অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কাছে নিজেদের সাময়িক লাভ থেকে বিরত রেখে দেশের স্বার্থে তাদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন দেশ-বিদেশে বসবাসরত ৪৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক- ব্রেইনের পক্ষ থেকে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে তারা বলেন, কীভাবে সংস্কার করলে দেশের লাভ হবে, সে বিষয়ে ভূমিকা রাখার এখনই সময়।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে ‘দেশবিরোধী অপতৎপরতা’ আখ্যা দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন ৪৮ নাগরিক।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘কিছুদিন ধরে আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সাথে দেখতে পাচ্ছি যে, রাষ্ট্রের কর্মচারীরা রাষ্ট্রের কাজে মনোনিবেশ না করে বিভিন্নভাবে বাধার সৃষ্টি করছে। তাদের এই কাজ আমাদের ফ্যাসিস্ট আমলের কথাই মনে করিয়ে দেয়।’
‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রশাসন ক্যাডারদের অভূতপূর্ব ক্ষমতা ও সুবিধা দিয়েছিল। এর বিনিময়ে প্ৰশাসন ক্যাডার এবং পুলিশ সার্ভিস ছিল সেই স্বৈরাচারী সরকারের অবৈধ, অগণতান্ত্রিক পথে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রধানতম সহযোগীদের অন্যতম।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ৫ আগস্টের পর পুলিশ বাহিনী, সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব শেখ হাসিনার সরকারের দুঃশাসনের সহযোগী হিসেবে দ্বায় স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডার থেকে এরকম কোনো ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, দ্বায় স্বীকারোক্তিও আসেনি। তাই পুরো দেশ যখন সংস্কারের পক্ষে, তখন প্রশাসন ক্যাডাররা সংস্কার বন্ধ করার জন্য যেভাবে ন্যক্কারজনকভাবে চেষ্টা করছে, আমরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আমাদের ক্যাডাররা কখনোই দেশের স্বার্থে এক না হয়ে সবসময় ক্ষমতা এবং সুবিধার জন্য একাট্টা হয়ে দেশকে জিম্মি করে কাজ আদায় করে। এরাই ১৯৯৬ এর জনতার মঞ্চ, অথবা বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর অবৈধ নির্বাচনের কারিগর।
এতে আরও বলা হয়, শ্বেতপত্র অনুসারে আমাদের আমলারা দুর্নীতিতে প্রথম এবং বেগম পাড়াতে বাড়ি করাতেও তারা সবার থেকে এগিয়ে। দুঃখের কথা, এখন পর্যন্ত এই সরকার কারও বিচার না করে উপরন্তু অনেককে ‘বঞ্চিত’র ছুতোয় ভূতাপেক্ষা প্রমোশন দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। যেহেতু কোনো শাস্তির ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না, ক্যাডাররা জোট বেঁধে সরকারকে অচল করে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, যা সরাসরি সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ৩০ ধারার লঙ্ঘন।
আইন মতে, তারা সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য। আমরা এই ব্যাপারে সরকারকে সকল প্রকার ইনডেমিনিটি বাদ দিয়ে ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা মোতাবেক যথাবিহিত তদন্ত করার অনুরোধ করছি।
সম্প্রতি সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘সচিবালয়ের আগুনের মধ্যদিয়ে কারা দুর্নীতির ডকুমেন্ট নষ্ট করে ফেলছে, তা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। বৈষম্যহীন বাংলাদেশে ‘ক্যাডার’ নামক কুলীন শ্রেণি সবকিছুতেই বৈষম্য তৈরি করে। আর এজন্য জনপ্রশাসনে সংস্কারে সারা দেশের মানুষের সঙ্গে আমরা সমর্থন জ্ঞাপন করছি।’
‘জুলাই বিপ্লবের বিরুদ্ধাচরণ করা বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন এখনো নতুন বাংলাদেশে তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যেতে পারবে কিনা, এই ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট চিন্তার অবকাশ আছে।’
জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক জনপ্রশাসন ব্যবস্থা প্রয়োজন উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশ বাঁচাতে হলে আধুনিক ন্যায়নীতি-সম্পন্ন, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিতায় নিয়ন্ত্রিত জনপ্রশাসন ব্যবস্থা দরকার। আর তার জন্য সংস্কার করতেই হবে।
তাই সরকারের সঙ্গে সব ক্যাডার সার্ভিসের কাছে অনুরোধ, আপনারা নিজেদের সাময়িক প্রাপ্তির দিকে না দেখে দেশের স্বার্থে আন্দোলন প্রত্যাহার করে সংস্কারে কীভাবে দেশের লাভ হয়, সে ব্যাপারে মতামত দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের অধ্যাপক রুমি আহমেদ খান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ-উর-রহমান, কানাডার টরোন্টোভিত্তিক ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্ট ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ইমতিয়াজ মির্জা, দেশটিতে অবস্থিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী শফিকুর রহমান, ব্যবসায়ী সাদিক মাহমুদ, যুক্তরাষ্ট্রের লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর সাফায়াত আহমেদ, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট ইঞ্জিনিয়ার সুবাইল বিন আলম, যুক্তরাজ্যের প্রচার কর্মকর্তা ইহতেশাম হক, লেখক (উন্নয়ন বিভ্রাম) ও অর্থনীতিবিদ জিয়া আহসান, ভয়েস অব রিফর্মের কো-অর্ডিনেটর ও অ্যাক্টিভিস্ট ব্যবসায়ী ফাহিম মাশরুর, সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট সাদিক মাহবুব ইসলাম এবং লেখক ও অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতিবিদ রুশাদ ফরিদী।
পলিসি ওয়াচ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, অ্যাক্টিভিস্ট ও সমাজসেবক রন্টি চৌধুরী, অ্যাক্টিভিস্ট ও গবেষক ড. মো. খান সোবায়েল বিন রফিক, যুক্তরাষ্ট্রের হিউম্যান রাইটস্ অ্যাক্টিভিস্ট ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল খান আপেল, পাবলিক পলিসি প্রফেশনালের রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট দিলশানা পারুল, গ্লোবাল হেলথ পলিসি অ্যান্ড সিস্টেমস্ গবেষক তাওফিক জোয়ার্দার এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির সাস্টেইনেবল ডিজাইনার ও স্থপতি মার্জিয়া মিথিলা।
পিএইচডি অধ্যাপক ও লেখক মো. আদনান আরিফ সেলিম, কানাডার আলবার্টার ব্যাংকার কাজী তানভির আহমেদ, আলবার্টার মর্টগেজ অ্যাডভাইজার মুনতাসির মামুন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. সাইফুল হোসাইন, পাবলিক পলিসি প্রফেশনাল বাংলাদেশের আসিফ ইকবাল, যুক্তরাষ্ট্রের পিএইচডি ক্যান্ডিডেট ও গবেষক এম ফয়সাল রিয়াদ, রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখক খান মো. মনোয়ারুল ইসলাম, রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট ও এনথুজিয়াস্ট ইন ইকোনোমিক রিসার্চ বাংলাদেশের হুমায়ুন কবির, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুর্শিদ সালিন, সিডনির চিকিৎসক ডা. শাকিল আহমেদ, যুক্তরাজ্যের চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ খালেদ হাসান।
কানাডায় বসবাসরত অর্থনৈতিক বিশ্লেষক তাওকির আজিজ, যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী ইহতেশামুল হক, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত উদ্যোক্তা জিয়া হাসান সিদ্দিকি, অস্ট্রেলিয়ার ভিকটোরিয়া গর্ভমেন্টের রেল ইঞ্জিনিয়ার উল্লাস জায়েদ, মেরিন চিফ ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল ইসলাম সেলিম, অস্ট্রেলিয়ার ভার্টিভের সলিউশন ইঞ্জিনিয়ার সায়েদ সারওয়ার রশিদ, অ্যামাজন কানাডার অপারেশন ম্যানেজার শেখ মুহাম্মাদ জিলানি, নিউইয়র্কে বসবাসরত আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্ট মো. রাশিদ।
যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের হেজ ফান্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আসাদ-উল-ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ার সাবিন রহমান, সাংবাদিক সায়ান খান, অর্থনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ খান, ব্যবসায়ী রিদওয়ান আনাম, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরাল অ্যাসোসিয়েট ইসলামুল হক, চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ-আল-মাসুদ, ব্যারিস্টার অ্যাট ল’ অ্যান্ড সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মুশতাক আহমেদ, যুক্তরাজ্যের তথ্য প্রকৌশলী ও মানবাধিকারকর্মী রুপম রাজ্জাক এবং কানাডায় বসবাসরত সামাজিক উদ্যোক্তা আশরাফুল হাসান।