আমের জাত সংরক্ষণ ও আমকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগ মিউজিয়াম’। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে রাজার বাগান নামে পরিচিত আম বাগানটিকে ‘বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এমন উদ্যোগে খুশি স্থানীয় আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল আম। আমের ফলন ও দরের উপর নির্ভর এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতি। গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাত, ল্যাংড়া, ফজলি, আম্রপালি, আশ্বিনা, ক্ষুদি ক্ষীরসা, বৃন্দাবনী ও লক্ষ্মণভোগসহ অনেক সুস্বাদু জাতের আম উৎপাদন হয় এ জেলায়। এখানে উৎপাদিত আম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চালান হওয়ার পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে।

আমের জাত সংরক্ষণ ও আমকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় কানসাটে প্রায় ১০০ বিঘা জমির উপর থাকা রাজার বাগান নামে পরিচিত সরকারি আম বাগানটিকে ‘বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম’ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরে শেষ হবে লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়ামের নির্মাণ কাজ। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এরই মধ্যে বাগানটির সীমানা প্রাচীর ও ডাকবাংলো নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। চলছে অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। 

আম গাছের পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত আব্দুর রহিম বলেন, ছোটবেলা থেকে জেনে আসছি এই বাগানের নাম রাজার বাগান। এই বাগানের কোন পরিচর্যা হতোনা, অবহেলায় পড়ে ছিল দেখার কেউ ছিল না। কিছুদিন থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্যার এটির দেখাশোনা করছেন।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রাচীর দিয়ে বাগানটিকে ঘেরা হয়েছে। এখন বাগানের পরিচর্যা শুরু হয়েছে। আমি পরিচর্যার কাজ করছি। এখন বাগান দেখতে ভালো লাগছে, মানুষজন আসছে। শুনেছি সামনে আরও কাজ হবে। আমাদের খুব ভালো লাগছে।’

পড়ুন: গৃহহীনদের খুশি দেখতে পাওয়া আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ: শেখ হাসিনা

এলাকার আমচাষি জ্যাকি দাদ খান বলেন, অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম নামে যে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠছে এতে আমরা আম চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবো। কারণ এটি গড়ে উঠলে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ পর্যটক হিসেবে এখানে আসবে ও সেই সাথে দেশব্যাপী আমাদের আমের আরও পরিচিতি পাবে।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ও আম রপ্তানিকারক ইসমাঈল খান শামিম বলেন, বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করার জন্য জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ। আমরা যারা আমচাষি বা ব্যবসায়ী আছি প্রত্যেকেরই দীর্ঘদিনের একটা দাবি ছিল যে আমের জন্য একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। এটি প্রতিষ্ঠিত করার ফলে আমরা খুব আনন্দিত। 

তিনি বলেন, আমাদের এই এলাকার মূল ভিত্তি হচ্ছে আম। আমাদের জেলার অর্থনীতি এ আমের উপর নির্ভর। বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠার ফলে আমাদের যে ম্যাংগো ট্যুরিজুম এই সেক্টরটি আরও সমৃদ্ধ হবে।

পড়ুন: আশ্রয়ণ-২: ৫৯ বেদে পরিবারের স্থায়ী ঘর নিয়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাকিব আল রাব্বি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের জন্য বিখ্যাত। এখানে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিকভাবে কয়েকটি প্রজাতির আম চাষাবাদ করা হয়। যেগুলো সুপরিচিত তা বাদে অনেক গুটি জাতের সুস্বাদু আম এলাকায় রয়েছে। যেগুলো সংরক্ষণের অভাবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এই আমের প্রজাতি বা জাত সংরক্ষণের জন্যই মূলত বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম এর সূচনা হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় যত অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় আম রয়েছে সেসব জাতের আম এখানে সংরক্ষণ করা হবে।

তিনি বলেন, এটাকে কেন্দ্র করে ১০০ প্রজাতির আমের নামকরণ করে ম্যাংগো পিডিয়া নামে একটি প্রকাশনা জেলা প্রশাসন থেকে বের হয়েছে। এই ১০০ প্রজাতির আম যেগুলো গুটি আম হিসেবে পরিচিত। এর নামকরণ করার ফলে এর বৈশিষ্ট নিয়ে যে বই করা হয়েছে এর ফলে ওই আমগুলো পরিচিতি পাচ্ছে।

তিনি জানান, আমের মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ আম পাড়ার আগে ও পরে নষ্ট হয়। এভাবে যেন আমগুলো নষ্ট না হয় এজন্য এখানে আম পণ্যের যারা উদ্যোক্তা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

জেলা প্রশাসক একেএম গালিব খান বলেন, বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম জেলা প্রশাসনের একটি উদ্যোগ। এই উদ্যোগটি নেয়া হয়েছে মূলত এখানে আমের জামপ্লাজম এবং বিভিন্ন প্রকার চারা উৎপাদনসহ আমের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা। এটিকে কেন্দ্র করে কিছু পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এটিকে মাথায় রেখেই এই কাজটি হাতে নেয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আপনাদের সকলের সহযোগিতায় এটিকে যেন আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।

পড়ুন: ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, শঙ্কায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা