বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে বর্তমান সংবিধান সংশোধন করা দরকার, কারণ এটি দেশের সমস্যা সমাধানের জন্য অনুকূল নয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে হাস্যকর বলেও উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না।
‘প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে তিনি (তার মনোনয়ন) এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। আমরাও এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না। এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রমাণ করে যে বিদ্যমান সংবিধান দেশের সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তাই সংবিধান সংশোধন করতে হবে,’ বলেন বিএনপি নেতা।
বিএনপি ঢাকা দক্ষিণ সিটি ইউনিটের পদযাত্রা কর্মসূচি শুরুর আগে এক ভাষণে তিনি বলেন, তাদের দল রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য এর আগে পেশ করা ২৭ দফা মেমোতে সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছিল।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে এবং একটি অংশগ্রহণমূলক বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে - যার জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন।
শুক্রবার বিএনপির নির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনসহ দলের ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য মতিঝিল থেকে নয়াবাজার পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ মহানগর শাখার নেতাকর্মীরা।
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে গোপীবাগে পদযাত্রা শুরু করেন।
বিদ্যুত-গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে দলের প্রতিবাদ, বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন এবং কোনো শর্ত ছাড়াই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতেও এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল।
মৌন পদযাত্রার মধ্য দিয়ে ফখরুল বলেন, দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পাশাপাশি তারা নগরবাসীকে জেগে ওঠা ও বর্তমান সরকারের দুঃশাসন ও দমন-পীড়ন প্রতিরোধ করার বার্তা দেবেন।
আরও পড়ুন: পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে আ.লীগ: বিএনপি
‘সরকার দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তারা দেশ ও এর প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। গত বছরের মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামিট ফর ডেমোক্রেসিতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। এটা দুঃখের বিষয়,’ বলেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মূলত একটি 'সন্ত্রাসী' দল যারা সর্বদা সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে চায়। ‘তারা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে এবং মানুষকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল। তারা আবারও আগামী নির্বাচনে জোর করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি ও দেশের জনগণ আর নির্বাচনে যাবে না।
‘প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসা বিদেশিদের উদ্দেশে বলছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে খুব ভালো নির্বাচন হবে এবং সবাই স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে। এমন মন্তব্য শুনে ঘোড়ারাও হাসতে শুরু করে,’ বলেন ফখরুল।
তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, বিএনপি ও বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। বাংলাদেশের জনগণ কখনোই এমন কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না যেখানে তারা তাদের ভোট দিতে পারবে না।
আর সময় নষ্ট না করে অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানান ফখরুল। ‘আপনাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে এবং একটি নতুন নির্বাচন কমিশন দ্বারা পরিচালিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ গ্রহণের পর সংসদ ভেঙে দিতে হবে। তা না হলে দেশের মানুষ আপনাকে রেহাই দেবে না।’
বিএনপি নেতা বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছে। ‘সরকারের নির্দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তারা (সরকার) এখন পুলিশকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা ও দমন-পীড়ন করছে।
আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে বিএনপির ১০ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদনের উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, গত ১৩ মাসে পুলিশের হাতে ৭২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, গত বছরের আগস্টে শুরু হওয়া চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশও অন্যায়ভাবে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেয় এবং ১০ বিএনপি নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যা করে।
আরও পড়ুন: পণ্যের বাজার, সরবরাহ চেইন নিয়ন্ত্রণ করে টাকা লুটপাট করছে আ.লীগ সিন্ডিকেট: বিএনপি
বিএনপি নেতা আরও অভিযোগ করেন, পুলিশ অনেক নেতাকর্মীকে বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের দমন-পীড়ন করেছে।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ ক্রমশ গরীব হচ্ছে আর ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা দুর্নীতি ও লুটপাটে লিপ্ত হয়ে ধনী হচ্ছে। ‘তারা এমনভাবে লুণ্ঠন ও চুরিতে লিপ্ত হয়েছে যে এখন পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার জন্য ব্যাংকে টাকা নেই এবং ডলারও নেই। তারা চুরির সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’
এর আগে বিএনপির ঢাকা উত্তর মহানগর শাখার নেতাকর্মীরা উত্তরার জসিমউদ্দিন রোড মোড় থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত মিছিল করেন।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ডক্টর আবদুল মঈন খান ও আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
ব্যানার, জাতীয় ও দলীয় পতাকা, ফেস্টুন ও দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতিকৃতি নিয়ে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী পৃথক দুটি কর্মসূচিতে যোগ দেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
বিএনপি ছাড়াও এলপিডি, গণফোরাম, পিপলস পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোটও বর্তমান সরকারকে হটিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুক্রবার বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে।
শনিবার একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে বিএনপির অন্যান্য মহানগর ইউনিটগুলো।
এর আগে দলটির ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর শাখার নেতাকর্মীরা তাদের ১০ দফা দাবি আদায়ে যথাক্রমে ২৮, ৩১, ৩০ ও ১ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন।
আরও পড়ুন: মতিঝিল, উত্তরায় বিএনপি ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর শাখার মিছিল