এলাকাবাসীর অভিযোগ, কলাতিয়া ইউয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তাহের আলী প্রায় সাত বছর ধরে ধলেশ্বরী নদীত দুটি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। যে কারণে নদীর গভীরতা বেড়ে যাওয়ায় উজানের তীব্র পানির স্রোতে কলাতিয়া ইউনিয়নের খাড়াকান্দি মৌজা, ভাণ্ডার খোলা ও চামারদহসহ তিনটি মৌজার প্রায় ১৫০ একর ফসলি জমি এবং খাড়াকান্দি এলাকার ৮০টি বসত বাড়ি ও লাখির এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ৬৫টি বাড়ি ধলেশ্বরী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এর ফলে ১৪৫টি পরিবার বাড়ি-ঘর হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।
বাড়ি-ঘর হারানো এসব পরিবারের অভিযোগ, বালু উত্তোলন বন্ধ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবরে একাধিক অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে অসহায় ১৪৫টি পরিবার তাদের ভিটা-বাড়িসহ সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রায়হীন হয়ে এলাকার স্কুলের আশ্রয় নিয়ে তাদের গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
ভিটা মাটি হারানো ভুক্তভোগী মেহের চাঁন, সবুর শেখ, হারুন, ইসা মিয়া, তারা মিয়া, জহির উদ্দিন, আসর উদ্দিন, রতন, জয়লান, হেলেনা বেগম ও মিলি বেগম অভিযোগ করে বলেন, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কলাতিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তাহের আলী দুটি ড্রেজার দিয়ে বিগত সাত বছর ধরে অবৈধভাবে নদী সীমাহীন গভীর করে বালু উত্তোলনের কারণে তাদের বসত-বাড়ি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
তারা বলেন, তাহের আলী চেয়ারম্যান ধলেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ১৩০ থেকে ১৪০ ফুট নদীর গভীরতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে তিনটি মৌজা ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়েছে।
তারানগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধা শাহাব উদ্দিন বলেন, তাহের আলী সরকার দলীয় কিছু নেতাদের মদদে দুটি ড্রেজার লাগিয়ে গত সাত বছর ধরে ধলেশ্বরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় এলাকাবাসীদের নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারেনি।
উপজেলা সাবেক যুবলীগ নেতা হাজী মোস্তাক হোসেন জানান, রোহিতপুর সোনাকান্দা এলাকায় বিসিক শিল্প নগরী, ধলেশ্বরী সেতু ও আশ্রয়ন প্রকল্প ঘেঁষে তাহের আলী অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় তাদের মালিকানা কেরানীগঞ্জ জুট মিল লিমিটেডসহ অনেক শিল্প কারখানার জমি ধলেশ্বরী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
তার দাবি, প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধ করলে লাখির চর ও খাড়াকান্দি ও কলাতিয়া এলাকায় শত শত মানুষের ভিটে মাটি ধলেশ্বরী নদী গর্ভে বিলীন হতো না।
ব্যাপক বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি ভাঙনের কারণে গত মাসে ঢাকা জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম লাখির চর ও খাড়াকান্দিসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
এ সময় তিনি বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আশ্রয়হীন পরিবারদের পুনর্বাসন করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
এছাড়া গত ১৭ আগস্ট ঢাকা- ৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বিদুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমের বন্যাকবলিত ও আশ্রয়হীন পাঁচ হাজার পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, ঈদ সামগ্রীসহ নগদ অর্থ প্রদান করেন।