প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে এবং নির্বাচন কমিশন দু-একদিনের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে।
তিনি আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলেন, যেহেতু আমরা জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি, তাই তারা নির্বিঘ্নে তাদের ভোট দেবেন।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১৫৭টি প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ১০ হাজার ৪১টি অবকাঠামো উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।
এসময় সারাদেশের ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ ১০১টি প্রান্ত ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিল। প্রকল্পগুলোর মোট আনুমানিক ব্যয় ৯৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই গতিকে ধরে রাখতে সরকারের ধারাবাহিকতা অপরিহার্য।
বিএনপির উল্লেখ না করে তিনি বিরোধী দলকে কটাক্ষ করে বলেন, তারা (বিএনপি) আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যোগ দিতে চায় না, কারণ ২০০৮ সালের নির্বাচনের মতো খারাপ ফলাফল হতে পারে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৩৩টি আসন পেয়ে ভূমিধস জয় লাভ করে, যেখানে বিএনপি মাত্র ৩০টি আসনে জয়লাভ করে।
বিএনপির নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই নির্বাচনে অংশ নিতে চান না। (এটা স্বাভাবিক) যারা মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছিল, তাদের তো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো আকাঙ্খা থাকবেই না। তারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের নির্বাচনে অগ্নিসংযোগ সহিংসতা ও ভোট বানচালের চেষ্টাকে কাটিয়ে জয়লাভ করে।
আমরা বারবার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে (ক্ষমতায়) এসেছি। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে সরকার গঠন করেনি।
আরও পড়ুন: মুণ্ডুহীন বিএনপি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচাল করতে চায়: প্রধানমন্ত্রী
নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রবর্তন পর্যন্ত সব নির্বাচনী সংস্কার আওয়ামী লীগের প্রস্তাব অনুসরণ করেই করা হয়েছে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার তৃণমূল পর্যায় থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নের সূচনা করেছে যাতে মানুষ গ্রামে থেকেও নগর সুবিধা ভোগ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের মানুষ একটু শান্তিতে ছিল, স্বস্তিতে ছিল, উন্নয়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল; ঠিক সেই সময়ে এই অবরোধ আর অগ্নিসন্ত্রাস-জালাও পোড়াও। গাড়িতে আগুন বাসে আগুন দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা যেমন ব্যাহত করা হচ্ছে, স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা ঠিকভাবে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারছে না। তাদের লেখাপড়া নষ্ট হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশে সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করেছে, যা বিএনপি শাসনামলে ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ।
তিনি আশা করেন, শুভবুদ্ধির জয় হবে এবং ধ্বংস ও অগ্নিসংযোগ সহিংসতার অবসান হবে।
প্রধানমন্ত্রী আবারও দেশবাসীকে তাদের নিজেদের জানমাল রক্ষার স্বার্থে অগ্নিসংযোগের সহিংসতা প্রতিরোধ করতে বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে ৪ হাজার ৬৪৪টি অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন বা উদ্বোধনের পাশাপাশি ৪৬টি জেলার ১৩২টি উপজেলায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৫ হাজার ৩৯৭টি বাড়ি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও ১১টি জেলা ও ৬০টি উপজেলাকে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন’ ঘোষণা করেন।
এ পর্যন্ত মোট ৩২টি জেলা ও ৩৯৪টি উপজেলাকে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়েছে।
৪ হাজার ৬৪৪টি অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে ২০২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন, ১ হাজার ৮০০টি মাদরাসা ভবন, ২৯৯টি একাডেমিক ভবন এবং ৪০টি প্রশাসনিক ভবন; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে ৯৫২টি একাডেমিক ও গবেষণা ভবন; ১২টি ছাত্র ছাত্রাবাস ভবন; ২২২টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র; ১২৮ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন; ৪৬ জেলায় সাব-রেজিস্টার অফিস ভবন; ১১০টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র; ২৫টি মুজিব কিল্লা; ২০টি সেতু; সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২২টি কমপ্লেক্স; স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীনে ৩৪টি ভবন; ৭টি ছাত্র মেস; ১৬টি ছাত্রাবাস; ২৩টি আইসিইউ; ৭৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক; ৪৬টি মেডিকেল কলেজ ভবন; ২৪টি নার্সিং কলেজ ভবন; ২৫টি জেলায় টেনিস অবকাঠামোগত উন্নয়ন; ১৩টি ক্রীড়া বিদ্যালয় ভবন; ২৬টি বিকেএসপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র; ২০টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র; ডাবল পাইপলাইনসহ ৩৮ এসপিএম; ১০টি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ; ২৬টি পরিশোধন ইউনিটের কিস্তি; ২৪টি খনি খনন; ১৪০ গ্যাস প্লান্ট ক্রয় ও কিস্তি; ৩৩টি পাইপলাইন নির্মাণ; শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ১৮টি অবকাঠামো; ১১ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট অবকাঠামো; ৪০টি প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ১৪টি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার ভবন।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।
আরও পড়ুন: খুলনায় ২৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৫টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রধানমন্ত্রীর
মঙ্গলবার ২০২৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী