এশিয়া
ওয়াকফ আইন পশ্চিমবঙ্গে বলবৎ হবে না: মমতা
ভারতের ওয়াকফ আইন পশ্চিমবঙ্গে বলবৎ করা হবে না বলে জানিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এই আইন রাজ্য সরকার সমর্থন করে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। মমতা বলেন, ‘বাংলায় তা বলবৎও হবে না। তা হলে হিংসা কেন? যারা এই হিংসায় উসকানি দিচ্ছেন, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনে এমন খবর দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ডকে 'নির্মমতা' বললেন ইউনূস
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী বলেন, ‘সেই আইনটি কিন্তু আমরা করিনি। আইনটি কেন্দ্রীয় সরকার করেছে। তাই উত্তর যা চাওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চাইতে হবে।’
রাজনৈতিক দলের চক্রান্তের কথাও উল্লেখ করে মমতা, ‘কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে। তাদের প্ররোচনায় পা দেবেন না। আমি মনে করি, ধর্ম মানে মানবিকতা, সহৃদয়তা, সভ্যতা ও সম্প্রীতি।’ এ সময়ে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ভারতের ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে দেশটির নানা প্রান্তে তীব্র বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের শীর্ষ আদালতেও আইনটি বাতিল করার দাবিতে একাধিক পিটিশন জমা পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ আগামী সপ্তাহেই এই মামলাগুলো শুনবে।
অন্য দিকে উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ওই রাজ্যের হাজার হাজার বিতর্কিত ওয়াকফ সম্পত্তি চিহ্নিত করে তা বাজেয়াপ্ত করার জন্য উদ্যোগ শুরু করে দিয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। ভারতে সব চেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি আছে উত্তরপ্রদেশেই।
ওই একই রাজ্যের মুজফফরনগরে গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় হাতে কালো আর্মব্যান্ড পরে নতুন আইনটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তিন শতাধিক ব্যক্তিকে নোটিশ পাঠিয়ে মাথাপিছু ২ লাখ রুপি করে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে গুন্ডা ঢোকানো হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে, দাবি মমতার
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়ও আইনপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে। গেল বৃহস্পতিবার কলকাতায় এক বিশাল সমাবেশ থেকে ওয়াকফ আইন বাতিল করার দাবিতে কম করে এক কোটি মানুষের স্বাক্ষর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে মুসলিম সংগঠন জমিয়ত-ই-উলেমা হিন্দ।
৮ দিন আগে
ভূমিকম্প: মিয়ানমারে তহবিল সংগ্রহে ‘সিংহ নাচ’
মিয়ানমারে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ইয়াঙ্গুনের ব্যস্ততম চায়না টাউনের প্রাণকেন্দ্রে ‘সিংহ নাচ’ পরিবেশনের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করছেন দেশটির তরুণরা।
ফেং ই ড্রাগন ও লায়ন ড্যান্স অ্যাসোসিয়েশনের ৩০ জনেরও বেশি তরুণের একটি দল চলতি মাসের ৩ থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত অভিনব এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
এ কার্যক্রমে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন বলে জানান তারা। ওই তরুনরা বলেন, অনেক পথচারীই তাদের নাচে আকৃষ্ট হয়েছেন এবং উৎসাহ দিয়েছেন।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে দলটি মিয়ানমারেরে মুদ্রায় ৫ মিলিয়ন কিয়াট (প্রায় ২ হাজার ৩৮০ মার্কিন ডলার) সংগ্রহ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তারা।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের ভূমিকম্পের পর ৮৯ আফটারশক অনুভূত
ভূমিকম্পে নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে দলটির সদস্যরা বলেন, সংগৃহীত অর্থ সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মান্দালয় ও সাগাইং শহরে বাসিন্দাদের সহায়তায় ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
লায়ন ড্যান্স অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য মিয়ো মং মং মিন্ট (৩৫) বলেন, ‘তহবিল সংগ্রহ ও জরিপ শেষে বাসিন্দাদের সরাসরি সহায়তা করতে আমরা সেখানে যাবো। তাদের কি ধরনের সহায়তা প্রয়োজন বা কোনটি আগে প্রয়োজন সেটি জানতে আগেই একটি জরিপ করেছি আমরা।’
ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের এই অর্থ দিয়ে সহায়তার পাশাপাশি পুনর্বাসনের পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে বলে জানান মিয়ো।
অ্যাসোসিয়েশনের আরেক সদস্য বলেন, ‘এভাবে তহবিল সংগ্রহ করা মোটেই সহজ কাজ নয়। বিশেষত রোদের মধ্যে সিংহ নাচের পোশাক পরে নাচ করা বেশ কঠিন। তবে আমরা এতে অভ্যস্ত।’
১১ দিন আগে
ইসলামি শরিয়ায় ব্রিটিশ দম্পতির বিচার করবে তালেবান
আফগানিস্তানে গ্রেপ্তার হওয়া এক ব্রিটিশ দম্পতির বিচার শিগগিরই ইসলামিক শরিয়া অনুসারে হবে বলে জানিয়েছে তালেবান সরকার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমদিকে পিটার রেনল্ডস ও বার্বি রেনল্ডস দম্পতিকে গ্রেপ্তারের পর এই প্রথম বিষয়টি প্রকাশ্যে আনা হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) এ বিষয়ে কথা বলেন তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল বাতেন। তিনি জানান, ওই দম্পতির অপরাধ তেমন গুরুতর নয়। দ্রুতই আফগানিস্তানের প্রচলিত ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ী তাদের বিচারকাজ শেষ করা হবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানী কাবুলের মধ্য বামিয়ানের নিজ বাসভবন থেকে সত্তরোর্ধ রেনল্ডস দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে কি কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানায়নি দেশটির প্রশাসন।
আরও পড়ুন: বাদী পক্ষে লড়তে আদালতে এআই-উকিল!
রেনল্ডস দম্পতি আফগানিস্তানে একটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম পরিচালনা করতেন বলে জানিয়েছেন লন্ডনে বসবাসরত তাদের পরিবারের সদস্যরা। পিটার ও বার্বিকে গ্রেপ্তারের পর পুল-ই-চরকি কারাগারে রাখা হয়েছে, কি কারণে এটি করা হয়েছে তা জানানো হয়নি। এমনকি ওই কারাগারে পিটার ও বার্বির সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে বলেও তাদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন।
ওই দম্পতির মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আদালতে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে এসোসিয়েট প্রেসকে (এপি) পাঠানো এক বার্তায় জানান মুখপাত্র মাতেন। তবে গ্রেপ্তারের কারণ ও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
মাতেন বলেন, ‘আমি শুধু এতটুকুই বলতে পারি, বড় ধরনের কোনো অপরাধ করেননি তারা। ইনশাআল্লাহ, দ্রুতই শরিয়া আইনে রায় আসবে। সামান্য বিষয় এটি, চিন্তার কোনো কারণ নেই।’
এর আগে ওই দম্পতির সঙ্গে আটক হওয়া মার্কিন নাগরিক ফায়ে হল গত ৩০ মার্চ কাতারের মধ্যস্ততায় মুক্তি পেয়েছেন। বিনা অনুমতিতে ড্রোন ব্যবহার করার কারণে তাকে আটক করেছিল তালেবান সরকার। এ নিয়ে চলতি বছরে আফগানিস্তান থেকে চতুর্থ মার্কিনি মুক্তি পেয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১১ দিন আগে
ফিলিপাইনে আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত, ৪ গ্রামের স্কুল বন্ধ
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলের একটি আগ্নেয়গিরি অল্প সময়ের জন্য সক্রিয় হয়েছিল। এর ফলে আকাশে চার কিলোমিটার (২.৪ মাইল) উঁচু ছাই এবং ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে।
কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) আগ্নেয়গিরিটির অগ্ন্যুৎপাতের ছাই ছড়িয়ে পড়লে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত নিকটবর্তী চারটি গ্রামের স্কুলের ক্লাস বাতিল করেছে।
ফিলিপাইন ইনস্টিটিউট অব ভলকানোলজি অ্যান্ড সিসমোলজির তথ্য অনুযায়ী, কানলাওন পর্বতের অগ্ন্যুৎপাত এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে। ছাই নেগ্রোস দ্বীপের আগ্নেয়গিরির দক্ষিণ-পশ্চিমে কমপক্ষে চারটি কৃষি গ্রামে পৌঁছেছিল। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে ডিসেম্বরে আগ্নেয়গিরিটিতে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে হাজার হাজার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সিভিল ডিফেন্স অফিস জানিয়েছে, বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের অনেকেই আজ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। কারণ, কানলাওন যেকোনো সময় সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে—এমন লক্ষণ প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি মেরাপিতে অগ্ন্যুৎপাত
ফিলিপাইনের প্রধান আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ তেরেসিতো বাকোলকোল অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, আগ্নেয়গিরির ভূমিকম্প বৃদ্ধির মতো উচ্চতর আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপের কোনো উল্লেখযোগ্য নতুন সূচক নেই। এজন্য সতর্কতার বর্তমান স্তর ৩ থেকে বাড়ানোর প্রয়োজন হবে—যা ‘উচ্চ স্তরের আগ্নেয়গিরির অস্থিরতা’ নির্দেশ করে। সর্বোচ্চ সতর্কতা স্তর ৫ সংকেতটি তখনি দেওয়া হয়—যখন একটি ‘বিপজ্জনক অগ্ন্যুৎপাত হয়’।
জনগণকে সতর্ক থাকতে এবং আগ্নেয়গিরির চারপাশে ৬ কিলোমিটার (৩.৭ মাইল) স্থায়ী বিপদজনক অঞ্চল এড়াতে পরামর্শ দিয়ে বেকোলকোল বলেন, ‘বড় অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে।’
মাউন্ট কানলাওন ২ হাজার ৪৩৫ মিটার (৭৯৮৮ ফুট) লম্বা এবং ফিলিপাইনের ২৪টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মধ্যে একটি।
কর্মকর্তারা স্মরণ করেন যে, ১৯৯৬ সালে চূড়ার কাছে অপ্রত্যাশিত অগ্ন্যুৎপাতের পর তিনজন পর্বতারোহী মারা যান এবং বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়।
ফিলিপাইন প্রশান্ত মহাসাগরের 'রিং অব ফায়ার' বরাবর অবস্থিত। এর ফলে ঘন ঘন ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের জন্য পরিচিত দেশটি। ফিলিপাইনে বছরে প্রায় ২০টি টাইফুন এবং ঝড়ের কবলে পড়ে। আর একারণে এটি সারা বিশ্বের মধ্যে একটি অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল।
১২ দিন আগে
মিয়ানমারে ভূকম্পে নিহত বেড়ে ৩৫০০, বৃষ্টিতে বেড়েছে দুর্ভোগ
ভারী বৃষ্টি ও দমকা হওয়ার পর বজ্রঝড়ের কবলে পড়েছে মিয়ানমারের ভূমিকম্পে-বিধ্বস্ত এলাকার বাসিন্দারা। এতে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি, দুর্যোগে যারা বসতবাড়ি হারিয়েছেন ও খোলা জায়গায় বসবাস করছেন, তাদের দুর্দশা বাড়িয়ে তুলেছে। এছাড়া নিহতের সংখ্যা বেড়ে সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়েছে।
রবিবার (৬ এপ্রিল) মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেল এমআরটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহে দেশটির বিভিন্ন জায়গায় বজ্রঝড় ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ‘দমকা বাতাস, বজ্রপাত, ভূমিধস ও ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে অসময়ের বৃষ্টির হতে পারে। যে কারণে লোকজনকে সচেতন থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহের মাঝামাঝিতে দিনের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।’
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের ভূমিকম্পের পর ৮৯ আফটারশক অনুভূত
মিয়ানমারে এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পটি আঘাত হানে গেল ২৮ মার্চ। সাত দশমিক সাত মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল দেশটির দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে।
এতে রাজধানী নেপিদোসহ ছয়টি অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রবিবার (৭ এপ্রিল) মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জো মিন তুন বলেন, ‘এ পর্যন্ত তিন হাজার ৫৬৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে ভূমিকম্পে। আহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ১২ জন। এছাড়াও এখনো ২১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।’
ভূমিকম্পের কারণে দেশটির বিভিন্ন এলাকা এখনো বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
মান্দালয়ে মিয়ানমার রেসকিউ ফেডারেশেনের এক কর্মকর্তা বলেন, শনি ও রবিবার ভারী বৃষ্টির কারণে উদ্ধার অভিযানে ব্যবহার হওয়া বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি বন্ধ করে রাখতে হয়েছে। এতে উদ্ধার কাজ অনেক কঠিন হয়ে পড়লেও একেবারে স্থগিত রাখা হয়নি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাজ চালিয়ে যাবেন।’
মান্দালয়ে কাজ করা আরেক উদ্ধারকারী বলেন, ‘বৃষ্টি ও ঝড়ো বৃষ্টিপাতের কারণে কয়েকটি ভবন ভেঙে পড়েছে। এতে যারা আশ্রয়ের খোঁজে রয়েছেন, তাদের কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে।’
আরও পড়ুন: প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেবে মিয়ানমার
২০২১ সালে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে দেশটির শাসন করছে সামরিক বাহিনী। এরপর থেকে গণতন্ত্রপন্থি প্রতিরোধ যোদ্ধা ও জাতিগত সংখ্যালঘু গেরিলাদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে তারা।
জান্তা সরকার জানিয়েছে, ভূমিকম্পে পাঁচ হাজার ২২৩টি ভবন, এক হাজার ৮২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুই হাজার ৭৫২টি বৌদ্ধ মঠের আবাসিক ভবন, চার হাজার ৮১৭টি প্যাগোডা ও মন্দির, ১৬৭টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, ১৬৯টি সেতু, ১৯৮টি বাঁধ এবং প্রধান মহাসড়কের ১৮৪টি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১৩ দিন আগে
ট্রাম্পের ‘দাওয়াইয়ে’ এশিয়ার শেয়ার বাজারে ধস
বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি। এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাদ যায়নি এশিয়াও। ধস নেমেছে এই মহাদেশটির শেয়ারবাজারে। তবে এই শুল্কনীতিকে ‘দাওয়াই’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই সাতচল্লিশতম প্রেসিডেন্ট।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এশিয়ার কয়েকটি দেশের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে এসব নিম্নমুখিতার চিত্র উঠে এসেছে।
এতে দেখা যায়, জাপানের নিক্কেই ২২৫ -এর সূচক কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, হংকংয়ের হ্যাং সেং-এর সূচক কমেছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এবং হংকংয়ে তালিকাভুক্ত যুক্তরাজ্যের ব্যাংক এইচএসবিসি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের শেয়ারের দরও কমেছে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্কারোপ: জরুরি বৈঠক ডাকলেন প্রধান উপদেষ্টা
এর আগে, মার্কিন ফিউচাররের ব্যাপকভাবে দর পতন ইঙ্গিত দিয়েছিল যে দেশটির বাজারগুলো খুললে ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারের পতন হবে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শুল্কনীতির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, ‘কখনো-কখনো কোনো কিছু ঠিক করার জন্য ওষুধ খেতে হয়।’
গত সপ্তাহে ট্রাম্পের শুল্কনীতি ঘোষণার পর সারা বিশ্বের অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে। চীন থেকেও পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ ও মন্দার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে ট্রাম্পের শুল্কনীতিটি এখানে স্থির থাকবে কিনা, নাকি একটি স্থায়ী নতুন শাসনব্যবস্থার অংশ, কিংবা অন্যান্য দেশের কাছ থেকে ছাড় পাওয়ার জন্য আলোচনার কৌশল—তা নির্ধারণের চেষ্টা করছেন বিনিয়োগকারী এবং রাজনৈতিক নেতারা।
রবিবার (৬ এপ্রিল) সকালের একটি টকশোতে শুল্কনীতিকে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধিমান পরিবর্তন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন ট্রাম্পের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টারা।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গত বুধবারের ঘোষণার পর থেকে ৫০টিরও বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বেসেন্ট বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) নিজের দেশের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা তৈরি করেছেন। আগামী দিনগুলোতেও এই শুল্ক বহাল থাকবে।’
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক সিবিএস নিউজের ‘ফেস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘কয়েক দিন ও সপ্তাহ ধরে’ নতুন এই শুল্ক বহাল থাকবে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্কারোপ: বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াতে কী ভাবছে দেশগুলো?
তবে শুল্কারোপের কারণে বিশ্বজুড়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা কমিয়ে আনতে চেষ্টা করেছেন হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হ্যাসেট। তিনি বলেন, ‘সুদের হার কমিয়ে আনতে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবেই এই শুল্কারোপ করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে না।
১৩ দিন আগে
মিয়ানমারের ভূমিকম্পের পর ৮৯ আফটারশক অনুভূত
মিয়ানমারে গত মাসের শেষ নাগাদ একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে তিন সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সাত দশমিক ৯ মাত্রার ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পের পর এ পর্যন্ত মোট ৮৯টি আফটারশক (পরাঘাত) অনুভূত হয়েছে দেশটিতে।
স্থানীয় সময় রবিবার (৬ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে মিয়ানমারের আবহাওয়া ও জলবিদ্যা বিভাগ।
কম্পনগুলো ২.৮ থেকে ৭.৫ মাত্রার মতো ছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গত মাসের ২৮ মার্চ দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে শক্তিশালী ভূমিকম্পটি সংঘটিত হওয়ার পর থেকে এই আফটারশকগুলো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব আফটারশকে দেশটির ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যে কারণে অনেকেই নিজেদের বাড়ির আশেপাশের রাস্তায় তাঁবু টানিয়ে বা খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন: সোনার শহর মান্দালয় এখন ধ্বংসস্তূপ, দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে গৃহযুদ্ধ
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ভূকম্পনবিদ উইল ইয়েকের মতে, ‘ভূমিকম্পের মূল ধাক্কার কারণে পৃথিবীর চাপের যে পরিবর্তন হয়, তাতেই আফটারশক হয়ে থাকে।’
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মাটির উপরিভাগের ৭০০ কিলোমিটার নিচেও ভূমিকম্প হতে পারে। আর মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পটি হয়েছিল মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে। অর্থাৎ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল অনেক অগভীরে হওয়ায় কম্পনের পরিমাণ বেশি ছিল।
ইউএসজিএস জানিয়েছে, এই ভূমিকম্পটি অনেক বড় ছিল। জাপানের হিরোশিমায় আঘাত হানা মার্কিন পারমাণবিক বোমার চেয়েও বেশি শক্তি উৎপাদিত হয়েছে এই ভূকম্পন থেকে।
যখন পৃথিবীর দুটি খণ্ড হঠাৎ করে পরস্পর থেকে সরে যায়, তখনই ভূমিকম্প হয়ে থাকে। যেখান থেকে ভূখণ্ডটি সরে যায়, সেটিকে ভূগর্ভের ফাটল বলা হয়। কখনো-কখনো ভূমিকম্পের ফোরশক (পূর্বাঘাত) হয়ে থাকে। বড় ভূমিকম্পের আগে যে ছোট ছোট কম্পন হয়, সেটাই ফোরশক।
ভূমিকম্পের প্রধান আঘাতকে মেইনশক (মূলকম্পন) বলা হয়। এই মূলকম্পনের পরে অনেক সময় আফটারশক হয়ে থাকে। এগুলো ছোট ছোট ভূমিকম্প, যেটা মূলকম্পনটি যেখানে ঘটে, সেখানেই হয়ে থাকে।
মূলকম্পনের ওপর ভিত্তি করে কয়েক সপ্তাহ, মাস কিংবা কয়েক বছরও এই আফটারশক হতে পারে।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত প্রায় ৩ হাজার, জীবিতদেরও উদ্ধার করা হচ্ছে
২৮ মার্চ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। ভুমিকম্পে এ পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন, আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি।
গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মিয়ানমার জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।’
ইউএসজিএসের তথ্যমতে, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হতে পারে।
মিয়ানমার ছাড়াও থাইল্যান্ড ও চীনেও আঘাত হেনেছে এই ভূমিকম্প। তবে গৃহযুদ্ধ, খাদ্যসংকট ও অর্থনৈতিক অবনতির মধ্যে মিয়ানমারে নতুন বিপর্যয় ডেকে এনেছে এই দুর্যোগ। এতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মান্দালয়। সোনার পাত উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ঝলমলে এই শহরটির বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে পড়েছে, যার নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক লাশ।
১৪ দিন আগে
সোনার শহর মান্দালয় এখন ধ্বংসস্তূপ, দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে গৃহযুদ্ধ
সোনার শহর হিসেবে খ্যাত মিয়ানমারের মান্দালয় শহর যেন এখন এক মৃত্যুপুরী। সোনালী কারুকার্যে সুস্বজ্জিত মঠ ও বৌদ্ধ সমাধির সৌন্দর্যে ঝলমলে এই শহরটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
তবে এত বড় দুর্যোগও মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে টলাতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে অবিচল সেনাবাহিনী। বিদ্রোহীরা কোনো হামলা চালালে পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) মিয়ানমারে আঘাত হানে ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী এক ভূমিকম্প। এতে গৃহযুদ্ধকবলিত দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে এরইমধ্যে প্রায় তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। আহত সাড়ে চার হাজারের বেশি।
এর মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী মান্দালয়। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ এই শহরটিতে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হওয়ায়, শহরের বাতাসে ভাসছে লাশের গন্ধ। ঝলমল শহরটির বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে পড়েছে, যার নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক লাশ।
শহরটির জে নামের এক বাসিন্দা জানান, মৃতের সংখ্যা এত বেশি যে, তারা স্তূপ করে লাশগুলো দাহ করতে বাধ্য হয়েছেন।
বাসিন্দারা জানান, তাদের কাছে না আছে কোনো খাবার, না পানি। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা।
দুর্বল অবকাঠামো ও গৃহযুদ্ধের জটিল পরিস্থিতি ত্রাণ কার্যক্রমকে মারাত্বকভাবে ব্যাহত করছে বলে মনে করছেন অনেকে। এ ছাড়াও দেশটির সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিজস্বার্থে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র গোপন করার ইতিহাস রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
যখনই ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন ও এলাকাগুলোতে উদ্ধারকারীদের প্রবেশ বাড়তে থাকবে, তখনই লাশের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২৩ বছর বয়সী জে মান্দালয়ের মহাউংমেয়ে এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে দুইদিন পর তার খালার লাশ বের করা হয়েছে। ঘুম, খাবার ও পানির সংকটে নাজেহাল দশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঘুম না হওয়ায় আমার মাথা প্রচণ্ড ঘুরছে।’
জে’র মতো পরিস্থিতি অনেকেরই। নিজেদের বাড়ির আশেপাশের রাস্তায় অনেকেই তাঁবু টানিয়ে বা খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান করছেন। আরেকটি আফটারশক (পরাঘাত) যেকোনো মুহূর্তে তাদের বাড়িঘরের অবশিষ্টাংশও ধ্বংস করে দিতে পারে এই আশঙ্কায় তারা রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
জে বলেন, ‘আমি অনেককেই রাস্তায় উবু হয়ে বসে চিৎকার করে কান্না করতে দেখেছি।’
তবে ভাঙা স্থাপনার নিচ থেকে লাশের পাশাপাশি জীবিতও অনেককে উদ্ধার করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী জানান, গত চারদিনে মান্দালয় শহর থেকে ৪০৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, এ সময় ২৫৯টি লাশও বের করা হয়েছে।
তবে প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা সরকারি তথ্যের থেকে অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১ তারিখ) এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মিয়ানমার জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং বলেন, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের (ইউজিএস) তথ্যমতে, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হতে পারে।
শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে মান্দালয়ের মানুষজন শারীরিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক—সব দিক দিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এলাকাটির শিশুরা মানসিকভাবে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
দক্ষিণ মান্দালয়ের পাইগ্যিটাগন এলাকার এক পাদ্রি যিনি রুয়াতে নামে নিজের পরিচয় দেন, তিনি বিবিসিকে তার অভিজ্ঞতার কথা জানান।
তিনি বলেন, তার আট বছরের ছেলে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার চিৎকার করে কান্না করে উঠেছেন।
চোখের সামনে মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধ্বংস হতে দেখে ছেলেটি অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়েছে, এ কারণেই তার মানসিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে মত দেন শিশুটির বাবা।
রুয়াতে বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় আমার ছেলে উপরে তার শোবার ঘরে ছিল। আমার স্ত্রী তার বোনের দেখাশোনা করছিল। বেরিয়ে আসার সময় তার (ছেলে) ওপর কিছু ধ্বংসাবশেষও পড়েছিল।’
তিনি বলেন, গতকাল নিজ এলাকা থেকে তিনি অনেককে লাশ হয়ে বের হতে দেখেছেন। বুধবার (২ এপ্রিল) ভূমিকম্পের পাঁচদিন পরে রাজধানীর নেপিদোর একটি ভবন থেকে জীবিত একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে।
এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। ভারাক্রান্ত মনে বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। মিয়ানমার একের পর এক দুর্যোগের মুখে পড়ছে, এরমধ্যে কিছু প্রাকৃতিক, কিছু মানবসৃষ্ট। দেশের প্রতিটি মানুষ এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আমরা হতাশ ও অসহায় বোধ করছি।’
গত বৃহস্পতিবারের ভূমিকম্পে মান্দালয়ের ১২ তলাবিশিষ্ট ‘স্কাই ভিলা’ ভবনটির ছয়তলা ধ্বসে পড়েছে। ওই ভবনের নিকটস্থ এক বাসিন্দা জানান, যদিও কয়েকজনকে সেখান থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, তবে গত ২৪ ঘণ্টায় কেবল লাশই বের হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই দুর্যোগ শিগগিরই শেষ হবে আশা করছি। এখনো অনেক লাশ ভিতরে চাপা পড়ে আছে মনে হচ্ছে, সংখ্যাটা শতাধিক হতে পারে।’ মান্দালয়ের আশপাশের কবরস্থানগুলোতে আর জায়গা অবশিষ্ট নেই। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাশের ব্যাগসহ খাবার ও পানি সরবরাহের ব্যাপক অভাব দেখা দিয়েছে।
শহরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মঠ ও সোনালী চূড়ার ভাঙা অংশগুলো। এক সময় মান্দালয় সোনার পাত উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ও পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল। তবে গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানেও দারিদ্র্য বেড়েছে, ফলে শহরটি অনেকাংশে তার জৌলুস হারিয়েছিল।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত প্রায় ৩ হাজার, জীবিতদেরও উদ্ধার করা হচ্ছে
ভূমিকম্পের পরে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি
গত সপ্তাহে মিয়ানমার ছাড়াও থাইল্যান্ড ও চীনেও আঘাত হেনেছে ভূমিকম্প। তবে গৃহযুদ্ধ, খাদ্যসংকট ও অর্থনৈতিক অবনতির মধ্যে মিয়ানমারে নতুন বিপর্যয় ডেকে এনেছে সাত দশমিক সাত মাত্রার ভয়াবহ এক ভূমিকম্প। ২০২১ সালের পর থেকে দেশটির ক্ষমতায় আছে জান্তা সরকার।
গতকাল নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে জান্তা সরকার, পাশাপাশি পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এছাড়াও গণমাধ্যমের সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয়।
তবে দারিদ্র্যপীড়িত দেশটি থেকে ভূমিকম্পের আগেই প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। জোরপূর্বক সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ থেকে বাঁচতে অনেক তরুণ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এতে এই দুর্যোগের মুহূর্তে প্রয়োজনীয় লোকবল মিলছে না বলে দেশটির বাসিন্দাদের অভিযোগ।
রাশিয়া ও চীন সহায়তা করলেও উদ্ধারকাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেন জে। তিনি বলেন, ‘উদ্ধারকর্মীরা চারদিন ধরে একটানা কাজ করে যাচ্ছে। তারাও এখন ক্লান্ত, তাদেরও কিছুটা বিশ্রাম প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
১৭ দিন আগে
ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত প্রায় ৩ হাজার, জীবিতদেরও উদ্ধার করা হচ্ছে
উদ্ধারকর্মীরা যখন মিয়ানমারের ধ্বংসস্তূপ থেকে ৬৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করছিলেন, তখন তার মতো আরও অনেকের ফিরে আসার আশা ফিকে হয়ে গেছে। গৃহযুদ্ধকবলিত দেশটিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে এরইমধ্যে প্রায় তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে, এই সংখ্যাটা বেড়ে কোথায় গিয়ে ঠেকবে; তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে আশার কথা, এখনো জীবিতদের উদ্ধার করা হচ্ছে।
গৃহযুদ্ধের কারণে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির মানবিক সংকট বহু পুরোনো। এই ভূমিকম্প সেই সংকটকে আরও ভয়াবহ মাত্রায় নিয়ে গেছে। রাজধানী নেপিদোর উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ভবন ধসে পড়ার পর ইট-পাথরের স্তূপের নিচে ঢাকা পড়েছিলেন ওই নারী। কিন্তু তাকে সফলভাবে তুলে আনা সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুন: জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
শুক্রবার দিনের মাঝামাঝিতে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে আঘাত হানে ভূমিকম্প। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর জীবিতদের উদ্ধারের সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে।
দেশটির রাজধানী নেপিদোর একটি ফোরামে জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৭১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। চার হাজার ৫২১ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ৪৪১ জন।’
মিয়ানমারের বিভিন্ন অংশ থেকে অনুভূত হয়েছে এই বিধ্বংসী ভূমিকম্প। এতে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। সড়ক ও সেতু ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে একদিকে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
বেশিরভাগ প্রাণহানি হয়েছে মান্দালয় ও নেপিদোতে। ইউনিসেফের মিয়ানমার প্রতিনিধি জুলিয়া রিস বলেন, ‘এখানে ব্যাপক সহায়তা দরকার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা আরও বাড়ছে। জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কমে আসছে। আক্রান্ত এলাকাগুলোতে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরবরাহের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।’
উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য ভারী যন্ত্রপাতিরও ঘাটতি রয়েছে। এতে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও হাত দিয়ে জীবিতদের উদ্ধার করতে হচ্ছে অনেককে।
মিয়ানমার ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রোগ্রাম উপ-পরিচালক লরেন ইলারি বলেন, ‘কী মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা বর্তমান পর্যায়ে এসে আমরা পরিষ্কার হতে পারছি না। মান্দালয়ের আশি শতাংশ ভবন ভেঙে পড়েছে।’
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে নিহত বেড়ে ২ হাজার, ধীর গতির উদ্ধার অভিযান
দেশটির তিনটি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে ও ২২টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, ‘আঘাত ও অস্ত্রোপচারের চিকিৎসার জন্য জরুরি সহায়তা দরকার। রক্ত সরবরাহ, চেতনানাশক, অপরিহার্য চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা প্রয়োজন।’
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি ভবন ধসে পড়েছে।
১৯ দিন আগে
মিয়ানমারে নিহত বেড়ে ২ হাজার, ধীর গতির উদ্ধার অভিযান
মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দুই হাজারে পৌঁছেছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধার অভিযান ধীর গতিতে চলছে। গেল শুক্রবার দিনের মাঝামাঝিতে এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছে দেশটিতে। এরপর থেকে নিহতের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, একটি মঠ ভেঙে ২০০ বৌদ্ধ ভিক্ষু নিহত হয়েছেন। একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় ধসে পড়লে ৫০টি শিশুর প্রাণহাটি ঘটেছে। আর জুমাতুল বিদার নামাজ আদায়ের সময়ে সাত শতাধিক মুসল্লি নিহত হয়েছেন।
সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পটি উৎপত্তি স্থল দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে। এতে শহরের বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সড়কগুলো ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। আর ভেঙে মাটিতে মিশে গেছে শত শত ভবন।
জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থাগুলো হুঁশিয়ারি করে জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে মিয়ানমারে খাদ্যসংকট ও রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। গৃহযুদ্ধে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় আগে থেকেই প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে সেখানে। এই দুর্যোগ সেই পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।আরও পড়ুন: জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জ্বালানি সংকট ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য ভারী যন্ত্রপাতিরও ঘাটতি রয়েছে। এতে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও হাত দিয়ে জীবিতদের উদ্ধার করতে হচ্ছে অনেককে।
ভেঙেপড়া মান্দালয়ের ইউ হ্লা থেন মঠের উদ্ধারকারীরা বলছেন, ‘তারা এখনো ১৫০ ভিক্ষুকের মরদেহ খুঁজে বেড়াচ্ছেন।’
মিয়ানমার ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রোগ্রাম উপ-পরিচালক লরেন ইলারি বলেন, ‘কী মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা বর্তমান পর্যায়ে এসে আমরা পরিষ্কার হতে পারছি না। মান্দালয়ের আশি শতাংশ ভবন ভঙে পড়েছে।’
দেশটির তিনটি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে ও ২২টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, ‘আঘাত ও অস্ত্রোপচারের চিকিৎসার জন্য জরুরি সহায়তা দরকার। রক্ত সরবরাহ, চেতনানাশক, অপরিহার্য চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা প্রয়োজন।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি ভবন ধসে পড়েছে।
১৯ দিন আগে