চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাংলাদেশের গণমাধ্যম বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বক্তব্যে কোনো হতাহতের খবর না থাকলেও কমপক্ষে দুইজন নিহতের কথা উল্লেখ করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজবের শিকার হয়েই তিনি একথা জানিয়েছেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তথ্য যাচাই না করেই তা প্রকাশ করায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন দেশের সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীরা।
তাদের দাবি, এ ধরনের কর্মকাণ্ড মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিরপেক্ষতা ও মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতিকে ক্ষুণ্ন করে।
তারা বলছেন, দুইজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু ধামাচাপা দেওয়ার মতো ঘটনা নয়। এমন কিছু ঘটে থাকলে তাদের বাবা-মা, বন্ধুবান্ধব অথবা শিক্ষকদের দ্বারা তা প্রকাশ হতো।
সোমবার (১৫ জুলাই) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠনগুলো দুই শিক্ষার্থী নিহতের দাবি করে। আর এ বিষয়টিই তারা পর্যবেক্ষণ করেছে বলে ধারণা সাংবাদিকদের।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভে মৃত্যু নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘ভিত্তিহীন দাবিতে' বাংলাদেশের হতাশা প্রকাশ
এ বিষয়ে প্রবীণ সাংবাদিক ও গবেষক অজয় দাসগুপ্ত বলেছেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ওই গুজবটির ওপর নির্ভর করেই বিবৃতি দিয়েছে, যা তাদের নিরপেক্ষতার দাবিকে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ থেকেই বোঝা যায় পরোক্ষ তথ্যের ওপর তারা কতটা নির্ভরশীল।’
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে খবরটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তা সয়লাব হয়ে যায়। এসব পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ছাত্রলীগের হাতে ওই দুজন নিহত হয়েছে।
ফারহান সাদিক নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘দয়া করে কোনো গুজব ছড়াবেন না। আমি বাসায় আছি এবং নিরাপদে আছি, আলহামদুলিল্লাহ।’
এদিকে, এসব গুজব ছড়ানোর জন্য বিএনপি-জামায়াতকে অভিযুক্ত করে তাদের ফাঁদে পা না দিতে জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ‘চট্টগ্রামের এক শিক্ষার্থী নিহত’ ও ‘ঢাবিতে চার শিক্ষার্থী হত্যা’র মতো বিভিন্ন গুজবের স্ক্রিনশট উপস্থাপন করেছে আওয়ামী লীগের ওয়েব টিম।
এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক গাজী নাসিরউদ্দিন খোকন বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে উস্কে দিতে এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গুজবের দিকে ঝুঁকেছে- মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এ ধরনের অসত্য বিবৃতি তাদের নিরপেক্ষতা ও মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতিকে আরও খাটো করে। শুধু তাই নয়, এতে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অসত্য তথ্য স্পষ্টতই তাদের নিরপেক্ষতার দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
এর আগে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সম্পর্কে সচেতন রয়েছি। বিষয়টি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, যাতে দুজন নিহত ও শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।’