ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা বিয়ার বলেছেন, টেকসই ভবিষ্যতের পথচিহ্ন পেয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বর্তমান সময়টি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, দেশের তরুণ-তরুণীদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচনে এই সময়টি তাৎপর্যপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার পরিদর্শন শেষে তিনি ইউএনবিকে এসব কথা বলেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার উপস্থিত ছিলেন।
বিয়ার বলেন, ‘আমাদের (অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে) দারুণ আলোচনা হয়েছে এবং আমি নিশ্চিত যে (সরকারের) সংস্কার কার্মকাণ্ড সঠিকভাবে এগোচ্ছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলো বাস্তবায়নে তারা যদি সফল হয়, তবে পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় আবারও ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
ইতোমধ্যে এ ধরনের পরিবর্তন দেখেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমার মনে হয়, (বাংলাদেশ) এখন সত্যিই কাঠামোগত ও সংগঠিত পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে। এই সংস্কার স্থায়ী করতে কাঠামোগতভাবে এগিয়ে যাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা না হলে বিষয়টি বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ইআইবি ভাইস প্রেসিডেন্ট। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়নে সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।
আরও পড়ুন: আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সংস্কার কার্যক্রমকে সমর্থন করি: ইআইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট
ড. ইউনূসকে তিনি বলেন, ‘আমরা খুব চ্যালেঞ্জিং সময়ে (বাংলাদেশে) এসেছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং তাদের সংস্কার এজেন্ডাকে আমরা সমর্থন করি।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিয়ার জানান, বাংলাদেশের উন্নত ভবিষ্যত নির্মাণে এখানকার মানুষের এই নির্বাচনকে (অন্তর্বর্তী সরকার) তারা সত্যিই সমর্থন করতে চান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেবল কাজ করছে না, (তাদের কাজের) ফলাফলও আছে। তবে এটি দৃশ্যমান করাও গুরুত্বপূর্ণ।’
বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সহযোগিতা, সুষ্ঠু অবকাঠামো খাত— বিশেষ করে টেকসই জ্বালানি ও পানি সরবরাহ খাতে বিনিয়োগ এবং কীভাবে বাংলাদেশের প্রকৃতি সংরক্ষণ করা যায় তার সম্ভাবনা নিয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি।
বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে বিয়ার বলেন, ‘প্রকল্পটি (গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার) ২৫ থেকে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলবে এবং এটি মানুষের জীবনযাত্রায় এমন পরিবর্তন আনবে যা পরবর্তীতে আর পেছনের দিকে যাবে না। আমরা সেটিই করার চেষ্টা করছি।’
‘আমরা এখানে বিনিয়োগ করেছি, কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের শক্তিশালী অংশীদারত্ব রয়েছে। পরিষ্কার পানীয় জলের ব্যবস্থা (দেশের) জনসংখ্যার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত ঢাকা শহরে যেভাবে এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমরা (বাংলাদেশের) জনগণকে সাহায্য করতে চাই।’
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আশ্বাস দিয়ে তিনি জানান, ইআইবির দেওয়া (সহায়তার) প্রতিশ্রুতি দ্বিগুণও করা হতে পারে। এমনকি, ২০২৫ সালেই এর পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি ইউরোতে উন্নীত হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘কোন খাতগুলো অগ্রাধিকার পাবে, আমরা শুধু তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তবে এর অন্তর্নিহিত বিষয় হচ্ছে অবকাঠামো নিয়ে ধারণা পরিষ্কার করা।’
২০০০ সালে প্রথম ঋণচুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে সহযোগিতা শুরু করে ইআইবি। তারপর থেকে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তাদের এ সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ভারত ও চীনের পর প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা বাংলাদেশ।
জ্বালানি, পানি, পরিবহন ও স্বাস্থ্যসহ বহুমুখী খাতে বাংলাদেশকে ঋণ সহযোগিতা দিয়েছে ইআইবি। বর্তমানে ছয়টি পৃথক খাতে প্রতিষ্ঠানটি থেকে নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি ইউরো।
বিয়ার বলেন, ‘পরিবার ও উদ্যোক্তাদের জন্যেও এসব ঋণ সমৃদ্ধি আনবে এবং এটিই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এর আর্থিক শাখা— ইআইবির উদ্দেশ্য।’
‘পানিই জীবন এবং এটি যখন শক্তি সরবরাহ ও টেকসই গতিশীল উন্নয়নের সঙ্গে একত্রিত হয়, তার মানে, আপনার কাছে তখন সর্বোত্তম ভিত্তি রয়েছে।’
সরকারের সংস্কার কর্মকাণ্ডে তরুণদের সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট বিয়ার।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দয়া করে সম্পৃক্ত থাকুন, কারণ বাংলাদেশের আপনাদের শক্তি ও সৃজনশীলতা প্রয়োজন এবং এই দেশকে আপনারাই ভবিষ্যতের পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবেন।’
বাংলাদেশ সফর শেষে ভারতে যাওয়ার কথা রয়েছে ইআইবি ভাইস প্রেসিডেন্টের। সফর শেষ করার আগে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছাশক্তিই আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।’