রায় আর্থিক লেনদেন নিশ্চিত করা হবে। কারণ অনেক সময় হজযাত্রীদের নগদ অর্থ বহনে সমস্যা হয়। কেউ কেউ নগদ অর্থ হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে যান।
আরও পড়ুন: হজ পালনকারীর সর্বনিম্ন বয়স ১৫ বছর নির্ধারণ
তারা আরও জানান, লাগেজ যাতে হারিয়ে না যায়, সেজন্য লাগেজ ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। কারণ হজে গিয়ে বাংলাদেশিদের লাগেজ হারানোর ঘটনা খুবই কমন। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় হজযাত্রীদের। লাগেজে এক ধরনের ইলেকট্রিক চিপ থাকবে; এজন্য কল সেন্টারে বসে লাগেজ মনিটরিং করা যাবে।
অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইল ফোনের হজযাত্রীরা প্রত্যেক দিন ওই দিনের করণীয় ও যাতায়াতের বিস্তারিত বিবরণ জানতে পারবেন, যেদিন যে দোয়া পড়তে হবে সেটা স্মরণ করিয়ে দেবে, যেসব পবিত্র স্থানে যাবেন সেসবের ছবিসহ ইতিহাস বর্ণনা করবে।
হাজীদের মনে কোনো প্রশ্ন জাগলে কল সেন্টারে ফোন করে সে প্রশ্নের উত্তর পাবেন। শরীর খারাপ লাগলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবে কল সেন্টারের কর্মকর্তারা। হাজীদের কোনো পরামর্শ থাকলে সেটা পরামর্শ পৃষ্ঠায় লিখে দিতে পারবেন। ভ্রমণের দৈনন্দিন ঝামেলা যেন হজের মূল লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য সব ব্যবস্থা অ্যাপে থাকবে বলেও জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি মাধ্যমে ৫ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি মাধ্যমে এজেন্সির মাধ্যমে ৮৭ হাজার ১০০ জন হজ পালন করবেন। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়ে শেষ হয় ২৬ ডিসেম্বর। হজযাত্রীদের ভিসা ইস্যু শুরু হয়েছে ১৯ ফেব্রুয়ারি। হজ ফ্লাইট শুরু হবে ২৯ এপ্রিল। এবার হজ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে ৯৪১টি হজ এজেন্সি।
চলতি বছর সরকারি মাধ্যমে হজ পালনে খরচ সাধারণ প্যাকেজ-১ এ ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং সাধারণ প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা ধরা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি মাধ্যমে হজ পালনে সাধারণ প্যাকেজে সর্বনিম্ন ব্যয় হচ্ছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা।
আরও পড়ুন: ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এবার হজে বাংলাদেশ থেকে ৮৭ হাজার ১০০ জন হজযাত্রী হজ পালন করবেন। আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে
২ দিন আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেগুনে রঙের ধান চাষে সাড়া ফেলেন কৃষক রবিউল
বেগুনি রঙের ধান আবাদ করে সাড়া ফেলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পিড়াসন এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম(৬২)। শুরুতে নতুন ফসল আবাদে মনে কিছুটা সংশয় ছিল তার। এখন জমিতে ফসল দেখে সেই সংশয় কেটে চোখে-মুখে আশার আলো ফুটেছে। এরআগে জেলাটিতে এই ধান আবাদ আর কেউ করেননি।
ইউটিউবে বেগুনি রঙের ধান চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন রবিউল। এরপর অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ৩০০ টাকা দরে দুই কেজি বীজ সংগ্রহ করে বাড়ির কাছেই তার নিজের ১২ কাঠা জমিতে চাষ করেছেন।
প্রচলিত ধান গাছের পাতার রঙ সবুজ। কিন্তু তার জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে বেগুনি রঙের ধান গাছ। বর্তমানে জমিতে এই ধান গাছে শীষ ফুটেছে। ধান গাছ ও শীষের চেহারা দেখে ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি। বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০ মন ফলন আশা করছেন রবিউল।
তিনি বলেন, ‘প্রচলিত বোরো আবাদের মতোই এর চাষ পদ্ধতি। জমিতে সেচ, সার দিতে হয়। তবে এ ধানে পোকা বা রোগ-বালাই তুলনামূলকভাবে কম।’
‘ইউটিউবে দেখে আমার এই ধান চাষ করার শখ হয়। তারপর গাইবান্ধা থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি বীজ সংগ্রহ করে আবাদ করেছি,’ বলেন এই কৃষক।
আরও পড়ুন: তিস্তার চরে আগাম জাতের তরমুজে কৃষকের বাজিমাত
‘ধানের দিকে তাকিয়ে আমার চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন অনেকে আমার জমিতে এসে ধান দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। আবার অনেকে এই ধানের বীজ কিনে নেবেন বলে আমাকে বলছেন। আমি ঠিক করেছি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করব। আমি যদি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি, তাহলে লাভবান হব বলে আশা করছি।’
এদিকে রাস্তার পাশে চারদিকে বিস্তৃত সবুজ বোরো ধান ক্ষেতের মধ্যে বেগুনি রঙের ধান গাছ দেখে অবাক হচ্ছেন পথচারীরা। একনজর দেখতে আসছেন ধান ক্ষেতে। অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এই ধান আবাদে।
সেখানে কথা হয় উপজেলার রহনপুর, দসিমোনি কাঁঠাল এলাকার মনিরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘রোজ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। ধানের গাছ যখন বড় হয়, তখন থেকে দেখে আসছি গাছের পাতার রঙ বেগুনি।’
‘এটা দেখে আমি খুবই অবাক হয়েছি। বর্তমানে ধানের শীষ বের হয়েছে। দেখে বেশ ভালো লাগছে। শীষ দেখে মনে হচ্ছে ফলনও ভালো হবে। আমি এই ধান যিনি লাগিয়েছেন রবিউল ভাই তাকে বলেছি আমি এর বীজ কিনব। আমার জমিতে আমি চাষ করব এমনটাই ইচ্ছা আছে।’
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে ভাসমান ড্রাম সেতুতে হাজারো মানুষের কষ্ট লাঘব
সেখানে কথা হয় চৌডালা উত্তর হাউস নগর এলাকার গোলাম মোস্তফার সাথে। তিনি বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় দেখতে পেলাম বেগুনি রঙের ধানের গাছ। আমি জমিতে এসে কাছ থেকে দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে গেলো। ধান গাছ তো সাধারণত সবুজ রঙের হয়। কিন্তু এটা বেগুনি রঙের। ভিন্ন প্রকৃতির। ধানের শিষও বেশ ভালো ফুটেছে। আশা করা যায়, ফলন ভালো হবে।’
সাইফুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘আমি এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করি। ধানটা দূর থেকে দেখি। কিন্তু কাছে এসে দেখা হয় না। আজকে দেখার জন্য জমিতে এলাম ‘
‘এতদিন ধানের গাছ দেখেছি সবুজ কিন্তু এখন দেখছি বেগুনি রঙের। ধানটা যদি ফলন ভালো হয়, তাহলে এর বীজ কিনে চাষ করবো।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘আমাদের দেশে বছরে তিনটি মৌসুমে ধান উৎপাদন হয় এবং এই ধানগুলোর মধ্যে কিছু স্থানীয় জাত, কিছু উচ্চফলনশীল জাত এবং কিছু হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হয়।’
‘এই ধান গাছগুলো সাধারণত সবুজ রঙের হয়। তবে এ বছরে আমাদের গোমস্তপুর উপজেলার পিড়াসন এলাকার এক কৃষক নিজ উদ্যোগে কিছু ধান বীজ সংগ্রহ করে তার জমিতে চারা রোপন করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ধান গাছের রঙ বেগুনি। এই ধান থেকে যে চাল হবে, সেটি যদি বেগুনি রঙের হয়, পুষ্টি গুণসম্পন্ন হবে। ধান লাগানোর পর থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এটি মনিটরিং করা হচ্ছে এবং কৃষককে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যদি ফলন সন্তোষজনক হয়, তাহলে পরবর্তিতে এই জেলায় এ ধানের চাষ সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
৩ দিন আগে
সুন্দরবনের আগুনের কারণ না জানাতে পারলেও ১৮ সুপারিশ কমিটির
সম্প্রতি বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে লাগা আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ না করলেও ১৮ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। তবে আগুন লাগার সম্ভাব্য সাতটি কারণ উল্লেখ করেছে কমিটি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পৃথক প্রতিবেদনে সুন্দরবনের শাপলার বিল ও টেপার বিলে আগুনে মোট ৬ দশমিক ৬৩ একর বনভূমি পুড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই দুইস্থানে আগুনে সুন্দরবনের গাছপালা পুড়ে এবং জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের আনুমানিক ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭০ টাকা ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের পক্ষ থেকে রবিবার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তবে বন অধিদপ্তরের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের পাঁচ সদস্যের কমিটি এখনও তদন্ত করছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপন চন্দ্র দাস জানান, সুন্দরবনের শাপলার বিল এবং টেপার বিলে আগুনের ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তাকে ওই দুটি কমিটির প্রধান করা হয়েছে। পৃথক দুটি স্থানে আগুনের ঘটনায় তদন্ত করে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তরে ৭ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিল করেছেন সেই কমিটির সদস্যরা।
আগুনে সুন্দরবনের শালপার বিলে ৪ দশমিক ৪৩ একর এবং টেপার বিলে ২ দশমিক ২০ একর বনভূমি পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। দুই স্থানে আগুনে সুন্দরবনের মোট গাছপালা পুড়ে এবং জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের আনুমানিক ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭০ টাকা ক্ষয়ক্ষতির কথাও উল্লেখ করা হয়। দ্বীপন চন্দ্র দাস আরও জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে তারা সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করতে না পারলেও সম্ভাব্য সাতটি কারণ চিহ্নিত করতে পেরেছেন তারা। সুন্দরবনে প্রায় প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ড ঠেকাতে তাদের পক্ষ থেকে ১৮টি সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে সুন্দরবনে আগুন ঠেকানো সম্ভব হবে বলেও অভিমত দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম জানান, সুন্দরবনের শাপলার বিল এবং টেপার বিলে আগুনের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির সদস্যরা তদন্ত শেষে পৃথক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ডাকাতদের আস্তানা থেকে অপহৃত ৬ নারীসহ ৩৩ জেলে উদ্ধার
নুরুল করিম আরও জানান, তদন্ত কমিটি সুন্দরবনে আগুন লাগার কারণ সুনিদিষ্ট করে বলতে পারেনি। আগুন লাগার সম্ভাব্য সাতটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সুন্দরবনে ভবিষ্যতে আগুন লাগা প্রতিরোধে প্রতিবেদনে স্বল্প মেয়াদি, মধ্যম মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি করণীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
পৃথক তদন্ত প্রতিবেদনে সুন্দরবনে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
তদন্ত প্রতিবেদনে শাপলার বিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪ দশমিক ৪৩ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ওই এলাকায় আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসেবে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে, ৩ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যের ১০ কুইন্টাল সুন্দরী গাছ, তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ২ হাজার কুইন্টাল বলা গাছ, ১ হাজার ৫০ টাকা মূল্যের পাঁচ কুইন্টাল গেওয়া গাছ এবং জীববৈচিত্র ও পরিবেশের আনুমানিক ক্ষতি ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকা।
এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে টেপার বিলে আগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২ দশমিক ২০ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ওই এলাকায় আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ১ হাজার কুইন্টাল বলা গাছ, ৪২০ টাকা মূল্যের দুই কুইন্টাল গেওয়া গাছ এবং জীববৈচিত্র ও পরিবেশের আনুমানিক ক্ষতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা।
৪ দিন আগে
বৈরী আবহাওয়ায় ফরিদপুরে পাট উৎপাদনে বেড়েছে ব্যয়, শঙ্কায় চাষিরা
বেড়েই চলেছে দেশের সোনালী আশ পাটের উৎপাদন ব্যয়। চাষাবাদের খরচের তুলনায় কাঙ্ক্ষিত বাজার দরও পাওয়া যাচ্ছে না। পাট চাষাবাদের ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রিমূল্যের ব্যবধান বাড়ায় ক্রমেই শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চাষিরা।
প্রতিমণ পাট গত বছরের চাষি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে প্রকারভেদে আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। যেখানে এর উৎপাদন ব্যয় আর বিক্রয়মূল্য হয়েছিল সমান সমান। ফলে বিনালাভের পাট চাষিদের মুখে ফোটেনি হাসি।
দেশের পাট উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থানে থাকা জেলা ফরিদপুর। কিন্তু চলতি মৌসুমে পাটের আবাদে সবক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন এই জেলার চাষিরা। তারা মনে করছেন, এবার পাটের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ। তাই পাট উৎপাদন খরচের ঊর্ধ্বগতির লাগাম ট্রেনে ধরতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা চায় তারা।
কৃষিপ্রধান জেলা ফরিদপুরের সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালামারী, ভাঙ্গা উপজেলার মাঠ থেকে চলতি মৌসুমে পেঁয়াজসহ অন্যান্য ফসল তুলে নেওয়ার পরই কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন পাটের বীজ বপনে।
এ মৌসুমে জেলাজুড়ে ৮৬ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কিন্তু শুকনো মৌসুমে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পানির দুষ্প্রাপ্যতাসহ পাট চাষাবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় সকল ধরনের উপকরণ ও শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদিত পাটের ন্যায্যমূল্য পাওয়া না পাওয়ার দ্বিধায় পড়েছেন কৃষকরা।
জেলার পাট উৎপাদনের শীর্ষে থাকা সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা উপজেলা বিভিন্ন ফসলি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পাটচাষিদের কেউ পাটখেতে সেচ দিয়ে ভিজাচ্ছে, কেউ বীজ বপন করছেন, কেউ বা খেত থেকে আগাছা পরিস্কারের কাজ করছেন। তবে তাদের সকলের চোখে মুখেই হতাশার ছাপ দৃশ্যমান ছিল।
এসকল মাঠের পাটচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবহাওয়ার পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে গত কয়েক বছর ধরে ক্রমশ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে। সংকট এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, অনেক মেশিনে পানিই উঠছে না। এসব কারণে জমিতে সেচ খরচ বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। একই সঙ্গে সার ও ওষুধসহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি দৈনন্দিন শ্রমিকের অতিরিক্ত মূল্য ভাবিয়ে তুলছেন কৃষকদের।
বোয়লামারীর দাদুড়ে বিলের পাটচাষিরা জানান, ব্যয়ের সঙ্গে আয় মেলাতে না পেরে হাঁপিয়ে উঠতে হচ্ছে তাদের।
আরও পড়ুন: সুপেয় পানির সংকটে হুমকিতে ফেনীর জনস্বাস্থ্য
৫ দিন আগে
অভ্যুত্থান-পরবর্তী দেশে ‘সবার’ বৈশাখ
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি বছরের ইতি ঘটে শুরু হয়েছে নতুন একটি বছরের। জরাজীর্ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানিয়ে এসেছে ১৪৩২ সন।
হ্যাঁ, আজ পয়লা বৈশাখ, নববর্ষের প্রথম দিন। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নতুন এ বছর এসেছে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে। পুরোনো সব ক্লেশ, দ্বেষ ও হতাশাকে পেছনে ফেলে নতুন আশার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে দেশকে নতুন করে বিনির্মাণের আহ্বান নিয়ে এসেছে ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।
বৈশাখ বাঙালির জীবনে কেবল একটি নতুন বছরই নিয়ে আসে না, বাঙালির ক্রমবিস্মৃত আত্মপরিচয়কেও নতুন করে জাগিয়ে দেয়। বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণসঞ্চার করে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রতিটি কোনায় থাকা বাঙালির জীবনে। আর যার যার অবস্থান থেকে প্রত্যেকেই তা আলিঙ্গন করে নেয় সাদরে।
প্রতি বছরের মতো এবারও এসেছে বাঙালির প্রাণের বৈশাখ। আর নানা আয়োজনে তাকে বরণ করে নিচ্ছে দেশের সব জনগোষ্ঠীর মানুষ। এ বছর বর্ষবরণ উৎসবে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে সব জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় আয়োজন।
আরও পড়ুন: যেখান-সেখান দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া যাবে না: ডিএমপি কমিশনার
সকাল সোয়া ছয়টায় আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ভৈরবীতে রাগালাপ দিয়ে ছায়ানটের আয়োজনে রাজধানীর রমনা বটমূলে শুরু হয় বর্ষবরণ। নারী-পুরুষের সম্মিলনে প্রায় দেড়শ শিল্পীর সুরবাণীতে নতুন বছরকে আবাহন জানানো হচ্ছে সেখানে।
ছায়ানটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবার তাদের অনুষ্ঠানের মূল বার্তা ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। আলো, প্রকৃতি, মানুষ ও দেশপ্রেমের গান দিয়ে সাজানো হয়েছে তাদের অনুষ্ঠান।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দিকে দিকে এমন সব আয়োজনে মেতে উঠবে দেশের মানুষ। রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংস্কৃতিবান মানুষের উদ্যোগে উৎসবের আকার ধারণ করবে বর্ষবরণ।
কোথায় কী আয়োজন
যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ আনন্দ উৎসবের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩২’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে সরকারও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ সরকারি ছুটি।
মূলত চৈত্র সংক্রান্তিতে বর্ষবিদায়ের মধ্য দিয়ে এরই মধ্যে এই আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। প্রথমবারের মতো এ বছর বাঙালির পাশাপাশি দেশের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও গারোসহ অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষেরও নববর্ষ উদযাপনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক পরিসরে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন: নববর্ষ ১৪৩২: পরিবর্তন ও নতুনত্বের আবহ
সরকারের নেওয়া কর্মসূচি অনুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, মহানগর ও পৌরসভা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।
বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলার আয়োজন করবে।
তিন পার্বত্য জেলা এবং অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দলগুলোর শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের সমন্বয় করবে শিল্পকলা একাডেমি। পাশাপাশি রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো একই সঙ্গে বৈসাবি উৎসব উদযাপন করবে। এ ছাড়া নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বিদেশি মিশনগুলো।
আজ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে সব জাদুঘর ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য সেসব স্থানে প্রবেশে লাগবে না কোনো টিকিট। বর্ষবরণ উপলক্ষে দিনব্যাপী আনন্দ উৎসব চলবে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত।
সরকারের গৃহীত কর্মসূচি অনুযায়ী, বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের পরিবর্তে সংবাদপত্রগুলোতে পয়লা বৈশাখের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ফিচার প্রকাশ করা হয়েছে এবার। এ ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলসহ অন্যান্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো নববর্ষের অনুষ্ঠান সম্প্রচার ও চিত্রিত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
আরও পড়ুন: দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সব সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল, রেডিও স্টেশন এবং বাণিজ্যিক ও কমিউনিটি রেডিওতে শোভাযাত্রা সম্প্রচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
এদিকে এই উৎসব ঘিরে যেন কোনোপ্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যেও ঢাবির চারুকলা অনুষদের তৈরি ‘স্বৈরাচারের মুখাবয়ব’ মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রবিবার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান ঘিরে পুলিশ, র্যাবসহ গোয়েন্দাবাহিনী সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, শাহবাগ, রমনা, হাতিরঝিলসহ যেসব জায়গায় জনসমাগম হবে, সেখানে র্যাবের পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র্যাব সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর পাশাপাশি পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিসিটিভি ক্যামেরা, আর্চওয়ে গেট, হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম, অস্থায়ী পাবলিক টয়লেট ও অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্পসহ নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
৬ দিন আগে
সীমান্তে আটকে ৬ শতাধিক ট্রাক, আমদানির সময় শেষের আগেই চালের বাজার গরম
দেশে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বেসরকারি পর্যায়ে সরকারের শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণ চাল আমদানির সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী পরশু (১৫ এপ্রিল)।
কিন্তু ২ আগে এরই মধ্যে আমদানি করা চালের কেজিতে দাম বেড়েছে অন্তত ২ থেকে ৩ টাকা করে। ফলে বাজারে এর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে পয়লা বৈশাখের সরকারি ছুটি দিনেও সোমবার বন্দরে ভারত থেকে চালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। তবে আজ (রবিবার) বিকাল ৫টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে এ বিষয়ে অনুমতি মেলেনি।
আরও পড়ুন: ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু
বন্দরের আমদানিকারকরা জানান, শুল্কমুক্ত সুবিধায় চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। এই অবস্থায় বেশ কিছুদিন ধরে ভারত থেকে বেশি পরিমাণে চাল আমদানি করা হচ্ছে। এর আগে সরকার দুই দফায় আমদানির সময়সীমা বাড়িয়ে চলতি মাসের ১৫ তারিখ (মঙ্গলবার) পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। মেয়াদ বাড়ানো হলেও আমদানিকারকরা তাদের বরাদ্দকৃত চাল সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে এলসি জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে আমদানি করতে পারেননি। তাই তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানো গেলে বরাদ্দকৃত চালের চালান দেশে পুরোপুরি আমদানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা।
তারা আরও জানান, বেশ কিছুদিন থেকে বেশি পরিমাণে আমদানি অব্যাহত রাখা হলেও দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের হিলি ট্রাক পার্কিংয়ে ৬ শতাধিক আমদানিকৃত চালবোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে।
আজ (রবিবার) হিলি স্থলবন্দরের মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোপূর্বে ভারত থেকে যেখানে ৪০-৫০টি ভারতীয় চালবোঝাই ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশ করত, সেখানে ঈদের ছুটির পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১২০টি ট্রাক দেশে ঢুকছে।
হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমাদের দেশের কৃষকের উৎপাদিত বোরো চাল বাজারে আসতে এখনো অন্তত মাসের অধিক সময় লাগবে। এদিকে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চাল আমদানির সময়সীমা রয়েছে। আমদানির মেয়াদ শেষ হওয়ার খবরে ইতোমধ্যে বাজারে চালের দামে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে; অনেক চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি জানান, স্বর্ণা ৫ জাতের চালের দাম ছিল ৫২ টাকা, এখন সেই চাল ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সম্পা কাটারি জাতের চাল বিক্রি হচ্ছিল ৬৭ টাকায়, এখন কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে।
এই আমদানিকারকের দাবি, বাজার আরও অস্থির হয়ে পড়তে পারে। ভারতের হিলিতে পাইপলাইনে ৬ শতাধিক চালবোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। সরকারের উচিত হবে সেগুলো দেশে প্রবেশে আমদানির মেয়াদ আরও অন্তত ১৫ দিন বাড়ানো।
হিলি বন্দরে নওগাঁ থেকে চাল কিনতে আসা পাইকার তোতা কুমার দাস বলেন, ‘২/৩ দিন আগে ৬৭ টাকা কেজি দরে ১২০ টন সম্পা কাটারি জাতের চাল কিনেছি। অথচ গত শনিবার তা ৬৯ টাকা দরে কিনতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতে দাম বাড়েনি, কিন্ত দেশে কেন দাম বেড়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না।’
হিলি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী স্বপন কুমার পাল জানান, ভারত থেকে আমদানি করা স্বর্ণা ৫ জাতের চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকা, সম্পা কাটারি জাতের চাল ৩ টাকা বেড়ে ৭১ টাকা, মিনিকেট ৫ টাকা বেড়ে ৭৪ টাকা, গুটি জাতের চাল ৪ টাকা বেড়ে ৫৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আটদিন পর আমদানি-রপ্তানি শুরু হিলি স্থলবন্দরে
হিলি স্থলবন্দর রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) মো. শফিউল বলেন, ‘এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে নন-বাসমতি দুই ধরনের চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। গত ১১ নভেম্বর থেকে এই শনিবার (১২ এপ্রিল) পর্যন্ত ৪ হাজার ৯২৬টি ভারতীয় ট্রাকে মোট ২ লাখ ৮ হাজার টন নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল এবং ৯৪৮টি ট্রাকে ৪০ হাজার টন নন-বাসমতি আতপ চাল শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাল (সোমবার) পয়লা বৈশাখের দিন সরকারি ছুটি। এদিনও ভারত থেকে চাল আমদানি করার জন্য বন্দরে আমদানিসহ কার্যক্রম চালু রাখতে আজ দুপুরে বন্দরের কাস্টমস সহকারী কমিশনারের সঙ্গে বন্দরের ব্যবসায়ী নেতারা বৈঠক করেছেন।’
৬ দিন আগে
সুপেয় পানির সংকটে হুমকিতে ফেনীর জনস্বাস্থ্য
প্রচণ্ড তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে নেমে গেছে ফেনীর ভূগর্ভস্ত পানির স্তর। ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৮৬টি নলকূপে উঠছে না পানি। এতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে কয়েকটি উপজেলায়। এসব এলাকায় প্রায় ৭০ শতাংশ টিউবওয়েলে পানি নেই। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।
জেলার কয়েকিটি উপজেলার নলকূপ, পুকুর, খাল-বিলসহ কোথাও নেই পানি। ফলে অস্বাস্থ্যকর পানি পান করে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। বৃষ্টি একমাত্র সমাধান বলে জানিয়েছেন জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী।
ফেনী জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ফেনীতে মোট ৩৬ হাজার ৮১১টি নলকূপের মধ্যে ৯ হাজার ৮৭১টি নলকূপ দীর্ঘদিন থেকে অকেজো। ২৬ হাজার ৯৪১ চালু নলকূপের মধ্যে প্রায় অর্ধেক নলকূপের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সুপেয় পানি পাওয়া যাচেছ না। ব্যাক্তিগত উদ্যোগে স্থাপিত অগভীর প্রায় দুই লক্ষাধিক নলকূপের অর্ধেকের বেশিতে সুপেয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
ফেনী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী এস এম মাহফুজুর রহমান জানান, গত বছরের আগষ্টে ফেনীর ভয়াবহ বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৪১৫টি নলকূপ। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৭ হাজার ৬০০টি নলকুপ। এসব ক্ষতিগ্রস্ত নলকূপ এখনো পুন:স্থাপন ও মেরামত করা হয়নি। যার কারণে বন্যাকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এমনিতে সুপেয় পানির সংকট রয়েছে।
সরেজমিন ফুলগাজী উপজেলায় দেখা গেছে, অগভীর (৪০-৫০ ফুট) স্বাভাবিক নলকূপে একদমই পানি উঠছে না। অকেজো উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার নলকূপ। পানির অভাব পূরণ করতে অনেকে দূর-দূরান্তে ছুটছেন। কাঙ্ক্ষিত পানি না উঠায় এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ধান উৎপাদন নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
এলাকাবাসী বলছেন, এত টাকা খরচ করে বোরো ধানের চারা রোপণ করেছেন, কিন্তু অনাবৃষ্টি আর দাবদাহে জমির মাটি ফেটে যাওয়ায় বোরো ধানের ফলন নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। এতে ওই এলাকার বাসিন্দারা দূর-দূরান্ত থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন। এতে তাদের বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তারা সরকারিভাবে প্রতিটি ওয়ার্ডে সুপেয় পানির সরবরাহ চান।
আরও পড়ুন: একসময়ের প্রমত্তা নড়াই নদী এখন শুধুই ময়লার ভাগাড়
৭ দিন আগে