অন্যান্য
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তি কি তবে হতে চলেছে?
ইরানের পারমাণবিক শক্তি অর্জনের প্রচেষ্টা যেন পশ্চিমাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এরপরও যখন ইরানের সামরিক কর্মকর্তারা পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন, তখন পশ্চিমা মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তি করতে আহ্বান জানিয়েছে, নাহলে আক্রমণ চালানো হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তি করতে দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে তেহরান। স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ এপ্রিল) ইতালির রাজধানী রোমে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে গত শনিবার (১২ এপ্রিল) ওমানের রাজধানী মাস্কাটে প্রথম দফায় বৈঠক করে তেহরান ও যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নানা পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন ইরানের বিরুদ্ধে। ইরান যাতে পারমাণবিক শক্তি অর্জন করতে না পারে, সে লক্ষ্যে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন তিনি। এমনকি বিভিন্ন সময় ইরানে সামরিক অভিযান চালানোর হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
এরপরও একটি চুক্তি করা যায় বলে মনে করেছেন ট্রাম্প। এজন্য ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে চিঠিও লিখেছেন তিনি। তবে খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হামলা করলে ইরানও বসে থাকবে না।
আরও পড়ুন: প্রথম দফার বৈঠক শেষ, আরও আলোচনায় সম্মত ইরান-যুক্তরাষ্ট্র
এমন পরিস্থিতিতে চুক্তি আদৌ হবে কিনা বা কী কী বাধা রয়েছে; দেশদুটির একটি চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার ক্ষেত্রে সে বিষয়ে একটু আলোকপাত করা যাক।
ট্রাম্প কেন খামেনিকে চিঠি লিখলেন?
ট্রাম্প গত ৫ মার্চ ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে আলোচনায় আসার জন্য একটি চিঠি লেখেন। পরদিন টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এসে নিজেই বলেন, ‘আমি তাদের একটি চিঠি লিখেছি। চিঠিতে বলেছি, আপনারা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুন, নাহলে আমরা সামরিক হামলা চালাতে বাধ্য হব। সেটি কিন্তু খুব খারাপ হবে।’
এমন চিঠি ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও লিখেছিলেন। খামেনি বেশ রাগত স্বরেই সেই চিঠির জবাব দিয়েছিলেন। এবারের হুমকিও মুখেও কড়া জবাবই দিয়েছেন তিনি। খামেনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে ইরানও পাল্টা হামলা চালাবে।’ প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার লক্ষ্যে একটি চিঠি উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনকেও লিখেছিলেন। চিঠির জবাবে ট্রাম্পের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎও করেছিলেন। তবে পারমাণবিক কোনো চুক্তি কিন্তু হয়নি। এখনও উত্তর কোরিয়া নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েই যাচ্ছে।
প্রথম দফার বৈঠকে কি হলো
গত সপ্তাহে আরব দেশ ওমানে প্রথম দফায় বৈঠকে বসেছিলেন তেহরান ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। পরে মুখোমুখি আলাচনায় বসেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। এমনকি তারা পরবর্তী ধাপের আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে সম্মতও হন।
আরও পড়ুন: ইরানে ভয়েস অব আমেরিকার সাবেক সাংবাদিকের ১০ বছরের কারাদণ্ড
বৈঠক শেষে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে উইটকফ জানান, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ইরান ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ উপাদান মজুদ রাখতে পারে। অথচ এই চুক্তি থেকেই ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে বের হয়ে গিয়েছিলেন।
এরপর এক বিবৃতিতে তিনি জানান, ‘ইরানের সঙ্গে তখনই একটি চুক্তি সম্ভব হবে, যদি সেটি ট্রাম্পের চুক্তি হয়।’
উইটকফের এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসা এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দেশটির অন্যান্য নেতারা।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের এত চিন্তা কেন?
কয়েক দশক ধরেই ইরান দাবি করে আসছে তারা শান্তিপূর্ণভাবেই পারমাণবিক কর্মসূচি চালাচ্ছে। দেশটি বর্তমানে ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়োম সমৃদ্ধ করেছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি। পারমাণবিক অস্ত্র নেই এমন আর কোনো দেশের কাছে এই পর্যায়ে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম নেই বলে জানা যায়।
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ও ৩০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত মজুত রাখার অনুমতি রয়েছে ইরানের। তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের কাছে বর্তমানে প্রায় ৮ হাজার ৩০০ কিলোগ্রামের মতো ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে এবং দেশটি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যমতে, ইরান এখনও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি শুরু না করলেও তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
আয়াতুল্লাহ খামেনির এক উপদেষ্টা আলি লারিজানি বলেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা থাকলেও তারা সেটি করছে না। আইএইএর তদন্তেও দেশটির কোনো আপত্তি নেই। তবে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যদি তাদের ওপর হামলা চালাতে চায়, তাহলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা ছাড়া তাদেরর উপায় থাকবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘পারমাণবিক ইস্যুতে যদি আপনারা ভুল পদক্ষেপ নেন, তাহলে ইরানও সেই পথেই এগোবে। কারণ তাদেরও তো নিজেদের রক্ষা করতে হবে।’
ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এত খারাপ কেন?
এক সময় ইরান ছিল মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মিত্র। ইরানের তৎকালীন শাসক শাহ মোহাম্মদ পাহলভির আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বর্ণযুগ চলেছিল বলা যায়।
পাহলভি যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কিনতেন, এমনকি ইরান থেকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে নজরদারি করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিআইএ) গোপন তথ্যকেন্দ্র পরিচালনার অনুমতিও দিয়েছিলেন তিনি। সিআইএর সমর্থিত অভ্যুত্থানেই পাহলভির গদি পাকাপোক্ত হয়েছিল বলে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়।এরপর ১৯৮৯ সালে গণবিক্ষোভের মুখে ক্যান্সার আক্রান্ত পাহলভি ইরান থেকে পালিয়ে যান। পরে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির নেতৃত্বে ইসলামিক বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং ইরানে ধর্মীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়।
ওই বছরের শেষের দিকে পাহলভিকে ফেরত পাঠানোর জন্য তেহরানের মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালান ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ৪৪৪ দিনের জিম্মি সংকট তৈরি হয় এবং ওয়াশিংটন-তেহরানের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘টাইট’দেওয়া যায়, তা বের করতেই ভিয়েতনামে শি: ট্রাম্প এরপর ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় একদিনের হামলায় ইরানের নৌশক্তি ধ্বংস করেন মার্কিন সেনারা। পরবর্তীতে একটি ইরানি বেসামরিক বিমান ভুলবশত যুদ্ধবিমান ভেবে গুলি করে ভূপাতিত করে যুক্তরাষ্ট্র, এতে ২৯০ জন নিহত হন।
এরপরে কয়েক দশক ধরেই দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা চলমান থাকে। এরই মধ্যে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে বিশ্ব শক্তিগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করে ইরান। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও তেহরানের মধ্যকার সম্পর্কের পারদ কিছুটা গলতে শুরু করে। তবে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে সেই চুক্তি থেকে বের করে আনেন ট্রাম্প।
এখন আবার তিনিই একটি চুক্তি করতে চাইছেন। বলা চলে জোর করে চুক্তি করাতে চাইছেন, কারণ ইরান চুক্তিতে রাজি না হলে হামলা চালানোর হুঁশিয়ারিও দিয়ে আসছেন ট্রাম্প।
এ অবস্থায় আলোচনার ফলাফলে কি হবে সেটিই দেখার অপেক্ষায় অনেকে। কোন কোন শর্তে ট্রাম্প চুক্তি করতে চান আর ইরান সেগুলোর কতটুকু মান্য করে সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।
১১ ঘণ্টা আগে
কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘টাইট’দেওয়া যায়, তা বের করতেই ভিয়েতনামে শি: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলে ‘টাইট’ দিতেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শুরু করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সফরের শুরুতে স্থানীয় সময় সোমবার (১৪ এপ্রিল) ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় পৌঁছান শি। হ্যানয়ের বৈঠক শেষেই এ সম্পর্কে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রতিবেশী ৩টি দেশে সফর শুরু করেন চীনের প্রেসিডেন্ট।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার তথ্যমতে, শি তার সফরে ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিল ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় যাবেন এবং ১৫ থেকে ১৮ এপ্রিল কম্বোডিয়ায় যাবেন।
এমন একটি সময় শি এই সফর শুরু করেছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কারোপ নিয়ে উত্তেজনা চলছে। এছাড়া ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়াও ট্রাম্পের শুল্কারোপে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সফরের প্রথমদিনে ভিয়েতনামের শীর্ষ নেতা তো লামের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এ সময় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণসহ দেশ দুটির মধ্যে সরবরাহ শৃঙ্খল মজবুত করতে বেশকিছু সমঝোতা স্মারক সই করেন শি ও লাম।
আরও পড়ুন: চীন বাদে সব দেশের ওপর মার্কিন পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত
এর পরপরই হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এই বৈঠক নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতির উদ্দেশেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘এখানে আমি চীনেরও দোষ দেখছি না, ভিয়েতনামেরও না। খুবই ভালো একটি বৈঠক হয়েছে, যেখানে আলোচনার বিষয় হলো—কীভাবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে টাইট দিতে পারি!’
বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় একটি সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে, চীনের মাথার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক। অন্যদিকে, ভিয়েতনামের ওপর রয়েছে ওয়াশিংটনের ৪৬ শতাংশ শুল্ক। যদিও সেটি ৯০ দিনের জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। তাই শঙ্কা এখনো কাটেনি। এককভাবে ভিয়েতনামের পণ্য রপ্তানির সবথেকে বড় বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন: মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ চীনের, গুগলের বিরুদ্ধে তদন্তের ঘোষণা
এ কারণে শুল্ক কার্যকর হলে সেটি ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে নিশ্চিতভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। আবার চীনের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হলে চীনেরও একটি বিকল্প বাজার দরকার। সে কারণে চীন এবার দক্ষিণ এশিয়ায় মনোযোগ দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীনের প্রেডিডেন্ট আগেই তার এই সফরের পরিকল্পনা করলেও কাকতালীয়ভাবে ট্রাম্পের শুল্কারোপের পর এই সফর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গণে বাড়তি উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন অনেকে।
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব কমাতে দেশটির সঙ্গে আলোচনায় জোর দিয়েছে কোনো কোনো দেশ। চীন কিংবা কানাডার মতো কিছু দেশ আবার পাল্টা শুল্কও আরোপ করেছে।
এছাড়া, চীন নিজেদের একটি বিশ্বস্ত বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সুসংহত করার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রতি জোর দিয়েছেন শি জিনপিং।
ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক দলের পত্রিকা নিহানদানের একটি প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ‘এই বাণিজ্যযুদ্ধে আসলে কেউই জয়ী হবে না। এই সুরক্ষাবাদ (শুল্কারোপসহ নানাভাবে বিভিন্নদেশ থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ করা) কোনোভাবেই সুফল বয়ে আনবে না।’
ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিনের সঙ্গে বৈঠকের পর শি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই অন্যায় শুল্কারোপের বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার হওয়া উচিত। এ সময় রেলসহ বিভিন্ন খাতে মোট ৪৫টি চুক্তি সই করা হয়েছে বলে চিন ও ভিয়েতনামের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে। তবে চুক্তিগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা যায়নি।’
শুধু ভিয়েতনামই নয়; দক্ষিণ এশিয়ার আরও অনেক দেশও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে চাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি না করতে পেরে নিজেদের পণ্যগুলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রপ্তানি করতে পারে চীন। এই আশঙ্কা থেকেই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও তাল মিলিয়ে আবার চীনকেও অখুশি না করে চলতে চাইছে দেশগুলো।
আরও পড়ুন: মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে শুল্কারোপ করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ্বের বৃহৎ দুটির অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক পুরোপুরি নষ্ট করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ টিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, ‘দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। আবার সম্পর্ক টিকেও যেতে পারে। এছাড়া এক পর্যায়ে গিয়ে একটি বড় চুক্তি হতে পারে।’
কোনো চুক্তি হবে কিনা বা এই শুল্কারোপ আসলে কি ধরনের অবস্থা সৃষ্টি করবে; তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্প ও তার কর্মকর্তারা আগেই নিশ্চিত করেছেন, ৯০ দিনের জন্য শুল্কের স্থগিতাদেশ সাময়িক।
নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘কোনো দেশই এখনো এই শুল্কের আওতাধীন না, চীন তো একদমই না। তারা আমাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি খারাপ করেছে।’
৫ দিন আগে
চোখে সামনে যা পড়েছে, তা-ই হত্যা করেছি: ইসরায়েলি সেনাদের বিবরণ
‘যতদূর চোখ গিয়েছে, চোখের সামনে যা কিছু পেয়েছে, ধ্বংস করা হয়েছে। যেখানেই কোনো ধরনের নড়াচড়া চোখে পড়েছে, গুলি করে তা স্তিমিত করে দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা যেন আর কোনোদিনই এখানে ফিরতে না পারেন, সেই ব্যবস্থাই করেছে সেনারা।’
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের চালানো গণহত্যার বিবরণ এটি। পরিচয় গোপন করে নিজেদের অপরাধের এই স্বীকারক্তি দিয়েছে কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা।
শুধু তাই নয়; বাফার জোনকে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করার ‘কিলিং জোনে’ পরিণত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের ট্যাঙ্ক স্কোয়াডে থাকা এক সেনা কর্মকর্তা। ট্যাঙ্কগুলোর ৫০০ মিটারের মধ্যে কেউ এলেই তাকে গুলি করা হত, হোক সে নারী বা শিশু!
হতভাগ্য ফিলিস্তিনিরা জানেনও না ঠিক কোন পর্যন্ত এই বাফার জোনের বিস্তৃতি। না জেনেই হয়তো প্রবেশ করে ফেলেন মরণ ফাঁদে।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও দুই সাংবাদিক নিহত
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সেনা বলেন, ‘২০২৩ সালের অক্টোবরে তারা (হামাস যোদ্ধারা) আমাদের মেরেছে, তাই আমরা তাদের মারতে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখছি, আমরা শুধু তাদের নয়, তাদের স্ত্রী, সন্তান, কুকুর, বিড়াল সব কিছুই মারছি।’
১২ দিন আগে
ইসরায়েলে ঢুকতে দেওয়া হলো না দুই ব্রিটিশ এমপিকে
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘ঘৃণা ছড়ানোর’ অভিযোগে যুক্তরাজ্যের দুই এমপিকে দেশটিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমন এক সময় এই ঘটনা ঘটেছে, যখন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নৃশংস গণহত্যায় মেতে উঠেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে অধিকৃত পশ্চিমতীর ভ্রমণ করার কথা ছিল তাদের। স্থানীয় সময় শনিবার (৫ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি।
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির ওই এমপিরা হলেন ইউয়ান ইয়াং ও আবতিসাম মোহামেদ। এ ঘটনায় তারা স্তম্ভিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বার্কশায়ারের এয়ারলি ও উডলির প্রতিনিধিত্ব করছেন ইউয়ান, আর শেফিল্ড সেন্ট্রালের এমপি আবতিসাম।
আরও পড়ুন: গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ১৭
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার সহযোগীদের নিয়ে লন্ডনের লুটন বিমানবন্দর থেকে রওনা দেন তারা। তবে ইসরায়েলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি তাদের। বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্সে আরবেলের আদেশে তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় তেল আবিব প্রশাসন।
ইসরায়েলের অভিবাসন মন্ত্রীর বরাতে স্কাই নিউজের খবর বলছে, তাদের ইসরায়েলবিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানো ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকাণ্ড নথিভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে ইসরায়েলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই দুই ব্রিটিশ এমপি। যুক্তরাজ্যের কয়েকটি দাতব্য সংস্থার সহায়তায় ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে ইসরায়েল সফরে গিয়েছিলেন বলে তারা জানান।
এই সফর যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের একটি অংশ ছিল বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে। তবে এই প্রতিনিধি দলকে তেল আবিবের পক্ষ থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে ইসরায়েল প্রশাসন।
ইসরায়েল প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য, অকার্যকর ও গভীর উদ্বেগের বিষয়। আমরা ইসরায়েল প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। যুক্তরাজ্যের এমপিদের সঙ্গে এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
অবশ্য ইসরায়েলের নিজেদের সীমানা নিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডনোচ।
ইউয়ান ও আবতিসাম গত বছর প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর বেশ কয়েকবার পার্লামেন্টে ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন তারা। একারণেই তাদের এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ফেব্রুয়ারিতে আবতিসামের নেতৃত্বে ইসরায়েলের পণ্য নিষিদ্ধ করতে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের ৬১ সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল। এছাড়া, গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছিলেন তিনি।
এদিকে, উত্তর গাজায় বসতি নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়ায় ইসরায়েলি মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির ও বেজালেল স্মোট্রিচের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান করেছিলেন ইউয়ান। এ ছাড়াও গাজায় সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের জীবন নিয়ে ঝুঁকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
শনিবার বিমানবন্দরের ঘটনার পর এক যৌথ বিবৃতিতে ওই দুই এমপি জানান, বেশ কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলের কার্যকলাপ নিয়ে পার্লামেন্টে সরব ছিলেন তারা। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিধিবিধান মেনে চলার ব্যাপারে জোর দিয়েছিলেন তারা। পার্লামেন্টে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার তাদের রয়েছে। সেই অধিকার বলেই ইসরায়েল ও গাজা সম্পর্কে নিজেদের বক্তব্য রেখেছেন তারা।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০, আহত ১৬২
পার্লামেন্টের কাজের সুবিধার্থে পশ্চিমতীরে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন বলে বিবৃতিতে জানান তারা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। পরদিন থেকেই হামাসশাসিত গাজায় ইতিহাসের বর্বোরোচিত হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামলার এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধলাখের বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়ার বিবৃতিতে ল্যামি বলেছেন, যুক্তরাজ্য গাজার এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে চায়। জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করে এই সংঘাতের শেষ চান তারা।
১৩ দিন আগে
ভাঁড়ামির মাধ্যমে শিশুদের ইসালামি শিক্ষা দিচ্ছেন তিনি
রঙিন পোশাক, লাল নাক ও মাথায় পাগড়ি পরে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ভাঁড়ামির অভিনয় করেন ইয়াহইয়া হেন্দ্রোয়ান। শিশু-কিশোরদের বিনোদন দেওয়ার ফাঁকে ইসলামের বিধিবিধান ও মূল্যবোধ শিক্ষা দেন তিনি।
অর্থ উপার্জনের জন্য বিভিন্ন সময় জন্মদিনের পার্টিতে কাজ করতেন ইয়াহইয়া। সেখানে অভিনয় করে মানুষকে মুগ্ধ করতেন। কিন্তু ২০১০ সালে তাকে আধুনিককালের আবু নুয়াস হতে অনুপ্রাণিত করেন তার ধর্মীয় শিক্ষক।
আরও পড়ুন: পর্যটক টানবে খাগড়াছড়ি, আশা সংশ্লিষ্টদের
আরবি ভাষার কিংবদন্তি কবি আবু নুয়াস বিখ্যাত ছিলেন বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা, রসিকতা ও চমৎকার শব্দচয়নের জন্য। সমসাময়িক আরবি কাব্যের সব ধারার ওপর দক্ষ ছিলেন তিনি। লোককথায়ও আবু নুয়াসের উপস্থিতি রয়েছে। আরব্য রজনীতে বেশ কয়েকবার তার নাম পাওয়া যায়।
কবি আবু নুয়াসের মতো করেই রসিকতা ও প্রজ্ঞার সংমিশ্রণে ধর্মীয় শিক্ষায়তনে ভাঁড়ামির অভিয়ন করতে উৎসাহিত হন ইয়াহইয়া। বর্তমানে তাকে সবাই ইয়াহইয়া বাদুত বা ইয়াহইয়া ক্লাউন (ভাঁড়) নামে ডাকেন। এমন একটি স্বপ্নই তিনি বহুবছর ধরে লালন করছিলেন।
পাশাপাশি আরও কিছু সমমনা ক্লাউন নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দ্য শরিয়া ক্লাউন ফাউন্ডেশন। নির্মল বিনোদনের সাথে ধর্মীয় শিক্ষা দিতেই তারা কাজ করছেন।
শিশুদের আনন্দ দিতে বিভিন্ন মজার গানও পরিবেশন করেন তারা। ইয়াহইয়া বলেন, ‘হাদিসে আছে, কেউ তার ভাইয়ের সামনে মুচকি হাসি দিয়ে কথা বললে তা সদকাস্বরূপ। কাজেই অবশ্যই মুচকি হাসিকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানাতে হবে। যখন বন্ধুদের সাথে আপনার দেখা হয়, হাসি দিয়ে করমর্দন করবেন।’
মজা ও আনন্দ নিয়ে পড়ালে শিশুরা সহজেই তা আয়ত্ত করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ঈদের একাল-সেকাল: প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় ত্রিমাত্রিক উদযাপন ঢাকায়
২০ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রে শয়তান সংঘের সভায় হাতাহাতি, গ্রেপ্তার ৩
যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস অঙ্গরাজ্যে স্বঘোষিত শয়তানের ছোট একটি দলের নেতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৯ মার্চ) অঙ্গরাজ্যটির স্টেটহাউসে ‘ব্ল্যাক মাস’ আয়োজনের চেষ্টা করলে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পরে তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সেদিন স্টেটহাউসের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন কানসাস শহরের শয়তানের গ্রোটোর প্রায় ৩০ জন সদস্য। এখানে গ্রোটো বলতে সংঘ বোঝানো হয়েছে। এ সময়ে ভবনের ভেতরে খ্রীস্টানদের ঢুকতে দেওয়ার বিরুদ্ধেও তারা প্রতিবাদ করেন।
শয়তান সংঘের ব্ল্যাক মাস হচ্ছে এমন একটি অনুষ্ঠানের নাম, যা শয়তানের উপাসনার সময় অনুষ্ঠিত হয় এবং যা ক্যাথলিক মাসের একরকম প্যারোডি। গ্রোটোর সভাপতি মাইকেল স্টুয়ার্টের দাবি, ‘অঙ্গরাজ্যের আইনপ্রণয়ন ভবনে খ্রীস্টানদের ঢুকতে দেওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে যেতে হলে যেসব অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে
এরইমধ্যে স্টেটহাউসের ভেতরে সাময়িকভাবে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন অঙ্গরাজ্যটির গভর্নর লওরা কেলি। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরে ভবনের ভেতরে অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় মাইকেল স্টুয়ার্টের দল। শয়তান সংঘের লোকজন জড়ো হওয়ার পর স্থানীয় কয়েক খ্রীস্টান এসে সেখানে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখান।
শয়তানের চিত্রকল্প ও যিশু খ্রীস্টকে অস্বীকারসহ ভবনের ভেতরে অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়ার প্রতিবাদ করেন তারা। যিশু খ্রীস্টকে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে বিবেচনা করেন খ্রীস্টানরা।
শয়তানের গ্রোটের লোকজনের জন্য জায়গা হলুদ টেপ দিয়ে চিহ্নিত করে রেখেছিল পুলিশ। শখানেক খ্রীস্টান এসে সেখানে জড়ো হন। এরপর দুটি পক্ষ পরস্পরের দিকে লক্ষ্য করে চিৎকার করতে থাকেন।
এ সময়ে খ্রীস্টানরা গান গেয়ে শয়তানের দলের লোকজনকে যিশু খ্রীস্টের পথে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। শয়তান সংঘের লোকজনের জন্য বরাদ্দ জায়গার বিপরীত পাশে আরও কয়েকশত খ্রীস্টানকে জড়ো হতে দেখা গেছে।
বহুদিন থেকে গ্রোটোর যেকোনো কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন রোমান ক্যাথলিক খ্রীস্টানরা। পরে চলতি মাসের শুরুতে স্টেটহাউসের মধ্যে তাদের কর্মসূচি নিষিদ্ধ করেন গভর্নর কেলি।
শয়তানের গ্রোটো নামের গোষ্ঠীটিকে ক্যাথলিকবিদ্বেষী গোঁড়ামি বলে আখ্যায়িত করেছেন অঙ্গরাজ্যটির ক্যাথলিক বিশপ। তারা ক্যাথলিক মাস নিয়ে মশকরা করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কানসাস সিটির কিউর গির্জার যাজক জেরেমিয়া হিকস বলেন, ‘বাইবেলে বলা হয়েছে, শয়তান দুনিয়াতে এসেছে চুরি, হত্যা ও ধ্বংস করতে। কাজেই যখন একটি অঙ্গরাজ্যকে আমরা শয়তানের জন্য উৎসর্গ করে দিই, তখন আমরা সেটিকে ধ্বংসের জন্য উৎসর্গ করছি।’
গ্রোটো সদস্যরা বলেন, ‘তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্বাসের মানুষ আছেন। কিছু নাস্তিকও আছেন তাদের দলে।’
মাইকেল স্টুয়ার্টের বন্ধু অ্যামি ডোরসি বলেন, ‘বাক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারকে সমর্থন দিতেই তিনি শয়তানের গ্রোটোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কারণ খ্রীস্টান গোষ্ঠীগুলোকে স্টেটহাউসে প্রার্থনার অনুমোদন দেওয়া হলেও তাদের দেওয়া হচ্ছে না।’
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে স্টুয়ার্ট বলেন, ‘শুক্রবার ব্ল্যাক মাসের সময় নির্ধারণ করা ছিল তাদের। কারণ তখন কানসাস আইনসভার অধিবেশন হওয়ার কথা ছিল। যদিও বসন্তকালীন বিরতির জন্য বৃহস্পতিবার আইনসভার অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের ৫ অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে হাম, দুজনের মৃত্যু
আগামী বছর আবারও গোষ্ঠীটি তাদের কার্যক্রম নিয়ে ফিরে আসবে বলে জানান তিনি।
কেএসএনটি-টিভির ভিডিওতে দেখা গেছে, ভবনটির প্রথম তলায় নিজের দলকে পরিচালনার চেষ্টা করছেন স্টুয়ার্ট। তখন একজন তরুণ তার হাত থেকে বক্তৃতার কাগজ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে স্টুয়ার্ট তাকে ঘুষি মারেন। এরপর পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়।
তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় ‘স্বাগত, শয়তান’ বলে চিৎকার করছিলেন তিনি। স্টুয়ার্টের স্ত্রী মায়েনাদ বি বলেন, ‘তিনি কেবল সংবিধানের প্রথম সংশোধনের অধিকার চর্চা করছিলেন।’
২১ দিন আগে
দুর্যোগ থেকে মানুষকে উদ্ধারের সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের আর নেই: সাবেক ইউএসএইড প্রধান
ভূমিকম্প কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ বা লোকবল কোনোটিই আর মার্কিন প্রশাসনের নেই বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএইড) সাবেক প্রধান সারাহ চার্লস।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহায়তার আশ্বাস দিলে এই মন্তব্য করেন সারাহ। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৮ মার্চ) ওয়াশিংটনে ভূমিকম্প সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সহায়তা দেওয়ার কথা বলেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা ‘দানব’ ধরিয়ে দিল শিশু
তবে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরেই যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেওয়া বৈদেশিক সহায়তায় ব্যাপক কাঁটছাট করেন ট্রাম্প।
এ কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশে সংঘটিত এই দুর্যোগ মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রশাসন কতটুকু কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের পরিস্থিতি ট্রাম্পের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার দিনের মাঝামাঝিতে হওয়া এই ভূমিকম্পে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজারের বেশি। এখনো ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে।
এ দুর্ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা তাদের সহায়তা করতে চলেছি। সংশ্লিষ্টদের এরইমধ্যে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। যা হয়েছে, তা সত্যিই খুব খারাপ হয়েছে।’
এই বক্তব্যের পরে বৈদেশিক সহায়তা কাঁটছাট ও কর্মীদের ব্যাপকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করায় ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে সারাহ বলেন, ‘প্রশাসন এখন ধুঁকে ধুঁকে চলছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত মানুষকে উদ্ধারের জন্য তাৎক্ষণিক সহায়তা দিতে হলে যে সম্পদ বা লোকবল প্রয়োজন, তা কোনোটিই এখন নেই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের।’
অবশ্য সারাহর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএসএইডের বর্তমান মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস। তিনি জানান, যেকোনো দুর্যোগে তাৎক্ষণিকভাবে খাবার ও নিরাপদ পানিসহ অন্যান্য সহায়তায় বিশেষজ্ঞ টিম প্রস্তুত রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে মিয়ানমারে সহস্রাধিক প্রাণহানি, ব্যাপক মানবিক সংকট
কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে সংস্থাটির কর্মদক্ষতার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানান তিনি।
সারাহ বলেন, ভূমিকম্পের মতো ঘটনাগুলোতে সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংস্থাটির একটি উদ্ধারকারী দল পৌঁছে যায়। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে ওই দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ ছাড়াও বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ ও কাঁটছাট করার কারণে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোর জরুরি সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে অভিমত দেন সারাহ।
২২ দিন আগে
‘অপহরণের’ কায়দায় তুর্কি শিক্ষার্থীকে তুলে নিল মার্কিন পুলিশ
ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে আটক করেছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। মুখোশপরা লোকজন তাকে হাতকড়া পরিয়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বলে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। তবে তাকে আটকের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। এ ঘটনাকে ‘অপহরণের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
বুধবার (২৯ মার্চ) তার আইনজীবী মাহসা খানবাবি এমন তথ্য জানিয়েছেন। বোস্টন ফেডারেল আদালতে এ বিষয়ে একটি পিটিশন দাখিল করা হয়েছে।
রুমিয়াসা অজটুর্ক নামের ৩০ বছর বয়সী ওই নারী শিক্ষার্থী তুরস্কের নাগরিক। মঙ্গলবার রাতে ম্যাসাচুসেটসের সামারভিলে নিজের বাসা থেকে বের হলে তাকে থামানো হয়। অ্যাসোসিয়েটস প্রেসের (এপি) ভিডিওতে দেখা যায়, মুখঢাকা সাত ব্যক্তি তাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন তিনি চিৎকার করছিলেন।
ভিডিওতে গ্রুপটির লোকজনকে বলতে শোনা গেছে, ‘আমরা পুলিশ।’ তাদের একজনকে প্রশ্ন করতে দেখা গেছে, ‘কেন আপনি মুখ আড়াল করেছেন?’
মাহসা খানবাবি বলেন, ‘বন্ধুদের সাথে ইফতার করতে যাচ্ছিলেন রুমিয়াসা অজটুর্ক।’
‘তার অবস্থান সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। তার সাথে যোগাযোগ করতেও পারিনি। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়ার করার জন্য তাকে ভিসা দেওয়া হয়েছিল,’ বলেন তিনি।
তার এই আটকের ঘটনায় হতবাক হওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। সামারভিলের আবাসিক এলাকায় মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার সময় তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
মাইকেল ম্যাথিস (৩২) নামের এক সফটওয়্যার প্রকৌশলী বলেন, ‘এটা দেখতে অপহরণের মতো মনে হয়েছে।’
‘তারা তার কাছাকাছি এসে তাকে ধরে ফেলে। তাদের মুখঢাকা ছিল। তাদের গাড়িতেও কোনো নম্বর প্লেট ছিল না,’ বলেন তিনি। তার নজরদারি ক্যামেরায় এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করা হয়েছে।
টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সুনীল কুমার বলেন, ‘একজন বিদেশি শিক্ষার্থীকে আটকের কথা আমরা জানতে পেরেছি। তার ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় আগে থেকে কিছু জানতো না। আমাদের এ বিষয়ে কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি।’
তিনি শিক্ষার্থীর নাম না বললেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র প্যাট্রিকস কলিনস বলেন, গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের পিএইচডি গবেষক ছিলেন রুমিয়াসা অজটুর্ক।
তার এই আটকের ঘটনা সাংবিধানিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতার ভয়াবহ লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেন প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাটিক দলীয় সদস্য আয়ান্না প্রিসলি। তাকে এখনই মুক্তি দিতে হবে বলে দাবি করেন তিনি।
২৪ দিন আগে
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ‘বিশেষ উদ্বেগজনক’ দেশ ভারত, র’য়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রকে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ
ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগে ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগজনক’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন। একই সঙ্গে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের ওপর যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর এসব সুপারিশের কথা সামনে এসেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিদেশের মাটিতে ভারতের শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যাকাণ্ডের পেছনে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা র’য়ের হাত রয়েছে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে এই পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।
ভারতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ভারতের পাশাপাশি ভিয়েতনামকেও এই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, দেশটিতে ধর্মীয় ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ বাড়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৪৩ দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র
অবশ্য এই সুপারিশের বাস্তবায়ন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে কমিশন যে দুটি দেশের বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্রনীতিতে দেশ দুটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
চীন বিষয়ে যৌথ উদ্বেগের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছে ভারত ও ভিয়েতনাম। তাই এই পরামর্শের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন যুক্তরাষ্ট্রের একটি দ্বিদলীয় সরকারি উপদেষ্টা সংস্থা। বৈদেশিক ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ করে নানা নীতিগত সুপারিশ দিয়ে থাকে সংস্থাটি।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারতকে পাল্টা শক্তি হিসেবে গণ্য করে ওয়াশিংটন। তাই দেশটির মানবাধিকার বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেয় না যুক্তরাষ্ট্র।
কমিশনের সুপারিশ বাধ্যতামূলক না হওয়ায় র’কে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন তারা।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের সঙ্গে আমার গভীর যোগসূত্র আছে: মোদি
২০২৩ সালে থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কার্যক্রমে ভারতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ওয়াশিংটন-দিল্লি সম্পর্কে চিড় ধরে।
যুক্তরাষ্ট্রে এক শিখ নেতাকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টায় ভারতের সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের জড়িত থাকার অভিযোগ আনে ওয়াশিংটন, যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে ভারত। এ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য, শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি মনে করে ভারত।
মার্কিন ওই কমিশনের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত বছরজুড়ে ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এই সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও বৈষম্য বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত নির্বাচনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দেশটির মুসলিম জনগোষ্ঠীসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও অপতথ্য ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছে কমিশন।
সবশেষ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে প্রচারকালেও মোদি মুসলিমদের ভারতে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে অ্যাখ্যা দেন। শুধু তাই নয়, ‘মুসলিমরা বেশি সন্তান জন্ম দেয়’—এমন মন্তব্যও করেন গত প্রায় ১১ বছর ধরে দেশটির প্রধানমন্ত্রীত্ব সামলানো এই নেতা।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা-বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিবেদনে ভারতে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের তথ্য উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: ২৭ বছর পর দিল্লির মসনদে বসতে চলেছে বিজেপি
তবে এসব প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে মোদি বলেন, তার সরকার দেশে বিদ্যুতায়ন ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভতুর্কি দেওয়াসহ যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, তাতে সব সম্প্রদায়ের মানুষই উপকৃত হয়েছেন।
ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন হচ্ছে বলে অভিযোগ করে দেশটিকে ‘বিশেষ উদ্বেগজনক’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে এবং র ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে সুপারিশ করেছে মার্কিন ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন।
ভারতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্বে ক্রমবর্ধমান বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল, মুসলিমদের সম্পদ ধ্বংসের মতো মানবাধিকার-বিরুদ্ধ কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে এই সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান মানবাধিকারকর্মীরা।
এই সুপারিশের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় দূতাবাস।
অপরদিকে, সম্প্রতি একটি ডিক্রি জারি করে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অর্থের হিসাব চেয়েছে ভিয়েতনাম প্রশাসন। একে ধর্মীয় স্বাধীনতার ‘গুরুতর লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন ওই কমিশন।
তাছাড়া ধর্মীয় কার্যক্রম বা ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করার দায়ে প্রায় ৮০ জন বন্দির তথ্য তুলে ধরেছে কমিশন, ভিয়েতনাম সরকার যাদের সাজা দিয়েছে। এসব কারণে ভিয়েতনামকেও ‘বিশেষ উদ্বেগজনক’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
ভিয়েতনাম দূতাবাসও এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
২৫ দিন আগে
ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ, শিক্ষার্থীকে আত্মসমর্পণে মার্কিন পুলিশের চিঠি
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়ায় মোমোদু তাল নামের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছে মার্কিন অভিবাসন পুলিশ। শুক্রবার (২২ মার্চ) তার আইনজীবী দলকে এই চিঠি মেইল করা হয়েছে। দেশ থেকে বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক কর্মকর্তারা এই চিঠি দেন।
আফ্রিকানা অধ্যয়নের ওপর পিএইচডি করছেন মোমোদু তাল। তিনি অবশ্য যুক্তরাজ্য ও গাম্বিয়ার দ্বৈত নাগরিক। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। এরপর গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নেন এই শিক্ষার্থী।-খবর সিএনএনের
ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামাসকে সমর্থন ও ইহুদিবিদ্বেষী হওয়ার অভিযোগ তোলেন তাদের বিরুদ্ধে।
আত্মসমর্পণের এই চিঠিকে বাকস্বাধীনতার ওপর আঘাত হিসেবে আখ্যায়িত করেন মোমোদু তালের আইনজীবীরা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার পর তাকে যাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া না হয়, তা আটকে দিতে আগেই একটি মামলা দায়ের করে রেখেছিলেন মোমোদু তাল।
কয়েকটি ইহুদি গোষ্ঠীসহ বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, তাদের ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ ও ইসরাইলের সমালোচনাকে ভুলভাবে ইহুদিবিদ্বেষের সঙ্গে মিশিয়ে তালগোল পাকানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় দুই সাংবাদিকসহ ৯ ফিলিস্তিনি নিহত
মোমোদু তালকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘নিউইয়র্কের সিরাকিউজে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস অফিসে সরাসরি হাজির হতে মোমোদু তাল ও তার আইনজীবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আইসিই হাজতখানায় তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।’
গেল বছরে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি ক্যারিয়ার মেলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তালসহ একদল শিক্ষার্থী। ওই মেলায় বোয়িং ও এল৩হ্যারিসের প্রতিরক্ষা ঠিকাদাররা অংশ নিয়েছিলেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা যেসব অস্ত্র উৎপাদন করছে, তা গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলিদের সহিংসতায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
এরপর থেকে ক্যাম্পাসে না এসে তালকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লেখাপড়া করতে বলেছেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরআগে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে আটক করে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। তাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
২৯ দিন আগে