প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশই হলো সাম্প্রতিক সহিংসতা; যাতে বাংলাদেশ আবার ভিক্ষুকের দেশে পরিণত হয়।
তিনি বলেন, 'আমি মনে করি দেশকে ভিক্ষুকে পরিণত করার জন্য অর্থনীতিকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র ছিল এটি।’
সম্প্রতি দেশব্যাপী চলমান বিক্ষোভের সময় নৃশংস হামলায় আহত ব্যক্তিদের সমবেদনা জানাতে নগরীর পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
তিনি আরও বলেন, এই ভয়াবহ সহিংসতার জন্য এসব অপরাধীর বিচার করা দেশের জনগণের উপর নির্ভর করছে।
তিনি বলেন, ‘এ সংঘর্ষে এত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর জন্য দায়ী কে?'
২০০১, ২০১৩-২০১৫ এবং এরপর ২০২৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট কীভাবে আতঙ্ক ও অগ্নিসন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তার বর্ণনা দেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: কোটা সংস্কার আন্দোলন: ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ভবন পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী
সাম্প্রতিক তাণ্ডবে নিহত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্যদের লাশ ঝুলিয়ে রাখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা কোন ধরনের রাজনীতি।
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিলসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে। এর ফলে দেশব্যাপী সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস হয় এবং বেশ কয়েকজন নিহত হয়।
তিনি বলেন, 'দেশের মানুষের কাছে আমার প্রশ্ন, আমার কী দোষ ছিল? মানুষের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নে তাদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। এটা কি আমার দোষ?'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বারবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার জন্য অনুরোধ করেছেন। তাদের ইচ্ছা শীর্ষ আদালত পূরণ করবে এবং সরকারও তাদের পক্ষে রয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা না রেখে কোটা ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্ট স্থিতাবস্থা জারি করার পরও কেন কমপ্লিট শাটডাউন চলবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি বলেন, 'আমি জানি না তাদের সব দাবি আদায় করা সত্ত্বেও কেন তাদের শাটডাউন তুলে নেওয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব স্থাপনা দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি জনজীবন যাত্রাকে সহজ করতে ভূমিকা রাখছে সেসব সরকারি স্থাপনায় তাণ্ডব চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
তিনি বলেন, মেট্রোরেল স্টেশনে ভাঙচুরের কারণে শিক্ষার্থীসহ জনগণকে এখন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
যারা এই দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে তাদের প্রতিহত করতে জনগণকে ভূমিকা রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
হতাহতের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো মা সন্তানহারা হোক তা তিনি কখনই চাননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বজনদের হারানোর পর তিনি জানেন, স্বজন হারানোর বেদনা কতটা।
পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী পুনরায় বলেন, তার সরকার আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সবকিছু করবে।
তিনি বলেন, তাণ্ডবে যারা হাত-পা হারিয়েছেন সরকার তাদের কৃত্রিম হাত-পা সরবরাহ করবে, যাতে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’
পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় তিনি আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজখবর নেন।
এ সময় আহতদের নারী স্বজনদের জড়িয়ে ধরে তাদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে।
নিটোরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী শামীম উজ্জামান আক্রান্তদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানান।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
আরও পড়ুন: কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় আহতদের দেখতে নিটোর পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী