পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, সম্ভাব্য বিনিয়োগ এবং সমুদ্র তীরে বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা অনসন্ধানসহ নীল অর্থনীতিতে পর্তুগালের অভিজ্ঞতা চাইবে বাংলাদেশ।
শুক্রবার এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে পর্তুগালের বড় আকারের ও ন্যায়সঙ্গত বিনিয়োগ বিশ্বজুড়ে বর্তমান জ্বালানি সংকট থেকে অনেকাংশে রক্ষা করেছে।’
প্রতিমন্ত্রী আলম বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়নি এমন অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যে উভয় দেশে দ্বিমুখী বিনিয়োগ আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তৃতা সিরিজের (ইপিএলএস) অংশ হিসেবে ‘বাংলাদেশ-পর্তুগাল সম্পর্ক: গভীর দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সন্ধান’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে অতিথি বক্তা হিসেবে পর্তুগাল প্রজাতন্ত্রের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কো-অপারেশনের সেক্রেটারি ড. ফ্রান্সিসকো আন্দ্রে ও আলোচক হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বিআইআইএসএস’র চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন।
বাংলাদেশে কোনও পর্তুগিজ কূটনৈতিক বা কনস্যুলার মিশনের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশিরা বিশেষ করে তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ভিসার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা ড. আন্দ্রেকে আশ্বস্ত করেছি যে তার প্রশাসন অদূর ভবিষ্যতে সমস্যাটির একটি বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজতে কাজ করবে। যা প্রকৃতপক্ষে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বিশাল এক গুণগত পার্থক্য করবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলতে পর্তুগালের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশ।
২৭ সদস্যবিশিষ্ট ইউরোপিয় ইউনিয়নের অনেক প্রতিযোগী অগ্রাধিকার রয়েছে। তাই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থায় নির্ভরযোগ্য একটি অংশীদার থাকা বেশ সহায়ক হবে।
আলম বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য আশ্বস্তের বিষয় যে পর্তুগাল ২০২৯ সালের পরেও ইইউ বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার জন্য অনুকূল থাকবে। আমি নিশ্চিত যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমাদের সম্পৃক্ততাকে আরও কৌশলগত দিকে নেয়ার প্রচেষ্টাকে উপলব্ধি করতে পর্তুগাল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি অনুঘটক ভূমিকা পালন করবে।’
তিনি পর্তুগালকে মানবিক সহায়তা, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য তার কণ্ঠস্বর ও সমর্থন বজায় রাখার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ পর্তুগালকে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ এজেন্ডাকে সমর্থনসহ জলবায়ু কর্মকাণ্ডে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে আমাদের মহাসাগরগুলোকে সংরক্ষণ ও রক্ষা করার বিষয়ে পর্তুগালের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। আমরা ২০২৭-২০২৮ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য পর্তুগালের আকাঙ্ক্ষাকে যথাযথভাবে বিবেচনা করেছি।’
প্রতিমন্ত্রী দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আরও পড়ুন: ‘ঈশ্বরদী বিমানবন্দর’ সচল করতে রাশিয়ার বিনিয়োগ চান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
উভয় দেশ ২০২৪ সালে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করবে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা উপযুক্ত আয়োজনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি করতে এখন থেকে পরিকল্পনা করতে সম্মত হয়েছি।’
তিনি বলেন যে এই বছর পর্তুগালের সঙ্গে তারা যে নতুন যাত্রা ও সম্পৃক্ততা শুরু করেছে তা আগামী বছরগুলোতে এক পরিপক্ক, প্রাণবন্ত ও বহুমাত্রিক আভ্যন্তরীণ কাজের সূচনা করবে।
বক্তারা মোটামুটি ১৬ শতক থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন।
তারা এই দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সম্পর্ক তুলে ধরেন এবং নতুন উপায় খুঁজে বর্তমান অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার ওপর জোর দেন।
বক্তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সবুজায়ন, টেকসই উন্নয়ন, জনশক্তি রপ্তানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামগ্রিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্প্রসারণের ওপর জোর দেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে ভারতে গেলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৮৯ লাখ টিকা পাবে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী