মতামত
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাফল্যের সম্ভাবনায় ভারতের সর্বোত্তম স্বার্থ
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারলে তাতে ভারতের সর্বোত্তম স্বার্থ রয়েছে। একজন গর্বিত আমেরিকান এবং ভারতের সন্তান হিসেবে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে আমি আশাবাদী।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার তিন দিন পর ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে শপথ নেন। ইউনূস, যাকে আমি বন্ধু মনে করি এবং কয়েক দশক ধরে চিনি, শিক্ষার্থী আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের অনুরোধে এ দায়িত্ব নেন।
আমি এমন একজন উদ্যোক্তা, যে নতুন আইডিয়ার শক্তিতে বিশ্বাসী এবং টেকসই উদ্যোগ ও এর প্রভাব নিয়ে আগ্রহী। ইউনূস তার জীবনে যা কিছু অর্জন করেছেন তাতে আমি বিস্মিত। আমি আমার বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বে সকল প্রাণের জন্য মঙ্গলজনক এমন প্রযুক্তির জন্য কাজ করি।
অধ্যাপক ইউনূস অন্তহীন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ইতিবাচক প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের মডেলগুলোর একটি সিরিজ তৈরি করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কয়েক হাজার দরিদ্র নারীর হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিতে সফল হয়েছিলেন, যাতে তারা নিজ উদ্যোগে অর্থ উপার্জন করতে পারে।
আমি জনজীবন ও পরিবেশ রক্ষায় উৎসাহী। অধ্যাপক ইউনূস ১৯৯৫ সালে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন যেটি ১.৮ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম এবং ১ মিলিয়ন ক্লিন কুক স্টোভ ইনস্টল করেছে। এটিও মূলত বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলেই হয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের অবদানও এখানে স্মরণীয়, যা ১০ মিলিয়নেরও বেশি দরিদ্র নারীদের ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। এই ক্ষুদ্রঋণ থেকে অনেকেই উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়েছেন। ভারত ও অন্যান্য অনেক দেশেও একই মডেলে কাজ হয়েছে।
কিন্তু এখন, অধ্যাপক ইউনূস একটি নতুন চ্যালেঞ্জের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ, যেখানে ১৭০ মিলিয়নেরও বেশি লোক বাস করেন। এটি এমন একটি দেশ যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা বাস করে, অথচ যার আয়তন ইলিনয় রাজ্যের সমান।
বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ইউনূসের সাফল্য কামনা করেন। আমি তাদের একজন। কিন্তু এমনও অনেকে আছেন যারা তাকে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করতে চায়; অনেকে তার নেতৃত্ব নিয়ে মিথ্যা বয়ানও ছড়িয়ে যাচ্ছেন।
আমি তার মূল্যবোধ, তার পদ্ধতি এবং প্রাথমিকভাবে তার নেতৃত্বের ফলাফল নিয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে চাই।
প্রথম দুই মাসে তিনি পুলিশ বাহিনীকে কাজে ফিরিয়েছেন, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য সক্রিয় ব্যবস্থা নিয়েছে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছে, আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে পরামর্শ দিয়েছেন সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য এবং বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে (যেটি তিনি দায়িত্ব গ্রহণের সময় বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল)।
তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কার্যকরভাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং নিউইয়র্কে থাকাকালীন বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে ৫০টিরও বেশি ফলপ্রসূ বৈঠক করেছেন।
আমি তাকে তার ক্যারিয়ার জুড়ে যে মূল্যবোধ এবং পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখেছি নতুন ভূমিকায় কাজ করার সময়ও তিনি তা প্রয়োগ করেছেন। সেগুলো হলো- মূল বিষয়গুলোতে একটি জাতীয় ঐক্যমত তৈরি করা, কোনটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে তা নির্ধারণ করার জন্য পরীক্ষা করা, নাগরিকদের (বিশেষ করে যুবকদের) ব্যবহারিক এবং গঠনমূলক কাজে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করা, ধর্ম, লিঙ্গ বা জাতি নির্বিশেষে সকল মানুষকে সম্মান করা । তিনি বাস্তববাদী ও সেইসঙ্গে প্রচণ্ড উদ্যমী (৮৪ বছর বয়সী হওয়া সত্ত্বেও)।
কিন্তু অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। একটি সরকারকে নেতৃত্ব দেওয়া সামাজিক ব্যবসা এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চালানোর চেয়ে বহুগুণ বেশি কঠিন হতে পারে। ক্ষমতা হারানো পূর্ববর্তী সরকার দ্বারা সুবিধাপ্রাপ্ত একটি গোষ্ঠীও চায় তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হোক। বছরের পর বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি দ্রুত ফিরতে চায়। তবে আমি বিশ্বাস করি ইউনূস তার কাজ করে যেতে পারবেন।
গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের জনগণ এবং সারা বিশ্বের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে একটি চিঠি, যেখানে ৯২ জন নোবেল বিজয়ীসহ ১৯৮ জন বিশ্ব নেতার সই ছিল সেখানে আমি সইও করেছিলাম।
সেখানে বলা হয়েছিল, ‘অধ্যাপক ইউনূসকে শেষ পর্যন্ত সমগ্র দেশের, বিশেষ করে সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করার জন্য মুক্ত হতে দেখে আমরা উচ্ছ্বসিত, যে আহ্বান তিনি ছয় দশক ধরে অত্যন্ত জোরালোভাবে এবং সাফল্যের সঙ্গে অনুসরণ করেছেন।’
এই ভূমিকায় তার প্রথম দিকের সাফল্য বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য শুভ সূচনা। একটি সফল বাংলাদেশ ভারতের শক্তিশালী মিত্র হওয়ার সম্ভাবনা রাখে, ব্যর্থ বাংলাদেশের তুলনায়।
আমাদের সবার উচিত অধ্যাপক ইউনূসের এই গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তীকালীন ভূমিকার অগ্রগতি অব্যাহত রাখার দিকে মনোনিবেশ করা, কারণ বাংলাদেশের সম্ভাবনায় পৌঁছানোতেই ভারতের সর্বোত্তম স্বার্থ।
লেখক: বিনোদ খোসলা একজন ভারতীয়-আমেরিকান ব্যবসায়ী এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট।
এই মতামত নিবন্ধটি এর আগে ভারতের দ্য ওয়্যারে প্রকাশিত হয়েছে।
(বি.দ্র. ইউএনবির সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামত নাও মিলতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, ইউএনবির নয়।)
১ মাস আগে
অব্যাহত ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বে উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ি একসঙ্গে
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াংয়ের আমন্ত্রণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ই জুলাই সরকারি সফরে চীনে যাবেন। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫ম চীন সফর এবং ৫ বছর পর তার প্রথম চীন সফর।
অতীতের অর্জনগুলোর ওপর ভিত্তি করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলোর ভবিষ্যৎকে আরও অগ্রগামী ও অধিকতর সাফল্যমণ্ডিত করতে এই সফরটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য বহন করে।
সফরকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক ও সাক্ষাৎ করবেন। এই সফরটি নিশ্চিতভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলোতে ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতায় প্রাণবন্ত উদ্দীপনা জোগাবে এবং চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে নতুন অর্জনকে উন্নীত করবে; সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যেকার বন্ধুত্ব সম্মিলিতভাবে উভয় দেশেরই পূর্ববর্তী প্রজন্মের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও লালিত। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে বিগত ৪৯ বছরে দু'দেশ সর্বদাই পারস্পরিক কল্যাণ; উভয় পক্ষের জন্য সমানভাবে লাভজনক ফলাফল অর্জনের জন্য একে অপরকে নিজেদের সমকক্ষ হিসেবে সম্মান করেছে এবং সমতাভিত্তিক আচরণ বজায় রেখেছে; একে অপরের মূল স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরস্পরকে সমর্থন করেছে; নিজ নিজ উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনের পথে একত্রে কাজ করেছে। আর এরই মধ্যে দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান ও দু'দেশের মধ্যে পারস্পরিক কল্যাণমূলক সহযোগিতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা এক শক্তিশালী জীবনীশক্তি, গতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির সক্ষমতা প্রদর্শন করে, যা কোনো তৃতীয় পক্ষকে লক্ষ্য করে স্থাপিত নয়। আর এই সহযোগিতা উভয় দেশের জনগণ কর্তৃক ব্যাপকভাবে স্বাগত ও সমর্থিত, যা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতায় অবদান রাখার পাশাপাশি উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ অনেকবার পুনর্ব্যক্ত করেছেন, চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু। এটি দু'দেশের সম্পর্কের সবচেয়ে প্রাণবন্ত চিত্র।
কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ৪৯ বছরে চীন ও বাংলাদেশ তাদের নিজ নিজ জাতীয় নির্মাণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ প্রচেষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দারিদ্র্য বিমোচনের যুদ্ধে জয়ী হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব দিক থেকে একটি পরিমিতিপূর্ণ সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন করেছে এবং চীনা আধুনিকায়নের মাধ্যমে চীনকে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ও জাতীয় পুনরুজ্জীবন অর্জনের মহান উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে ও দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার নিজস্ব স্বনির্ভরতার ওপর নির্ভর করে প্রায় ১৮০ মিলিয়ন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করেছে।
গত এক দশকে জিডিপির গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যেখানে মোট জিডিপির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ২ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি থেকে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির একটিতে রূপান্তরিত হয়েছে। যা গড় আয়ু, সাক্ষরতার হার ও নারী শ্রমশক্তির অংশ গ্রহণের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর এর মধ্যে দিয়ে সৃষ্টি করেছে ‘বে অব বেঙ্গল মিরাকল’ ও পরিণত হয়েছে গ্লোবাল সাউথের এক অনন্য নেতৃস্থানীয় দেশে।
বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পথে রয়েছে এবং ‘ভিশন ২০৪১’ ও ‘সোনার বাংলা’ স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হয়ে ২০২৬ সালে একটি মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩১ সালে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার উদ্দেশ্যে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল উন্নয়ন উভয় দেশের নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা থেকে অবিচ্ছেদ্য। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাংলাদেশে একটি ঐতিহাসিক রাষ্ট্রীয় সফর করেছেন। সফরকালে, তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দু'দেশের সম্পর্ককে সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করেছেন, যা নতুন যুগে চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার পথ নির্দেশ করে।
২০১৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময়, সম্পর্কটি আরও একটি নতুন স্তরে উন্নীত হয়। চীন জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায়, বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতা এবং স্বাধীনভাবে তার জাতীয় অবস্থার সঙ্গে মানানসই উন্নয়নের পথ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণেও চীন বাংলাদেশকে সমর্থন করে। অন্যদিকে, বাংলাদেশও দৃঢ়ভাবে এক-চীন নীতি মেনে চলে এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন স্বার্থ রক্ষায় চীনকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। চীন ও বাংলাদেশ একই ধরনের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতাকে বহন করে, একই ধরনের বৈদেশিক নীতি, মূল্যবোধ ও উন্নয়ন ধারণা মেনে চলে এবং সবসময় একে অপরকে বুঝতে পারে ও সমর্থন করে। বাংলাদেশের আধুনিকায়নের পথে চীন বিশ্বস্ত সহযোগী ও সক্রিয় অবদানকারী।
চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিশেষত্ব উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার মধ্যে নিহিত। চীন টানা ১৩ বছর ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ, চীন বাংলাদেশে ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা এটিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদেশী বিনিয়োগের উৎসে পরিণত করেছে।
চীন বাংলাদেশে ৭টি রেলপথ, ১২টি মহাসড়ক, ২১টি সেতু ও ৩১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। বিশেষ করে যেহেতু বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিশ্রুতিশীল ভূমি ‘সোনালী বঙ্গোপসাগর’ এ শিকড় গেড়েছে, চীন বাংলাদেশের জন্য একের পর এক যুগান্তকারী প্রকল্প এবং বড় আকারের প্রকৌশল প্রকল্প নির্মাণ করেছে, যার মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল এবং দাশেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট অন্যতম, যেগুলো বাংলাদেশের জনগণকে বাস্তব সুবিধা প্রদান করছে।
এই মুহূর্তে প্রায় ১ হাজার চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করছে, যা এ দেশে ৫ লাখ ৫০ হাজার জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ এনে দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিআরআইয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তার মতে এটি বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক গভীরভাবে নিহিত রয়েছে দু'দেশের জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠতম বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে। গত বছর আন্তর্জাতিক শিশু দিবসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘আলিফা চীন’ নামে এক বাংলাদেশি শিশুর চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি তাকে কঠোরভাবে পড়াশোনা করতে, তার স্বপ্নগুলো অনুসরণ করতে এবং বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যেকার ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে উৎসাহিত করেছিলেন। শিশু ‘চীন’ এর গল্পটি আমাদের দু'দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধনের প্রতীক।
বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে অধ্যয়ন করছে এবং দুটি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ও একটি কনফুসিয়াস ক্লাসরুম গত এক বছরে বাংলাদেশের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। চীনা ভাষা শেখার একটি ঢেউ বাংলাদেশের সর্বত্র বয়ে গেছে। দ্য সেন্টার ফর চায়না স্টাডিজ ইন ঢাকা ইউনিভার্সিটি (সিসিএস) দু'দেশের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং একাডেমিয়ার মধ্যে সহযোগিতার জন্য একটি নতুন, বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম প্রদান করেছে।
বেইজিং ও ঢাকার মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট যথাক্রমে এয়ার চায়না ও চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স এই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করবে। ফ্লাইটের সংখ্যা এর ফলে প্রতি সপ্তাহে ৮০টি ফ্লাইটে উন্নীত হবে, যার ধারণক্ষমতা রয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি যাত্রীর। আর এর ফলে, কর্মী বিনিময় আরও বাড়বে এবং চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসায়িক বিনিয়োগের বৃদ্ধি ঘটবে।
পরপর দু'বছর ধরে প্রামাণিক বাংলাদেশি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কর্তৃক পরিচালিত ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় চিত্র’ শীর্ষক সমীক্ষা অনুসারে, ৯০ শতাংশেরও বেশি উত্তরদাতারা বিশ্বাস করেন যে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা ইতিবাচক এবং এর মধ্য দিয়ে প্রতীয়মান- চীনের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের অনুমোদন ও বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে।
চীন ও বাংলাদেশ বহুপক্ষীয় ক্ষেত্রেও একে অপরকে সমর্থন করে এবং যৌথভাবে আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখে। চীন টানা ২৫ বছর ধরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশনের জন্য বাংলাদেশের উদ্যোগকে সমর্থন করে, ব্রিকসের অংশীদার রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিকে সমর্থন করে এবং আশা করে যে বাংলাদেশ দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রিকসের সদস্য হবে।
এছাড়াও চীন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অসামান্য অবদান এবং বিপুল ত্যাগের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে। গণতন্ত্রের প্রচার, মানবাধিকার সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়নের মতো বিষয়ে চীন ও বাংলাদেশ একই অবস্থানে রয়েছে। দু'দেশ জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের মতো বহুপক্ষীয় সংস্থা এবং প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা করে। চীন ও বাংলাদেশ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত ও ইউক্রেন সংকটের মতো ইস্যুতে সহযোগিতা জোরদার করেছে এবং বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একসঙ্গে কাজ করছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ যে বিশাল ভার বহন করে চলেছে চীন তা বোঝে এবং সহানুভূতি প্রকাশ করে। প্রত্যাবাসনই এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়। রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে চীন একটি রাজনৈতিক মীমাংসার জন্য মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে যুক্ত করতে, রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধবিরতি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে এবং রোহিঙ্গা জনগণের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু জন্য কোনো প্রচেষ্টাই বাদ রাখছে না।
‘সঠিক পন্থায় সুগঠিত অংশীদারিত্ব ভৌগলিক দূরত্বকে হার মানায়; এটি আঠার চেয়ে আরও আঠালো এবং ধাতু ও পাথরের চেয়ে আরও শক্তিশালী।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় আশা করা হচ্ছে, উভয় পক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছাবে এবং অবকাঠামো, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, চীনে কৃষি পণ্য রপ্তানি, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন, ডিজিটাল অর্থনীতি, দুর্যোগ প্রতিরোধ, দারিদ্র্য বিমোচন, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মতো ক্ষেত্রগুলোতে একাধিক সহযোগিতার নথি ও সমঝোতা স্মারকে সই করবে।
চীন এই সফরকে দু'দেশের মধ্যে রাজনৈতিক পারস্পরিক বিশ্বাসকে আরও সুগভীর করার, উন্নয়ন কৌশলের সমন্বয়কে শক্তিশালী করার, ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বকে সুসংহত করার এবং চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের স্বপ্ন ও বাংলাদেশের ‘ভিশন ২০৪১’ বাস্তবায়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের পূর্ণাঙ্গ সাফল্য কামনা করছি! চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক!
ইয়াও ওয়েন: বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত
৫ মাস আগে
হাসিনার ভারত সফর: বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে নেবে
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৮ ঘণ্টা সফরে দিল্লি এসেছিলেন। ভারতে হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে তার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। যেখানে প্রতিরক্ষা থেকে সীমান্ত সংযোগ, সন্ত্রাস মোকাবিলা থেকে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় যৌথ অংশীদারি ইত্যাদি সবই ছিল। ভারত সরকারের সঙ্গে তিনি ১০টি চুক্তি করে গেছেন। সেই চুক্তিতে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ ১৬ আনা নয়, ১৮ আনাই সফল হয়েছেন।
ভারতে যারা এখনও বাংলাদেশ সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন, তাদের অনেকের সঙ্গেই আমার হাসিনার ভারত সফর প্রসঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের মতে, এসব চুক্তি বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে হাসিনা ঢাকা ফিরে গিয়ে আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব পালন করেছেন। সেখানেও যা খবর পাওয়া গেছে, তার দেশ এই চুক্তির মধ্যে যথেষ্ট আশার আলো দেখতে পাচ্ছে।
এসব দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মূল বিষয়ের দিকে এবারে চোখ ফেরানো যাক: বাংলাদেশের অসুস্থদের জন্য ই ভিসা, রাজশাহী-কলকাতা নতুন রেল সংযোগ, চট্টগ্রাম-কলকাতা নতুন বাস সংযোগ, গেদে থেকে দলগাঁও মালবাহী রেল সংযোগ, রংপুরে নতুন সরকারি হাইকমিশন, ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ, সিরাজগঞ্জে ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো তৈরি করা, গঙ্গা চুক্তি নবীকরণে যৌথ কারিগরি দল, যৌথ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় উদ্যোগ এবং তিস্তা সংরক্ষণ ও পরিচালন প্রকল্পের জন্য ভারতীয় বিশেষজ্ঞ দলের বাংলাদেশ সফর।
এই নতুন সমঝোতা পত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তিস্তা সংক্রান্ত পদক্ষেপ। কারণ, ধাক্কা খেয়েছে চীন। ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের আঞ্চলিক দলের মুখ্যমন্ত্রী মমতাও জোর ধাক্কা খেয়েছেন। এই খবর প্রকাশিত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি করেছেন ফারাক্কা চুক্তি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। তিনি এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে কৈফিয়তও দাবি করেছেন।
২৮ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বাবুর সঙ্গে কথা বলে ৩০ বছরের চুক্তি হয়েছিল, যা শেষ হবে ২০২৬ সালে। ওই চুক্তি হয়েছিল জাতিপুঞ্জের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন জ্যোতি বসু এবং কংগ্রেস নেতা বরকত গনি খান চৌধুরী। এই ফারাক্কা নিয়ে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর খুনি জিয়াউর রহমান ভারতের বিরুদ্ধে জাতিপুঞ্জে নালিশ জানিয়েছিলেন। সেই নালিশের জবাব দিতে ইন্দিরা গান্ধী জাতিপুঞ্জে পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ ও সেচমন্ত্রী মালদার গনি খান চৌধুরীকে। বরকত সাহেব নিউইয়র্কে জাতিপুঞ্জে অন্তত ৫০টা দেশের সঙ্গে কথা বলে বুঝিয়েছিলেন যে বাংলাদেশকে মাত্র ৪ বছর হল আমরাই স্বাধীন করে দিয়েছি, হঠাৎ পানির জন্য এখানে কেন?
তিনি আরও বলেন, ‘রক্ত দিয়েছি, পানিও দেব, কিন্তু এখানে নয়। বাংলাদেশকে আসতে হবে ঢাকা, দিল্লি, কলকাতা ও মালদায়।’ জাতিপুঞ্জের প্রেস গ্যালারিতে তখন আমিও বসেছিলাম।
হঠাৎ ৩০ বছর পরে মমতা কেন তিস্তা নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন? তিনি ভুলে গেছেন যে তিনি একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, দেশের প্রধানমন্ত্রী নন। তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ঢাকা সফরের আগে তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননকে তিন তিন বার কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন মমতার সঙ্গে কথা বলতে। শেষবারে মেনন তারই ব্যাচমেট মুখ্যসচিব প্রসাদ রায়কে মমতার সামনে বলে এলেন যে আপনি দয়া করে আপনার মুখ্যমন্ত্রীকে ইংরেজি শেখান, উনি জানেন না, তাই আমার কোনো কথাই উনি বুঝতে পারছেন না।
এবারে দেখা যাক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সাফল্য। হাসিনার সফর নিয়ে আমি বিদেশমন্ত্রকের অবসরপ্রাপ্ত সচিবদের সঙ্গে কথা বলেছি। কথা বলেছি মনমোহন সিংয়ের আমলে প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেননের সঙ্গেও।
তিনিও বলেছেন- এই চুক্তি হাসিনার অভিজ্ঞতা ও পরিণতমনস্কতা প্রমাণ করে। আশা করি বাংলাদেশের মানুষও এতে খুশি হবেন। শোনা গিয়েছিল সুখা মরসুমে জল ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশ তিস্তার উপরে একটি বাঁধ তৈরি করবেন যার খরচ হবে ১ বিলিয়ন ডলার। এই টাকাটা অল্প সুদে ভারত বাংলাদেশকে দেবে। চীন এই সাহায্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। ভারত সেই পথ বন্ধ করে দিয়েছে। অভিযোগের পরে অভিযোগ ছিল যে চীন আওয়ামী লীগের কিছু নেতার মাধ্যমে তদবির শুরু করেছিল।
বাংলাদেশের উত্তর খণ্ডের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ভারতীয় ভিসা অফিস খোলা, এই চুক্তিতে তাও অনুমোদিত হয়েছে। দুই দেশের পর্যটন ব্যবসা বৃদ্ধিতে এই চুক্তি অনেকটাই কার্যকরী হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল, তবে তা নির্ভর করছে দুই দেশের ভিসা সংক্রান্ত নিয়মের শিথিলতার ওপর।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মতে, গত এক বছরের মধ্যে এবারের বৈঠকটি ছিল একেবারেই আলাদা। কারণ তৃতীয় বার তারা সরকার গঠন করার পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই আমাদের প্রথম রাষ্ট্রীয় অতিথি। হাসিনা মনে করেন, দু’দেশের সুসম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই ঢাকা-দিল্লি নতুনভাবে পথ চলা শুরু করেছে।
ভারত বাংলাদেশ চুক্তির ১০টি বিষয়ই দু’দেশের অনেক সমস্যার সমাধান করবে। এ বিষয়ে ভারতের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কোনো দ্বিমত নেই। তারা সবাই খুশি।
লেখক: মিডনাইট মেসাকার গ্রন্থের লেখক, প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
(বি.দ্র. ইউএনবির সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামত নাও মিলতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো দায়ভার ইউএনবি নেবে না।)
৫ মাস আগে
১৭ মে: বাংলাদেশের ইতিহাসে সোনার আখরে লেখা দিন
বাংলাদেশের চলমান ইতিহাসে ১৯৮১’র ১৭ মে বঙ্গকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনাটি যে কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা যত দিন যাচ্ছে ততই স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ক্ষমতায় আসা প্রতিক্রিয়াশীল সামরিক স্বৈরশাসকেরা স্বাধীন বাংলাদেশকে পুনরায় যেভাবে উল্টোরথে চড়িয়ে অধঃপাতে নিয়ে যাচ্ছিল, বঙ্গবন্ধুকন্যা সেদিন ফিরে না এলে আর কোনোদিন নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যের সোজা পথে ফিরে আসা বাংলাদেশের পক্ষে আদৌ সম্ভব হতো কি না, সে-ব্যাপারে গভীর সন্দেহের অবকাশ আছে।
জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের গুরুত্ব সঠিকভাবে অনুধাবনের জন্য তৎকালীন রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর সামান্য আলোকপাত করা প্রয়োজন মনে করছি। কারণ, এ ইতিহাস পুরনো প্রজন্মের অনেকের জানা থাকলেও এ ব্যাপারে নতুন প্রজন্মের কোনো ধারণা নেই বললেই চলে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেদিন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, জননেত্রী শেখ হাসিনা তখন তার ছোটবোন শেখ রেহানা এবং দুই সন্তানসহ স্বামীর কর্মস্থল পশ্চিম জার্মানিতে ছিলেন, যার ফলে তারা প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বাকি সদস্যরা এবং সম্প্রসারিত পরিবারের অনেক সদস্যও সেদিন শিকার হন শুধু বাংলার নয়, বিশ্বের এক নৃশংসতম রাজনৈতিক গণহত্যাকাণ্ডের।
এ হত্যাকাণ্ডের পর জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া ভারত সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন এবং এ আবেদন অনুমোদিত হয় ২৪ আগস্ট। জার্মানির ভারতীয় দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জননেত্রী শেখ হাসিনা, ওয়াজেদ মিয়া, তাদের দুই শিশুসন্তান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ রেহানাকে ১৯৭৫ এর ২৫ আগস্ট সকালে ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দর থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানে করে দিল্লি পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
দিল্লিতে পৌঁছানোর কয়েকদিন পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাসভবনে গিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্বামী বাংলাদেশের ১৫ আগস্টের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত হন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১, টানা প্রায় ৬ বছর দিল্লিতে তাদের নির্বাসিত জীবন কাটানোর সময় আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা বিভিন্ন সময়ে দিল্লিতে যান তাদের খোঁজখবর নিতে এবং দেশ ও দলের এক গভীরতম সঙ্কটলগ্নে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজি করানোর অভিপ্রায় নিয়ে। এদের মধ্যে ছিলেন আবদুর রাজ্জাক, জিল্লুর রহমান, আবদুস সামাদ আজাদ, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, তৎকালীন যুবনেতা আমির হোসেন আমু প্রমুখ।
আরও পড়ুন: স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
এরপর ১৯৮১’র ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে জননেত্রী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
সম্মেলনের এক সপ্তাহ পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি আবদুল মালেক উকিল, জিল্লুর রহমান, আবদুল মান্নান, আবদুস সামাদ, এম. কোরবান আলী, বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, গোলাম আকবর চৌধুরী, সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, আইভি রহমান, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ ঢাকা থেকে দিল্লিতে যান এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে পর পর কয়েকটি বৈঠকে বসে নেত্রীকে দেশে ফিরতে রাজি করান এবং ফেরার পরবর্তী কর্মপন্থার খসড়া পরিকল্পনা করেন।
দলীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে এবং বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথ থেকে জোর করে বিচ্যুত করা জাতিকে আবার ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে বঙ্গবন্ধু-তনয়ার প্রয়োজনের গভীরতা তারা সেদিন নেত্রীকে বোঝাতে পেরেছিলেন। দেশ, জাতি আর দলের সেই ভয়াবহ সঙ্কটকালে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে জননেত্রী শেখ হাসিনা অবশেষে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দেশে ফিরতে সম্মত হন।
দিল্লিতে দুই শিশুসন্তান জয় আর পুতুলকে ছোটবোন শেখ রেহানার কাছে রেখে ১৯৮১’র ১৭ মে দেশে ফেরেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের তৎকালীন রাজনৈতিক-সামাজিক আবহের মতো সেদিনকার আবহাওয়াও ছিল তীব্র ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেগে বইছিল ঝোড়ো বাতাস, সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়বাদল অগ্রাহ্য করে সেদিন লাখ লাখ লোক জমা হয়েছিল তাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্যে।
সেদিন বিকাল ৪টায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে জননেত্রী শেখ হাসিনা পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে চরাচর মুখরিত হয়ে ওঠে। লাখ লাখ মানুষের কণ্ঠে সমস্বরে ঘোষিত হয়- ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’; ‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সঙ্গে’; ‘পিতৃহত্যার বদলা নিতে, লাখ ভাই বেঁচে আছে’; ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’...।
দেশের মাটিতে পা দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন জনতার উদ্দেশে অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই।... সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার ৪৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসি নি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’
দেশে ফিরে যেসব অঙ্গীকার নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন তার মধ্যে ছিল: বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় ৪ নেতা হত্যার বিচার, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার স্বৈরতন্ত্রের চিরঅবসান ঘটিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠা। এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কখনো পিছু হটেননি বঙ্গবন্ধুকন্যা।
দেশে ফেরার পর শুরু হয় সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম, যা চলে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনোকিছুই তাকে তার পথ থেকে একতিলও টলাতে পারে নি। বাংলার মানুষের হৃত অধিকার পুনরুদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বার বার স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। বাংলার জনগণ তার বৈপ্লবিক ভূমিকায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ভূষিত করেছে ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’ অভিধায়।
দেশে ফেরার পর জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার অপূর্ণ স্বপ্নকে সম্পূর্ণতা দেওয়ার পথে সব বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হতে পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানিয়ে বলেছিলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হতে হয়।’ মহান নেত্রী তার জীবন দিয়ে তার এ উক্তিকে সত্য প্রমাণিত করেছেন।
বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকাকালে ঘাতকেরা তার ওপর একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। বার বার তিনি সাক্ষাৎ মৃত্যুর মখোমুখি হয়েছেন, কিন্তু কিছুমাত্র ভ্রূক্ষেপ করেননি। বঙ্গকন্যার অদম্য সাহস আমাদেরকে প্রাণিত ও প্রণোদিত করে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের সংগ্রামে আরো সাহসী হয়ে ওঠায়। মৃত্যুঞ্জয়ী জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ সত্যিই এক মহৎ প্রেরণার নাম।
১৯৮১ থেকে ২০২৪- সুদীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৪ দশক পেরিয়ে যাওয়ার পর জননেত্রী শেখ হাসিনার সেদিনকার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আর অঙ্গীকারের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য ক্রমপরিস্ফূট হয়ে উঠছে। বঙ্গবন্ধু-কন্যা যদি সেদিন ফিরে না আসতেন, কবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, পাকিস্তানপন্থী, উগ্র সাম্প্রদায়িক, সামরিক স্বৈরাচারী অপশাসনের আগ্রাসন থেকে জাতি কোনোদিন মুক্তি পেতো কি না সন্দেহ। জাতির পিতা আর তার স্বপ্নের হন্তারকেরা জাতিকে যে-উল্টোরথে চড়িয়ে এক কৃষ্ণবিবরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, জননেত্রী শেখ হাসিনাই তার ৪৪ বছরব্যাপী সংগ্রাম আর সরকার পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার বিনিময়ে সেই উল্টোরথকে উন্নয়ন ও প্রগতির আলোকাভিমুখী সোজা পথে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস: ধানমন্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
১৯৮১’র ১৭ মে দেশে ফিরে জননেত্রী শেখ হাসিনা যেসব কথা বলেছিলেন, যেসব অঙ্গীকার করেছিলেন, সেগুলোকে সত্যে পরিণত করেছেন কঠোর নিষ্ঠা আর একাগ্র প্রচেষ্টায়। পঁচাত্তর-পরবর্তী প্রবল প্রতিকূল সময়ে বিরুদ্ধস্রোতে কুটোর মতো ভাসমান ও ভগ্নপ্রায় আওয়ামী লীগ তার সময়োপযোগী বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই আজ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে অনেক বেশি সুসংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পেরেছে।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আর ২০০৯ থেকে চলতি ২০২৪ পর্যন্ত মোট কুড়ি বছর প্রধানমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব সর্বোচ্চ যোগ্যতার সঙ্গে পালন করে চলেছেন। ২০২৩-এ জনগণের নিরঙ্কুশ রায় নিয়ে টানা চতুর্থবার এবং সব মিলিয়ে পঞ্চমবার ক্ষমতায় আসার সূত্রে এ দফায় তাকে আমরা আরো ৫ বছর সরকার-প্রধান হিসেবে পাচ্ছি, এটা জাতির জন্যে এক বিরাট পাওয়া। আগামীতে আবারো আমরা তাকে নির্বাচিত করব এবং আজীবন তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, এটাই আমাদের আশা।
এ ছাড়া ১১ বছরেরও বেশি সময় তিনি জাতীয় সংসদে একজন সংগ্রামী বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকাও পালন করেছেন। বঙ্গকন্যার হাত ধরে তার দল ও দেশ আজ প্রতিক্রিয়াশীল সামরিক স্বৈরাচারী অপশাসনের দুঃসহ স্মৃতিকে পেছনে ফেলে পৌঁছে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। জননেত্রী শেখ হাসিনার সেদিনকার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে বিশ্বসভায় সমুন্নত শিরে দাঁড়াতে শিখিয়েছে।
জননেত্রী শেখ হাসিনার গত ৪৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে অর্জিত মাইল ফলকগুলো হলো: সামরিক স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জাতির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশকে তিনিই আজ খাদ্যে সম্পূর্ণ স্বয়ম্ভর করে তুলতে পেরেছেন।
বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতার খুনিদের এবং একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন তথা রায় কার্যকর করিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের এক নতুন পথের অভিযাত্রী। তারই দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বের চোখে ‘উন্নয়নের আইকন’ হয়ে উঠেছে। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে কথিত বাংলাদেশ আজ পরিণত হয়েছে ‘স্বল্পোন্নত দেশ’ থেকে ‘উন্নয়নশীল দেশ’ এ।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন মঙ্গলবার উদযাপন করবে আ’লীগ
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রখর দূরদৃষ্টি, অক্লান্ত পরিশ্রম আর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ফলে দেশের এমজিডি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন, লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠা, কৃষি দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার মাধ্যমে পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
এ ছাড়া বাস্তবায়িত হয়েছে পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রো রেল, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল প্রভৃতি মেগা-প্রকল্পগুলো এবং বাস্তবায়নের পথে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রভৃতি আরো কিছু মেগা-প্রকল্প।
প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতক চক্রের হাতে পড়ে প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়া একটি দেশ ও জাতিকে আবার নিজের সুস্থ সবল দৃঢ় পায়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন অনাপোষ ও স্থিতপ্রতিজ্ঞ বঙ্গবন্ধু-তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন একটি সম্মানজনক পরিচিতি। আজ বাংলাদেশ বিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে তারই কারণে। তিনি আজ জাতীয় নেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রীর পর্যায়ে উন্নীত হয়েছেন।
বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ‘মানবতার জননী’, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাকে আজ অনেকটাই বাস্তবে পরিণত করেছে তার সুযোগ্য কন্যার গতিশীল নেতৃত্ব। আর এসব সম্ভব হচ্ছে শুধুমাত্র তিনি ১৯৮১’র ১৭ মে দেশে ফিরে আসার যুগান্তকারী সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন বলেই। আর সেকারণেই ১৭ মে দিনটি স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সোনার আখরে লেখা হয়ে গেছে।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট, শিক্ষাবিদ, ফোকলোরিস্ট ও অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
(বি.দ্র. ইউএনবির সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামত নাও মিলতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো দায়ভার ইউএনবি নেবে না।)
৭ মাস আগে
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের অবদান প্রশংসনীয়
বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের পথচলা শুরু ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির হাত ধরে। দীর্ঘ ৪১ বছরে ব্যাংকিংয়ের শরিয়াহ ভিত্তিক ধারাটি বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শরিয়াহ ভিত্তিক সেবামুখী ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কল্যাণ ধারার এ ব্যাংকিং সেবার পরিধি সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়ে দেশের অর্থনীতি ও উদ্যোক্তা সমাজকে জড়িয়ে রাখতে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে ইসলামিক ধারার ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
পরিসংখ্যান বিবেচনায় দেশের ব্যাংক খাতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এখন ইসলামি ধারার ব্যাংকিংয়ের আওতাধীন। এ জনপ্রিয়তার কারণে বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ ধারার ১০টি ইসলামি ব্যাংকের পাশাপাশি প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোও যুক্ত হচ্ছে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে। অনেক ব্যাংক তো বিশেষায়িত শাখা ও উইন্ডোর মাধ্যমে চালাচ্ছে ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম।
আরও পড়ুন: ভোটার উপস্থিতি কতটা জরুরি?
ইসলামি আর্থিক খাতকে এখন তার সম্পদের পরিপ্রেক্ষিতে যেমন বিভিন্ন ধরনের ইসলামিক অর্থায়ন, ইসলামিক বন্ড (সুকুক), ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড এবং ইসলামিক বিমা (তাকাফুল) ইত্যাদির মতো স্থানে অবস্থানের কারণে একটি বৈশ্বিক আর্থিক খাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ঝুঁকি ভাগাভাগি, অন্তর্ভুক্তি ও প্রকৃত সম্পদভিত্তিক লেনদেনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হচ্ছে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশ্ব পরিসরেও ইসলামি ব্যাংকিং এক অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। শুধু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে নয়; বরং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মনি, আর্জেন্টিনা, ডেনমার্ক, লুক্সেমবার্গ, সুইজারল্যান্ড ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়েকশ ইসলামি ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান শরিয়াহ সম্মত পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। দ্যা ব্যাংক অব উইটিয়ার-যুক্তরাষ্ট্র, আল রায়ান ব্যাংক পিএলসি-যুক্তরাজ্য, কেটি ব্যাংক-জার্মানি, দাউদ ইসলামিক ব্যাংক-আর্জেন্টিনা, ও ইসলামিক ব্যাংক ইন্টারন্যশনাল অব ডেনমার্ক উল্ল্যেখযোগ্য।
বিশ্বব্যাপী ইসলামি ব্যাংকগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বিশ্বব্যাপী ইসলামিক ফাইন্যান্সের মোট সম্পদের পরিমাণ চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি, যা আগামী ২০২৬ সাল নাগাদ প্রায় ছয় ট্রিলিয়নে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। বৈশ্বিক এ প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও এখন দিনে দিনে আরো শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলছে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত সহায়তাও খাতটির বিকাশে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিগত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে আমানত ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়ে দেশে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ হয়েছে।
শাখা ও কার্যক্রয় বিবেচনায় ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের সম্প্রসারণ হয়েছে ব্যাপক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক ছিল ১০টি। সারা দেশে ১ হাজার ৬৭১ টি শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে একই সময়ে দেশের পুরো ব্যাংক খাতে শাখা ছিল ১১ হাজার ২১৯টি। শাখার শতাংশের বিবেচনায় দেশের পুরো ব্যাংকিং খাতের ১৫ শতাংশ শাখা ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকের পাশাপাশি প্রচলিত ধারার ১৫টি ব্যাংকের ৩০টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা কাজ করছে। এছাড়া ১৫টি প্রচলিত ধারার বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৬১৫টি ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো এখন বাংলাদেশে ইসলামি আর্থিক সেবা দিচ্ছে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে ইসলামিক ব্যাংকিং। ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রমের দ্রুত আমানত সংগ্রহ ও সফলতার কারণে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর কাছেও তা ধীরে ধীরে আকর্ষণীয় ও লাভজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ যে ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী তা ইসলামিক ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি দেখেই বুঝা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে মোট আমানত ছিল ৪৩১৯.৮৯ বিলিয়ন টাকা। ২০২২ সালের একই প্রান্তিকের আমানত থেকে প্রায় ৩৯.৮৯ বিলিয়ন টাকা বেড়েছে যার প্রবৃদ্ধি ০.৯৩ শতাংশ। প্রচলিত ব্যাংকের উইন্ডোতে আমানত স্থিতি ১৯৩.৮৩ বিলিয়ন টাকা ও প্রচলিত ব্যাংকের শাখায় আমানত স্থিতি ১৭৪.৬৪ বিলিয়ন টাকা। ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার ৯১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। সব ইসলামিক ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির (আইবিবিপিএলসি) আমানত ছিল ৩৪.৫৪%। তাছাড়া, ইসলামী ব্যাংকের বর্তমানে ৩৯৪ টি শাখা ও ২৪৯টি উপশাখায় মোট ২ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহকের আমানত নিয়ে দেশে প্রথম সারির ব্যাংকে অবস্থান করছে।
বিনিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা জাতীয় উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বৃহৎ শিল্প, সিএমএসএমই তথা কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, ও মাঝারি বিনিয়োগে বৃহদাংশ অবদান যেমন রেখেছে তেমনি নির্মাণ খাত, সেবা শিল্প, ভোক্তা বিনিয়োগ, কৃষি খাত, মৎস্য খাতে বিশেষ অবদান রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের সর্বশেষ তথ্য মতে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ৪২৯০.৭১ বিলিয়ন টাকা দেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ বিতরণ করা হয় যা বিগত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের চেয়ে ৭৫.৯৫ বিলিয়ন টাকা বেশি। দেশের সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের বিনিয়োগের মধ্যে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিনিয়োগ ২৮ শতাংশ। দেশের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এতে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে যেখানে বিনিয়োগ বিতরণ করেছে প্রায় ৩৩.৬৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন: স্বাধীন দেশের প্রথম শীতের স্মৃতি
ইসলামী ব্যাংক খাত বৈদেশিক রেমিট্যান্স সংগ্রহ এবং বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মোট রেমিট্যান্স সংগ্রহ হয়েছে ২৮০.৪৭ বিলিয়ন টাকা, যা পূর্ববর্তী প্রান্তিকের চেয়ে ৭৮.২৫ বিলিয়ন বা ২৬.৩৮ শতাংশ বেশি। ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহে তৃতীয় প্রান্তিকে শীর্ষস্থান (৪৮.১৪%) ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি।
ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা কৃষি ও গ্রামীণ বিনিয়োগ কর্মসূচির বিভিন্ন উপখাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষি খাতে ১৫.৯০ বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করা হয়। দেশের সমগ্র ব্যাংকিং খাতের কৃষি বিনিয়োগ বিতরণের ১৬.৪৭ শতাংশ ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা হয়।
ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্যই হলো ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক মুক্তি আনা। ব্যবসায় সামাজিক দায়বদ্ধতা পরিপালনে ইসলমিক ব্যাংকগুলো সারা বিশ্বে যেমন উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে তেমনি বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। ইসলামিক ব্যাংকগুলো ব্যবসায় সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করে যাচ্ছে।
ইসলামি ব্যাংকগুলো যাকাত, খেলাপি বিনিয়োগ ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে শাস্তিমূলক চার্জ হিসেবে নেওয়া ক্ষতিপূরণ চার্জ এবং শরিয়াহ অনুমোদিত উপার্জনের অন্যান্য উৎস থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে সিএসআর কার্যক্রম করে থাকে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য ও দাতব্য সংস্থা সহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ যেমন বেওয়ারিশ লাশ দাফন, নবজাতককে উপহার, বনায়ন ও ফলবিথীতে ব্যয় করা হয়।
এ দিক দিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিএসআর নীতি পরিপালন করে সর্বোচ্চ পরিমাণ সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ব্যাংকের ২০২২ সালের তথ্যানুসারে ইসলামী ব্যাংক সরকারি ত্রাণ তহবিলসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, কর্মহীন, অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের মাঝে সর্বমোট ৩২৭.৩৬ কোটি টাকা বিতরণ করেছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সিএসআর বিতরণের হার ব্যাংকিং সেক্টরের মোট সিএসআর ব্যয়ের ২৯ শতাংশ। ২০২৩ সালের তথ্যানুসারে ব্যাংক সর্বমোট ১০০ কোটি টাকারও বেশি সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমে ব্যয় করেছে। এছাড়া, ইসলামী ব্যাংক এ পর্যন্ত সর্বমোট ১,৬৫৮ কোটি টাকা প্রায় ২ কোটি উপকারভোগীদের মাঝে সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের আওতায় ব্যয় করেছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে মামলা এবং ১৯৭১-এর ইতিহাসের ভবিষ্যৎ
৭ মাস আগে
স্বাধীন দেশের প্রথম শীতের স্মৃতি
স্বাধীনতার পর প্রথম নববর্ষের কথা মনে পড়ে কিন্তু তাতে অনেক অস্পষ্টতা। যেন দিনগুলো একসঙ্গে মিশে গেছে। একে অপরের সঙ্গে এতটাই এক যে আজকের এবং গতকালের মধ্যে তফাৎ বোঝা কঠিন। সেই সময়ের দিনগুলো, কাদের ও কী ছিল নিশ্চিত হওয়া যায় না। ১৬ ডিসেম্বর যে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস নিয়ে এসেছিল তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি কারণ নিহত ও নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীদের খবর আসতে থাকে।
লোকেরা অবাক হয়ে ভাবল কারা এই ভেতরের শত্রু। যারা আত্মসমর্পণ করেছিল তারা ছিল সরকারি বাহিনী। কিন্তু ঘরের ভেতর, নিজেদের যারা, খুনি ও হত্যাকারীরা, তারা তো জীবিত ছিল। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও তাই অনেকে নিজেদের বন্দুক হাতছাড়া করতে চায়নি। বুলেটের বিস্ফোরণের আওয়াজ যে কোনো রাতে বেজে উঠত, তখন বোঝা যেত সেগুলো কেবল "বীরত্ব" দেখানোর চেষ্টা ছিল না, একটা ফ্যান্টম ভয়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ, কারণ খুনিরা এখনও চারপাশে লুকিয়ে আছে। তাদের জানান দিচ্ছে আমরা আছি, রাইফেল আছে সঙ্গে।
২
কিছু মানুষ অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ে। আজকাল লোকে যখন ভাবে যে এই তো গতকাল পর্যন্ত আমি খারাপ ছিলাম না, আমি আশ্চর্য হই, নিজেকে জিজ্ঞাসা করি, ‘তারা কি ভেবেছে যে আমরা এইমাত্র পাপ ও লুটপাট, ঘৃণা ও চুরি আবিষ্কার করেছি? তারা কি মনে করে যে আমাদের অপরাধ প্রবণতা একটি সাম্প্রতিক উদ্ভাবন? আমরা বিশ্বাস করি যে আমরা সবাই ১৯৭১ সালে সাধু ছিলাম এবং সম্প্রতি পাপী হয়েছি?’ আমি জানি এটি এমন নয়। আমাদের গৌরব ও বিশ্বাসঘাতকতা উভয়ের সঙ্গে মিশ্রিত একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
৩
স্বাধীনতার পরপরই, সর্বত্র গোলাগুলি হচ্ছিল এবং কেউই জানত না কী ঘটছে। ঢাকা শহর প্রকৃতপক্ষে কারো নিয়ন্ত্রণে ছিল না যদিও ভারতীয় সেনাবাহিনী বিপুল সংখ্যক সৈন্য নিয়ে শহরে প্রবেশ করে। চারদিক থেকে বাংলাদেশি সৈন্যরাও প্রবেশ করছিল। বেশিরভাগই বেসামরিক এফএফ ছিল যারা হেঁটে ফিরছে শহরে।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিল টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকীর সৈন্য, যাদের স্বাগতম জানায় সবাই। কিন্তু কয়েকদিন পর পল্টন ময়দানে সবার সামনে বিহারি রাজাকারদের হত্যা করে বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রচুর নিন্দা কুড়ায় সে। কেউই এই ধরনের কাজ সমর্থন করেনি।
৪
আগে শীতকালে শীত পড়ত কিন্তু সে বছর সবাই কোনো না কোনো কারণে খুব শীত অনুভব করেছিল। মিরাজ আলী তার গ্রামে ফিরতে আগ্রহী হলেও থেকে যান। তিনি একজন ছোট দোকানদার কিন্তু দোকান বন্ধ করেননি। বলেন যে তার কাছে এক মাসের মালের স্টক রয়েছে এবং আশেপাশে ইতোমধ্যে জিনিসপত্রের অভাব দেখা দিয়েছে। যতদিন মাল আছে তিনি অপেক্ষা করবেন। তার বাবা-মা অসুস্থ, তার ভাই যুদ্ধে গেছেন। বাড়িতে কেউ নেই, তাই ফেরার দরকার ছিল কিন্তু তিনি যাননি। কয়েক মাস পরে তার সঙ্গে দেখা হয়। তখন শেষবার তার দোকানটি বিক্রি করে বন্ধ করে চলে যাচ্ছিলেন দেশে। তার বাবা মারা গেছেন আর তার ভাই ফিরে আসেননি। আমার ভাই বোনদের জন্য কিছু চকলেট লজেন্স দিয়ে চলে যান।
৫
আমার কিছু এফএফ বন্ধুরা একটি পার্টির আয়োজন করেছিল। সবাই আগের চেয়ে বেশি জোরে হাসছিল, কৌতুক করেছিল। প্রায় এক বছর নীরবতার পরে, কণ্ঠস্বর মুক্ত হতে পেরেছে। মুক্তি শুধু পাকিস্তানিদের কাছ থেকে নয়, নীরবতার কাছ থেকেও। মদও ছিল টেবিলে কিন্তু সবাই পান করেনি। আমার মনে আছে সবার গল্পগুজব, যুদ্ধের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা। কিন্তু সব গল্প পুরা সত্য ছিল না। এটা ঠিক, ভয় থেকে মুক্তি কল্পনাকেও মুক্ত করে। আমার খুব অদ্ভুত দুজন অতিথির সঙ্গে দেখা হয়। উভয়ই ভারত থেকে এসেছে। একজন ব্যবসায়ী যিনি স্বাধীনতার এক দিন পরেই পৌঁছে যান, এরই মধ্যে বন্ধুত্ব করেছেন অনেকের সঙ্গে, কথা বার্তা হচ্ছে। অন্যজন ছিল বেশ হাসি খুশি এক তরুণ। পরে জানলাম কলকাতা থেকে আশা নকশাল পাতি নেতা, এতদিন খুলনায় ছিল এবং ঢাকায় এসে যোগাযোগ শুরু করে। ১৯৭৫ এর পর আর দেখা হয়নি তাদের সঙ্গে।
৬
রাতে আমি সামাদের পরিবার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। নভেম্বরে তাকে হত্যা করা হয়, লাশ দাফন করা হয় ভারতে। বাড়িতে সবার মন খারাপ ছিল। তার বোন আমাকে জানায় যে, তার মা জায়নামাজ থেকে ওঠেননি। ছোট্ট বসার ঘরে বাবা শুধু স্তব্ধ হয়ে বসে থাকেন। আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম, তিনি তাকালেন, আমাকে দেখে আবার নিজের স্তব্ধতার কাছে ফেরত গেলেন। কিছুক্ষণ পর সালাম দিয়ে চলে এলাম। তিনি সাড়া দেননি।
আমি বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলাম। দুই পাশে নীরব ও সরব বাড়িগুলার দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম কে বাস করে সেখানে। কেবল হাঁটতে থাকলাম যতক্ষণ না আমি শুনতে পেলাম আমাদের বাড়ির কাছে বিপিন বাবু মাতাল হয়ে কিছু ভুলে যাওয়া গান গাইছেন আগামীর বছরগুলোকে স্বাগত জানিয়ে।
১১ মাস আগে
যুক্তরাজ্যে মামলা এবং ১৯৭১-এর ইতিহাসের ভবিষ্যৎ
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। সকাল থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল আর ফেসবুকের আলোচনাগুলো লক্ষ্য করছি। গুরুত্বপূর্ণ মতামত আর আবেগ উঠে এসেছে সেসব আলোচনায়। অনেকে আবার এই সুযোগে শহীদ দিবসের উত্তপ্ত তাওয়ায় গণতন্ত্র, নির্বাচন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদিও ভেজে নিচ্ছেন একটু করে।
এতে সমস্যা নেই। এসব বিষয় অবশ্যই গুরুত্বের দাবিদার এবং আলোচনাগুলো সবসময়ই প্রাসঙ্গিক। কিন্তু নির্দিষ্ট যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অন্তত আজকের এই দিনে ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ ও সময়োপযোগী ছিল বলে মনে করছিলাম; সেটি কোথাওই আর উত্থাপিত হতে দেখলাম না। তাই এই পোস্টটি লেখার তাগিদ অনুভব করছি। ধৈর্য্য ধরে যদি পড়েন (কারণ এটি একটি দীর্ঘ পোস্ট হতে যাচ্ছে) তাহলে কৃতজ্ঞ হব।
এই যে উপরে লিখলাম ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’, কথাটা কিন্তু এতটুকু বাড়িয়ে বলিনি। এই পোস্টটি পড়লে আপনার কাছেও হয়তো সেটি স্পষ্ট হবে এবং আপনিও একমত হবেন।
আমার মতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়া থেকে গত ১৫ বছরে এ সংক্রান্ত সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ঘটনাকে যদি চিহ্নিত করি আমরা, তাহলে সম্ভবত এই পোস্টে যে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করছি সেটি হতে যাচ্ছে তার একটি।
একটু ধারণা দিই, এমনকি হয়তো শাহবাগ আন্দোলনও এই তিন প্রধান ঘটনার তালিকার মধ্যে পড়বে বলে আমার মনে হয় না!
তাহলে একটু মন দিয়ে পড়ুন।
আপনারা জানেন, ১৯৭১ এর বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীদের একজন হিসেবে চৌধুরী মুঈনউদ্দিন নামে একজনের বিচার হয়েছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি)। আসামির অবর্তমানে তার বিচারের রায়ে তাকে সন্দেহাতীতভাবে দোষী সাব্যস্ত করে আইসিটি এবং তাকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয় ২০১৩ সালে।
আরও পড়ুন: বেদনায় ভরা দিন: শেখ হাসিনা
দণ্ডপ্রাপ্ত মুঈনউদ্দিন যুক্তরাজ্যে বসবাস করায় সেই সাজা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। কেন হয়নি বা কি কি করা সম্ভব ছিল বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে, তা নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করা যাবে; এখন সে কথা থাক। মুঈনউদ্দিনের পুরো ঘটনা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে নতুন মোড় নিয়েছে, সেটি মনে হয় আপনাদের সবার আগে জানা থাকা দরকার।
২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর জঙ্গীবাদ ও ইসলামিজম বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, মূলত অনলাইনে। সেখানকার একটি ‘ফুটনোটে’ চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের নাম উল্লেখ করে বলা হয় তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইসিটির একটি রায়ও রয়েছে।
যুক্তরাজ্যে মুঈনউদ্দিনের নিযুক্ত আইনজীবীরা দাবি করেন, রিপোর্টে তার রায়ের এই বিষয়টির এমনকি উল্লেখও নাকি তার বিরুদ্ধে মানহানির শামিল এবং এই মর্মে তারা স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে আইনি নোটিশ পাঠায়। স্বরাষ্ট্র দপ্তর এই লিগ্যাল নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে সেই ফুটনোটটি সরিয়েও নেয় অনলাইন থেকে। তারপরও মুঈনউদ্দিন যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে মানহানির মামলা করেন।
আদালতে মুঈনউদ্দিনের বক্তব্য ছিল বাংলাদেশের আদালতের রায়কে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়টিই তার জন্য মানহানিকর, কারণ বাংলাদেশের আইসিটির নাকি কোনো ধরনেরই গ্রহণযোগ্যতা নেই।
সুতরাং, আইসিটির মাধ্যমে ১৯৭১ এর যে ধরনের ইতিহাস প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং রায় দেওয়া হয়েছে তার সবই ভিত্তিহীন। এসবের ফলে নাকি যুক্তরাজ্যের একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে মুঈনউদ্দিনের মানবাধিকার ও সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে।
বিপরীত পক্ষ (অর্থাৎ, যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের আইনজীবীরা) পাল্টা অভিযোগ আনে এই বলে, অন্য একটি দেশের আদালতে ইতোমধ্যে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তিকৃত একটি বিষয় পুনরায় উত্থাপন করে মুঈনউদ্দিন যেটা করার চেষ্টা করছে তা হলো মূলত যুক্তরাজ্যের আইনব্যবস্থার অপব্যবহার। সুতরাং, মুঈনউদ্দিনের মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হোক।
হয়তো বুঝতে পারছেন, পরোক্ষভাবে এই মামলাটির অন্যতম বিচার্য বিষয়ই হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাজ্যের আদালতে আইসিটি আর বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই।
যুক্তরাজ্য হাইকোর্ট মুঈনউদ্দিনের মামলাটি খারিজের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে মুঈনউদ্দিন আপিল করেন যুক্তরাজ্যের উচ্চতর আপিল আদালতে।আপিল আদালতের তিনজন বিচারকের মধ্যে দুইজন হাইকোর্টের নির্দেশের সঙ্গে একমত হন, কিন্তু একজন বিচারক মুঈনউদ্দিনের পক্ষে (অর্থাৎ মামলা খারিজের বিপক্ষে) রায় দেন। এই এক বিচারকের রায়ের ভিত্তিতে মুঈনউদ্দিন আবার আপিল করেন, এবার যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে। এটাই যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত।
গত ১ ও ২ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে মামলার বিষয়টির চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচ বিচারকের সামনে সেই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মুঈনউদ্দিন ও স্বরাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের প্রধান দু'টি ল'ফার্মের আইনজীবীরা সেখানে পাল্টাপাল্টি অংশ নেন।
গত চার বছর ধরে এবং বিশেষ করে গত ন'মাস ধরে আমি এই মামলার পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে অনুসরণ করেছি। সরাসরি মামলার পক্ষ না হতে পারার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, নিজের সীমিত সাধ্য আর সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব তার শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করে গেছি পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে এই মামলায় ১৯৭১ এর ভিকটিমদের ও আইসিটির মূল দিকগুলো সামনে নিয়ে আসার।
উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাজ্যের মামলার আইনজীবীদের দু’পক্ষের সাবমিশনে যে মৌলিক বিষয়গুলো একেবারেই উঠে আসেনি সেগুলোর পাশাপাশি তাদের এবং যুক্তরাজ্যের বিচারকদের করা জ্বলজ্যান্ত ভুলগুলো তুলে ধরা।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ইতিহাসে তাদের স্থান কি হবে?
চূড়ান্ত বিচারে কতটুকু সফল হয়েছি তা এখনি বলা মুশকিল, কারণ যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত রায়ের জন্য অপেক্ষাধীন। তবে এটুকু উল্লেখ না করলেই না।
যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টে দু'পক্ষের শুনানি শেষ হওয়া পর্যন্ত আমার অন্তত যা মনে হয়েছে, তা হলো পুরো মামলাটির শুনানি আইসিটির জন্য ইতিবাচক হয়েছে তা বলা যাবে না। যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের দৃষ্টিভঙ্গী হয়তো (ধরে নিচ্ছি যদিও) অনেকাংশেই নির্ভর করেছে মুঈনউদ্দিন ও যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দুই পক্ষের আইনজীবীদের কাছ থেকে তারা এ পর্যন্ত যা শুনেছেন বা যা শুনেননি শুধু তার উপরই।
যে কোনো দিনই রায় হতে পারে। জানি না যুক্তরাজ্যের বিচারকরা কি রায় দেবেন শেষ পর্যন্ত, এবং তা কিভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্ধৃত ও (অপ)ব্যবহৃত হতে পারে ১৯৭১, বিচার, আর ভিকটিমদের বিরুদ্ধে!
যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টের এই রায়টি কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, সেটি জানিয়ে রাখাটা প্রয়োজন মনে করছি, যে কারণে মূলত এই লেখাটি লেখা।
চৌধুরী মুঈনউদ্দিনের এই মানহানি মামলাটিকে যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্ট যদি সর্বতোভাবে ও সর্বসম্মতিক্রমে খারিজ করে দেন তাহলে তো কিছুই বলার নেই। সেই সম্ভাবনা এখনও আছে। তেমনটি হলে এই মামলাটি হয়তো ইতিহাসের বা আইনের বইয়ের কোনো একটি ছোট ফুটনোট হয়ে থেকে যাবে।
কিন্তু রায়ে যদি এর বিপরীতটি ঘটে, অর্থাৎ, মুঈনউদ্দিনের মানহানির দাবি যদি টিকে যায়, তাহলে নিচের আশঙ্কাগুলো বাস্তব হয়ে উঠার এক ভিন্ন বাস্তবতা তৈরি হবে আমাদের সবার জন্য। অনেকগুলো সম্ভাব্য ফলাফল আর আশঙ্কার মধ্যে শুধু চারটি উল্লেখ করছি নিচে:
প্রথমত:
যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্ট মুঈনউদ্দিনের পক্ষে (অর্থাৎ আইসিটির প্রক্রিয়ার বিপক্ষে) রায় দিলে সেই রায়টি দেশে-বিদেশে যুদ্ধাপরাধী আসামিপক্ষ উদ্ধৃত করবে আইসিটির পুরো প্রক্রিয়া এবং এর প্রতিটি বিচারের রায়কে চূড়ান্তভাবে প্রশ্নবিদ্ধভাবে করার কাজে। অবশ্যই, আইনি বিচারে যুক্তরাজ্যের রায় বাংলাদেশের আইসিটির রায়ের ব্যাপারে কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি করে না, তবে প্রচার/অপ-প্রচারের বিভ্রান্তিকর রাজনীতিতে এবং ১৯৭১ এর ইতিহাসকে ঘোলা করার কাজে যুক্তরাজ্যের আদালতের রায় শক্তিশালী এক হাতিয়ার হয়ে উঠবে ১৯৭১ বিরোধীপক্ষের হাতে। এই যে প্রথম সম্ভাবনার কথাটি লিখলাম, তা হলো আমার লেখা চারটি সম্ভাবনার মধ্যে সবচেয়ে কম ক্ষতিকর, কারণ বাকিগুলো আরও সুদূরপ্রসারী!
দ্বিতীয়ত:
যদি যুক্তরাজ্যের আদালতে বাংলাদেশের আইসিটির বিরুদ্ধে করা সমালোচনাগুলো ধোপে টিকে যায়, তাহলে এর প্রভাব হবে মুঈদনউদ্দিনের মামলা ছাড়িয়েও আরও বিস্তৃত। কারণ, তখন সমালোচনাগুলো পশ্চিমের এক গুরুত্বপূর্ণ আদালতের বদৌলতে এক ধরনের আইনি বৈধতার সিল পেয়ে যাবে। এই বিষয়টিকে তখন আইসিটির বিচারে দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিই ব্যবহার করতে পারবে এ জাতীয় কৌশলগত মানহানি মামলায়। তাদের উদ্দেশ্য হবে ১৯৭১ ইস্যুতে নিজেদের কৃতকর্মের ইতিহাস চাপা দেওয়া। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের আইনব্যবস্থা ও আদালত এমনিতেই এ জাতীয় মানহানি মামলার ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় ফোরাম হয়ে উঠেছে সারাবিশ্বের অন্য সব ব্যবস্থার তুলনায়। এই সুযোগটি ঢালাওভাবে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে তখন যুদ্ধাপরাধী পক্ষের দিক থেকে। এভাবে ১৯৭১ এর প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস একটু একটু করে বিকৃত হতে থাকবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।
আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-৩
তৃতীয়ত:
আইসিটির রায়ের পরও যদি দণ্ডিত একজন অপরাধী এই রায়কে মানহানিকর বলে যুক্তরাজ্যের আদালতে উতরে যেতে পারে, তাহলে ১৯৭১ এ সংঘটিত অপরাধগুলো (যেমন: গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ) নিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব ধরনের গবেষণা আর লেখালিখির কাজ আর উদ্যোগগুলো এক বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে। লেখক ও গবেষকদের তখন তাদের কাজগুলো করতে হবে প্রতি পদে মানহানি মামলার খড়গ মাথায় নিয়ে। আইন বিষয়ে যাদের কিছুমাত্র ধারণা আছে তারা জানবেন কাউকে হয়রানি করতে বা আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত করতে মানহানি মামলার কোনো জুড়ি নেই।
চতুর্থত:
বাংলাদেশের গণহত্যার বৈশ্বিক সার্বজনীন স্বীকৃতি অর্জনের যে প্রজন্মব্যাপী আন্দোলন মাত্র শুরু হয়েছে, তার পুরোটাই এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন হবে।
আশা করি এই লেখাটি পরিস্থিতির সম্ভাব্য গুরুত্ব অনুধাবনের পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
১ বছর আগে
ভোটার উপস্থিতি কতটা জরুরি?
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাত্রারেখায় দাঁড়িয়ে আছে। দাপ্তরিক কাজ শেষ। এখন প্রার্থীদের রিং এ ফেলে বক্স অন বলার অপেক্ষা।
নিরাপত্তার চাদরে আবৃত হয়ে নির্বাচন কমিশন কমান্ড পোস্ট থেকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। তারা তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন যে আঁটঘাট বেঁধে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন করেই ছাড়বেন। তারা বলেছিল, কে এল না এল তাতে কিছু আসে যায় না। নির্বাচন হবেই।
নির্বাচন কমিশন আবার আমেরিকার কথার তোয়াক্কা করবে না বলে মাঝে মাঝে জানান দেয়। আবার ভয় যে পায় তা মাঝে মাঝে সিইসির বক্তব্যে বেফাঁস বেরিয়ে আসে। রাজনৈতিক দলগুলো তৈরি। উৎসবমুখর না হলেও বিরস মুখে ক্ষুদ্র দলগুলো সরকারি দল থেকে দুয়েকটা আসন প্রাপ্তির সুযোগ খুঁজছে। সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা সংশয়ে আছে। মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়তা থাকলেও তাদের নির্বাচনী ফসল ঘরে তুলে আনার সম্ভাবনা কতটুকু? সরকার ও সরকারি দল কতটুকু ক্ষমতাশালী তা বিদ্রোহী প্রার্থীরা নিজেরাই ভালো জানেন কারণ বিগত ভোটারবিহীন নির্বাচনগুলোর কুশীলব তারাই ছিলেন।
আরও পড়ুন: ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ প্রসঙ্গে চীনের বাংলাভাষী প্রতিভা প্রশিক্ষণের কৌশল সম্পর্কিত গবেষণা
তাহলে ভোটের মাঠে থাকছে সত্তরোর্ধ্ব একটা রাজনৈতিক দল, কিছু নামসর্বস্ব দল, কিছু নেতা সর্বস্ব লোভী ও সরকারি দলের বিদ্রোহীরা। তাহলে একটা বৃহৎ দল কার সঙ্গে নির্বাচন লড়তে যাচ্ছে? এ লড়াই কি তাদের জন্য সন্মানজনক? মর্যাদাপূর্ণ? দেশের গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক?
এ বৃহৎ দলের একটাই প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপিকে হামলা-মামলা ও রাজনৈতিক কৌশলে নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়েছে। ইসলামী কিছু দল এমনকি বাম দলগুলোও নির্বাচনে যাচ্ছে না। ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া কোনো সাহসিকতার কাজ নয়। দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতাও পাবে না। তার কি কোনো বিকল্প নেই?
ধরে নিলাম সব ঠিক চলছে। ভালোমন্দ মিলিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাজসজ্জা তৈরি। দল আছে, প্রার্থী আছে, পরিচালনাকরিরাও প্রস্তুত। তারপরও ভোটার উপস্থিতির শঙ্কা। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাবেন এটাই আশা। কিন্তু ভোটাররা কাকে ভোট দিতে যাবেন।
একটা দলেরই যোগ্য প্রার্থী আছে, বিপরীতে যারা আছে তারা কি গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় রাজনৈতিক দল? তাহলে একমাত্র বৃহৎ দলের যোগ্য প্রার্থীরাই জিতবেন। তাদের মাঝে মন্ত্রী, এমপি সবাই সিংহাসনে আসীন। এসব যোগ্যদের জেতানোর জন্য সবাই একাট্টা। নির্বাচনটা গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
ভোটার হাজির করার দায়িত্ব কারোই নয়। ভোটারের নিজের দায়িত্ব এটা। দেশের সুনাগরিক এ দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য। সবাই সুনাগরিক নয়। তাহলে ভোটারদের কষ্ট করে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার আছে? এর চেয়ে নিজের জীবন জীবিকার জন্য দিনটি ব্যয় করা উত্তম।
নির্বাচনে প্রার্থীরা নিজেদের সাফল্য জাহির ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের নেতিবাচক দিক তুলে ধরেন। ক্ষমতায় বহাল সরকার, এমপি-মন্ত্রীদের কোনো সমালোচনা বা নেতিবাচক কথা বললেই সাইবার আইনে ফেঁসে যাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা। তাহলে নির্বাচনটা সেভাবে প্রভাবিত হবে না বলে নিশ্চয়তা কেউ দেবে? এটা ধরে নেওয়া যায় যে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে দ্বিধান্বিত হবেন।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। উৎসব মুখর ভোট হবে, এমপি-মন্ত্রীদের সুযোগ-সুবিধা ও সম্পদ বৃদ্ধি ঘটবে। জিন্দাবাদ মূর্দাবাদ করে কর্মীরা ক্লান্ত হয়ে খালি হাতে ঘরে ফিরবে। কোনো কিছু কি জনগণের ভাগ্যে যাবে?
(বি.দ্র. ইউএনবির সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামত নাও মিলতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো দায়ভার ইউএনবি নেবে না।)
আরও পড়ুন: চীনে আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়নের উন্নয়ন
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের জরুরি জলবায়ু তহবিল প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী
১ বছর আগে
চীনে আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়নের উন্নয়ন
সারসংক্ষেপ
আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্খলা। অনেক বড় দেশ আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়নকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, চীনের স্টেট কাউন্সিলের একাডেমিক ডিগ্রি কমিটি “পিএইচডি, মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদানের পেশাদার ক্যাটালগ” জারি করে। “ট্যালেন্ট ট্রেনিং ডিসিপ্লিনস (মন্তব্যের জন্য খসড়া)”, এর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়ন আন্তঃবিভাগীয় বিভাগের অধীনে প্রথম স্তরের শৃঙ্খলা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে চীনের আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়ন উন্নয়নের একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করে।
মূল শব্দ: আঞ্চলিক ও দেশীয়, চীন, শৃঙ্খলা নির্মাণ
১ . আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়নের উন্নয়নের প্রেক্ষাপট
১.১ আঞ্চলিক ও দেশীয় গবেষণার উৎস
আরও পড়ুন: দক্ষিণ এশিয়ার জ্বালানি বিকাশে নবদিগন্তের হাতছানি
আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়ন মূলত ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি ও হ্যাবসবার্গ সাম্রাজ্যে "প্রাচ্যবাদ" এর একটি শাখা হিসেবে আবির্ভূত হয়। পাশ্চাত্যের বণিক বা ধর্মপ্রচারক যারা প্রাচ্যে ভ্রমণ করেছিলেন তারা তাদের নিজস্ব উপলব্ধির সঙ্গে জ্ঞান, কিংবদন্তি ও কল্পনার মতো অনেক কারণকে একত্রিত করেছিলেন। তারা প্রাচ্যের সাংস্কৃতিক রীতিনীতি, আইন, প্রথা ইত্যাদিকে পাশ্চাত্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছিলেন। তারা সত্য ও মিথ্যা তথ্য নিয়ে পাশ্চাত্যে ফিরে যান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্দিষ্ট আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়ন স্কুলের প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। তারা প্রধানত মানবিক বিষয়ে ফোকাস করে এবং ভাষা, ইতিহাস, রীতিনীতি, আইন ও সাহিত্য শেখায়(জরান,২০১৯)।
১.২ আধুনিক আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়ন
আধুনিক এলাকা অধ্যয়নের উৎস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়কাল থেকে খুঁজে পাওয়া যায়। মার্কিন সরকারের গোয়েন্দা তথ্য এবং সামরিক প্রয়োজনের কারণে, প্রাথমিক এলাকা অধ্যয়ন কেন্দ্রটি অফিস অব স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসেসের অফিসে অবস্থিত ছিল।
প্রারম্ভিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা অধ্যয়ন কোর্সের সঙ্গে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল (হুসাইন,২০১১)৷ মার্কিন সরকার রুথ বেনেডিক্টকে কমিশন দিয়েছে, রুথ জাপানের সংস্কৃতি ও সমাজ অধ্যয়ন করেছে, যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপান দখলের জন্য পরবর্তী নীতি প্রণয়ন করতে এবং জাপানি অধ্যয়নের প্রবণতা চালু করতে সহায়তা করে(লুস,২০০৮)।
১৯৬০-এর দশকে, আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়ন তুলনামূলক রাজনীতির সঙ্গে একত্রে বিকশিত হয় এবং কিছু আঞ্চলিক তুলনামূলক অধ্যয়ন শুরু হয়। ১৯৬০ সালে অ্যালমন্ড ও অন্যদের দ্বারা সম্পাদিত "দ্য পলিটিক্স অব ডেভেলপিং রিজিয়ন" ছিল প্রারম্ভিক আঞ্চলিক গবেষণায় একটি বিশ্বকোষ, যা প্রতিটি অঞ্চলের ইতিহাস, প্রক্রিয়া, গঠন ও কার্য বিশ্লেষণ করে(বালিন্দুন,২০১৩)।
১.৩ নতুন যুগে আঞ্চলিক গবেষণার উন্নয়ন
১৮৭০ থেকে ১৮৯০ এর দশক পর্যন্ত, আঞ্চলিক গবেষণা পদ্ধতি মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের মধ্যে পরিপূরকতা দেখাতে শুরু করে। এই সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো তুলনামূলক রাজনীতি বিজ্ঞানসম্মত হতে শুরু করে। বিপুল সংখ্যক পণ্ডিত প্রকৃত স্থানীয় পরিস্থিতি বোঝার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ ও মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যকারণ প্রক্রিয়া আবিষ্কার করতে শুরু করেন। সবচেয়ে বিখ্যাত কেস হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপর জেমস স্কটের গবেষণা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কৃষকদের আচরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে, তিনি স্থানীয় কৃষকদের প্রতিরোধের কারণ এবং কীভাবে তারা "দুর্বলদের অস্ত্র" ব্যবহার করেছিলেন তা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন(জেমস,২০১১)।
১৯৯০ এরপর, বিশ্বায়নের বিকাশ ও স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের প্রেক্ষাপটে, কিছু গবেষক "প্রথাগত আঞ্চলিক দেশ অধ্যয়ন" ও "অঞ্চলভিত্তিক জ্ঞান" এর মধ্যে পার্থক্য করার প্রয়োজনীয়তার প্রস্তাব করেন। আঞ্চলিক জ্ঞান থেকে বিকশিত সাধারণ তত্ত্বের চাহিদা পরিবর্তিত হওয়ার সঙ্গে আঞ্চলিক ও দেশীয় গবেষণা পদ্ধতি আরও বৈজ্ঞানিক হয়ে উঠেছে। অবশ্যই, সেই সময়কালে পদ্ধতিগত বিবাদে জড়িত হওয়া অনিবার্য ছিল।
আরও পড়ুন: ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ প্রসঙ্গে চীনের বাংলাভাষী প্রতিভা প্রশিক্ষণের কৌশল সম্পর্কিত গবেষণা
২. চীনে আঞ্চলিক ও দেশীয় গবেষণার উন্নয়ন
২.১ চীনে আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়নের ঐতিহ্য
একটি দীর্ঘ ইতিহাসযুক্ত প্রাচীন সভ্যতা হিসেবে চীনের আঞ্চলিক ও দেশীয় গবেষণার একটি গভীর ঐতিহ্য রয়েছে। "ঐতিহাসিক রেকর্ড"-এ কোরিয়া ও দাওয়ানের(উজবেকিস্তান) ঐতিহাসিক নথিগুলোকে প্রতিবেশী দেশগুলোর দেশভিত্তিক গবেষণা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। কেন্দ্রীয় রাজবংশের পরবর্তী সরকারি "ঐতিহাসিক রেকর্ড"র ঐতিহ্য অনুসরণ করে এবং আশেপাশের অঞ্চলের জাতিগত গোষ্ঠী, জাতি ও দেশগুলোকে নথিভুক্ত করে, প্রাসঙ্গিক গবেষণার ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার প্রদর্শন করে।
কিং রাজবংশের শেষের দিকে, পশ্চিমা দেশগুলো চীনের দরজা খুলতে শক্তি প্রয়োগ করে এবং চীনের মূলধারার বুদ্ধিজীবীরা "বিশ্বকে দেখার জন্য তাদের চোখ খুলতে" শুরু করে। এই সময়কালে বাহ্যিক বিশ্বের অবস্থার উপর অনেকগুলো মনোগ্রাফ তৈরি হয়েছিল, যার মধ্যে সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বকারী ছিল "ইং হুয়ান ঝি লু"।
চীন প্রজাতন্ত্রের সময়, ড. সান ইয়াত-সেনের সচিব দাই জিতাও-এর "অন জাপান" লিখেছেন (১৯২৮)। সাধারণভাবে বলতে গেলে, একটি দীর্ঘ গবেষণার ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও, নতুন চীন প্রতিষ্ঠার আগে চীনা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের বহির্বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন ও সঞ্চয়ন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, আদিম, বিক্ষিপ্ত ও সরল গবেষণার পর্যায়। তখন কোনো নিয়মতান্ত্রিক জ্ঞান ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাও ছিল না।
২.২ চীনের আধুনিক আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়ন
চীনের আধুনিক আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়ন শুরু হয়েছিল নতুন চীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে। ১৯৫৪ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত, প্রধানমন্ত্রী ঝৌ এনলাই জেনেভা সম্মেলনে যোগদানের জন্য একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
নতুন চীন প্রথমবারের মতো পাঁচটি প্রধান শক্তির মধ্যে একটি হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রবেশ করে। একই বছরের ৭ জুলাই, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরোর বর্ধিত সভায় ঝৌ এনলাইয়ের প্রতিবেদন শোনা যায়। নতুন চীনে পদ্ধতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়ন শুরু হয়।
১৯৫৬ সালে, চীনের একাডেমি অব সায়েন্সেসের ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস ইনস্টিটিউট এবং জিয়ামেন ইউনিভার্সিটির নানিয়াং ইনস্টিটিউট ধারাবাহিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে, অনেকে ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীকালে, পিকিং ইউনিভার্সিটি, চীনের রেনমিন ইউনিভার্সিটি এবং ফুদান ইউনিভার্সিটি যথাক্রমে ১৯৬৪ সালে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিভাগ স্থাপন করে। চীনের বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পর্যায়েরও সূচনা করে।
২.৩ সমসাময়িক চীনের আঞ্চলিক ও দেশীয় গবেষণা
সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় সংক্ষিপ্ত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার পর, চীনে আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়নের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর থেকে ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করে। ১৯৮০ সালে, চায়না ইনস্টিটিউট অব কনটেম্পোরারি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক ও দেশীয় গবেষণা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করতে থাকে। একবিংশ শতাব্দীতে, যখন চীন দেশের গবেষণার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ গভীরতর হচ্ছে, তখন আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়নও তাদের শৃঙ্খলাবদ্ধকরণকে ত্বরান্বিত করতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের জরুরি জলবায়ু তহবিল প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী
১৯৯৯ সালে, চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের নয়টি মূল গবেষণা ভিত্তি স্থাপন করে যাতে আন্তর্জাতিক বিষয় জড়িত থাকে এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও দেশীয় অধ্যয়ন সম্পূর্ণ মনোযোগ পায়। পরবর্তীকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে "জাতীয় ও আঞ্চলিক গবেষণা চর্চা ফাউন্ডেশন" প্রকল্প চালু করে এবং ২০১৫ সালে প্রশিক্ষণ ও নির্মাণ পদ্ধতি জারি করে।
৩. চীনের আঞ্চলিক ও দেশীয় গবেষণার বৈশিষ্ট্য
৩.১ নিয়মানুবর্তিতা: শৃঙ্খলা ব্যবস্থা নির্মিত হচ্ছে
১ বছর আগে
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের জরুরি জলবায়ু তহবিল প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী
জলবায়ু সংকটের প্রভাব প্রমত্তা পদ্মা নদীর পানিতে প্রতিফলিত হয়েছে। তবুও এই জরুরি পরিস্থিতিতে বিশেষত প্রশমন, অর্থ এবং অভিযোজনের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া ধীর রয়ে গেছে। থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের মিডিয়া প্লাটফর্ম কনটেক্সট ফর কনটেক্সটে এক মতামত নিবন্ধে এ মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপ-২৮ সম্মেলনে এসব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতার সীমা বজায় রাখা, গ্লোবাল স্টকটেকের ফলে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং বিশেষত বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য জরুরিভাবে অর্থ সংগ্রহ করার বিষয়টি নিয়েও তিনি লিখেছেন।
আরও পড়ুন: কপ-২৮ সম্মেলন : শুক্রবার শুরু হচ্ছে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক
বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের জন্য বাংলাদেশ মাত্র শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ দায়ী হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সপ্তম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। প্রধানমন্ত্রীর মতে, বাংলাদেশ কয়েক দশক ধরে ক্রমবর্ধমান নির্গমনের পরিণতি সহ্য করেছে। যার প্রমাণ ৪০ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা, তীব্র তাপপ্রবাহ, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, স্কুল বন্ধ এবং বিধ্বংসী বন্যা, যা কেবল আগস্টেই ৫৫ জনের মৃত্যু এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সময় জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্রিয়ভাবে বিনিয়োগ করেছে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা ৩০ শতাংশে উন্নীত করা, টেকসই কৃষি রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিদ্যুৎ গ্রিডের আধুনিকায়নসহ জলবায়ু সহনশীলতার জন্য একটি রূপান্তরমূলক কৌশলের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।
বন্যা প্রতিরোধ, সমুদ্রপ্রাচীর, ম্যানগ্রোভ বন নির্মাণ এবং স্যাটেলাইট আবহাওয়া ট্র্যাকিং সিস্টেম বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা বিস্তৃত রয়েছে। এই উদ্যোগগুলো দেশের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য।
এছাড়া, অভিযোজন আন্তঃসংযুক্ত অর্থনীতি এবং খাতগুলোতে প্রবৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পরিবেশগত ব্যবস্থার বাইরেও প্রসারিত। এর জন্যও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। এরমধ্যে রয়েছে সৌর প্রযুক্তিকে আরও সাশ্রয়ী মূল্যের করা, ইনভার্টারের উপর কর সংশোধন করা এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা।
কপ-২৮-এর নেতারা অভিযোজন তহবিলে ১৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারির প্রতিশ্রুতি দিলেও, এটি বার্ষিক ৩০০ মিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। ধনী দেশগুলোকে তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জ সফরে নির্বাচনী আচরণবিধি রক্ষা করেছেন প্রধানমন্ত্রী
কপ-২৮-এ সীমিত সময় বাকি থাকায় তিনি কার্বন নিঃসরণকারী বৃহত্তম দেশগুলোকে ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) এবং উন্নত দেশগুলোকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনার মতে, জলবায়ু অর্থায়নকে অবশ্যই তিনটি মানদণ্ড পূরণ করতে হবে: বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য সামনের ঝুঁকিপূর্ণ বছরগুলো বিবেচনা করে পর্যাপ্ততা, ধারাবাহিকতা এবং ব্যবহার যোগ্যতা। তিনি আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অভিন্ন লক্ষ্য, সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ এবং আরও বিলম্বের ব্যয় স্বীকার করার জন্য গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করার আহ্বান জানান। চলমান প্রচেষ্টার প্রশংসা করার পাশাপাশি তিনি সর্বশেষ বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংহতিরও আহ্বান জানান।
জলবায়ু ঝুকিঁ তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মিলিতভাবে এবং সিদ্ধান্তমূলকভাবে তাদের মোকাবিলা এবং তুলে ধরার গুরুত্বের উপর জোর দেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন পূরণ করেছে: প্রধানমন্ত্রী
১ বছর আগে