করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের ফলে বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাব পেশের সময় সংসদ যেন তার পুরনো পরিবেশ ফিরে পায়।
করোনার স্বাস্থ্যবিধি বলবৎ থাকলেও জাতীয় বাজেটের অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা শোনা ও দেখার সময় সংসদ সদস্যদের নিরুদ্বেগ দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি বাংলাদেশের ৫১তম বাজেট এবং তার চতুর্থ বাজেট।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে উন্নয়নের হারানো গতি ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট রেখেছেন কামাল।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। এই অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশের সমান।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে
এর আগে সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে বাজেট অনুমোদনের পর বৈধতার জন্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এতে স্বাক্ষর করেন।
তিনি বঙ্গভবন থেকে সংসদ ভবনে আসেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল সংসদ ভবনের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভবনে একসঙ্গে হেঁটে যান। এ সময় অর্থমন্ত্রীর হাতে একটি মেরুন রঙের ব্রিফকেস ছিল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব বাজারকে অস্থিতিশীল করেছে।
মার্কিন ডলারের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়া অব্যাহত থাকায় অর্থনীতিতে চাপ পড়েছে।
মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকায় অনেক দেশ মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক।
নানা চাপের মধ্যেও দেশকে মহামারি-পূর্ব উন্নয়নের ধারায় ফিরিয়ে নিতে এবারের বাজেট পরিকল্পনা তৈরি করেছেন অর্থমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: পাচার হওয়া অর্থ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ
সাধারণত বাজেট পেশের দিন সংসদ ভবনজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। কিন্তু গত দুই বছরের চিত্র ছিল ভিন্ন।
সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল এবং প্রধান ভবনে স্বল্পসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করেছেন।
এমনকি অধিবেশনের সময়ও সেই উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি দুই বছর ধরে। সর্বত্র কঠোর সতর্কতা ছিল। সংক্রমণ এড়াতে জনসমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল।
এবার দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। সংসদের প্রায় সব আসন সাংসদদের দ্বারা পূর্ণ ছিল।
তবে গত দু’বারের চেয়ে এবার অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।
গত দুই বছর ধরে সংসদের সদস্যদের তালিকা করে সংসদে স্থান দেয়া হয়।
এবার করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ সনদ পাওয়া সব সাংসদই সংসদে ছিলেন। সংসদ ভবনে ২৬০ জন সাংসদ ছিলেন।
এমপিরা অবশ্য সবাই মাস্ক পরেছিলেন। সংসদ ভবনের প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে এমপি লবিসহ সব প্রবেশপথে স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে।
সংসদ ভবনে প্রবেশ করলে প্রত্যেককেই জ্বরের জন্য তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হয়।
রাষ্ট্রপতি হামিদ গ্যালারিতে তার জন্য নির্ধারিত স্থান বসে বাজেট উপস্থাপন দেখেন। অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির উপস্থিতির কথা সংসদকে জানান স্পিকার।
৫ জুন শুরু হওয়া বাজেট অধিবেশনে প্রবেশের জন্য ‘কোভিড নেগেটিভ’ সনদ বাধ্যতামূলক।
২০২০ সালে বাজেট বক্তৃতা দিতে ৪৮ মিনিট সময় নিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। গত বছর বাজেট এক ঘণ্টারও বেশি সময় পেশ করা হলেও তিনি তা পড়েন মাত্র ১৫ মিনিট। বাকি সময় তার বাজেট প্রস্তাব পাওয়ার পয়েন্ট এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনায় উপস্থাপন করা হয়।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৫.৪ শতাংশ
এবারও তিনি স্পিকারের অনুমতি নিয়ে স্বাগত বক্তব্য দিয়ে অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনায় বাজেট পেশ করেন।
শুরুতে প্রায় পাঁচ মিনিট বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী।
শেষে তিনি দাঁড়িয়ে প্রায় দুই মিনিট কথা বলেন। দুই ঘণ্টা ১০ মিনিটের বাজেট উপস্থাপনায় সব মিলিয়ে মাত্র সাত মিনিট বক্তব্য রাখেন তিনি।
বাজেট পেশের পর অর্থমন্ত্রী অর্থ বিল-২০২২ সংসদে উত্থাপন করেন। এরপর স্পিকার ১২ জুন দুপুর ১২টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করেন।
গত দুই বছরের মতো এবারও বাজেট উপস্থাপনা দেখার জন্য কোনো অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
এর আগে বাজেট পেশের সময় কূটনীতিক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকতেন।
সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাজেট পেশের পর ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা হবে।
সম্পূরক বাজেট পাস হবে ১৩ জুন। এরপর সংসদ সদস্যরা নতুন অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলোচনা করবেন।
নতুন অর্থবছরের অর্থবিল পাস হবে ২৯ জুন। বাজেট পাস হবে ৩০ জুন এবং তা কার্যকর হবে জুলাইয়ের প্রথম দিনে।
গত দুই বছর বাজেট অধিবেশন সংক্ষিপ্ত হলেও এবার শুক্র ও শনিবার ছাড়া বাকি সব দিন সংসদ বসবে। গত বছর সংসদ অধিবেশন চলেছিল ১২ কার্যদিবস। আগের বছর ৯ কার্যদিবস এবং এটিই ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন।
শুক্রবার বিকাল ৩টায় ওসমানী মিলনায়তনে প্রথাগত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবেন অর্থমন্ত্রী।