আম
ভালো ফলনেও মুখে হাসি নেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিদের
প্রধান আম উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন চলছে পাকা আমের ভরা মৌসুম। আম বাগান ও আম বাজার জুড়ে চলছে কর্মচাঞ্চল্য। গত বছরের চেয়ে এবার আমের ফলনও ভালো হয়েছে, কিন্তু তারপরও আমের দাম নিয়ে মুখে হাসি নেই আমচাষিদের। চাষিরা বলছেন, দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানগুলোতে চলছে গাছ থেকে আম সংগ্রহ করে সেই আম বাজারে পাঠানোর কাজ। আম বাগানে যেমন কর্মাঞ্চল্য বিরাজ করছে, তেমনি আম বাজারগুলোতেও চোখে পড়ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সরব উপস্থিতি।
জেলার কানসাট, ভোলাহাট ও রহনপুর আম বাজারে এখন বাহারি জাতের আমের সমারোহ। গোপালভোগ আম ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বর্তমানে খিরসাপাত, লংড়া, আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, ফজলিসহ আরও কয়েক রকমের গুটি জাতের আম মিলছে বাজারে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন আমের ব্যাপারিরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। বর্তমানে এসব আম ৬০০ থেকে ৪ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে আম নামার শুরুর দিকে বৈরী আবহাওয়া, এর পরপরই ঈদের লম্বা ছুটি, পরিবহন ও ব্যাংক বন্ধ ছিল। সেই সঙ্গে অত্যধিক গরমের কারণে এবার কয়েক জাতের আম একসঙ্গে পেকে যায়। ফলে বাজারে সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম বাড়েনি।
আরও পড়ুন: বৈচিত্র্যময় আমে সয়লাব নাটোরের হাটবাজার, দামও নাগালের মধ্যে
তবে গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে দাম কিছুটা বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। তারপরও গত বছরের তুলনায় এবার আমের দাম কম। তার ওপর এ বছর বাগান পরিচর্যায় সার, কীটনাশক বা ছত্রাকনাশকের দাম এবং সেচ ও শ্রমিকের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদনের খরচ বেড়েছে, কিন্তু সে অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন বলে জানিয়েছেন আমচাষিরা।
১৬৩ দিন আগে
বৈচিত্র্যময় আমে সয়লাব নাটোরের হাটবাজার, দামও নাগালের মধ্যে
চলছে ফল মৌসুম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ জেলা উৎকৃষ্ট আম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। তবে প্রচলিত জাতের পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় নানা জাতের আম উৎপাদনে নাটোর জেলা অন্যতম স্থান ধরে রেখেছে।
রাষ্ট্রীয় কৃষি পদক পাওয়া নাটোরের অন্যতম ফলচাষি সেলিম রেজা জানান, অবাণিজ্যিক বিভিন্ন জাতের আমের পাশাপাশি বাজারে এখন রয়েছে জনপ্রিয় গোপালভোগ বা কালুয়া, ল্যাংড়া, মোহনভোগ, লক্ষণভোগ, খিরসাপাত, রানীপছন্দ, মল্লিকাসহ নানা জাতের মৌসুমি আম। এ ছাড়াও কয়েকদিন পরই বাজারে আসবে আম্রপালি, নাগ ফজলি, সুরমা ফজলি ও মহারাজ ফজলি।
নাটোর জেলার গ্রামগঞ্জ, হাটবাজার—সবখানেই আমের ছড়াছড়ি; দামও এ বছর নাগালের মধ্যে।
আরও পড়ুন: ঈদের লম্বা ছুটিতে আম নিয়ে বিপাকে নওগাঁর চাষি-ব্যবসায়ীরা
খুচরা ব্যবসায়ী লিটন জানান, হাটবাজারগুলোতে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায়। জেলার প্রধান দুটি আম মোকাম—বড়াইগ্রাম উপজেলার আহম্মদপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলার তমালতলার আড়তগুলো এখন আমে ঠাসা।
১৬৮ দিন আগে
ঈদের লম্বা ছুটিতে আম নিয়ে বিপাকে নওগাঁর চাষি-ব্যবসায়ীরা
ঈদ উপলক্ষে ১০ দিনের টানা ছুটিতে ক্রেতার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে আমের বেচাবিক্রি। এতে করে কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। টানা ১০ দিন ব্যাংক, কুরিয়ার সার্ভিস ও পরিবহন বন্ধ থাকায় চলতি মৌসুমে আম নিয়ে বিপাকে পড়ার আশঙ্কায় দিন পার করছেন সেখানকার কারবারিরা।
সাপাহার উপজেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের টানা ১০ দিনের ছুটির মধ্যে হঠাৎ করেই অতিরিক্ত গরম পড়ছে। এর ফলে আম্রপালি জাতের আম একযোগে পাকতে শুরু করেছে। অথচ এই সময়ে ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে মানুষজন কম। ঈদের ছুটিতে সবাই রয়েছেন গ্রামে। আবার কুরিয়ার সার্ভিস এবং পরিবহন ব্যবস্থাও এখন বন্ধ। ফলে সঠিক সময়ে ক্রেতার কাছে আম পৌঁছাতে না পারলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিসের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আম্রপালি জাতের আম আগামী ১৮ জুন থেকে বাজারে আসার কথা। কিন্তু অতিরিক্ত গরম, বৈরী আবহাওয়া, গাছে আগাম মুকুল আসা-সহ নানা কারণে এ বছর আম্রপালি জাতের আম ৮-১০ দিন আগে পাকতে শুরু করেছে।
সাপাহার উপজেলার সিমু শিপলা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা খরচ করে লাভের আশায় ৪০০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের আম গাছ লাগিয়েছিলাম। এ বছর গাছে আমও ধরেছে ভালো। কিন্তু সরকারি আমের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আম নামাতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।’
তিনি জানান, এ বছর সরকারি আমের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আম নামাতে গিয়ে আম ব্যবসায়ীরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন। ঈদের টানা ১০ দিন ছুটি থাকায় ব্যাংক বন্ধ, কুরিয়ার সার্ভিস ও পরিবহন বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে আমের তেমন কোনো বেচাকেনা নেই। পচে যাওয়ার কারণে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ মণ আম ফেলে দিতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় আম সংগ্রহ শুরু, আসছে আঁটি, গুঁটি ও বোম্বাই
সাখাওয়াত হোসেনের অভিযোগ, আমের ক্যালেন্ডার প্রকাশের দিন বলা হয়েছিল, যদি কারো আম আগাম পেকে যায়, তাহলে উপজেলা কৃষি অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনুমতি নিয়ে গাছ থেকে আম পাড়া এবং বিক্রয় করা যাবে। কিন্তু গত কয়েক দিন ঈদের ছুটিতে ইউএনও এবং উপজেলা কৃষি অফিসারের কাছে আবেদন করে আম পাড়ার অনুমতি পাননি। ফলে প্রতিদিনই লক্ষাধিক টাকার আম অবিক্রিত থাকছে এবং তা ফেলে দিতে হচ্ছে।
ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কৃষি অফিসে গেলে তারা অনুমতির জন্য ইউএনও অফিসে যেতে বলে। আবার ইউএনও অফিসে গেলে তারা কৃষি অফিসে যেতে বলে। প্রতিদিন শত শত আমচাষি অনুমতির জন্য এই দুই অফিসে দৌড়াদৌড়ি করেও বুধবার বিকাল পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। এই সমস্যার কারণে আমচাষিরা গাছ থেকে আম পাড়তে পারছেন না। যার কারণে আমাদের লোকসান দিন দিন বেড়েই চলেছে।’
সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা জানান, জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি অফিসের বেঁধে দেওয়া আমের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এ বছর আম পাড়া সম্ভব হচ্ছে না। বৈরি আবহাওয়া আর অতিরিক্ত গরমের কারণে ক্যালেন্ডারে ঘোষিত তারিখের ১০-১২ দিন আগেই আম পেকে গেছে।
তিনি বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ পাকা আম নিয়ে আমরা পড়েছি ভীষণ বিপদে। প্রতিদিন প্রত্যেক আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। ক্রেতার অভাবে আম বিক্রি না হওয়ায় অবিক্রিত আম ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আম একটি দ্রুত পচনশীল খাদ্যপণ্য। এটি সংরক্ষণ করার কোনো পদ্ধতি এখনো আমাদের কাছে আসেনি। তাই প্রতিদিনের আম প্রতিদিনই বিক্রি করতে হয়। কিন্তু ১০ দিন ঈদের ছুটি থাকার কারণে ব্যাংক বন্ধ, কুরিয়ার সার্ভিস পরিবহন বন্ধ, সর্বোপরি প্রকৃত ব্যবসায়ীদের হাতে নগদ টাকা না থাকায় তারা আম কেনাবেচা নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়েছেন। আমচাষিদের কথা বিবেচনা করে আম চাষ হয়—এমন স্থানগুলোতে ব্যাংক খোলা এবং কুরিয়ার সার্ভিস ও পরিবহন ব্যবস্থা সচল রাখলে এ ক্ষতি উৎরে যাওয়া সম্ভব হতো।’
একই রকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন সাপাহার আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেনও।
তিনি বলেন, ‘এখন বাজারে আম্রপালি জাতের আম মণপ্রতি ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এই উচ্চ মূল্যের আম অবিক্রিত থেকে আড়তেই পচে যাওয়ায় আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়েছে। চোখের সামনে কোটি কোটি টাকার আম পচেগলে নষ্ট হওয়ায় ব্যবসায়ীরা দিশেহারা।’
আরও পড়ুন: নওগাঁয় এবার ৪ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা
ইমাম হোসেন বলেন, ‘সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম মানতে গিয়ে আজ আমরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। আগামীতে ভাগ্যে কী আছে, তা সৃষ্টিকর্তাই জানেন!’
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, গত বছরের আমের ক্যালেন্ডারে আম পাড়ার যে তারিখ নির্ধারণ করা ছিল, চলতি বছর তা থেকে তিন দিন এগিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘টানা ১০ দিনের সরকারি ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকা এবং কুরিয়ার ও পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে ব্যবসা কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ ক্ষতির কথা বলছেন, তার সম্ভাবনা নেই।’
‘জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি অফিস সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী আমের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে। এটাও বলা হয়েছে যে, যদি কোনো আম অগ্রিম পাকা শুরু করে, তাহলে স্থানীয় ইউএনও অফিস অথবা কৃষি অফিসের অনুমতিসাপেক্ষে আম পাড়া যাবে। সেক্ষেত্রে কেউ আবেদন করলে তাকে আম পাড়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আকস্মিক অতিরিক্ত গরমে আমের কোনো ক্ষতি হবে না। নওগাঁয় চলতি বছরে আমের বাজার থেকে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে, তা পুরোপুরি সফল হবে।’
১৭৪ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে অপরিপক্ব আম বিক্রির দায়ে ব্যবসায়ীদের জরিমানা
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে অপরিক্ক আম বিক্রি, মূল্য তালিকা না থাকা ও সড়কজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার অপরাধে দুই ব্যবসায়ীকে দেড় হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়াও অন্তত ১৫ জন ব্যবসায়ীকে কড়াভাবে সতর্ক করা হয়।
শুক্রবার (১৬ মে) বিকাল ৫টার দিকে কুমারখালীর হলবাজার, গণমোড়, স্টেশনবাজার ও পৌর তহবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন।
ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ আইনে আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) বিজয় কুমার জোয়ার্দার। আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করে থানা পুলিশ ও ভূমি কার্যালয়ের কর্মচারীরা।
আরও পড়ুন: আলীকদমে জিপ পাহাড়ি ঝিরিতে পড়ে নিহত ১, আহত ২৩
আদালত সূত্রে জানা গেছে, অপরিপক্ক আম বিক্রি, মূল্য তালিকা না থাকা এবং সড়কজুড়ে ব্যবসা করার অপরাধে গণমোড়ের ফল ব্যবসায়ী সজিবকে (৩৬) এক হাজার টাকা এবং তহবাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী আজিজুলকে (৫৫) ৫০০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ তথ্য নিশ্চিত করে উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) বিজয় কুমার জোয়ার্দার বলেন, অপরিপক্ক আম বিক্রি, মূল্য তালিকা না থাকা এবং সড়কজুড়ে ব্যবসা করার অপরাধে দুই ব্যবসায়ীকে এক হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও অন্তত ১৫ জনকে কড়াভাবে সতর্ক করা হয়েছে। জনস্বার্থে উপজেলা প্রশাসনের এমন অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
২০২ দিন আগে
খাগড়াছড়িতে এবার আম বাজারজাতকরণে নির্ধারিত তারিখ নেই
এ বছর খাগড়াছড়ি জেলায় আম বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বেঁধে দেওয়া হয়নি। কৃষকরা তাদের বাগানে উৎপাদিত আম পরিপক্ব হলেই বাজারজাত করতে পারবেন বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ বাছিরুল আলম বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে একই জাতের আমও বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পরিপক্ব হয়। পাহাড়ের উপরি জমিতে অবস্থিত বাগানগুলোর আম আগে পাকতে শুরু করে। তাই যদি নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা হয়, তাহলে আগাম পরিপক্ব হওয়া আম বাগানের চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।’
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি সম্প্রারণ বিভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আম পরিপক্ব হলেই বাগান মালিক ও কৃষকরা আম বাজারজাত করতে পারবেন। তবে কেউ যেন অপরিপক্ব আম বাজারে না আনতে পারে, সে বিষয়ে তদারকি চালিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
স্থানীয় আম চাষি মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমার সাতটি বাগান রয়েছে। এ বছর আবহাওয়ার কারণে কিছু বাগানের আম সময়ের আগেই পেকে যাবে। চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে একটি বাগানের আম্রপালি আম পুরোপুরি পেকে যাবে বলে আশা করছি।’
তবে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) খাগড়াছড়ি জেলার সভাপতি আবু তাহের মোহাম্মদ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে যৌক্তিক একটি নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করলে ভোক্তারা প্রতারিত হবে না। নাহলে এখন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগ নেবে। অপরিপক্ব আম কেমিক্যাল দিয়ে আগাম পাকিয়ে বাজারজাত করবে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।’
এক্ষেত্রে বাজারে ভোক্তার অধিকার রক্ষায় প্রশাসনের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ক্যাবের যৌথ নজরদারির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
২১০ দিন আগে
নওগাঁয় আমে ৩৫০০ কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভাবনা
দেশের অন্যতম আম উৎপাদকারী জেলা নওগাঁ। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার আমের মুকুল সবচেয়ে বেশি এসেছে জেলার আমের বাগানগুলোতে। নওগাঁর বাতাসে এখন মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে। কয়েক দিনের বেশিরভাগ সময় আবহাওয়া আম উৎপাদনের জন্য অনুকূল রয়েছে। এবার গাছে গাছে মুকুলের আধিক্য দেখে ব্যাপক ফলনের আশা করছেন আমচাষিরা।
কৃষিবিদরা বলছেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া আম চাষের অনুকূলে রয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে। এবার গত বছরের চেয়ে ২০০ হেক্টর জমিতে বেড়েছে আমের বাগান। আশা করা হচ্ছে, গত বছরের চেয়ে এবার ২৫ হাজার টন ফলন বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: স্ট্রবেরি চাষে ভাগ্য খুলেছেন ‘চাকরির বাজারে ব্যর্থ’ জাহিদ
আমচাষিরা বলছেন, প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী এক মৌসুমে ভালো ফলন হলে পরেরবার আমের ফলন কম হয়। সে হিসেবে গত বছর নওগাঁয় আমের ফলন কম হওয়ায় এবার তারা আমের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধেছেন। বাগানে প্রায় সব গাছেই মুকুল এসেছে। মুকুলকে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে ছত্রাকনাশক কীটনাশক স্প্রে করছেন তারা। ক্ষেত্র বিশেষে ছিটানো হচ্ছে পানি। আমগাছের গোড়াতেও পানি দিচ্ছেন চাষিরা।
এদিকে বাগানে মুকুল আসা শুরু করতেই মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা মাঠে নেমে পড়েছে। তারা মুকুল দেখে বাগান কেনার জন্য মালিকদের কাছে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরে মুকুলে গুটি হওয়ার পর বাগান কেনাবেচার জন্য আমবাগানীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা বাগান কেনাবেচা নিয়ে কথা শুরু করেছেন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার নওগাঁ জেলায় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ করা হয়েছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর। গত বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩১ হাজার টন। উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। এবার ৪ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়। এ ছাড়াও নিয়ামতপুর পত্নীতলা, ধামইরহাট, বদলগাছি উপজেলা আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নওগাঁ জেলায় নাগ ফজলি, ল্যাংড়া, আম রুপালি, গোপালভোগ, আশ্বিনা, কাটিমন, বারি আম-৪, বারি আম-১১, গুটি আম ও ফজলি জাতের সুস্বাদু আমের উৎপাদন বেশি।
সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া এলাকাসহ ২০০ বিঘা জমির ওপর তিনটি আমবাগান রয়েছে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার। তিনি স্থানীয় বাজারে আম বিক্রি ছাড়াও বিদেশেও আম রপ্তানি করে থাকেন।
সোহেল রানা বলেন, গত বছর তার বাগানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। এবার এখন পর্যন্ত তার বাগানে ৮০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। ফাল্গুন মাস আমের মুকুল আসার উপযুক্ত সময়। আশা করছেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে বাকি গাছগুলোতেও মুকুল আসবে। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত আমের জন্য অনুকূলে আছে। রোদের তাপ কম পেলে ও প্রকৃতি কুয়াশায় ঢেকে থাকলে মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য গাছে ছত্রাকনাশক কীটনাশক স্প্রে করছেন তিনি।
পোরশা উপজেলার বড়গ্রাম এলাকার আমাচাষি রায়হান আলম বলেন, গত বছর শীতের কারণে অনেক দেরিতে মুকুল এসেছিল। গাছে মুকুল আসতে প্রায় ১৫-২০ দিন দেরি হয়েছিল। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়েও অনেক গাছে মুকুল ধরেছিল। তবে সে তুলনায় এবার অনেক আগেই মুকুল এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে।
আরও পড়ুন: খাদ্য গুদামে আমন ধান দিচ্ছেন না বাগেরহাটের চাষিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সাধারণত ধরা হয় দীর্ঘস্থায়ীভাবে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে আমের মুকুল ধরতে চায় না। তবে এবার জানুয়ারি মাসে দুই-এক দিন করে শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দীর্ঘস্থায়ী শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। গড় তাপমাত্রা প্রায় ২০ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিল। এই তাপমাত্রা আমের জন্য অনুকূল। তবে কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে কুয়াশা থাকছে। তবে তাপমাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। কুয়াশার কারণে মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য আমরা আমচাষিদের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, চলতি বছরে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে নওগাঁর আমের বাগান থেকে সাড়ে চার লাখ টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। আমের বাজার ভালো থাকলে এবছর নওগাঁ জেলায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
২৬৩ দিন আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের বৃহত্তম আমবাজার
সহায়ক আবহাওয়া ও উর্বর মাটির সুবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষাবাদ হয় সুস্বাদু ফল আমের। বিশেষত রাজশাহী বিভাগের নামটি সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে আছে সুমিষ্ট এই ফলটির সঙ্গে। তবে আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে দেশজুড়ে আমের সর্ববৃহৎ যোগান দাতা হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এই জেলারই কানসাট নামের ইউনিয়নটিতে বসে বাংলাদেশের বৃহত্তম আমের বাজার। তাই আমের মৌসুমে ভ্রমণ করার জন্য এটিই সব থেকে উৎকৃষ্ট গন্তব্য। চলুন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে ভ্রমণ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
কানসাটের নামকরণ
আগে এই অঞ্চলটির নাম ছিল কংসহট্ট। এখানকার রাজবাড়িটিকে স্থানীয়রা বলতো কুঁজো রাজার বাড়ি। ইতিহাসবিদদের মতে, এই কংসহট্ট কালের বিবর্তনে বদলে বর্তমান কানসাট নাম পেয়েছে। বর্তমানে শিবগঞ্জে আগত পর্যটকরা যে কানসাট রাজবাড়িটি পরিদর্শনে যান, এটি মূলত সেই কুঁজো রাজার বাড়ি।
কানসাটের বিশেষত্ব
দেশের সর্ববৃহৎ আমের বাজারটি বসে এই কানসাটে। শুধু বাংলাদেশের বৃহত্তম বাজারই নয়, কানসাট গোটা এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আম বাজার। ছোট-বড়-মাঝারি সব মিলিয়ে এখানে প্রায় আড়াইশ’ আড়তে দিনভর চলে আমের বিকিকিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আড়তদাররা আম কিনতে এখানে চলে আসেন। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট থাকে এই হাট। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যত্র অনেকগুলো আমের হাট থাকলেও পাইকারি বাজারের জন্য কানসাটই সবচেয়ে বড় ও প্রসিদ্ধ।
আরও পড়ুন: সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
আমের ভরা মৌসুমে প্রতিদিন একশ’রও বেশি ট্রাক এখান থেকে আমভর্তি হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্দেশে রওনা হয়। শুধু এই কানসাটেই প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার আম বেচা-কেনা হয়।
আরও একটি কারণে কানসাটের খ্যাতি রয়েছে, আর সেটি হচ্ছে মিষ্টি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মালদহে একটি নামকড়া মিষ্টি রয়েছে এই স্থানের নামে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো মালদহও আমের জন্য বিখ্যাত। আর আমের পরেই জেলার ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত খাবার হচ্ছে কানসাট মিষ্টি।
ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টির কারিগর হচ্ছেন মহেন্দ্রনাথ সাহা, যিনি মূলত বাংলাদেশের শিবগঞ্জ জেলার কানসাটের এলাকার মানুষ। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে শত শত মিষ্টি কারিগর পাড়ি জমিয়েছিলেন মালদহের উদ্দেশে। সে সময় অন্যান্যদের মতো মহেন্দ্রনাথের ছেলে বিজয় কুমার সাহাও মালদহে চলে যান। এরপর বাবার শেখানো রন্ধন কৌশল কাজে লাগিয়ে সেখানে তিনি কানসাট বানানো শুরু করেন।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের বাকলাই জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলাদেশের অন্যতম সুউচ্চ ঝর্ণায় যাবার উপায় ও খরচ
সারা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে কানসাটের মিষ্টি স্বাদ। বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এই ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিজয় কুমারের ২ ছেলে জয়দেব সাহা ও বিশ্বজিৎ সাহা। ভারতের অন্যত্র এই মিষ্টি বানানো হলেও এদের কানসাটের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি।
৫১৬ দিন আগে
নিরাপদ আম উৎপাদন কার্যক্রম ঘুরে দেখলেন ২০ দেশের রাষ্ট্রদূত
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি বাড়াতে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে দেশে চলছে নিরাপদ আম উৎপাদন। সচক্ষে এ কার্যক্রম দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রশংসা করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত প্রায় ২০টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কান্দবোনা গ্রামে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে পরিচালিত আমচাষি রুহুল আমিনের আম বাগান পরিদর্শন করেন তারা।
পরিদর্শক দলে ছিলেন- কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. আব্দুল ওয়াদুদ, স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহা. জিয়াউর রহমান, কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি এবং ব্রুনাই দারুস সালাম, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, স্পেন, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভুটান, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা, মিয়ানমার ও লিবিয়ার রাষ্ট্রদূতরা।
পরিদর্শন শেষে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আম বিদেশে খুব জনপ্রিয়। প্রতি বছর দেশ থেকে লক্ষাধিক টন আম রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমরা মাত্র তিন হাজার টনের মতো আম রপ্তানি করতে পারি। এক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা ছিল ‘গ্যাপ’ অনুসরণ না করা। এখন গ্যাপ মেনে নিরাপদ আম উৎপাদন শুরু হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা বেশি পরিমাণ আম রপ্তানির চেষ্টা করছি। এ পরিদর্শনের মাধ্যমে রাষ্ট্রদূতদের উৎসাহিত করছি যাতে বেশি পরিমাণ আম রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয়। এ পরিদর্শনের ফলে আম রপ্তানি বহুগুণে বাড়বে।’
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, কৃষি, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র তিন মন্ত্রণালয় মিলে আম বিদেশে ব্র্যান্ডিং করা হবে যাতে রপ্তানি আরও বাড়ে। আম রপ্তানির ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, গ্যাপ না থাকলে চাইলেই বিদেশে আম রপ্তানি করা যায় না। গ্যাপ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। সামনে কোনো সমস্যা থাকবে না।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের আমের কোয়ালিটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রত্যেকটি দেশেই ফাইটোস্যানিটারি ইস্যু আছে, এর একটা নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড আছে। গ্যাপ মেনে আম উৎপাদন করতে পারলে বিশ্বের সব দেশেই আম রপ্তানি করা যাবে।’
আম রপ্তানিতে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এই অংশ হিসেবে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে নিরাপদ আমের উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শনের আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ৩৮টি দেশে আম রপ্তানি হচ্ছে; যদিও এর পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। ২০২১ সালে বিশ্বে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আম রপ্তানি হয়। আর বাংলাদেশ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫৭ মেট্রিক টন আম রপ্তানি এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ১০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছে।
৫২৫ দিন আগে
মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম কেন এত দামি
একটির দাম প্রায় ৩০ হাজার টাকা। আর প্রতি কেজির প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে এমনি অদ্ভূত দাম মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আমের। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপক হারে চাষ হয়েছে বিশ্বের সব থেকে দামি এই আমের। আমের অন্যান্য জাত থেকে ব্যতিক্রমী ফলন হওয়ায় ফলচাষীসহ ফলপ্রেমীদের মাঝে দারুণ সাড়া ফেলেছে বিদেশি আমটি। বিশেষ পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই আম রঙ, স্বাদ ও আকারে অন্য সব আম থেকে একদমি আলাদা। মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আমের এমন অদ্ভূত নাম হলো কীভাবে, আর আকাশচুম্বি দামের পেছনে আসল কারণটাই বা কী, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আমের নাম মিয়াজাকি বা সূর্যডিম কেন
উৎপত্তিস্থল জাপানের কিউশু রাজ্যের মিয়াজাকি নামক শহরে হওয়ায় শহরের নামটি যুক্ত হয়ে গেছে আমের নামের সঙ্গে। তবে জাপানি ভাষায় আমগুলো পরিচিত ‘তাইয়ো-নো-তামাগো’ নামে, যার বাংলা অর্থ ‘সূর্যের ডিম’। তাই বাংলা ভাষাভাষি অঞ্চলে ‘সূর্যডিম’ নামেই আমটি অধিক পরিচিতি পেয়েছে।
অবশ্য আমের রঙ অনেকটা গাঢ় লাল হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে ‘রেড ম্যাংগো’ বা ‘লাল আম’ নামটিই অধিক প্রসিদ্ধ।
জাপানে মিয়াজাকি আমের প্রথম চাষের সময়কাল ১৮৬৮ থেকে ১৯১২ সাল হলেও ফলটি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পায় ১৯৭০ দশক থেকে।
আরও পড়ুন: নিরাপদে স্ট্রিট ফুড খাওয়ার ১০টি উপায়
মিয়াজাকি আম দেখতে কেমন
তাইয়ো নো তামাগো আম দেখতে অনেকটাই মুরগির ডিমের মতো। আমগুলোর ওজন সর্বোচ্চ ৩৫০ গ্রাম এবং এতে চিনির পরিমাণ ১৫ শতাংশ বা তার বেশি। আকারে এটি সাধারণ আমের চেয়ে বেশ বড় ও লম্বা এবং গন্ধ ও স্বাদে মিষ্টতাও বেশি। রঙ গাঢ় লাল বা লাল ও বেগুনীর সংমিশ্রণ।
ওপরের খোসার নিচে ভেতরের সুস্বাদু খাওয়ার অংশটি একেবারেই আঁশমুক্ত এবং উজ্জ্বল হলুদ সুগন্ধযুক্ত।
উত্তর আমেরিকার ডোল ব্র্যান্ডের আমের সঙ্গে এর কিছুটা মিল আছে। তবে মূল্যের দিক থেকে তাইয়ো নো তামাগো অনেকটাই এগিয়ে।
আরও পড়ুন: নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি কী, কেন খাবেন
মিয়াজাকি আমের দাম এত বেশি কেন
২০১৬ সালে জাপানের ফুকুওকায় নিলামে এক জোড়া মিয়াজাকি আমের মূল্য উঠেছিল ৫ লাখ জাপানি ইয়েন। মূল্যটি সে সময়ের বাজার রেট অনুযায়ী ৪ হাজার ৫৪৭ মার্কিন ডলারের সমতূল্য ছিল। ইন্টারনেটের সুবাদে এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই মূলত সবার নজর কাড়ে জাপানি আমটি।
তাইয়ো নো তামাগোর সর্বোচ্চ ফলন হয় এপ্রিল থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে। গাছ থেকে সংগ্রহের পর সেরা আমগুলোর সরাসরি চলে যায় নিলামে। প্রতি বছর এপ্রিল মাসে মিয়াজাকি শহরের পাইকারি বাজারে শুরু হয় এই নিলাম। স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে আমের রঙ, মিষ্টতা, স্বাদ, ও আকার-আকৃতির বিচারে নির্ধারিত হয় সেরা মানের আম।
নিলামে দেশের বড় বড় ফল ডিস্ট্রিবিউটররা সেগুলোর জন্য বিড করে। গড়পড়তায় নিলামের মূল্য থাকে আম প্রতি ৫০ মার্কিন ডলার বা ৫ হাজার ৮৬৩ টাকা (১ মার্কিন ডলার = ১১৭ দশমিক ২৫ বাংলাদেশি টাকা)। তবে কখনও কখনও এই মূল্য অনেক বেড়ে যায়। এখন পর্যন্ত একটি আমের সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ২ হাজার মার্কিন ডলার (২ লাখ ৩৪ হাজার ৫০৩ টাকা)।
২০১৯ সালে জাপানে এক জোড়া তাইয়ো নো তামাগোর দাম উঠেছিল প্রায় ৫ হাজার মার্কিন ডলার, যা সে সময়ের বাজার রেট অনুসারে প্রায় ৪ লাখ টাকারও বেশি। ২০২৩ সালে ভারতে এই আমের কেজি বিক্রি হয়েছে আড়াই লাখ রুপিতে।
এমন চোখ কপালে তোলা দামের নেপথ্যে রয়েছে আমটির সুনির্দিষ্ট চাষাবাদ পদ্ধতি এবং দুষ্প্রাপ্যতা। সঠিক পরিবেশের মাঝে সুক্ষ্ম পরিচর্যার মাধ্যমে যে উন্নত মানের আমের উৎপাদন হয় তা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। এছাড়া পরিপক্কতা লাভের পর যে গভীর লাল বর্ণটি আসে তা আমের অন্যান্য জাতের মধ্যে বেশ দুর্লভ।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই আমগুলোর কেনাবেচা শুধুমাত্র সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং বিভিন্ন কর্পোরেট উপহার এবং বিশেষ উদযাপনের দিনগুলোতে উপহার হিসেবে বিক্রি হয় এই আম। এমনকি হাত বদলের আগে এগুলোকে যত্ন সহকারে সুক্ষ্ম কারুকাজ মেশানো বাক্স বা মোড়কে ভরা হয়।
আরও পড়ুন: ওমেগা-৩ ডিম কি আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি?
৫৩০ দিন আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবারও থাকছে না আম পাড়ার সময়সীমা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবারও আম পাড়া ও বাজারজাতকরণে কোনো সময় নির্ধারণ করেনি জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে ম্যাংগো ক্যালেন্ডার প্রণয়ন, নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সভায় আরও বলা হয়, আম পরিপক্ক হলেই গাছ থেকে পাড়া যাবে ও বাজারজাত করা যাবে। তবে কেউ অপরিপক্ক আম বাজারজাত করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী ১০ জুন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চালু হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় আড়াই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা
জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার, আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান, পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার শ্রী সুজিত কুমার আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আম পাকাতে কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করা যাবে না। নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম বাজারজাত নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হবে ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। কম খরচে এবং দ্রুত সময়ে আম পৌঁছানোর জন্য এবারও ১ জুন থেকে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু থাকবে।কৃষি বিভাগের হিসেবে চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম।
আরও পড়ুন: ফের ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু
৫৬৭ দিন আগে