%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7%20%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6
ডুমুরিয়ায় খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা
আবহমান কাল থেকে বাংলায় নবান্নের উৎসব পালনে খেজুর গুড়ের কদর বেশি। তাই শীতের আমেজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া অঞ্চলের গাছিরা খেজুরের রস আহরণের জন্য গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তবে ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় গাছ কাটা, রস জ্বালানো ও গুড়-পাটালি তৈরির উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার অন্য বছরের তুলনায় গুড়-পাটালির দাম বেশি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা গাছ পরিষ্কার বা তোলা চাচা করার জন্য গাছি দা ও দড়ি তৈরিসহ ভাড় (মাটির ঠিলে) ক্রয় ও রস জ্বালানো জায়গা ঠিক করাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রয়েছে।
খেজুর গাছ তোলার গাছি নিছার শেখ, আফসার সরদার, রফিকুল ইসলাম ও আজিজুর রহমানসহ একাধিক গাছিরা বলেন, শীত চলে আসছে। এখন খেজুর গাছ তোলার সময়। খেজুর রসের গুড়-পাটালি তৈরি করে ডুমরিয়া বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এতে আমরা অনেক লাভবান হয়ে থাকি। কিন্তু ইটভাটায় খেজুর গাছ মেরে জ্বালানি কাজে ব্যবহার করার কারণে এ ঐতিহ্য বিলীন হতে চলেছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ না নিলে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় মধুমতি নদীতে আবার ভাঙন শুরু
খুলনা অঞ্চলে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারের বন বিভাগের উদ্যোগে গত কয়েক বছর আগে খেজুর গাছ রোপণের কাজ শুরু করেছে। উপজেলার জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলে রোপিত হয়েছে খেজুর গাছের হাজার হাজার আটি। দেশি জাতের সাথে পরীক্ষামূলকভাবে আরব দেশিয় খেজুরের চারাও রোপণ করা হয়েছে বলে বন বিভাগ জানিয়েছে।
তবে ইটভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ না করলে গাছ রোপণের কোনো উদ্যোগই কাজে আসবে না বলে এ পেশায় জড়িত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘খেজুর গাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। ইটভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারে সরকারিভাবে বন্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃকক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে। এছাড়া গুড়ের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার নানা উদ্যোগ নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন: সমুদ্রতীরে ডলফিনের খেলা, বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে পর্যটকদের
যশোর অঞ্চলে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানোর প্রত্যাশা
মাগুরায় মধুমতি নদীতে আবার ভাঙন শুরু
পানি কমতে শুরু করায় মাগুরার মহম্মদপুরে মধুমতি নদীতে আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। গত সাত দিনে উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের প্রায় ১৫টি বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ওই গ্রামের প্রায় ২৫টি বাড়িসহ বেশ কিছু স্থাপনা।
এদিকে, বাজেট না থাকায় ভাঙনরোধে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অনুমতি পেলে কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে।
সরেজমিন মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম, মো. ফরিদ আহম্মদ, মো. আক্কাচ আলী, হাফেজ মো. আহম্মদ আলীসহ অনেকে তাদের শেষ সম্বল বসত ঘর ভেঙে, গাছপালা কেটে সরিয়ে নিচ্ছেন।
পানি কমতে থাকায় নদীভাঙন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ভাঙন ভয়ংকর আকার ধারণ করায় নদীতীরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভাঙনের মুখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন শাহাদত মোল্যা, ইবাদত মোল্যা, রমজান মিয়া, নান্নু, মৃদুল শেখ, মন্নু শেষ, পান্নু ও সুলেমান শেখ।
এছাড়া উপজেলার নদী তীরবর্তী চরপাচুড়িয়া, মহেষপুর, কাশিপুর, ভোলানাথপুর, আড়মাঝি, হরেকৃষ্ণপুর ও রুইজানি এলাকার ভাঙনকবলিত অধিবাসীদের এখন দিন কাটছে আতঙ্কে। এসব গ্রামের মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে। গত দুই বছরে বর্ষা মৌসুমে মধুমতীর ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ৪৫টি পরিবারের শতাধিক ঘরবাড়ি। এ বছর ভাঙনের মুখে রয়েছে অসংখ্য দোকানপাটসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি।
আরও পড়ুন: তিস্তা নদী ভাঙনে দিশেহারা কুড়িগ্রামের মানুষ
হরেকৃষ্ণপুর এলাকায় নদী ভাঙনে মাফুজার ও মিটুর মিয়ার বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে মিটুর মিয়া অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
অন্যদিকে মাফুজার মিয়া রাস্তার পাশে ছাপড়াঘর তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তারা বলেন, ‘আমাদের এখন কোন জমিজমা নেই। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মোট সাত বার বসত ঘর সরিয়ে শেষ রক্ষা হয়নি। এবার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে মধুমতি ভাঙন বৃদ্ধি পায়। এই ভাঙনে আমাদের বসতবাড়ি নদীতে নিয়ে গেছে।’
এ ব্যাপারে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে তালিকা করা হচ্ছে।’
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, ‘ফের ভাঙনের খবর পেয়েছি। সরেজমিনে লোক পাঠানো হয়েছে। যেহেতু বাজেট নেই, তাই অনুমতির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলে কাজ শুরু করবো।’
আরও পড়ুন: নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে নয় হাজার পরিবারকে জমিসহ ঘর দেয়া হবে
সমুদ্রতীরে ডলফিনের খেলা, বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে পর্যটকদের
কক্সবাজারের সমুদ্রতীরে আবারও দেখা মিলেছে ডলফিনের। এবার নিরিবলি পরিবেশে নয় মানুষের কোলাহলে বিচরণ করছে ডলফিনগুলো। সৈকত তীরে ডলফিনের খেলায় আনন্দে মেতে উঠেছে পর্যটকরা।
কক্সবাজার অঞ্চলে শীত শুরু হতেই সমুদ্রে ডলফিনের পাল দলবেঁধে খেলায় মেতেছে। সমুদ্রসৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্টের মাঝামাঝি সমুদ্র সীমানায় সূর্যের রশ্মিতে কয়েকটি ডলফিনকে খেলা করতে দেখা গেছে।
এর আগে সর্বশেষ করোনার লকডাউন সময়ে যখন সমুদ্রসৈকত বন্ধ ছিল তখন ডলফিনের নাচ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এবার শীতের শুরুতে অদূর সমুদ্রে দলবেঁধে দাপাদাপি করছে ডলফিনগুলো।
আরও পড়ুন: হাওয়াইয়ের স্পিনার ডলফিনের সাথে সাঁতার কাটা নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র
শুক্রবার ও শনিবার (১২ ও ১৩ নভেম্বর) ভোরে ও সকালে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট ও কলাতলী পয়েন্টের কিছুদূর সমুদ্রে ডলফিনের খেলা দেখেন পর্যটকরা।
তারা জানান, ভোরের কুয়াশা ছেদ করে যখন সূর্যরশ্মি সাগরের নীল জলে পড়ে তখন লোকজনের আনাগোনা কম থাকায় ডলফিনগুলো সমুদ্রকূলের কাছে এসে আপন মনে খেলা করছে। কখনও দু’একটা আবার কখনও দলবেঁধে সাগরজলে খেলায় মেতে উঠছে এই স্তন্যপায়ী প্রাণিগুলো।
সংস্কারের ৪ মাসের মধ্যে আবারও দেবে গেল কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক মহাসড়ক
সংস্কারের মাত্র চার মাসের মাথায় আবারও কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমারখালী বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন গোলচত্ত্বর এলাকায় সড়কের দুইপাশ দেবে গেছে। এতে স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক দিয়ে যাতায়ত করতে গিয়ে পরিবহন চালক ও পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত কয়েক মাস আগেও গোলচত্ত্বর এলাকায় একই মহাসড়ক দেবে গিয়েছিল। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা মেরামত করেছিল। কিন্তু মাত্র চার মাসের মাথায় মহাসড়ক আবারও দেবে গেছে। তাদের দাবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণেই বার বার সড়কটি দেবে যাচ্ছে।
সরেজমিনে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গোলচত্ত্বর সংলগ্ন পশ্চিম-উত্তর মহাসড়কের কিছু অংশ দেবে গেছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আঞ্চলিক এই মহাসড়কটি দিয়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মাইক্রো, ব্যাটারিচালিত অটোসিএনজি, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন প্রকারের ছোট বড় যানবাহন ও মানুষ চলাচল করে। বাসস্ট্যান্ড এলাকাটি উপজেলার মধ্যভাগে অবস্থিত হওয়ায় সকল যানবহন ও জনগণ এই স্থান দিয়েই চলাচল করে থাকেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাত্র আট মাস আগে এই মহাসড়কটি পুন:নির্মাণ শেষ হয়েছে। পুন:নির্মাণ শেষ হওয়ার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে চলতি বছরের জুনের দিকে গোলচত্ত্বর এলাকায় সড়ক দেবে যায়। পরে গত ২০ জুন দেবে যাওয়া ওই অংশ মেরামত করা হয়। কিন্তু বর্তমানে আবার সড়ক দেবে চলাচলে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় চালের দাম বাড়ল
এই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী বাস চালক ইলিয়াস হোসেন জানান, প্রতিদিনই তিনি এই মহাসড়ক দিয়ে বাস নিয়ে যান। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে দেখা যাচ্ছে সড়কের দুই দিকে দেবে গেছে। এতে যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদেরকে ঝুঁকি নিয়েই এই মহাসড়ক দিয়ে যাতাযত করতে হচ্ছে।
যশোর অঞ্চলে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানোর প্রত্যাশা
প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ বেশি হওয়ায় এবার যশোর অঞ্চলে রোপা আমনের ফলন লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। যশোর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১১ নভেম্বর পর্যন্ত শতকরা ২৩ ভাগ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে মাঠের সব ধান চাষিদের ঘরে চলে আসবে। অকাল বর্ষণে আবাদী ফসলের কিছুটা ক্ষতি হলেও এবছর ফলন ভালো হওয়ায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের যোগীপোল গ্রামের প্রবীণ কৃষক শচীন্দ্র নাথ দাস বলেন, দেড় বিঘা জমিতে চিকন জাতের হাইব্রিড ধান আবাদ করেছি। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। ধান কাটার কাজ চলছে। এখন বাড়িতে আনার অপেক্ষা। কাঠায় দেড় মণ করে ধান পাবেন বলে তিনি জানান।
একই গ্রামের আবু তালেব জানান, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবছরও ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তিনি দুই বিঘা জমিতে উপসী ও গুটি স্বর্ণা জাতের ধান চাষ করেছেন। ধান কাটা শুরু করেছেন। এখনও কাটা শেষ হয়নি। তবে এ সপ্তাহেই সব ধান ঘরে চলে আসবে।
পড়ুন: খাগড়াছড়ির পাহাড়ি সড়কে মরণ ফাঁদ ‘বেইলি সেতু’
মণিরামপুর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের নাদড়া গ্রামের কৃষিজীবী নেকবার মোড়ল জানান, এ বছর অকাল বর্ষণে উচু এলাকায় ফসল ভালো হলেও নিচু এলাকায় পানি সরে না যাওয়ায় ফসল তেমন ভালো হয়নি। তার চার বিঘা জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। তবে তার এলাকার অনেকেরই ধান কাটা হয়নি।
যশোর সদর উপজেলার বড় হৈবৎপুর গ্রামের কৃষিজীবী প্রবীর তরফদার জানান, তিনি উপসী জাতের ধান চাষ করেছেন। কাঠা প্রতি প্রায় মন মণ ধাণ উৎপাদন হয়েছে। ধানের দামও ভালো।
যশোর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জাহিদুল আমিন জানান, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর এই ছয় জেলায় রোপা আমন আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয় চার লাখ ৫১ হাজার ৫২০ হেক্টর জমি। কিন্তু আবাদ হয়েছে চার লাখ ৫৫ হাজার ৯ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন হাজার ৪৮৯ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ বেশি হয়েছে। এর মধ্যে যশোর জেলায় হাইব্রিড ধান ৯ হাজার ১১৭ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল এক লাখ ২৮ হাজার ৪৪৩ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের এক হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলায় হাইব্রিড ধান সাত হাজার ৬৫৭ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল ৯৬ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। মাগুরা জেলায় হাইব্রিড ধান ১০ হাজার ৩০ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল ৫০ হাজার ৫৩৮ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৯০২ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
এছাড়া কুষ্টিয়া জেলায় হাইব্রিড ধান ১০ হাজার ৪৭৪ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল ৭৭ হাজার ৩৩৮ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের এক হাজার ৩৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় হাইব্রিড ধান দুই হাজার ৬৩৯ হেক্টর ও উচ্চ ফলনশীল ৩২ হাজার ২৭৮ হেক্টর জমিতে এবং মেহেরপুর জেলায় উচ্চ ফলনশীল ২৬ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
পড়ুন: হাওরে পানি কমার সাথে সাথে বীজতলা তৈরির কাজে ব্যস্ত কৃষকরা
কয়লার দাম বৃদ্ধি: খুলনায় ১৫ দিনে ২ শতাধিক ইটভাটা বন্ধ
তিনি জানান, ১১ নভেম্বর পর্যন্ত আবাদ হওয়া মোট জমির ২৩ শতাংশ ফসল কাটা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ফসল কাটার কাজ সম্পন্ন হবে।
অকাল বর্ষণে আবাদী ফসলের কিছুটা ক্ষতি হলেও এবছরে চালের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ লাখ পাঁচ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে উদ্বৃত্ত হবে বলে এই কৃষি কর্মকর্তা জানান।
খাগড়াছড়ির পাহাড়ি সড়কে মরণ ফাঁদ ‘বেইলি সেতু’
খাগড়াছড়িতে ৮০ এর দশকে নির্মিত বেইলি সেতুগুলো এখন পাহাড়ি সড়কের মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব সেতুতে পাঁচ টনের বেশি মালামাল নিয়ে চলাচল নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ধারণ ক্ষমতার ৫ গুণ বেশি মালামাল নিয়ে যাতায়াত করছেন চালকরা। এতে অনেক সময় সেতু ভেঙে দুর্ঘটনা হয়। বন্ধ হয়ে পড়ে সড়ক যোগাযোগও। তবে সংকট সমাধানের পর্যায়ক্রমে সব বেইলি সেতুর পরিবর্তে পাকা সেতু নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জন পথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় ঝুঁকিপুর্ণ বেইলি সেতুর সংখ্যা ১০টি।
পর্যটন ও কৃষি অর্থনীতি বিকাশের সাথে সাথে পাহাড়ি সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। পাহাড় থেকে কাঠসহ বিভিন্ন ভারি মালামাল নিয়ে যাতায়াত করে।
চালকরা জানান, তাদের বাধ্য হয়ে ধারণ ক্ষমতার বেশি মালামাল নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। দুর্ঘটনা রোধে বেইলি সেতুর পরিবর্তে পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
আরও পড়ুন: পাথরবোঝাই ট্রাকের ভারে ভেঙে পড়ল বেইলি সেতু
তারা জানান, এ সব ব্রিজে পাঁচ টনের বেশি মালামাল নেয়া নিষেধ। কিন্তু আমাদের খালি গাড়ির ওজনই ৯ টন। মালামালসহ হয় ২২ টন। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। বাধ্য হয়ে আমরা গাড়ি চালাই। আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পাকা সেতু হলে আমাদের দুর্ভোগ দূর হত।
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কর্মাস এর সহসভাপতি মো. কাশেম বলেন, খাগড়াছড়ির বেইলি সেতুগুলোর বয়স প্রায় ৪০ বছর। পাহাড়ে বনজ, কৃষি ও পর্যটন অর্থনীতি বিকাশের কারণে সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে। এখন এসব সেতুর কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
পাহাড়ি সড়কে যানচলাচল বাড়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে বেইলি সেতুর পরিবর্তে পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা জানান, গত কয়েক বছরে খাগড়াছড়ির সড়ক বিভাগের আওতাধীন ৭০টি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট বেইলি সেতুগুলোতে পাকা সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান। ঝুঁকিপূর্ণ এসব বেইলি সেতুর বদলে পাকা সেতু নির্মাণের প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্প পাস হলে পাকা সেতু নির্মাণ করা হবে।
আরও পড়ুন: কাঠ বোঝাই ট্রাকসহ ভেঙে পড়ল দীঘিনালা বেইলি সেতু
সুনামগঞ্জে বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক খাদে, নিহত ২
হাওরে পানি কমার সাথে সাথে বীজতলা তৈরির কাজে ব্যস্ত কৃষকরা
হাওরের পানি কমার সাথে সাথে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি ও চারা উৎপাদনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন সুনামগঞ্জের কৃষকরা। তবে গত বছরের চেয়ে এবার বীজ ধানের মূল্য বেশি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
এ বছর জেলায় হাইব্রিড, স্থানীয় উফশী মিলে ১০ হাজার ৬১২ হেক্টর বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। আর বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমি।
কৃষি বিপণন কার্যালয় জানায়, এবার হাইব্রিড, স্থানীয় উফশী মিলে ৪ হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন বীজ ধান বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। বোরো মৌসুমের শুরুতে দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর, কুমিল্লা, পাবনা ঠাকুরগাঁও, কিশোরগঞ্জ ও সিলেটের সরকারি বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা বীজ নিয়ে সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুর এলাকায় আসছেন ট্রাকচালকরা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত বীজ ধান বড় ট্রাক থেকে ছোট ট্রাকের মাধ্যমে ২০২ জন বীজ ডিলারের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: বজ্রপাত ঠেকাতে হাওরে হবে এক হাজার ছাউনি
সদর উপজেলার হাছনবসত গ্রামের কৃষক আনফর আলী বলেন, ‘গেলবার ব্রি ২৮ জাতের বীজ ধানের চাষি পর্যায়ে মূল্য ছিল ৩৯০ টাকা, আর এবার ৫০০ থেকে ৫৩০ টাকা। ব্রি ২৯ জাতের দাম ছিল ৩৮০ টাকা এবার ৪৯০ থেকে ৫২০ টাকা।’
একই গ্রামের কৃষক মনির উদ্দিন বলেন, ‘ইবার (এবার) হালি ধানের দাম বেশি। সরকার ডিজেলের দামও বাড়াইছে (বাড়িয়েছে)। গেলবার থাকি (থেকে) এবার গিরস্থির (চাষের) খরচ বেশি হইবো। বৈশাখ মাসে ধানের দাম পাওয়া যায় না। কার্তিক মাসে গিরস্থির লাইগ্গা (জন্য) ভারাল (গোলা) খালি কইরা ধান বিক্রি করছি। এভাবে চললে আগামীতে কেউ ক্ষেতকিষি (চাষ) করতো না।’
বীজ ডিলার সাহেদ আলী জানান, বোরো মৌসুম শুরু হওয়ায় বীজ ধানের চাহিদা বেশি।
সুনামগঞ্জ বীজ বিপনণ কেন্দ্রের উপসহকারী পরিচালক আমিনুর রহমান বলেন, এখন বোরো মৌসুম শুরু হয়েছে। সারা জেলার ডিলারদের সুনামগঞ্জ থেকে বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। আজ পর্যন্ত ১০১ জন ডিলার বীজ উত্তোলন করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, এতো আগে বীজ ধান ফেললে কোল্ড ইনজুরির শিকার হতে পারে। তাই আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের এখন বীজ তলায় বীজ ফেলতে নিষেধ করছি। আরও ১৫ দিন পর বীজ ফেলার আহ্বান জানিয়েছি।
জেলায় ৩ লাখ ৫০ হাজার ছোট, বড়, মাঝারি ও প্রান্তিক কৃষক রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: নিকলী হাওরে নিখোঁজ পর্যটকের লাশ উদ্ধার
হাওর অঞ্চলের মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে: মন্ত্রী
কয়লার দাম বৃদ্ধি: খুলনায় ১৫ দিনে ২ শতাধিক ইটভাটা বন্ধ
অক্টোরর থেকে নির্মাণ মৌসুম শুরু হয়েছে। এ সময় ব্যবসার করার জন্য মুখিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। অথচ কয়লার দামের বৃদ্ধির কারণে খুলনাঞ্চলের ইটভাটার ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এক কথা বলা চলে বন্ধই রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মৌসুমের শুরুতে ইট তৈরির জ্বালানি কয়লার দাম দ্বিগুণেরও বেশি থাকায় গত ১৫ দিন ধরে খুলনাঞ্চলের দুই শতাধিক ইটের ভাটা বন্ধ রয়েছে। ফলে খুলনায় স্থবির হয়ে পড়েছে নির্মাণ খাত।
সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, কয়লার দাম দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইটভাটা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালী গণপূর্তের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে মানুষের বসবাস
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,গত বছর এক টন কয়লার মূল্য ছিল আট হাজার টাকা থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা। সেই কয়লার দাম বেড়ে এখন ২২ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। ফলে অতিরিক্ত মূল্যে কয়লা কিনলে লোকসান দিতে হবে ইটভাটা মালিকদের। সে কারণে তারা ইটের ভাটা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
খুলনা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ও ডুমুরিয়ার বাহার ব্রিক্সের মালিক আব্দুল হাই বাহার বলেন, ‘কিছুদিন আগেও এক টন কয়লার দাম ছিল আট হাজার টাকা। বর্তমানে সেই কয়লার দাম বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার টাকা। এত টাকা দিয়ে কয়লা কিনে ইটভাটা চালাতে গেলে লোকসানে পড়তে হবে। ফলে ডুমুরিয়া উপজেলার ৩১টি ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ভাটায় এক হাজার ইট বিক্রি করতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকায়। সেই ইট খুলনা শহরে পৌঁছাতে আরও দেড় হাজার টাকা খরচ পড়ছে। ফলে এক হাজার ইট কিনতে গ্রাহকের খরচ পড়ছে সাড়ে ১১ হাজার টাকা।’
খুলনা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুস সাত্তার জানান, গত বছর ইন্দোনেশিয়ার যে কয়লা যশোরের নওয়াপাড়ার বাজারে টন প্রতি ৮-৯হাজার টাকা ছিল সেই কয়লা এখন ২১ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পুরাতন কয়লা টন প্রতি ১৮ হাজার টাকা থেকে ১৯ হাজার টাকা দরে কিনতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘ফকির মিসকিনও এই গ্রামোত আসপের চায় না’
তিনি জানান, এক হাজার ভালো ইট পোড়াতে খরচ পড়ে ১৪ হাজার টাকা। ফলে লোকসান দিয়ে ইটের ব্যবসা করা সম্ভব নয়। এছাড়া লোকসানের আশঙ্কায় গত ১৫ দিন ধরে খুলনা জেলার প্রায় ২০০ ইট ভাটা মালিক তাদের ভাটা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে বাজারে এখন ইটের সংকট দেখা দিয়েছে।
৫০ বছরেও সেতু নির্মাণ হয়নি, ভেঙে যাওয়া সাঁকোই শেষ ভরসা
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ভেঙে যাওয়া বাঁশের সাঁকোয় হামাগুড়ি দিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পারাপার করছে মানুষ। প্রতিবছর স্থানীয় উদ্যোগে সাঁকোটি মেরামত করা হলেও সরকারিভাবে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ না নেয়ায় বিপাকে রয়েছে ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষ।
ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে প্রায়শই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। স্থায়ীভাবে সাঁকো নির্মাণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের শিমুলবাড়ী গ্রামে নবিউলের ঘাটে বারোমাসিয়া নদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি জরাজীর্ণ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। চলতি বছরে বন্যার তীব্র স্রোতে সাঁকোর মাঝামাঝি জায়গায় কয়েকটি খুটি ভেঙে সাঁকোটি বেঁকে হেলে পরেছে। এরই উপর দিয়ে ঝুঁকির মধ্যে চলাচল করছে মানুষ। ভারি বস্তা বা সামগ্রী পারাপার করতে হিমশিম অবস্থা তাদের।
আরও পড়ুন: ধানক্ষেতের মাঝে ৪০ লাখ টাকার সেতু, ব্যবহার হয় ‘সেলফি’ তোলায়!
স্কুল-কলেজে যাওয়া শিক্ষার্থীরা সাইকেলকে লাঠি হিসেবে ব্যবহার করে সতর্কভাবে পারাপার করছে। ধান কাটার মৌসুমে বিপাকে পরে চাষিরা। এসময় নৌকা সংগ্রহ করে ধান,পাট,ভুট্টাসহ শাক-সবজি অতিরিক্ত পয়সা গুণে পার করতে হয়।
ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম জেলায় সরকারিভাবে ১৬টি নদ-নদীর কথা উল্লেখ থাকলেও বারোমাসিয়া নামে কোন নদীর কথা উল্লেখ নেই। স্থানীয় সংবাদকর্মী অনীল চন্দ্র সরকার জানান, বারোমাসিয়া বা বাণিদহ নদীটি ধরলা নদীর একটি উপশাখা নদী। যা সরাসরি ভারত থেকে প্রবেশ করে কুড়িগ্রামে মূল ধরলা নদীতে মিশে গেছে। ধরলা নদী এবং বারোমাসিয়া নদীর পানির রঙ সম্পূর্ণ আলাদা। ফলে বারোমাসিয়া নদীটি আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করছে। নদীটি ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা থানার সীমান্তবর্তী মরাকুটি গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোড়কমন্ডপ গ্রাম দিয়ে। স্থানীয়ভাবে এটিকে বাণিদহ বা বারোমাসিয়া নদী বলা হয়ে থাকে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। এই উপশাখা নদীর উপর দুটি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। একটি গতমাসে নির্মাণ করা হলেও নবীউলের ঘাটের সাঁকোটি বন্যায় ভেঙ্গে পরায় শোচনীয় অবস্থা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে সাঁকো ছাড়া অচল সেতু!
সাঁকো পারাপার করার সময় সাঁকোর ওপারের ঝাউকুটি গ্রামের স্কুল শিক্ষার্থী মমিনুল (১৪) ও আজমেরী (১৩) জানায়, তারা প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে সাঁকোটি পার হয়। ভাঙা জায়গাটি পার হতে গিয়ে মনে হয় এই বুঝি সাঁকোটি ভেঙ্গে পরে যাবে।
মাথায় ধানের বস্তা নিয়ে পার হতে গিয়ে শাহাদত (৪৫) নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভারি জিনিস নিয়া বাঁশের হাঙ্গরাত যাওয়া আমার খুব কষ্ট হয়। একনা সাইকেল পার করা, ভার ধরি যাওয়া খুব কষ্ট হয়।’
এই গ্রামের কৃষক হামিদ মিয়া জানান, ‘ছয় বছর আগে এখানে একটা ঘাট ছিল। তখন আমরা নৌকা দিয়ে পারাপার করছি। তারপরে জনগণের কাছে বাঁশ কালেকশন করি আমরা একটা বাঁশের সাঁকো দিছি। এবার সাঁকোটি ভেঙে গেছে। এখন পারাপারে খুবই সমস্যা।’
আরও পড়ুন: আগামী জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করে দেয়া হবে: সেতুমন্ত্রী
বালাহাট স্কুল এন্ড কলেজের সহকারি শিক্ষক ও মৎস ব্যবসায়ী আতাউর রহমান রতন জানান, স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ এই এলাকার উৎপাদিত পণ্য এই ব্রীজের ওপর খুব ঝুঁকি নিয়ে পার করতে হয়। সাঁকোটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ ফুট। প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ পারাপার করে। প্রতিবছর আমরা নিজেদের উদ্যোগ সাঁকোটি পারাপারের উপযোগী করি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারিভাবে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমরা এখানে একটি স্থায়ী সেতু চাই।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস বলেন, ইতোমধ্যে জনদুর্ভোগ কমাতে দুটি জরাজীর্ণ সেতু আমরা ঠিক করার উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়াও এরকম কোন বিষয় আমাদের নজরে আসলে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করি। যাতে জনদুর্ভোগ কমিয়ে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়।
শীতের আগমনে ব্যস্ত খুলনার ধুনকাররা
হেমন্ত মানেই শীতের পূর্বাভাস। এর মধ্যে রাতের শেষাংশে হিম শীতল ঠান্ডা আর ভোরের হালকা কুয়াশা প্রতীয়মান হচ্ছে। আগাম শীতকে সমানে রেখে এমনকি করোনা সংক্রমনে পিছিয়ে পড়া ব্যবসাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে লেপ-তোষক তৈরির পাশাপাশি তুলা ছাঁটাইয়ের কাজে ব্যস্ত খুলনার ধুনকাররা।
তাছাড়া মৌসুমকে কাজে লাগিয়ে এই পেশার সাথে জড়িত মালিক কর্মচারীরা তাদের দুর্ভোগ বা অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর দৌলতপুরস্থ বেডিং ফেয়ার, হেনা বেডিং সেন্টার, করিম বেডিং হাউজ, শরিফ বেডিং হাউজ, ওয়াহেদ বেডিং, আল্লাহদান বেডিং সেন্টার নামীয় লেপ-তোষকের দোকানগুলোতে এখন সাজা সাজ রব। তুলা ভেদ করে খসখস শব্দ তুলে সুঁই চলছে প্রতিটি দোকানে।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, বাড়ছে শীতজনিত রোগ
বিগত বছরের তুলনায় এ বছর শীতের প্রকোপ কথা মাথায় রেখে দৌলতপুর আশপাশের অঞ্চল দেয়ানা, মধ্যডাঙ্গা, শলুয়া, শাহ্পুর, রংপুর, মধ্যডাঙ্গা, রেলিগেট, মহেশ্বরপাশা, পাবলা, কাশিপুর, খালিশপুরসহ নিকটস্থ অঞ্চল হতে মানুষ আগে ভাগেই এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেপ, তোষক বানাতে আসতে শুরু করেছে। তবে করোনার সংকটে পড়ে এ বছর নতুন লেপ-তোষক তৈরি হতে অধিকাংশ পুরনো লেপ ভেঙে নতুন করে বানিয়ে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে কারিগরা। কেউ কেউ আবার নতুন তুলা দিয়ে তৈরি করে নিচ্ছে লেপ, তোষক ও বালিশ।
দৌলতপুর বেডিং ওয়াহিদ বেডিংয়ের মালিক শফি জানান, তারা বছরে প্রায় ৬ মাসই বেকার বসে থাকেন। টুকিটুকি কেনাবেচা হয়। আর শীত মৌসুমেই লেপ-তোষক সিজিন। বিগত শীতে করোনা মহামারীসহ লকডাউনের জন্য দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চাকা অবরুদ্ধ হয়। যার কারণে করোনা শুরু হতে বেশি সময় সম্পূর্ণ বেকার বসে ছিলাম। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই শিথিল, আশাবাদী এই শীতে ভালো সাড়া মিলবে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে
দৌলতপুর আল্লাহর দান বেডিং সেন্টারের মালিক হোসেন বলেন, শীত এখনো জেঁকে না বসলেও অনেকে আগে ভাগেই লেপ ও তোষক বানাতে আসছেন। সারা বছরের চেয়ে শীতের এ তিন মাস বেচাকেনা একটু বেশিই হয়। তাই ক্রেতাদের কথা ভেবে কাজের গুণগতমান বজায় রেখে অর্ডারি কাজের পাশাপাশি রেডিমেড জিনিসও তৈরি করে বিক্রি করছি।
খালিশপুর বেডিং এর কর্মচারী জহিরুল জানান, সারা বছরই গেল করোনার। করোনার কারণে দেনা হয়ে পড়েছি। পেছনের দেনা কাটিয়ে উঠতে পারি নাই। আশা করি এবারের শীতে ভালো কাজ হবে।
চাকুরিজীবী মিরাজুল ইসলাম জানান, এখনো শীতের দেখা না মিললেও আগে ভাগেই শীতের জন্য একটি জাজিম বানিয়ে নিচ্ছি। কারণ শীতের শুরুতেই চাহিদার কারণে দাম বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন: শীতের আগমনে কদর বেড়েছে লেপ-তোষকের, বেড়েছে কারিগরদের ব্যস্ততা
খুলনা আঞ্চলিক আওহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ইতোমধ্যেই দিনের তাপমাত্রা কমতে শুরু করছে। সেই সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তথা খুলনা বিভাগে এরই মধ্যে শীতের অনুভব শুরু হয়েছে। তবে আকাশ মাঝে মাঝে মেঘলা থাকায় এখন শীত কিছুটা কম অনুভূত হচ্ছে তবে মেঘ কেটে গেলে শীতের আগমন বেশি ঘটবে। তাছাড়া এ বছর বর্ষা কম হওয়ায় মাটির আদ্রতা কমে গেছে, তাপ ধারণ ক্ষমতাও কম এ কারণে শীতের বার্তা আগে থেকে অনুভব করা যাচ্ছে।
চলতি মাসের ২৯ তারিখ হতে রাতের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে এবং শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানান এ কর্মকর্তা।