ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় সব হারিয়ে ১ হাজার ৭১৮ পরিবার সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে গেছে। বন্যার প্রায় তিন মাস পরও তাদের কেউ কোনো সহযোগিতা পায়নি বলে জানা গেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম বলেন, সরকারিভাবে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ৪০০ বান্ডিল ঢেউটিন ও ১২ লাখ টাকা পেয়েছি। সেটি ১৫০ পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ইউএনডিপি, বিডিআরসিএস, আরআইসি, মাস্তুল ফাউন্ডেশন, ওয়াইপিএসএসহ কিছু সামাজিক সংগঠন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সহযোগিতা করেছে।
জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০ আগস্টের বন্যায় ফেনীতে ১ হাজার ৭১৮টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ও ৬ হাজার ৯৪১ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ৬৭৫টি, ফুলগাজী উপজেলায় ২৯৫টি, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ২৯৩টি, পরশুরাম উপজেলায় ৩৩৩টি, সোনাগাজীতে ৩৭টি, দাগনভুঞা উপজেলায় ৮৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ছাড়াও ফেনী সদর উপজেলায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২০৬টি, পরশুরামে ৩৩৩টি, ছাগলনাইয়ায় ৩১৩টি, দাগনভূঞায় আংশিক ৯৮২টি, সোনাগাজীতে ৭৪১টি ও ফুলগাজীতে ১৩৪৯টি ঘরবাড়ি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ১৫৭ পরিবারের প্রতিটি ৪ বান্ডিল করে ঢেউটিন ও নগদ সাড়ে ৬ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছে। ফুলগাজী উপজেলায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সহযোগিতায় ১০০টি ঘর মেরামত করে দিয়েছে।
ইউএনডিপির আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৩,০০০ পরিবারকে ঘর মেরামতের জন্য মোট ১০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বিতরণ কার্যক্রম চলমান।
এছাড়া বিডিআরসিএস, মাস্তুল ফাউন্ডেশন, আরআইসি এবং ওয়াইপিএসএসহ অন্যান্য সংস্থাও উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে অনুদান দিয়েছে।
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ জগতপুর গ্রামের বাসিন্দা সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক খোকন মিয়ার বসতভিটাসহ সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়েছে বন্যা। নিরুপায় হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সেচ স্কিমের ছোট্ট একটি ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকছেন তিনি।
খোকন মিয়া বলেন, ‘সবকিছু দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। এক বন্যা আমাকে পুরো নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে। কোনো কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। ছোট তিন সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছিলাম। এক মাস হয়ে গেছে কোনো কামকর্ম নেই। কী করে ঘর তুলব মাথায় আসছে না। বন্যার তিন মাস হয়ে গেল, অথচ এখন পর্যন্ত আমাদের পুনর্বাসনে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখিনি।
সোনাগাজীর চরচান্দিয়া গ্রামের আবু তাহের বলেন, পানির স্রোত সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে। জীবন নিয়ে কোনো রকমে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পেরেছি। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি এসে দেখি কিছুই অবশিষ্ট নেই। পরিবার নিয়ে এক চাচাতো ভাইয়ের বাড়ির ছাদে বসবাস করছি।
ফেনী সদর উপজেলার বিরিঞ্চি এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারী শামসুন্নাহার। বন্যায় তার ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। তিনি চারদিকে প্লাস্টিক ও উপরে ভাঙা টিন দিয়ে ঝুপড়ি তৈরি করে থাকেন।
তিনি বলেন, ঘরবাড়ি সব বন্যায় নিয়ে গেছে। নতুন ঘর করার সামর্থ্যও নেই। সরকারিভাবে যদি আর্থিক সহযোগিতা পাই, তাহলে ঘর মেরামত করতে পারব। না হয় ভাঙা ঘরেই থাকতে হবে।
ফেনীর সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ২০ হাজার বান্ডেল টিন ও নগদ ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন পুনর্বাসনে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে তাদের কাজগুলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমন্বয় করা হচ্ছে। গৃহনির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা কাজ শুরু করা হবে।