বুধবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় কাউন্সিলের ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় দেয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অনিবার্য কারণে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারায় তার সচিব সম্পদ বড়ুয়া তার বক্তব্য পাঠ করেন।
দেশে স্কাউটের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের গুণগত মান বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্কাউটসের বর্তমান সদস্য ১৯ লাখ, যা জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যাপ্ত নয়। স্কাউট সদস্য সংখ্যা ২১ লাখে উন্নীত করতে বাংলাদেশ স্কাউটস ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক প্লান-২০২১’ বাস্তবায়ন করছে। তবে স্কাউটস আন্দোলনকে সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাতে এর কার্যক্রমকে আনুষ্ঠানিকতা ও সভা সেমিনারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দিতে হবে।’
স্কাউটস কার্যক্রমকে আরও দৃশ্যমান করতে সংশ্লিষ্টদের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন স্কাউটারের জীবনে স্কাউটসের সব আদর্শ ও গুণাবলীর প্রতিফলন ঘটাতে হবে, যাতে অন্যরাও তাকে দেখে স্কাউট হতে উৎসাহিত হয়। স্কাউটের সংখ্যা বাড়ানো যেমন গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্কাউটসের গুণগত মান বৃদ্ধি করা।’
আবদুল হামিদ বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য সঠিক ও যোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প নেই। তাই নেতৃত্বের বিকেন্দ্রিকরণ ও স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।
তিনি শিশু-কিশোর ও তরুণদের মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে স্কাউট আন্দোলনকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
আজকের শিশুদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তারাই দেশের মূল চালিকা শক্তি। তাই তাদের নৈতিক শিক্ষা ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা আমাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। সমাজে স্বার্থপরতা, হিংসা, লোভ ও নৈতিকতার অবক্ষয় শিশু-কিশোরদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, মাদক ও প্রযুক্তির অপব্যবহারও তরুণদের বিপথে পরিচালিত করতে ভূমিকা রাখছে।’
‘এতে অনেক সম্ভাবনাময় প্রতিভা অকালে ঝরে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে তরুণদের মুক্ত রেখে তাদের মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। স্কাউট আন্দোলন এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে,’ যোগ করেন তিনি।
আবদুল হামিদ আশা প্রকাশ করেন যে বহির্বিশ্বের স্কাউটদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশের স্কাউটরাও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আরও অবদান রাখবে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’কে আধুনিক বিজ্ঞান এবং তথ্য-প্রযুক্তির ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য শিশু-কিশোর ও যুবদের নৈতিক ও ব্যবহারিক শিক্ষার পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
রাষ্ট্রপতির মতে, দেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস যাতে স্কাউটরা জানতে পারে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারে সে জন্য স্কাউট নেতাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তার প্রত্যাশা, স্কাউট আন্দোলন আরও বেগবান হবে এবং দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান।
অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালে স্কাউট আন্দোলনে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নির্বাচিত স্কাউট নেতাদের মাঝে স্কাউটের সর্বোচ্চ পদক ‘রৌপ্য ব্যাঘ্র’ ও ‘রৌপ্য ইলিশ’ প্রদান করা হয়।