বিক্ষোভকারীদের মধ্যে রয়েছেন সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল সাড়ে ৩টায় শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয় বিক্ষোভকারীরা এবং ‘ধর্ষকদের ফাঁসি চাই’, ‘ধর্ষকদের বয়কট করুন’ নিরবতা ভেঙে ফেল, শৃঙ্খলা ভেঙে ফেল’ বলে শ্লোগান দেন।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানায়, এ বছরের জানুয়ারি ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারাদেশে ২০৮টি সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ এক হাজারের মতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
সম্প্রতি সিলেট এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূ শ্লীলতাহানি ঘটনার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে শুক্রবার চট্টগ্রামে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও দ্রুত বিচারের দাবি করছেন বিক্ষোভকারীরা।
তারা ‘ধর্ষকের ক্ষমা নেই’, ‘দয়া করে আমাকে বলুন, আমি কি পরবর্তী?’ ‘ধর্ষণ অরাজনৈতিক নয়’ এবং ‘নারী পোশাকে সমস্যা না, সমস্যা আপনার চোখ’শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে এতে অংশ নেন।
হাজার হাজার বিক্ষোভকারী, বিশেষ করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, অন্যান্য সামাজিক সংগঠন, সেভ দ্য উইমেন এবং বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এসেছে।
দেশে নারী ও মেয়েদের প্রতি যৌন সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়া মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পদত্যাগেরও দাবি জানান প্রতিবাদকারীরা।
সমাবেশে ধর্ষণ ও নিপীড়ন বন্ধে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স।
দাবিগুলো হলো-
১. সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ-নারীর প্রতি সহিংসতার সাথে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধ ও বিচারে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।
২. পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সকল প্রকার যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।
৩. হাইকোর্টের নির্দেশনানুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি, বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। সিডো সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল আইন ও প্রথা বিলোপ করতে হবে।
৪. ধর্মীয়সহ সকল ধরনের সভা-সমাবেশে নারী বিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গন্য করতে হবে। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণে বিটিসিএল এর কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।
৫. তদন্তকালীন সময়ে ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সকল মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করতে হবে।
৭. ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫(৪) ধারাকে বিলোপ করতে হবে এবং মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হবে।
৮. পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যে কোনো প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছেদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে।
৯. গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গন্য করতে হবে।
এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় বলেন, আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে দাবি মেনে না নেয়া হলে তারা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ অভিমুখী ধর্ষণবিরোধী লংমার্চ করবেন।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিৎ করার দাবিতে ধর্ষণ ও নির্যাতন বিরোধী বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে বাম ধারার ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেবে বলে এ সময় জানানো হয়।
এছাড়া ১১ অক্টোবর ধর্ষণবিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ১২ অক্টোবর সাংস্কৃতিক সমাবেশ, ১৩ অক্টোবর চলচ্চিত্র উৎসব, ১৪ অক্টোবর নারী সমাবেশ ও ১৫ অক্টোবর সারা ঢাকায় ধর্ষণবিরোধী সাইকেল র্যালির কর্মসূচি ঘোষণা করেন অনিক।
এদিকে বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ড রেখে আইন সংশোধনের প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন।