প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সমস্ত চরম ডানপন্থী এবং বামপন্থী দলগুলো বিএনপির সঙ্গে যোগ দিয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে অক্লান্ত পরিশ্রমকারী তার আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘এখন তারা (বিএনপি) বলছে তারা ১১ জানুয়ারি থেকে আন্দোলন গড়ে তুলবে…তারা চরম বামপন্থী ও ডানপন্থীদের তাদের সঙ্গী করেছে। আমাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে সমস্ত চরমপন্থীরা এক জায়গায় জড়ো হচ্ছে।’
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আওয়ামী লীগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
১৯৭২ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে সাড়ে নয় মাস কাটিয়ে লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার এতটাই শক্তিশালী যে বিএনপি ও তার চরমপন্থী মিত্রদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা মোটেও সহজ হবে না।
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের একটা কথা বলি। তা হলো আওয়ামী লীগ জনগণ ও তাদের কল্যাণে কাজ করে। কেউ এটাকে নাড়া দিলে তা পড়ে যাবে বলে মনে করবেন না। এটি এত সহজ নয়।’
এছাড়াও তিনি বলেন, তার দল ভালো করে জানে কিভাবে ভোটারদের কারচুপিকারী ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের সরানো যায়, ‘এবং আমরা এটি বারবার প্রমাণ করেছি।’
তিনি বলেন, দেশের ডিজিটাল রূপান্তরের সুযোগ নিয়ে বিএনপি এমন লোকদের নিয়োগ দিয়েছে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
বিরোধী দলকে উপহাস করে তিনি বলেন, ‘তারা ১০ ডিসেম্বরের (বিএনপির সমাবেশ) ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা গোলাপবাগে গিয়ে দাঁড়ায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মরণ করিয়ে দেন যে খালেদা জিয়া তার সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ২০০৬ সালের ৬ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দু’টি নির্বাচন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটে কারচুপি করায় জনগণ তাদের পদচ্যুত করেছে। তারা বারবার জনগণের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত ও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তারা কিভাবে গণতন্ত্র চর্চা করবে? তারা এবং তাদের দলের তাদের মধ্যে কোনও গণতন্ত্র নেই।’
তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ দল ও দেশে গণতন্ত্রের চর্চা করে।
তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড এবং ইভিএম সবই আমাদের দ্বারা চালু করা হয়েছে, যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের ভোট দিতে পারে।’
জনগণের রায়ে ক্ষমতায় এসেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার দল জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। ইনশাআল্লাহ সোনার বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বো। এটি আমাদের পিতার (জাতির) কাছে আমাদের অঙ্গীকার।’
জাতির পিতা ও লাখো শহীদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘এটা বৃথা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে সারা বিশ্বে অগ্রসর হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করে দেশের উন্নয়ন করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
জিয়া, এরশাদ ও খালেদা সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা দেশের উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
গত ১৪ বছরে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্ম ২০০৯ সালের আগে বাংলাদেশের অবস্থা কল্পনাও করতে পারে না।
তিনি বলেন, যারা ২০ বছর আগে জন্মেছিলেন এবং ১৯৭৫ দেখেননি এবং ১৯৭১ সম্পর্কে যাদের কোনও ধারণা নেই, তারা জানেন না সেই সময়ে বাংলাদেশ কেমন ছিল।
স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও একাত্তরের প্রেতাত্মারা দীর্ঘদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি সেনাপ্রধান ও দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: ব্রাজিল ও দ. আমেরিকার ৩ দেশের সঙ্গে পিটিএ ও এফটিএ সইয়ের ওপর জোর প্রধানমন্ত্রীর
তিনি অভিযোগ করে বলেন, শুধু তাই নয়, ১৯৭৫ সালের গণহত্যার পরের সরকারগুলো দেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসকে বিকৃত করে নতুন প্রজন্মের কাছে মিথ্যা ইতিহাস তুলে ধরা হয়।
এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয়ও জানাতে পারেননি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরে আওয়ামী লীগ দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছে এবং জনগণের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ১০ জানুয়ারি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ফারজানা ইসলাম, বিশিষ্ট অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আবু আহমেদ মান্নাফি, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের জন্য কমলাপুর স্টেশন ভাঙার প্রস্তাব আমি মেনে নেইনি: প্রধানমন্ত্রী