আজকের খবর - 04-10-2024
এখন দেশেই বিশ্বমানের প্রসাধনী তৈরি করছে রিমার্ক-হারল্যান
দেশে মানসম্মত কসমেটিকস পণ্য না পাওয়ায় ভোক্তারা বিদেশি পণ্যের দিকে আকৃষ্ট হওয়ার কারণে বিপুল পরিমাণে অর্থ দেশের বাইরে কোম্পানিগুলোর কাছে চলে গিয়েছে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে দেশেই এখন আন্তর্জাতিক মানের কসমেটিকস পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। দেশে নিজস্ব কারখানায় মানসম্মত পণ্য তৈরির ওপর কসমেটিকস পণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠানদের নজর দিতে হবে বলে মনে করেন স্কিন কেয়ার বিশেষজ্ঞ ও কসমেটিকস পণ্য সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও এসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ ট্যাগযুক্ত পণ্যের মান’বিষয়ক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা।
বক্তারা বলেন, দেশে দীর্ঘদিন ধরে কসমেটিকস পণ্য উৎপাদিত হলেও মানোন্নয়নে কখনোই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এতে ভোক্তাস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও তেমন কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এই সুবাদে বিপুল অংকের টাকা চলে গেছে বিদেশে।
নানা চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে এগুতে হচ্ছে উল্লেখ করে কসমেটিক পণ্য উৎপাদক ব্যবসায়ীরা জানান, দেরিতে হলেও আন্তর্জাতিক পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠান। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মিশেলে এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্যগুলো স্থানীয় বাজারে আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। নিজস্ব কারখানায় মানসম্মত পণ্য বাজারজাতকরণে এরই মধ্যে তারা সাড়াও ফেলেছে বেশ। তাদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি রিমার্ক এলএলসি ইউএসএ-এর এফিলিয়েটেড ব্র্যান্ডগুলো সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মিশেলে সর্বোৎকৃষ্ট পণ্য উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করা কোম্পানিগুলো পণ্যের চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন তৈরি, সম্প্রচার এবং মার্কেটিং খাতে বিনিয়োগ করে বাজার সম্প্রসারণে যতটা উদ্যোগী, পণ্যের মান বাড়াতে ঠিক ততটা পিছিয়ে।
কয়েকটি নতুন কোম্পানি দেশে আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেজিং সম্বলিত পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
সেমিনারে বলা হয়, ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশের ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস ইন্ট্রাস্ট্রি (এফএমসিজিআই) সেক্টরের আকার উল্লেখযোগ্য হারে বড় হয়েছে, যা একে দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পগুলোর মধ্যেও একটি করে তুলেছে। বর্তমানে এ বাজারের আকার প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার হলেও ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হয়ে উঠবে। রাজস্ব খাতে এটি প্রত্যাশিত, ২০২৭ সালের মধ্যে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১৬ শতাংশেরও বেশি।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন কোন কোম্পানি তথাকথিত ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির মতো করে বাংলাদেশের বাজার থেকে শুধু মুনাফাই লুটেছে। কিন্তু ক্রেতাস্বার্থ বিবেচনায় নেয়নি। ফলে দেশের মানুষ বিদেশে থেকে কসমেটিকস ও খাত সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলো নিয়ে আসেন। কারণ তারা মনে করেন, বিদেশি পণ্য এ দেশে উৎপাদিত পণ্যের চাইতে উন্নত।
সেমিনারে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, বাজার নিম্নমানের কসমেটিকস পণ্যে সয়লাব হলে তা মানুষের জীবনে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে। ভুয়া পণ্য ব্যবহার করে অনেকে এরই মধ্যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য পরিবারেও দিন দিন আর্থিক সংকট বাড়ছে। এজন্য দেশে বিশ্বমানের কসমেটিকস ও হোমকেয়ার পণ্য উৎপাদনের বিকল্প নেই। এতে দেশের মানুষের কর্মসংস্থানও বাড়বে। রিমার্ক-হারল্যানসহ যে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে গুণগত মান বজায় রেখে অথেনটিক পণ্য দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ভোক্তা অধিদপ্তরও তাদের পাশে থাকবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, দেশে প্রসাধনী ও ব্যক্তিগত যত্নের সামগ্রীর বার্ষিক বাজার এখন প্রায় ৯০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আশা করা হচ্ছে যে ২০২৭ এ ৮ দশমিক ১ শতাংশ হারে বাড়বে। তবে বাংলাদেশের প্রসাধনী খাত ব্যাপকভাবে আমদানির ওপর নির্ভরশীল। প্রসাধনী রাসায়নিকের ৯০ শতাংশই আমদানিনির্ভর। বিশেষত, মোট আমদানিকৃত কসমেটিক পণ্যের প্রায় ৪১ শতাংশ ভারত থেকে আসে।
এ অবস্থার পরিবর্তনে মানসম্মত দেশি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।
স্কিন কেয়ার, কসমেটিকস ও হোম কেয়ার খাতে রিমার্ক-হারল্যানের মতো দেশীয় কোম্পানি এগিয়ে আসায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পরিচালক ইসহাকুল হোসেন সুইট বলেন, এ প্রতিষ্ঠানগুলো মানসম্মত অথেনটিক পণ্য উৎপাদন করায় ক্রেতাদের মাঝে দেশি পণ্য ব্যবহারে আগ্রহও বাড়ছে।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) সহসভাপতি এম এস সিদ্দিকী মনে করেন, দেশীয় শিল্পের প্রসারে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। কারণ আমদানি নির্ভরশীলতা কমাতে দেশের কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার বিকল্প নেই। যেসব প্রতিষ্ঠান দেশে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদন করছে, তারা যেন বিশেষ নীতিসহায়তা পান, তাও নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে দেশীয় শিল্পের প্রসারে আগ্রহী হয়ে অনেকে এগিয়ে আসবেন।
সেমিনারে বিএসটিআইর উপপরিচালক মোরশেদা বেগম বলেন, পণ্যের মান নিশ্চিত হওয়ার পর যেন বাজারজাত হয় সেজন্য কাজ করছে বিএসটিআই। এছাড়াও নতুন পণ্যের বাজারজাতকরণের আগে পণ্য ও মোড়কসহ সব বিষয়ের মান নিয়ে কাজ করছি। আমরা রপ্তানিযোগ্য পণ্যের মান নিশ্চিতকরণে জোর দিচ্ছি।
সামগ্রিক উৎপাদনের ৩০ শতাংশ পণ্য বিএসটিআই মান সনদের আওতায় আনতে পেরেছে বলে জানান মোরশেদা বেগম।
চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন জানান, দীর্ঘদিন ধরে দেশে মানসম্মত পণ্য উৎপাদিত না হওয়ায় বিদেশি পণ্যের প্রতি মানুষের দুর্বলতা ছিল। এছাড়া বড় কোম্পানিগুলো দক্ষ মার্কেটিং ও সেলস পার্সনদের নিয়োগে বেশি গুরুত্ব দিলেও পণ্যের মানোন্নয়নে কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না। চটকদার বিজ্ঞাপন তৈরি, প্রচার ও পণ্য বিক্রিতেই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে। গবেষণা ও কারখানা ব্যবস্থাপনাসহ মৌলিক জায়গাগুলোয় তেমন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। এটি প্রকারান্তরে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
তিনি আরও বলেন, দেশে এখন মানসম্মত পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে, তার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহও বাড়ছে। সুতরাং দেশে উৎপাদিত গুণগত মানের পণ্যের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস যেন বাড়ে সে উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে। দেশে উৎপাদিত মানসম্মত ও অথেনটিক পণ্য ব্যবহারে মানুষের মাঝে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। মানুষ এখন দেশি পণ্য ব্যবহার করতে চায়।
এক্ষেত্রে রিমার্ক-হারল্যানসহ দেশীয় কিছু কোম্পানি এগিয়ে আসায় তাদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান ইমন।
প্রসাধনী খাতের বাণিজ্য সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ কনজিউমার গুডস খাতে বড় বাজার হলেও পণ্য বিক্রেতাদের আন্তর্জাতিক মানের বিষয়টি আমলে নিতে দেখা যায়নি। মানহীন ও ভেজাল পণ্য কিনে ক্রেতারা প্রতারিত হতেন। দীর্ঘদিন পর হলেও ভোক্তা অধিকার ভেজাল রোধে কাজ করছে। ফলে মানুষের মাঝে সচেতনতা বেড়েছে। চাহিদা তৈরি হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির পণ্যের।
বেশ কিছু কোম্পানি এখন উন্নত ফর্মুলেশন-গবেষণা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে বলে জানান তিনি।
স্কিন কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. শারমিনা হক মনে করেন, নকল ও ভেজাল পণ্য ব্যবহার করে মানুষ স্কিন ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় মানসম্পন্ন পণ্য ব্যবহার করা। রিমার্ক ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে, মানুষের জীবনমান উন্নয়নে যেসব পণ্য বাজারে আনছে, আশা করি দেশের মানুষ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এসব পণ্য ব্যবহার করে উপকৃত হবেন।
সেমিনারে ড. সাকুন মাংগুত বলেন, বাংলাদেশে পণ্য নয় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকে বেশি নজর দেওয়া উচিত। বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের আস্থা অর্জনে গবেষণায় জোর দিতে হবে।
দেশি ব্র্যান্ডগুলোকে উন্নত করে ভোক্তার আস্থা অর্জনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকার বাতাসের মান মাঝারি পর্যায়ে আছে
বাংলাদেশের জনবহুল রাজধানী শহর ঢাকার বাতাস এখন ‘মাঝারি’ পর্যায়ে রয়েছে।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকাল ৯টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ৯৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ১৩।
অন্যদিকে পাকিস্তানের লাহোর, উগান্ডার কাম্পালা ও ভিয়েতনামের হ্যানয় যথাক্রমে ২০০, ১৬৬ ও ১৫৯ একিউআই স্কোর নিয়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান দখল করেছে।
সাধারণত, একিউআই স্কোর ৫১ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকলে তাকে ‘মাঝারি’ পর্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে হলে বাতাসের মান 'সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর', ১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়।
২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' বলা হয় এবং ৩০১+ একিউআই স্কোরকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের ৫টি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে। সেগুলো হলো- বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)।
দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণে ভুগছে ঢাকা। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার বায়ু দূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) অনুসারে, বায়ু দূষণের ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বেড়ে গিয়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়।
কঙ্গোতে নৌদুর্ঘটনায় ৮৭ জনের মৃত্যু
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর কিভু হ্রদে নৌকা ডুবে অন্তত ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কিভু প্রদেশের মিনোভা শহর থেকে আসা নৌকাটি উত্তর কিভু প্রদেশের রাজধানী গোমার উপকণ্ঠে কিতুকু বন্দরের কাছে ডুবে যায়।
প্রাদেশিক সরকার জানায়, এখনও ৭৮ জন নিখোঁজ রয়েছে।
উদ্ধার হওয়া ৮৭টি মৃতদেহ গোমার জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরও নয়জনকে হাসপাতালে ভর্তি আছে।
নৌকাটিতে কতজন যাত্রী ছিল তা এখনও জানা যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ধারণক্ষমতার অধিক যাত্রী বহন করছিল এটি।
কিতুকু বন্দরের কর্মীরা জানান, অনেক বেশি ঢেউ থাকায় বন্দর থেকে প্রায় ৭০০ মিটার দূরে ডুবে যায় ফেরিটি।
বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত স্বজনদের পাওয়ার আশায় কিতুকু বন্দরে অনেককে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং ডিআরসি সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের কারণে গোমা ও মিনোভার সংযোগ সড়কগুলো কয়েক মাস ধরে বিচ্ছিন্ন। এ কারণে নৌপথের ওপর বেশি চাপ পড়তে থাকে। তীব্র বাতাস ও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে কিভু হ্রদে প্রায়ই নৌদুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
প্রশাসনিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাস হতে চললেও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বর্তমান সরকার। এরইমধ্যে কয়েকজন সচিবকে ওএসডি করা এবং কাউকে কাউকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। বাতিল হয়েছে ১১ সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। এতে কয়েকটি মন্ত্রণালয় এখন সচিব শূন্য। আবার বেশকিছু মন্ত্রণালয়ে থেকে গেছেন বিগত সময়ের সুবিধাভোগীরা।
অন্যদিকে মাঠ প্রশাসনে চরম হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষ করে ডিসি নিয়োগ নিয়ে নানা কেলেঙ্কারি; নিয়োগের পরপরই আবার বাতিল ও রদবদল; প্রত্যাহারের এক মাসের বেশি সময় পরও আট জেলায় এখনও ডিসি নিয়োগ দিতে পারেনি অন্তবর্তী সরকার।
নিয়োগের দুই দিনের মাথায় দুই সচিবের চুক্তি বাতিল:
অতিরিক্ত সচিব মতিউর রহমান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছিলেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদোন্নতির পর তাকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়।
আবার নিয়োগ দেওয়ার দুদিন পর (২ অক্টোবর) তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
ঠিক তেমনই গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) খাদ্য ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলাহী দাদ খানকে দুই বছরের চুক্তিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। পরদিন মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাতে তার এ নিয়োগ বাতিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: আ. লীগ সরকারের আমলের চুক্তিভিত্তিক সব কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল হচ্ছে
নৌ পরিবহন ও খাদ্য সচিবকে নিয়োগ দিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে বাতিল করা হলো কেন- জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান ইউএনবিকে বলেন, কী কারণ সেটি বলা যায় না। তবে প্রশাসনিক কারণে তাদের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব নিয়োগ পেয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মাসুদুল হাসান। সচিব পদে পদোন্নতির পর তাকে এই নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেনকে গত সোমবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বদলি করা হয়। ওইদিনই দুই বছরের চুক্তিতে খাদ্য সচিব নিয়োগ পান অবসরে যাওয়া বিসিএস খাদ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা ইলাহী দাদ খান। তবে তার নামে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা রয়েছে, এটা জানার পরদিনই গত মঙ্গলবার তার এ নিয়োগ বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিতকির্ত দুই কর্মকর্তার নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে কঠোর নিদেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়।
ডিসি পদে নিয়োগপ্রত্যাশী উপসচিব পদমর্যাদার ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা গত ১০ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে প্রায় হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। ওই দিন দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কে এম আলী আযমের কক্ষে হট্টগোল করেন তারা।
অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাঠ প্রশাসন সাজাতে গিয়ে ৫৯টি জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) প্রত্যাহার করা হয়। এরপর এসব জেলায় নতুন ডিসি পদায়ন নিয়ে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। তিন দফায় ৫১ জেলায় যোগ দিয়ে কাজ শুরু করেছেন নতুনরা। অভিযোগ থাকায় নিয়োগের পরদিনই বাতিল হয় ৮ জেলার নতুন ডিসির নিয়োগ। তাই ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে এসব জেলা। আবার উপসচিব পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার ক্ষোভ ও অভিযোগ আছে নতুন ডিসি নিয়োগ নিয়ে।
আরও পড়ুন: পদোন্নতির দাবিতে একট্টা হচ্ছেন সচিবালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তারা
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান ইউএনবিকে বলেন, নতুন ডিসিদের কেউ সক্ষমতা প্রমাণ করতে না পারলে প্রত্যাহার হতে পারেন। শূন্য থাকা ৮ জেলার ডিসি নিয়োগও হবে দ্রুত। রদবদল হতে পারে এডিসি ও ইউএনও পদেও।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনতে কঠোর সরকার। গতকাল থেকে শুরু হচ্ছে প্রশাসন সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমও।
জেলা প্রশাসক ডিসি নিয়োগ নিয়ে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা করায় ১৭ জন উপসচিবকে শাস্তির সুপারিশ করেছে এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি। এ ঘটনায় এক সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির প্রধান ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ। তার রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, সাক্ষী-প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।
তিনি বলেন, '১৭ জনকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তিনটি পর্যায়ে তিনি সাজেস্ট করেছেন কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আটজনের বিষয় বলা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে গুরুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। চারজনের বিষয় বলা হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি-বিধান অনুযায়ী লঘুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। আর পাঁচজনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তাদের শাস্তি তিরস্কার দেওয়া যেতে পারে। তাদের সাবধান করা, যাতে ভবিষ্যতে এটা না করে।
জেলা প্রশাসক প্রত্যাশী উপসচিবদের সমন্বয়ক নূরুল করিম ভূইয়া জানান, ৫৯ জন ডিসিকে যে পদায়ন করা হলো, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ রয়েছে। আপত্তি রয়েছে। যেহেতু বিগত সরকারের সময়ে এসব কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে সুবিধা নিয়েছেন এবং আশীর্বাদপুষ্ট হয়েছেন। তারা যে খুন-হত্যা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত, সে তথ্য আপনারা মিডিয়ার মাধ্যমেই দিয়েছেন। যেহেতু এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া সেহেতু যত দ্রুত সম্ভব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে এ দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিল করবেন বলে জনপ্রশাসন সচিব আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল প্রশাসনের সর্বস্তরে বিগত দিনের সুবিধাভোগী, ছাত্র-জনতা হত্যার সঙ্গে জড়িত, খুন, লুটপাট ও রাষ্ট্র সংস্কারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং এখনও পর্যন্ত ছাত্র জনতার এই বিপ্লবের মূল আকাঙ্ক্ষা ও চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করছেন, সেসব কর্মকর্তাদের বিদায় দিতে হবে। এটা ছিল আমাদের প্রধান দাবি।’
আরও পড়ুন: প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান: দলীয় কর্মকর্তাদের অপসারণ, অবহেলিতদের অগ্রাধিকার
ডিসি নিয়োগ নিয়ে ৩ কোটি টাকা চেক পাওয়া গেছে বলে একটি দৈনিক পত্রিকায় নিউজের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২৪ সেপ্টেম্বরই অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে চেকের সত্যতা যাচাই করে তিন দিনের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছিল।
তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘৩ কোটি টাকার চেক দিয়ে ডিসির পদায়নের খবরটি ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। পত্রিকাটি বড় ধরনের গুজব ছড়িয়েছে। ছবি দিয়ে একেবারে ভাইরাল নিউজ করেছে। এমন কিছুই ছিল না। একটা ভুয়া খবর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই ধরনের একটা খবর ছাপলে আপনাদের সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে।’
প্রশাসনে সচিব পদে আরও পরিবর্তন আসছে:
প্রশাসনে সচিব পদে আরও পরিবর্তন আসছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া বড় বড় কর্মকর্তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে রয়েছেন তাদের প্রত্যাহার ও নতুন সচিব নিয়োগ দিয়ে পদায়ন করতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় কাঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ করে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সচিব মো. নূরুল আলমসহ আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া সচিবদের প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তবে দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ সচিবদের প্রথমে ওএসডি করে পরে মামলা দায়ের এবং গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হতে পারে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
আরও পড়ুন: উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে সচিবালয়ে অচলাবস্থা