খাবার
চিনির কিছু স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক বিকল্প
অম্লত্বের ভারসাম্য বজায় রাখা, বরফের স্ফটিক গঠনে প্রতিরোধ সৃষ্টি এবং আর্দ্রতা ধরে রাখা; চিনির এই কার্যকারিতা শরবতসহ নানান ধরনের খাবারে মিষ্টি স্বাদ যোগ করে। এছাড়া চিনির মধ্যে থাকা গ্লুকোজ মানুষের শরীরের জন্য দরকারি একটি উপাদান।
বিপাকের সময় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং চর্বি জাতীয় খাদ্যের অণুগুলো ভেঙে শরীরের প্রয়োজনীয় গ্লুকোজের চাহিদা পূরণ হয়। তাই আলাদা করে আর গ্লুকোজের দরকার পড়ে না। বরং এরপরেও খাবারে আলাদাভাবে চিনি নেওয়া হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য উল্টো ক্ষতিকর। এই ক্ষতির কারণ যাচাইয়ের পাশাপাশি চলুন জেনে নেই কোন খাবারগুলো চিনির বিকল্প হিসেবে এই ক্ষতি থেকে দূরে রাখতে পারে।
চিনি কেন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
মিষ্টি স্বাদযুক্ত খাবার গ্রহণের পর খাবারে থাকা চিনি মস্তিষ্কে ডোপামিন হরমোন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে। এতে করে সেই ভালো লাগা স্বাদটি পুনরায় পাওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এভাবে মিষ্টি খাবার গ্রহণের পুনরাবৃত্তি থেকে সৃষ্টি হয় আসক্তি। ফলশ্রুতিতে, দেহের অভ্যন্তরে চিনির আধিক্য জনিত জটিলতাগুলো দেখা দিতে শুরু করে। এখানে সরাসরি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে রক্তে শর্করার ভারসাম্যহীনতা।
শুরুটা হয় মেজাজের অস্থিরতা, ব্রণ ওঠা, ক্লান্তি এবং প্রদাহের মতো বিরক্তিকর উপসর্গ দিয়ে। ধীরে ধীরে প্রচন্ড মাথাব্যথা ও ক্ষুধামন্দার মাধ্যমে দৈনন্দিন শারীরিক অবস্থা আরও বেশি খারাপের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
আরও পড়ুন: সেহরি ও ইফতারে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যকর দেশি ফল
চরম অবস্থায় ওজন বৃদ্ধি, হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, দাঁতের ক্ষয়, ফ্যাটি লিভার, দ্রুত বার্ধক্য এবং ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
চিনির ১০টি স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক বিকল্প
কাঁচা মধু
শুধুমাত্র প্রাকৃতিগত মিষ্টতার জন্যই নয়, মধু দীর্ঘকাল ধরে তার পুষ্টিগুণের জন্যও ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এই ঘন তরল পদার্থটি মধু-মৌমাছি দ্বারা উদ্ভিদের নির্যাস থেকে পরাগায়ন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। তাই স্বাভাবিক ভাবেই মধু বেশ কিছু উপকারী উদ্ভিদ যৌগ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হয়।
কাঁচা বা গাঢ় মধু কদাচিৎ প্রক্রিয়াজাত করা হয় বলে এর ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনোলিক অ্যাসিড পুরোটাই পাওয়া যায়। এগুলো রক্ত, হৃদপিন্ড, পরিপাক এবং শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে। এমনকি এটি মৌসুমী অ্যালার্জি কমাতেও সক্ষম।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন বি-এর কারণে ঠান্ডা লাগার প্রতিকার স্বরূপ মধু চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে পান করা হয়। মধু-চা একই সঙ্গে ঠান্ডা লাগার প্রতিকার এবং মিষ্টি পানীয় হিসেবে জনপ্রিয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এই চা পানের পরিমাণ যেন অতিরিক্ত হয়ে না যায়।
আরও পড়ুন: যেসব কারণে রোজা রাখা ডায়েট করা থেকে বেশি উপকারী
সেহরি ও ইফতারে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যকর দেশি ফল
প্রতি বছরের মতো এই রমজানেও আগেভাগেই বাড়ছে বিদেশি ফলের দাম। ইফতারের ঐতিহ্যবাহী খেজুরের পাশাপাশি কমলা, আপেল, আঙ্গুর ও মাল্টার দাম এখন সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। ডলার-সংকট ও বাড়তি দরে শুল্কায়ণের কারণে গত বছরের দামকেও ছাড়িয়ে গেছে এবারের ফলের বাজার। তাই সেহরি ও ইফতারে ফলের চাহিদা মেটানোর একমাত্র উপায় দেশি ফল। এই পরিপ্রেক্ষিতে চলুন জেনে নেই, কোন কোন দেশি ফলগুলো এবারের ইফতার ও সেহরিতে বিদেশি ফলের সেরা বিকল্প হতে পারে।
যে দেশি ফলগুলো সেহরি ও ইফতারে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারে
বেল
কাঁচা ও পাঁকা দুই অবস্থাতেই সমান জনপ্রিয় ফল বেল। এতে থাকা ট্যানিক এবং ফেনোলিক উপাদান দুটি মূলত উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি আলসার, ডায়রিয়া, আমাশয় এবং অন্যান্য হজম সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর চিকিৎসায় অনেক উপকারী। রোযার সময় নতুন খাদ্যাভাসের কারণে অনেকেই প্রথম দিকে নানা ধরণের হজম জনিত জটিলতায় ভুগেন। এমতাবস্থায় বেল হতে পারে সেরা প্রতিষেধক।
বেলে থাকা রাইবোফ্লাভিন এবং থায়ামিন পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। বেলের রস কিডনির রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং অন্ত্রকে সুস্থ রাখে। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এর মধ্যে রয়েছে রেচক বৈশিষ্ট্য। ফলে এটি প্রাকৃতিক ভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজম নিয়ন্ত্রণে অংশ নিতে পারে।
বেলের শরবতের সঙ্গে গুড় মিশিয়ে খেলে শরীরের দুর্বলতা এবং ক্লান্তি ভাব দূর হয়। ১১ মাস পর হঠাৎ দিনের একটা বিরাট সময় উপোস থাকার ক্ষেত্রে ক্লান্তি ভাব আসাটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বেলের এই আইটেমটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
আরও পড়ুন: নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি কী, কেন খাবেন
পেঁপে
তরকারি, শুকনো ফল, সালাদ সব ভাবেই প্রতিদিনের আহারে রাখার মতো একটি ফল হচ্ছে পেঁপে। এতে থাকা প্যাপেইন নামক এনজাইমটি হজমে অবদান রাখে। পেঁপেতে যথেষ্ট পরিমাণে পানি ও ফাইবার রয়েছে, যা যুগ্মভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে ও পরিপাকতন্ত্রকে উন্নত করতে সহায়তা করে।
এছাড়াও এতে আছে ভিটামিন ও পটাশিয়াম। ইফতারের মুখরোচক খাবার যারা একদমি এড়িয়ে যেতে পারেন না, তাদের খাদ্য তালিকায় পেঁপে যোগ করা উচিত। অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া কোলেস্টেরল ও সোডিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। সেখানে পেঁপের মতো পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
এই ফলের সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ রাসায়নিক উপাদানটি হচ্ছে কোলিন। একটি স্বাস্থ্যকর ঘুম, পেশীর যথাযথ নড়াচড়া এবং স্মৃতিশক্তির বিকাশে একটি বহুমুখী পুষ্টি উপাদান এই কোলিন। এর কার্যকারিতার মধ্যে রয়েছে কোষ ঝিল্লির গঠন বজায় রাখা, মস্তিষ্কের নিউরনের উন্নয়ন সাধন, চর্বি শোষণ এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ কমানো।
আরও পড়ুন: অপরাজিতা ফুলের নীল চা: জাদুকরী স্বাস্থ্যগুণ, বানানোর পদ্ধতি
আনারস
ইফতারের আয়োজনে দারুণ এক সংযোজন হতে পারে আনারস। এতে থাকা ভিটামিন সি ও ম্যাঙ্গানিজ হজমে সাহায্য করে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোযা অবস্থায় শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এড়াতে সহায়তা করে।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস মূলত প্রচুর পরিমাণে ফ্রি র্যাডিকেলের কারণে ঘটে, যা নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার হ্রাস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং কিছু কিছু ক্যান্সারের দিকেও ধাবিত করে।
আনারসে ব্রোমেলাইন নামক পাচক এনজাইমের একটি গ্রুপ রয়েছে, যা মাংসের হজম সহজ করতে পারে। ব্রোমেলাইন প্রোটিন অণুগুলোকে ভেঙে দেয়, ফলে ক্ষুদ্রান্ত্রের শোষণ কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
তাই সেহরিতে গরু বা মুরগির মাংস দিয়ে ভারী খাবারের পর আনারস খাওয়া যেতে পারে।
এই ফলে আরও আছে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য, যা সামগ্রিক ভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
আরও পড়ুন: কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ব্যবহার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, বিজ্ঞান কী বলে?
কলা
বারমাসি জনপ্রিয় ফল কলা ইফতার ও সেহরি দুই সময়ের জন্যই ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। ফাইবার ও প্রতিরোধী স্টার্চের উৎস হওয়ায় কলা সারাদিন উপবাস অভ্যাসের সঙ্গে শরীরকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। প্রতিরোধী স্টার্চ দেহে স্বল্প পরিমাণে পূর্ণতার এক অনুভূতি সৃষ্টি করে।
শুধু তাই নয়, এতে বিদ্যমান পটাসিয়াম তৃষ্ণা নিবারণ করে এবং রোযাদারকে দীর্ঘ সময়ের জন্য হাইড্রেটেড রাখে। এক কথায়, তিন বেলা আহারের বিপরীতে ৮ ঘন্টা দূরত্বে দুই বেলা খাবারের ধাক্কা সামলানোর জন্য কলা একটি সেরা ফল।
পেয়ারা
কমলার চেয়ে ৪ গুণ বেশি ভিটামিন সি, আনারসের চেয়ে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন ও ৪ গুণ বেশি ফাইবার, এবং কলার চেয়ে বেশি পটাসিয়াম। আর এই পরিসংখ্যানই পেয়ারাকে সব ফলের উপরে আধিপত্য দিয়েছে।
ভিটামিন সি-এর কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখা। এর সঙ্গে অতিরিক্ত শক্তি হিসেবে যোগ হয় পেয়ারায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তবে এই ফলের প্রধান পুষ্টি উপাদান হচ্ছে ফাইবার, যা মলকে নরম করে পেট পরিষ্কার ও হজমে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রাথমিক লক্ষণেই শরীরে পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা গঠন করতে পারে।
আরও পড়ুন: ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার
বরই
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে আরও একটি প্রয়োজনীয় ফল বরই। এর প্রধান পুষ্টি উপাদান ফেনোলিক যৌগ এবং ভিটামিন সি সম্মিলিতভাবে ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংসে অংশ নেয়। ফলশ্রুতিতে, কোষের ক্ষতি হ্রাস সহ হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমে আসে। একই সঙ্গে ভিটামিন সি শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদন ও কার্যকারিতা বাড়ায়। ফলে শরীর প্রস্তুত থাকে যে কোন ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য।
এছাড়াও বরইয়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এতে করে কোলেস্টেরলের অক্সিডেশন রোধ হয়, ফলে রক্ত ধমনীতে প্লেক তৈরির আশঙ্কা দূর হয়। উপরন্তু, এই ফলে উচ্চ মাত্রার ফাইবার অন্ত্রে কোলেস্টেরল শোষণ কমায়, যা রক্তের উন্নত লিপিড প্রোফাইলের নিশ্চায়ক।
বরইয়ের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ ক্ষমতাও রয়েছে। এর ফাইবার উপাদান অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্য পুষ্টি প্রদান করে। এই প্রক্রিয়া পুষ্টি শোষণ, নরম মলত্যাগ ও সঠিক হজমের মাধ্যমে সামগ্রিক অন্ত্রের স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সেহরি ও ইফতারের মাঝের সময়গুলোতে খাদ্যতালিকা থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার সরিয়ে বরই যোগ করাটা উত্তম। কেননা এটি উপবাস ছাড়া সময়ে দেহে প্রবেশকৃত খাবারগুলোর সঠিক প্রক্রিয়াকরণ করতে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন: নিপাহ ভাইরাস সতর্কতা: কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার ঝুঁকি
তরমুজ
রমজান মাসে অন্যান্য খাদ্যের সঙ্গে পানি থেকেও বিরত থাকতে হয়। তাই সঠিক বিপাকের পাশাপাশি প্রয়োজন হয় দেহের পানির ভারসাম্য ঠিক রাখা। এই প্রয়োজনীয়তার পুরোটাই পূরণ করতে পারে তরমুজ।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাশাপাশি এই ফলে রয়েছে লাইকোপিন এবং ভিটামিন সি-এর সংমিশ্রণ। তাই আনারস ও বরইয়ের মতো প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে তরমুজও অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
তরমুজে বিদ্যমান সিট্রুলাইন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড ব্যায়ামের সময় কর্মক্ষমতা উন্নত করা এবং পেশীর ব্যথা কমাতে কাজ করে। তাই খাদ্য তালিকায় তরমুজ থাকলে রোযা রেখে শরীর চর্চা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।
তরমুজের মোট ওজনের থেকেও বেশি পরিমাণে পানি আর সঙ্গে অল্প ফাইবার স্বাস্থ্যকর হজমের জন্য উপযোগী। এই পুষ্টি মিশ্রণটি পাচনতন্ত্রের মাধ্যমে বর্জ্য নিষ্কাশন করে অন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখে।
আরও পড়ুন: রন্ধন পাঠশালা: ঢাকায় কোথায় রান্না শেখার কোর্স করতে পারবেন?
আমলকী
বিপাক জনিত যাবতীয় সমস্যা নিরসণে আরও একটি ফাইবার সমৃদ্ধ ফল আমলকী। তবে এর শ্রেষ্ঠ ক্ষমতা হচ্ছে এর উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি, যা শরীরকে অন্যান্য পুষ্টি গ্রহণে সব সময় প্রস্তুত রাখে। ১০০ গ্রাম আমলকী থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এটি একজন প্রাপ্তবয়স্কের দৈনিক প্রয়োজনীয় চাহিদার দ্বিগুণেরও বেশি। ভিটামিন সি-এর উচ্চ ঘনত্ব শরীরে নোরপাইনফ্রিন তৈরি করে। এটি মূলত একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যা ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
আমলকীর ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো সুরক্ষিত থাকে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়। তাই রমজান মাসে শরীরকে যে কোনও রোগের বিরুদ্ধে একটি দুর্গ বানানোর জন্য সেরা ফল আমলকী।
ডাব/নারিকেল
সারাদিন রোযায় শরীরের হারানো পুষ্টি পুনরুদ্ধারের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ডাবের পানি খাওয়া। শরীরে প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণের পুরোটাই দিতে পারে এই উপকূলীয় ফলটি। পটাসিয়ামে ভরপুর এই ফল একই সঙ্গে ভারী খাবারেরও পরিপূরক। কেননা এতে আছে উচ্চ ক্যালোরি এবং চিনি। তাই শুধু তৃষ্ণা মেটাতেই নয়, অধিক সময় ধরে দেহে পূর্ণতা বজায় রাখার জন্য ডাবের পানি বা শ্বাস উৎকৃষ্ট খাদ্য।
আরও পড়ুন: শহরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলার সেরা কয়েকটি বিকল্প
বাঙ্গি
যেহেতু গ্রীষ্ম ও রমজান একসঙ্গেই আসছে, তাই পানিশূন্যতা থেকে শরীরকে বাঁচানোর জন্য খাবারের তালিকায় রাখা যেতে পারে বাঙ্গি। এটি রোদ্রের দাবদাহ থেকে শুধু রক্ষাই করে না, সারা শরীরে শীতল অনুভূতিরও সঞ্চার করে।
ভিটামিন সি সহ এতে থাকা অন্যান্য ভিটামিনগুলো শরীরের শ্বেত রক্তকণিকাকে উদ্দীপিত করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন এ এবং ফাইটোকেমিক্যাল অন্ত্রকে সুস্থ রাখে। এছাড়া এর ফাইবার পানির অংশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পেটকে ঠান্ডা রাখে।
প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ বাঙ্গি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে। এই পটাসিয়ামে স্ট্রেস উপশমকারী বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এর উপস্থিতি মনোনিবেশ এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধের মানসিক বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে।
পরিশিষ্ট
সেহরি ও ইফতারের জন্য এই দেশি ফলগুলো দামের দিক থেকে বিদেশি ফলের তুলনায় তুলনামুলক ভাবে বেশ সাশ্রয়ী। তাছাড়া আনারস, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, বরই, ও ডাবের যথেষ্ট সরবরাহ থাকায় তা সর্বশ্রেণীর ক্রেতাদের জন্য সহায়ক হবে। ইতোমধ্যে তরমুজও বাজারে চলে আসায় গরম থেকে মুক্তির সম্ভাবনাও মিলছে।
তৃষ্ণা নিবারণ থেকে শুরু করে হাল্কা নাস্তা; এমনকি ভারী খাবারের চাহিদা পূরণেও এই ফলগুলো যথেষ্ট। অর্থাৎ শুধু মূল্যের দিক থেকেই নয়, এই ফলগুলো দিয়ে অনায়াসেই রোযার মাসটিকে স্বাস্থ্যকর করে তোলা সম্ভব।
আরও পড়ুন: গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
রেস্তোরাঁ-শপিং মলে প্রবেশের আগে যে বিষয়গুলোতে সাবধান থাকা জরুরি
কারো জন্য বিনোদন, কারো কাছে ঘনিষ্ঠ জনদের সঙ্গে ভালো কিছু সময় কাটানো, কারো বা জীবিকার একমাত্র গন্তব্য। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে এই কর্মযজ্ঞই পরিণত হচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞে। এই ডিস্টোপিয়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসীর জন্য। নিয়মবহির্ভূত ভবনের নকশা, পরিচালনা সংস্থাগুলোর মধ্যকার সমন্বয়হীনতা এবং দুর্নীতির খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এমতাবস্থায় ভবনে প্রবেশের সময় জীবন বাঁচানোর জন্য সাবধান হতে হবে ভোক্তা শ্রেণীকেই। চলুন, দেখে নেওয়া যাক রেস্তোরাঁ বা শপিং মলে প্রবেশের সময় কোন বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি।
বহুমুখী ভবনগুলোতে প্রবেশকালে সাবধানতা কেন এখন সময়ের দাবি
ফায়ার সার্ভিসের মতে, ২০২৩ সালে সারাদেশে মার্কেটসহ নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৫ হাজার ৩৭৪টির মধ্যে ৪২৪টি ভবন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে আবার ৫৮টি শপিং মল, যেগুলোর মধ্যে ৯টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, ১৪টি মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ, এবং ৩৫টি রয়েছে সাধারণ ঝুঁকিতে।
এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে বিগত কয়েক দশক ধরে অভ্যস্ত হয়ে গেছে অসহায় ঢাকাবাসী। সমস্যাযুক্ত ভবনগুলো নিয়ে বছরের পর বছর ধরে মামলা চলছে। প্রায়ই পিছিয়ে যাচ্ছে ভবন নিরীক্ষণের দিনক্ষণ। যথারীতি নিয়ম মেনে নির্মাণ বিধিতে আসছে পরিবর্তন। কিন্তু থেমে নেই সাধারণ মানুষের মৃত্যু। বরং বিষয়টি এখন এমন এক পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে যে, এর সঠিক সুরাহা করতে লেগে যাবে অনেকটা সময়। কেননা ত্রুটিপূর্ণ ভবনগুলো এক নিমেষে ভেঙে ফেলা বা সঠিক নকশা দিয়ে আদ্যোপান্ত বদলে ফেলা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: আবাসিক ভবনের রেস্তোরাঁ বন্ধের দাবিতে রিট
রেস্তোরাঁয় ভরা ভবন বা অতিকায় শপিং মলে যাওয়াটা জীবনের চেয়ে কতটা গুরুত্বপূর্ণ- এখন সেই হিসাব-নিকাষের সময় এসেছে। সব চাহিদার বিসর্জন দিয়ে হলেও সেই মৃত্যুকূপগুলো থেকে দূরে থাকার কোনও বিকল্প নেই। আর অগত্যা যদি যেতেই হয়, তবে সেক্ষেত্রে অবলম্বন করা উচিত আপোষহীন সতর্কতা।
রেস্তোরাঁ বা শপিং মলে দুর্ঘটনা এড়াতে যে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার
.
ভবনে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ
আগুন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য খোলামেলা জায়গা নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ভেতরের প্রতিটি দরজা প্রবেশের জন্য সহায়ক হতে হবে। এমনকি জানালার বাইরের স্থানগুলোতেও কোনও রকম প্রতিবন্ধকতা থাকা চলবে না। পেছনের দরজা বা অন্য প্রবেশ পথগুলো ময়লা-আবর্জনা বা বাতিল জিনিসের স্তূপে বন্ধ আছে কিনা তা দেখতে হবে।
বহিরাগতরা খুব সহজেই ভেতরে ঢুকে সিঁড়ি বা লিফট ধরতে পারছে কিনা তা খেয়াল করতে হবে। ঠিক একইভাবে দেখতে হবে ভেতরের লোকেরা বাইরে বেরতে যেয়ে কোনও বিড়ম্বনায় পড়ছে কি না। বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে প্রায় দেখা যায় জরুরি ডেলিভারিগুলোর কারণে প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া বহুতল ভবনে উপরের তলা থেকে ফেলা ময়লা নিচের তলার জানালার সামনে স্তূপ হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: বনানীর স্টার কাবাবের আগুন নিয়ন্ত্রণে
সিড়ির প্রশস্ততা ও পর্যাপ্ততা
কোনও আবাসিক ভবন যদি ৬ তলার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী সেখানে চলাচলের জন্য দু’টি সিঁড়ি থাকতে হবে। একটি সবসময় চলাচলের জন্য, আর অন্যটি জরুরি অবস্থায় নিরাপদ দূরত্বে সরে পড়ার জন্য। সেজন্য একে বলা হয় জরুরি বহির্গমন পথ।
তবে যেগুলো বাণিজ্যিক ভবন, সেখানে লোকসংখ্যার ভিত্তিতে সিঁড়ির সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এক তলা বাণিজ্যিক বিল্ডিং-এর জন্যও লোকসংখ্যা ৩০০-এর মধ্যে হলে, সেখানে সিঁড়ি দিতে হবে প্রতি ২৩ মিটার পরপর।
প্রশস্ত প্রবেশদ্বার
শপিং মল, রেস্তোরাঁ, বা হাসপাতালের মত ভবনগুলো প্রায় সব সময়ই অধিক লোক সমাগম থাকে। এগুলোর ঢোকার জায়গা বা প্রধান ফটক তিন মিটারের (প্রায় ১০ ফুট) বেশি হতে হবে। অন্যথায় সংকীর্ণ প্রবেশপথের অতিকায় স্থাপনায় প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
জরুরি বহির্গমন পথ এবং ফায়ার এক্সিট লাইট
একটি ভবনে প্রশস্ত প্রবেশপথ যতটা প্রয়োজন তার থেকেও বেশি প্রয়োজন জরুরি বহির্গমন পথ। এ পথে দুর্ঘটনার সময় আত্মরক্ষার জন্য দ্রুত বের হওয়া যায়। এর আরও একটি নাম আছে, আর তা হচ্ছে অগ্নি নির্গমন পথ।
আবাসিক ভবন ছাড়া অন্য যে কোনও ভবনের প্রতি তলায় এই পথ থাকা জরুরি। এগুলোর নির্দেশকগুলো স্পষ্ট এবং সহজে দেখা যায় এমন জায়গায় থাকতে হয়। এই সিঁড়ি পথে বিদ্যুৎ বিভ্রাটেও আলো দেয়ার জন্য লাইটের ব্যবস্থা রাখা হয়, যাকে বলা হয় ফায়ার এক্সিট লাইট।
আরও পড়ুন: কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ব্যবহার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, বিজ্ঞান কী বলে?
পর্যাপ্ত অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রাদি
বিএনবিসি (জাতীয় বিল্ডিং কোড) বিধি অনুযায়ী, ৭ তলার চেয়ে উঁচু ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ফায়ার ডিটেক্টর, উচ্চগতির পানি স্প্রে সিস্টেম, স্মোক ডিটেক্টর, এবং ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকা বাধ্যতামূলক।
ধোয়া ও ফায়ার অ্যালার্ম
এই সতর্ক করা ডিভাইসগুলো অগ্নি নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক। কোথাও ধোঁয়া বা আগুন ধরে গেলে এগুলো সঙ্গে সঙ্গেই বিকট শব্দে বেজে উঠে। এতে করে ভবনের প্রত্যেক তলার বাসিন্দারা সতর্ক হয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসতে পারে।
ত্রুটিহীন ফায়ার এক্সটিংগুইশার
এই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রটিতে উচ্চচাপে তরল কার্বন ডাই-অক্সাইড সংরক্ষিত থাকে। আগুন নেভানোর সময় স্প্রে করার মাধ্যমে এই কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়।
আগুন লাগার সাথে সাথেই ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করলে আগুনকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে ভবনটিতে এই যন্ত্র শুধু থাকলেই হবে না, দেখতে হবে তা ঠিক কোন জায়গায় কিভাবে রাখা আছে।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে বুফে খেতে যেসব রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন
অফিস বা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাসরুমের মত হালকা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রতি ৭৫ ফুটে একটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকাটা যথেষ্ট।
তবে যে ভবনে রেস্তোরাঁ বেশি, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই দুইয়ের অধিক রান্নাঘর থাকে। সেই সাথে থাকে চর্বি এবং তেলের মত দাহ্য বস্তু থেকে প্রচুর পরিমাণে তাপ উৎপাদনের সম্ভাবনা। তাই এই জায়গাগুলোর প্রতি ৩০ ফুটে একটি করে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বসানো উচিত। এগুলোর উপস্থিতির জন্য হলুদ-লাল রঙ দিয়ে জেব্রা ক্রসিং চিহ্ন খুঁজতে হবে।
সম্ভব হলে সেগুলো ত্রুটিহীন অবস্থায় আছে কি না তাও নিশ্চিত হয়ে নেওয়া যেতে পারে। কেননা ত্রুটিপূর্ণ ফায়ার এক্সটিংগুইশার স্প্রে করার সময় বিস্ফারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। খালি চোখে চটজলদি দেখে নেওয়া যেতে পারে এগুলোর সিলিন্ডারের গায়ে কোন ক্ষয় বা ফাটল আছে কিনা। এছাড়া হোস পাইপটির দিকে সুক্ষ দৃষ্টি দিলে চিড় বা লিক চোখে পড়তে পারে।
দেয়াল থেকে বৈদ্যুতিক তার বেরিয়ে থাকা
বর্তমানে প্রায় সব ভবনেই বৈদ্যুতিক কেবল ও তারগুলো দেয়ালের ভেতরে মোটা পাইপ দিয়ে টানা হয়। এগুলোকে বলা হয় ডাক্ট লাইন। অনেক ভবনে দেয়ালে অযাচিত ছোট ছোট গর্তে ক্যাবলগুলো উন্মুক্ত দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় দেয়ালের গর্ত বা ফুটো থেকে বেরিয়ে থাকা ছেঁড়া তার। এই ক্যাবল হোল বা গর্ত দিয়ে ধোঁয়া এবং আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা ভবনে। তাছাড়া তারগুলো কোনোভাবে শরীরের সংস্পর্শে আসাটাও বিপজ্জনক।
আরও পড়ুন: অগ্নি দুর্ঘটনা নিরসনে জাতীয় বিল্ডিং কোড ও ফায়ার কোডের যথাযথ প্রয়োগ কেন জরুরি
সিলিন্ডার রাখার জায়গা
অগ্নিকাণ্ডের খুব স্বাভাবিক কারণগুলোর একটি হচ্ছে সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগা। তাই ঘরে বা রান্নাঘরে না রেখে ভবনের নিচে সব সিলিন্ডার একসঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। একই কাজ করা যায় বাণিজ্যিক ভবনগুলোতেও। তবে সেই জায়গাটি এমন হতে হবে যেন বাতাসের চলাচলে কোনও প্রতিবন্ধকতা না থাকে। তাহলে সিলিন্ডার লিক হলেও নির্দিষ্ট কোনও জায়গায় গ্যাস জমে বিস্ফোরণের কারণ হতে পারবে না।
জায়গাটি পরিদর্শনের সময় খেয়াল করতে হবে প্রতিটি সিলিন্ডার গ্রিলের খাঁচা দিয়ে আবদ্ধ করা আছে কিনা। একটু সন্ধানী দৃষ্টি দিলে আশেপাশে কোনও বিদ্যুতের লাইন বা দাহ্য পদার্থ আছে কিনা তাও চোখে পড়ে যেতে পারে।
ভবনের ভেতরে উপযুক্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা
যে কোনও স্থাপনা নির্মাণের সময় নকশার গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত থাকে উপযুক্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা।
ভেন্টিলেশন বলতে ভবনের ভেতরে বাতাসের অবাধ চলাচলকে বোঝানো হয়। এর উপর সামগ্রিকভাবে ভেতরের তাপমাত্রা নির্ভরশীল।
ফ্লোরগুলোতে ঘুরে বেড়ানোর সময় দুর্গন্ধ এলে বা স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ অনুভূত হলে বুঝতে হবে ভেন্টিলেশন অবস্থা ভালো নয়। বিল্ডিংয়ে পর্যাপ্ত বায়ুচলাচলের অভাব হলে আর্দ্রতার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ঘরের ভেতরে আদর্শ আর্দ্রতার মাত্রা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে। এই সীমার বাইরে যাওয়া মানেই ঘরটি বাসযোগ্য নয়।
আরও পড়ুন: রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর গাফিলতির কারণেই বার বার আগুনের ঘটনা
এছাড়া ঘরের দেয়াল ও ছাতে অত্যধিক ধূলিকণা জমতে দেখা যাবে। এটি মূলত বাইরের গাড়ির নির্গমন, ধূলাবালি, বর্জ্য, এমনকি সুগন্ধি থেকেও হতে পারে। ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা উপযুক্ত না হওয়ায় দূষকগুলো ভেতরে এসে ঠিকভাবে বাইরে বেরুতে পারছে না।
ভবনের ডিজাইন ও উদ্দেশ্য পরিবর্তনের রেকর্ড
নির্মাণের সময় প্রাথমিকভাবে আবাসিক ভবন ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পরিবর্তন করে বাণিজ্যিক করা হয়েছে। এতে করে স্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তা ক্ষুণ্নহয়। কেননা বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশেষ করে রেস্তোরাঁ বানানো হলে তা পূর্বের গ্যাসের লাইন ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। এরপর আবার দৃষ্টিনন্দনের জন্য কাঁচ বসালে ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, যা অগ্নি-নিরাপত্তার অন্তরায়। তাই ভবনে প্রবেশের আগে নিরাপত্তার স্বার্থে তার অতীতের রেকর্ড জেনে নেওয়া উত্তম।
ভবন ব্যবহারের অনুমোদনপত্র এবং হালনাগাদকৃত ফায়ার লাইসেন্স
কারিগরি ও ব্যবস্থাপনার দিক থেকে ভবনের প্রতিটি নিরাপত্তার খুঁটিনাটি যাচাই করা জনসাধারণের জন্য অত্যন্ত দুষ্কর। তবে সাধারণ ভোক্তা শ্রেণির জন্য রাজউক ও ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রদত্ত ভবন ব্যবহারের সনদ দেখাটাই শ্রেয়। এর পাশাপাশি প্রতি বছর নবায়ন করা ফায়ার লাইসেন্সটিও দেখতে হবে। এই দু’টি নথি প্রদর্শনে অস্বীকৃতি জানালে বা দেখাতে ব্যর্থ হলে, সেই ভবন নিশ্চিন্তে এড়িয়ে চলা যেতে পারে।
শেষাংশ
পরিশেষে, রেস্তোরাঁ কিংবা শপিং মলে দুর্ঘটনা এড়াতে উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো যাচাই করা বর্তমান প্রেক্ষাপটের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ। সিঁড়ি, প্রবেশ ও জরুরি বহির্গমন পথ, উন্মুক্ত বৈদ্যুতিক তার, এবং সিলিন্ডার পরিদর্শন তাৎক্ষণিকভাবে ভবন সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে পারে। তবে এই সময় সাপেক্ষ ও জটিল কাজটির বিপরীতে সর্বাধিক সহজসাধ্য আইনগত নথি যাচাই। ইতিবাচক দিক থেকে ভবন ব্যবহারের সনদ প্রদর্শন কোম্পানির ব্র্যান্ডিংয়ের সহায়ক হতে পারে। কেননা ভোক্তা সেখানেই যাবেন, যেখানে তার জীবনের নিরপত্তা আছে।
আরও পড়ুন: কলাবাগানে রেস্তোরাঁয় গ্যাসের চুলার আগুনে দগ্ধ ৬
গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
মানবদেহের ক্ষুদ্রান্ত্রে তৈরি হওয়া ল্যাকটেজ নামক পাচক এনজাইম দুগ্ধজাত খাবারের ল্যাকটোজ বা চিনিকে ভেঙে তা হজমের জন্য উপযোগী করে তোলে। অনেকের ক্ষেত্রে এই ল্যাকটেজ যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি হয় না। ফলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় ল্যাকটোজ হজমে। ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স নামে পরিচিত হজমের এই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় পেট ব্যথা থেকে শুরু করে ডায়রিয়া পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্ট ব্যক্তিরা গরুর দুধসহ দুধের তৈরি নানান ধরনের খাবারগুলো এড়িয়ে চলেন। এতে একদিকে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা থেকে মুক্ত থাকলেও অন্যদিকে তারা বঞ্চিত হন ক্যালসিয়ামের মতো অপরিহার্য পুষ্টিগুণ থেকে। কিন্তু দুধ ছাড়াও এমন কিছু ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার আছে যেগুলো সামগ্রিকভাবে দুধের পুষ্টির যোগান দিতে পারে। চলুন, গরুর দুধের সেই স্বাস্থ্যসম্মতো বিকল্পগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে গরুর দুধের ১০টি উৎকৃষ্ট বিকল্প
বীজ জাতীয় বা দানাদার খাবার
নিয়মিত শরীর চর্চায় শণ, তিল, চিয়া, সয়ার মতো বীজগুলো রীতিমতো সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। তন্মধ্যে চিয়া বীজে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্যগুলোর তুলনায় বেশি। এমনকি এই পরিমাণ বিভিন্ন দুগ্ধজাত দ্রব্যে থাকা ক্যালসিয়াম থেকেও বেশি।
আরও পড়ুন: কেক ও বিস্কুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিক: বিকল্প কিছু স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার
চিয়া বীজ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইবারের জন্যও সুপরিচিত। এই বীজগুলোতে রয়েছে ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়ামসহ সুস্থ হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ। দুই টেবিল চামচ চিয়া বীজে প্রায় ১.৭৯ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
এক টেবিল চামচ তিলের বীজে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ প্রায় ০.৮৮ গ্রাম। তিলের বীজে আরও আছে স্বাস্থ্যকর চর্বি (বিশেষত পলিআনস্যাচুরেটেড এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট), যা হৃদপিন্ডের কার্যকারিতায় অবদান রাখে। এছাড়াও তিলে আছে খনিজ, ভিটামিন, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন-ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
বীজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সয়াবিন বা সয়া দিয়ে বানানো খাবারগুলো যেমন সয়ার দুধ ও দই। এ ধরনের ফোরটিফাইড বা সংরক্ষিত খাবারগুলো মূলত গরুর দুধে অ্যালার্জি থাকা লোকদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণেই তৈরি। রান্না করা সয়া খাবারের তুলনায় অপরিপক্ক কাঁচা বীজগুলোতেই ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে বুফে খেতে যেসব রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন
দুধের উৎকৃষ্ট বিকল্প সুষম খাবার হিসেবে কাজ করতে পারে মটরশুঁটি। এই সবুজ বীজে আছে ভিটামিন এ, সি, কে, ফাইবার, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম। এটি ভূমিকা রাখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, হিমোগ্লোবিন তৈরিতে, হৃদপিন্ডের সুস্থতা, ও চোখের জ্যোতি বাড়ানো সহ ওজন নিয়ন্ত্রণে।
বাদাম
প্রোটিন, ফাইবার ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ চিনা বাদাম, পেস্তা, আখরোট, কাঠ বাদাম এবং কাজু বাদাম শুধু স্বাস্থ্যকরই নয়; বেশ উপাদেয়। এছাড়াও অন্যান্য খনিজ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, তামা এবং সেলেনিয়ামের পাশাপাশি আছে ভিটামিন ই, বি-২, ও ফোলেট। বাদামে থাকা উপাদান দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাসে অবদান রাখতে পারে।
এগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়ামের অনুপাতে কাঠ বাদাম সবার থেকে এগিয়ে। এক আউন্স কাঠ বাদামে থাকে প্রায় ৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
আরও পড়ুন: প্যাকেটজাত আলুর চিপস কেন শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
সয়া দুধের মতো বাদামের দুধও বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার। সুষম খাবারের সঙ্গে মুখরোচক খাবারের সংমিশ্রণে বাদামের কোনও জুড়ি নেই। কম ক্যালোরি সম্পন্ন বাদাম দুধে গরুর দুধের তুলনায় কার্বোহাইড্রেট থাকে অনেক কম। ওজন ঠিক রাখার জন্য বেশ সুখ্যাতি থাকলেও এগুলো হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নতিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে যাদের বাদামে অ্যালার্জি আছে তাদের এই খাবারগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
বাঁধাকপি
চর্বি, চিনি ও কোলেস্টেরল-মুক্ত এবং স্বল্প পরিমাণে সোডিয়াম ও ক্যালরি যুক্ত বাঁধাকপি দেহের প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানের সেরা উৎস। দুই কাপ কাঁচা বাঁধাকপিতে ক্যালসিয়াম থাকে প্রায় ১.৮ গ্রাম। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই সবুজ সবজি কোষ প্রাচীরের ক্ষয়কে বিলম্বিত করতে পারে।
অন্যান্য উদ্ভিজ্জ খাবারের ন্যায় বাঁধাকপিতেও আছে অক্সালেটের মতো যৌগ, যেগুলো ক্যালসিয়াম শোষণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই এই অক্সালেটের পরিমাণ হ্রাস করার জন্য বাঁধাকপি ভালোভাবে রান্না করে নেওয়া উচিৎ। রান্না ছাড়া সেদ্ধ করে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় সালাদ হিসেবেও রাখা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি কী, কেন খাবেন
ব্রকলি বা সবুজ ফুলকপি
একই গোত্রভুক্ত উদ্ভিদ হওয়ায় বাঁধাকপির মতো ফুলকপিও ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। বিপাকের সময় শরীরে নানা ধরনের ফ্রি র্যাডিকেল নামক জৈব অণু তৈরি হয়। খুব বেশি পরিমাণে এই ফ্রি র্যাডিকেল এতটাই বিষাক্ত যে তা কোষের ক্ষতি সাধন করে ক্যান্সারের দিকে ধাবিত করতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই জৈব অণুগুলোর পরিমাণকে মাত্রা ছাড়াতে দেয় না।
দেহের শক্ত হাড়ের জন্য ক্যালসিয়ামের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করে কোলাজেন। এই কোলাজেন তৈরিতে প্রয়োজন হয় ভিটামিন সি। রক্ত জমাটের পাশাপাশি হাড়ের গঠনে কাজ করে ভিটামিন কে। আর এই ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি ও কে সবই থাকে ব্রকলিতে। এক কাপ হিমায়িত ব্রকলিতে প্রায় ০.৮৭ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
ছোট মাছ
মানবদেহের কাঠামোকে সুদৃঢ় করে রাখে হাড়গুলো, আর এই হাড়ের দৃঢ়তা প্রদানের দরকারি উপাদান রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছের মধ্যে। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর ছোট মাছ আর দুধ একই পরিমাণে ক্যালসিয়ামের যোগান দেয়।
আরও পড়ুন: কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ব্যবহার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, বিজ্ঞান কী বলে?
ছোট মাছে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ গ্রাম প্রতি ৮.৬ থেকে ১ হাজার ৯০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, আয়রন এবং জিঙ্ক, যেগুলো দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি ও রক্তের সুস্থ পরিচলনে অবদান রাখে। গ্রামে ও শহরে অধিক বিক্রিত ছোট মাছগুলোর মধ্যে পুটি, কাচকি, মলা-ঢ্যালা ও দারকিনা অন্যতম।
মিষ্টি আলু
তিন বেলা খাবারে সঙ্গে মিষ্টি আলুর সংযোজন হতে পারে প্রতিদিনের সর্বোচ্চ পুষ্টির নিশ্চয়তা। একটি বড় মিষ্টি আলু খাওয়া মানে প্রায় ০.৬৮ গ্রাম ক্যালসিয়াম শরীরে প্রবেশ করা। কম ফ্যাটযুক্ত এই সবজিতে আছে ভিটামিন সি, এ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার। এই পুষ্টিগুলো বার্ধক্যজনিত প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে, ক্যান্সার প্রতিরোধে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে উপযোগী।
সরিষা শাক
শাক-সবজি ভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস পরিচালনার শুরুটা হতে পারে সরিষা শাক দিয়ে। থায়ামিন (বি-১) নিয়াসিন (বি-৩) এবং পাইরিডোক্সাইন (বি-৬) সহ বি ভিটামিনের এক বিরাট উৎস এই শাক। এরা মূলত হৃৎপিণ্ড এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় কাজ করে। তবে সরিষায় থাকা ভিটামিন কে অংশ নেয় হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং ফ্র্যাকচার থেকে রক্ষা করতে। কাটাছেড়ার সময় ধমনীতে ক্যালসিয়ামের প্রাচীর গড়ে রক্তক্ষরণ রোধ হয়। এই প্রাচীর গড়াতে যেন কোনো বাধা সৃষ্টি না হয় তার জন্য প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে ভিটামিন 'কে'।
আরও পড়ুন: নিপাহ ভাইরাস সতর্কতা: কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার ঝুঁকি
এক কাপ রান্না করা সরিষার শাকে ১.০৩ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এর সঙ্গে বাঁধাকপি যুক্ত করে তৈরি খাবার দৈনিক ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে।
পালং শাক
দেশের সাধারণ উপাদেয় সবজি পালং শাকের প্রধান উপাদান ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ, সি, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, এবং পটাসিয়াম। প্রতি কাপ শাকে ২৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি বিদ্যমান। দাঁত ও হাড়ের যত্নে প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে পালং শাক রাখাই শ্রেয়।
এতে থাকা ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি শরীর যথাযথভাবে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারছে কি না তা নিশ্চিত করে। কম ক্যালরি থাকায় এটি ওজন কমানোর জন্যও উপযুক্ত। এছাড়াও এই শাকে আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষমতা, যেটি ডায়াবেটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রেও সহায়তা করতে পারে।
আরও পড়ুন: অপরাজিতা ফুলের নীল চা: জাদুকরী স্বাস্থ্যগুণ, বানানোর পদ্ধতি
ঢেঁড়শ
বিস্ময়কর হলেও দুগ্ধজাত খাবারের ভালো একটি বিকল্প হচ্ছে ঢেঁড়শ। এক কাপ ঢেঁড়শে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ প্রায় ০ দশমিক ৮২ গ্রাম। এছাড়াও একটি সুষম খাবার হওয়ার জন্য যতটুকু পুষ্টি প্রয়োজন তার সবটুকুই আছে এতে। ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফোলেট এবং ফাইবারের এই উৎকৃষ্ট বাহক ব্যবহৃত হয় নিত্যদিনের তরকারিতে। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম সামগ্রিকভাবে শরীরিক সুস্থতা বজায় রাখে।
এর উপযোগীতার মধ্যে আরও রয়েছে বদ হজম দূরীকরণ, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য।
শুকনো ডুমুর
সুস্বাদু ফল ও মিষ্টি জলখাবারের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের একটি উপযুক্ত জৈব উৎস হচ্ছে ডুমুর। আধা কাপ শুকনো ডুমুর প্রায় ১.২১ গ্রাম ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে পারে। এছাড়া উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফসফরাসের উপস্থিতি হাড়ের রক্ষণাবেক্ষণে সম্মিলিত ভাবে কাজ করে।
আরও পড়ুন: খেজুর খাওয়ার উপকারিতা: সারাদিন রোযা রেখে ইফতারে কেন খেজুর খাবেন?
ডুমুর প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি, তাই এতে আলাদা করে কোনও চিনি দেওয়া লাগে না। তাই চকোলেট, কেক এবং বিস্কুটে মতো প্রক্রিয়াজাত মিষ্টির ক্ষেত্রেও এটি একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এতে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলো দূর করতে সহায়তা করে।
শেষাংশ
সর্বপরি, এই ১০টি খাবার গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে একটি সুষম খাদ্যাভ্যাসের সহায়ক হতে পারে। বাদামসহ বীজ জাতীয় দানাদার খাবারের সাইড ডিশগুলোর যে কোনোটি যথেষ্ট নিত্যদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে। এরকম হাল্কা নাস্তার তালিকায় দারুণ প্রতিস্থাপন হতে পারে শুকনো ডুমুর অথবা মিষ্টি আলু। দুপুর ও রাতের খাবারের সঙ্গে তরকারিতে রাখা যেতে পারে বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালং শাক বা সরিষা শাক। এছাড়া ঢেঁড়শ কিংবা ছোট মাছ দিয়েও পরিপূর্ণ করা যেতে পারে প্রতিদিনের স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা।
সবমিলিয়ে, এই খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়া মানেই দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ জীবনের মাইলফলক রচনা।
আরও পড়ুন: শহরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলার সেরা কয়েকটি বিকল্প
শহরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলার সেরা কয়েকটি বিকল্প
প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশজুড়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে। পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন মাত্রায় পৌঁছেছে গ্যাস সরবরাহ। বর্তমানে যেখানে গ্যাসের প্রয়োজন ৩ হাজার ৮০০ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড ঘনফুট পার ডে), সেখানে সরবরাহ রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ এমএমসিএফডি। প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে অনেকেই ঝুঁকে পড়ছেন এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) বা সিলিন্ডার গ্যাসের দিকে। কিন্তু এগুলোর দামের অসঙ্গতি এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে জনজীবন শিকার হচ্ছে নানা বিড়ম্বনার। গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীরা লাকড়ি বা মাটির চুলা ব্যবহার করতে পারলেও শহরের বাসাবাড়িতে গ্যাস ছাড়া রান্না করা দুরূহ। এমতাবস্থায় জরুরি হয়ে পড়েছে রান্নার জন্য গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থা। তাই চলুন, গ্রাম বা শহরে বাসা-বাড়িতে গ্যাস ছাড়া রান্নার করার উপযুক্ত কিছু উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
গ্যাস ছাড়া রান্নার জন্য কয়েকটি আধুনিক চুলা
ইন্ডাকশন চুলা
তাড়িৎ চৌম্বক শক্তিকে ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় তাপশক্তির যোগান দেয় ইন্ডাকশন চুলা। এর কাঁচ-সিরামিক প্লেটের নিচে থাকে তামার কয়েল, যেটি তাড়িৎ চৌম্বক শক্তির যোগান দেয়। প্লেটের উপর নির্দিষ্ট দাগাঙ্কিত স্থানে রাখা হয় রান্নার পাত্র।
বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকা অবস্থায় চৌম্বক পদার্থের তৈজসপত্র রাখা হলে চুলাটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। কাজ শেষে পাত্র সরিয়ে ফেলা হলে চুলা সঙ্গে সঙ্গেই তাপ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এই পাত্রগুলোর মধ্যে অধিকাংশ স্টেইনলেস-স্টিল ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও রয়েছে কাস্ট আয়রন এবং এনামেল্ড ঢালাই লোহা।
আরও পড়ুন: তীব্র গ্যাস সংকটে চট্টগ্রাম নগরবাসী
এই চুলাগুলো সহজে পরিষ্কারযোগ্য এবং অল্প তাপেই গ্যাস ও অন্যান্য সাধারণ বৈদ্যুতিক চুলার থেকে দ্রুত রান্না করতে পারে। ইন্ডাকশন চুলা বিভিন্ন পাওয়ার রেটিংয়ের ভিত্তিতে ৩ থেকে ৯ হাজার টাকার হয়ে থাকে। বাজারে সাধারণত ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ২০০ ওয়াটের চুলাগুলো বেশি পাওয়া যায়। ৪ থেকে ৫ সদস্যের পরিবারের জন্য যাবতীয় রান্নার কাজ এই চুলা দিনে সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টায় সম্পন্ন করতে পারে। ফলে আবাসিক এলাকার সর্বোচ্চ ইউনিট রেট হিসেবে মাসে বিদ্যুৎ খরচ হতে পারে ৯০০ থেকে ৯৬০ টাকা।
ইনফ্রারেড চুলা
বিদ্যুৎ প্রবাহ থেকে আভ্যন্তরীণ তামার কয়েলকে উত্তপ্ত করে রান্নার জন্য তাপ উৎপন্ন করে ইনফ্রারেড চুলা। এগুলো মূলত হ্যালোজেন লাইট (যা ইন্ডাকশন লাইট নামেও পরিচিত) ব্যবহার ইনফ্রারেড বিকিরণ প্রক্রিয়ায় পাত্র গরম করে। এগুলোতে ইন্ডাকশন চুলার মতো নির্দিষ্ট কোনো তৈজসপত্র ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা নেই। তবে চুলার পৃষ্ঠের সঙ্গে সমতলে থাকা অর্থাৎ ফ্ল্যাট পাত্রগুলোতে গরম করার ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যায়।
নিপাহ ভাইরাস সতর্কতা: কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার ঝুঁকি
বছরের শুরুতেই নিপাহ ভাইরাসের মরণঘাতী সংক্রমণের শিকার হলেন মানিকগঞ্জের মান্তা গ্রাম নিবাসী ৩৮ বছর বয়সী বাবুল হোসেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী।
আক্রান্ত অবস্থায় চিকিৎসাধীন পরীক্ষার জন্য রোগীর নমুনা পাঠানো হয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইইডিসিআর (ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ)-এ। গবেষণায় বেরিয়ে আসে- বাবুল মিয়া কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার কারণে আক্রান্ত হয়েছিলেন নিপাহ ভাইরাসে।
১১ দিন আগে একইভাবে আরও একটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বাবুল মিয়ার পাশের গ্রাম ঘোস্তায়। নিহত ব্যক্তি ২৭ বছর বয়সী লুৎফর রহমান। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র অনুসারে লুৎফরের বিষয়টিতে নিপাহ ভাইরাসের সুস্পষ্ট কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। এরপরেও আতঙ্ক বিরাজ করছে গোটা উপজেলাজুড়ে।
তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে এই ভাইরাস সংক্রমণে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ আশঙ্কাজনক। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বস্তরের জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। এই পরিপ্রেক্ষিতে নিপাহ ভাইরাস সম্বন্ধে সম্যক ধারণা নেওয়ার পাশাপাশি চলুন জেনে নেই- কীভাবে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণকে প্রতিরোধ করবেন।
আরও পড়ুন: কিডনি পরিশোধনকারী ১০টি ভেষজ চা
নিপাহ ভাইরাস কী
জুনোটিক ভাইরাসের অনেকগুলো ধরনের একটি হচ্ছে নিপাহ ভাইরাস; সংক্ষেপে এনআইভি। জুনোটিক ভাইরাস বলতে এমন ভাইরাসকে বোঝানো হয়, যা মেরুদণ্ডী প্রাণী এবং মানুষের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তত্ত্বীয় দিক থেকে এনআইভির বাহক শ্রেণীটা বিশাল হলেও বাস্তবে শুধু শূকর এবং বাদুড়ের মধ্যে এর উপস্থিতি দেখা গেছে। সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে এনআইভির বাহক হচ্ছে টেরোপাস প্রজাতির ফল খেকো বাদুড়, যেটি ফ্লাইং ফক্স নামেও পরিচিত।
বিশ্বের সব থেকে বড় বাদুড়গুলোর নানা প্রজাতির মধ্যে একটি হচ্ছে এই টেরোপাস। এগুলোকে সাধারণত দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, পূর্ব আফ্রিকা এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপাঞ্চলগুলোতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় নিপাহ ভাইরাসে শ্বশুরের পর মৃত্যু হয়েছে পুত্রবধূর
নিপাহ ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়
প্রাণীদেহের গুরুত্বপূর্ণ জিনগত উপাদান আরএনএ বা রাইবো নিউক্লিইক এসিড। এনআইভি মূলত এই আরএনএকে সংক্রামিত করার মাধ্যমে পুরো প্রাণীকে আক্রান্ত করে। তারপর অন্য কোনো প্রাণী কোনো মাধ্যমে সেই আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে এলে সঙ্গেসঙ্গেই সুস্থ প্রাণীটিতে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাল আরএনএ। এই মাধ্যমগুলো নানান ধরনের হতে পারে।
- সরাসরি সংক্রামিত প্রাণীর সংস্পর্শ, যেমন বাদুড়ের রক্ত, লালা, বমি বা মলমূত্র। ঘরবাড়ির আঙ্গিনা, পানির তোলার কূয়ার কাছে, চাষের ক্ষেত বা গৃহস্থালি পশুপাখির ঘরের পাশে খেজুর গাছ থাকলে এমন সংস্পর্শ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- আক্রান্ত প্রাণীর শরীর নিঃসৃত নানা তরল পদার্থে দূষিত খাদ্য গ্রহণ, যেমন আক্রান্ত বাদুড়ের মুখ দেওয়া খেজুরের রস, বাদুড়ের নষ্ট করা কূপের পানি বা আধ-খাওয়া ফল।
- আক্রান্ত কোনো মানুষের সংস্পর্শ, যেমন রক্ত, থুথু, হাঁচি-কাশি, বমি, মলমূত্র, এমনকি শ্বাস প্রশ্বাস। এনআইভি বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পাড়ে এবং এটি একটি শক্তিশালী ছোঁয়াচে রোগ।
আরও পড়ুন: কেক ও বিস্কুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিক: বিকল্প কিছু স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার
প্রাথমিকভাবে মানুষে মানুষে সংক্রমণের ব্যাপারটি না থাকলেও বর্তমানে বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই ঘটনা প্রচুর ঘটছে।
হাসপাতালের যে কর্মীরা এ ধরনের ভাইরাসে আক্রান্তদের সেবার নিয়োজিত থাকেন এবং খেজুরের রস সংগ্রহ কাজের সঙ্গে জড়িতরা এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে।
‘অস্কার অব ফুড’-এর তালিকাভুক্ত হলেন বাংলাদেশি-আমেরিকান শেফ গুলশান
জেমস বিয়ার্ড ফাউন্ডেশনের 'বেস্ট শেফ ইন দ্য মিড-আটলান্টিক' ক্যাটাগরির সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান শেফ নূর-ই গুলশান রহমান। খাঁটি বাংলাদেশি খাবারের জন্য বিখ্যাত জার্সি সিটির ‘কড়াই কিচেন’-এ শেফ গুলশানের রন্ধনসম্পর্কীয় দক্ষতার প্রমাণ দেখা যায়।
"ফুড অব অস্কার" নামে পরিচিত জেমস বিয়ার্ড ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ডস। আমেরিকায় রন্ধনশিল্পে এ পুরস্কারকে সর্বোচ্চ সম্মান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারগুলো সেরা শেফ এবং রেস্তোঁরাগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে রন্ধনশিল্পে নান্দনিকতা ও নতুনত্বের প্রসার ঘটায়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্সি সিটিতে কড়াই কিচেন রন্ধনশিল্পের উপযুক্ত জায়গা হিসেবে পরিচিত। খাঁটি বাংলাদেশি স্বাদ ও ঘরোয়া রান্নার জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছে শেফ রহমানের এই রেস্তোরাঁ।
রেস্তোরাঁর পেজ থেকে একটি আবেগঘন পোস্ট দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে বলা হয়, ‘আম্মা আজ জেমস বিয়ার্ড অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন!!এটি আমার মা ও আমাদের দুর্দান্ত দলের জন্য কতটা গর্বিত তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। বাংলাদেশি খাবার ও আমার অসম্ভব মেধাবী মায়ের জন্য স্বীকৃতির কী সুন্দর মুহূর্ত। তিনি পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সম্মানের সঙ্গে তার নৈপুণ্য দেখিয়েছেন!’
পোস্টে আরও বলা হয়েছে, ‘আমার মা মাঝে মাঝে বলতেন, তার নিজেকে একজন প্রতারকের মতো মনে হয়, কারণ তার রান্নাবিষয়ক কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। আম্মা, আপনি দেখিয়েছেন যে এটি রান্নার স্কুল নয়, এটি আবেগ, প্রতিভা, দৃঢ়তা ও ভালোবাসা।
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়, 'কড়াই কিচেন' একটি বাংলাদেশি বাড়িতে খাওয়ার মতো চমৎকার অভিজ্ঞতা দেয়। রেস্টুরেন্টটিতে শেফ রহমানের তত্ত্বাবধানে প্রস্তুত ভর্তা এবং হালকা তরকারিসহ খাবারের একটি ঘূর্ণায়মান বুফে রয়েছে। ভালোবাসা ও যত্নের সঙ্গে তৈরি ঘরোয়া স্টাইলের বাংলাদেশি খাবারের রেস্তোরাঁ।
১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে, জেমস বিয়ার্ড অ্যাওয়ার্ডস রান্নাবিষয়ক শ্রেষ্ঠত্বের জন্য একটি মানদণ্ড স্থাপন করেছে। অসাধারণ শেফ বিভাগ, বিশেষত, যারা কেবল রান্নার উচ্চ মান বজায় রাখেন না বরং তাদের সমবয়সীদের ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেন এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়ের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেন তাদের সম্মান জানায় এ প্রতিষ্ঠান। শেফ রহমানকে তার নিষ্ঠা ও দক্ষতার কারণেই সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তার হাত ধরেই আমেরিকান রান্নাবিষয়ক শিল্পে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ স্বাদ এসেছে।
কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ব্যবহার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, বিজ্ঞান কী বলে?
শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা নয়, রান্নার কাজে এবং খাদ্য ও পানীয়র পাত্র হিসেবে কাঁসা, পিতল ও তামার বাসন ব্যবহার সুস্থ জীবন ধারণের সঙ্গেও সম্পর্কিত।
ধাতব বস্তুগুলোর প্রাচীন মান ও নান্দনিকতার বাইরেও সেগুলোর বিশেষ গুণ হচ্ছে সেগুলোর কাঙ্ক্ষিত তাপ পরিবাহিতা ও দীর্ঘস্থায়ীত্ব। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এমন টেকসই গড়নের নিচে লুকিয়ে থাকা কিছু বৈশিষ্ট্য, যেগুলো প্রাকৃতিকভাবেই আঞ্জাম দিতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস।
এই বৈশিষ্ট্যগুলোর বৈজ্ঞানিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়েই আজকের নিবন্ধ। চলুন জেনে নেয়া যাক, দৈনন্দিন রান্নার কাজে ও খাবার/পানি পরিবেশনে কাঁসা, পিতল ও তামার পাত্র ব্যবহার কতটুকু বিজ্ঞানসম্মত।
কাঁসার পাত্র ব্যবহারের উপকারিতা
হজম ও বিপাকে কার্যকারিতা
কাঁসার ক্ষারীয় বৈশিষ্ট্য খাদ্যের অম্লতাকে প্রশমিত করে। ফলে পানি বা খাদ্যে থাকা পানির পিএইচের (পটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন) স্তর উন্নত হয়। এই পিএইচ মূলত পানির দ্রবণে অম্ল বা ক্ষারের উপস্থিতি নির্ণয়ের মাপকাঠি। এভাবে রান্না করা খাবারটি বিশুদ্ধ হয়ে হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
আরও পড়ুন: নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি কী, কেন খাবেন
চর্বি কমানো
কাঁসা এমন একটি সংকর ধাতু যাতে যথেষ্ট পরিমাণে তামা থাকে, যেটি চর্বি ভেঙে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এটি রান্নায় অতিরিক্ত চর্বি ও তেলের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে খাবারের সর্বত্রে সমানভাবে তাপ বিতরণ করে।
ব্যথানাশক ক্ষমতা
কাঁসার ভেতরে থাকা তামা শরীরের সবখানে রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। ফলে কালশিটে পড়া পেশি, ব্যথা হওয়া জয়েন্টগুলো এবং এমনকি আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রেও ভালো বোধ হয়।
শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
সারারাত ধরে কাঁসার পাত্রে পানি সংরক্ষণ করা হলে পানিতে একাধিক পুষ্টি যোগ হয়। এই পানি পানের মাধ্যমে শরীরে শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়ক পুষ্টিগুলোর চাহিদা পূরণ হয়।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে বুফে খেতে যেসব রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন
কাঁসার পাত্র ব্যবহারে সতর্কতা
পুরনো কাঁসার পাত্রে সীসা বা আর্সেনিক থাকতে পারে, যা রান্নার সময় খাবারে প্রবেশ করতে পারে।
অক্সিডেশন এড়াতে কাঁসা পাত্রগুলো ব্যবহারের পরে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিৎ। এর জন্য কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে। অতঃপর তাতে অল্প ডিটারজেন্ট দিয়ে আলতোভাবে পাত্রটি পরিষ্কার করতে হবে।
পিতলের পাত্র ব্যবহারের উপকারিতা
দ্রুত ক্ষত নিরাময় ও কোষের বৃদ্ধি
পিতল এমন একটি সংকর ধাতু যেখানে যথেষ্ট পরিমাণে দস্তার উপস্থিতি বিদ্যমান। দস্তা প্রদাহ কমাতে, দ্রুত ক্ষত নিরাময়, কোষের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি নিরবচ্ছিন্ন বিপাকের ক্ষেত্রেও সহায়ক। তাই শরীরে দস্তার ঘাটতি থাকলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পাশাপাশি পিতলের তৈজসপত্রে রান্না করা বা খাবার খাওয়া শুরু করা যেতে পারে।
সংক্রমণ প্রতিরোধী
ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবের বিরুদ্ধে পিতল বেশ কার্যকর। অন্যান্য পাত্রের তুলনায় পিতলের পাত্রগুলো খাবারকে দীর্ঘ সময়ের জন্য উষ্ণ রাখে। ফলে রান্না করা খাদ্য যে কোনো সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকে।
আরও পড়ুন: কেক ও বিস্কুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিক: বিকল্প কিছু স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার
হজমের জন্য ভালো
অম্লত্ব হ্রাস করার মাধ্যমে গ্যাসট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো বিভিন্ন ধরনের হজমের সমস্যা মোকাবিলায় সহায়তা করে। ফলে পাকস্থলি পরিষ্কার হয়ে পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা বাড়ে এবং অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে।
পিতলের পাত্র ব্যবহারে সতর্কতা
নিয়মিত খাবার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অবশ্যই পাত্রটি পরিষ্কার করে নিতে হবে। নতুবা উল্টো সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাপ ধরে রাখা এবং বিশুদ্ধ রাখতে রান্না করা খাবার ঠিকভাবে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
হালকা তাপে রান্না বা ফুটানো যে কোনো রান্নার জন্যই পিতল একটি আদর্শ ধাতু। তবে অতিরিক্ত ভাজার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা তেল গরম হওয়ার জন্য অধিক তাপের প্রয়োজন হয়, যা টিনের আস্তরণকে প্রভাবিত করতে পারে। পরবর্তীতে এতে সংরক্ষণকৃত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বাটার মিল্ক, লাচ্ছি, জ্যাম, সস, আচার, দুধ, পনির ও দই জাতীয় খাবার এবং জ্যুস তামা বা পিতলের পাত্রে সংরক্ষণ করা উচিৎ নয়।
আরও পড়ুন: ব্লু জোন রহস্য: রোগহীন দীর্ঘজীবী সম্প্রদায়ের খোঁজে
তামার পাত্র ব্যবহারের উপকারিতা
ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী
খাবার পানি সরবরাহের পাইপ এবং গৃহস্থালির কলগুলো সাধারণত তামা দিয়ে তৈরি করা হয়। কারণ তামায় রয়েছে জীবাণু প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য। তামার পাত্রে জমা পানি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ই. কোলাই নির্মূল করতে পারে। এছাড়া সালমোনেলা, টাইফাস, শিগেলা এসপিপি, কলেরা, এন্টেরোভাইরাস এবং হেপাটাইটিস এ-এর মতো ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও এটি বেশ কার্যকর।
থাইরয়েডের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে
থাইরয়েড গ্রন্থির সঠিক কার্যকারিতা নির্ভর করে শরীরে থাকা তামার পরিমাণের ওপর। তামার ঘাটতি থাকলে থাইরয়েডের সমস্যা হতে পারে। তামার পাত্রে পানি খাওয়া বা সংরক্ষণ করা এই ঝুঁকি দূর করতে পারে।
আর্থ্রাইটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে
কাঁসার মতো তামারও রয়েছে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য, যা আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য জয়েন্টের ব্যথা উপশমের জন্য সহায়ক। বিশেষত এর প্লেকটিং বৈশিষ্ট্যটি শরীরের জয়েন্টের ব্যথা এবং অস্টিওআর্থ্রাইটিস সৃষ্ট প্রদাহ দ্রুত সারাতে সক্ষম।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ কফি
অ্যানিমিয়া প্রতিরোধকারী
রক্তাল্পতা প্রতিরোধে তামার ওষুধি ক্ষমতা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। তামার পাত্রে সংরক্ষিত পানি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি হার্টে রক্ত প্রবাহ বাড়ানোর জন্য রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করার পাশাপাশি নালীর প্রাচীরে লেগে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে।
ক্ষত নিরাময়কারী
তামার পেপটাইড সেরা নিরাময় এজেন্টদের মধ্যে একটি। ক্ষত এবং ত্বকের ক্ষতির চিকিৎসার জন্য এমন অনেক চিকিৎসা পণ্য আছে যেগুলোর মূল উপাদান এই তামা পেপটাইড। এটি সাধারণত কোলাজ উৎপাদনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। কোলাজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যত বেশি সক্রিয় হবে, শরীরের যে কোনো ক্ষত তত দ্রুত সেরে উঠবে।
ক্যান্সার কোষ ধ্বংস
এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর আরও বড় একটি গুণ হচ্ছে- এগুলো যাবতীয় ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই ফ্রি র্যাডিক্যালগুলো মূলত মানবদেহে ক্যান্সারের প্রধান কারণ।
আরও পড়ুন: কিডনি পরিশোধনকারী ১০টি ভেষজ চা
ত্বক ও চোখের যত্ন
মেলানিন তৈরিতে তামার গুরুত্ব অপরিসীম। এই মেলানিন মানবদেহের ত্বক এবং চোখের উজ্জ্বল রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এটি সূর্যের ক্ষতিকারক অতি-বেগুনি (ইউভি) রশ্মি থেকেও রক্ষা করে ত্বক ও চোখকে।
গর্ভবতী মায়ের জন্য সহায়ক
আরবিসি (রেড ব্লাড সেল বা লোহিত রক্ত কণিকা) উৎপাদনের জন্য যথোপযুক্ত কাঁচামালের যোগান দেয় তামা। এটি আরবিসির উৎপাদন বাড়িয়ে টিস্যুর মেরামত এবং শর্করা হজম করতে সাহায্য করে। এই সুবিধাগুলোর প্রতিটিই প্রয়োজন গর্ভবতী মায়েদের জন্য। তামা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় গর্ভের সন্তানের হৃৎপিণ্ড, রক্তনালী, কঙ্কাল এবং স্নায়ুতন্ত্র গঠনে।
তামার পাত্র ব্যবহারে সতর্কতা
তামার অ্যালার্জি থাকা খুব একটা দেখা যায় না। এরপরেও তামাতে যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের এই ধাতু থেকে দূরে থাকতে হবে। এই ধরনের তৈজসপত্র ব্যবহার বা তা থেকে পানি পান করলে ফুসকুড়ি বা চুলকানি হতে পারে।
আরও পড়ুন: বাজেটের মধ্যে ঢাকার সেরা ১০টি বুফে রেস্টুরেন্ট
সাধারণত এই ধাতুর পাত্র থেকে বারবার পানি পান করলে তামার বিষাক্ততা ছড়াতে পারে। ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ঝুঁকি থাকে বমি বমি ভাব, বমি, পেট ব্যথা এবং ডায়রিয়ার। শরীরে প্রয়োজনীয় পরিমাণে তামার চাহিদা পূরনের জন্য দিনে দুইবার (সকাল এবং সন্ধ্যা) তামার বোতলে জমা পানি পান করাই যথেষ্ট।
পিতল ও কাঁসার মতো তামার ক্ষেত্রেও ব্যবহারের পর নিয়মিত পাত্র পরিষ্কার করে নেওয়া জরুরি। থালা সাবান বা লেবু এবং লবণ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী উপায়েই তৈজসপত্র পরিষ্কার করা যেতে পারে।
সংগ্রহ বা ক্রয়ের সময় কাঁসা, পিতল ও তামা প্রতিটির ক্ষেত্রেই ধাতুটি খাঁটি কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে। পানি বোতলে ভরে সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজে রাখা যাবে না।
শেষাংশ
বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ এই তত্ত্ব-উপাত্তগুলো উপযুক্তভাবে ন্যায্যাতা দান করে কাঁসা, পিতল ও তামার পাত্রের ব্যবহারকে। বর্তমান সময়ে রান্নার কাজে ব্যবহার্য সামগ্রীর যে কোনোটির তুলনায় এগুলো অধিক স্বাস্থ্যকর। নিদেনপক্ষে এখন যেখানে জীবাণুবাহী রোগগুলোর দৌরাত্ম্য দিনকে দিন বেড়েই চলেছে, সেখানে আধুনিক তৈজসপত্রগুলোর ওপর এই জীবাণু বিরোধী ধাতুগুলোর প্রাধান্য থাকবে।
তবে রান্নার কাজে ও খাবার/পানি পরিবেশনের জন্য কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ক্রয়ের পূর্বে ধাতুগুলোর বিশুদ্ধতা যাচাই করে নেওয়া অত্যাবশ্যক। অতঃপর ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা হলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকিগুলো এড়ানো সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: প্যাকেটজাত আলুর চিপস কেন শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি কী, কেন খাবেন
বাংলাদেশের মোট প্রাণিজ প্রোটিনের প্রায় ৩৭ শতাংশ পূরণ করে মুরগির মাংস। এক সময় কেবল বাড়ির উঠানে সীমাবদ্ধ থাকলেও এই গৃহপালিত পাখি পালন এখন মাংস ও ডিম উৎপাদনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সার্বিক উৎপাদন পদ্ধতিতেও এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। সম্প্রতি শুরু হয়েছে নিরাপদ উপায়ে ব্রয়লার মুরগি পালন কার্যক্রম। চলুন জেনে নিই স্বাস্থ্য রক্ষায় ও পুষ্টি লাভে নিরাপদ ব্রয়লারের ভূমিকা কতটুকু।
নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি কী
অ্যান্টিবায়োটিক-মুক্ত ব্রয়লার মাংস উৎপাদন বিশ্বব্যাপী ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর সেই সূত্রেই বাংলাদেশেও নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি নিয়ে গবেষণা চলছে।
পশু-পাখির স্বাস্থ্য রক্ষা, ভাল পরিবেশ এবং পণ্যের গুণগত মানকে কেন্দ্র করে নিরাপদ উপায়ে ব্রয়লার মুরগি পালন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এই ব্যবস্থায় পশু-পাখির সঠিক বৃদ্ধি এবং কৃষকদের লাভের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এই পদ্ধতিতে পশু-পাখির খাবারগুলোতে ভেষজ সম্পূরক মানসহ জৈব-সুরক্ষিত ব্যবস্থা বজায় রাখা হয়। শুধু তাই নয়, পুরো পালন প্রক্রিয়াকে অ্যান্টিবায়োটিক ও বৃদ্ধি হরমোনসহ সব ধরনের বিপজ্জনক উপাদানমুক্ত রাখা হয়। এই পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতিতে পালন করা মুরগিগুলোকেই মূলত নিরাপদ ব্রয়লার হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে বুফে খেতে যেসব রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন
নিরাপদ ব্রয়লার পোল্ট্রিতে সাম্প্রতিক সফলতা
বিকল্প ব্রয়লার উৎপাদনে সম্প্রতি যুগান্তকারী সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম এবং তার সহযোগী মো. আবু রায়হান পারভেজ। তারা তাদের গবেষণাগারে উদ্ভিদের নির্যাস থেকে কোনো অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া ছাড়াই ব্রয়লার উৎপাদনে সক্ষম হন।
ব্রয়লারে তারা মূলত বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উদ্ভিদের নির্যাস ব্যবহার করেছিলেন। তারা খেয়াল করেন, এগুলো অ্যান্টিবায়োটিকের চেয়েও ভালো কাজ দিচ্ছে। উৎপাদিত মুরগিগুলো তুলনামূলকভাবে উচ্চ ওজন সমৃদ্ধ হচ্ছে এবং এই ওজন বৃদ্ধিটাও বেশ দ্রুত হচ্ছে। এমনকি এগুলোর মধ্যে রোগাক্রান্ত হওয়ার ও মৃত্যুর হার ছিল অনেক কম।
দীর্ঘ ৫ বছর ধরে চলছে এই গবেষণা কার্যক্রম। এটি বৃহৎ পরিসরে বাস্তবায়ন সম্ভব হলে উন্নত পোল্ট্রি শিল্পের অভিমুখে এক বিশাল পদক্ষেপ হবে।
আরও পড়ুন: কেক ও বিস্কুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিক: বিকল্প কিছু স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার
ধানমন্ডিতে বুফে খেতে যেসব রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন
যখন খাবারের সঙ্গে যুক্ত হয় মুখরোচক শব্দের, তখন শুধু ক্ষুধা নিবারণই সেখানে একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। পেটচুক্তির স্বতঃস্ফূর্ত প্রশ্রয়ে কোনো রকম ভণিতা ছাড়াই উন্মোচিত হয় বিনোদনের প্রবারণা। আর এখানেই ভোজন রসিক শব্দের সার্থকতা। খাবারের চিত্তাকর্ষক সংগ্রহশালা উদ্দীপনার সঙ্গে সঙ্গে জিভেও যেন জোয়ার তোলে। আর সেটাকে জলচ্ছাসে রূপ দিতেই যেন বুফের বিকাশ, যা এখনকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ভোজন পদ্ধতি। বিশেষ করে রাজধানীর ধানমন্ডি রীতিমত বুফে পাড়ায় পরিণত হয়েছে। আজ দেখে নেবো ঢাকার ধানমন্ডিতে অবস্থিত সেরা কিছু বুফে রেস্তোরাঁ।
ধানমন্ডিতে জনপ্রতি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে বুফে রেস্তোরাঁ
টেস্ট ব্লাস্ট
বুফে প্যাকেজগুলো বেশ নাগালের মধ্যে থাকায় বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই সবার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে এই টেস্ট ব্লাস্ট। তাদের দুপুরের ৫৫০ টাকার প্যাকেজে আইটেম আছে ৫৫+। আর রাতের ৬৫+ আইটেমের জন্য খরচ করতে হবে ৬০০ টাকা। ৩ থেকে ৬ বছরের বাচ্চাদের জন্য এই খরচটা অর্ধেক হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: কেক ও বিস্কুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিক: বিকল্প কিছু স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার
রেস্তোরাঁটির অবস্থান সাতমসজিদ রোডের ধানমন্ডি ৯/এ, ৭৩৬ র্যাংগ্স কেবি স্কয়ারের লেভেল ১০-এ।
দুপুরের বুফের জন্য নির্ধারিত সময় দুপুর ১ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত। আর রাতের পর্ব সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত। আগে থেকে যোগাযোগের জন্য ফোন দেয়া যেতে পারে। বিস্তারিত মেনুর জন্য ঘুরে আসুন তাদের ফেসবুক পেজটি।
জেনিয়াল বুফে
টেস্ট ব্লাস্টের মাত্র দুই লেভেল নিচেই এই রেস্তোরাঁটি জন্মদিনসহ বিভিন্ন ছোট ছোট পার্টির জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর পেছনে মূল কারণ সাশ্রয়ী বুফে প্যাকেজ। ৭০+ আইটেমে জন্য দুপুর-রাতে উভয় বুফের দাম ৫৯৯ টাকা। ৩ থেকে ৬ বছরের শিশুদের জন্য এই মূল্য থেকে আরও ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেয়া হয়।
রেস্তোরাঁর অতিথি ধারণ ক্ষমতা ১৩০+, তাই আগে থেকেই নিজের আসনটি রিজার্ভ করে নিতে হবে। দুপুর ১ টা থেকে বিকাল ৪ টা বরাদ্দ মধ্যাহ্নভোজের জন্য। আর নৈশভোজ চলে সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত। যাওয়ার আগে তাদের ফেসবুক পেজ থেকে মেনুগুলো দেখে ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ কফি