বাংলাদেশের সঙ্গে আগামী ৫০ বছরের সফরের কথা তুলে ধরে শক্তিশালী সম্পর্কের জন্য সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং-সিক।
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একে অপরের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি নবায়ন করি এবং আরও ঘনিষ্ঠ, গভীর, শক্তিশালী এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য একটি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করি।’
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে কোরিয়ার জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দুই দেশ গত ৫০ বছর ধরে নিজেদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে লালন করে আসছে এবং তিনি আশা করেন যে সবাই কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের পরবর্তী ৫০ বছরের যাত্রা শুরু করতে ঐক্যবদ্ধ হবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, গত পাঁচ দশকে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন ও জনগণের মধ্যে যাতায়াত হওয়াসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার অসাধারণ যাত্রা প্রত্যক্ষ করা গেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে উল্লেখযোগ্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শুরু হয়।
এটি একটি সুপরিচিত গল্প যে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ পোশাক শিল্প এবং কোরিয়ান কোম্পানি দাইয়ু করপোরেশনের মধ্যে অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সূচনা করেছিল।
তখন থেকে, কোরিয়ান পোশাক উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের দ্রুত বৃদ্ধিতে অসাধারণ অবদান রেখেছে, যা দেশের মোট রপ্তানির ৮৫ শতাংশেরও বেশি।
সঞ্চিত অর্থের দিক থেকে বাংলাদেশে কোরিয়ার বিনিয়োগ চতুর্থ বৃহত্তম পর্যায়ে রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে অটোমোবাইল, মোবাইল ফোন এবং ভোক্তা ইলেকট্রনিক পণ্যগুলোর মতো উৎপাদন শিল্পে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ বেড়েছে।’
এসব প্রতিষ্ঠান দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে ভালো মানের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।
কোরিয়ান বিনিয়োগের সাফল্যের গল্প হচ্ছে চট্টগ্রামে দেশের প্রথম নির্দিষ্ট বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) প্রতিষ্ঠা করা।
কেইপিজেড বর্তমানে প্রায় ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি করছে এবং ৭০ হাজার কর্মী কাজ করছে।
আরও পড়ুন: পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'আমি আশা করি, কেইপিজেড কোরিয়া-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্কের ফ্ল্যাগশিপ প্রতীক হিসেবে কাজ করা অব্যাহত রাখবে।’
কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২ দশমিক ৬ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার।
দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) নিয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ইপিএ পারস্পরিক লাভজনক উপায়ে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি করবে।
বিখ্যাত বাঙালি কবি এবং প্রথম এশীয় নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৯ সালে কোরিয়ানদের জন্য একটি কবিতা লিখেছিলেন, যেখানে তিনি কোরিয়াকে ‘প্রাচ্যের প্রদীপ’ হিসাবে অভিহিত করেছিলেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সেই কবিতা কোরিয়ার জনগণকে অনুপ্রেরণাদায়ক সাহস ও দৃঢ়তা যুগিয়েছিল। গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুপ্রেরণামূলক ও অভিন্ন মূল্যবোধের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কোরিয়া সকল ক্ষেত্রে পারস্পরিক চমৎকার সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।’
আরও পড়ুন: দক্ষিণ কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষা: ভর্তি পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা