বাংলাদেশে মূর্তি ভাঙচুর ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত বলেছে, ‘এ ধরনের ঘটনা ঠিক নয় এবং এগুলো ভালো নয়।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, 'দুর্গাপূজার বার্তা আনন্দের এবং এ ধরনের উপলক্ষে আমরা কেবল এখানেই নয়, অন্যান্য দেশে, বিশ্বের প্রতিটি কোণে দুর্গাপূজা উদযাপনকারী সকলকে আমাদের শুভেচ্ছা জানাতে চাই।’
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই উৎসব সবার জীবনে সমৃদ্ধি ও সুখ বয়ে আনুক বলে আমরা আশা করি।
জয়সওয়াল বলেন, ‘এটাই আমাদের কামনা এবং আমরা সবার কাছে এটাই প্রত্যাশা করি। আমি আরও বলতে চাই যে আমরা যখন সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলি, তখন এর মধ্যে দুর্গাপুজা এবং দশমী সম্পর্কেও আমাদের উদ্বেগ অন্তর্ভুক্ত থাকে।’
সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা একাধিকবার বলেছেন, এমনকি তাদের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়েও বলেছে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে হবে।
মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আশা করি যে সেখানে (বাংলাদেশে) সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের নিরাপত্তা দেবে এবং তাদের চাহিদা পূরণ করবে।’
দুর্গাপূজা উদযাপনে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে গত বুধবার একটি নির্দেশনা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে।
জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা কর্মকর্তারা এ ধরনের কমিটি গঠন করবেন।
উদযাপনকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি মোতায়েন থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন।
অভ্যন্তরীণ বিষয়
বাংলাদেশের ছয় রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ভারত হোক বা অন্য কোনো দেশ, রাষ্ট্রদূতদের ক্ষেত্রে তারা বিদেশেও রাষ্ট্রদূত পাঠান।
তিনি বলেন, ‘এটা সরকারকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপর। একইভাবে, এটি বাংলাদেশ সরকারের ওপর নির্ভর করে, তারা কাকে তাদের রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেয়। েএটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’
জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশ তাদের কিছু রাষ্ট্রদূতকে বদলি করেছে বা ফিরিয়ে এনেছে বলে তারাও কিছু প্রতিবেদন দেখেছেন এবং এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
ঢাকায় ফেরার জন্য নয়া দিল্লি, লন্ডন, ব্রাসেলস, ক্যানবেরা, লিসবন এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশের ছয় রাষ্ট্রদূত চলতি বছরের ডিসেম্বরে অবসরে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: অনির্দিষ্টকালের অপেক্ষা নয়, রোহিঙ্গা সংকটের আন্তর্জাতিক সমাধান চান ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, 'অবসর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।’
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ৬ রাষ্ট্রদূতের ৬ তারিখে অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে, তারা পোস্ট রিটায়ারমেন্ট লিভে (পিআরএল) যাবেন।
আঞ্চলিক সহযোগিতা
আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, তারা আঞ্চলিক সহযোগিতা ও আঞ্চলিক সংযোগকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।
তিনি বলেন, ‘তাই আমরা বিমসটেককে অনুপ্রেরণা দিয়েছি।’
জয়সওয়াল বলেন, 'আপনারা জানেন সার্কের বিষয়ে আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করতে চাই, কিন্তু আপনারা ভালো করেই জানেন কেন ওই খাতে বিশেষ সহযোগিতা এগোচ্ছে না।’
দেশের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, একটি নির্দিষ্ট দেশের কাজ করার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে, যা সার্ককে বাধাগ্রস্ত করছে।
জয়সওয়াল বলেন, ‘তবে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমরা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি। আপনি বিমসটেক এবং আমাদের অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পাবেন।’
সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতার শীর্ষ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, 'সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করা শুরু করার এবং পাকিস্তানের সমর্থন চাওয়ার একটি ভালো উপায় হতে পারে।’